পবিত্র মাহে যিলহজ্জ শরীফ ও উনার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

সংখ্যা: ২৩৭তম সংখ্যা | বিভাগ:

-আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ শুয়াইব আহমদ

 

মহান আল্লাহ পাক ও উনার শ্রেষ্ঠতম রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের তরফ থেকে ঘোষণাকৃত চারটি হারাম বা সম্মানিত মাসসমূহের অন্যতম মাস যিলহজ্জ শরীফ। বিভিন্ন দিক থেকে এ মাস বুযুর্গী-সম্মান ও ফযীলতপূর্ণ। এ মাসেই মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র হজ্জ আদায়ের ফরযটি নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট পবিত্র যিলহজ্জ মাস উনার প্রথম দশদিনের ইবাদত-বন্দিগীর চেয়ে বেশি প্রিয় আর কোন দিনের ইবাদত-বন্দিগী নেই। এ দিনগুলোতে রোযা রাখা খাছ সুন্নত। এর প্রত্যেক দিনের রোযা এক বছরের রোযার সমতুল্য এবং প্রত্যেক রাতের ইবাদত শবে ক্বদরের ইবাদতের সমতুল্য।

উম্মুল মু’মিনীন হযরত হাফছা আলাইহাস সালাম তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি চারটি আমল কখনও ছাড়তেন না। ১. পবিত্র যিলহজ্জ মাস উনার প্রথম দশদিনের রোযা, ২. আশূরার রোযা, ৩. প্রত্যেক মাসে তিনটি রোযা, ৪. ফজরের ফরয নামাযের পূর্বে দু’ রাকায়াত সুন্নত নামায।

স্মরনীয় যে, পবিত্র যিলহজ্জ মাসের দশম দিনের রোযা হচ্ছে কুরবানী পর্যন্ত অর্থাৎ কুরবানীর গোশ্ত দিয়ে ইফতার করা। অর্থাৎ যিলহজ্জ মাসের দশ তারিখে ছুবহে ছাদিক থেকে কুরবানী করা পর্যন্ত কিছু পানাহার না করে কুরবানীর পর কুরবানীর গোশ্ত দিয়ে খাওয়া শুরু করা খাছ সুন্নত। যদি দ্বিপ্রহরের পূর্বে অর্থাৎ মাকরূহ ওয়াক্ত শুরু হওয়ার আগে কুরবানীর গোশত প্রস্তুত না হয়, তবে যে কোন খাদ্য-পানীয় দ্বারা রোযা ভঙ্গ করতে হবে।

যিলহজ্জের দশম তারিখ হচ্ছে ঈদুল আযহার দিন। এ দিনের মরতবা অপরিসীম। এ দিন সূর্যোদয়ের পরে দু’রাকায়াত ঈদুল আযহার নামায অতিরিক্ত ছয় তাকবীরের সাথে আদায় করতে হয়। এটা ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত। এ নামায ঈদুল ফিতরের নামায অপেক্ষা তাড়াতাড়ি পড়তে হয়। কেননা, নামায শেষে কুরবানী রয়েছে।

কুরবানীর ফযীলত সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, বান্দা-বান্দী বা উম্মত কুরবানীর দিন যেসব নেকীর কাজ করে থাকেন তন্মধ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট সবচেয়ে পছন্দনীয় কাজ হচ্ছে কুরবানী করা। নিশ্চয়ই ক্বিয়ামত দিবসে কুরবানীর পশু তার শিং, পশম ও খুরসহ উপস্থিত হবে অর্থাৎ সেগুলো কুরবানীদাতার আমলনামায় যোগ হবে এবং নিশ্চয়ই কুরবানীর পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার পূর্বেই তা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট পৌঁছে যায়। কাজেই, তোমরা স্বচ্ছন্দ মনে অর্থাৎ খুলুছিয়তের সাথে কুরবানী করো। সুবহানাল্লাহ! (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ)

পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে স্পষ্ট ঘোষণা করা হয়েছে-

لن ينال الله لـحومها ولا دماءها ولكن يناله التقوى منكم

অর্থ: মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট কুরবানীকৃত পশুর গোশত ও রক্ত কিছুই পৌঁছেনা। বরং উনার নিকট তোমাদের তাক্বওয়া অর্থাৎ সুন্নাহ ভিত্তিক আমলটুকু পৌঁছে থাকে। (পবিত্র সূরা হজ্জ শরীফ: পবি আয়াত শরীফ ৩৭)

কাজেই, সম্মানিত তাক্বওয়া অনুযায়ী অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রদর্শিত সুন্নাহ মুবারক অনুযায়ী সকলকে কুরবানী করা উচিত।

উল্লেখ্য, তথাকথিত মানবতাবাদীরা পবিত্র কুরবানী না করে তার অর্থ দুর্গত তথা দুঃখীদের মাঝে বিতরণের প্রপাগান্ডা করে থাকে। নাঊযুবিল্লাহ! অথচ দুর্গাপূজা, ক্রিসমাস ডে এসব বিজাতীয় ও বিধর্মীদের উৎসব পালনের বিপরীতে তারা কথা বলে না এবং ওইসব অনুষ্ঠানের অর্থ দুর্গতদের মাঝে বিলিয়ে দিতে তারা প্রচারণা চালায় না।

আরো উল্লেখ্য, সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার বিদ্বেষীদের সাথে বর্তমানে যোগ দিয়েছে ধর্মব্যবসায়ী উলামায়ে ‘সূ’ গং। তারা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে বর্ণিত আদেশ ও নিষেধ মুবারক সম্পর্কে সম্পূর্ণরূপে মিথ্যাচার করে পবিত্র কুরবানীকে ওয়াজিব না বলে শুধু সুন্নত বলে এর গুরুত্ব সাধারণের মাঝে কমিয়ে দেয়ার পাঁয়তারা করছে। অথচ আমাদের হানাফী মাযহাব মুতাবিক মালিকে নিছাব প্রত্যেকের জন্যই আলাদাভাবে পবিত্র কুরবানী করা ওয়াজিব।

অত্যন্ত দু:খজনক যে, কুরবানীর পশুর হাটগুলোতে মাইক লাগিয়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে উচ্চস্বরে গান-বাজনা করানো হচ্ছে। যা পবিত্র কুরবানী উনার আদর্শ, ধারণা ও চেতনার চরম খিলাফ। দেখা যাচ্ছে, একটা ওয়াজিব পালন করতে গিয়ে মানুষ হাজার হাজার কবীরা গুনাহে গুনাহগার হচ্ছে। নাঊযুবিল্লাহ! তাই হাট কর্তৃপক্ষের উচিৎ পবিত্র কুরবানীর হাটে গান-বাজনা বন্ধ করে দিয়ে হামদ-না’ত-ক্বাছীদা শরীফ প্রচার করার ব্যবস্থা করা।

এছাড়া প্রিন্ট মিডিয়া ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় পবিত্র কুরবানীর পশুকে নিয়ে অনেক ব্যঙ্গ চিত্র প্রদর্শন করা হয়। এমনকি অনেক তাচ্ছিল্য ও অবজ্ঞামূলক তথা উপহাসমূলক মন্তব্যও করা হয়। নাঊযুবিল্লাহ!

তাই সরকারের জন্য ফরয-ওয়াজিব হচ্ছে, সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার অবমাননাকারী ও মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতকারী এসব অপতৎপরতাকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

মাহে রমাদ্বান শরীফ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে শাওওয়াল-যিলক্বদ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে যিলহজ্জ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে মুহররমুল হারাম ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে রবীউল আউয়াল শরীফ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা