তাফসীরুল কুরআন: হুব্বেজাহ অর্থাৎ প্রভাব-প্রতিপত্তি  বা প্রশংসাপ্রীতির মোহ দূর করার উপায়

সংখ্যা: ২৩২তম সংখ্যা | বিভাগ:

মানুষ অপরের মুখে নিজের প্রশংসা শুনতে খুবই ভালবাসে এবং সদা সর্বদা নিজের সুনাম ও সুখ্যাতি ছাড়া অন্য কিছুই শুনতে ইচ্ছা করে না। শরীয়তসম্মত আমল করেও প্রশংসার আকাঙ্খা করে আবার শরীয়ত বিরোধী কাজ করেও প্রশংসার আকাঙ্খা করে। নাউযুবিল্লাহ! এরূপ প্রশংসাপ্রীতি অন্তরের একটি জঘন্য ব্যাধি।

উল্লেখ্য, চারটি কারণে মানুষ অপরের মুখে নিজ প্রশংসা শুনে আনন্দ লাভ করে। প্রথমতঃ প্রশংসা ও সুখ্যাতিই গুণের পূর্ণতার প্রমাণ বা পরিচায়ক। মানুষ সর্বদা নিজ গুণের পূর্ণতায় সন্দেহের মধ্যে থাকে এবং নিজের মধ্যে গুণের পূর্ণতার কল্পনা করে গুণের পূর্ণ আনন্দ ভোগ করতে পারেনা; কিন্তু অন্যের মুখে যখন নিজের প্রশংসা শ্রবণ করে তখন নিজের গুণের পূর্ণতা সম্বন্ধে মনে বিশ্বাস জন্মে এবং তজ্জন্য মনে এক অপূর্ব আনন্দ ও শান্তি অনুভব করে। এর কারণ হলো যে, মানুষ গুণের মধ্যে পূর্ণতার আভাস পাওয়া মাত্র নিজের মধ্যে প্রভাব-প্রতিপত্তির নিদর্শন রয়েছে বলে মনে করে নেয়। আর সেই প্রশংসা বোধই তাকে আনন্দিত করে।

দ্বিতীয়তঃ কেউ কারো প্রশংসা করলে তাদ্বারা বুঝা যায় যে, প্রশংসাকারীর মন প্রশংসাকৃত ব্যক্তির আওতাধীন। তাছাড়া প্রশংসাকারীর অন্তরে প্রশংসাকৃত ব্যক্তির যথেষ্ট ভক্তি ও প্রভাব বিদ্যমান। মানুষ স্বভাবতই প্রতিপত্তি লাভের জন্য লালায়িত থাকার কারণে যদি কোন বিশিষ্ট ব্যক্তির মুখে স্বীয় প্রশংসা ও গুণ-কীর্তন শ্রবণ করে, তখন মনে করে যে, এমন বিশিষ্ট ব্যক্তি যখন আমার আওতাধীন, তখন নিশ্চয়ই আমার ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি অত্যন্ত অধিক। সুতরাং তার আনন্দ ও খুশি অতিমাত্রায় বেড়ে যায়।

তৃতীয়তঃ কাউকে প্রশংসা এবং সুখ্যাতি প্রচার করতে দেখলে প্রশংসাকৃত ব্যক্তি তা থেকে এ শুভ বিষয়টি ভেবে নেয় যে, প্রশংসাকারীর মুখে আমার এই গুণ-কীর্তন শুনে ক্রমান্বয়ে আরো বহু লোক এ পথে এসে যাবে। এভাবে পর্যায়ক্রমে প্রশংসাকারীদের দল বৃদ্ধি পেতে থাকবে; সুতরাং প্রশংসা ও গুণ-কীর্তন যদি প্রকাশ্যে হতে থাকে এবং প্রশংসাকারী যদি বহুসংখ্যক লোকের মান্যগন্য হয়, তবে সেই প্রশংসায় প্রশংসাকৃত ব্যক্তি বেশি পরিমাণে আনন্দ লাভ করে। কেননা এমন ব্যক্তির দেখাদেখি তার অনুগত লোকেরাও তার প্রশংসা করবে।

চতুর্থতঃ কারো মুখে স্বীয় প্রশংসা শুনলে প্রশংসাকৃত ব্যক্তি মনে করে প্রশংসাকারী ব্যক্তি তার প্রভাব-প্রতিপত্তিতে পরাভূত হয়েছে। প্রভাব ও ক্ষমতা মানুষের নিকট অত্যন্ত প্রিয় বস্তু। যদিও তা জোর-জুলুম ও বাধ্য-বাধকতার প্রভাবে অর্জিত হয়ে থাকে। কেননা মানুষ তখন একথাটি স্পষ্ট বুঝতে পারে যে, প্রশংসকারী মুখে যে গুণ-কীর্তন করছে তা ভক্তির প্রাবল্যে নয়; বরং শুধু কোন উদ্দেশ্য সাধন কিংবা বিপদ মুক্তির বাসনায় এই মৌখিক প্রশংসা করছে। তথাপি এই মৌখিক প্রশংসা তার কাছে মধুর বলে মনে হয়। কেননা এরূপ ক্ষেত্রে প্রশংসাকৃত ব্যক্তি ঐ প্রশংসার মধ্যে স্বীয় ক্ষমতা ও প্রতাপের পূর্ণতা অনুভব করে।

উপরোক্ত প্রশংসা-প্রীতির মোহ দূরীভূত করতে হলে প্রশংসাকারীর প্রশংসা শুনে আনন্দিত না হয়ে বরং প্রশংসাকারী যে গুণ নিয়ে আপনার প্রশংসা করছে সেই গুণ সত্যিই আপনার মধ্যে আছে কিনা? যেমন কোন প্রশংসাকারী আপনাকে জ্ঞানী ও পরহেযগার বলে প্রশংসা করছে তখন দেখতে হবে সত্যিকারেই আপনার মধ্যে জ্ঞান, তাক্বওয়া ও আত্মশুদ্ধি গুণ আছে কিনা? যদি বাস্তবিকই আপনি উক্ত গুণের অধিকারী মনে করেন তবে তাতে গর্বিত না হয়ে; বরং পরম দয়ালু মহান আল্লাহ পাক যিনি আপনাকে উক্ত গুণের অধিকারী করেছেন উনারই উদ্দেশ্যে কৃতজ্ঞতা ও আনন্দ প্রকাশ করা উচিত। মানুষের প্রশংসায় গর্বিত হওয়া বোকামী ছাড়া আর কিছু নয়। কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি যে গুণ দান করেছেন, মানুষের প্রশংসায় তা কিঞ্চিৎমাত্র বৃদ্ধিও হবেনা কিংবা তাদের নিন্দায় হ্রাসও হবে না।

যদি ধন-সম্পদ কিংবা কর্তৃত্ব ও নেতৃত্বের কারণেই কেউ আপনার প্রশংসা করে থাকে, তবে মনে করতে হবে যে, এসব স্থায়ী আনন্দের কারণ হতে পারে না। কেননা ধন-সম্পদ ও প্রভাব-প্রতিপত্তি যে কোন মুহূর্তে বিলুপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কাজেই তা নিয়ে গর্ব করা আহমক বৈকি?

সত্যিকারের জ্ঞানীগণ নিজেদের মধ্যে প্রকৃত জ্ঞান এবং পরহেযগারীর সন্ধান পেয়ে গর্বিত হননা; বরং মৃত্যুকালে কঠিন সঙ্কটময় শেষ মুহূর্তের ভয়ে ভীতসন্ত্রস্ত থাকেন। কেননা শেষ মুহূর্তে নেক বা সৎগুণগুলো সাথে নিয়ে ঈমানের সাথে বিদায় নিতে পারবেন, না সব পুঁজি হারিয়ে শূন্য হাতে পরলোকে রওয়ানা করবেন, একথা কারুরই জানা নেই। সেই শেষ মুহূর্ত সম্বন্ধে যে পর্যন্ত নিশ্চিতরূপে জানা না যাবে, সে পর্যন্ত সত্যিকারের জ্ঞান এবং তাক্বওয়াসম্পন্ন সৎ গুণাবলীর কোন ভরসা নেই। সৎ জ্ঞানী, মুত্তাক্বী, আলিম লোকের অবস্থা যখন এরূপ অনিশ্চিত এবং শঙ্কাপূর্ণ তখন যাদের পরিণাম দোযখ, তাদের আনন্দিত হওয়ার কি কারণ থাকতে পারে?

পক্ষান্তরে লোকেরা আপনার মধ্যে যেসব গুণ আছে বলে আপনার প্রশংসা করে তা প্রকৃতপক্ষে আপনার মধ্যে নেই। যেমন কেউ আলিম ও পরহেযগার বলে আপনার প্রশংসা করছে অথচ আপনি লক্ষ্য করে দেখছেন যে, আপনার মধ্যে বাস্তবে ইলম ও পরহেযগারী নেই। এটা বুঝার পরও যদি আপনি প্রশংসাকারীর বৃথা প্রশংসায় গর্বিত ও আনন্দিত হন, তাহলে তা আপনার নিতান্ত আহমকী ও নির্বুদ্ধিতা ছাড়া কিছু নয়। এর একটি উদাহরণ হচ্ছে যে, জনৈক অপরিচিত পথিক এসে যদি আপনাকে তোষামোদ করে বলতে থাকে, আপনি একজন ধনবান ও জনপ্রিয় ব্যক্তি। আপনার উদরস্থ’ নাড়িভূঁড়িগুলো মেশকের সুঘ্রাণে পরিপূর্ণ। অথচ আপনি নিজে অবশ্যই জানেন যে, আপনার ধন-সম্পদ ও জনপ্রিয়তা বলতে কিছুই নেই এবং আপনার নাড়িভূঁড়িগুলো দুর্গন্ধময় মলমূত্রে পরিপূর্ণ। তবু পথিকের এই তোষামোদে যদি আপনি নিজেকে ধনবান, দাতা, জনপ্রিয় এবং আপনার উদরকে সুঘ্রানযুক্ত কস্তরীর দ্বারা পরিপূর্ণ মনে করে আনন্দে আহ্লাদিত হতে থাকেন; তবে আপনাকে নিরেট পাগল ব্যতীত আর কি বলা যেতে পারে?

তাফসীরুল কুরআন: হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিজেদের মতো বাশার বলা কাট্টা কুফরী

তাফসীরুল কুরআন: হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিজেদের মতো বাশার বলা কাট্টা কুফরী

তাফসীরুল কুরআন: হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিজেদের মতো বাশার বলা কাট্টা কুফরী

তাফসীরুল কুরআন: হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিজেদের মতো বাশার বলা কাট্টা কুফরী

তাফসীরুল কুরআন: হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিজেদের মতো বাশার বলা কাট্টা কুফরী