পবিত্র মাহে জুমাদাল উখরা শরীফ ও রজবুল হারাম শরীফ এবং উনাদের প্রাসঙ্গিক আলোচনা

সংখ্যা: ২৪২তম সংখ্যা | বিভাগ:

পবিত্র মাহে জুমাদাল উখরা শরীফ ও রজবুল হারাম শরীফ এবং উনাদের প্রাসঙ্গিক আলোচনা

-আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ শুয়াইব আহমদ


মাহে জুমাদাল উখরা শরীফ এ মাসটি অনেক কারণে মর্যাদামণ্ডিত ও ফযীলতপূর্ণ। বিশেষ করে এ মাসেরই ২০ তারিখ বরকতপূর্ণ মহিমান্বিত দিনটিতে বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, বিদ্বআতুম মিন রসূলিল্লাহ, শাবীহাতু রসূলিল্লাহ, উম্মু আবীহা হযরত ফাতিমাতুয যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি । সুবহানাল্লাহ!

উনার ছানা-ছিফত মুবারক বর্ণনার অপেক্ষা রাখেনা, উনার ছানা-ছিফত মুবারক সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে। সুবহানাল্লাহ! মোট কথা, সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মধ্যে অনন্য ও বিশেষ ব্যক্তিত্ব হচ্ছেন খাতুনে জান্নাহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ!

স্মরণীয় যে, সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম-আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মধ্যে খাছ হিসেবে উপরের দিকে হলেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত হযরত আব্বা আলাইহিস সালাম এবং সম্মানিতা হযরত আম্মা আলাইহাস সালাম উনারা, মাঝে হলেন উনার সম্মানিতা আযওয়াজ-আহলিয়া হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা এবং নীচের দিকে হলেন উনার সম্মানিত হযরত আবনা আলাইহিমুস সালাম এবং সম্মানিতা হযরত বানাত আলাইহিন্নাস সালাম উনারা। সুবহানাল্লাহ!

জানা আবশ্যক যে, হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম-আলাইহিন্নাস সালাম উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানে সম্মানিত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্মান করা যেরূপ কায়িনাতবাসী সকলের জন্যেই ফরয তদ্রƒপ উনার সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকেও সম্মান করা কায়িনাতবাসী সকলের জন্যেই ফরয। আর উনাদেরকে অসম্মান করা, মানহানী করা, ইহানত করা, সমালোচনা করা কুফরী এবং কাফির ও জাহান্নামী হওয়ার কারণ। নাউযুবিল্লাহ!

উল্লেখ্য, অন্য সকল হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম এবং সকল হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম এবং সকল জিন-ইনসান প্রত্যেকেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত। আর উম্মত হিসেবে সকলের উপর ফরয হচ্ছে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এবং উনার পুত-পবিত্র ও সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম-আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত করা, সম্মান করা এবং উনাদের খিদমত করা।

এ মাস আরো সম্মানিত কারণ এ মাসেরই ২২ তারিখ যিনি আফদ্বালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া, খলীফাতু রসূলিল্লাহ হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশের দিন এবং উক্ত তারিখটিই আবার হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের দ্বিতীয় ব্যক্তিত্ব আমীরুল মু’মিনীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত খিলাফত মুবারক গ্রহনের দিন। সুবহানাল্লাহ!

উল্লেখ্য, আরবী সপ্তম মাস হলো পবিত্র শাহরুল্লাহিল হারাম রজবুল আছম্ম মাস। এ সম্মানিত মাস উনার প্রথম জুমুয়া শরীফ রাতটি হচ্ছে পবিত্র লাইলাতুর রগায়িব শরীফ। এ রাত্রি মুবারক উনার ফযীলত পবিত্র শবে ক্বদর ও পবিত্র শবে বরাত উনাদের ফযীলতপূর্ণ রাত অপেক্ষাও বেশি। এ সম্মানিত মাস উনার ২৬ তারিখ দিবাগত রাতটিই হচ্ছে সুমহান পবিত্র মি’রাজ শরীফ সংঘটনের মহান রাত। এ মাস হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের ইমামতি ধারার প্রথম ইমাম, হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের চতুর্থ খলীফা, বাবুল ইলম, আসাদুল্লাহিল গালিব সাইয়্যিদুনা হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের মাস। বর্ণিত রয়েছে, তিনি ২৩ হিজরী পূর্বাব্দের ১৩ রজব জুমুআর দিন পবিত্র কা’বা শরীফ উনার অভ্যন্তরে বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন।

উনার ছানা-ছিফত মুবারক বর্ণনার অপেক্ষা রাখে না। বর্ণিত রয়েছে, সম্মানিত কুরাইশ গোত্রের শ্রেষ্ঠতম বীর হচ্ছেন সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম। উনার বীরত্ব ও সাহসিকতার কারণে উনাকে স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি “আসাদুল্লাহ” অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার সিংহ লক্বব বা উপাধি মুবারকে ভূষিত করেছেন। সুবহানাল্লাহ!

উনার ছানা-ছিফত মুবারক বর্ণনায় পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে, যে ব্যক্তি আবুল বাশার হযরত আদম ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার ইলিম মুবারক, হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার আক্বল মুবারক. হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার ছবর বা ধৈর্য মুবারক, হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার তাক্বওয়া বা পরহেযগারী মুবারক এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বাতিনীরূপ দেখতে বাসনা রাখে, সে যেন সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে দেখে। কেননা তিনি হচ্ছেন এই সমস্ত গুণ মুবারকের জীবন্ত প্রতীক। সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে রাযী)

অপর এক হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে, যদি সমস্ত আসমান ও যমীনকে এক পাল্লায় আর হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহি সালাম উনার ঈমানকে অপর পাল্লায় রেখে ওজন করা হয়, তাহলে হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার ঈমানের পাল্লাটিই ভারে নুয়ে পড়বে। সুবহানাল্লাহ! (নুযহাতুল মাজালিস)

এ ছাড়া সম্মানিত ১৪ই রজব যিনি ইমামুস সাদিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত ইমাম জাফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করার দিন। উল্লেখ্য, পবিত্র ১৪ই রজব যিনি চীশতীয়া ত্বরীক্বা উনার সম্মানিত ইমাম হযরত খাজা ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করার দিন। উনার সম্মানিত বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করার দিন হচ্ছে পবিত্র ৬ই রজবুল হারাম শরীফ। এই দিন উনার সুমহান শানে পবিত্র ইছালে ছাওয়াব মাহফিল করা হয়। বিশেষভাবে উল্লেখ্য, পবিত্র শাহরুল্লাহিল হারাম রজবুল আছাম্ম মাস উনার পহেলা রাত হচ্ছে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত, নিশ্চিতভাবে দোয়া কবুলের অন্যতম পাঁচ রাত্রির এক রাত। সুবহানাল্লাহ! এ মুবারক রাতে পবিত্র মীলাদ শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াম শরীফ পাঠ করে বিশেষভাবে দোয়া মুনাজাত করা হয় এবং পরের দিন পবিত্র রোযা রাখা হয়। সুবহানাল্লাহ!

মাহে যিলহজ্জ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে মুহররমুল হারাম ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে রবীউল আউয়াল শরীফ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে রবীউছ ছানী ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে জুমাদাল উখরা ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা