মাহে মুহররমুল হারাম শরীফ এবং উনার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

সংখ্যা: ২২৯তম সংখ্যা | বিভাগ:

-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শুয়াইব আহমদ

আরবী চারটি হারাম বা সম্মানিত মাসের মধ্যে অন্যতম মাস মুহররমুল হারাম শরীফ। এ মাসের দশ তারিখ দিনটি হচ্ছে ইয়াওমে আশূরা শরীফ। এ মর্যাদাম-িত দিনটির সাথে বহু আক্বীদা ও আমলের বিষয় সম্পৃক্ত রয়েছে।

স্মরণীয় যে, আক্বীদা ও ঈমান এ বিষয় দুটি এক ও অভিন্ন। আক্বীদা শুদ্ধ মানে ঈমান শুদ্ধ। শুদ্ধ আক্বীদা বা ঈমান ব্যতীত কেউই নাজাত লাভ করতে পারবে না। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

والعصر. ان الانسان لفى خسر. الا الذين امنوا

অর্থ : “সময়ের ক্বসম, নিশ্চয়ই নিশ্চয়ই মানুষেরা ক্ষতিগ্রস্ত; তবে উনারা ব্যতীত যারা ঈমান এনেছেন।” (পবিত্র সূরা আছর শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১-৩)

অর্থাৎ যাদের ঈমান-আক্বীদা শুদ্ধ কেবল উনারাই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া থেকে রেহাই পাবেন। আর যাদের ঈমান-আক্বীদা শুদ্ধ নয় তারা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ৭২টি বাতিল ও জাহান্নামী ফিরক্বার অন্তর্ভুক্ত।

উল্লেখ্য, বান্দা ও উম্মতের হিদায়েত ও নাজাতের জন্য, সর্বোপরি মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি পাওয়ার জন্য যে বিষয়টি অপরিহার্য তা হলো হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের প্রতি শুদ্ধ আক্বীদা ও সুধারণা পোষণ করার পাশাপাশি উনাদেরকে অনুসরণ-অনুকরণ করা। অথচ এ বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিয়ে বান্দা-বান্দি ও উম্মত সম্পূর্ণরূপে বিপরীত আক্বীদা পোষণ করছে এবং মনগড়া আমলের অনুসরণ করছে। যার কারণে তারা হিদায়েতের পরিবর্তে গোমরাহী এবং জান্নাতের পরিবর্তে জাহান্নামের পথে ধাবিত হচ্ছে। নাঊযুবিল্লাহ!

উল্লেখ্য, হিদায়েতের পথে থাকার অর্থই হচ্ছে নাজাত ও জান্নাতের পথে থাকা। এখন মানুষ যদি সত্যিই হিদায়েতের পথে থাকতে চায় ও চলতে চায় তাহলে তাদেরকে নিয়ামতপ্রাপ্ত বান্দা উনাদের পথে চলতে হবে বা উনাদেরকে অনুসরণ করতে হবে। উনাদেরকে অনুসরণ করলে একদিকে আক্বীদা শুদ্ধ হবে অপরদিকে আমল-আখলাক্ব শুদ্ধ হবে।

এ মর্মে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরাতুল ফাতিহা শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করে জানিয়ে দিয়েছেন যে, নিয়ামতপ্রাপ্ত বান্দা উনাদের পথে চলার জন্য তোমাদের মহান রব তায়ালা উনার কাছে এভাবে দুআ করো-

اهدنا الصراط الـمستقيم. صراط الذين انعمت عليهم

অর্থ: হে বারে ইলাহী! আমাদেরকে সঠিক পথ দান করুন; উনাদের পথ যাঁদেরকে আপনি নিয়ামত দিয়েছেন।

কাদেরকে নিয়ামত দেয়া হয়েছে সে প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র ইরশাদ মুবারক করেন-

انعم الله عليهم من النبين والصديقين والشهداء والصالحين

অর্থ: মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত নাবিয়্যীন, হযরত ছিদ্দীক্বীন, হযরত শুহাদা এবং হযরত ছলিহীন উনাদেরকে নিয়ামত দিয়েছেন। (পবিত্র সূরাতুন নিসা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৬৯)

এখানে স্মরণীয় যে, হযরত নাবিয়্যীন বা হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনারা হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক উনার প্রথম স্তরের মনোনীত বান্দা। উনাদের যুগে উনাদের অনুসরণ ব্যতীত কেউই হিদায়েত ও নাজাত লাভ করতে পারবে না।

আর হযরত ছিদ্দীক্বীন, হযরত শুহাদা ও হযরত ছলিহীন অর্থাৎ হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম উনারা হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক উনার দ্বিতীয় স্তরের মনোনীত বান্দা। উনাদের যুগে উনাদের অনুসরণ ব্যতীত কেউই হিদায়েত ও নাজাত লাভ করতে পারবে না। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

ان الله عز وجل يبعث لهذه الامة على رأس كل مأة سنة من يجدد لها دينها.

অর্থ: নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক জাল্লা শানুহূ তিনি প্রতি হিজরী শতকের মাথায় এ উম্মতের হিদায়েতের জন্য দ্বীন ইসলাম উনার তাজদীদকারী একজন ওলীআল্লাহ অর্থাৎ মুজাদ্দিদ প্রেরণ করেন। (আবূ দাউদ শরীফ, মিশকাত শরীফ)

বলার অপেক্ষা রাখেনা, যিনি মুজাদ্দিদ তিনি উনার যামানার শ্রেষ্ঠতম ওলীআল্লাহ। উনার কাজই হচ্ছে মানুষের অশুদ্ধ আক্বীদা আমল-আখলাক্বসমূহ শুদ্ধ করার মাধ্যমে নাজাত ও জান্নাতের পথে ধাবিত করা। সর্বোপরি মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে দেয়া। যার বাস্তব প্রমাণ আমরা দেখতে পাই বর্তমান পঞ্চদশ হিজরী শতাব্দীর মহান মুজাদ্দিদ, আওলাদুর রসূল, মুজাদ্দিদ আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার ক্ষেত্রে।

 

মাহে রমাদ্বান শরীফ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে শাওওয়াল-যিলক্বদ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে যিলহজ্জ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে মুহররমুল হারাম ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে রবীউল আউয়াল শরীফ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা