পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের আলোকে পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ অর্থাৎ সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, ঈদে আকবর, পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পক্ষে অকাট্য দলীল প্রমাণ (২য় পর্ব)

সংখ্যা: ২৭১তম সংখ্যা | বিভাগ:

মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে নিয়ামত নাযিলের বা প্রাপ্তির দিনটি ঈদের দিন:

বান্দা-বান্দি বা উম্মত মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে যে দিন নিয়ামত মুবারক লাভ করে থাকে সে দিনটি যে ঈদের দিন তা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দ্বারাই অকাট্যভাবে প্রমাণিত। যেমন এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

قَالَ عِيْسَى ابْنُ مَرْيَمَ اَللّٰهُمَّ رَبَّنَا أَنزِلْ عَلَيْنَا مَائِدَةً مِّنَ السَّمَاءِ تَكُوْنُ لَنَا عِيْدًا لِّأَوَّلِنَا وَاٰخِرِنَا وَاٰيَةً مِّنْكَ وَارْزُقْنَا وَأَنْتَ خَيْرُ الرَّازِقِيْنَ. قَالَ اللهُ إِنِّيْ مُنَزِّلُـهَا عَلَيْكُمْ فَمَنْ يَّكْفُرْ بَعْدُ مِنْكُمْ فَإِنِّيْ أُعَذِّبُه عَذَابًا لَّا أُعَذِّبُه أَحَدًا مِّنَ الْعَالَمِيْنَ.

অর্র্থ: “আয় আমাদের রব আল্লাহ পাক! আমাদের জন্য আপনি আসমান হতে (বেহেশতী খাদ্যের) খাদ্যসহ একটি খাঞ্চা নাযিল করুন। খাঞ্চা নাযিলের উপলক্ষটি অর্র্থাৎ খাদ্যসহ খাঞ্চাটি যেদিন নাযিল হবে সেদিনটি আমাদের জন্য, আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের জন্য ঈদ (খুশি) স্বরূপ হবে এবং আপনার পক্ষ হতে একটি নিদর্শন মুবারক হবে। আমাদেরকে রিযিক দান করুন। নিশ্চয় আপনিই উত্তম রিযিকদাতা। মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, নিশ্চয়ই আমি তোমাদের প্রতি খাদ্যসহ খাঞ্চা নাযিল করবো। অতঃপর যে ব্যক্তি সে খাদ্যসহ খাঞ্চাকে এবং তা নাযিলের দিনটিকে ঈদ তথা খুশির দিন হিসেবে পালন করবে না বরং অস্বীকার করবে আমি তাকে এমন শাস্তি দিবো, যে শাস্তি সারা কায়িনাতের অপর কাউকে দিবো না।”  (পবিত্র সূরা মায়িদাহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১১৪)

হযরত ঈসা রুহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার উম্মত এবং উনার পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী সকলের জন্য যদি আসমান থেকে নাযিল হওয়ার জন্য যদি ঈদের দিন হয় তবে যিনি কায়িনাতের বুকে সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত মুবারক। যিনি না হলে কোনো নিয়ামতই পৃথিবীতে আসতোনা সেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেদিন যমীনে নাযিল হলেন বা তাশরীফ মুবারক নিলেন সেদিনটি কি ঈদের দিন হবেনা? পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ বিরোধীদের নিকট এর জবাব চাই।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ عَمَّارِ بْنِ أَبِيْ عَمَّارٍ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ، قَالَ : قَرَأَ اِبْنُ عَبَّاسٍ  رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ: {اَلْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْـمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيْتُ لَكُمُ الْإِسْلاَمَ دِيْنًا} وَعِنْدَه يَهُودِيٌّ فَقَالَ : لَوْ أُنْزِلَتْ هٰذِهٖ عَلَيْنَا لَاتَّـخَذْنَا يَوْمَهَا عِيْدًا، قَالَ اِبْنُ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ : فَإِنَّـهَا نَزَلَتْ فِيْ يَوْمِ عِيْدَيْنِ فِيْ يَوْمِ جُمُعَةٍ، وَيَوْمِ عَرَفَةَ.

অর্থ: “হযরত আম্মার ইবনে আবী আম্মার রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি একদা

اَلْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِيْنَكُمْ الاية.

“আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণ করলাম” এ পবিত্র আয়াত শরীফখানা শেষ পর্যন্ত পাঠ করলেন। তখন উনার কাছে এক ইহুদী ব্যক্তি বসা ছিলো। সে বলে উঠলো, “যদি এই পবিত্র আয়াত শরীফ আমাদের ইহুদী সম্প্রদায়ের প্রতি নাযিল হতো তাহলে আমরা আয়াত শরীফ নাযিলের দিনটিকে “ঈদ” বলে ঘোষণা করতাম।” এটা শুনে হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, এ পবিত্র আয়াত শরীফ সেই দিন নাযিল হয়েছে যেদিন এক সাথে দু’ঈদ ছিলো- এক. জুমুআর দিন এবং দুই. আরাফার দিন।” সুবহানাল্লাহ (তিরমিযী শরীফ)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ طَارِقِ بْنِ شِهَابٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ، قَالَتِ الْيَهُوْدُ لِعُمَرَ عَلَيْهِ السَّلَامُ إِنَّكُمْ تَقْرَءُوْنَ اٰيَةً لَوْ نَزَلَتْ فِيْنَا لاَتَّـخَذْنَاهَا عِيْدًا‏.‏ فَقَالَ عُمَرُ عَلَيْهِ السَّلَامُ إِنِّيْ لَأَعْلَمُ حَيْثُ أُنْزِلَتْ، وَأَيْنَ أُنْزِلَتْ، وَأَيْنَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حِيْنَ أُنْزِلَتْ يَوْمَ عَرَفَةَ، وَإِنَّا وَاللهِ بِعَرَفَةَ

অর্থ: “হযরত তারিক ইবনে শিহাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, ইহুদীরা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাকে এসে বললো যে, আপনারা এমন একটি আয়াত শরীফ পাঠ করেন যদি তা আমাদের ইহুদী সম্প্রদায়ের প্রতি নাযিল হতো; আমরা অবশ্যই উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিলের দিনটিকে ঈদ হিসেবে গ্রহণ করতাম। তখন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, আমি নিশ্চিতরূপে জানি যে, উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ কখন নাযিল হয়েছে, কোথায় নাযিল হয়েছে এবং আরাফার দিন যখন এ পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল হয় তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কোথায় অবস্থান মুবারক করছিলেন। মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! নিশ্চয়ই সেদিনটি ছিলো আরাফার দিন।” (ইবনে মাজাহ শরীফ)

পবিত্র কুরআন শরীফ উনার একখানা পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল হওয়ার দিনটি যদি ঈদের দিন হয় তাহলে যার কারণে আমরা সম্পূর্ন কুরআন শরীফ লাভ করলাম অর্থাৎ যিনি ছাহিবুল কুরআন তিনি যেদিন নাযিল হলেন বা তাশরীফ মুবারক আনলেন সেদিনটিকে তোমরা কোন দলীলের ভিত্তিতে ঈদের দিন হিসেবে অস্বীকার করো?

এখানে একটি ফিকিরের বিষয় হলো একটা ইহুদী একখানা পবিত্র আয়াত শরীফ উনার গুরুত্ব বুঝে সে পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিলের দিনটিকে ঈদের দিন হিসেবে উদযাপন করার ঘোষণা দিলো। অথচ ওহাবী সালাফী দেওবন্দীরা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার গুরুত্ব বুঝলোনা, উনার  মুবারক আগমনের দিনটিকে ঈদের দিন হিসেবে মেনে নিতে পারেনা? নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ! মূলত এরা ইহুদীর চেয়েও নিকৃষ্ট।

আরো ফিকিরের বিষয় হলো, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারুকে আ’যম আলাইহিস সালাম ও সাইয়্যিদুনা হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারাও স্বীকৃতি দিলেন যে, নিয়ামত নাযিলের দিনটি ঈদের দিন। যদি উনারা স্বীকৃতি না দিতেন তাহলে বলতেন যে, এজন্য ঈদ বা খুশি প্রকাশ করার কোন প্রয়োজন নেই।

বরং উনারা বললেন, ঈদের দিনেই (জুমুয়া ও আরাফা) যেহেতু এ পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল হয়েছে তাই আলাদাভাবে আমাদের ঈদের দিন ঘোষণা করার কোনো প্রয়োজন নেই। যদি ঈদের দিনে নাযিল না হয়ে অন্য কোনো দিন নাযিল হতো তাহলে সেদিনটিকে অবশ্যই ঈদের দিন হিসেবে ঘোষণা দেয়া হতো। অতএব প্রমাণিত হলো যে, নিয়ামত মুবারক নাযিলের রাত ও দিনটিও ঈদের দিন। সুবহানাল্লাহ!

এখন সালাফী, ওহাবী দেওবন্দীদের নিকট আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, তারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিয়ামত হিসেবে স্বীকার করে কিনা? যদি তারা উনাকে নিয়ামত হিসেবে স্বীকার করে তবে উনার মুবারক আগমনের দিনকে অবশ্যই ঈদের দিন হিসেবে মেনে নিতে হবে। যদি না মানে তবে বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, তারা মূলত নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিয়ামত হিসেবে স্বীকার করেনা। নাউযুবিল্লাহ!

 

হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের পবিত্র বিলাদত শরীফ ও পবিত্র বিছাল শরীফ দিবস রহমত, বরকত, সাকীনা ও ঈদের দিন

 

মহান আল্লাহ পাক উনার হযরত নবী ও রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের পবিত্র বিলাদত শরীফ দিবস উম্মত উনাদের জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে রহমত, বরকত, সাকীনা নাযিলের ও ঈদের দিন। সুবাহানল্লাহ!

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন:

وَالسَّلَامُ عَلَيَّ يَوْمَ وُلِدْتُّ وَيَوْمَ أَمُوْتُ وَيَوْمَ أُبْعَثُ حَيًّا

অর্থ: (হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বলেন) আমার প্রতি সালাম যেদিন আমি পবিত্র বিলাদত শরীফ প্রকাশ করেছি, যেদিন পবিত্র বিছাল শরীফ প্রকাশ করব এবং যেদিন পুনরুজ্জীবিত হয়ে উত্থিত হব। (পবিত্র সূরা মারইয়াম শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৩)

মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

وَسَلَامٌ عَلَيْهِ يَوْمَ وُلِدَ وَيَوْمَ يَـمُوْتُ وَيَوْمَ يُبْعَثُ حَيًّا

অর্থ: (হযরত ইয়াহ্ইয়া আলাইহিস সালাম) উনার প্রতি সালাম যেদিন তিনি পবিত্র বিলাদত শরীফ প্রকাশ করেছেন এবং যেদিন তিনি পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহণ করবেন এবং যেদিন তিনি জীবিতাবস্থায় পুনরুত্থিত হবেন। (পবিত্র সূরা মারইয়াম শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৫)

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

حَيَاتِـيْ خَيْرٌ لَّكُمْ وَمَـمَاتِـيْ خَيْرٌ لَّكُمْ (وَذَكَرهُ الْـهَيْثَمِىُّ فِـيْ “مَـجْمَعِ الزَّوَائِدِ” وَصَحَّحَه.

অর্থ: “আমার দুনিয়াবী হায়াত মুবারক ও পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ উভয়টাই তোমাদের জন্য খইর, বরকত, রহমত ও নাজাতের কারণ। সুবহানাল্লাহ!

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে –

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : (إِنَّ هٰذَا يَوْمُ عِيْدٍ جَعَلَهُ اللهُ لِلْمُسْلِمِيْنَ، فَمَنْ جَاءَ إِلَى الْـجُمُعَةِ فَلْيَغْتَسِلْ، وَإِنْ كَانَ طِيْبٌ فَلْيَمَسَّ مِنْهُ وَعَلَيْكُمْ بِالسِّوَاكِ)

অর্থ: হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি এ (জুমুয়া) উনার দিনকে মুসলমান উনাদের জন্য পবিত্র ঈদের দিন হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। তোমাদের যারা পবিত্র জুমুয়াহ উনার নামাযে যাবে সে যেন গোসল করে ও সুগন্ধি লাগায়। আর তোমাদের জন্য মিসওয়াক করা আবশ্যক। সুবহানাল্লাহ! (মিশকাত শরীফ, মাছাবীহুত তানউইর আলা ছহীহিল জামিউছ ছগীর)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ أَبِيْ لُبَابَةَ بْنِ عَبْدِ الْمُنْذِرِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ : قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : إِنَّ يَوْمَ الْـجُمُعَةِ سَيِّدُ الْأَيَّامِ ، وَأَعْظَمُهَا عِنْدَ اللهِ، وَهُوَ أَعْظَمُ عِنْدَ اللهِ مِنْ يَّوْمِ الْأَضْحٰى وَيَوْمِ الْفِطْرِ، فِيْهِ خَمْسُ خِلالٍ : خَلَقَ اللهُ فِيْهِ اٰدَمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ ، وَأَهْبَطَ اللهُ فِيْهِ اٰدَمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ إِلَى الْأَرْضِ ، وَفِيْهِ تَوَفَّى اللَّهُ اٰدَمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَفِيْهِ سَاعَةٌ لَا يَسْأَلُ اللهُ فِيْهَا الْعَبْدُ شَيْئًا إِلَّا اَعْطَاهُ، مَا لَـمْ يَسْأَلْ حَرَامًا، وَفِيْهِ تَقُوْمُ السَّاعَةُ، مَا مِنْ مَلَكٍ مُقَرَّبٍ وَلَا سَمَاءٍ وَلَا أَرْضٍ وَلَا رِيَاحٍ وَلَا جِبَالٍ وَلا بَـحْرٍ إِلَّا وَهُنَّ يُشْفِقْنَ مِنْ يَّوْمِ الْـجُمُعَةِ .

অর্থ: “হযরত আবূ লুবাবা ইবনে আব্দুল মুনযির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, জুমু‘আর দিন সকল দিনের সর্দার এবং সকল দিন অপেক্ষা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট অধিক শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত। এটি পবিত্র ঈদুল আদ্বহার দিন ও পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন অপেক্ষাও মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট অধিক শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত। এ দিনটিতে পাঁচটি (গুরুত্বপূর্ণ) বিষয় রয়েছে- (১) এ দিনে মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করেছেন, (২) এ দিনে উনাকে যমীনে প্রেরণ করেছেন, (৩) এ দিনে উনার বিছাল শরীফ হয়েছে, (৪) এ দিনটিতে এমন একটি সময় রয়েছে যে সময়টিতে বান্দা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট কিছু চাইলে তিনি অবশ্যই তাকে তা দান করেন যে পর্যন্ত না সে হারাম কিছু চায় এবং (৫) এ দিনেই ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে। এমন কোনো ফেরেশ্তা নেই, আসমান নেই, যমীন নেই, বাতাস নেই, পাহাড় নেই, সমুদ্র নেই, যে জুমু‘আর দিন সম্পর্কে ভীত নয়।” সুবহানাল্লাহ! (ইবনে মাযাহ, মিশকাত শরীফ)

উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নিম্নোক্ত  ৫টি কারণে জুমুয়ার দিনকে দিনের সাইয়্যিদ ও ইয়াওমুল আ’যীম এমনকি পবিত্র কুরবানীর ঈদ ও পবিত্র রোযার ঈদের চেয়েও বেশি মূল্যবান ও মহান বলা হয়েছে। সুবহানাল্লাহ! কারণগুলো হলো-

১. পবিত্র জুমুয়া উনার দিন হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করা হয়েছে। ২. পবিত্র জুমুয়া উনার দিন হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি জান্নাত হতে যমীনে তাশরীফ মুবারক আনেন। ৩. পবিত্র জুমুয়া উনার দিন হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি ইলাহী দীদারে গমন করেন তথা পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। ৪. পবিত্র জুমুয়া উনার দিন আসর হতে মাগরিবের মধ্যে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে যখন খাছভাবে দোয়া কবুল করা হয়। ৫. পবিত্র জুমুয়া উনার দিন ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে। সুবহানাল্লাহ!

এখন প্রশ্ন হলো যদি অন্যান্য হযরত নবী রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের আগমন ও বিদায় উনার দিনটি খায়ের বরকত রহমত সাক্বীনা ও ঈদের দিন হয়, তবে নুরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যিনি না হলে কিছুই সৃষ্টি হতো না কোনো হযরত নবী রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা সৃষ্টি হতেন না। সমস্ত নবী রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারও যার উম্মত তাহলে উনার মুবারক আগমন ও বিদায়ের দিন কেন খায়ের বরকত রহমত সাকীনা নাযিলের এবং ঈদের দিন হবেনা?

