তাফসীরুল কুরআন: হুব্বুল মাল বা ধন-সম্পদের মুহব্বত এবং এর কঠিন পরিণতি

সংখ্যা: ২১৭তম সংখ্যা | বিভাগ:

মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার কালাম কুরআন শরীফ-এ বান্দাদেরকে ধন-দৌলত, টাকা-পয়সা, গাড়ি-বাড়ি ইত্যাদির প্রাচুর্যতা যা মহান আল্লাহ পাক উনার থেকে ফিরিয়ে রাখে তা থেকে সতর্ক করেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি ইরশাদ করেন-

الـهكم التكاثر حتى زرتم الـمقابر

অর্থ: আধিক্যের লালসা (ধন-সম্পদের লোভ) তোমাদেরকে (মহান আল্লাহ পাক উনার থেকে) গাফিল করে রেখেছে। যে পর্যন্ত না তোমরা কবর যিয়ারত করো বা ইনতিকাল করো। (সূরা তাকাছুর : আয়াত শরীফ ১, ২)

হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সবসময় দুআ করতেন, হে বারে ইলাহী! আমাকে এমন ধন-দৌলত, টাকা-পয়সা, বাড়ি-বাহন, জায়গা-জমিন ইত্যাদি দিবেন না, যা আপনার থেকে ফিরিয়ে রাখে; বরং আমাকে এমন ধন-দৌলত, টাকা-পয়সা, বাড়ি-বাহন, জায়গা-জমিন দিন, যা আপনার দিকে রুজু করে দেয়। তিনি আরো দুআ করতেন এই বলে যে, যা বৈধ ও হালাল, তা আমাকে দান করুন আর যা অবৈধ ও হারাম তা থেকে আমাকে হিফাজত করুন।

হাদীছ শরীফ-এ আরো ইরশাদ হয়েছে, যদি আদম সন্তানের দুই উপত্যকা স্বর্ণ পরিপূর্ণ থাকে তারপরও সে তৃতীয় আরেক উপত্যকা পরিপূর্ণ স্বর্ণের আকাঙ্খা করে। প্রকৃতপক্ষে আদম সন্তানের পেট মাটি ব্যতীত ভরবে না। অর্থাৎ মৃত্যুবরণ না করা পর্যন্ত অর্থাৎ কবরস্থানে না পৌঁছা পর্যন্ত।

হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, আদম সন্তান বলে, আমার মাল, আমার মাল, আমার মাল। অথচ তিনটি ব্যতীত কোনটিই তার মাল নয়। এক. খাদ্য: যা সে খেয়ে হজম করে ফেলেছে। দুই. বস্ত্র বা কাপড়: যা সে পরিধান করে পুরাতন করে ফেলেছে; অন্য কারো পক্ষে তা আর পরিধান করা সম্ভব নয়। তিন. সম্পদ: যা সে পরকালের জন্য দান করে দিয়েছে।

মহান আল্লাহ পাক তিনি সূরা তাকাছুরের ৬ নং আয়াত শরীফ-এ ইরশাদ করেন-

لترون الجحيم

যারা দুনিয়ার ধন-সম্পদের মোহে বা মুহব্বতে আসক্ত থাকবে তারা অবশ্যই জাহান্নাম স্বচক্ষে দেখবে এবং তাতে প্রবেশ করবে।

হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছরøাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, দীনার ও দিরহামের বান্দাদের জন্য আফসুস! অর্থাৎ যারা টাকা-পয়সা, ধন-দৌলত, বাড়ি-গাড়ি, জায়গা-জমিন ইত্যাদির মোহে মোহগ্রস্ত থাকবে, তারা জাহান্নামে কঠিন আযাবে গ্রেফতার হয়ে যাবে।

হাদীছ শরীফ-এ আরো ইরশাদ হয়েছে, আদম সন্তান ক্বিয়ামতের দিন তাদের ক্বদম (পা) এক চুলও নড়াতে পারবে না পাঁচটি প্রশ্নের জাওয়াব না দেয়া পর্যন্ত। ১. তার জীবন বা হায়াত সম্পর্কে; তা সে কিভাবে কাটিয়েছে। ২. তার যৌবনকাল সম্পর্কে; তা সে কিভাবে অতিবাহিত করেছে। ৩. তার মাল-সম্পদ সম্পর্কে; তা সে কিভাবে উপার্জন করেছে। ৪. উক্ত মাল-সম্পদ কোন পথে ব্যয় করেছে। ৫. তার ইলিম সম্পর্কে; ইলিম অনুযায়ী সে কি আমল করেছে। সম্পদের মোহ সম্পর্কে কিতাবে একটি ঘটনা বর্ণিত রয়েছে, মহান আল্লাহ পাক উনার নবী ও রসূল হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি একবার সফর করতে করতে এক স্থানে গিয়ে পৌঁছে সেখানে দেখতে পেলেন, চারটি লোক মৃত অবস্থায় পড়ে আছে। তিনি যখন দেখলেন চারটি লোক মরে পড়ে রয়েছে তখন তিনি প্রতিটি লোককে জীবিত করলেন। জীবিত করে তাদেরক বললেন, আমরা তো কিছুক্ষণ আগে এই স্থান দিয়ে গিয়েছিলাম, এখানে আমরা কাউকে দেখিনি। তোমরা কোথা থেকে এসে কি কারণে এখানে মারা গেলে? লোকগুলি বললো, হুযূর! বেয়াদবি মাফ করবেন, আমরা ধন-সম্পদের মোহে মোহগ্রস্ত ছিলাম। যার কারণে আমরা মারা গিয়েছি। আমরা এখানে চারজন রয়েছি। তিনজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু আর একজন অপরিচিত। আমরা যখন এখানে ক্লান্তিÑশ্রান্তির কারণে এসে থামলাম, দেখলাম তিনটি স্বর্ণের ইট পড়ে রয়েছে। আমরা তিনজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু মনে মনে চিন্তা করলাম যে, তিনটি ইট কিভাবে বণ্টন করা যেতে পারে? আমরা তিন বন্ধু আর একজন অপরিচিত। তখন আমরা তিন বন্ধু পরামর্শ করে অপরিচিত লোকটিকে বাজারে পাঠালাম কিছু খাদ্য নিয়ে আসার জন্য। এদিকে আমরা পরিকল্পনা করলাম, সে আসার সাথে সাথে তাকে আমরা পিটিয়ে হত্যা করবো এবং তিনজনে তিনটি ইট ভাগ করে নিয়ে যাবো। আর অপরিচিত লোকটি বাজারে গিয়ে সে মনে মনে ফিকির করলো, আমাকে তো তারা ভাগ দিবে না, উপরন্তু তারা আমাকে হত্যা করেও ফেলতে পারে। তাই সে খাদ্যের মধ্যে বিষ মিশিয়ে নিয়ে আসলো, তার উদ্দেশ্য ছিল আমরা তিন বন্ধু বিষ মিশ্রিত খাদ্য খেয়ে মারা যাবো। আর সে তিনটি স্বর্ণের ইট একাই নিয়ে যাবে। অতঃপর সে যখন খাদ্য নিয়ে আসলো, আসার সাথে সাথে আমরা তিন বন্ধু তাকে পিটিয়ে মেরে ফেললাম। এরপর বিষযুক্ত খাদ্য খেয়ে আমরাও মারা গেলাম। তখন তারা সকলেই বললো, হুযূর! আমাদেরকে মাফ করে দিন। আমরা ধন-সম্পদের মোহ থেকে তওবা করছি। সত্যিই তারা তওবা করে স্বর্ণের ইটগুলো রেখেই সেখান থেকে চলে গেল।

অতএব, ধন-দৌলত, টাকা-পয়সা, গাড়ি-বাড়ি, জায়গা-জমিন ইত্যাদির আসক্তি থেকে বাঁচতে হলে অবশ্যই অন্তরকে পরিশুদ্ধ করতে হবে। আর অন্তরকে পরিশুদ্ধ করতে হলে হক্কানী-রব্বানী শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নিকট বাইয়াত গ্রহণ করে ক্বলবী যিকির করে এবং সেই সাথে ফায়িয-তাওয়াজ্জুহ হাছিল করতে হবে।

তাফসীরুল কুরআন: হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিজেদের মতো বাশার বলা কাট্টা কুফরী

তাফসীরুল কুরআন: হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিজেদের মতো বাশার বলা কাট্টা কুফরী

তাফসীরুল কুরআন: হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিজেদের মতো বাশার বলা কাট্টা কুফরী

তাফসীরুল কুরআন: হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিজেদের মতো বাশার বলা কাট্টা কুফরী

তাফসীরুল কুরআন: হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিজেদের মতো বাশার বলা কাট্টা কুফরী