মহাসম্মানিত মহাপবিত্র নূরে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বপ্রথম সৃষ্টি সংক্রান্ত ছহীহ সনদ সহকারে একাধিক ছহীহ হাদীছ শরীফ এবং এ বিষয়ে সকল আপত্তির চূড়ান্ত জবাব

সংখ্যা: ২৭১তম সংখ্যা | বিভাগ:

এক শ্রেণীর লোক সমাজে অপপ্রচার করে ও বিভিন্ন বই পুস্তক লিখে প্রচার করে সর্বপ্রথম সম্মানিত নূরে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সৃষ্টি সংক্রান্ত হাদীছ শরীফ উনার কোন সনদ নেই। তারা “মুসনাদে আব্দুর রাজ্জাক শরীফ” কিতাবের নুসখায় হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফখানা অস্বীকার করে। নাঊযুবিল্লাহ! প্রায় ৩০-৩৫ জনের মত বিখ্যাত মুহাদ্দিছ ও ইমাম উনারা স্ব স্ব কিতাবে হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সেই বর্ণনা “মুসনাদে আব্দুর রাজ্জাক শরীফ” কিতাবে থাকার কথা উল্লেখ করার পরও বিদ্য়াতী ওহাবীরা তা মানতে নারাজ। বর্তমান সময়ে যখন “মুসনাদে আব্দুর রাজ্জাক শরীফ” কিতাবের সেই হাদীছ শরীফখানা ও অন্যান্য হাদীছ শরীফ যা “মুসনাদে আব্দুর রাজ্জাক শরীফ” কিতাবে ছিলো তা “আয-যুযউল মাফকূদ মিনাল যুযয়িল-আউয়াল মিনাল মুসান্নাফ আব্দির রাজ্জাক” নামক কিতাবে ছবি সহ প্রকাশিত হওয়ার পরও বিদ্য়াতী ওহাবীরা দাবি করেছে এই পা-ুলিপিটিই নাকি জাল। উক্ত কিতাবের বিরোধীতা করে তারা বাজারে কয়েক ডজন বইও ছেপে দিয়েছে। একচেটিয়াভাবে প্রচার করছে পবিত্র নূর মুবারক সংশ্লিষ্ট কোন হাদীছ শরীফ উনার কোন সনদই নেই। যা আছে তা মানুষের বানানো … ইত্যাদি। নাঊযুবিল্লাহ! এখানেই শেষ নয় তারা এও বলে থাকে নূর মুবারক বিষয়ক হাদীছ শরীফ ইমাম কাস্তালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার “আল মাওয়াহেবুল্লাদুন্নিয়া” কিতাবে আনার পূর্বে নূর সংশ্লিষ্ট কোন হাদীছ শরীফ কোন কিতাবে ছিলো না। নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ!

হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার বর্ণিত হাদীছ শরীফখানা হচ্ছে-

اَخْرَجَ عَبْدُ الرَّزَّاقِ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ بِسَنَدِهٖ عَنْ حَضْرَتْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ الْأَنْصَارِيِّ رَضِيَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُمَا قَالَ قُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِاَبِيْ أَنْتَ وَأُمِّيْ أَخْبِرْنِـيْ عَنْ أَوَّلِ شَيْءٍ خَلَقَهُ اللهُ قَبْلَ الْأَشْيَاءِ؟ قَالَ يَا جَابِرُ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ إِنَّ اللهَ خَلَقَ قَبْلَ الْأَشْيَاءِ نُوْرَ نَبِيِّكَ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ نُوْرِهٖ فَجَعَلَ ذٰلِكَ النُّوْرُ يَدُوْرُ بِالْقُدْرَةِ حَيْثُ شَاءَ اللهُ وَلَـمْ يَكُنْ فِيْ ذٰلِكَ الْوَقْتِ لَوْحٌ وَلَا قَلَمٌ وَلَا جَنَّةٌ وَلَا نَارٌ وَلَا مَلَكٌ وَلَا سَمَاءٌ وَلَا أَرْضٌ وَلَا شَمْسٌ وَلَا قَمَرٌ وَلَا إِنْسٌ وَلَا جِنٌّ

অর্থ: হযরত ইমাম আব্দুর রাজ্জাক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সনদ সহকারে বর্ণনা করেন যে, হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা। হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি আরয করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাাম! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক, আমাকে জানিয়ে দিন যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বপ্রথম কোন জিনিস সৃষ্টি করেন? তিনি বললেন, হে হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! মহান আল্লাহ পাক তিনি সবকিছুর পূর্বে আপনার যিনি নবী নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত নূর মুবারক উনাকে সৃষ্টি করেন।’ অতঃপর সেই মহাসম্মানিত নূর মুবারক মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত মুবারকের মধ্যে অবস্থান করছিলেন। আর সে সময় লওহো, কলম, বেহেশ্ত, দোযখ, ফেরেশতা, আসমান, যমীন, চন্দ্র, সূর্য, মানুষ ও জিন কিছুই ছিল না। (আল মাওয়াহেবুল্লাদুন্নিয়া ১ম খন্ড ৯ পৃষ্ঠা)

উপরোক্ত হাদীছ শরীফখান হাফিজুল হাদীছ ইমাম কাস্তালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত কিতাব ‘আল মাওয়াহেবুল্লাদুন্নিয়া’ কিতাবে উল্লেখ করেন। ‘আল মাওয়াহেবুল্লাদুন্নিয়া’ কিতাব সর্ম্পকে বলা হয়েছে-

وَهُوَ كِتَابٌ جَلِيْلُ الْقَدْرِ كَثِيْرُ النَّفْعِ لَيْسَ لَه نَظِيْرٌ فِيْ بَابِهٖ

এটি উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন কিতাব, অত্যন্ত উপকারী, এর কোন উপমা নেই। (শরহে যারকানী ৬ পৃষ্ঠা, কাশফুয যুনুন)

আর কিতাবের লেখক হযরত ইমাম কাস্তালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি সর্ম্পকে বলা হয়েছে-

এই পবিত্র হাদীছ শরীফখানা হাফিজে হাদীছ বুখারী শরীফ উনার ব্যাখ্যাকারক ইমাম কাস্তালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি ছাড়াও পৃথিবীর বিখ্যাত বিখ্যাত হাফিজে হাদীছ ও মুহাদ্দিছ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনাদের কিতাবে উল্লেখপূর্বক বলেছেন উক্ত রেওয়ায়েত ইমাম আব্দুর রজ্জাক রহমতুল্লাহি তিনি উনার “মুসনাদে” সনদ সহকারে বর্ণনা করেছেন। অথচ আজকের নব্য ওহাবীরা এটা মানতে নারাজ তাদের বক্তব্য হচ্ছে ইমাম আব্দুর রজ্জাক রহমতুল্লাহি তিনি নাকি এটা বর্ননা করেননি। তাদের বক্তব্য হচ্ছে হাফিজে হাদীছ ইমাম কাস্তালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি নাকি প্রথমে ভুল করে এ হাদীছ শরীফ ইমাম আব্দুর রাজ্জাক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সনদে বলে ফেলছেন। তর্কের খাতিরে যদি এ বক্তব্য মেনে নেয়া হয় তবে প্রশ্ন আসে আরেক জায়গায়। এই বিখ্যাত কিতাব ‘আল মাওয়াহিবুল্লাদুন্নিয়াহ’ এর শরাহ বা ব্যাখ্যা গ্রন্থ ‘শরহে মাওয়াহেব’ রচনা করেন আরেকজন বড় মুহাদ্দিছ ও হাফিজে হাদীছ হযরত ইমাম যারকানী রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি প্রতি শব্দ ধরে ধরে ব্যাখ্যা করেছেন। ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনিও ‘শরহে মাওয়াহেব’ কিতাব যা দারু কুতুব আল ইলমিয়া থেকে প্রকাশিত এর ৮৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন ইমাম আব্দুর রজ্জাক রহমতুল্লাহি তিনি উনার “মুসনাদে” সনদ সহকারে বর্ণনা করেছেন। যদি এটা ইমাম কাস্তালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ভুল হতো তাহলে সেটা ইমাম যারকানী রহমতুল্লাহি অবশ্যই প্রতিবাদ করতেন। অথচ তিনি তা করেন নাই বরং বিষয়টা কিতাবে গ্রহণ করে মেনে নিয়েছেন। এরকম আরো ৩০-৩৫ জন মুহাদ্দিছ উনারা প্রত্যেকেই ইমাম আব্দুর রজ্জাক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মহাসম্মানিত নূর মুবারক উনার হাদীছ শরীফ খানা উনার “মুসনাদে” সনদ সহকারে বর্ণনা করেছেন এই মতই প্রকাশ করেছেন। বিখ্যাত মুহাদ্দিছ এবং হাদীছ শরীফ বিশারদ হযরত ইবনে হাজার হায়তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ৫ খানা কিতাবে এ পবিত্র হাদীছ শরীফ উল্লেখপূর্বক বলেছেন ইমাম আব্দুর রাজ্জাক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার “মুসনাদে” সনদ সহকারে বর্ণনা করেছেন। তন্মধ্যে দারু কুতুব আল ইলমিয়া থেকে প্রকাশিত ‘আশরাফুল ওসাইল’ ৩৬ পৃষ্ঠা, দারুল মিনহাজ বৈরুত লেবানন থেকে প্রকাশিত ‘আল মিনায়ুল মাক্কীয়া ফি শারহীল হামজিয়া’ কিতাবের ৯৩ পৃষ্ঠা, দারু ইহইয়া আত তুরাছ আল আরাবী বৈরুত লেবানন থেকে প্রকাশিত ‘আল ফতওয়ায়ে হাদিছিয়্যাহ’ কিতাবের ৮৫ পৃষ্ঠায় তা উল্লেখ আছে। বিখ্যাত আলেম ও মুহাদ্দিছ হযরত আব্দুল কাদির ইবনে শায়েখ হুসাইনী ইয়ামেনী রহমতুল্লাহি আলাইহি (জন্ম: ৯৭৮, ওফাত ১০৩৮ হিজরী) উনার “আন নুরুস সাফির আন আখবারি কারনীল আশির” কিতাব উনার ২২ পৃষ্ঠা যা দারুছ ছদর, বৈরুত লেবানন থেকে প্রকাশিত সেখানেও ইমাম হযরত আব্দুর রজ্জাক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুছান্নাফের বরাতে হাদীছ শরীফখানা উল্লেখ করেছেন। বিখ্যাত হাদীছ শরীফ বিশারদ হযরত মুল্লা আলী কারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার “আল মাওয়ারিদুর রাবী” কিতাবের ২২ পৃষ্ঠায় ইমাম আব্দুর রজ্জাক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুছান্নাফের বরাতে হাদীছ শরীফখানা উল্লেখ করেছেন। এছাড়া মুফতীয়ে বাগদাদ হযরত ইমাম আলুসী বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার তাফসীরে রুহুল মায়ানীতে ১৭ খন্ড ১০৫ পৃষ্ঠায় এই হাদীছ শরীফখানা এনেছেন। এ উপমহাদেশে বিখ্যাত আলেম হাফিজুল হাদীছ হযরত রুহুল আমীন বশিরহাটী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার “মীলাদে মুস্তফা” কিতাবের ৯ পৃষ্ঠায়, বিখ্যাত আলেম উছূলে হাদীছের কিতাব ‘মিযানুল আখবারের’ মুছান্নিফ হযরত আমিমুল এহসান মুজাদ্দেদী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ‘সিরাজুমমুনীরা’ কিতাবে ৪৩ পৃষ্ঠায়, সিরাতে হলবীয়া ১/৩০, মাতালেউল মাসাররাত ২৬৫ পৃষ্ঠা, হাদ্বীকায়ে নদীয়া ২/৩৭৫, তারীখুল খমীস ১/২০, দুররুল মুনাজ্জাম ৩২ পৃষ্ঠা, কাশফুল খফা ১/৩১১, নুজহাতুল মাজালীস ১ খন্ড, নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৪৭ পৃষ্ঠা, মজমুয়ায়ে ফতোয়া লখনবী ২/২৬০ সহ অসংখ্য কিতাবে ইমাম আব্দুর রজ্জাক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুছান্নাফের বরাতে হাদীছ শরীফখানা দলীল হিসাবে উল্লেখ করেছেন। এই বক্তব্যের প্রতিবাদও কেউ করেন নাই, এর বিরুদ্ধে কেউ কলমও ধরেন নাই নব্য (২০/৩০ বছর ধরে) ওহাবীরা ছাড়া।

উলামায়ে কিরাম উনাদের গ্রহণ করে নেয়াই নির্ভরযোগ্য হওয়ার অকাট্য দলীল

অসংখ্য অগণিত ইমাম, মুহাদ্দিছগণ নূর মুবারক উনার হাদীছ শরীফ বিনা দ্বিধায় গ্রহণপূর্বক স¦ স¦ কিতাবে বর্ণনা করেছেন। উনাদের এ গ্রহণ করে নেয়াই উছুল অনুযায়ী নির্ভরযোগ্য এবং বিনা সন্দেহে আমলযোগ্য। এ বিষয়ে মুয়াত্তা ইমাম মালেক কিতাব উনার শরাহতে বর্ণিত আছে-

لِلْحَدِيْثِ وَالْعَمَلُ بِهٖ وَعَلٰى ذٰلِكَ عَمَلُ الْأُمَّةِ وَالْـحَدِيْثُ اِذَا تَلَقَّتْهُ الْأُمَّةُ بِالْقُبُوْلِ وَالْعَمَلِ بِهٖ لَـمْ يـَحْتَجَّ اِلٰى إسْنَادٍ صَحِيْحٍ لِأَنَّ عَمَلَ الْأُمَّةِ بِهٖ يَقْتَضِي الْعِلْمَ بِصِحَّتِهٖ بِتَقْرِيْرِ الشَّرْعِ وَتَصْحِيْحِ إسْنَادِهٖ لَا يَقْتَضِيْ ذٰلِكَ فَكَانَ الْعَمَلُ بِهٖ عَلٰى هٰذَا الْوَجْهِ أَقْوٰى

অর্থ: আর পবিত্র হাদীছ শরীফ যখন তালাক্কী বিল কুবূল হবে (ইমাম-মুজতাহিদীন রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের কাছে গ্রহণীয় হবে) এবং উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা আমল করা হবে, তখন উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ ছহীহ হওয়ার ব্যাপারে সনদের মুখাপেক্ষী হতে হবে না। কেননা উক্ত হাদীছ শরীফ উনার ভিত্তিতে উম্মতের আমল করাটাই উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফকে শরীয়তের ভাষ্য অনুযায়ী ছহীহ প্রমাণ করে। হাদীছের সনদ এ ব্যাপারে ছহীহ হওয়া প্রয়োজন হয় না, কেননা হাদীছের দ্বারা আমল করাটা (সনদের মাধ্যমে সহীহ হওয়ার চেয়ে) অধিক শক্তিশালী হওয়ার কারণ। (আল মুনত্বকা শরহে মুয়াত্তা ১ম খন্ড ১৩৯ পৃষ্ঠা, ২৩৭ নং হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যা, প্রকাশনা: দারু কুতুবুল ইলমিয়া)

পবিত্র সূরা নিসা শরীফ উনার ইজমার আয়াত শরীফ হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত হাদীছ শরীফখানা ইমামগণ উনাদের কিতাবে গ্রহণ করে নিয়েছেন, এবং এ বিষয়ে উম্মতের আক্বীদা চলে আসছে। সূতরাং তালাক্কী বিল কুবুল এর উছূলে উক্ত হাদীছ শরীফখানা সহীহ এবং শক্তিশালী দলীল। এর বিরোধীতা করা স্পষ্ট গোমরাহীর নামান্তর।

উক্ত হাদীছ শরীফ উনাকে সহীহ বলেছেন অনেক বিখ্যাত আলিমগণ:

৯ম হিজরী শতকের আরেকজন বিখ্যাত আলেম হযরত ইবনে আসখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (ওফাত ৯৯১) তিনি বাহাজাতুল মাহফিল কিতাবের শরাহ এ এই হাদীছ শরীফ উনাকে নির্ভরযোগ্য বলেছেন-

يُؤَيِّدُ صِحَّتَه عَبْدُ الرَّزَّاقِ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ فِيْ مُسْنَدِهٖ بِسَنَدٍ مُّسْتَقِيْمٍ مِنْ حَدِيْثِ حَضْرَتْ جَابِرٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ: قُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَخْبِرْنِـيْ بِأَوَّلِ شَيْءِ خَلَقَهُ اللهُ قَبْلَ الْأَشْيَاءِ. قَالَ يَا جَابِرُ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اِنَّ اللهَ …

অর্থ: বিশুদ্ধ সমর্থিত ধারাবাহিক পরম্পরায় বর্ণিত সনদে ইমাম হযরত আব্দুর রাজ্জাক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুসনাদে হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন, ইয়া রসূল্লাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমাকে সংবাদ দিন কোন জিনিস সর্বপ্রথম সৃষ্টি করা হয়েছে। হে হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু….. (বাহাজাতুল মাহাফিল ওয়া বুগিয়াতুল আমাছিল ১ম খন্ড ২২ পৃষ্ঠা; প্রকাশনা : দারু কুতুবুল ইলমিয়া, বৈরুত লেবানন)

বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস, যিনি এই উপমহাদেশে হাদীস শরীফের ব্যাপক প্রচার প্রসার করেছেন, সুদীর্ঘ সময় মদীনা শরীফে যিনি ইলিম চর্চা করেছেন। যিনি প্রতিদিন হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাক্ষাত মুবারক লাভ করতেন, ইমামুল মুহাদ্দিছীন শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার কিতাবে লিখেন-

درحدیث صحیح وارد شد  کہ اَوَّلُ مَا خَلَقَهُ اللهُ نُوْرِيْ

অর্থ: “ছহীহ হাদীছ শরীফে” বর্ণিত হয়েছে যে, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন, মহান আল্লাহ পাক সর্ব প্রথম আমার নূর মুবারক সৃষ্টি করেন। (মাদারেজুন নবুওয়াত ২য় খন্ড ২ পৃষ্ঠা)

বিখ্যাত মুহাদ্দিস, আরেফ বিল্লাহ, সাইয়্যিদুনা আব্দুল গনী নাবেলসী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উক্ত হাদীছ শরীফ উনাকে সরাসরি সহীহ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখেছেন-

قَدْ خَلَقَ كُلَّ شَيْيٍ مِّنْ نُّوْرِهٖ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَمَا وَرَدَ بِهِ الْـحَدِيْثِ الصَّحِيْحِ

অর্থ: নিশ্চয়ই প্রত্যেক জিনিস হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূর মুবারক থেকে সৃষ্টি হয়েছে, যেমন এ ব্যাপারে ‘সহীহ’ হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে।” (হাদীক্বায়ে নদীয়া শরহে তরীকায়ে মুহম্মদীয়া- দ্বিতীয় অধ্যায় ৬০ তম অনুচ্ছেদ-২য় খন্ড ৩৭৫ পৃষ্ঠা)

উপরোক্ত দলীল সমূহ দ্বারা আমরা জানতে পারলাম সর্বপ্রথম নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সৃষ্টি বিষয়ক হাদীছ সমূহ সহীহ। এ বিষয়ে উলামায়ে কিরাম স্পষ্ট বক্তব্য দিয়েছেন। অথচ বিপরীতে কিয়ামত পর্যন্ত কোশেশ করেও কোন বাতিল ফিরকার পক্ষে সম্ভব হবে না এ হাদীছ শরীফ উনাকে জাল বলেছে এ মর্মে গ্রহণযোগ্য এমন কোন ইমাম বা মুহাদ্দিছ উনাদের উদ্ধৃতি দিতে।

যেসব কিতাবে বিভিন্ন রেওয়ায়েত জাল বা মওদ্বু বলা হয় সেসব কিতাবেও নূর মুবারক উনার হাদীছ শরীফকে গ্রহণযোগ্য হিসাবেই আনা হয়েছে:

ওহাবীরা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাকে জাল দ্বয়ীফ প্রমাণ করার জন্য কথায় কথায় যে কিতাবের রেফারেন্স দেয় এমন দু’টি কিতাবের নাম হচ্ছে ‘কাশফুল খফা’ ও ‘আসসারুল মারফুয়া’। আলোচনার বিষয় হচ্ছে উক্ত কিতাবদ্বয়েও হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত নুর মুবারক উনার হাদীছ শরীফ ‘ইমাম আব্দুর রজ্জাক রহমতুল্লাহি তিনি উনার “মুসনাদে” সনদ সহকারে বর্ণনা করেছেন’ বলেই উল্লেখ করেছেন।

বিশিষ্ট হাদীছ শরীফ বিশারদ হযরত আযলুনী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার “কাশফুল খফা” কিতাবের ১খন্ড ২৩৭ পৃষ্ঠার ৮২৬ নং হাদীছ শরীফ উল্লেখ করেন-

رَوَاهُ عَبْدُ الرَّزَاقِ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ بِسَنَدِهٖ عَنْ حَضْرَتْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ بِلَفْظٍ قَالَ قُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَاَبِيْ أَنْتَ وَأُمِّيْ أَخْبِرْنِـيْ عَنْ أَوَّلِ شَيْءٍ خَلَقَهُ اللهُ قَبْلَ الْأَشْيَاءِ؟ قَالَ يَا جَابِرُ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ إِنَّ اللهَ تَعَالٰى خَلَقَ قَبْلَ الْأَشْيَاءِ نُوْرَ نَبِيِّكَ مِنْ نُوْرِهٖ

উপরোক্ত ইবারতে স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে ইমাম হযরত আব্দুর রাজ্জাক রহমতুল্লাহি আলাইহি সনদ সহকারে হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন এ কথার স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।

দেওবন্দীদের অন্যতম মুহাদ্দিছ আব্দুল হাই লখনবী তার “আসসারুল মারফুয়া” কিতাবের ৪২ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করে-

رِوَايَةُ عَبْدِ الرَّزَاقِ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ فِـىْ مُصَنَّفِهٖ عَنْ حَضْرَتْ جَابِرٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَاَبِيْ أَنْتَ وَأُمِّيْ أَخْبِرْنِـيْ عَنْ أَوَّلِ شَيْءٍ خَلَقَهُ اللهُ قَبْلَ الْأَشْيَاءِ؟ فَقَالَ يَا جَابِرُ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ إِنَّ اللهَ خَلَقَ قَبْلَ الْأَشْيَاءِ نُوْرَ نَبِيِّكَ مِنْ نُوْرِهٖ

এই ইবারতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে আব্দুল হাই লখনবী তার কিতাবে ইমাম হযরত আব্দুর রাজ্জাক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুছান্নাফে হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সনদে বর্ণিত সর্বপ্রথম নূর মুবারক সৃষ্টি এ হাদীছ শরীফ খানা উল্লেখ করেছেন। এরপর আব্দুল হাই লখনবী সর্বপ্রথম সৃষ্টি বিষয়ে মতামত দিতে গিয়ে বলেন-

قَدْ ثَبَتَ مِنْ رِوَايَةِ عَبْدِ الرَّزَّاقِ أَوَّلِيَّةُ النُّوْرِ الْـمُحَمَّدِيِّ خَلْقًا وَسَبَقَتْهُ عَلَى الْـمَخْلُوْقَاتِ سَبْقًا

অর্থ: হযরত ইমাম আব্দুর রাজ্জাকের রেওয়ায়েত দ্বারা এটা প্রমাণ হয় নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্য সকল সৃষ্টির মধ্যে প্রথম সৃষ্টি। (আসরারুল মারফুয়া ৪৩ পৃষ্ঠা)

দেওবন্দীদের মুহাদ্দিছদের গর্ব আব্দুল হাই লখনবী নিজেই স্বীকার করে নিয়েছেন, ইমাম আব্দুর রাজ্জাক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুছান্নাফে এ হাদীছ শরীফখানা রয়েছে।

বর্তমানে ওহাবীরা ‘আল মাওয়াহিবুল লাদুন্ নিয়া’ কিতাবের দলীল মানতে চায় না। অথচ তাদের মাথার তাজ, দেওবন্দীদের মুহাদ্দিছকুলের শিরোমনী অনোয়ার শাহ কাশ্মীরি তার “আরফুশ শাযী শরহে জামেউত তিরমিযী” কিতাবে সর্বপ্রথম কলম সৃষ্টির হাদীছের ব্যাখ্যায় বলেছেন-

قَوْلُه: (أَوَّلُ مَا خَلَقُ اللهِ إلخ) فِيْ بَعْضِ الرِّوَايَاتِ: اِنَّ اَوَّلَ الْـمَخْلُوْقَاتِ نُورُ النَّبِيِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَكَرَهُ الْقَسْطَلَانِـيُّ فِي الْـمَوَاهِبِ بِطَرِيقِ الْـحَاكِمِ وَالتَّرْجِيْحَ لِـحَدِيْثِ النُّوْرِ عَلٰى حَدِيْثِ الْبَابِ

“(মহান আল্লাহ পাক সর্বপ্রথম সৃষ্টি করেছেন) কোন কোন বর্ণনায় আছে, নিশ্চয়ই সৃষ্টির মধ্যে প্রথম হচ্ছেন হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূর মুবারক। ইমাম কাস্তালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মাওয়াহেব কিতাবে হাকেমের সূত্রে বর্ণনা করেছেন। তিনি সেখানে সবগুলো বর্ণনার মধ্যে সম্মানিত নূর মুবারকের হাদিছ শরীফ উনাকে প্রাধান্য দিয়েছেন।” (আরফুশ শাযী শরহে জামেউত তিরমিযী ৩য় খন্ড ৩৪৪ পৃষ্ঠা; প্রকাশনা: দারু এহহিয়া আত তুরাস আল আরবী, বৈরুত, লেবানন)

অর্থাৎ সর্বদিক থেকে নূর মুবারক উনার দলীল সবাই গ্রহণ করেছেন। বিরোধিতাকারীরা যাদেরকে মুরুব্বী মানে, যাদের কথা দলীল জানে, তারাও এই হাদীছ শরীফ উনাকে গ্রহণ করেছে বিনা সংকোচে। অথচ কেন যেন হঠাৎ করে এতদিন পর ওহাবীরা এই হাদীছ শরীফ উনাকে জাল প্রমাণ করতে উঠে পড়ে লেগেছে তা বলাই বাহুল্য।

মুছান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক কিতাবের এই হাদীছ শরীফ উনার বিরোধীতা কারা করছে: দুনিয়ার কোন গ্রহণযোগ্য মুহাদ্দিছ বা হাদীছ শরীফ বিশারদ উনাদের এই হাদীছ শরীফ নিয়ে আপত্তি পাওয়া যায় না। আমরা চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি কোন গ্রহণযোগ্য আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত উনার আমল ও আক্বীদায় বিশ্বাসী ইমাম এই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাকে জাল বলেছে এমন কোন প্রমাণ ওহাবীরাও দিতে পারে না। তাদের মতে শুধুমাত্র ওহাবী মতবাদের পৃষ্ঠপোষক সিদ্দীক আল গুমারী, লাল শাহ বুখারী, নাসিরউদ্দীন আলবানী, বিন বায, আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর, আহমক শফী, জুনায়েদ বাবুনগরী, বাংলাদেশের আব্দুল মালেকগং ছাড়া আর কেউ এর বিরোধীতি করে না।

এর বিপরীতে ওহাবীদের আকাবীর রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী, আশরাফ আলী থানবী, আনোয়ার শাহ কাশ্মীরী, আব্দুল হাই লখনবী, হুসাইন আহমদ মাদানী, মুফতী শফী (পাকিস্তান), আমিনুল ইসলাম (খতীব লালবাগ), আজিজুল হক সহ সবাই বিনা চুচেরায় উক্ত বর্ণনা গ্রহণ করে নিয়েছে। শুধু তাই না, বর্তমানে দেওবন্দীদের দারুল ইফতার ওয়েবসাইটের ফতোয়াতে এখনো সর্বপ্রথম সৃষ্টি নূর এ ফতোয়া দেয়া আছে-

Question: 3126

Is the Prophet peace be upon him’s nur the first thing to be created? Also, was it created before Adam alayhis salam’s?

Answer: 3126

بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ

(Fatwa: 903/876=D)

Hazrat Hakimul Ummah, Maulana Ashraf Ali Thanwi has mentioned a Hadith in his book

نَشْرُ الطِّیْبِ فِیْ ذِکْرِ النَّبِیِّ الْـحَبِیْبِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

with reference of Ahkam bin Al-Qattan that Hazrat Ali bin Al-Hussain (Zainul Abdeen) narrated from his father Hazrat Hussain (عَلَيْهِ السَّلَامُ) and he narrated from his father (Hazrat Ali عَلَيْهِ السَّلَامُ) that the Prophet (صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ) said: ? I was a noor (light) in front of my Lord some forty thousand years before the birth of Hazrat Adam (عَلَيْهِ السَّلَامُ)?.

There are some more traditions which prove that the noor of the Prophet (صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ) was created in the earliest time, some traditions say that his noor was created before the Tablet, the Pen, earth, sky and even before all creatures.

Allah knows Best!

DarulIfta, Darul Uloom Deoband (http://archive.is/RgyJE)

এখন নূর মুবারক উনার পক্ষে যারা আছে আর বিপক্ষে যারা আছে তাদের নামের দিকে নজর করলে ওহাবীরা কাদের মানবে? ইচ্ছায় অনিচ্ছায় যাদের মানবে তারাই নূর মুবারক উনার হাদীছ শরীফ এর পক্ষের। সুতরাং বিরোধিতা করার আগে নিজের পাতিলের খবর নেয়া উচিত।

যারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে “নূর” হিসাবে মানতে পারেন না। যারা বলেন, নূরের কোন ছহীহ হাদীছ শরীফ নাই, ইমাম কাস্তালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার আগে কেউ নূরের হাদীছ বর্ননা করেন নাই। তাদের জন্য আরেকটি দলীল আছে। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি (১৬৪-২৪১ হিজরী) রচিত ‘ফাদ্বায়েলুছ ছাহাবা’ কিতাবে একটা হাদীছ শরীফ আছে। বয়সে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (১৯৪- ২৫৬ হিজরী) থেকে ৩০ বছরের বড়, সেই সাথে ওস্তাদও বটে। সূতরাং আশা করা যায় বিরোধীতা যারা করেন এখানেও বিরোধীতা করে হাসির পাত্র হবেন না। হাদীস শরীফখানা সনদ সহ বর্ননা করা হলো-

حَدَّثَنَا الْـحَسَنُ ثَنَا أَحْمَدُ بْنُ الْـمِقْدَامِ الْعَجَلِيُّ ثَنَا الْفُضَيْلُ بْنُ عَيَاضٍ ثَنَا ثَوْرُ بْنُ يَزِيْدَ عَنْ خَالِدِ بْنِ مَعْدَانَ عَنْ زَاذَانَ عَنْ حَضْرَتْ سَلْمَانَ الْفَارِسِيِّ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ حَبِيْبِيْ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ يَقُوْلُ كُنْتُ أَنَا وَعَلِىٌّ عَلَيْهِ السَلَامُ نُورًا بَيْنَ يَدَيِ اللهِ عَزَّ وَ جَلَّ قَبْلَ أَنْ يَّـخْلُقَ اٰدَمُ بِأَرْبَعَةَ عَشَرَ أَلْفَ عَامٍ فَلَمَّا خَلَقَ اللهُ اٰدَمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَسَمَ ذٰلِكَ النُّوْرَ جُزْءَيْنِ

অর্থ: …. “হযরত সালমান ফার্সী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা হতে বর্ণিত, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমি এবং হযরত আলী আলাইহিস সালাম মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট “নূর” হিসেবেই অবস্থান মুবারক করছিলাম। উক্ত “নূর মুবারক” হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার সৃষ্টি হওয়ার চৌদ্দ হাজার বৎসর পূর্বে মহান আল্লাাহ পাক উনার তাসবীহ ও পবিত্রতা বর্ণনায় মশগুল ছিল। যখন হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করা হলো তখন উক্ত “নূর মুবারক” দুই ভাগে ভাগ করা হলো।” (কিতাব: ফাদ্বায়েলুছ ছাহাবা, লেখক: ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি, ৬৬৩ পৃষ্ঠা : হাদীছ নং ১১৩০, তারিখে মাদীনাতু দিমাষ্ক ৪২ খন্ড, ফেরদাউস ৩য় জিঃ ২৮৩ পৃষ্ঠা, মুখতাছার তারিখুত দিমাষ্ক ৫/৩৭৭, মানাকিবে আলী ইবনে আবী তালিব ১/১৪৫)

এ হাদীছ শরীফখানা পৃথিবীর অনেক বড় বড় মুহাদ্দিছ এবং হাদীছ শরীফ বিশারদগণ বিনা সংশয়ে উনাদের কিতাবে উল্লেখ করেছেন। পরবর্তীতে বাতিল ফির্কার লোকেরা এ হাদীছ শরীফ উনার একজন রাবী নিয়ে আপত্তি উত্থাপন করে। এই হাদীছ শরীফ উনার সনদে একজন রাবী রয়েছেন হাসান আনছারী। উনার সম্পর্কে অনেকে আপত্তি উত্থাপন করে। এই সনদ ছাড়াও আরেকটি সনদ রয়েছে যেখানে উক্ত হাদীছ শরীফখানা ভিন্ন একটি সহীহ সনদে বর্ণিত রয়েছে। বিখ্যাত ইমাম হযরত তাবারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাবে উক্ত হাদীছ শরীফখানা সনদ সহকারে উল্লেখ করেন-

رُوِيَ عَنْ حَضْرَتْ مُـحَمَّدٍ عَنْ فُضَيْلِ بْنِ عِيَاضٍ عَنْ ثَوْرِ بْنِ يَزِيْدَ عَنْ خَالِدِ بْنِ مَعْدَانَ عَنْ زَاذَانَ أَبِـىْ عَبْدِ اللهِ عَنْ حَضْرَتْ سَلْمَانَ الْفَارِسِيِّ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ حَبِيْبِيْ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ يَقُوْلُ كُنْتُ أَنَا وَعَلِىٌّ عَلَيْهِ السَلَامُ نُورًا بَيْنَ يَدَيِ اللهِ عَزَّ وَ جَلَّ قَبْلَ أَنْ يَّـخْلُقَ اٰدَمَ بِأَرْبَعَةَ عَشَرَ أَلْفَ عَامٍ فَلَمَّا خَلَقَ اللهُ اٰدَمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَسَمَ ذٰلِكَ النُّوْرَ جُزْءَيْنِ

অর্থ: …. “হযরত সালমান ফার্সী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা হতে বর্ণিত, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমি এবং হযরত আলী আলাইহিস সালাম মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট “নূর” হিসেবেই অবস্থান করছিলাম। উক্ত “নূর মুবারক” হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার সৃষ্টি হওয়ার চৌদ্দ হাজার বৎসর পূর্বে মহান আল্লাাহ পাক উনার তাসবীহ ও পবিত্রতা বর্ণনায় মশগুল ছিল। যখন হযরত আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করা হলো তখন উক্ত “নূর মুবারক” দুই ভাগে ভাগ করা হলো।” (আল মুসতারসিদ পৃষ্ঠা ৬২৯- ৬৩০, হাদীছ ২৯৫ লেখক: আবু জাফর মুহম্মদ ইবনে জারীর তাবারী)

উপরোক্ত গ্রহণযোগ্য হাদীছ শরীফখানা থেকে স্পষ্টই প্রমাণ হলো হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নূর হিসাবে সৃষ্টি হয়েছেন।

এ বিষয়ে আরো একখানা সহীহ হাদীছ ইমাম বায়হাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি সহীহ সনদ সহকারে উনার “দালায়েলুন নবুওওয়াত” কিতাবে বর্ণনা করেছেন-

عَنْ حَضْرَتْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَمَّا خَلَقَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ اٰدَمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ خَيَّرَ لِأٰدَمَ بَنِيْهِ فَجَعَلَ يَرٰى فَضَائِلَ بَعْضَهُمْ عَلٰى بَعْضٍ قَالَ فَرَاٰنِـيْ نُوْرًا سَاطِعًا فِيْ أَسْفَلِهِمْ فَقَالَ يَا رَبِّ مَنْ هٰذَا؟ قَالَ هٰذَا اِبْنُكَ أَحْمَدُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هُوَ الْأَوَّلُ وَالْاٰخِرُ وَهُوَ أَوَّلُ شَافِعٍ

অর্থ: হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবরাক করেন, মহান আল্লাহ পাক যখন হযরত আদম ছফীউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করে উনার সন্তানদের দেখান, তখন তিনি উনাদের মধ্যে কারো একজনের উপর অন্যজনের শ্রেষ্ঠত্ব দেখতে সক্ষম হন। তিনি একখানা অতি উজ্জল নূর মুবারক চমকাতে দেখেন। তিনি জিজ্ঞেস করেন, হে মহান আল্লাহ পাক, উনি কে? মহান আল্লাহ পাক জবাবে বলেন, উনি হচ্ছেন আপনার আওলাদ সাইয়্যিদুনা আহমদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনিই প্রথম, তিনিই শেষ, উনার শাফায়াত মুবারকই সর্বপ্রথম কবুল করা হবে। (দালায়েলুন নবুওওয়াত লি বায়হাকী ৫/৪৮৩, হাদীছ ২২১৮, খাছায়েছুল কুবরা)

উক্ত হাদীছ শরীফ উনার সনদ ছহীহ। সুতরাং এই হাদীছ শরীফ দ্বারাও প্রমাণ হলো হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিই প্রথম এবং তিনি অতি উজ্জল সম্মানিত নূর মুবারক হিসাবে সৃষ্টি হয়েছেন। উক্ত হাদীছ শরীফ সমূহ একে অপরকে সমর্থন করে এবং এ থেকে এটাই প্রমাণ হয় সর্বপ্রথম সৃষ্টি হচ্ছেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূর মুবরাক।

বিষয়টা এখানে শেষ নয় বরং হাদীছে জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ছাড়াও অনেক হাদীছ শরীফ রয়েছে যার দ্বারা প্রমাণ হয় সম্মানিত নূর মুবারক থেকেই আরশ, লৌহ, কলম অনেক কিছুই সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে আমরা এমন একটা হাদীছ শরীফ বর্ণনা করবো যা সম্পূর্ণ ভিন্ন সনদ ও মতনে বর্ণিত হয়েছে। এ হাদীছ শরীফখানা হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত নয় বরং এ হাদীছ শরীফ খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার সনদে বর্ণিত। শুধু তাই নয় বরং এ পবিত্র হাদীছ শরীফখানা হযরত ইমাম কাস্তালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার জন্মের ৭০০ বছর আগের কিতাবে বর্ণিত হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে উক্ত হাদীছ শরীফখানাও বিভিন্ন কিতাব থেকে উল্লেখ করা হচ্ছে,

হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাযযালী রহমতুল্লাহি আলাইহি (ওফাত ৫০৫ হিজরী) উনার নাম মুবারক শুনেননি এমন কেউ পৃথিবীতে আছে কি?

সম্মানিত ইলম উনার এমন কোন শাখা নাই যেখানে উনার ব্যাপক বিচরণ নেই। প্রতিটি স্থানেই উনার ইলমের বহিঃপ্রকাশ। আর হাফিয আবুল হাসান আব্দুল গাফফার আল ফারেসী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, ইমাম গাযযালী রহমতুল্লাহি আলাইহি ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য হুজ্জত ও আইম্মায়ে দ্বীনের ইমাম। (তারীখে ইবনে আসাকির ৫৫/২০০)

এই মহান ইমাম উনার অসংখ্য রচনাসমূহের মধ্যে উনার অন্যতম একটি কিতাবের নাম হচ্ছে “সুলওয়াতুল আরেফীন”। কিতাবখানা বিখ্যাত প্রকাশনা দারু কুতুব আল ইলমিয়া থেকে দুই খন্ডে প্রকাশিত। এ কিতাবের ১ম খন্ড ৬৪ পৃষ্ঠায় তিনি একটা বাব রচনা করেছেন যার নাম দিয়েছেন-

بَابُ فِيْ ذِكْرٍ خَلْقِ نُوْرِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ

 (বাবু ফি যিকরি খলক্বি নূরিন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নামে। উক্ত অধ্যায়ে সর্বপ্রথম যে নুরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সৃষ্টি সে বিষয়ে একটা হাদীছ শরীফ উল্লেখ করেছেন-

خَلَقَ اللهُ تَعَالٰي نُوْرَ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ قَبْلَ أَنْ يَّـخْلُقَ ألْاَشْيَاءَ

অর্থ: মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বপ্রথম সকল কিছু সৃষ্টির পূর্বে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূর মুবারক সৃষ্টি করেছেন।

এরপর আরেকটি হাদীছ শরীফ এনেছেন, হাদীছ শরীফখানা হচ্ছে-

عَنْ حَضْرَتْ عَلِىِّ بْنِ اَبِيْ طَالِبٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ خَلَقَ اللهُ نُوْرَ مُـحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ قَبْلَ أَنْ يُّـخْلُقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَ الْعَرْشَ وَ الْكُرْسِيَّ وَالْـجَنَّةَ وَ النَّارَ

অর্থ: খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র নূরে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সৃষ্টি করেছেন আসমান, যমীন, আরশ, কুরসী, জান্নাত, জাহান্নাম সৃষ্টির পূর্বে।” সুবহানাল্লাহ! (সুলওয়াতুল আরেফীন ১ম খন্ড ৬৪ পৃষ্ঠা, লেখক : হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত ইমাম গাযযালী রহমতুল্লাহি আলাইহি (ওফাত ৫০৫ হিজরী), প্রকাশনা: দারু কুতুব আল ইলমিয়া)

সুতরাং দেখা যাচ্ছে নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আলোচনা নতুন কিছু না। ইমাম কাস্তালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বহু পূর্ব থেকেই হয়ে আসছে। উপরোক্ত কিতাবে হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাযযালী রহমতুল্লাহি আলাইহি যদিও কোন সনদ উল্লেখ করেননি। কিন্তু উক্ত হাদীছ শরীফই আরো ১০০ বছর আগে (অর্থাৎ এখন থেকে ১০৩৬ বছর আগে) বিখ্যাত আলিম, মুহাদ্দিছ, ফক্বীহ, ইমামুল হাফিয মুহম্মদ ইবনে ইবরাহীম খারকুশী আন নাইসাবুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত কিতাব “শরফুল মুস্তফা” কিতাবে সনদ সহকারে কিতাবে এনেছেন-

رَوٰي عَبْدُ اللهِ بْنُ مُبَارَكٍ عَنْ سُفْيَانَ الثَّوْرِيِّ عَنْ جَعْفَرَ بْنِ مُـحَمَّدِ الصَّادِقِ عَلَيْهِ السَلَامُ عَنْ أَبِيْهِ عَنْ جَدِّهٖ عَنْ عَلِيٍّ بْنِ أَبِيْ طَالِبٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ اِنَّ اللهَ تَبَارَكَ وَتَعَالٰى خَلَقَ نُوْرَ مُـحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَاٰلِهٖ قَبْلَ أَنْ يَّـخْلُقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَالْعَرْشَ وَالْكُرْسِيَّ وَاللَّوْحَ وَالْقَلَمَ وَالْـجَنَّةَ وَالنَّارَ

অর্থ : “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত সুফিয়ান সাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে, তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস মিন আহলে বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (হযরত ইমাম জাফর ছ¦দিক্ব আলাইহিস সালাম) উনার থেকে, তিনি উনার সম্মানিত পিতা আলাইহিস সালাম উনার থেকে, তিনি উনার সম্মানিত দাদা আলাইহিস সালাম উনার থেকে, তিনি খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র নূরে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সৃষ্টি করেছেন আসমান, যমীন, আরশ, কুরসী, লওহ, কলম, জান্নাত, জাহান্নাম সৃষ্টির পূর্বে।” সুবহানাল্লাহ (শরফুল মুস্তফা ১ম খন্ড ৩০৫-৩১১ পৃষ্ঠা, হাদীছ শরীফ নং ৭৯; লেখক: ইমামুল হাফিয মুহম্মদ ইবনে ইবরাহীম খারকুশী আন নাইসাবুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি। ওফাত: ৪০৬ হিজরী; প্রকাশনী: দারু বাশায়িরুল ইসলামিয়া, আল মক্কাতুল মুকররমা)

এই হাদীছ শরীফ উনার সনদ সহীহ। এই সনদে রয়েছেন স্বয়ং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের ৪ জন মহাসম্মানিত ব্যক্তিত্ব মুবারক। আর সনদের শেষে রয়েছেন আমীরুল মু’মিনীন ফিল হাদীছ অর্থাৎ পবিত্র হাদীছ শাস্ত্রের আমীরুল মু’মিনীন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত সুফিয়ান সাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা।

অর্থাৎ এই হাদীছ শরীফখানা অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য সনদে বর্ণিত। আর এ হাদীছ শরীফ দ্বারাই দিবালোকের ন্যায় প্রমাণিত হচ্ছে সর্বপ্রথম সৃষ্টি হচ্ছেন নূরে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। সুতরাং আজ যারা বিরোধীতা করছে তারা যে স্পষ্ট বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে সেটা প্রমাণিত হলো আবারো। বাতিল ফির্কা হয়তো এ হাদীছ শরীফ থেকে আপত্তি তুলতে পারে ইমাম খারকুশী রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহমতুল্লাহি আলাইহি পর্যন্ত সনদের বিচ্ছিন্নতা রয়েছে।

এ কথার জবাব হচ্ছে, আজ থেকে প্রায় ১১০০ বছর আগে লিখিত একখানা কিতাব যার পান্ডুলিপীর অনুলিপী ও কিতাব উভয়ই আমাদের কাছে মওজুদ আছে। সেখানে উপরোক্ত হাদীছ শরীফ উনার পূর্ণ সনদ সহ বর্ণনা করা হয়েছে। নিম্নে সনদ সহ হাদীছ শরীফখানা বর্ণনা করা হলো-

حَدَّثَنَا الْـحَاكِمُ أَحْمَدُ بْنُ مُـحَمَّدِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْـمٰنِ الْـمَرْوَزِيِّ قَالَ حَدَّثَنَا أَبُوْ بَكْرِ مُـحَمَّدُ ابْنُ اِبْرَاهِيْمَ الْـجُرْجَانِـيْ قَالَ حَدَّثَنَا أَبُوْ بَكْرِ عَبْدُ الصَّمَدِ بْنُ يـَحْيَـى الْوَاسِطِيُّ قَالَ حَدَّثَنَا الْـحَسَنُ بْنُ عَلِىِّ الْـمَدَنِيُّ عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ الْـمُبَارَكِ عَنْ سُفْيَانَ الثَّوْرِيِّ, عَنْ جَعْفَرَ بْنِ مُـحَمَّدِ الصَّادِقِ عَلَيْهِ السَّلَامُ عَنْ أَبِيْهِ عَنْ جَدِّهٖ عَنْ عَلِىِّ بْنِ أَبِـىْ طالِبٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ أَنَّه قَالَ: اِنَّ اللهَ تَبَارَكَ وَتَعَالٰي خَلَقَ نُوْرَ مُـحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَبْلَ أَنْ يَخْلُقَ السَّمَاوَاتِ وَ الْأَرْضَ وَ الْعَرْشَ وَ الْكُرْسِيَّ وَ اللَّوْحَ وَ الْقَلَمَ وَ الْـجَنَّةَ وَ النَّارَ

অর্থ: হযরত হাকিম আহমদ ইবনে মুহম্মদ ইবনে আব্দুর রহমান মারওয়াজি রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত আবু বকর মুহমদ ইবনে ইব্রাহীম জুরজানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন হযরত আবু বকর আব্দুস সামাদ বিন ইয়াহিয়া ওয়াসীতি রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন জিসান বিন আলী মাদীনি রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি বর্ণনা করেন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি বর্ণনা করেন হযরত সুফিয়ান সাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি বর্ণনা করেন, হযরত জাফর সাদিক আলাইহিস সালাম থেকে, তিনি উনার সম্মানিত পিতা (সাইয়্যিদুনা হযরত বাকির আলাইহিস সালাম উনার) থেকে, তিনি উনার দাদা (সাইয়্যিদুনা হযরত যাইনুল আবেদীন আলাইহিস সালাম উনার) থেকে, তিনি উনার পিতা (সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার) থেকে, তিনি খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র নূরে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সৃষ্টি করেছেন আসমান, যমীন, আরশ, কুরসী, লওহ, কলম, জান্নাত, জাহান্নাম সৃষ্টির পূর্বে।” (মা‘য়ানিল আখবার ৩০৬-৩০৭ পৃষ্ঠা ওফাত: ৩৮১, প্রকাশনা: দারুল মা’রিফা, বাইরুত, লেবানন)

সূতরাং প্রমাণ হলো সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সর্ব প্রথম নূর মুবারক হিসাবে সৃষ্টি হয়েছেন এবং উনার মুবারক নূরে সমগ্র কায়িনাত সৃষ্টি এটা সনদসহ ছহীহ হাদীছ শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত। অথচ বাতিল ফির্কার লোকেরা হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বর্ণনা যা মুসনাদে আব্দুর রাজ্জাকে রয়েছে তা অস্বীকার করার জন্য মিথ্যার জাল বুনে যাচ্ছে। হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হাদীছ শরীফ ছাড়া আরো যে পবিত্র হাদীছ শরীফ আছে, সে বিষয়ে তাদের কোন খবরই নেই।

সর্বপ্রথম কলম, আরশ, পানি ইত্যাদি সৃষ্টি এ বিষয়ে বাতিল ফিরকার আপত্তি ভুল:

বাতিল ফিরকা সর্বপ্রথম সৃষ্টি বিষয়ে আপত্তি উত্থাপনের জন্য দলীল পেশ করে থাকে সর্বপ্রথম কলম সৃষ্টি, সর্বপ্রথম আরশ সৃষ্টি, সর্বপ্রথম পানি সৃষ্টি ইত্যাদি। তাদের এ বিষয় সমূহের পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান না থাকায় তারা বিভ্রান্তিতে পড়ে অন্যদেরকেও বিভ্রান্ত করে। কারণ এ বিষয় সমূহের ফয়সালা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আছে এবং ইমামগণ উনাদের কিতাবে ব্যাখ্যা দিয়ে গেছেন। যারা পবিত্র কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ মোটামুটি চর্চা করেন এমন কেউ নেই যে “তাফসীরে ইবনে আবী হাতীমের” নাম শুনেন নাই। বিখ্যাত এই প্রাচীনতম তাফসীর গোটা দুনিয়াতে বেশ আলোড়িত। হাদীছ শরীফ দিয়ে দিয়ে এই কিতাবে তাফসীর করা হয়েছে। এর জন্য এ কিতাবে অনেক হাদীছ শরীফ জমাও করা হয়েছে। উক্ত কিতাবে পবিত্র সূরা হুদ শরীফ উনার ৭ নং আয়াত শরীফ

وَكَانَ عَرْشُه عَلَى الْمَاءِ

এ আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে সনদ সহকারে হাদীছ শরীফ উল্লেখ করা হয়েছে-

حَدَّثَنَا حَجَّاجُ بْنُ حَمْزَةَ ثَنَا أَبُوْ أُسَامَةَ ثَنَا إِسْمَاعِيْلُ بْنُ أَبِيْ خَالِدٍ قَالَ سَمِعْتُ سَعْدَ الطَّائِيْ يَقُوْلُ الْعَرْشَ يَاقُوْتَةٌ حَمْرَاءُ قُرِئَ عَلى بـَحْرِ بْنِ نَصْرِ الْـخَوْلَانِـي الْـمِصْرِيِّ ثَنَا أَسَدُ بْنُ مُوْسٰى ثَنَا يُوْسُفُ بْنُ زِيَادٍ عَنْ أَبِيْ إِلْيَاسَ ابْنِ بِنْتِ وَهْبٍ عَنْ وَهْبِ بْنِ مُنَبَّهٍ قَالَ: اِنَّ اللهَ خَلَقَ الْعَرْشَ مِنْ نُورِهٖ

অর্থ: …. আরশ হচ্ছে পানির উপর উজ্জল লাল ইয়াকুতের। …. হযরত ওহাব ইবনে মুনাব্বাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক আরশ সৃষ্টি করেছেন নূর মুবারক থেকে।” (তাফসীরে কুরআনীল আযীম ৬ষ্ঠ খন্ড ২০০৫ পৃষ্ঠা; হাদীছ শরীফ ১০৭০২, লেখক: ইমামুল হাফিজ আব্দুর রহমান ইবনে মুহম্মদ ইবনে ইদ্রীস আর রজী ইবনে আবী হাতীম রহমতুল্লাহি আলাইহি; ওফাত: ৩২৭ হিজরী)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَلنُّوْنُ واللَّوْحُ الْـمَحْفُوْظُ, وَالْقَلَمُ مِنْ نُّوْرٍ سَاطِعٍ

অর্থ: হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নূন, লৌহে মাহফূজ এবং কলম উজ্জল নূর মুবারক থেকে সৃষ্ট। (তাফসীরে দুররে মানছুর লিস সুয়ূতী, সূরা নূন এর তাফসীর ১৪/৪১৭)

বিখ্যাত মুফাসসির আবু ইসহাক আহমদ ইবনে ইব্রাহীম সা’লাবী আন নাইসাবুরী (ওফাত: ৪২৮ হিজরী) রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার তাফসীর গ্রন্থে সনদ সহকারে একখানা হাদীছ শরীফ এনেছেন-

أَخْبَرَنَا اِبْنُ فَنْجُوَيْهٍ حَدَّثَنَا عُمَرُ بْنُ نُوْحِ الْبَجَلِيِّ حَدَّثَنَا أَبُوْ خُلَيْفَةَ حَدَّثَنَا عُثْمَانُ بْنُ عَبْدِ اللهِ الشَّامِيِّ حَدَّثَنَا عُقْبَةُ بْنُ الْوَلِيْدِ عَنْ أَرْطَأةَ بْنِ الْـمُنْذِرِ عَنْ مـُجَاهِدٍ عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَوَّلُ شَيْءٍ خَلَقَ اللهُ الْقَلَمَ مِنْ نُّوْرٍ مَسِيْرِهٖ خَمْسَ مِائَةَ عَامٍ وَاللَّوْحَ مِنْ نُّورٍ مَسِيْرِهٖ خَمْسَ مِائَةَ عَامٍ

অর্থ: হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, সর্বপ্রথম কলম সৃষ্টি করা হয় নূর মুবারক থেকে পাঁচশ বছর পূর্বে। লৌহ মাহফুজ সৃষ্টি করেন নূর মুবারক থেকে পাঁচশ বছর পূর্বে। (কাশফুল বয়ান আন তাফসীরুল কুরআন ৮/৩৬৭, পবিত্র সূরা জাছিয়াহ শরীফ; দায়লামী ২ নং হাদীছ)

উপরোক্ত হাদীছ শরীফ থেকে প্রমাণ হলো-

১) পবিত্র আরশ সৃষ্টি হয়েছে সম্মনিত নূর মুবারক থেকে। ২) লৌহ মাহফুজ সৃষ্টি হয়েছে সম্মনিত নূর মুবারক থেকে। ৩) সম্মানিত কলম সৃষ্টি হয়েছে সম্মানিত নূর মুবারক থেকে।

সর্বপ্রথম সৃষ্টি বিষয়ক বিভিন্ন রেওয়াতে (নূর, পানি, আরশ, কলম ইত্যাদি) নিয়ে মতভেদের সমন্বয় করে হাফিজে হাদীছ ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন যা হযরত মোল্লা আলী কারী রহমতুল্লাহি উল্লেখ করেন-

قَالَ اِبْنُ حَجَرٍ اِخْتَلَفَتِ الرِّوَايَاتُ فِيْ أَوَّلِ الْـمَخْلُوقَاتِ وَحَاصِلِهَا كَمَا بَيَّنْتُهَا فِيْ شَرْحِ شَـمَائِلِ التَّـرْمِذِيِّ اِنَّ أَوَّلَـهَا النُّوْرُ الَّذِيْ خَلَقَ مِنْهُ عَلَيْهِ الصَلَاةُ وَالسَّلَامُ ثُمَّ الْـمَاءُ ثُمَّ العَرْشُ

অর্থ: হাফিযে হাদীছ ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, প্রথম সৃষ্টি সর্ম্পকে রেওয়ায়েতগুলোর মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে। এর মূল কথা যা আমি আমার শরহে শামায়িলে তিরমিযী কিতাবে বর্ণনা করেছি। নিশ্চয়ই সর্বপ্রথম সৃষ্টি হলো নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত নূর মুবারক অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ওজুদ পাক। অতঃপর (সেই মহাসম্মানিত নূর মুবারক থেকে একটি অংশ নিয়ে তা দ্বারা) পানি সৃষ্টি করা হয়, অতঃপর সম্মানিত আরশ সৃষ্টি করা হয়।” অর্থাৎ পর্যায়ক্রমে সমস্ত মাখলূক্বাত সৃষ্টি করা হয়। (মিরকাতুল মাফাতীহ শরহে মিশকাতুল মাফাতীহ- কিতাবুল ঈমান- বাবু ঈমান বিল কদর)

এ বিষয়ে ঐক্যমত্য পোষণ করেন হযরত মোল্লা আলী কারী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইবনে হাজার হায়তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত দিয়ার বাকরী রহমতুল্লাহি আলাইহি সহ অনেক ইমাম ও মুহাদ্দিছগণ। সূতরাং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বিরোধীতা করে, ইমাম মুহাদ্দিছগণ উনাদের বিরোধিতা করে যারা নিজেদের মন মত ব্যাখ্যা দিচ্ছে এরা গোমরাহ, পথভ্রষ্ট। যুগ যুগ ধরে এ শ্রেণির মানুষ নিজের মনমত ব্যাখ্যা করে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে, জন্ম দিয়েছে বাতিল ৭২ টি ফির্কার। নাউযুবিল্লাহ।

সর্বপ্রথম নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সৃষ্টি বিষয়ে ইজমা হয়েছে:

বিখ্যাত তাফসির কারক, ইমামুল মুফাসসিরীন, আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-

وَقَدْ اِتَّفَقَ أَهْلُ الظَّاهِرِ وَالشُّهُوْدِ عَلٰى أَنَّ اللهَ تَعَالٰى خَلَقَ جَمِيْعَ الْأَشْيَاءِ مِنْ نُّوْرِ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلَـمْ يَنْقُصْ مِنْ نُّوْرِهٖ شَيْءٌ

অর্থ: এ ব্যাপারে সকলেই একমত যে, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক সকল মাখলুকাত “নূরে মুহম্মদী” ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সৃষ্টি করেছেন। অথচ “নূরে মুহম্মদী” ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে কিঞ্চিত পরিমাণও কমে নাই।” (তাফসীরে রুহুল বয়ান ৭ম খন্ড ১৯৭-১৯৮ পৃষ্ঠা)

বিখ্যাত আলিম হযরত ইসমাঈল হাক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সৃষ্টি এ বিষয়ে ইজমার দাবী করেছেন। সূতরাং যে বিষয়ে ঐক্যমত্য প্রতিষ্ঠা হয়েছে। সে বিষয়ে মতবিরোধ করা করা চরম গোমরাহী। এ ইজমার দাবী থেকেই প্রমাণ হয় সকল উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পক্ষে আক্বীদা পোষণ করতেন। যেখানে সর্বপ্রথম সৃষ্টি নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ব্যাপারে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত উনার কোন আলেম বিরোধীতা করেনি। বরং এর সপক্ষে কিতাবে দলীল এনেছেন। শুধু তাই নয় বরং এ বিষয়ে ইজমা প্রতিষ্ঠা হয়ে গেছে সেখানে ২০/৩০ বছর ধরে এ বিষয়ে কারা বিরোধীতা করছে সহজেই অনুমেয়।

বলাবাহুল্য যে, মহাসম্মানিত নূরে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ উনার ৬০ হতে ৮২তম সংখ্যায় ফতওয়া বিভাগে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। প্রয়োজনে আবারো আলোচনা করা হবে ইনশাআল্লাহ।

যারা আজ নূর মুবারক উনার হাদীছ শরীফের বিরোধীতা করছে তারা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারক যাতে প্রকাশ না হয় সে জন্য ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ!

আর এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

يُرِيْدُوْنَ لِيُطْفِئُوْا نُوْرَ اللهِ بِأَفْوَاهِهِمْ وَاللهُ مُتِمُّ نُوْرِهٖ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُوْنَ

অর্থ: “তারা (কাফিররা) মুখের ফুঁৎকারে মহান আল্লাহ পাক উনার নূর মুবারক নিভিয়ে দিতে চায়। মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার নূর মুবারক উনাকে পূর্ণরূপে বিকশিত করবেন, যদিও কাফিররা তা অপছন্দ করে।” (পবিত্র সূরা ছফ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৮)

বর্তমান পৃথিবীতে একমাত্র খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, মুহ্ইউস সুন্নাহ্, মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমামুল আইম্মাহ, হাবীবুল্লাহ, জামিউল আলক্বাব, রাজারবাগ শরীফ উনার মহাসম্মানিত মুর্শিদ ক্বিবলাহ্ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত উসীলায় আজ এ দলীলসমূহ স্পষ্টভাবে প্রকাশিত হচ্ছে। সেই সাথে সকল বাতিল ফিরকার মুখোশও উন্মোচন হয়ে যাচ্ছে। পৃথিবীর সকল মানুষের জন্য দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে উনার মুবারক সোহবতে আসা, নিজের আক্বীদা ও আমল বিশুদ্ধ করে নেয়া। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সবাইকে কবুল করুন। আমীন।

-খাজা মুহম্মদ নুরুদ্দীন

আলআছদাকু, আলআত্বহারু, আলআত্বইয়াবু, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক শেষে সংক্ষেপে (সাঃ, দঃ) দুরূদ শরীফ লিখা প্রসঙ্গে

আওওয়ালু শাফিয়িন, আওওয়ালু মুশাফ্ফায়িন, আওওয়ালু মাঁইইয়ুর্হারিক হালক্বাল জান্নাতি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ‘বিশ্বনেতা’, ‘মহামানব’, ‘মহাপুরুষ’, ইত্যাদি শব্দ দ্বারা সম্বোধন করা প্রসঙ্গে

ইমামুল মুরসালীনা, ইমামুন্ নাবিইয়ীনা, ইমামুল উম্মাতি, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা আম্মা সাইয়্যিদাতুন্ নিসায়ি আলাল আলামীন হযরত আমিনা আলাইহাস্্ সালাম রচিত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ না’ত শরীফ প্রমাণ করে যে, তিনি ইলমে গইব-এর অধিকারিণী ছিলেন

আলবাশীরু, আলবালীগু, আলবাদরুল মুনীরু, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়াগণ অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না উনাদের ফাযায়িল-ফযীলত ও পবিত্রতা

জালীলুল ক্বদরি, জামীলুয যিকরি, জাওয়ামিউল কালিমি, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উর্ধ্বতন পূর্বপুরুষ উনারা ছিলেন পবিত্র থেকে পবিত্রতম