পবিত্র মাহে যিলক্বদ শরীফ এবং উনার প্রাসঙ্গিক আলোচনা -আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ শুয়াইব আহমদ

সংখ্যা: ২৪৬তম সংখ্যা | বিভাগ:

মাহে শাওওয়াল শরীফ উনার পরবর্তী মাস মাহে যিলক্বদ শরীফ। এটি আরবী এগারতম মাস এবং চারটি হারাম বা সম্মানিত মাসের একটি। এছাড়া এ মাসটি হজ্জের মাসসমূহেরও একটি। এ মাসেই হজ্জ পালনকারীগণ হজ্জের প্রস্তুতি গ্রহণপূর্বক হজ্জ পালনের উদ্দেশ্যে মক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফ গমন করে থাকেন।

প্রকাশ থাকে যে, হজ্জ দ্বীন ইসলামের পাঁচটি বুনিয়াদের একটি। অর্থাৎ প্রত্যেক স্বাধীন, বালেগ, সুস্থ, দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন মুসলমানের যদি সাংসারিক প্রয়োজনীয় ব্যয়ের পর হজ্জে যাওয়া ও ফিরে আসা পর্যন্ত পরিবারবর্গের ভরণ-পোষণের অতিরিক্ত সম্বল বা পাথেয় থাকে, যানবাহনের সুষ্ঠু ব্যবস্থা থাকে এবং জান-মাল, ঈমান ও আমলের নিরাপত্তা থাকে, তবে তার প্রতি জীবনে একবার হজ্জ করা ফরয। মহিলাদের জন্য স্বামী অথবা কোন সচ্চরিত্রবান মাহরাম সঙ্গে থাকা শর্ত।

স্মরণযোগ্য যে, হজ্জ পালন করার জন্য যেসব শর্তের কথা উল্লেখ রয়েছে তারমধ্যে ঈমান ও আমলের নিরাপত্তা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যার উপর হজ্জ ফরয সে যেনো হজ্জ করতে গিয়ে নির্জনবাস ও তার সংশ্লিষ্ট কোন কাজ না করে এবং কোন প্রকার ফাসিকী বা নাফরমানীমূলক কাজ না করে এবং ঝগড়া-বিবাদ না করে।” (সূরা বাক্বারা : আয়াত শরীফ-১৯৭)

অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ উনার দ্বারা সুস্পষ্টরূপে সাব্যস্ত হয়েছে, পবিত্র হজ্জ করতে গিয়ে যদি কাউকে কোন ফাসিকী বা হারাম  কাজের সম্মুখীন হতে হয় যেমন- ছবি তোলা, বেপর্দা হওয়া ইত্যাদি তাহলে তার উপর হজ্জের ফরয সাকিত বা রহিত হয়ে যাবে অর্থাৎ তখন আর পবিত্র হজ্জ ফরয থাকবে না। যেমনিভাবে কোন মহিলা যদি সারা পৃথিবীর মালিকও হয় আর তার যদি স্বামী কিংবা কোন সচ্চরিত্রবান মাহরাম না থাকে তাহলে তার উপর হজ্জ ফরয হবে না। কারণ স্বামী অথবা সচ্চরিত্রবান মাহরাম ব্যতীত হজ্জে গেলে হারাম কাজ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

উল্লেখ্য, হজ্জের জন্য যখন ছবি তুলতে বাধ্য করা হয় এবং ছবি তোলার কারণে মহিলাদের পর্দা তরক  হয় এছাড়া সউদী ওহাবী সরকারের মদদে মক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফ উনাদের মধ্যে হজ্জের স্থানসমূহে শত শত সিসি টিভি ও ক্যামেরা স্থাপন করে কোটি কোটি ছবি তোলা হয় এবং পর্দার প্রতিকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে পুরুষ-মহিলা উভয়ের পর্দা নষ্ট করা হয় তখন এ অবস্থায় মুসলমানদের জন্য কি করণীয় তা ছহীহ মুসলিম শরীফ-এ বর্ণিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কোন অন্যায় কাজ সংঘটিত হতে দেখে সে যেনো তা হাত দ্বারা বাধা দেয়। যদি সে হাত দ্বারা বাধা দিতে না পারে তাহলে সে যেনো যবান দ্বারা বাধা দেয়। যদি যবানের দ্বারাও বাধা দিতে না পারে তাহলে যেনো অন্তরে ঘৃণা করে দূরে সরে থাকে। এরপর ঈমানের আর সরিষা পরিমাণ অংশও অবশিষ্ট থাকেনা।” (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)

অর্থাৎ প্রথমতঃ হাতে বাধা দেয়ার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও যারা হাতে বাধা দিবে না। দ্বিতীয়তঃ মুখে বাধা দেয়ার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও যারা মুখে বাধা দিবে না। তৃতীয়তঃ অন্তরে খারাপ জেনে যারা দূরে সরেও থাকবে না। উপরন্তু ছবি ও বেপর্দার মতো কঠিন হারাম ও কবীরা গুনাহর মধ্যে ডুবে গিয়ে পবিত্র হজ্জ পালনের ইচ্ছা করবে তাদের সে হজ্জ কবুল হওয়া তো দূরের কথা সে পবিত্র হজ্জই তাদের জন্য লা’নতগ্রস্ত ও জাহান্নামী হওয়ার কারণ হবে।

কেননা ছহীহ হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত রয়েছে, যে বেপর্দা হয় সে লা’নতগ্রস্ত, সে দাইয়ূছ ও জাহান্নামী। একইভাবে যে ছবি তোলে সেও জাহান্নামী ও গযবপ্রাপ্ত।

তাই হজ্জ ও উমরাহ করার পর যেখানে আমল আরো ভাল হওয়ার কথা সেখানে দেখা যায় সম্পূর্ণ বিপরীত। নাঊযুবিল্লাহ। তার মানে হলো- সম্মানিত শরীয়ত ও সুন্নাহ মুতাবিক হজ্জ ও উমরাহ আদায় হয়নি।

অতএব, সুন্নাহ মুতাবিক হজ্জ ও উমরাহ করার জন্য যামানার মহানতম ইমাম ও মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমামুল উমাম, আওলাদে রসূল, ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার সম্মানিত হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার অনবদ্য তাজদীদ সউদী সরকারসহ প্রত্যেক সরকারের কাছে পৌঁছে দেয়া। আর তা হচ্ছে ছবি ব্যতিরেকে এবং মহিলারা যাতে পরিপূর্ণ পর্দার সাথে হজ্জ করতে পারে সেজন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

উল্লেখ্য, আজ সকলে হুজুগে মেতে চলেছে এবং মনগড়া রেওয়াজের অনুসরণ করে যাচ্ছে। নাউযুবিল্লাহ! সম্মানিত শরীয়ত উনার কি হুকুম রয়েছে- তা সে আদৌ জানতে চায় না, বুঝতে চায় না। নাউযুবিল্লাহ! সে একটিবারও ফিকির করেনা যে, পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের খিলাফ বা বিরোধী যাবতীয় নিয়ম- রেওয়াজই হচ্ছে মনগড়া এবং তা নফসের অনুসরণ, শয়তানের অনুসরণ। নাউযুবিল্লাহ!

শুধু কুরআন শরীফ এবং হাদীছ শরীফ উনার কিতাব পড়েই সম্মানিত দ্বীন ইসলাম বুঝা ও আমল করা সম্ভব নয়। যদি হতো তাহলে গীরিশ চন্দ্র সেন এক নাম্বার মুসলমান হয়ে যেতো। কেননা, সে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ শুধু পড়েইনি বরং অনুবাদও করেছে।

কাজেই, হিদায়েত পাওয়ার জন্য এবং সঠিক ইলিম ও সঠিক আমল সম্পর্কে জেনে ও মেনে হিদায়েতের উপর ইস্তিক্বামত থাকার জন্য নিয়ামতপ্রাপ্ত বান্দা উনাদের অনুসরণ ব্যতীত কখনোই সম্ভব নয়। আর এ কারণেই সূরাতুল ফাতিহা শরীফ উনার থেকে আরম্ভ করে অনেক সূরা শরীফ উনাদের মধ্যে নিয়ামতপ্রাপ্ত বান্দাগণ উনাদেরকে অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।

বলার অপেক্ষা রাখে না, উক্ত নিয়ামতপ্রাপ্ত বান্দাগণ উনারা হচ্ছেন যুগে যুগে প্রেরিত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা অতঃপর আখিরী নবী ও রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরে উনার ক্বায়িম-মাক্বাম হিসেবে যামানার হযরত মুজাদ্দিদ আলাইহিমুস সালাম উনারা। সুবহানাল্লাহ! আর উনাদেরই আগমণের ধারবাহিকতায় বর্তমান পঞ্চদশ শতকের মুজাদ্দিদ হচ্ছেন মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদে রসূল, ইমামুল উমাম রাজারবাগ শরীফ উনার সম্মানিত হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি। অতএব, বর্তমানে সঠিকভাবে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম পালন করতে হলে উনার অনুসরণ ব্যতীত কখনোই সম্ভব হবে না।

মাহে রমাদ্বান শরীফ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে শাওওয়াল-যিলক্বদ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে যিলহজ্জ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে মুহররমুল হারাম ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে রবীউল আউয়াল শরীফ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা