মাহে শাওওয়াল এবং তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

সংখ্যা: ২০৭তম সংখ্যা | বিভাগ:

আরবী দশম মাসটির নাম শাওওয়াল’। মাহে রমাদ্বান শরীফ-এর পরবর্তী মাস এটি। এ মাসের পহেলা তারিখ দিনটি হচ্ছে ঈদুল ফিতরের দিন। ফিতর’ শব্দের অর্থ হচ্ছে ভঙ্গ করা। অর্থাৎ আখিরী নবী ও রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মতগণ মাহে রমাদ্বান শরীফ-এর পুরা এক মাস রোযা রাখার পর শাওওয়াল মাসের পহেলা তারিখ দিনটিতে পানাহার ও শরীয়ত সমর্থিত আনন্দোৎসব বা খুশি প্রকাশ করে থাকেন।

হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, æহযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি (হিজরত করে) মদীনা শরীফ-এ যখন তাশরীফ নিলেন। তিনি সেখানে গিয়ে দেখলেন যে, মদীনাবাসীরা দু’দিন খেলাধুলা করে থাকে। তিনি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনাদের এ দুটি দিন কি? তারা বললো, ইসলাম পূর্ব জাহিলিয়াত যুগ থেকেই আমরা এ দিন দুটিতে খেলাধুলা করে আসছি। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, আল্লাহ পাক তিনি আপনাদেরকে উক্ত দু’দিনের পরিবর্তে উক্ত দু’দিন অপেক্ষা উত্তম দুটি দিন দান করেছেন। একটি হলো ঈদুল আযহা অর্থাৎ কুরবানীর ঈদের দিন, আরেকটি হলো ঈদুল ফিতরের দিন।” (আবূ দাউদ শরীফ)

এ হাদীছ শরীফ-এ একটা বিষয় সুস্পষ্ট যে, মুসলমানদের কোন ঈদ আল্লাহ পাক উনার স্মরণ ও ইবাদত থেকে খালি না। আর প্রকৃতপক্ষে মুসলমানদের প্রতিটি মুহূর্ত, সময়, দিন, তারিখ, সপ্তাহ, পক্ষ, মাস, বছর এককথায় গোটা যিন্দিগীই ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। যেমন হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে ইসলাম ও ঈমানের পর ইহসান সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি উত্তরে বললেন-

ان تعبد الله كانك تراه فان لم تكن تراه فانه يراك

অর্থাৎ এমনভাবে আল্লাহ পাক উনার ইবাদত কর যেন তুমি আল্লাহ পাক উনাকে দেখছো। আর যদি দেখতে না পাও তাহলে ধারণা কর যে তিনি তোমাকে দেখছেন। (বুখারী, মুসলিম)

উল্লেখ্য, মুসলমানদের প্রতিটি মুহূর্তই হচ্ছে ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। তাই হাদীছ শরীফ-এর প্রকৃত মর্মার্থ হচ্ছে মুসলমানকে যমীনে এমনভাবে অবস্থান করতে হবে সে যেন আল্লাহ পাক উনাকে দেখতে পায়। আর যদি আল্লাহ পাক উনাকে দেখা সম্ভব না হয় তাহলে ধারণা করতে হবে যে, আল্লাহ পাক তিনি তাকে দেখছেন। এ দু’অবস্থার যে কোন এক অবস্থা মুসলমানদের থাকতে হবে বা হতে হবে।

অবস্থা যদি এই হয়, তাহলে মুসলমান কোন মতেই ইসলামের নিয়ম-নীতি, তর্জ-তরীক্বার বিপরীত জাহিলিয়াত যুগের কোন নিয়ম-নীতি, তর্জ-তরীক্বা কিংবা কোন বেদ্বীন-বিজাতীয় হিন্দু, বৌদ্ধ, মজূসী, কাফির-মুশরিক, ইহুদী-নাছারাদের তর্জ-তরীক্বা, নিয়ম-নীতি পালন করতে পারে না এবং তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান, পূজা-পার্বণে অংশগ্রহণ করতে পারে না। কেউ যদি সেটা করে, সে মুসলমান থেকে খারিজ হয়ে যাবে এবং তার হাশর-নশর যে বিধর্মীর অনুসরণ করেছে, পূজা-পার্বণে অংশগ্রহণ করেছে তার সাথেই হবে। যেমন হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন-

ليس منا من تشبه بغيرنا

অর্থ: ওই ব্যক্তি আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয় যে আমাদের ব্যতীত অন্য কাউকে অনুসরণ করেছে। (মিশকাত শরীফ)

তিনি আরো ইরশাদ করেন,

من تشبه بقوم فهو منهم

অর্থ: যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে (আক্বীদা-বিশ্বাসে, আমলে-আখলাক্বে, সীরতে-ছূরতে) মিল বা সাদৃশ্য রাখবে সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হবে।

কাজেই, মুসলমান ঈদ পালন করবে, খুশি প্রকাশ করবে ইসলামী তর্জ-তরীক্বা, নিয়ম-কানুন অনুযায়ী, শরীয়তের নির্দেশ অনুযায়ীই। কোন বেদ্বীনী-বদদ্বীনী নিয়ম-নীতি, তর্জ-তরীক্বা, কৃষ্টি-কালচার গ্রহণ ও পালন করে নয়।

উল্লেখ্য, আজকে কতক মুসলমান ভাই-বোন এবং তাদের ছেলে-মেয়েকে দেখা যায়, তারা ইহুদী-খ্রিস্টানদের থার্টি ফার্স্ট নাইট, বড় দিন এবং হিন্দুদের পূজা-পার্বণে অংশগ্রহণ করে থাকে। নাঊযুবিল্লাহ! এসব মুসলমানদের বোধোদয় হওয়া উচিত যে, শরীয়তে নিষেধ থাকা সত্ত্বেও তারা বেদ্বীন-বিধর্মীদের অনুষ্ঠানে গিয়ে থাকে কিন্তু কোন বিধর্মী কী কখনো মুসলমানদের দ্বীনী কোন উৎসব বা অনুষ্ঠানে যেমন রবীউল আউয়াল শরীফ, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহা, লাইলাতুর রগায়িব, শবে মি’রাজ, শবে বরাত, শবে ক্বদর ইত্যাদি বিশেষ পর্বগুলোতে অংশগ্রহণ করে? আদৌ নয়। তাহলে মুসলমান বিধর্মীদের অনুষ্ঠানগুলোতে অংশগ্রহণ করার পিছনে কি কারণ থাকতে পারে? মূলত ঈমানহারা ও জাহান্নামী হওয়া ব্যতীত আর কোন কারণ নেই।

-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শুয়াইব আহমদ

মাহে যিলহজ্জ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে মুহররমুল হারাম ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে রবীউল আউয়াল শরীফ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে রবীউছ ছানী ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে জুমাদাল উখরা ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা