মাহে রমাদ্বান শরীফ এবং তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

সংখ্যা: ২০৬তম সংখ্যা | বিভাগ:

আহলান সাহলান- হে মাহে রমাদ্বান। এ মাসটি আখিরী উম্মতের জন্য ফযীলত হাছিলের মাস। এ মাসটির মধ্যে লাইলাতুল ক্বদর নামে একটি রাত রয়েছে যা হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।

আল্লাহ পাক তিনি এ মাসের রোযাকে ফরয করেছেন। আর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তারাবীহ নামাযকে সুন্নত করে দিয়েছেন। এ মাসের একটি নফল আমল অন্য মাসের একটি ফরয আমলের সমান এবং একটি ফরয আমল অন্য মাসের সত্তরটি ফরয আমলের সমান। কিন্তু পাপের ক্ষেত্রে একটির জন্য একটিই লেখা হবে। এর প্রথমভাগ রহমতের, মধ্যভাগ মাগফিরাতের এবং শেষভাগ নাযাতের।

অতএব, এ মাসে প্রত্যেক মুসলমান, বালিগ-বালিগা ও সুস্থ ব্যক্তির জন্য দিনে রোযা রাখা এবং রাতে তারাবীহ নামায পড়া অপরিহার্য কর্তব্য। হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, æযে ব্যক্তি ঈমান ও ইখলাছের সাথে এ মাসে রোযা রাখবে তার পূর্বের গুনাহসমূহ ক্ষমা করা হবে এবং যে ব্যক্তি ঈমান ও ইখলাছের সাথে এ মাসে রাত্রিতে ইবাদতে কাটাবে তারও পূর্বের গুনাহসমূহ ক্ষমা করা হবে এবং যে ব্যক্তি ঈমান ও ইখলাছের সাথে ক্বদরের রাত্রি ইবাদতে কাটাবে তারও পূর্বকৃত গুনাহসমূহ ক্ষমা করা হবে।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত)

সাধারণত রোযা বলতে ছুবহে ছাদিক থেকে শুরু করে সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত নির্জন অবস্থান ও পানাহার থেকে বিরত থাকাকে বুঝায়। তবে সেই সাথে মিথ্যা, গীবত, চোগলখুরী, ঝগড়া-বিবাদ, মারামারি-কাটাকাটি, গালিগালাজ, অশ্লীল-অশালীন, ফাসিকী ও নাফরমানিমূলক কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে, æযে রমযান মাসে খারাপ কাজ করে, শরাব পান করে, ব্যভিচার করে, এমন ব্যক্তি রমযানের রোযা রাখলেও তা কবুল হবে না। বরং আল্লাহ পাক, উনার ফেরেশতা আলাইহিমুস সালামগণ, আসমানের সকল অধিবাসী পরবর্তী রমযান মাসের আগ পর্যন্ত ওই ব্যক্তির উপর লা’নত বর্ষণ করতে থাকেন। যদি পরবর্তী রমযান মাসের আগে ওই ব্যক্তি মারা যায় তবে তার কাছে এমন কোন নেকী থাকবে না, যা নিয়ে সে আল্লাহ পাক উনার সমীপে হাযির হবে।” (গুনিয়াতুত ত্বালিবীন)

প্রতিভাত হলো, শরীয়তের কোনো বিধান পালনকালে বা পালন করতে গিয়ে কোন হারাম-নাজায়িয কাজ করা যাবে না।

উদাহরণত বলতে হয়, কেউ রোযা রেখে বেগানা মহিলার সাথে দেখা-সাক্ষাৎ, আলাপ-আলোচনা করলো কিংবা টিভিতে অনুষ্ঠান দেখলো, গান-বাজনা শুনলো, খেলাধুলা করলো সে তো হারাম বা নাফরমানিমূলক কাজই করলো। এমন ব্যক্তির রোযা-নামাযের কি গুরুত্ব থাকতে পারে।

কেননা হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে, æকতক রোযাদার এরূপ আছে যাদের রোযা দ্বারা ক্ষুধার্ত বা পিপাসিত থাকা ছাড়া আর কিছুই অর্জিত হয় না এবং কতক রাত্রিতে সজাগ থেকে নামায আদায়কারী আছে যাদের রাত্রি জাগরণ ছাড়া আর কিছুই লাভ হয় না।” (ইবনে মাজাহ, দারিমী, মিশকাত, মাছাবীহুস সুন্নাহ, মিরকাত)

মূলত ইবলীস তার অনুসারী উলামায়ে ‘ছূ’দের মাধ্যমে আমাদের নফসের চাহিদা অনুযায়ী ইসলাম পালন করাচ্ছে। ইবলিস উলামায়ে ‘ছূ’দের মাধ্যমে ফতওয়া দিচ্ছে, তুমি টিভি দেখ, ছবি তোল, গান-বাজনা করো বা শোন, খেলাধুলা করো বা দেখ, বেপর্দা হও, বেশরা কাজ করো, সুদ খাও, ঘুষ খাও, চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই, ভোট-নির্বাচন, গণতন্ত্র ইত্যাদি যাই করো না কেন তুমি পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ো, রোযা রাখো, হজ্জ করো, যাকাত দাও, দান ছদক্বা করো তাহলেই তোমার জন্য যথেষ্ট। আর উক্ত ফতওয়া অনুসারে আমরা নিশ্চিন্তে আমল করে যাচ্ছি। নাঊযুবিল্লাহ! কিন্তু আমরা কখনও ভাবছি না যে, আসলে উক্ত ফতওয়া অনুযায়ী আমল করাটা কতটুকু ইসলাম বা শরীয়ত সম্মত।

প্রকৃতপক্ষে উক্ত ফতওয়া অনুযায়ী চলা বা আমল করা আদৌ শরীয়ত সম্মত নয়। কারণ শরীয়ত যা করতে আদেশ করেছে আপনি তা করছেন খুব ভাল কথা।

কিন্তু শরীয়ত যা থেকে বিরত থাকতে বলেছে বা যা নিষেধ করেছে তা থেকে আপনি বিরত না থেকে বরং তা অবাধে করে যাচ্ছেন আর ধারণা করছেন আপনি সাচ্চা মুসলমান। নাঊযুবিল্লাহ! ধারণা করছেন আপনি নামাযী, মুছল্লী, রোযাদার, দানশীল, হাজী ছাহেব। নাঊযুবিল্লাহ!

আপনি যে নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত, দান-ছদক্বা করছেন তা আল্লাহ পাক উনার নিকট কবুল হচ্ছে কি না- তা কি কখনো ফিকির করেছেন! অন্যথায় আমল কবুল হলে তো আপনার হারাম ও কুফরী কাজে মশগুল থাকার কথা নয়।

তার মানে আপনার কোনো ইবাদতই কবুল হয়নি। আর রোযার দ্বারা যে তাক্বওয়া হাছিল হওয়ার কথা ছিল তাও আদৌ হাছিল হয়নি। অন্যথায় রোযার মাসে ছবি, টিভি, বেপর্দা, গান-বাজনা, খেলাধুলা ইত্যাদি হারাম কাজে মশগুল থেকে কি তাক্বওয়া হাছিল করা যায়? নাঊযুবিল্লাহ!

মূলত রোযাসহ সর্বপ্রকার ইবাদত কবুল হওয়ার বিষয়টি এবং তাক্বওয়া হাছিলের বিষয়টি ইলমে তাছাউফের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। যা হক্কানী-রব্বানী ওলীআল্লাহ উনার নিকট বাইয়াত ও ছোহবতের দ্বারা অর্জিত হয়ে থাকে।

অতএব, প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য ফরয-ওয়াজিব হলো একজন হক্কানী-রব্বানী ওলীআল্লাহ উনার নিকট বাইয়াত হয়ে ছোহবত ইখতিয়ার করা।

-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শুয়াইব আহমদ

মাহে যিলহজ্জ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে মুহররমুল হারাম ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে রবীউল আউয়াল শরীফ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে রবীউছ ছানী ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে জুমাদাল উখরা ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা