পবিত্র মাহে যিলক্বদ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

সংখ্যা: ২১৮তম সংখ্যা | বিভাগ:

-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শুয়াইব আহমদ

মাহে শাওওয়াল-এর পরবর্তী মাস ‘পবিত্র মাহে যিলক্বদ’। এটি আরবী এগারতম মাস এবং চারটি হারাম বা সম্মানিত মাসের মধ্যে একটি। এছাড়া এ মাসটি হজ্জের মাসসমূহেরও একটি। এ মাসেই হজ্জ পালনকারীগণ হজ্জের প্রস্তুতি গ্রহণপূর্বক হজ্জ পালনের উদ্দেশ্যে মক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফ গমন করে থাকেন।

স্মরণীয় যে, ফরয, ওয়াজিব, সুন্নত, নফল, মুস্তাহাব যেকোন ইবাদত পালন করতে হলে তার পূর্বে সেই ইবাদতের ইলিম অর্জন করত হবে। কেননা হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-

العلم امام العمل

অর্থ : “ইলিম হচ্ছে আমলের ইমাম।” অর্থাৎ ইলিমকে অনুসরণ করেই প্রতিটি আমল সম্পাদন করতে হবে।

হজ্জ দ্বীন ইসলামের বুনিয়াদী ৫টি আমলের মধ্যে অন্যতম একটি আমল। এ আমলটি বদনী ও মালী উভয়ের সমন্বয়ে আদায় করতে হয়। যারা হজ্জ আদায় করবে তাদেরকে অবশ্যই হজ্জের ইলিম বা মাসয়ালা-মাসায়িল জানতে হবে। হজ্জ আদায়ের প্রয়োজনীয় ইলিম না জেনে কেউ যদি হজ্জ করে এক্ষেত্রে তার শারীরিক শ্রম ও অর্থ ব্যয় দুটোই বিফলে যাবে। তার হজ্জ আদায় হবে না।

যেমন রোযা ও নামায আদায়কারীর ব্যাপারে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে- কতক রোযাদার রয়েছে তাদের ক্ষুধার্ত থাকা ব্যতীত রোযার কিছুই অর্জিত হয় না। তদ্রƒপ কতক নামায আদায়কারী আছে যাদের রাত্রি জাগরণ ব্যতীত আর কিছুই অর্জিত হয় না।

এ হাদীছ শরীফ থেকে প্রতিভাত যে, প্রতিটি আমলের ক্ষেত্রে শরীয়তের যে ইলিম বা মাসয়ালা-মাসায়িল রয়েছে সে মুতাবিক আমলটি আদায় করতে হবে।

কাজেই, হজ্জ আদায়ের জন্য যে মাসয়ালা-মাসায়িল রয়েছে তা হজ্জ আদায়কারীকে অবশ্যই জানতে হবে।

অনেকের ধারণা যে, হজ্জে যাওয়া ও ফিরে আসার সামর্থ্য বা টাকা-পয়সা থাকলেই হজ্জ ফরয হয়। এ ধারণা আদৌ শুদ্ধ নয়। বরং হজ্জ ফরয হওয়ার জন্য টাকা-পয়সা থাকার পাশাপাশি আরও একাধিক শর্ত রয়েছে যা অনুপস্থিত থাকলে হজ্জ ফরয হয় না। যেমন হজ্জ ফরয হওয়ার জন্য শর্তসমূহ হচ্ছে- ১. স্বাধীন হওয়া, ২. বালেগ হওয়া, ৩. সুস্থ হওয়া, ৪. দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন হওয়া, ৫. সাংসারিক প্রয়োজনীয় ব্যয়ের পর হজ্জে যাওয়া ও ফিরে আসা পর্যন্ত পরিবারবর্গের ভরণ-পোষণের অতিরিক্ত সম্বল বা পাথেয় থাকা, ৬. যানবাহনের সুষ্ঠু ব্যবস্থা থাকা, ৭. জীবনের নিরাপত্তা থাকা, ৮. মাল বা সম্পদের নিরাপত্তা থাকা, ৯. ঈমানের নিরাপত্তা থাকা, ১০. আমলের নিরাপত্তা থাকা। আর ১১. মহিলাদের জন্য অতিরিক্ত একটি শর্ত হচ্ছে তার স্বামী অথবা কোন সচ্চরিত্রবান মাহরাম পুরুষ সঙ্গে থাকা। এ সকল শর্তসমূহের কোন একটি শর্ত অনুপস্থিত থাকলে হজ্জ ফরয হবে না।

অথচ আজ হজ্জ আদায়ের অন্যতম শর্ত ঈমান ও আমলের নিরাপত্তার বিষয়টিকে উপেক্ষা করেই হাজী ছাহেবরা হজ্জ করে গর্ববোধ করছেন। নাঊযুবিল্লাহ! যেমন হজ্জ করতে গিয়ে তারা ছবি তুলছেন, বেপর্দা হচ্ছেন। নাঊযুবিল্লাহ! অথচ হজ্জ আদায়ের জন্য সকল প্রকার কুফরী ও কবীরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা ফরয।

যেমন কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-

فمن فرض فيهن الحج فلا رفث ولا فسوق ولا جدال فى الحج وما تفعلوا من خير يعلمه الله وتزودوا فان خير الزاد التقوى واتقون ياولى الالباب.

অর্থ : “যে ব্যক্তির প্রতি হজ্জ ফরয সে যেন হজ্জ পালনের ক্ষেত্রে অশ্লীল-অশালীন ও তার সংশ্লিষ্ট বেপর্দা ও বেহায়ামূলক কোন কাজ না করে এবং কোন প্রকার ফাসিকী বা নাফরমানিমূলক কাজ না করে এবং ঝগড়া-বিবাদ না করে। আর তোমরা যে নেক কাজ করো তা মহান আল্লাহ পাক তিনি জানেন। তোমরা পাথেয় সংগ্রহ কর। নিশ্চয়ই উত্তম পাথেয় হচ্ছে তাক্বওয়া।” (সূরা বাক্বারা : আয়াত শরীফ ১৯৭)

বলার অপেক্ষা রাখে না, বেপর্দা হওয়া চরম অশ্লীল ও অশালীন কাজ আর ছবি তোলা চরম ফাসিকী বা নাফরমানিমূলক কাজ এবং কঠিন হারাম, কবীরা ও কুফরী গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। যেমন হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, বেহেশতের দরজায় লেখা রয়েছে-

الديوث لا يدخل الجنة

অর্থ : “দাইয়ূছ অর্থাৎ যে পুরুষ কিংবা মহিলা নিজে পর্দা করে না এবং তার অধীনস্থদেরকে পর্দা করায় না সে বেহেশতে প্রবেশ করবে না।” (মুসনাদে আহমদ)

একইভাবে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-

كل مصور فى النار

অর্থ : প্রত্যেক ছবি তোলনেওয়ালা বা তোলানেওয়ালা জাহান্নামী।” (মুসলিম শরীফ)

অতএব, বেপর্দা ও ছবির মতো কঠিন হারাম, কবীরা ও কুফরী গুনাহ করে যারা হজ্জ পালনের ইচ্ছা করবে তাদের সে হজ্জ কবুল হওয়া তো দূরের কথা সে হজ্জই তাদের জন্য লা’নতগ্রস্ত ও জাহান্নামী হওয়ার কারণ হবে।

মাহে রমাদ্বান শরীফ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে শাওওয়াল-যিলক্বদ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে যিলহজ্জ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে মুহররমুল হারাম ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে রবীউল আউয়াল শরীফ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা