পদ্মা শুকিয়ে ধু ধু বালুচর ফারাক্কার কারণে বাংলাদেশের ক্ষতি ১১ লাখ বিলিয়ন টাকা। ফারাক্কা বাঁধের ফাঁদে বাংলাদেশ বিপর্যস্ত। আধিপত্যবাদী, লুণ্ঠনকারী ও সন্ত্রাসবাদী শক্তির অপতৎপরতা রোধে পবিত্র ঈমানী চেতনার বিকল্প নেই।

সংখ্যা: ২৫৩তম সংখ্যা | বিভাগ:

রাজশাহী হয়ে বাংলাদেশে ঢোকা পদ্মা নদী এখন পুরোই পানিশূন্য। বালুর স্তরে স্তরে আটকে আছে মাঝিদের নৌকা। শুষ্ক মৌসুম শুরুর আগেই কাঠ হয়ে গেছে। বিশাল বালুকারাশির উপর দিয়ে এখন চলছে গরু-মহিষের গাড়ি। কয়েক বছর আগেও এই সময়ে পদ্মায় পানি থাকতো। এখন তা শুধুই স্মৃতি। দিনে দিনে পানিরাশির অপার সৌন্দর্য হারিয়ে পদ্মা এখন শুধুই যেন মরুভূমি।

শুধু পদ্মার করুণ পরিণতিতে অনেক আগেই শুকিয়ে গেছে রাজশাহীসহ বরেন্দ্র অঞ্চলের খাল-বিল, নদী-নালা। একইসঙ্গে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর দ্রুত নেমে যাচ্ছে। পদ্মা পানিশূন্য হওয়ার পাশাপাশি ভূগর্ভের পানির স্তরও নিচে নামছে। গভীর নলকূপেও ঠিকমতো মিলছে না পানি। দেখা দিয়েছে সেচ ও পানীয় পানির সঙ্কট। পদ্মা শুকিয়ে যাওয়ায় এরই মধ্যে মৎস্য সম্পদ ও পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে গোটা বরেন্দ্র অঞ্চল।

কয়েকদিন আগে ঠিক দুপুর বেলা রাজশাহীর অংশে পদ্মা নদীতে গিয়ে দেখা গেছে যেন রূপ পাল্টানো অন্য পদ্মা। কোথাও পানি নেই। যতদূর চোখ যায় শুধু বালুরাশি। বালুর মধ্যে আটকে পড়েছে মাঝিদের নৌকা। ওপারের চরের মানুষ দীর্ঘ পথ মাড়িয়ে হেঁটে আসছে এপারে। ওপারের মালামাল আসছে পদ্মার বুক চিরে গরু-মহিষের গাড়িতে করে।

১৯৯৬ সালে ৩০ বছর মেয়াদি চুক্তি অনুযায়ী খরা মৌসুম হিসেবে জানুয়ারি থেকে মে মাসের মধ্যে বাংলাদেশের ৩৫ হাজার কিউসেক পানি পাওয়ার কথা। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, ওই চুক্তি অনুযায়ী মাত্র ৩ বছর পানি মিলেছে। বাকি বছরগুলো ফারাক্কা পয়েন্টেই পানির সঙ্কট থাকার অজুহাতে ন্যায্য হিস্যার পানি দেয়নি ভারত।

বিশেষজ্ঞদের হিসাব মতে, ফারাক্কা চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ গত পাঁচ বছরে ২০ ভাগের কম পানি পেয়েছে। গত ২১ থেকে ৩১ মার্চ ভারত বাংলাদেশকে ১৫ হাজার ৬০৬ কিউসেক পানি দিয়েছে, যা ছিল স্মরণকালের সর্বনিম্ন পানি। এছাড়া এ শুষ্ক মৌসুমের ৩১ মে পর্যন্ত উভয় দেশ ১০ দিনওয়ারি ভিত্তিতে গঙ্গার পানি ভাগাভাগি করে নেয়ার কথা। কিন্তু ভারতের পক্ষ থেকে কখনো এ সিডিউল মানা হয় না।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গঙ্গার উৎস থেকে ফারাক্কা পর্যন্ত বহু বাঁধ আর খালের মাধ্যমে গঙ্গার পানি প্রত্যাহার করে চলেছে ভারত। শুধু ফারাক্কা বাঁধ নয়, কানপুরে গঙ্গা ব্যারাজ ও হরিদ্বারে গঙ্গার পানি প্রত্যাহারে নির্মিত কৃত্রিম খালসহ অসংখ্য স্থাপনা নির্মাণ করেছে তারা। এখানেই শেষ নয়, ভারত ফারাক্কার উজানে উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের কানপুরে গঙ্গার উপর আরো একটি বাঁধ নির্মাণ করছে। এছাড়া উত্তরপ্রদেশ ও বিহারে সেচের জন্য প্রায় চারশ’ পয়েন্ট থেকে পানি সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। এসব পয়েন্ট থেকে হাজার হাজার কিউসেক পানি প্রত্যাহার করা হচ্ছে। পরিণতিতে ফারাক্কা পয়েন্টে পানির প্রবাহ কমে গেছে। ফলে বাংলাদেশের হাজারো চিৎকার আর আহাজারি সত্ত্বেও বাংলাদেশ তার ‘নায্য হিস্যা’ পাচ্ছে না।

বাংলাদেশের পদ্মার যে বিপুল আয়তন তাতে স্বাভাবিক প্রবাহ থাকলে প্রাকৃতিক ও পরিবেশগত বিপর্যয় সৃষ্টির কথা উঠতো না। কিন্তু ভারত নেপালের কোশি থেকে শুরু করে ফারাক্কা পর্যন্ত সুদীর্ঘ পথে পানি প্রত্যাহারের যে একতরফা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে ভারত তাতে বাংলাদেশের বিপর্যয় হয়ে উঠেছে। শুধু বাঁধ-ব্যারাজই নয়, গঙ্গার পানি সরিয়ে নিতে ভারত অনেক আগে থেকেই গঙ্গায় বৃহদাকার তিনটি খাল প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে।

এসব খালের মোট দৈর্ঘ্য ১৩ হাজার ৬শ’ কিলোমিটার। এগুলো হচ্ছে ‘আপারগঙ্গা ক্যানাল প্রজেক্ট’, ‘মধ্যগঙ্গা ক্যানাল প্রজেক্ট’ এবং ‘নিম্নগঙ্গা ক্যানাল প্রজেক্ট।’ এ ধরনের প্রকল্পের মাধ্যমে গঙ্গার পানি সরিয়ে নিয়ে সেচ দেয়ার ব্যাপক কার্যক্রম চালাচ্ছে তারা। ‘উপর গঙ্গা খাল প্রকল্পের’ মাধ্যমে উত্তরপ্রদেশের ২৫ লাখ একর জমিতে সেচ দেয়ার লক্ষ্যে ৬ হাজার কিলোমিটারের বেশি খাল কেটে পদ্মার পানি সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। ‘মধ্যগঙ্গা ক্যানাল প্রজেক্ট’ নামের প্রকল্পে মূল ও শাখাসহ খননকৃত খালের মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ১৬শ’ কিলোমিটার। ‘নিম্নগঙ্গা সেচ প্রকল্পের’ জন্য ৬ হাজার কিলোমিটার খালের মাধ্যমে গঙ্গার পানি সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। এভাবে এসব উৎসের শতকরা ৯০ ভাগ পানি সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। ফলে নিম্নভাগের গঙ্গায় মাত্র ১০ ভাগ পানি স্বাভাবিকভাবে প্রবাহিত হতে পারছে।

চলতি ২০১৬ সালের শুকনো মৌসুমের শুরুতেই পদ্মাজুড়ে চরে পরিণত হয়েছে। সেই সঙ্গে পদ্মার শাখা-প্রশাখাসহ অন্ততঃ ৩৬ নদী কার্যত মৃত খালে রূপ নিয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী পদ্মায় পানির ন্যায্য হিস্যা বাংলাদেশের প্রাণের দাবি। পদ্মানদীর এ অবস্থার জন্য ভারতের ফারাক্কা ব্যারাজই দায়ী।

ভারতের ফারাক্কা বাঁধের কারণে ২০০৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১১ হাজার ট্রিলিয়ন বা ১১ লাখ বিলিয়ন টাকা ছাড়িয়ে গেছে বলে তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশের পানি চুরির অভিযোগে ভারত অভিযুক্ত বলেও মন্তব্য করা হয়েছে।

‘নেপাল স্টাডি: ইন্ডিয়া অ্যান্ড বাংলাদেশ হ্যাভ সিরিয়াস ওয়াটার ডিসপিউটস’ শিরোনামে সম্প্রতি ওই নিবন্ধটি প্রকাশ করে নেপালের টেলিগ্রাফ পত্রিকা।

এদিকে ফারাক্কার প্রভাবে উত্তরাঞ্চলের ৫৪টি নদী শুকিয়ে গেছে। শুষ্ক মৌসুমে নদীগুলো পানিশূন্য হয়ে পড়ছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর এত নিচে নেমে গেছে যে, এভাবে চললে ১০ বছর পর এ অঞ্চলে পানি পাওয়া কঠিন হবে।

ভারত শুধু পদ্মা নদীর উপর ফারাক্কা বাঁধই নয়, বাংলাদেশে প্রবেশকারী ৫৭টি নদীর মধ্যে ৫৪টি নদীতে বাঁধ দিয়েছে। এর কারণে বাংলাদেশের ৮০টি নদী হারিয়ে যেতে বসেছে। এছাড়া আরো ১০০টি নদী মৃতপ্রায়। এবছর খরা মৌসুমে এসব নদীর অবস্থা আরো ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে। এর প্রভাবে এসব নদীর সাথে যুক্ত অসংখ্য খাল-বিল এখনই পানিশূন্য হয়ে পড়ছে।

জানা যায়, এক যুগের ব্যবধানে দেশে সেচযন্ত্রের সংখ্যা সাড়ে ৬ লাখ বৃদ্ধি পেয়েছে। সেচের জমি বেড়েছে প্রায় ২০ লাখ হেক্টর। এসব সেচযন্ত্র প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দেশের বড় নদী, শাখানদী, উপশাখা ও প্রশাখাগুলোর সাথে যুক্ত অসংখ্য খাল, হাওর, বিল প্রভৃতির পানির উৎস থেকে পানি সরবরাহ করে। ফলে যেকোনো নদীর উপর বাঁধ দিয়ে তার প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করা মানেই সরাসরি ওই নদীকেন্দ্রিক সেচব্যবস্থার উপর আঘাত হানা। ভারতের এই নদী রাজনীতি প্রত্যক্ষভাবে বাংলাদেশের কৃষিব্যবস্থাকে অচল করে ফেলতে চাচ্ছে।

বাংলাদেশের ক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশ হয়েও শুধু আধিপত্যবাদী ভূমিকাই পালন করছে না; বরং রীতিমতো লুণ্ঠন ও সন্ত্রাসী প্রক্রিয়াও চালাচ্ছে। ভারতীয় আকাশ সংস্কৃতি এদেশের জাতীয় চরিত্রকে ধ্বংসের শেষ পর্যায়ে নিয়ে গেছে। পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মতে, মুসলমানদের সর্বপ্রথম শত্রু হলো ইহুদী অতঃপরই এ মুশরিকরা তথা ভারত। অথচ সে ভারতের মুশরিকদের প্রতি বাংলাদেশ সরকার নতজানু ও বড়দাদা সুলভ পররাষ্ট্রনীতি চালিয়ে আসছে। আমরা মনে করি, এক্ষুণি এর অবসান দরকার। এক্ষেত্রে শুধু সরকারের কর্তব্যই শেষ নয়, দেশের জনগণকেও পবিত্র ঈমানী জযবায় আপ্লুত হতে হবে। নচেৎ দ্বীন-দুনিয়া দু’ক্ষেত্রেই পস্তাতে হবে। কারণ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে- “যখন মুসলমানরা মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে ওয়াদার খিলাফ করে, তখন তাদের উপর বিদেশী শত্রু চাপিয়ে দেয়া হয়।”

কাজেই এ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার নছীহত মুবারক গ্রহণ করলেই সব আগ্রাসন ও নিপীড়ন থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। ইনশাআল্লাহ!

-আল্লামা মুহম্মদ আরিফুল্লাহ, ঢাকা

বাতিল ফিরক্বা ওহাবীদের অখ্যাত মুখপত্র আল কাওসারের মিথ্যাচারিতার জবাব-২২ হাদীছ জালিয়াতী, ইবারত কারচুপি ও কিতাব নকল করা ওহাবীদেরই জন্মগত বদ অভ্যাস

‘উলামা আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত’ সম্পর্কিত ‘দৈনিক যুগান্তর’ পত্রিকার মন্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিস্ময় প্রকাশ গোয়েন্দা শীর্ষ কর্মকর্তারাও অবহিত নয় খোদ যুগান্তর সম্পাদকের দুঃখ প্রকাশ

‘উলামা আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত’কে নিয়ে – মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নামে দৈনিক জনকণ্ঠের মিথ্যাচার ‘উলামা আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত’ নিষিদ্ধ হচ্ছে- এ কথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শুধু অস্বীকারই করলেন না, বললেন: ‘সম্পূর্ণ বাজে কথা।’ প্রসঙ্গতঃ সোহেল তাজ বিবৃত কালো তালিকা অসম্পূর্ণ ও আংশিক ভুল। এর সংশোধন আশু দরকার

মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সমীপে- সোহেল তাজ বিবৃত ১২টি জঙ্গি সংগঠন তালিকা যথার্থ নয় এর মধ্যে যেমন অনেক জঙ্গি সংগঠনের নাম আসেনি তেমনি জঙ্গিবাদ বিরোধী সংগঠনের (উলামা আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত) নামও জামাত-জোট ভূতের কারণে এসেছে। সঙ্গতঃ কারণেই বে-হেড সোহেল তাজের বেফাঁস মন্তব্য থেকে বেরিয়ে এসে বর্তমানের যোগ্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে প্রকৃত জঙ্গি সংখ্যা যেমন নির্ধারণ করতে হবে, প্রকৃত জঙ্গিদের যেমন চিহ্নিত করতে হবে পাশাপাশি জঙ্গিবাদী, মৌলবাদী ও ধর্মব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে একান্ত নিবেদিত ‘আল বাইয়্যিনাত’কে মূল্যায়ন করতে হবে।