পারিবারিক জীবনে একটি মারাত্মক ভুল যার সংশোধন নেই

সংখ্যা: ২৪০তম সংখ্যা | বিভাগ:

পারিবারিক জীবনে একটি মারাত্মক ভুল যার সংশোধন নেই


মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,

من مس امرأة بشهوة حرمت عليه امها وبنتها

অর্থ: “যদি কোনো ব্যক্তি শাহওয়াতের সাথে কোনো মহিলাকে স্পর্শ করে তাহলে সে মহিলার মা ও মেয়েকে বিবাহ করা তার জন্য হারাম।”

সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার হুকুম হলো- যখন ছেলে-মেয়ে সমঝদার হবে তখন তাদের বিছানা বাবা-মায়ের বিছানা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা করে দিতে হবে। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,

مروا اولادكم بالصلوة وهم ابناء سبع سنين واضربوهم عليها وهم ابناء عشر سنين وفرقوا بينهم فى المضاجع.

অর্থ: “তোমরা তোমাদের আওলাদ বা সন্তানদের সম্মানিত নামায উনাকে আদায়ের আদেশ দান করো, যখন তারা সাত বছর বয়সে পৌঁছে। সম্মানিত নামায উনাকে আদায়ের জন্য প্রয়োজনে প্রহার করো, যখন তারা দশ বছর বয়সে পৌঁছে। আর সে সময় তাদের বিছানা আলাদা করে দাও।” অর্থাৎ সে সময় মায়ের বিছানায় ছেলে এবং বাবার বিছানায় মেয়ে যাতে না শোয়, না ঘুমায়।” (আবু দাঊদ শরীফ, মুস্তাদরাকে হাকিম, তিরমিযী শরীফ)

কেননা অনেক সময় বেখেয়ালে এমন কাজ ঘটে যেতে পারে, যার কারণে স্বামীর জন্য নিজের স্ত্রী চিরদিনের জন্য হারাম হয়ে যাবে। যার সংশোধন জীবনে কখনই সম্ভব হবে না। একমাত্র বিচ্ছেদই তার সমাধান যা কেউ কখনো করে না বা করতে চায় না।

একইভাবে পুত্রবধুর শোয়ার জায়গা, শ্বশুরের শোয়ার জায়গা থেকে পৃথক থাকা অত্যাবশ্যক। উপরন্তু পুত্রবধুর জন্য শ্বশুরের কোনো দৈহিক খিদমত করা কখনো উচিত নয়।

তবে কাপড় ধোয়া, খানা-পিনার ব্যবস্থা করে দেয়া ইত্যাদি ধরনের দূরত্বসম্পন্ন কাজ করা যেতে পারে। কিন্তু শারীরিক কোনো খিদমত করা বা নেয়া কিছুতেই শুদ্ধ নয়। অন্যথায় এ ফিতনা-ফাসাদের যামানায় এমনও ঘটনা ঘটে যেতে পারে- যার কারণ স্বামীর জন্য তার স্ত্রী চিরতরে হারাম হয়ে যাবে। যা হালাল করার কোনো পন্থা-পদ্ধতিই হাতে থাকবে না। তখন বাধ্য হয়ে স্ত্রীকে তালাক দিতে হবে। কাজেই বিষয়টিকে খুবই গুরুত্ব দেয়া কর্তব্য। একইভাবে সৎমা বালিগ বা প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলের দৈহিক কোনো খিদমত করবে না এবং নিজেও তার থেকে অনুরূপ দৈহিক খিদমত গ্রহণ করবে না। অবশ্য আর্থিক বা অন্যান্য খিদমত করতে পারবে। কিন্তু দৈহিক খিদমত করা বা নেয়া থেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকবে। কেননা দৈহিক খিদমতের কারণে অনাকাঙ্খিত এমন ঘটনা সংঘটিত হতে পারে, যার ফলে সৎমা তার নিজ স্বামীর জন্য চিরতরে হারাম হয়ে যাবে।

সৎ মেয়ের ক্ষেত্রেও সৎবাপের সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরী। অন্যথায় স্বীয় স্ত্রী চিরদিনের জন্য হারাম হয়ে যাওয়ার কোনো উদ্ভূত পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।

স্মতর্ব্য যে, এ সকল সতর্কতামূলক হুঁশিয়ারী এ জন্যই করা হয়েছে যে, সেসব ক্ষেত্রে তারা সামান্যতম অসতর্কতার দরুন এমন মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে; তাতে পরকালীন ক্ষতি তো আছেই দুনিয়াবী এমন অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হতে পারে- যা সংশোধনের কোনো পথই নেই। যেমন-

১) স্বামী তার প্রয়োজনে নিজের স্ত্রীকে উঠাতে চায়, কিন্তু ভুলে শাহওয়াতের সাথে নিজের মেয়ের শরীরে হাত পড়ে গেল (হাত পড়ার সাথে সাথে হারাম সাব্যস্ত হওয়ার শর্ত পাওয়া গেলো) তাহলে ঐ স্ত্রী উক্ত স্বামীর জন্য সারা জীবনের তরে হারাম হয়ে যাবে।

একইভাবে স্ত্রী তার স্বামীকে জাগানোর ইচ্ছা করলো। কিন্তু অজান্তে অন্ধকারের মধ্যে তার হাত শাহওয়াতের সাথে তার উপযুক্ত সৎছেলের শরীরে লেগে গেলো এবং হারাম হওয়ার শর্তসমূহ পাওয়া গেলো, তাহলে ওই স্ত্রী তার আপন স্বামীর উপর চিরতরে হারাম হয়ে যাবে।

২) কেউ নিজের স্ত্রীকে একান্ত কাছে পাওয়ার জন্য ইচ্ছা করে, কিন্তু ভুলে তার হাত প্রাপ্ত বয়স্কা সৎমেয়ের শরীরে পড়লো এবং সে শাহওয়াতের সাথে নিজের স্ত্রী মনে করে খোচা দিলো। তাতে তার স্ত্রী উক্ত পুরুষের জন্য চিরতরে হারাম হয়ে যাবে। (আলমগীরী- ২৭৪ পৃ:)

৩) উল্লেখিত সূরতে বা অবস্থায় কাম বা শাহওয়াতের সাথে স্পর্শ করার সাথে সাথে স্ত্রী তার স্বামীর জন্য হারাম হয়ে যাবে। চাই ইচ্ছাকৃত করুক কিংবা অনিচ্ছাকৃত স্পর্শ করুক অথবা ভুলে স্পর্শ করুক না কেন। (ফতওয়ায়ে আলমগীরী, ১:২৭৪)

৪) শয়তানের ধোঁকায় পড়ে বা বদচরিত্রের কারণে শ্বশুর যদি তার পুত্রবধূর শরীরে শাহওয়াতের সাথে হাত লাগায় তাহলে তাতে ঐ পুত্রবধূ তার নিজ স্বামীর জন্য হারাম হয়ে যাবে। তখন স্বামীর জন্য ঐ স্ত্রীকে পৃথক করে দিতে হবে। কোনো মতে তাকে নিয়ে সংসার করা বৈধ হবে না।

৫) বালিগ বা প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে যদি নিজের সৎমায়ের শরীরে শাহওয়াতের সাথে হাত দেয়, ইচ্ছাকৃত হোক কিংবা ভুলে তখন ঐ সৎমা তার নিজের স্বামীর উপর সারাজীবনের জন্য হারাম হয়ে যাবে। তাকে তালাক দেয়া জরুরী হয়ে পড়বে।

৬) কোনো লোক যদি তার সৎমেয়ের শরীরে বেখেয়ালে কিংবা দুষ্টামী করে শাহওয়াতের সাথে হাত দেয়, তাহলে ঐ পুরুষের জন্য তার নিজ স্ত্রী হারাম হয়ে যাবে।

৭) যদি মেয়ের জামাই ভুলে অথবা জেনে-বুঝে তার শ্বাশুড়ীর শরীর শাহওয়াত বা কামভাবের সাথে স্পর্শ করে, তাহলে তাতে ঐ মেয়ের জামাইয়ের উপর তার নিজ স্ত্রী চিরদিনের জন্য হারাম হয়ে যাবে।

৮) কোনো মহিলার সাথে কোনো পুরুষের অবৈধ সম্পর্ক ছিল। এখন ঐ মহিলার কন্যার সাথে উক্ত পুরুষের বিবাহ চিরতরের জন্য হারাম হবে। কোনোক্রমে বিবাহ করলেও বিবাহ হবে না। তাদের মেলামেশা সম্পূর্ণরূপে ব্যাভিচারে পরিণত হবে।

উল্লেখিত ছুরতসমূহে স্পর্শ করার দ্বারা হারাম সাব্যস্ত হওয়ার শর্তসমূহ:

১) সেই মেয়ে ৯ বছর বয়স্কা বা তার চেয়ে বেশি হওয়া। আর ছেলে ১২ বছর বয়স্ক বা তার চেয়ে বেশি হওয়া শর্ত। কাজেই দু’জনের মধ্যে কোনো একজনের বয়স যদি কম হয় তাহলে স্পর্শের দ্বারা হারাম সাব্যস্ত হবে না।

২) হাত ও শরীরের মাঝখানে কোনো মোটা কাপড়ের আবরণ না থাকা শর্ত। তবে যদি এমন পাতলা কাপড় থাকে- যার দ্বারা শরীরের উষ্ণতা অনুভূত হয়, তাহলেও হারাম সাব্যস্ত হবে। পক্ষান্তরে এমন মোটা কাপড় বা কম্বলের উপর দিয়ে স্পর্শ করে যে, কাপড়ের কারণে শরীরের উষ্ণতা অনুভূত হয় না, তাহলে তাতে বর্ণিত হারাম সাব্যস্ত হবে না। যদিও তাতে শাহওয়াত বা কামভাব থাকে।

৩) যদি মেয়ে বা মহিলার শুধু চুলের উপর হাত লাগায় এবং মাথার উপরিভাগের চুল স্পর্শ করে তাহলে বর্ণিত হারাম সাব্যস্ত হবে। আর যদি মাথার থেকে নিচে ঝলে পড়া চুলে হাত লাগায়। তাহলে হারাম সাব্যস্ত হবে না। (দুররুল মুখতার)

তবে উক্ত ছুরতসমূহে শর্ত পাওয়া না গেলে, বর্ণিত হারাম সাব্যস্ত হবে না সত্য কিন্তু অবশ্যই কবীরা গুনাহে গুনাহগার হবে।

৪) স্পর্শ করার সময় ছেলে ও মেয়ে পুরুষ কিংবা মহিলা উভয়ের কোনো একজনের শাহওয়াত বা কামভাব জাগ্রত হওয়া শর্ত। উভয়ের শাহওয়াত বা কামভাব জাগ্রত হওয়া শর্ত নয়। (ফতওয়ায়ে শামী)

শাহওয়াত বা কামভাবের মাপকাঠি:

উল্লেখিত হুরমতে মুছাহারা বা হারাম সাব্যস্ত হওয়ার জন্য পুরুষের শাহওয়াত বা কামভাবের মাপকাঠি হচ্ছে তার লজ্জাস্থান বেড়ে উঠা। আর যদি স্পর্শ করার পূর্ব থেকেই তা উত্থিত অবস্থায় থাকে, তাহলে তার জন্য মাপকাঠি হলো তাতে আরো বৃদ্ধি পাওয়া। আর মহিলা, বৃদ্ধপুরুষ ও কমজোর পুরুষের জন্য শাহওয়াতের মাপকাঠি হলো- অন্তকরণে স্বাদ বা মজা অনুভব করা। যদি স্পর্শ করার পূর্ব থেকে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়ে থাকে, তাহলে তা আরো বৃদ্ধি পাওয়া। (আলমগীরী, ১:২৭৫)

কোনো পুরুষ বা উপরোল্লিখিত মহিলা তথা পুত্রবধূ, শ্বাশুড়ী, সৎমা এবং আপন মেয়ে এদের মধ্যে হতে কারো মুখে, গালে অথবা মাথার উপরিভাগে যদি বুছা দেয় এবং বলে যে, আমি এ কাজ শাহওয়াতের সাথে করিনি, তাহলে তার এ কথা সত্য বলে মেনে নেয়া যাবে না। বরং হারাম সাব্যস্ত হয়ে যাবে।

উক্ত অবস্থায় হারাম সাব্যস্ত হওয়ার জন্য এমন শর্ত নেই যে, হাত লাগা অবস্থায় বেশ কিছুক্ষণ থাকতে হবে। বরং ভুলেও যদি স্ত্রী মনে করে তার প্রাপ্ত বয়স্কা মেয়ের উপর শাহওয়াতের সাথে হাত পড়ে যায় এবং খেয়াল হওয়ার পর তৎক্ষণাত হাত সরিয়ে নেয় তাহলেও তার স্ত্রী তার উপর চিরদিনের জন্য হারাম হয়ে যাবে। আর সেই স্পর্শ শরীরের যে কোনো অঙ্গে হোক না কেন।

৫) শাহওয়াতের উল্লেখিত মাপকাঠি স্পর্শ করার সময়ই থাকতে হবে। কাজেই, যদি স্পর্শ করার সময় শাহওয়াত উল্লেখিত মাত্রায় না হয়, বরং হাত সরিয়ে নেয়ার পর শাহওয়াতের ঐ মাত্রা পাওয়া যায় তাহলে তা দ্বারা বর্ণিত হারাম সাব্যস্ত হবে না।

৬) স্ত্রীর এ জাতীয় ঘটনায় স্বামীর নিকট স্ত্রীর শাহওয়াতের দাবি সত্য বলে মনে হওয়া। কাজেই, যদি স্বামীর নিকট সেই দাবি মিথ্যা বলে মনে হয়, তাহলে সেক্ষেত্রে হারাম সাব্যস্ত হবে না। কেননা, স্বামীর সাথে দুশমনী বা মনোমালিন্য হওয়ার কারণে স্ত্রী এরূপ মিথ্যা দাবি করতে পারে, যেন তার উপর তার স্ত্রী হারাম সাব্যস্ত হয়।

উল্লেখ্য যে, যে সমস্ত অবস্থায় হুরমতে মুছাহারা সাব্যস্ত হয়, তার সমস্ত অবস্থাতেই বিবাহ শেষ হয়ে যায় না। বরং বিবাহ ফাসিদ হয়। আর এজন্য তাকে তালাক দেয়া জরুরী। যাতে ঐ মহিলা অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে।

যাতে মারাত্মক ভুল না হয় তার জন্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা:

হুরমতে মুছাহারা হয়ে গেলে একমাত্র তালাক বা বিচ্ছেদ ছাড়া অন্য কোনো ব্যবস্থা নেই। কাজেই পূর্ব থেকে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।

আবার বিষয়টি যেহেতু অত্যন্ত স্পর্শকাতর বা অতিনাজুক, এমনকি একান্ত অনিচ্ছাসত্ত্বেও অনেক সময় এমন পরিস্থিতি হয়ে স্ত্রী তার স্বামীর জন্য হারাম সাব্যস্ত হয়ে যেতে পারে, এজন্য তার প্রতি সকলের খুবই সতর্ক দৃষ্টি রাখা অপরিহার্য।

এই জাতীয় মারাত্মক ভুল থেকে বাঁচার জন্য নিম্নলিখিত পদ্ধতিসমূহ অবলম্বন করা উচিত:

 যে স্থানে নিজের স্ত্রী ঘুমায়, ঐ স্থানে পুত্র-স্ত্রী, আপন মা, নিজের উপযুক্ত মেয়ে, নিজের সৎমা, প্রাপ্ত বয়স্কা সৎমেয়ে এবং নিজের শ্বাশুড়ী এই মহিলাদের মধ্যে কেউ যেন না শোয় বা না ঘুমায় তার ব্যবস্থা করতে হবে। যদি প্রত্যেকের পৃথক রুম বা কামরা না থাকে তাহলে কমপক্ষে প্রত্যেকের নির্দিষ্ট পৃথক পৃথক সুন্নতী চৌকি বা বিছানা ইত্যাদি হওয়া জরুরী। এমতাবস্থায়ও যতক্ষণ পর্যন্ত স্ত্রীকে ভালোভাবে না চিনবে ততক্ষণ পর্যন্ত তার শরীরে হাত দিবে না। কেননা কোনো সময় ঘটনাক্রমে নিজের স্ত্রীর চৌকিতে অন্য মহিলাও শুয়ে থাকতে পারে।

 উপরোল্লিখিত ছয় মহিলার হাত থেকে যদি কিছু নিতেই হয়, তাহলে খেয়াল রাখতে হবে যেন তার হাতে হাত না লাগে। নফসের কোনো বিশ্বাস নেই। যদি তার হাতে হাত লেগে যায় আর সে সময় মনের মধ্যে শাহওয়াতের সৃষ্টি হয়, তাহলে নিজ স্ত্রী চিরতরে হারাম হয়ে যাবে। সর্বোপরি একজন অপরজনের মনের অবস্থা জানতে পারে না। অথচ উক্ত কর্ম দ্বারা বর্ণিত হারাম সাব্যস্ত হতে পারে। সেক্ষেত্রে শাহওয়াত বা কামভাবের কথা জানা সত্বেও লোকলজ্জা ও ভয়ের কারণে তা মুখে প্রকাশ করতে অনেকে সঙ্কোচবোধ করে। তখন শেষ পরিণতি এই হয় যে, পুরো জীবন হারাম তথা ব্যভিচারের গুনাহের সাথে অতিবাহিত হয়। যার মধ্যে অপমৃত্যুর কিংবা বিনা তওবায় মৃত্যুর, এমনকি ঈমানহারা হয়ে মারা যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া পরকালীন কঠিন ও ভয়াবহ আযাব তো রয়েছেই।

 অধিক সতর্কতার জন্য জরুরী হচ্ছে উক্ত মহিলারা একজনের কাপড় অন্যজন কখনো পরিধান করবে না। তারা কখনো একই রঙের জামা-কাপড় পরবে না। অনুরূপ সাজ-গোজ করবে না।

 পুত্রবধূ যদি শ্বশুরের হাত-পা দাবাতে চায়, তেল লাগাতে চায় তাহলে শ্বশুর তাকে নিষেধ করে দিবে যদিও শ্বশুর বৃদ্ধ হয়। পুত্রবধূ দৈহিক কোনো খিদমত না করার কারণে শ্বশুরের অসন্তুষ্ট হওয়া উচিত নয়। আর পুত্রবধূও শ্বশুরের এরূপ অসন্তুষ্টির কখনো পরওয়া করবে না। এমনকি আপন স্বামীও যদি এ কারণে অসন্তুষ্ট হয়, তাতেও কোনো ভ্রুক্ষেপ করবে না। বরং স্বামীকে বুঝাবে। তা না হলে এই ফিতনার যুগে উক্ত কঠিন পরিস্থিতির শিকার হয়ে দুনিয়া ও আখিরাতকে বরবাদ করে ফেলতে পারে। অথচ সে এ ব্যাপারে নিজে টেরও পাবে না।

স্পর্শ করার দ্বারা যেমন ‘হুরমতে মুছাহারা’ সাব্যস্ত হয়, তেমনি দৃষ্টি দেয়া বা দেখার দ্বারাও হুরমত সাব্যস্ত হয়

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لِيَسْتَأْذِنكُمُ الَّذِينَ مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ وَالَّذِينَ لَمْ يَبْلُغُوا الْحُلُمَ مِنكُمْ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ مِن قَبْلِ صَلَاةِ الْفَجْرِ وَحِينَ تَضَعُونَ ثِيَابَكُم مِّنَ الظَّهِيرَةِ وَمِن بَعْدِ صَلَاةِ الْعِشَاء ثَلَاثُ عَوْرَاتٍ لَّكُمْ

অর্থ: “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের গোলাম-বাঁদীরা এবং তোমাদের মধ্যে যারা প্রাপ্ত বয়স্ক হয়নি তারা যেন তিন সময়ে তোমাদের কাছে আসতে অনুমতি গ্রহণ করে। ফযরের নামাযের পূর্বে, দুপুর বেলা যখন তোমার পোশাক-পরিচ্ছদ খুলে রাখো এবং ঈশার নামাযের পর। এই তিন সময় তোমাদের শরীর সাধারণত খোলা থাকে।” (পবিত্র সূরা নূর শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৮)

উল্লেখ্য যে, এই তিন সময় যদি অপ্রাপ্ত বয়স্কদেরকে অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করার আদেশ দেয়া হয়, তাহলে যারা প্রাপ্ত বয়স্ক তাদের ক্ষেত্রে অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করার বিষয়টি আরো জরুরী তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত আতা ইবনে ইয়াসার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, একদা এক ব্যক্তি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন- ইয়া রসূলুল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি আমার নিজের মায়ের কাছে যেতে কি অনুমতি চাইবো? তিনি বললেন, হ্যাঁ।

লোকটি আরজ করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি আমার মায়ের সাথে একই ঘরে বসবাস করি। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, যখন উনার কাছে যাবেন, অনুমতি নিয়ে যাবেন। তখন লোকটি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি তো উনার খাদিম। (উনার খিদমতের জন্য বারবার উনার কাছে আসা-যাওয়া করতে হয়)

তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, “তবুও আপনি অনুমতি নিয়ে উনার কাছে যাবেন। আপনি কি আপনার মাকে বিবস্ত্র অবস্থায় দেখতে পছন্দ করেন? লোকটি বললেন, না। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, তাহলে অনুমতি নিয়ে উনার কাছে যাবেন।” (মিশকাত শরীফ)

কেননা একান্ত অনিচ্ছাসত্বেও এমন অনাকাঙ্খিত দৃষ্টিপাতের দ্বারা এমন অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে যার কারণে আপন মা কিংবা সৎমা উনার আপন স¦ামীর জন্য চিরতরে হারাম হয়ে যেতে পারে।

উল্লেখ্য যে, পুত্রবধূ, আপন মা, নিজের উপযুক্ত মেয়ে, সৎমা, প্রাপ্ত বয়স্কা সৎমেয়ে, নিজের শ্বাশুড়ী এই ছয় প্রকার মহিলাগণের উপর যেমন স্পর্শের দ্বারা হুরমতে মুছাহারা সাব্যস্ত হতে পারে তেমনিভাবে শাহওয়াতের সাথে লজ্জাস্থানের অভ্যন্তরভাগে দৃষ্টি দেয়ার কারণেও হুরমতে মুছাহারা সাব্যস্ত হয়ে থাকে। তবে ইহা ব্যতীত অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের দিকে দৃষ্টিপাতের দ্বারা হুরমত সাবিত হবে না। কিন্তু খারাপ দৃষ্টির কারণে কবীরা গুনাহ হবে। একইভাবে নদীর তীরে পানির উপর দাঁড়িয়ে থাকার কারণে বা অন্য কোনোভাবে যদি পানির উপর তার প্রতিবিম্ব পড়ে তবে সেই প্রতিবিম্ব দেখলে এবং আয়নার উপরে পড়া প্রতিবিম্বের দিকে তাকার কারণেও হুরমত ছাবিত হবে না।

কাজেই, উপরোল্লিখিত মহিলাগণের শোয়ার স্থানে বা শোয়ার সময় তাদের নিকটে না যাওয়াই ভালো। যদি একান্ত প্রয়োজনে যেতে হয়, তাহলে তাদের অনুমতি নিয়ে যাওয়া উচিত।

মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

الحياء شعبة من الايمان

অর্থ: ‘লজ্জা সম্মানিত ঈমান উনার অঙ্গ।” (মুসলিম শরীফ)

লজ্জাহীনতা থেকে পর্দাহীনতা। পর্দাহীনতা থেকে যাবতীয় ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম। মারাত্মক ভুল এবং তার প্রায়শচিত্ত। পর্দার গুরুত্ব, তাৎপর্য, পর্দার সীমারেখা ইত্যাদি না জানার কারণে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভুল ধারণা, সংশয়, সন্দেহ দানা বাঁধে। জীবন হয় দুর্বিষহ।

যারা মাহরাম, যাদের সাথে দেখা করা জায়িয তারা কতটুকু দেখতে পারেন? সম্মানিত শরীয়ত কতটুকু সীমারেখা নির্ধারণ করে দিয়েছেন সে সম্পর্কে জানাও ফরয। যারা মাহরাম তারা শুধু হাত, পা, মুখম-ল দেখতে পারেন। তার চেয়ে বেশি নয়। যারা এই সীমারেখা অতিক্রম করেন তাদের জীবনে মারাত্মক ভুলের সূত্রপাত ঘটে থাকে। অনেকে নিজ মা, মেয়ে, বোনদের পাতলা ও আটসাঁট কাপড় পরাতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। নাঊযুবিল্লাহ! এটাকেই তারা আধুনিকতা ও সামাজিকতা মনে করে। এদের সাথে খেয়াল-খুশি মতো অশ্লীল, অশালীন কথাবার্তা বলতে দ্বিধাবোধ করে না। নাঊযুবিল্লাহ! লজ্জার সীমা অতিক্রম করে। ফলশ্রুতিতে ‘হুরমতে মুছাহারা’ এর মতো মারাত্মক অবস্থার সম্মুখীন হয়। তাতে দুনিয়া ও আখিরাত উভয়ই বরাবদ হয়ে যায়।

কাজেই, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে পর্দার সীমারেখা সংরক্ষণ করা দরকার। লজ্জাশীলতা বজায় রাখা একান্ত প্রয়োজন। বর্ণিত আছে যে, তুমি লজ্জা ছেড়ে দাও তাহলে যা ইচ্ছা তাই করতে পারবে। যেমন ইহুদী, নাছারা, মজুসী, মুশরিক, হিন্দু, বৌদ্ধরা তাদের মন যা চায় তাই করে। এরা জাহান্নামের কীট। এদের রীতি-নীতি পরিহার করা আবশ্যক।

মহান আল্লাহ পাক তিনি মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার মুবারক উসীলায় আমাদের সবাইকে উদ্ভূত সেই পরিবেশ-পরিস্থিতি থেকে পানাহ দান করুন। আমীন।


-আল্লামা মুফতী মুহম্মদ আল কাওসার।

আলআছদাকু, আলআত্বহারু, আলআত্বইয়াবু, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক শেষে সংক্ষেপে (সাঃ, দঃ) দুরূদ শরীফ লিখা প্রসঙ্গে

আওওয়ালু শাফিয়িন, আওওয়ালু মুশাফ্ফায়িন, আওওয়ালু মাঁইইয়ুর্হারিক হালক্বাল জান্নাতি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ‘বিশ্বনেতা’, ‘মহামানব’, ‘মহাপুরুষ’, ইত্যাদি শব্দ দ্বারা সম্বোধন করা প্রসঙ্গে

ইমামুল মুরসালীনা, ইমামুন্ নাবিইয়ীনা, ইমামুল উম্মাতি, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা আম্মা সাইয়্যিদাতুন্ নিসায়ি আলাল আলামীন হযরত আমিনা আলাইহাস্্ সালাম রচিত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ না’ত শরীফ প্রমাণ করে যে, তিনি ইলমে গইব-এর অধিকারিণী ছিলেন

আলবাশীরু, আলবালীগু, আলবাদরুল মুনীরু, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়াগণ অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না উনাদের ফাযায়িল-ফযীলত ও পবিত্রতা

জালীলুল ক্বদরি, জামীলুয যিকরি, জাওয়ামিউল কালিমি, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উর্ধ্বতন পূর্বপুরুষ উনারা ছিলেন পবিত্র থেকে পবিত্রতম