মাহে ছফর এবং তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

সংখ্যা: ২১১তম সংখ্যা | বিভাগ:

-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শুয়াইব আহমদ

আরবী মাসের দ্বিতীয় মাস ছফর। ফযীলত ও বুযুর্গীর ক্ষেত্রে এ মাসটিও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এ মাসেরই শেষ বুধবার “আখিরী চাহার শোম্বাহ” নামক বিশেষ দিনটি পালিত হয়। এ মাসের ২৮ তারিখ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রিয় দৌহিত্র বেহেশ্তের যুবকগণের সাইয়্যিদ হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম তিনি শাহাদাত লাভ করেন। আর এ মাসেরই ২৮ তারিখ সোমবার শরীফ দিনে ৬৩ বছর বয়স মুবারকে ১০৩৪ হিজরীতে আল্লাহ পাক উনার খালিছ ওলী, একাদশ হিজরী শতাব্দীর মুজাদ্দিদ, আফদ্বালুল আওলিয়া, ক্বাইয়ূমে আউয়াল হযরত শায়েখ আহমদ ফারূক্বী সিরহিন্দী মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বিছাল শরীফ লাভ করেন।

এ  মাসটি সম্মান লাভের একটি বিশেষ কারণ হলো হযরত আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদের মহান ব্যক্তিত্ব সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম উনার শাহাদাত লাভ। উনার শাহাদাত মুবারক সম্পর্কে বলা হয়, উনাকে শহীদ করার জন্য ইসলামের শত্রুরা একে একে পাঁচবার বিষ পান করায়। তিনি প্রতিবারই বিষ পান করার পর রওযা শরীফ গিয়ে প্রিয় নানাজান হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমতে জানানো মাত্রই বিষ ক্রিয়া থেকে বেঁচে যান। ষষ্ঠবার উনার পানির কলসিতে শত্রুরা বিষ মিশিয়ে দিয়েছিল। কলসির মুখ কাপড় দিয়ে বেঁধে রাখা হতো যেন তার ভিতর কোন কিছু না পড়তে পারে। কিন্তু সেই কাপড়ের উপর শত্রুরা সবচেয়ে মারাত্মক বিষ হিরকচূর্ণ সেটা মিশিয়ে দেয়। তিনি গভীর রাত্রিতে তাহাজ্জুদ নামায পড়ার জন্য উঠে সেই কলসী থেকে পানি ঢেলে পান করে বুঝতে পারলেন যে, তিনি এমন মারাত্মক বিষ পান করেছেন উনার পক্ষে এবার রওযা শরীফ যাওয়া সম্ভব হবে না; ফলে তিনি স্বীয় ভাই হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাকে ডেকে নিজের বিষ পানের কথা জানিয়ে বললেন যে, আমি আর বাঁচবো না। কাজেই আপনার উপর আমার যে ওছিয়ত তা হচ্ছে, আপনি খিলাফতের দায়িত্ব নেয়া থেকে দূরে থাকবেন, কারণ এই খিলাফতের জন্য আমাদের যিনি পিতা উনাকে শহীদ করা হয়েছে, আমিও শহীদ হতে চলেছি। সুতরাং হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সাথে খিলাফত ফিরিয়ে দেয়ার যে শর্ত ছিল তার কোন প্রয়োজন আমাদের নেই। আপনি মানুষকে দ্বীনি তা’লীম-তরবিয়ত দানে মশগুল থাকবেন- এসব উপদেশ দিতে দিতে তিনি শাহাদাতের কোলে ঢলে পড়েন।

হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম তিনি বিলাদত শরীফ লাভ করেন তৃতীয় হিজরী সনের ১৫ই শা’বান। উনার বিলাদত শরীফ-এর সুসংবাদ শুনে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আদরের কন্যা আলাইহাস সালাম উনার বাড়ীতে তাশরীফ নেন। আনন্দিত মনে নবজাতক আলাইহিস সালাম উনাকে কোল মুবারক-এ তুলে নেন। ডান কান মুবারক-এ আযান ও বাম কান মুবারক-এ ইক্বামত উচ্চারণ করেন এবং নাম মুবারক রাখেন হাসান।

পবিত্র ঘরে পবিত্র রেহেম শরীফ-এ বিলাদত শরীফ লাভ অতঃপর স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইলম ও হিকমতের মুবারক পরশ উনার মাঝে এত বেশি প্রভাব বিস্তার করেছিল যে, শিশু বয়সে তিনি অসাধারণ প্রতিভাধর ছিলেন। বর্ণিত আছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট ওহী নাযিল হওয়ার পর তিনি তা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে পাঠ করে শুনাতেন। পঠিত সেই ওহী শুনে শিশু ইমাম আলাইহিস সালাম অবিকল তা বলে দিতে পারতেন। সুবহানাল্লাহ!

একবার নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার বাড়ীতে এসে শুনতে পেলেন, তিনি কতিপয় আয়াত শরীফ তিলাওয়াত করছেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এই নতুন আয়াত শরীফগুলো এখনো হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনাকে শোনাননি। কিন্তু তিনি শিখলেন কি করে ভেবে আশ্চর্য প্রকাশ করলেন অতঃপর জিজ্ঞেস করলেন। জাওয়াবে হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম জানালেন যে, শিশুপুত্র হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম উনার কাছ থেকেই তিনি তা শিখেছেন। সুবহানাল্লাহ!

ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম তিনি অত্যন্ত দ্বীনদার ও খোদাভীরু ছিলেন। তিনি এতো বেশি নামায পড়তেন যে উনার শরীর মুবারক-এ সিজদার স্থানগুলোতে দাগ পড়ে গিয়েছিল। রাতের বেশিরভাগ সময় উনার আল্লাহ পাক উনার ইবাদত-বন্দেগীতে অতিবাহিত হতো। অনেক সময় দেখা গেছে মহান আল্লাহ পাক উনার ভয়ে তিনি সারারাত ক্রন্দন করে কাটিয়ে দিয়েছেন। নিষ্পাপ ও পুতপবিত্র ইমাম হওয়া সত্বেও নিজের কৃতকর্মের জন্যে সবসময় চিন্তিত থাকতেন। বছরের অধিকাংশ সময় তিনি রোযা রাখতেন। কমপক্ষে পঁচিশবার পায়ে হেঁটে তিনি মদীনা শরীফ থেকে মক্কা শরীফ-এ হজ্জ করতে গেছেন।

তিনি খুব বেশি দান-খয়রাত করতেন। একবার জনৈক ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি হযরত ইমাম আলাইহিস সালাম উনাকে অতিরিক্ত দান ও দয়ার ব্যাপারে আপত্তি উত্থাপন করলে তিনি বলেছিলেন, আমি নিজের কোন জিনিস কাউকে দান করি না। আল্লাহ পাক উনার দেয়া হাদিয়াগুলো শুধু আমি উনার বান্দাদের কাছে পৌঁছে দেই। এ কাজ না করলে আমার ভয় হয় দয়ালু আল্লাহ পাক তিনি উনার দেয়া হাদিয়া সামগ্রী আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিবেন।

মাহে শাওওয়াল-যিলক্বদ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে যিলহজ্জ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে মুহররমুল হারাম ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে রবীউল আউয়াল শরীফ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে রবীউছ ছানী ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা