মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (১৭০)

সংখ্যা: ২১১তম সংখ্যা | বিভাগ:

-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম

 

ফানা-এর মাক্বামে অবস্থানকারী কতিপয় আওলিয়ায়ে কিরাম

রহমতুল্লাহি আলাইহিম

মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের রহমত ও ইহসান ব্যতীত ফানা বা বিলীন হওয়া যায় না। আর সেই রহমত ও ইহসান পাওয়া যায় আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের ছোহবতে, উনাদের খিদমতে।

আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-

ان رحمت الله قريب من المحسنين

অর্থ: “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত মুহসিন তথা আওলিয়ায়ে কিরাম উনাদের নিকটে রয়েছে।” (সূরা আ’রাফ: আয়াত শরীফ ৫৬)

সেই রহমত যখন আওলিয়ায়ে কিরামগণ উনাদের সাথে নিসবতযুক্ত হয় তখন ইলমে তাছাউফের পরিভাষায় তাকে ফায়েজ-তাওয়াজ্জুহ বলা হয়। কাজেই, আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের ফায়েজ-তাওয়াজ্জুহ পেলে ফানা-বাক্বা লাভ করা এবং তাতে ইস্তিক্বামাত বা অবিচল থাকা সহজ ও সম্ভব হয়। আওয়ামুন নাস বা সাধারণ মানুষের দৃষ্টিতে যে কাজ বা বিষয় অত্যন্ত কষ্টকর বা অসম্ভব বলে মনে হয় ফায়েজ-তাওয়াজ্জুহ প্রাপ্ত ব্যক্তিদের জন্য তা অতীব সহজ ও শান্তিদায়করূপে পরিগণিত হয়। ইহা মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রহমত ও ইহসানের অন্তর্ভুক্ত। যা মহান আল্লাহ পাক উনার ওয়াদা বা প্রতিশ্রুতিরই বহিঃপ্রকাশ। যে প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন-

والذين جاهدوا فينا لنهدينهم سبلنا وان الله لمع المحسنين

অর্থ: “নিশ্চয়ই যারা মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টির জন্য কোশেশ করে মহান আল্লাহ পাক তাকে অবশ্যই অবশ্যই মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি পাওয়ার সকল পথই দেখিয়ে দেন। আর মহান আল্লাহ পাক অবশ্যই মুহসিন তথা আওলিয়ায়ে কিরামগণ উনাদের সাথে রয়েছেন।” (সূরা আনকাবুত: আয়াত শরীফ ৬৯)

সুলুকের পথে বা মা’রিফাত-মুহব্বত হাছিলের পথে সালিক বা মুরীদগণ মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রহমত ও ইহসান, কিভাবে বা কতরকম ভাবে পেয়ে থাকেন তা উপলব্ধির জন্য হাবীবুল্লাহ হযরত জুন্নুন মিছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার জীবনী মুবারকের কয়েকটি ঘটনাই যথেষ্ট।

একদিন হাবীবুল্লাহ হযরত জুননুন মিছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি লোক মুখে শুনলেন যে, অমুক স্থানে একজন নবাগত সালিক বা মুরীদ আছেন। যিনি মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মা’রিফাত-মুহব্বত হাছিলের জন্য ফানা রয়েছেন। উনার সাথে সাক্ষাত লাভের জন্য তিনি সেখানে গেলেন। গিয়ে দেখতে পেলেন, সেই সালিক বা মুরীদ একটি গাছের ডালে ঝুলে রয়েছেন আর নিজেকে নিজে বলছেন, হে দেহ! মহান আল্লাহ পাক উনার হুকুম পালনে তুমি আমাকে সাহায্য করো। তা না হলে তোমাকে এভাবে মৃত্যু পর্যন্ত উপবাস রেখে শাস্তি দিতে থাকবো। তার এ অবস্থা দেখে হাবীবুল্লাহ হযরত জুননুন মিছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি কেঁদে উঠলেন। কান্না শুনে সেই সালিক বললেন, কম লজ্জাশীল ও বেশি গুনাহগার ব্যক্তিকে কেউ সাহায্য করার আছেন কি?

সেই সালিক বা মুরীদের কথা শুনে হাবীবুল্লাহ হযরত জুন্নুন মিছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে সালাম করলেন এবং এ অবস্থা জানতে চাইলেন। তিনি বললেন, আমার এই শরীর মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদত-বন্দেগী, যিকির-ফিকির, রিয়াজত-মাশাক্কাতে সহায়তা করে না। তাই আমি একে সাজা দিচ্ছি। উনার কথা শুনে হাবীবুল্লাহ হযরত জুন্নুন মিছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, আমি তো ধারণা করেছিলাম যে, হয়তো আপনি কাউকে হত্যা করেছেন অথবা কোন বড় ধরণের গুনাহ করেছেন। সেই সালিক বললেন, জি-না, আপনি বুঝতে পারেননি। লোকের সংসর্গকেই আমি উক্তরূপ অপরাধতুল্য মনে করি। উনার কথা শুনে হাবীবুল্লাহ হযরত জুন্নুন মিছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, মনে হয় আপনিই প্রকৃত দুনিয়াবিরাগী বা সংসারত্যাগী মর্দে মুজাহিদ। তিনি বললেন, আমা অপেক্ষা কোন মর্দে মুজাহিদ উনাকে দেখতে চাইলে সামনে অগ্রসর হয়ে পাহাড়ে দেখুন।

সেই সালিকের কথামত তিনি উক্ত পাহাড়ে উঠে দেখতে পেলেন, এক তরুণ যুবক একখানা পা বাইরে রেখে মসজিদের দরজায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। বাইরে রাখা পা খানায় অগণিত ক্ষত। আর অসংখ্য কীট সে ক্ষতস্থানে দংশন করছে। উনাকে সালাম করে হাবীবুল্লাহ হযরত জুননূন মিছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার এ অবস্থা জানতে চাইলেন।

সেই তরুন যুবক বললেন, একদিন আমি এই মসজিদে বসা ছিলাম। সে সময় এক রূপসী মেয়ে এই পথে চলছিল। তার রূপে আকৃষ্ট হয়ে আমি উঠে সামনে এক পা অগ্রসর হলাম। হঠাৎ আমি এক অদৃশ্য আওয়াজ শুনতে পেলাম, “ওহে! ত্রিশ বছর মহান আল্লাহ পাক উনার পথে অগ্রসর হয়ে এখন তুমি শয়তানের পথ অবলম্বন করলে? তুমি কি লজ্জাহীন?” এ আওয়াজ শুনে আমার হৃদয় কেঁপে উঠল ও চেতনা ফিরে এল। আমি সেদিন থেকে এখানে দাঁড়িয়ে আছি। দেখি আমার রব আমার সম্পর্কে কি ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। এ পর্যন্ত বলে তিনি হাবীবুল্লাহ হযরত জুন্নূন মিছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে বললেন, এবার বলুন আপনি এ হতভাগার নিকট কি কারণে এসেছিলেন? যদি আপনি সত্যিকার মর্দে মুজাহিদ দেখতে চান তাহলে এ পাহাড়ের চূড়ায় আরোহণ করে দেখুন। (অসমাপ্ত)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫০)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার: মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫১)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছারল: মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫২)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার: মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৩)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৪)