পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের আলোকে সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অর্থাৎ পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার পক্ষে অকাট্য দলীল প্রমাণ (১ম পর্ব)

সংখ্যা: ২৭০তম সংখ্যা | বিভাগ:

পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের আলোকে সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অর্থাৎ পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার পক্ষে অকাট্য দলীল প্রমাণ (১ম পর্ব)

 

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

قُلْ هَاتُوْا بُرْهَانَكُمْ اِنْ كُنْتُمْ صَادِقِيْـنَ

অর্থ: আপনি বলুন: সত্যবাদী হলে দলীল পেশ কর। (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১১১)

বিখ্যাত মুহাদ্দিছ, মুফাসসির, ফক্বীহ, ইমাম, আল্লামা আবু সাঈদ মুল্লা জিউন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার মশহুর এবং বিখ্যাত কিতাব ‘নুরূল আনওয়ার’ উনার মধ্যে লিখেন:

اِعْلَمْ أَنَّ اُصُوْلَ الشَّرْعِ ثَلَاثَةٌ اَلْكِتَابُ وَالسُّنَّةُ وَالْاِجْـمَاعُ وَالْأَصْلُ الرَّابِعُ اَلْقِيَاسُ

অর্থ: জেনে রাখ!  নিশ্চয়ই সম্মানিত শরীয়ত উনার উছুল হলো তিনটি: কিতাবুল্লাহ, সুন্নাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং ইজমা আর চতুর্থ উছুল হলো ক্বিয়াস।

প্রমাণিত হলো যে, যারা বিনা দলীলে কথা বলে তারা মিথ্যাবাদী। কাজেই সম্মানিত শরীয়ত উনার মধ্যে দলীলবিহীন কোন কিছুই গ্রহণযোগ্য নয়।

সম্মানিত শরীয়ত উনার কোনো বিষয়কে হালাল বা হারাম, জায়িয বা নাযায়িয প্রমাণ করতে হলে পবিত্র কুরআন শরীফ অথবা পবিত্র হাদীছ শরীফ অথবা পবিত্র ইজমা শরীফ অথবা পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ থেকে দলীল পেশ করতে হবে।

কেননা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

اَلْـحَلَالُ بَيِّنٌ ، وَالْـحَرَامُ بَيِّنٌ

অর্থ: হালাল সুষ্পষ্ট আর হারামও সুষ্পষ্ট। (বুখারী শরীফ)

অত্রএব, সম্মানিত শরীয়ত উনার কোনো বিষয় উল্লেখিত চার দলীলের কোনো একটি দ্বারাও যদি হালাল বা হারাম সাব্যস্ত হয়, তবে সেই হালাল বিষয়কে হারাম বলা আর হারাম বিষয়কে হালাল বলা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

يَا اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تُـحَرِّمُوْا طَيِّبَاتِ مَا اَحَلَّ اللهُ لَكُمْ وَلَا تَعْتَدُوْا اِنَّ اللهَ لَا يـُحِبُّ الْمُعْتَدِيْنَ

অর্থ: হে ইমানদাররা! মহান আল্লাহ পাক তোমাদের জন্য পবিত্র যে বিষয়গুলোকে হালাল করেছেন তোমরা তা হারাম করোনা এবং এ ব্যাপারে সীমালঙ্ঘন করোনা । নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি সীমালঙ্ঘন কারীকে পছন্দ করেন না। (পবিত্র সূরা আল মায়িদা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৮৭)

আর আক্বাইদ উনার কিতাবে উল্লেখ আছে-

اِسْتِحْلَالُ الْـمَعْصِيَةِ كُفْرٌ

অর্থ: হারাম বিষয়কে হালাল মনে করা কুফরী। (শরহে আক্বাইদে নাসাফী) অনুরূপ হালালকে হারাম বলাও কুফুরী।

উল্লেখ্য, সম্মানিত শরীয়ত উনার যে বিষয়গুলো হালাল বা হারাম হওয়ার ব্যাপারে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের সুষ্পষ্ট কোনো দিক নির্দেশনা নেই সে বিষয়গুলো মুবাহের অন্তর্ভুক্ত। এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ আছে-

اَصْلُ الشَّىْءِ اِبَاحَةٌ

অর্র্র্থ: কোনো বস্তুর মূল হচ্ছে মুবাহ।

যদি মনে করা হয়, সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অর্থাৎ পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উদযাপন করার পক্ষে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের মধ্যে সুষ্পষ্ট কোনো বর্ণনা নেই; কিন্তু উদযাপন করা যাবেনা বা উদযাপন করা হারাম এ মর্মে সুষ্পষ্ট কোনো বর্ননা আছে কি? নেই।

যদি তাই হয়ে থাকে তবে সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অর্থাৎ পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উদযাপন করাকে কি করে নাজায়িয, বিদয়াত ও হারাম বলা যেতে পারে?

মূলত: এটাকে নাজায়িয ও হারাম বলার অর্থ হলো সম্মানিত শরীয়ত উনার মধ্যে নতুন আইন প্রণয়ন করা বা কাদিয়ানীর ন্যায় নবী দাবী করা। যা ঈমানহারা হয়ে কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী হওয়ার কারণ। নাউযুবিল্লাহ!

তাহলে যে বিষয়গুলো পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দ্বারা সুষ্পষ্টভাবে প্রমাণিত সে বিষয়গুলোকে যারা হারাম নাজায়িয ও বিদয়াত বলবে তাদের ফায়ছালা কি হবে? মূলত: তারাও কাদিয়ানীর ন্যায় কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী সাব্যস্ত হবে। নাউযুবিল্লাহ!

এবার আসুন আমরা দেখি পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের মধ্যে সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অর্থাৎ পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার পক্ষে কোনো দলীল আছে কিনা?

সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম

অর্থাৎ পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ

উনার লুগাতী বা শাব্দিক অর্থ

লুগাতী বা শাব্দিক অর্থ: عِيْدٌ (ঈদ) শব্দের লুগাতী বা শাব্দিক অর্থ হচ্ছে খুশি প্রকাশ করা, বারবার ফিরে আসা। যা সকল বিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য অভিধান গ্রন্থসমূহে উল্লেখ আছে।

مِيْلَادٌ (মীলাদ) শব্দের লুগাতী বা শাব্দিক অর্থ হচ্ছে: পবিত্র বিলাদত শরীফ উনার সময়। যা সকল বিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য অভিধানগ্রন্থ সমূহে উল্লেখ আছে।

حَبِيْبُ اللهِ (হাবীবুল্লাহ) শব্দের শাব্দিক অর্থ হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি।

ইছতিলাহী বা পারিভাষিক অর্থ:

ইছতিলাহী বা পারিভাষিক অর্থে এক কথায় “ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম” বলতে বুঝায় “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত মুবারক হিসেবে এবং উনার সম্মানার্থে সমস্ত নিয়ামত মুবারক লাভ করার কারণে খুশি প্রকাশ করা।” অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার নিয়ামত মুবারক উনার শুকরিয়া আদায় করার লক্ষে খুশি প্রকাশ করে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ বা যমীনে মুবারক তাশরীফ উনার সংশ্লিষ্ট ওয়াক্বিয়াহ মুবারকগুলো আলোচনা করা, উনার পবিত্র ছানা ছিফত মুবারক বর্ণনা করা ও উনার প্রতি পবিত্র ছলাত শরীফ ও পবিত্র সালাম শরীফ পেশ করা এবং এ উপলক্ষ্যে যেকোনো নেক আমল সম্পাদন করা ও তাবারুকের ব্যবস্থা করা। সুবহানাল্লাহ!

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ বা যমীনে তাশরীফ মুবারক আনার বিষয়সমূহ আলোচনা করা ও উনার প্রতি ছলাত শরীফ, সালাম শরীফ পেশ করা স্বয়ং মহান

আল্লাহ পাক উনার সুন্নত মুবারক

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَاِذْ اَخَذَ اللّٰـهُ مِيْثَاقَ النَّبِيِّيْنَ لَمَا اٰتَيْتُكُم مِّنْ كِتَابٍ وَّحِكْمَةٍ ثُـمَّ جَاءَكُمْ رَسُوْلٌ مُّصَدِّقٌ لِّمَا مَعَكُمْ لَتُؤْمِنُنَّ بِهٖ وَلَتَنْصُرُنَّه ۚ قَالَ اَاَقْرَرْتُـمْ وَاَخَذْتُمْ عَلٰى ذٰلِكُمْ اِصْرِيْ ۖ قَالُوْا أَقْرَرْنَا ۚ قَالَ فَاشْهَدُوْا وَاَنَا مَعَكُمْ مِّنَ الشَّاهِدِيْنَ

অর্থ: স্মরণ করুন, যখন মহান আল্লাহ তিনি হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের নিকট থেকে দৃঢ় শপথ নিয়েছিলেন যে, আমি আপনাদেরকে যে কিতাব ও হিকমত দান করব, আর আপনাদের নিকট আমার মহাসম্মানিত রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আসবেন যিনি আপনাদের বিষয়গুলোকে সত্যায়িত করবেন, তখন আপনারা অবশ্য অবশ্যই উনার প্রতি ঈমান গ্রহণ করবেন এবং অবশ্যই উনাকে সাহায্য করবেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন আপনারা কি স্বীকার করলেন? এবং এ সম্পর্কে আমার ওয়াদা গ্রহণ করলেন? উনারা সবাই জবাব দিলেন আমরা স্বীকার করলাম। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনারা সাক্ষী থাকুন এবং আমি নিজেও আপনাদের সাথে সাক্ষী রইলাম। (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৮১)

মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

قَدْ جَاءَكُم مِّنَ اللهِ نُوْرٌ وَّكِتَابٌ مُّبِيْـنٌ

অর্থ: নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট মহাসম্মানিত নূর মুবারক ও সুষ্পষ্ট কিতাব মুবারক এসেছেন। সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা মায়িদাহ শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ১৫)

মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

لَقَدْ مَنَّ اللهُ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ اِذْ بَعَثَ فِيْهِمْ رَسُوْلًا مِّنْ اَنْفُسِهِمْ يَتْلُوْا عَلَيْهِمْ اٰيَاتِهٖ وَيُزَكِّيْهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْـحِكْمَةَ وَاِنْ كَانُوْا مِنْ قَبْلُ لَفِىْ ضَلَالٍ مُّبِيْنٍ

অর্থ: নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি মু’মিন উনাদেরকে ইহসান মুবারক করেছেন যে, উনাদের জন্য একজন মহাসম্মানিত রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পাঠিয়েছেন, যিনি তাদের উপর উনার আয়াতসমূহ পাঠ করে শুনাবেন, উনাদেরকে পবিত্র করবেন এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দিবেন যদিও উনারা এর পূর্বে হেদায়েতপ্রাপ্ত ছিল না।” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৬৪)

মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

لَقَدْ جَاءَكُمْ رَسُوْلٌ مِّنْ اَنْفُسِكُمْ عَزِيْزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيْصٌ عَلَيْكُمْ بِالْمُؤْمِنِيْـنَ رَءُوْفٌ رَّحِيْمٌ

অর্থ: নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য একজন মহাসম্মানিত রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেছেন। তোমাদের কষ্ট উনার নিকট অসহনীয়, তোমাদের জন্য তিনি অতিশয় কল্যাণ কামনাকারী, মুমিনদের প্রতি অত্যাধিক দয়ালু। সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সুরা তাওবা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১২৮)

মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

اِنَّ اللهَ وَمَلَائِكَتَه يُصَلُّوْنَ عَلَى النَّبِيِّ ۚ

অর্থ: নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান শান মুবারকে ছলাত শরীফ পেশ করেন। (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৫৬)

উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা সুষ্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হয় যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যমীনে তাশরীফ মুবারক আনার বিষয়টি আলোচনা করা ও উনার প্রতি ছলাত শরীফ-সালাম শরীফ পেশ করা অর্থাৎ পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করা মহান আল্লাহ পাক উনার খাছ সুন্নত মুবারক। সুবহানাল্লাহ!

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আলোচনা মুবারক করতে ও উনার প্রতি পবিত্র ছলাত শরীফ-পবিত্র সালাম শরীফ পেশ করতে স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনিই নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

اِنَّا اَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَّمُبَشِّرًا وَّنَذِيْرًا لِتُؤْمِنُوْا بِاللهِ وَرَسُوْلِهٖ وَتُعَزِّرُوْهُ وَتُوَقِّرُوْهُ وَتُسَبِّحُوْهُ بُكْرَةً وَّأَصِيْلًا

অর্থ: নিশ্চয়ই আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি স্বাক্ষিদাতা, অর্থাৎ হাজির হিসেবে, সুসংবাদদাতা ও ভয় প্রদর্শনকারী হিসেবে। যাতে তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল উনার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করো এবং উনাকে সম্মান করো এবং উনার ছানা ছিফত করো সকাল-সন্ধ্যা অর্থাৎ দায়িমীভাবে। (পবিত্র সূরা ফাতহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৮,৯)

মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

يَا أَيُّهَا النَّاسُ اذْكُرُوْا نِعْمَتَ اللهِ عَلَيْكُمْ

অর্থ: হে মানুষেরা; তোমাদের প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার প্রদত্ত (সর্বশ্রেষ্ঠ) নিয়ামত মুবারক উনাকে স্মরণ করো। সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সুরা ফাতির শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩)

মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا صَلُّوْا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوْا تَسْلِيْمًا

অর্থ: হে ঈমানদারগণ! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান শান মুবারকে আপনারাও ছলাত শরীফ পেশ করুন এবং উনার সুমহান শান মুবারকে যথাযথ সম্মানে সালাম মুবারক পেশ করুন। (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৫৬)

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আলোচনা মুবারক করা স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারই সুন্নত মুবারক:

এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتِ الْعِرْبَاضِ بْنِ سَارِيَةَ السَّلَمِيُّ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ سَـمِعْتْ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ اِنِّـىْ عَبْدُ اللهِ فِـىْ أُمِّ الْكِتَابِ الْـخَاتِـمُ النَّبِيِّيـْنَ وَاَنَّ حَضْرَتْ اٰدَمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ لَـمُنْجَدَلٌ فِـيْ طِيْنَتِهٖ وَسَاُنَبِّئُكُمْ بِتَأْوِيْلِ ذٰلِكَ دَعْوَةُ أَبِـيْ اِبْرَاهِيْمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَبِشَارَةُ عِيْسٰى عَلَيْهِ السَّلَامُ قَوْمَه وَرُؤْيَا اُمِّيَ الَّتِـيْ رَأَتْ اَنَّه خَرَجَ مِنْهَا نُوْرٌ اَضَاءَتْ لَه قُصُوْرَ الشَّامِ وَكَذَالِكَ تَرٰى أُمَّهَاتُ النَّبِيِّيْنَ صَلَوَاتُ اللهِ عَلَيْهِمْ.

অর্থ: হযরত ইরবাদ্ব ইবনে সারিয়া সালামী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণনা করেন যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আমি বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেন, মূল কিতাবে আমি হলাম মহান আল্লাহ পাক উনার এমন বান্দাহ যিনি হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম উনাদের আগমন সমাপ্তকারী সর্বশেষ নবী, অথচ তখন হযরত আদম ছফীউল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি কাদা মাটিতেই ছিলেন। আমি অবশ্যই তোমাদেরকে আমার আগমন বা পবিত্র বিলাদত শরীফ সম্পর্কে সংবাদ দিচ্ছি। আমি হলাম হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার দোয়া এবং হযরত ঈসা রুহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি উনার উম্মতের নিকট যার মুবারক আগমন সংবাদ দিয়েছিলেন এবং আমার সম্মানিত আম্মা আলাইহাস সালাম আমার মুবারক আগমনের সময় যে নূর মুবারক দেখেছিলেন, যার মাধ্যমে তিনি তখন শাম দেশের প্রাসাদগুলো দেখতে পেয়েছিলেন, যেমনিভাবে হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম উনাদের সম্মানিত মাতাগণ দেখে থাকেন। সুবহানাল্লাহ! (মুসনাদে ইমাম আহমদ শরীফ)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتِ الْمُطَّلِبِ بْنِ أَبِيْ وَدَاعَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ جَاءَ الْعَبَّاسُ عَلَيْهِ السَّلَامُ إِلٰـى رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَكَأَنَّه سَمِعَ شَيْئًا فَقَامَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى الْمِنْبَرِ فَقَالَ مَنْ أَنَا فَقَالُوْا أَنْتَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَيْكَ السَّلَامُ قَالَ أَنَا مُـحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ عَلَيْهِمُ السَّلَامُ اِنَّ اللهَ خَلَقَ الْـخَلْقَ فَجَعَلَنِيْ فِيْ خَيْرِهِمْ فِرْقَةً ثُمَّ جَعَلَهُمْ فِرْقَتَيْنِ فَجَعَلَنِيْ فِيْ خَيْرِهِمْ فِرْقَةً ثُمَّ جَعَلَهُمْ قَبَائِلَ فَجَعَلَنِيْ فِيْ خَيْرِهِمْ قَبِيْلَةً ثُمَّ جَعَلَهُمْ بُيُوْتًا فَجَعَلَنِيْ فِيْ خَيْرِهِمْ بَيْتًا وَخَيْرِهِمْ نَسَبًا قَالَ أَبُوْ عِيْسٰى هٰذَا حَدِيْثٌ حَسَنٌ

অর্থ: হযরত মুত্তালিব ইবনে আবি ওয়াদায়াহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে হাযির হয়ে আরয করলেন, তিনি কি যেন শুনে এসেছেন। এতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মিম্বর শরীফে দাঁড়িয়ে গেলেন আর জিজ্ঞাসা করলেন, বলুন দেখি আমি কে? প্রতি উত্তরে উনারা বললেন আপনি হলেন মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আপনার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। জবাব শুনে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমি হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার ছেলে হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আমার দাদা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম। মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি যা সৃষ্টি করেছেন নিশ্চয়ই তন্মধ্যে আমাকে শ্রেষ্ঠ করেছেন। অতঃপর তাদেরকে গোত্রে গোত্রে বিভক্ত করেছেন এবং আমাকে তাদের শ্রেষ্ঠ গোত্রের মধ্যে রেখেছেন। অতঃপর তাদেরকে পরিবার ও বংশে ভাগ করেছেন এবং আমাকে তাদের শ্রেষ্ঠতম পরিবার ও বংশে রেখেছেন। অতএব, আমি হলাম বংশ ও পরিবারের দিক থেকে  সর্বশ্রেষ্ঠ।” সুবহানাল্লাহ! ইমাম তিরমিযী বলেন, এ পবিত্র হাদীছ শরীফখানা হল ‘হাদীছে হাসান’। (তিরমিযী শরীফ)

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আলোচনা মুবারক করা অন্যান্য হযরত নবী রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরও সুন্নত মুবারক

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَإِذْ قَالَ عِيْسَى ابْنُ مَرْيَمَ يَا بَنِيْ إِسْرَائِيْلَ إِنِّيْ رَسُوْلُ اللهِ إِلَيْكُم مُّصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيَّ مِنَ التَّوْرَاةِ وَمُبَشِّرًا بِرَسُوْلٍ يَّأْتِيْ مِنْ بَعْدِي اسْمُه أَحْمَدُ

অর্থ: স্মরণ করুন, যখন হযরত ঈসা রুহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, হে বনী ইসরাইল! আমি তোমাদের নিকট মহান আল্লাহ পাক উনার প্রেরিত রসূল, পূর্ববর্তী পবিত্র তাওরাত শরীফ কিতাব উনার আমি সত্যায়নকারী এবং আমি এমন একজন সম্মানিত রসূল উনার সুসংবাদদাতা, যিনি আমার পরে তাশরীফ মুবারক আনবেন। উনার পবিত্র নাম মুবারক হবেন ‘আহমদ’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা ছফ শরীফ; পবিত্র আয়াত শরীফ ৬১)

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আলোচনা মুবারক করা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরও সুন্নত মুবারক:

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَبِى الدَّرْدَاءِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَنَّهٗ مَرَّ مَعَ النَّبِىّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِلٰى بَيْتِ عَامِرِ الْاَنْصَارِىِّ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ وَكَانَ يُعَلِّمُ وَقَائِعَ وِلَادَتِهٖ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِاَبْنَائِهٖ وَعَشِيْرَتِهٖ وَيَقُوْلُ هٰذَا الْيَوْمَ هٰذَا الْيَوْمَ فَقَالَ عَلَيْهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلامُ اِنَّ اللهَ فَتَحَ لَكَ اَبْوَابَ الرَّحْـمَةِ وَالْمَلَائِكَةُ كُلُّهُمْ يَسْتَغْفِرُوْنَ لَكَ مَنْ فَعَلَ فِعْلَكَ نَـجٰى نَـجٰتَكَ.

অর্থ: “হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে যে, একদা তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে আমির আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার গৃহে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলেন যে, তিনি উনার সন্তানাদি এবং আত্মীয় স্বজন, জ্ঞাতী-গোষ্ঠী, পাড়া-প্রতিবেশীদেরকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম উনার বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের মুবারক ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছেন এবং বলছেন, এই দিবস এই দিবস (অর্থাৎ এই দিবসে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম তিনি যমীনে তাশরীফ মুবারক এনেছেন। এই দিবসে ইহা সংঘটিত হয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি)। এতদ্বশ্রবণে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ওয়া সালাম তিনি বলেন, “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার রহমতের দরজাসমূহ আপনার জন্য উন্মুক্ত করেছেন এবং সমস্ত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা আপনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছেন এবং যে কেউ আপনার মত এরূপ কাজ করবে, আপনার মত সেও নাজাত (ফযীলত) লাভ করবে।” সুবহানাল্লাহ! (কিতাবুত তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান্ নাযীর, ছুবুলুল হুদা ফী মাওলিদে মুস্তফা ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)

এ সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْه اَنَّهٗ كَانَ يُـحَدِّثُ ذَاتَ يَوْمٍ فِىْ بَيْتِهٖ وَقَائِعَ وِلَادَتِهٖ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِقَوْمٍ فَيَسْتَبْشِرُوْنَ وَيُـحَمِّدُوْنَ اللهَ وَيُصَلُّوْنَ عَلَيْهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاِذَا جَاءَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ حَلَّتْ لَكُمْ شَفَاعَتِىْ.

অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনার থেকে বর্ণিত আছে যে, একদা তিনি বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে উনার নিজগৃহে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে সমবেত করে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদতী শান মুবারক উনার ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছিলেন। এতে শ্রবণকারীগণ আনন্দ ও খুশি প্রকাশ করছিলেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার প্রশংসা তথা তাসবীহ-তাহলীল পাঠ করছিলেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর (পবিত্র ছলাত ও পবিত্র সালাম তথা) পবিত্র দুরূদ শরীফ পাঠ করছিলেন। এমন সময় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তথায় উপস্থিত হয়ে বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করতে দেখে বললেন, আপনাদের জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব।” সুবহানাল্লাহ! (কিতাবুত তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর, ছুবুলুল হুদা ফী মাওলিদিল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اُمِّ الْـمُؤْمِنِيْنَ الثَّالِثَةِ الصِّدِّيْقَةِ عَلَيْهَا السَّلَامُ قَالَتْ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَضَعُ لِـحَسَّانَ مِنْبَرًا فِي الْمَسْجِدِ يَقُوْمُ عَلَيْهِ قَائِمًا يُفَاخِرُ عَنْ رَّسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَوْ قَالَ يُنَافِحُ عَنْ رَّسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَيَقُوْلُ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ اللهَ يُؤَيِّدُ حَسَّانَ بِرُوْحِ الْقُدُسِ مَا يُفَاخِرُ أَوْ يُنَافِحُ عَنْ رَّسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ‏

অর্থ: উম্মুল মু’মিনীন আছছালিছাহ হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত তিনি বর্ননা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত হাসসান বিন ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার জন্য মসজিদে নববী শরীফে একটি মিম্বর স্থাপন করে দিয়েছিলেন। যার উপর তিনি দাড়িয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মান মুবারক আলোচনা বা প্রকাশ করতেন এবং প্রশংসামূলক কবিতা বা না’ত শরীফ পাঠ করতেন। আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলতেন, তিনি যতক্ষণ মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পক্ষ থেকে ফখর বা ছানা-ছিফত মুবারক করতে থাকবেন মহান আল্লাহ পাক তিনি ততক্ষণ হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম উনার মাধ্যমে উনাকে সাহায্য করবেন। সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ, মিশকাত শরীফ)

এ প্রসঙ্গে কিতাবে বর্ণিত আছে-

وَأَحْسَنُ مِنْكَ لَـمْ تَرَ قَطُّ عَيْنِيْ وَأَجْمَلُ مِنْكَ لَمْ تَلِدِ النِّسَاءُ خُلِقْتَ مُبَرَّأً مِّنْ كُلِّ عَيْبٍ كَأَنَّكَ قَدْ خُلِقْتَ كَمَا تَشَاءُ

অর্থ: ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার চক্ষু আপনার থেকে অতীব সুন্দর আর কোন কিছু দেখেনি। আর পৃথিবীর কোন মহিলা আপনার থেকে অতীব সুন্দর সত্ত্বা মুবারক প্রকাশ করেননি। আপনি সকল দোষত্রুটি থেকে পুতঃপবিত্র হয়ে সৃষ্টি হয়েছেন, নিশ্চয়ই আপনাকে সেভাবেই সৃষ্টি করা হয়েছে, যেভাবে আপনি পছন্দ করেছেন। সুবহানাল্লাহ! (সীরাতে হালবিয়া ১ম খন্ড ৮৯পৃষ্ঠা)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَليْهِ وسَلَّمَ مَرَّ بِبَعْضِ الْمَدِيْنَةِ ، فَإِذَا هُوَ بِجَوَارٍ يَضْرِبْنَ بِدَفِّهِنَّ وَيَتَغَنَّيْنَ وَيَقُلْنَ نَـحْنُ جَوَارٌ مِّنْ بَنِي النَّجَّارِ … يَا حَبَّذَا مُـحَمَّدٌ مِّنْ جَارٍ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى الله عَليْهِ وسَلَّمَ : اَللهُ يَعْلَمُ إِنِّيْ لَأُحِبُّكُنَّ.

অর্থ: ‘হযরত আনাস বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে বর্ণিত, যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে তাশরীফ মুবারক নিলেন, তখন বালিকারা সমস্বরে পবিত্র না’ত শরীফ পাঠ করছিল। তারা বলছিল- আমরা নাজ্জার বংশীয় ভদ্র মেয়ে এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কতই না উত্তম প্রতিবেশী। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি জানেন আমি তোমাদের কতইনা মুহব্বত করি। সুবহানাল্লাহ!  অন্য রেওয়াতে আছে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাদের বরকত দান করুন। সুবহানাল্লাহ! (ইবনে মাজাহ শরীফ)

আরো বর্ণিত আছে-

لَمَّا قَدِمَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الـمَدِينَةَ جَعَلَ النِّسَاءَ وَالصِّبْيَانَ والْوَلَائِدَ يَقُلْنَ

طَلَعَ الْبَدْرُ عَلَيْنَا + مِنْ ثَنِيَاتِ الْوِدَاعِ

وَجَبَ الشُّكْرُ عَلَيْنَا + مَا دَعَا لِلّٰهِ دَاعٍ

অর্থ: যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফে তাশরীফ মুবারক নিলেন তখন ছোট ছোট বালক-বালিকারা পবিত্র না’ত শরীফ পাঠ করছিল: ছানিয়াতুল বিদা পর্বতের দিক থেকে, আজ তোমাদের মাঝে উদিত হয়েছে পূর্ণ চাঁদ। আমাদের জন্য শুকরিয়া করা ওয়াজিব, যিনি মহান আল্লাহ পাক উনার দিকে আমাদেরকে আহ্বান করেন।’ সুবহানাল্লাহ!

উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনা দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণিত হলো যে, সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অর্থাৎ পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ বলতে যেহেতু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র মীলাদ শরীফ বা পবিত্র বিলাদত শরীফ অর্থাৎ যমীনে তাশরীফ মুবারক আনার বিষয় আলোচনা করা, উনার ছানা-ছিফত মুবারক বর্ণনা করা ও উনার প্রতি পবিত্র ছলাত শরীফ ও পবিত্র সালাম শরীফ পাঠ করাকেই বুঝায়। তাই এদিক থেকে তা মহান আল্লাহ পাক উনার, উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অন্যান্য হযরত নবী রাসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনাদের প্রত্যেকেরই খাছ সুন্নত মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত। সুবহানাল্লাহ! (চলবে)

-আবুল খায়ের মুহম্মদ আযীযুল্লাহ।

আলআছদাকু, আলআত্বহারু, আলআত্বইয়াবু, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক শেষে সংক্ষেপে (সাঃ, দঃ) দুরূদ শরীফ লিখা প্রসঙ্গে

আওওয়ালু শাফিয়িন, আওওয়ালু মুশাফ্ফায়িন, আওওয়ালু মাঁইইয়ুর্হারিক হালক্বাল জান্নাতি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ‘বিশ্বনেতা’, ‘মহামানব’, ‘মহাপুরুষ’, ইত্যাদি শব্দ দ্বারা সম্বোধন করা প্রসঙ্গে

ইমামুল মুরসালীনা, ইমামুন্ নাবিইয়ীনা, ইমামুল উম্মাতি, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা আম্মা সাইয়্যিদাতুন্ নিসায়ি আলাল আলামীন হযরত আমিনা আলাইহাস্্ সালাম রচিত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ না’ত শরীফ প্রমাণ করে যে, তিনি ইলমে গইব-এর অধিকারিণী ছিলেন

আলবাশীরু, আলবালীগু, আলবাদরুল মুনীরু, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়াগণ অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না উনাদের ফাযায়িল-ফযীলত ও পবিত্রতা

জালীলুল ক্বদরি, জামীলুয যিকরি, জাওয়ামিউল কালিমি, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উর্ধ্বতন পূর্বপুরুষ উনারা ছিলেন পবিত্র থেকে পবিত্রতম