উক্ত দিনটি ঈদের দিন না হওয়ার ব্যপারে পবিত্র কুরআন শরীফ পবিত্র হাদীছ শরীফ থেকে ১টি দলীলও কি তারা পেশ করতে পারবে? কস্মিনকালেও পারবে না।

 

মহান আল্লাহ পাক তিনি স্বয়ং নিজেই পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করার নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন যা পালন করা ফরয

 

নিয়ামাতুল কুবরা আলাল আলামীন বা তামাম আলমের সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাওয়ার কারণে ঈদ করতে হবে। উনাকে সরণ করতে হবে ও উনার পবিত্র আলোচনা মুবারক করতে হবে। এবং পবিত্র ছানা ছিফত মুবারক বর্ণনা করতে হবে তা মহান আল্লাহ পাক উনারই নির্দেশ মুবারক উনার অন্তর্ভূক্ত।

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন:

يَا أَيُّهَا النَّاسُ اذْكُرُوْا نِعْمَةَ اللهِ عَلَيْكُمْ

اِنَّا اَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَّمُبَشِّرًا وَّنَذِيرًا. لِّتُؤْمِنُوْا بِاللهِ وَرَسُوْلِهٖ قُلْ بِفَضْلِ اللهِ وَبِرَحْمَتِهٖ فَبِذٰلِكَ فَلْيَفْرَحُوْا هُوَ خَيْرٌ مِّـمَّا يَـجْمَعُوْنَ

উল্লেখিত পবিত্র আয়াত শরীফ সমূহ দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয় যে, নুরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদের মাঝে সর্বশ্রেষ্ট নিয়ামত। রহমত এবং সম্মানিত শাহিদ হাযির নাযীর হিসেবে তাশরীফ মুবারক নিয়েছেন। আর এ কারণে মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে উনার স্মরণ বা আলোচনা মুবারক, উনার পবিত্র ছানা ছিফত, মুবারক বর্ণনা ও উনাকে পাওয়ার কারণে পবিত্র ঈদ বা খুশি প্রকাশ করার নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন। যে নির্দেশ মুবারক পালন করা সকলের জন্যই ফরযে আইন।

কেননা ঊছুলে ফিক্বাহর সমস্ত কিতাবেই উল্লেখ আছে যে-

اَلْاَمْرُ لِلْوُجُوُبِ

অর্থাৎ “আদেশসূচক বাক্য দ্বারা সাধারণত ফরয-ওয়াজিব সাব্যস্ত হয়ে থাকে।” যেমন পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ হয়েছে, اَقِيْمُوا الصَّلٰوةَ অর্থাৎ “তোমরা নামায আদায় করো।”

পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে নির্দেশসূচক বাক্য দ্বারাই নামায ফরয সাব্যস্ত হয়েছে। অনুরূপ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

وَاعْفُوا اللُّـحٰى

অর্থাৎ “তোমরা (পুরুষরা) দাড়ি লম্বা করো।” হাদীছ শরীফ উনার এ নির্দেশসূচক বাক্য দ্বারাই কমপক্ষে এক মুষ্ঠি পরিমাণ দাড়ি রাখা ফরয-ওয়াজিব সাব্যস্ত হয়েছে। ঠিক একইভাবে ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা অর্থাৎ পবিত্র ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ সোমবার এ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবস উপলক্ষে ঈদ করা তথা খুশি প্রকাশ করা বান্দা-বান্দী ও উম্মতের জন্য ফরয-ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত। কেননা এ ব্যাপারেও পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে বহু স্থানে আদেশ-নির্দেশ মুবারক রয়েছে।

اُذْكُرُوْا نِعْمَةَ اللهِ عَلَيْكُمْ

অর্থাৎ “তোমাদেরকে যে নিয়ামত মুবারক দেয়া হয়েছে, তোমরা সে নিয়ামত উনাকে স্মরণ করো।” (সূরা আলে ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১০৩)

পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

قُلْ بِفَضْلِ اللهِ وَبِرَحْمَتِهٖ فَبِذٰلِكَ فَلْيَفْرَحُوْا هُوَ خَيْرٌ مِّـمَّا يَـجْمَعُوْنَ.

অর্র্থ: “হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি উম্মাহকে জানিয়ে দিন, মহান আল্লাহ পাক তিনি ফযল-করম হিসেবে তাদেরকে যে দ্বীন ইসলাম দিয়েছেন এবং রহমত হিসেবে উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাঠিয়েছেন, সেজন্য তারা যেনো খুশি প্রকাশ করে। এই খুশি প্রকাশ করাটা সবকিছু থেকে উত্তম, যা তারা দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য সঞ্চয় করে।” (পবিত্র সূরা ইউনুস শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৮)

উল্লেখিত নির্দেশ মুবারক দ্বারা মহান আল্লাহ পাক প্রদত্ত নিয়ামত মুবারক উনার স্মরণ করা, নিয়ামত মুবারক উনার আলোচনা করা, নিয়ামত মুবারক উনার প্রাপ্তি উপলক্ষে নিয়ামত মুবারক উনার প্রাপ্তির দিন ঈদ বা খুশি প্রকাশ করা ফরয সাব্যস্ত হয়। অর্থাৎ ঈদ বা খুশি প্রকাশ করা ফরয। আর সে নিয়ামত মুবারক উনাকে ভুলে যাওয়া বা খুশি প্রকাশ না করা কঠিন শাস্তির কারণ। এ ব্যাপারে সকলেই একমত যে, শাস্তি থেকে বেঁচে থাকাও বান্দা-বান্দী ও উম্মতের জন্য ফরয।

এ বিষয়টি মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা মায়িদাহ শরীফ উনার ১১৪ নম্বর পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে আরো স্পষ্টভাবে ইরশাদ মুবারক করেন-

قَالَ عِيْسَى ابْنُ مَرْيَمَ اَللّٰهُمَّ رَبَّنَا أَنزِلْ عَلَيْنَا مَائِدَةً مِّنَ السَّمَاءِ تَكُوْنُ لَنَا عِيْدًا لِّأَوَّلِنَا وَاٰخِرِنَا وَاٰيَةً مِّنْكَ وَارْزُقْنَا وَأَنْتَ خَيْرُ الرَّازِقِيْنَ. قَالَ اللهُ إِنِّيْ مُنَزِّلُـهَا عَلَيْكُمْ فَمَنْ يَّكْفُرْ بَعْدُ مِنْكُمْ فَإِنِّيْ أُعَذِّبُه عَذَابًا لَّا أُعَذِّبُه أَحَدًا مِّنَ الْعَالَمِيْنَ.

অর্র্থ: “আয় আমাদের রব আল্লাহ পাক! আমাদের জন্য আপনি আসমান হতে (বেহেশতী খাদ্যের) খাদ্যসহ একটি খাঞ্চা নাযিল করুন। খাঞ্চা নাযিলের উপলক্ষটি অর্র্থাৎ খাদ্যসহ খাঞ্চাটি যেদিন নাযিল হবে সেদিনটি আমাদের জন্য, আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের জন্য ঈদ (খুশি) স্বরূপ হবে এবং আপনার পক্ষ হতে একটি নিদর্শন হবে। আমাদেরকে রিযিক দান করুন। নিশ্চয় আপনিই উত্তম রিযিকদাতা। মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, নিশ্চয়ই আমি তোমাদের প্রতি খাদ্যসহ খাঞ্চা নাযিল করবো। অতঃপর যে ব্যক্তি সে খাদ্যসহ খাঞ্চাকে এবং তা নাযিলের দিনটিকে ঈদ তথা খুশির দিন হিসেবে পালন করবে না বরং অস্বীকার করবে আমি তাকে এমন শাস্তি দিবো, যে শাস্তি সারা কায়িনাতের অপর কাউকে দিবো না।”  (পবিত্র সূরা মায়িদাহ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১১৪)

এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার দ্বারা সুস্পষ্ট ও অকাট্যভাবে প্রমাণিত হল যে, মুবারক নিয়ামত প্রাপ্তির দিনটি পূর্ববর্তী-পরবর্তী সকলের দজন্য ঈদ বা খুশির দিন। যা পবিত্র কুরআন শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ উনার দ্বারাই প্রমাণিত। আরো প্রমাণিত হয় যে, মুবারক নিয়ামত প্রাপ্তি উপলক্ষে মুবারক নিয়ামত প্রাপ্তির দিনে যারা ঈদ বা খুশি প্রকাশ করবেনা তারা কঠিন আযাব বা শাস্তির সম্মুখীন হবে। অর্থাৎ এ পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারাও মহান আল্লাহ পাক তিনি মুবারক নিয়ামত প্রাপ্তি উপলক্ষে মুবারক নিয়ামত প্রাপ্তির দিনে খুশি প্রকাশ করাকে ফরয করে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!

আমরা যে পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন করে থাকি তা মহান আল্লাহ পাক তিনি নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন তাই পালন করে থাকি। অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে স্বরণ করি উনার পবিত্র ছানা ছিফত মুবারক ও উনার পবিত্র আলোচনা মুবারক করি। এবং ঈদ বা খুশি প্রকাশার্থে বিভিন্ন নেক কাজ সম্পাদন করে থাকি। কাজেই এ আমলটি পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত। সে মহান আমলকে তারা হারাম বিদয়াত শিরক বলে ফতওয়া দেয় কোন দলীলের ভিত্তিতে। তাহলে কি তারা উল্লিখিত আয়াত শরীফ উনাদের হুকুম মানেনা। নাউযুবিল্লাহ! আসলেই তারা তা মানেনা যদি মানতো তবে কখোনোই পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হারাম বিদয়াত শিরক ফতওয়া দিত না। নাউযুবিল্লাহ!

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স্বয়ং নিজেই পবিত্র বিলাদত শরীফ উদযাপন করে উম্মত উনাদেরকে নছীহত মুবারক করেছেন এবং ফযীলত বর্ণনা করে করার ব্যাপারে উৎসাহিত করেছেন

এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, হযরত আবু কাতাদা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে বর্ণিত-

سُئِلَ عَنْ صَوْمِ الْاِثْنَيْنِ فَقَالَ فِيهِ وُلِدْتُّ وَفِيْهِ أُنْزِلَ عَلَيَّ

অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীমি সোমবার দিন রোযা রাখা সস্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন: এই দিন আমি পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছি এবং এই দিনেই আমার সম্মানিত নুবুওওয়াত মুবারক প্রকাশ হয়েছে। (মুসলিম শরীফ: পবিত্র হাদীছ শরীফ নং ২৮০৭)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ عَظَّمَ مَوْلِدِىْ كَانَ مَعِىَ فِـى الْـجَنَّةِ.

