পবিত্র মাহে জুমাদাল উখরা শরীফ ও উনার প্রাসঙ্গিক আলোচনা -আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ শুয়াইব আহমদ

সংখ্যা: ২৩২তম সংখ্যা | বিভাগ:

আরবী ষষ্ঠ মাস পবিত্র জুমাদাল উখরা শরীফ। এ মাসটি অনেক কারণে ফযীলতপূর্ণ। তন্মধ্যে অন্যতম হলো, এ মাসেই হযরত আহলু বাইত ও আওলাদে রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মূল ব্যক্তিত্ব সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, বিদ্ব্আতুম মিন রসূলিল্লাহ, শাবীহাতু রসূলিল্লাহ, উম্মু আবীহা হযরত ফাতিমাতুয যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেন।

বিশুদ্ধ বর্ণনা মতে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়াবী ৩৭ বৎসর বয়স মুবারক-এ অর্থাৎ উনার আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াত প্রকাশের প্রায় তিন বৎসর পূর্বে পবিত্র ২০শে জুমাদাল উখরা পবিত্র জুমুয়ার দিন ছুবহি ছাদিকের সময় তিনি যমীনে আগমন করেন। সুবহানাল্লাহ!

সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার শান মুবারক সম্পর্কে স্বয়ং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন,“তিনি হচ্ছেন আমারই দেহ মুবারক উনার অংশ মুবারক।” সুবহানাল্লাহ! অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে উনার লখতে জিগার, প্রিয়তমা আওলাদ সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনাকে আলাদা করার বা আলাদাভাবে দেখার ও মনে করার কোনো অবকাশ নেই।

কাজেই, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেরূপ মহান আল্লাহ পাক উনার সকল গুণে গুণান্বিত একইভাবে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনিও উক্ত সকল গুণে গুণান্বিত। মহান আল্লাহ পাক তিনি যেরূপ সবকিছুর মালিক তদ্রুপ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং উনার দেহ মুবারক উনার অংশ মুবারক হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনারাও হলেন সবকিছুর মালিক। আর উনাদের গোলাম ও খাদিম হলেন কায়িনাতের সকলেই। সুবহানাল্লাহ! উনারা শুধুমাত্র খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার মুহতাজ বা মুখাপেক্ষী। এছাড়া উনারা কায়িনাতের কারো বা কোনো কিছুরই মুখাপেক্ষী নন। বরং কায়িনাতের সকলেই উনাদের মুহতাজ বা মুখাপেক্ষী।

বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ উনাদের মধ্যে বর্ণিত রয়েছে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

انما انا قاسم والله يعطى .

অর্থ : “মহান আল্লাহ পাক তিনি (সবকিছু) হাদিয়া করেন আর নিশ্চয়ই আমি হলাম (উক্ত হাদিয়া) বণ্টনকারী।”

উল্লেখ্য, কায়িনাতের সকলেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত। উম্মতের কেউই সরাসরি মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে কোনো নিয়ামত লাভ করতে পারবে না, বরং কোনো নিয়ামত লাভ করতে হলে তাকে অবশ্যই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাধ্যমে লাভ করতে হবে।

এখানে স্মরণীয় যে, যার ওসীলায় কায়িনাতের সবকিছু সৃষ্টি এবং যিনি মহান আল্লাহ পাক উনার প্রদত্ত্ব নিয়ামত স্বীয় উম্মতের মাঝে বণ্টনকারী তিনি এবং উনার পুতঃপবিত্র আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা এবং বিশেষ করে উনার প্রিয়তমা লখতে জিগার সাইয়্যিদাতুন নিসায়ি আলাল আলামীন হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি কি করে নিঃস্ব ও গরীব হতে পারেন।

ফী সাবীলিল্লাহ তথা মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় দান করার অর্থ কি এটাই যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি গরীব ও অভাবী। নাউযুবিল্লাহ!

যদি তা না হয় তাহলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এবং উনার পুতঃপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম-আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে হাদিয়া মুবারক প্রদানের অর্থ মহান আল্লাহ পাক উনার মতোই গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় কাফির ও জাহান্নামী হতে হবে।

বর্ণিত রয়েছে, উম্মুল মু’মিনীন হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি ছিলেন অত্যন্ত সম্মানিত ও সম্পদশালিণী মহিলা। উনার বাণিজ্য সম্ভার সিরিয়া যেত এবং উনার একার পণ্য কুরাইশদের সকলের পণ্যের সমান হতো। এ থেকে উনার সম্পদের পরিমাণ ও ব্যবসার পরিধি সহজেই উপলব্ধি করা যায়। তাই তো উনার নাম মুবারকের সাথে কুবরা (বড় সম্পদশালিণী) উপাধিটি যুক্ত হয়েছে। তিনি যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা আহলিয়া হিসেবে ভূষিত হন তখন উনার সমস্ত ধন-সম্পদ তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে হাদিয়া করে দেন। সুবহানাল্লাহ! উনারই আদরের দুলালী হলেন সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি । সুবহানাল্লাহ!

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে স্পষ্টই বর্ণিত রয়েছে, মহান আল্লাহ পাক তিনি হচ্ছেন সবচেয়ে বড় দানশীল অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন বড় দানশীল অতঃপর যারা প্রকৃত মু’মিন-মুসলমান উনারা সবচেয়ে বড় দানশীল।

মোটকথা, মহান আল্লাহ পাক উনার পরেই কায়িনাতের মধ্যে যিনি সবচেয়ে বড় দানশীল উনাকে এবং উনার পুতঃপবিত্র হযরত আহলু বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে গরীব, অভাবী, নিঃস্ব বলাটা কাফির, মুশরিক ও মুনাফিকদের জঘণ্য মিথ্যাচার ও অপপ্রচার; যা প্রকাশ্য কুফরী। এ কুফরী থেকে বেঁচে থাকা সকল মুসলমানের জন্যেই ফরয।

মাহে শা’বান ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে রমাদ্বান শরীফ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে শাওওয়াল-যিলক্বদ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে যিলহজ্জ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে মুহররমুল হারাম ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা