দিন দিন বাড়ছে কিশোর অপরাধ। হত্যা, শ্লীলতাহানি, মাদকসহ নানা অপরাধে কিশোর প্রজন্ম দিকভ্রান্ত। মূল্যবোধের অবক্ষয় ও আকাশ সংস্কৃতিই মুখ্য কারণ। সরকারের উচিত- দেশের এই ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বাঁচাতে যুগপৎ উদ্যোগ গ্রহণ করা

সংখ্যা: ২৬০তম সংখ্যা | বিভাগ:

গত কিছুদিন ধরে বাংলাদেশে কিশোর অপরাধের নানা চিত্র সমাজ থেকে উঠে আসছে। চলতি ২০১৭ সালের ৬ জানুয়ারি সন্ধ্যায় উত্তরায় কিশোরদের দুটি গ্রুপের দ্বন্দ্বের জেরে খুন হয় নবম শ্রেণী পড়ুয়া আদনান কবির। সেইসাথে ২৮ জানুয়ারি-২০১৭ নারীটিজিংয়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় হৃদয় গাজী নামের এক কিশোরকে কুপিয়ে হত্যা করেছে একটি কিশোর সন্ত্রাসী দল। বাংলাদেশে কিশোর অপরাধ পুরনো হলেও বর্তমানে ডিজিটাল বাংলাদেশে তা প্রকটভাবে বেড়ে গেছে। দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এই কিশোররা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে। তাদের আচরণে হিংস্রতার ছাপ ফুটে উঠছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের এক শিক্ষকের গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা যায়, ১৯৯০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে রাজধানী ঢাকায় মোট কিশোর অপরাধের মামলা ছিল তিন হাজার ৫০১টি। ২০০১ থেকে পরবর্তী ১০ বছরে একই ধরনের মামলা চার হাজার ৮৮২টি। আর গত ১০ বছরে মামলার সংখ্যা ব্যাপক বেড়ে গেছে। যার সঠিক কোনো সংখ্যা জানা যায়নি।

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বড় শহরগুলোয় উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে কিশোর অপরাধী-সন্ত্রাসীর সংখ্যা। আশঙ্কার বিষয়, এসব অপরাধী মাদক, ছিনতাই, নারীটিজিং, সম্ভ্রমহরণসহ ভয়ঙ্কর অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। এমনকি এলাকাভিত্তিক আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গ্রুপিং ও খুনোখুনি পর্যন্ত করতে পিছপা হচ্ছে না তারা। যে বয়সে নিজের চরিত্র গঠন ও পড়ালেখায় মনোযোগী হওয়ার কথা, সে বয়সে কেন তারা এমন অপরাধে জড়াচ্ছে- এমন প্রশ্ন সচেতন মহলের মধ্যে ব্যাপকভাবে আলোড়িত হচ্ছে।

বস্তুত, দেশের সিলেবাসে ইসলাম বর্জন করে নাস্তিক্যবাদ প্রবেশ করানো, শিথিল পারিবারিক বন্ধন, সন্তানের প্রতি বাবা-মার কর্তব্য এবং দায়িত্বে অবহেলা, সরকারিভাবে ইসলামী মূল্যবোধকে উপেক্ষা করা, সামাজিক অবক্ষয়, স্বল্প বয়সে স্মার্টফোনসহ উন্নত প্রযুক্তি উপকরণের নাগাল পাওয়া, সঙ্গদোষ ইত্যাদি কারণে কিশোর অপরাধী বাড়ছে। এছাড়া কিশোরদের হাতে পর্যাপ্ত টাকা দেয়া, কোনো ধরনের অনুশাসন না করেই সব আবদার পূরণ করা এবং সন্তান কী করছে সে বিষয় পর্যবেক্ষণ না করায় অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে। সেইসাথে এক গবেষণায় জানা গেছে, কয়েকটি কারণে কিশোররা বিপথে চলে যাচ্ছে। যার মধ্যে- এক. সিলেবাসে ইসলামী শিক্ষা না থাকা, দুই. সরকারিভাবে ইসলামী মূল্যবোধকে উপেক্ষা করা, তিন. পারিবারিক মূল্যবোধের অবক্ষয়। চার. আকাশ সংস্কৃতি। এবং পাঁচ. মিডিয়ায় দেখানো নৃসংশতা।

বর্তমানে কিশোর সমাজের একটি বড় অংশ কাল্পনিক ভিডিও গেমসের অতিভক্তে পরিণত হয়েছে। ভিডিও গেমে গ্রুপ বানিয়ে মারামারি করছে। হার-জিত নিয়ে উত্তেজিত হচ্ছে। ঘরের মধ্যে বসে বা দোকানে গিয়ে ভিডিও গেম খেলছে। কম্পিউটার বা নোটবুক নিয়ে সারাদিন ইন্টারনেটে ঘাটাঘাটি করছে। ফলে তাদের মধ্যে সহনশীলতা একেবারেই কমে যাচ্ছে। অল্প বয়সেই তারা হিংস্র হয়ে উঠছে। কোনো ধরনের বিরোধিতাই তারা সহ্য করতে পারে না। নানা নামে তারা গ্যাং পার্টি তৈরি করে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করছে। একই এলাকায় বিভিন্ন গ্যাং পার্টির মধ্যে প্রায়ই ঘটছে সংঘর্ষ ও খুনোখুনি। গ্যাং পার্টির অনেক সদস্য মাদক সেবন, মাদক ব্যবসা, ছিনতাই ও বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালাচ্ছে। এতে সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। রাজধানীকেন্দ্রিক শহুরে জীবনে কৈশোর ও তারুণ্যে ভয়ঙ্কর কালো ছাপ ফেলছে গ্যাং পার্টি।

অন্যদিকে বাংলাদেশে ভারতীয়সহ পশ্চিমা বিভিন্ন টিভি সিরিয়াল বাংলায় অথবা হিন্দিতে ডাবিং হয়ে প্রবেশ করেছে। সেসব সিরিয়ালে হিংস্রতা, সন্ত্রাসবাদ ও আধিপত্যবাদকে ব্যাপকভাবে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। মানুষকে তুচ্ছ কারণে হত্যা করা সেসব সিরিয়ালে স্বাভাবিকভাবে দেখানো হয়েছে। আর বর্তমান সমাজের কিশোরদের স্বভাবই হচ্ছে অপরকে অনুসরণ করা। বিদেশী ডাবিংকৃত সিরিয়ালগুলোকে দেখে কিশোররা এক ধরনের এ্যাডভেঞ্চার অনুভব করে। আর বর্তমান যুগে ইন্টারনেট সহজলভ্য হওয়ার কারণে দেশের ৭৭% স্কুলপড়ুয়া শিশু-কিশোর নিজেদের বা বন্ধুদের মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যবহার করে তাদের জন্য ক্ষতিকর ও নিষিদ্ধ দৃশ্য দেখে সময় নষ্ট করছে। বিশৃঙ্খল নাস্তিক্যবাদী শিক্ষাব্যবস্থা ও প্রযুক্তির অনিয়ন্ত্রিত অপব্যবহার তাদের বিভ্রান্ত করছে।

বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেমন মোবাইল, ফেসবুক, টুইটার, ব্লগ, ইউটিউবের ন্যায় গণমাধ্যমগুলো শিশু-কিশোরদের দারুণভাবে প্রভাবিত করছে।

বিশেষ করে কুরুচিপূর্ণ অশ্লীল আবেগে ভরপুর ম্যাগাজিন ও পত্রিকা কিশোর-কিশোরীদের মন-মানসিকতার উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করছে। অশ্লীল হারাম সিনেমা, বিজ্ঞাপন চিত্র, ফ্যাশন শো’র নামে টেলিভিশনে প্রদর্শিত অশ্লীল অনুষ্ঠানমালা আবেগপ্রবণ কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে প্রবল উত্তেজনা ও মানসিক চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে বিপথগামী করে তুলছে।

প্রযুক্তির বিকাশ সুনামির আকারে আছড়ে পড়ছে। এই প্লাবনের অগ্রভাগে রয়েছে অশ্লীলতার ডাস্টবিন। এই ময়লার ঝুড়িকে বাদ না দিয়েই আমরা এই সর্বপ্লবী প্লাবনে অবগাহন করছি। এই জোয়ারের ময়লা লেপ্টে যাচ্ছে আমাদের দেশের কিশোর সমাজের মধ্যে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে এভাবে যখন ময়লার পানিতে তারা হাবুডুবু খাচ্ছে, তার আগে থেকেই আকাশ সংস্কৃতি তাদের নৈতিকতার পরিবেশ নষ্ট করে চলছে। সুস্থ ও পরিমিতিবোধের একটি সামাজিক সংস্কৃতি থেকে এর মাধ্যমে তারা বেহায়া উলঙ্গপনার সামাজিক পরিবেশের দিকে অনেক আগেই যাত্রা করে ফেলছে। একশ্রেণীর বিকৃত মানসিকতার লোক পশ্চিমা টিভি সিরিয়াগুলো এদেশে আমদানি করছে। কিন্তু রাষ্ট্র এগুলোর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো রাষ্ট্র অনুকূল্য প্রদান করছে।

বলতে হয়, যতদিন পর্যন্ত কিশোর প্রজন্মের মধ্যে ইসলামী মূল্যবোধ সম্পর্কিত সত্যিকার শিক্ষা এবং নীতি-নৈতিকতার প্রসার ঘটানো যাবে না, ততদিন পর্যন্ত দেশে কিশোর অপরাধী তৈরি হতেই থাকবে। আর নৈতিকতা ও সামাজিক মূল্যবোধ তৈরির ক্ষেত্রে যুগান্তকারী এবং একমাত্র পথ হলো পবিত্র দ্বীন ইসলাম। কারণ বর্তমান নিয়ন্ত্রণহীন সমাজ ও শিক্ষাব্যবস্থা থেকে কোনোভাবেই নৈতিকতাপূর্ণ সঠিক চরিত্র গঠন সম্ভব নয়। আজকের বাংলাদেশের তরুণ ও কিশোর সমাজ পবিত্র দ্বীন ইসলাম থেকে অনেক দূরে সরে গেছে। আর এর পেছনে অর্ধেক দায়ী তার পরিবার। আর পুরো দায়ী সরকার। এসব কিশোররা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও পরিবার কোনোদিক থেকে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার আদর্শ শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে না। পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার ইতিহাসে কিশোর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের আদর্শ মুবারক আজকের কিশোর সমাজের জানা নেই, অনুসরণ নেই। ফলে দিকবিভ্রান্ত হচ্ছে তারা।

তাই সরকারের উচিত, দেশে কিশোর সন্ত্রাস নির্মূল করতে এবং দেশের কিশোরদের একটি সুস্থ ও নৈতিকতাসম্পন্ন প্রজন্ম হিসেবে গড়ে তুলতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ পারিবারিক এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার আদর্শ ও নীতি-নৈতিকতার প্রচার ও প্রসার ঘটানো। অন্যদিকে দেশ থেকে ভারতীয়সহ পশ্চিমা সিরিয়ালগুলোর হিংস্রতা, সন্ত্রাসবাদ ও আধিপত্যবাদমূলক অপসংস্কৃতি এদেশ থেকে সম্পূর্ণরূপে নির্মূলের জন্য আইন প্রণয়ন করা।

-আল্লামা মুহম্মদ আমীনুল্লাহ, ঢাকা

রৌশনীদের ক্ষোভ, দুঃখ, লজ্জা, ক্রোধের দায়ভার নেবে কে? প্রবাহমান সংস্কৃতি পঙ্কিলতার তোড়ে রৌশনীদের সব আকুতি যে নির্মমভাবে ভেসে যাচ্ছে।  সে দায়বদ্ধতা বর্তমান সমাজ আর কত অস্বীকার করতে পারবে? প্রযুক্তি যতটা আপগ্রেড হচ্ছে সে তুলনায় অপরাধ বাড়ছে জ্যামিতিক হারে। কাজেই আদর্শের কাছে ফিরে যাওয়ার বিকল্প নেই। পর্দা পালনে বিকল্প নেই।  ইসলামী শিক্ষার বিকল্প নেই। এসব কথার প্রতিফলন না হলে খুন, ধর্ষণ আর পরকীয়ার ক্যান্সারে আক্রান্ত হবে প্রতিটা পরিবার। সমাজ হবে সমাজচ্যুত।

যুগের আবূ জাহিল, মুনাফিক ও দাজ্জালে কায্যাবদের বিরোধিতাই প্রমাণ করে যে, রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী হক্ব। খারিজীপন্থী ওহাবীদের মিথ্যা অপপ্রচারের দাঁতভাঙ্গা জবাব-৬৬

ভ্রান্ত ওহাবী মতবাদ প্রচারের নেপথ্যে-১৫

চাঁদ দেখা ও নতুন চন্দ্রতারিখ নিয়ে প্রাসঙ্গিক আলোচনা-৩৪

বাতিল ফিরক্বা ওহাবীদের অখ্যাত মুখপত্র আল কাওসারের মিথ্যাচারিতার জবাব-২৪ হাদীছ জালিয়াতী, ইবারত কারচুপি ও কিতাব নকল করা ওহাবীদেরই জন্মগত বদ অভ্যাস ওহাবী ফিরক্বাসহ সবগুলো বাতিল ফিরক্বা ইহুদী-নাছারাদের আবিষ্কার! তাদের এক নম্বর দালাল