 অর্থ: “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বিলাদত শরীফ (তথা ঈদে মীলাদে হাবীবিল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উনাকে সম্মান করবেন, তিনি আমার সাথে সম্মানিত জান্নাত মুবারক-এ সম্মানিত অবস্থান মুবারক করবেন।” সুবহানাল্লাহ!

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

قَالَ النَّبِـىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ عَظَّمَ مَوْلِدِىْ وَهُوَ لَيْلَةُ اثْنَـىْ عَشَرَ مِنْ رَّبِيْعِ الْاَوَّلِ بِاتِّـخَاذِهٖ فِيْهَا طَعَامًا كُنْتُ لَه شَفِيْعًا يَّوْمَ الْقِيَامَةِ وَمَنْ اَنْفَقَ دِرْهَـمًا فِـىْ مَوْلِدِىْ اِكْرَامًا فَكَاَنَّـمَا اَنْفَقَ جَبَلًا مِّنْ ذَهَبٍ اَحْمَرَ فِـى الْيَتَامٰى فِـىْ سَبِيْلِ اللهِ

 অর্থ: “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি খাদ্য খাওয়ানের মাধ্যমে আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্রতম বরকতময় বিলাদত শরীফ ১২ই রবী‘উল আউওয়াল শরীফ রাত (ও দিবস) উনাকে যথাযথভাবে সম্মান করবেন, আমি ক্বিয়ামতের দিন তার জন্য পবিত্রতম শাফায়াতকারী হবো। সুবহানাল্লাহ! আর যে ব্যক্তি আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদত শরীফ উনার সুমহান সম্মানার্থে এক দিরহাম খরচ করবেন, সে ব্যক্তি ইয়াতীমদেরকে মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় এক পাহাড় পরিমান লাল স্বর্ণ দান করার ফযীলত লাভ করবেন। সুবহানাল্লাহ! (নে’মতে কুবরা উর্দূ ১১ পৃষ্ঠা)

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

 قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ عَظَّمَ مَوْلِدِىْ كُنْتُ شَفِيْعًا لَّه يَّوْمَ الْقِيَامَةِ وَمَنْ اَنْفَقَ دِرْهَـمًا فِـىْ مَوْلِدِىْ فَكَاَنَّـمَا اَنْفَقَ جَبَلًا مِّنْ ذَهَبٍ فِـىْ سَبِيْلِ اللهِ تَعَالـٰى

 অর্থ: “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বিলাদত শরীফ (ঈদে মীলাদে হাবীবিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উনাকে তাযীম-তাকরীম, ইজ্জত ও সম্মান করবেন, ক্বিয়ামতের দিন আমি তার জন্য  পবিত্রতম শাফায়াতকারী হবো। সুবহানাল্লাহ! আর যে ব্যক্তি আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্রতম বিলাদত শরীফ পালন উপলক্ষে এক দিরহাম খরচ করবেন, সে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় এক পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ দান করার ফযীলত লাভ করবেন। সুবহানাল্লাহ!”(নাফহাতুল আম্বরিয়া ৮ পৃষ্ঠা, মাদারিজুস সউদ ১৫ পৃ., তালহীনুছ ছাননাজ ৫ পৃষ্ঠা)

 

হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহুম উনারাও পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন করেছেন ও উৎসাহিত করেছেন

 

এ সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَنَّهٗ كَانَ يُـحَدِّثُ ذَاتَ يَوْمٍ فِىْ بَيْتِهٖ وَقَائِعَ وِلَادَتِهٖ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِقَوْمٍ فَيَسْتَبْشِرُوْنَ وَيُـحَمِّدُوْنَ اللهَ وَيُصَلُّوْنَ عَلَيْهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاِذَا جَاءَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ حَلَّتْ لَكُمْ شَفَاعَتِىْ.

অর্থ : “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি একদা উনার নিজগৃহে সমবেত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ সম্পর্কিত মুবারক ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছিলেন। এতে শ্রবণকারী উনারা আনন্দ ও খুশি প্রকাশ করছিলেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার প্রশংসা তথা তাসবীহ-তাহলীল মুবারক পাঠ করছিলেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি (পবিত্র ছলাত শরীফ-পবিত্র সালাম শরীফ) পবিত্র দুরূদ শরীফ পাঠ করছিলেন। এমন সময় নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তথায় তাশরীফ মুবারক নেন এবং (পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠের অনুষ্ঠান দেখে) খুশী মুবারক প্রকাশ করে ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনাদের জন্য আমার শাফায়াত মুবারক ওয়াজিব।” সুবহানাল্লাহ! (আত তানউয়ীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর, মাওলূদুল কাবীর, দুররুল মুনাযযাম, সুবুলুল হুদা ফী মাওলিদিল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ইশবাউল কালামি ফী ইছবাতিল মাওলিদি ওয়াল ক্বিয়ামি, হাক্বীক্বতে মুহম্মদী মীলাদে আহমদী)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَبِى الدَّرْدَاءِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَنَّهٗ مَرَّ مَعَ النَّبِىّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِلٰى بَيْتِ عَامِرِ الاَنْصَارِىِّ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ وَكَانَ يُعَلِّمُ وَقَائِعَ وِلَادَتِهٖ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِاَبْنَائِهٖ وَعَشِيْرَتِهٖ وَيَقُوْلُ هٰذَا الْيَوْمَ هٰذَا الْيَوْمَ فَقَالَ عَلَيْهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلامُ اِنَّ اللهَ فَتَحَ لَكَ اَبْوَابَ الرَّحْـمَةِ وَالْمَلائِكَةُ كُلُّهُمْ يَسْتَغْفِرُوْنَ لَكَ مَنْ فَعَلَ فِعْلَكَ نَـجٰى نَـجٰتَكَ.

অর্থ : “হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে যে, একদা তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে হযরত আমির আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার গৃহে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলেন যে, তিনি উনার সন্তান-সন্ততি এবং আত্মীয়-স্বজন, জ্ঞাতি-গোষ্ঠী, পাড়া-প্রতিবেশী উনাদেরকে নিয়ে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ সম্পর্কীয় মুবারক ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছেন এবং বলছেন, এই দিবস; এই দিবস (অর্থাৎ এই দিবসে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীনে তাশরীফ মুবারক এনেছেন এবং ইত্যাদি ইত্যাদি ঘটেছে)। এতদশ্রবণে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খুশী মুবারক প্রকাশ করে ইরশাদ মুবারক করেন, “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি উনার মুবারক রহমত উনার দরজা মুবারকসমূহ আপনার জন্য উম্মুক্ত করেছেন এবং সমস্ত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা আপনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছেন এবং যে কেউ আপনার মত এরূপ কাজ করবে, তিনিও আপনার মত নাজাত (ফযীলত) লাভ করবেন।” সুবহানাল্লাহ! (আত তানউইর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর, মাওলূদুল কাবীর, দুররুল মুনাযযাম, সুবুলুল হুদা ফী মাওলিদিল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ইশবাউল কালামি ফী ইছবাতিল মাওলিদি ওয়াল ক্বিয়ামি, হাক্বীক্বতে মুহম্মদী মীলাদে আহমদী)

এ প্রসঙ্গে বিশ্ব সমাদৃত ও সুপ্রসিদ্ধ মীলাদ শরীফ-এর কিতাব “আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম ফী মাওলিদি সাইয়্যিদি উলদি আদম”-এ বর্ণিত রয়েছে-

قَالَ حَضْرَتْ اَبُوْ بَكْرِنِ الصِّدِّيْقُ عَلَيْهِ السَّلَامُ مَنْ اَنْفَقَ دِرْهَـمًا عَلٰى قِرَائَةِ مَوْلِدِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ رَفِيْقِىْ  فِى الْـجَنَّةِ.

অর্থ: (নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের পরে শ্রেষ্ঠ মানুষ) হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে এক দিরহাম ব্যয় করবে, সে জান্নাতে আমার বন্ধু হয়ে থাকবে।” সুবহানাল্লাহ! (আন নি’মাতুল কুবরা)

قَالَ حَضْرَتْ عُمَرُ عَلَيْهِ السَّلَامُ مَنْ عَظَّمَ مَوْلِدَ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَدْ اَحْيَا الْاِسْلَامَ.

অর্থ: হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তথা বিলাদত শরীফকে বিশেষ মর্যাদা দিলো অর্থাৎ এ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করলো, সে মূলত ইসলামকেই পুনরুজ্জীবিত করলো।” সুবহানাল্লাহ!

এ প্রসঙ্গে আরো বর্ণিত আছে-

قَالَ حَضْرَتْ عُثْمَانُ ذُو النُّوْرَيْنِ عَلَيْهِ السَّلَامُ مَنْ اَنْفَقَ دِرْهَـمًا عَلٰى قِرَائَةِ مَوْلِدِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَكَاَنّـَمَا شَهِدَ غَزْوَةَ بَدْرٍ وَّحُنَيْنٍ.

অর্থ: আমীরুল মু’মিনীন হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে খুশি হয়ে এক দিরহাম খরচ করলো, সে যেনো বদর ও হুনাইন যুদ্ধে শরীক থাকলো।” সুবহানাল্লাহ! (আন নি’মাতুল কুবরা)

قَالَ حَضْرَتْ عَلِىٌّ كَرَّمَ اللهُ وَجْهَه عَلَيْهِ السَّلَامُ مَنْ عَظَّمَ مَوْلِدَ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَكَانَ سَبَبًا لِّقِرَائَتِهٖ لايَـخْرُجُ مِنَ الدُّنْيَا اِلَّا بِالْاِيْـمَانِ وَيَدْخُلُ الْـجَنَّةَ بِغَيْرِ حِسَابٍ.

অর্থ: হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বিশেষ মর্যাদা প্রদান করলো অর্থাৎ সে উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করলো, সে ব্যক্তি অবশ্যই ঈমান নিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিবে এবং বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” সুবহানাল্লাহ! (আন নি’মাতুল কুবরা)

অনুসরনীয় ইমাম মুজতাহিদ ও আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারাও পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন করেছেন ও উৎসাহিত করেছেন

এ প্রসঙ্গে বিশ্ব সমাদৃত ও সুপ্রসিদ্ধ মীলাদ শরীফ-এর কিতাব “আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম ফী মাওলিদি সাইয়্যিদি উলদি আদম”-এ বর্ণিত রয়েছে-

ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত তরীক্বত বিশিষ্ট তাবিয়ী হযরত ইমাম হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-

وَدِدْتُّ لَوْ كَانَ لِىْ مِثْلُ جَبَلِ اُحُدٍ ذَهَبًا فَاَنْفَقْتُه  عَلٰى قِرَاءَةِ مَوْلِدِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.

অর্থ: “আমার একান্ত ইচ্ছা হয় যে, আমার যদি উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ থাকতো তাহলে আমি তা মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে ব্যয় করতাম।” সুবহানাল্লাহ! (আন নি’মাতুল কুবরা)

قَالَ حَضْرَتْ اَلْاِمَامُ الشَّافِعِىُّ رَحِـمَهُ اللهُ مَنْ جَـمَعَ لِمَوْلِدِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِخْوَانًا وَهَيَّاَ طَعَامًا وَاَخْلٰى مَكَانًا وَعَمَلَ اِحْسَانًا وَصَارَ سَبَبًا لِّقِرَائَتِهٖ بَعَثَهُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَعَ الصِّدِّيْقِيْنَ وَالشُّهَدَاءِ وَالصَّالِـحِيْنَ وَيَكُوْنُ فِىْ جَنَّاتِ النَّعِيْمِ.

অর্থ: “শাফিয়ী মাযহাবের ইমাম হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করার জন্য লোকজন একত্রিত করলো এবং খাদ্য তৈরি করলো ও জায়গা নির্দিষ্ট করলো এবং উত্তমভাবে (তথা সুন্নাহভিত্তিক) আমল করলো তাহলে উক্ত ব্যক্তিকে আল্লাহ পাক তিনি হাশরের দিন ছিদ্দীক্ব, শহীদ, ছালিহীনগণের সাথে উঠাবেন এবং উনার ঠিকানা হবে জান্নাতুল নায়ীমে।” সুবহানাল্লাহ!

আল্লাহ পাক উনার বিশিষ্ট ওলী হযরত ইমাম মারূফ কারখী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-

مَنْ هَيَّأَ طَعَامًا لِّاَجْلِ قِرَائَةِ مَوْلِدِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَجَـمَعَ اِخْوَانًا وَاَوْقَدَ سِرَاجًا وَلَبِسَ جَدِيْدًا وَتَبَخَّرَ وَتَعَطَّرَ تَعْظِيْمًا لِّـمَوْلِدِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَشَرَهُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَعَ الْفِرْقَةِ الْاُوْلٰى مِنَ النَّبِيِّيْنَ وَكَانَ فِىْ اَعْلٰى عِلِّيِّيْنَ.

অর্থ: “আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে যিনি খুশি প্রকাশ করে খাদ্য প্রস্তুত করবেন এবং এর সম্মানার্থে মুসলমান ভাইদের একত্রিত করবেন, (আলো দানের উদ্দেশ্যে) প্রদীপ বা বাতি জ্বালাবেন, নতুন পোশাক পরিধান করবেন, (সুগন্ধির উদ্দেশ্যে) ধূপ জ্বালাবেন এবং আতর-গোলাপ মাখবেন, ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ পাক তিনি তাঁর হাশর-নশর করবেন হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রথম দলের সাথে এবং তিনি সুউচ্চ ইল্লীনে অবস্থান করবেন।” সুবহানাল্লাহ!

قَاَل حَضْرَتْ سَيِّدُ الطَّايِفَةِ جُنَيْدٌ بَغْدَادِيُّ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ مَنْ حَضَرَ مَوْلِدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَعَظَّمَ قَدْرَه فَقَدْ فَازَ بِالْإِيْـمَانِ.

অর্থ: “সাইয়্যিদুত ত্বায়িফা হযরত জুনাইদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, যে ব্যক্তি মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আয়োজনে খুশি প্রকাশ করার জন্য উপস্থিত হলো এবং উপযুক্ত সম্মান প্রদর্শন করলো। সে তার ঈমানের দ্বারা সাফল্য লাভ করবে অর্থাৎ সে বেহেশতী হবে।” সুবহানাল্লাহ! (আন নি’মাতুল কুবরা)

এই উপমহাদেশে যিনি হাদীছ শরীফ শাস্ত্রের প্রচার-প্রসার করেছেন, ইমামুল মুফাসসিরীন ওয়াল মুহাদ্দিছীন ওয়াল ফুক্বাহা হযরত শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-

مَنْ عَظَّمَ لَيْلَةَ مَوْلِدِهٖ بِـمَاۤ اَمْكَنَه  مِنَ التَّعْظِيْمِ وَالْاِكْرَامِ كَانَ مِنَ الْفَائِزِيْنَ بِدَارِ السَّلَامِ.

অর্থ: “যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ দিবসকে তা’যীম করবে এবং সে উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করবে; সে চির শান্তিময় জান্নাতের অধিকারী হবে।” সুবহানাল্লাহ! (খুতবায়ে ইবনে নুবাতা)

-মুফতী মুহম্মদ ইবনে ইসহাক।

আলআছদাকু, আলআত্বহারু, আলআত্বইয়াবু, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক শেষে সংক্ষেপে (সাঃ, দঃ) দুরূদ শরীফ লিখা প্রসঙ্গে

আওওয়ালু শাফিয়িন, আওওয়ালু মুশাফ্ফায়িন, আওওয়ালু মাঁইইয়ুর্হারিক হালক্বাল জান্নাতি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ‘বিশ্বনেতা’, ‘মহামানব’, ‘মহাপুরুষ’, ইত্যাদি শব্দ দ্বারা সম্বোধন করা প্রসঙ্গে

ইমামুল মুরসালীনা, ইমামুন্ নাবিইয়ীনা, ইমামুল উম্মাতি, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা আম্মা সাইয়্যিদাতুন্ নিসায়ি আলাল আলামীন হযরত আমিনা আলাইহাস্্ সালাম রচিত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ না’ত শরীফ প্রমাণ করে যে, তিনি ইলমে গইব-এর অধিকারিণী ছিলেন

আলবাশীরু, আলবালীগু, আলবাদরুল মুনীরু, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়াগণ অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না উনাদের ফাযায়িল-ফযীলত ও পবিত্রতা

জালীলুল ক্বদরি, জামীলুয যিকরি, জাওয়ামিউল কালিমি, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উর্ধ্বতন পূর্বপুরুষ উনারা ছিলেন পবিত্র থেকে পবিত্রতম