মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (১৯২) ক্বলবের ফানা এবং নফসের ফানা হাছিলের উপায়

সংখ্যা: ২৩৩তম সংখ্যা | বিভাগ:

আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম

মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মা’রিফাত, মুহব্বত, সন্তুষ্টি, রেজামন্দি মুবারক হাছিলের ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম স্বীয় শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার সাথে গভীর তায়াল্লুক, নিছবত তথা সুসর্ম্পক প্রতিষ্ঠা করা আবশ্যক। কেননা শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার গভীর তায়াল্লুক, নিছবত, মুহব্বত ব্যতীত কখনই এ পথে কামিয়বী লাভ করা কিংবা এ পথে ইস্তিকামাত থাকা সম্ভব নয়।

ক্বলবের ফানা এবং নফসের ফানা ও বাকা হাছিলের দ্বারা অতি সহজেই স্বীয় শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার হাক্বীক্বী মুহব্বত, তায়াল্লুক, নিছবত তথা সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা হয়ে থাকে।

গত সংখ্যায় ক্বলবের ফানা এবং নফসের ফানা হাছিলের উপায় সম্পর্কে আলোচনা হয়েছে। এ সংখ্যায় তারই বাকী অংশ আলোচনা হবে।

ক্বলবের ফানা বলা হয়- ক্বলব বা অন্তকরণকে সর্বপ্রকার আকর্ষণ মুক্ত রাখা। অর্থাৎ সকল ব্যক্তি, বস্তু ও বিষয়ের মুহব্বতের আধিক্যতা থেকে ক্বলব বা অন্তকরণ মুক্ত হওয়া।

আর নফসের ফানা বলা হয়- নফস বা প্রবৃত্তির খারাপ খাছলতগুলো হতে নফস পবিত্র হওয়া। বদখাছলত বা বদস্বভাবগুলো সম্পূর্ণভাবে থেকে মুক্ত হওয়া।

মনে রাখতে হবে যে, ক্বলবের ফানা ও নফসের ফানা হাছিলের তরীক্বা বা পদ্ধতি দুটি। (১) নফসের বদখাছলতসমূহ সম্পূর্ণরূপে পরিহার করার পর সবক বা নেক আমল করা। যা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সোনালী যুগ মুবারকে পর থেকে সাত শত হিজরীর পূর্ব পর্যন্ত এ তরীক্ব বা পদ্ধতিতে ওলীআল্লাহগণ উনারা উনাদের স্বীয় মুরীদ-মু’তাকিদগণকে তা’লীম-তরবিয়ত দান করতেন। সুলতানুল আউলিয়া, শায়খুশ শুয়ূখ, ইমামশ শরীয়ত ওয়াত্ব তরীক্বত, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদ বাহাউদ্দীন নকশবন্দ বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সুদীর্ঘ ১৫ দিন মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র দরবার শরীফে সিজদারত থেকে নির্দেশ বা অনুমতি মুবারক পেয়ে এই তরীক্বা বা পদ্ধতি পরিবর্তন করতঃ দ্বিতীয় তরীক্বা বা পদ্ধতি জারী করলেন।

(২) শুরুতে সবক বা নেক আমল করা, নফসের খাছলতগুলো সম্পূর্ণরূপে পরিহার করা যদি সম্ভব না হয়, তাহলে নেক আমলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়া। অর্থাৎ ফরয, ওয়াজিব ও সুন্নাতে অতীব গুরুত্বের সাথে যথাযথভাবে আদায় করতে হবে। সাথে সাথে সুন্নতে যায়িদা বা মুস্তাহাব আমলগুলো যথাযথ গুরুত্বের সাথে দায়িমীভাবে (সবসময়) করতে হবে। কোনো দিন যেন বাদ না যায়। তাহলে নেক আমলের নূর দ্বারা বদখাছলতের অন্ধকার দূর হয়ে যায়। মানুষের সাথে যে ফেরেশতা আলাইহিস সালাম তিনি আছেন সেই ফেরেশতা আলাইহিস সালাম তিনি শক্তিশালী হন। আর যে শয়তান আছে সে শয়তান শক্তিহীন হয়ে আত্মসমর্পন করতে বাধ্য হয়।

সর্বোপরি মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

والذين امنوا وعملوا الصلحت لندخلنهم فى الصالحين

অর্থ: “যারা পবিত্র ঈমান আনবে এবং আমলে ছালেহ (পবিত্র সুন্নত মুবারক উনার ইত্তিবা) করবে আমি তাদেরকে অবশ্যই অবশ্যই ছালিহীন (ওলীআল্লাহ)গণের অন্তর্ভুক্ত করবো। (পবিত্র সূরা আনকাবুত শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৯)

মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো বলেছেন-

وَالَّذِينَ جَاهَدُوا فِينَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا وَإِنَّ اللَّهَ لَمَعَ الْمُحْسِنِينَ

অর্থ: “যারা আমার (সন্তুষ্টি-রেজামন্দির) জন্য চেষ্টা কোশেশ করে, আমি অবশ্যই অবশ্যই তাদেরকে সেই পথপ্রদর্শন করবো। আর নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি মুহসিন তথা নেক আমলকারীগণের সাথেই রয়েছেন।” (পবিত্র সূরা আন কাবুত: পবিত্র আয়াত শরীফ ৬৯)

এজন্যই বলা হয়েছে যে, ইলমে তাছাওউফ উনার মূলভিত্তি হচ্ছে নেক আমল। নেক আমলসমূহ দায়িমীভাবে করতে থাকলে অবশ্যই মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার প্রিয়তম হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের তরফ থেকে রহমত-দয়া-দান-ইহসান বর্ষিত হবে। সে ব্যক্তি পুরুষ বা মহিলা যেই হোক সে সর্বপ্রকার বদ খাছলত হতে মুক্ত থাকার কুওয়াত বা শক্তি লাভ করতে পারবে ইনশাআল্লাহ। সেক্ষেত্রে তওবা তথা পূর্বের সমস্ত গুনাহ থেকে তওবা-ইস্তিগফার করত: ভবিষ্যতে কোনো গুনাহ না করার দৃঢ় সংকল্প বা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়া পূর্ব শর্ত।

উল্লেখ্য যে, অন্তরে পাপপ্রবণতা আর মুখে তওবা এটা অতীব ঘৃণিত কাজ। এরূপ ব্যক্তির তওবা কখনো কবুল হয় না। কাজেই দিল বা অন্তরে কখনো পাপ কাজের প্রবণতা থাকতে পারবে না।

 ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছারল ল মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৪৯)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫০)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার: মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫১)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছারল: মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫২)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার: মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৩)