সম্পাদকীয়

সংখ্যা: ২৫৮তম সংখ্যা | বিভাগ:

সব প্রশংসা মুবারক খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য; যিনি সকল সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, হযরত রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত পবিত্র দুরূদ শরীফ ও সালাম মুবারক।

সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অর্থাৎ পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ এমন মহাসম্মানিত ঈদ- যার কেবল শুরুই আছে। যার কোনো শেষ নেই। যার কোনো বিরতি নেই। যা অনন্তকালের জন্য। পৃথিবীর ইতিহাসে এই প্রথম এ অনন্তকালের পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার তাজদীদ করেছেন, ধারণ করেছেন, বিচ্ছুরণ ঘটিয়েছেন, কুল-কায়িনাতবাসীকে বিতরণ করেছেন সাইয়্যিদে মুজাদ্দিদে আ’যম, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম। সুবহানাল্লাহ!

মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, “মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হিদায়েত এবং সত্য দ্বীন সহকারে পাঠিয়েছেন সকল দ্বীনের উপর প্রাধান্য দিয়ে (সমস্ত দ্বীন মানসূখ বা মাশরূহ করে ও মানবরচিত সমস্ত মতবাদকে বাতিল ঘোষণা করে) এবং মহান আল্লাহ পাক উনার সাক্ষ্যই যথেষ্ট। (যার সাক্ষী মহান আল্লাহ পাক তিনি) আর রসূল হচ্ছেন, মুহম্মদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।” (পবিত্র সূরা ফাতাহ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ- ২৮, ২৯)

অর্থাৎ পবিত্র দ্বীন ইসলাম হচ্ছেন- মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ওহী মুবারক উনার মাধ্যমে নাযিলকৃত একমাত্র মনোনীত ও সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত দ্বীন। যা বাড়ানো-কমানো বা ইফরাত-তাফরীত কোনোটিই জায়িয নেই। যে বাড়াবে-কমাবে, সে কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী হয়ে যাবে।

উল্লেখ্য, এদেশের রাষ্ট্রদ্বীন হিসেবে পবিত্র দ্বীন ইসলাম স্বীকৃত। কিন্তু কথা হচ্ছে রাষ্ট্রযন্ত্র কী পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাকে মানে? রাষ্ট্রযন্ত্র কী পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাকে স্বীকার করে? রাষ্ট্রযন্ত্র কী পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাকে পালনে যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা করে?

রাষ্ট্রযন্ত্র কী ইসলামী মূল্যবোধের উজ্জীবন ঘটায়? রাষ্ট্রযন্ত্র কী ইসলামবিরোধী আচার বন্ধে পদক্ষেপ নেয়?

বলাবাহুল্য, ৯৮ ভাগ মুসলমান অধ্যুষিত দেশ হিসেবে, রাষ্ট্রধর্ম পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার দেশ হিসেবে রাষ্ট্রযন্ত্রের পক্ষে উপরিল্লিখিত জিজ্ঞাসার জবাব ‘হ্যাঁ’ বোধক হওয়া বাঞ্ছনীয় ছিল। কিন্তু বাস্তবতা হলো রাষ্ট্রযন্ত্র তা করতে চরমভাবে ব্যর্থ। বরং উল্টোদিকে তার বল্গাহীন অগ্রযাত্রা। নাঊযুবিল্লাহ!

সাংবিধানিকভাবে পবিত্র দ্বীন ইসলাম যে এদেশে রাষ্ট্রদ্বীন, শুধু তাই নয়। বিষয় হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষতারও যে ব্যাখ্যা দেয়া হচ্ছে তাতে একজন মুসলমানও পরিপূর্ণ দ্বীন ইসলাম পালনের সুযোগ পাবেন।

একজন মুসলমান উনার সম্মানিত ইসলামী জীবন-যাপনের সুযোগ পাবেন। একজন মুসলমান, ইসলামী মূল্যবোধ বজায় রেখে স্বতঃস্ফূর্তভাবে চলতে পারবেন, ফিরতে পারবেন। একজন মুসলমান- তার চারপাশের আবহে ইসলামী পরিবেশ পাবেন। একজন মুসলমান- তিনি চলাফেরা করলে কোনো বেপর্দা নারীর মুখোমুখি হবেন না। একজন মুসলমান তার কানে-কোনো গান-বাজনার আওয়াজ আসবে না। একজন মুসলমান- তিনি সুদমুক্ত অর্থনীতির সুযোগ পাবেন। একজন মুসলমান- তিনি শিক্ষায় ইসলামী শিক্ষার গভীরতা পাবেন। একজন মুসলমান তিনি শরীয়তী আইনের সমাহার পাবেন। মূলত, এসবই হচ্ছে একজন মুসলমানের একান্ত ধর্মীয় অধিকার। আর রাষ্ট্রদ্বীন- পবিত্র দ্বীন ইসলাম অথবা সব ধর্মাবলম্বীর ধর্ম পালনের সুযোগের অধিকার প্রদান সাপেক্ষে রাষ্ট্রযন্ত্র অবশ্যই সাংবিধানিকভাবে প্রতিটি মুসলমানকে সে সুযোগ দানের জন্য দায়বদ্ধ।

কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, ৯৮ ভাগ মুসলমান অধ্যুষিত এদেশের রাষ্ট্রযন্ত্র মুসলমানদের সে কাঙ্খিত ধর্মীয় অধিকার প্রদানে লজ্জাজনকভাবে ব্যর্থ।

রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রতিটি আচরণে একথা সুস্পষ্টভাবে প্রতিভাত। এদেশে শতকরা ৯৮ ভাগ অধিবাসী মুসলমান। তাদের দ্বীন ‘ইসলাম’।

‘পবিত্র দ্বীন ইসলাম’ তথাকথিত অন্যান্য ধর্মের মতো নয়। পবিত্র দ্বীন ইসলাম পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। অন্য কোনো ধর্মই খেলাধুলা, নির্বাচন, গান-বাজনা, মূর্তি, অভিনয়, উলঙ্গপনা ইত্যাদির বিরুদ্ধে কিছু বলেনি।

সে সুবাদে অন্যান্য ধর্মাবলম্বী ও ধর্মের প্রেক্ষিতে স্বাধীনতাউত্তর এদেশে গান-বাজনা, কথিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, খেলাধুলা, সিনেমা এগুলোকে সরকারি পর্যায়ে শুধু সর্বাত্মক পৃষ্ঠপোষকতা করা হয়নি; পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যায়েও যাতে অন্যান্য বিধর্মীদের সাথে তাল মিলিয়ে নাচতে পারে, সেজন্যও সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হয়েছে ও হচ্ছে। এক্ষেত্রে এদেশের জনগণের শতকরা ৯৮ ভাগ মুসলমান উনাদের পবিত্র দ্বীন ‘ইসলাম’ সম্পূর্ণই উপেক্ষিত, অবহেলিত ও অস্বীকার্য থেকে যায়। কিন্তু এদেশের ৯৮ ভাগ মুসলমান কী মানতে পারে যে, তাদের পবিত্র দ্বীন- ‘ইসলাম’ রাষ্ট্রযন্ত্র স্বীকার করবে না?

এদেশের জনগোষ্ঠীর ৯৮ ভাগ মুসলমান কী মানতে পারে যে, তাদের প্রাণাধিক দ্বীন- ‘ইসলাম’কে রাষ্ট্রযন্ত্র সম্মান করবে না। ৯৮ ভাগ মুসলমান সহ্য করতে পারে যে, তাদের ঈমান- পবিত্র দ্বীন ‘ইসলাম’কে রাষ্ট্রযন্ত্র পদে পদে ধিকৃত করবে?

পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে খেলাধুলা হারাম। কিন্তু তারপরেও রাষ্ট্রযন্ত্র দেশের কোটি কোটি নাগরিককে না খাইয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা হারাম খেলাধুলার পিছনে ব্যয় করে; তখন এদেশের জনগোষ্ঠীর ৯৮ ভাগ মুসলমান, রাষ্ট্রযন্ত্র থেকে কী ধরনের আশাহত ও চরম বিপরীতমুখী আচরণের মুখোমুখি হয়; তা কী ভাবা যায়?

রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় যখন সিনেমাসহ যাবতীয় অশ্লীলতার অবাধ অনুশীলন হয়; তখন দেশের শতকরা ৯৮ ভাগ অধিবাসী মুসলমানের ধর্মীয় অনুভূতিতে কত চরম আঘাত হানা হয়? তাও কী সম্যক উপলব্ধি করা যায়?

দিনে দিনে প্রিন্ট মিডিয়া ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া দেশের ৯৮ ভাগ জনগোষ্ঠী মুসলমানকে কু-প্ররোচনা দিচ্ছে- কীভাবে কত সংক্ষিপ্ত পোশাক পরা যেতে পারে, মদ ধরা যেতে পারে, পরকীয়া, লিভ টুগেদার তথা অবাধ যৌনাচারে ভাসা যেতে পারে।

অথচ এদেশের জনগোষ্ঠীর ৯৮ ভাগ মুসলমানের পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে এগুলো কঠিন হারাম এবং চূড়ান্ত ইসলামবিরোধী। ৯৮ ভাগ মুসলমানের দেশে এ ইসলামবিরোধী কাজগুলোই হচ্ছে অবাধে, ব্যাপক উৎসাহে এবং সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সাহায্যে।

এতে করে পবিত্র দ্বীন ইসলাম হচ্ছে বিপন্ন। মুসলমান হচ্ছে বিপর্যস্ত থেকে বিভ্রান্ত, হতাশাগ্রস্ত থেকে নেশাগ্রস্ত। অর্থাৎ এদেশের শতকরা ৯৮ ভাগ অধিবাসী মুসলমানের ধর্মীয় অনুভূতি রাষ্ট্রযন্ত্রে স্বীকৃত নয়। এদেশে শতকরা ৯৮ ভাগ অধিবাসী মুসলমান তাদের পবিত্র দ্বীন ইসলাম পালনে নিরাপদ নয়। অনৈসলামিক কাজে বাধা দিলে তারা রাষ্ট্রদ্রোহী তার অভিযোগ ও শাস্তি থেকে মুক্ত নয়।

পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে, মুসলমান হিসেবে রাষ্ট্রযন্ত্রের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতিটি অনৈসলামিক কাজে বাধা দেয়া ফরয। কিন্তু এ ফরয কাজ স্বাধীনতাউত্তর থেকেই মুসলমানরা করতে পারছে না।

অথচ পাকি যালিমদের বিরুদ্ধে জিহাদ তথা যুদ্ধ করা ফরয ছিলো; সেটি এদেশের নামধারী ও ধর্মব্যবসায়ী সন্ত্রাসী-জামাতীরা ব্যতীত সত্যিকার মুসলমানরা যথার্থরূপে করে দেশের স্বাধীনতা অর্জন করেছে। কিন্তু সে ফরয আদায়ের অভিজ্ঞতা বিস্তারে রাষ্ট্রযন্ত্র বাধা দিয়ে রেখেছে।

সঙ্গতকারণেই তাই প্রশ্ন জোরদার হয় যে, রাষ্ট্রযন্ত্র কী পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাকে স্বীকার করে? না করে না? স্বীকার কি করবে? না করবে না? রাষ্ট্রযন্ত্র কী মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি সম্মান দেখাবে? না দেখাবে না?

রাষ্ট্রযন্ত্র কী তবে পবিত্র দ্বীন ইসলাম আর মুসলমান বাদ দিয়ে অন্য সব ধর্ম এবং ধর্মাবলম্বীদের প্রতিই চরম সম্মান দেখাবে এবং পরম পৃষ্ঠপোষকতা করবে?

কারণ, অন্য সব ধর্ম এবং ধর্মাবলম্বীদের খেয়ালখুশি অনুযায়ী রাষ্ট্রযন্ত্র খেলাধুলা থেকে সিনেমাসহ সব ধরনের অশ্লীলতার অবাধ পৃষ্ঠপোষকতা করে যাচ্ছে।

কিন্তু পবিত্র দ্বীন ইসলাম ও মুসলমান সেখানে হয়ে যাচ্ছে অপাঙ্তেয়। এবং এটা হচ্ছে কথিত ধর্মনিরপেক্ষতার সুবাদে।

দেখা যাচ্ছে, কথিত ধর্মনিরপেক্ষতা অন্য সব ধর্ম তথা সব অনৈসলামীপানার প্রভূত পরিচর্যা করে; কিন্তু পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার উপর শুধুই আঘাত হানে।

রাষ্ট্র কোনো বায়বীয় ধারণা নয়। রাষ্ট্রের একটা ভৌগোলিক অবস্থান রয়েছে। এই সীমারেখার মধ্যেই দেশপ্রেমের উন্মেষ হয়। এজন্য যদি জাতীয় পতাকা থেকে জাতীয় মসজিদ থাকতে পারে কথিত জাতীয় সঙ্গীত মূল্যায়িত হতে পারে; তাহলে রাষ্ট্রধর্ম কি করে অবমূল্যায়িত হতে পারে?

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত, আচার, সংস্কৃতি যদি প্রাধান্যের সাথে প্রতিফলিত হয় তাহলে সংখ্যাগরিষ্ঠের ধর্মও কেন প্রতিফলিত হবে না?

আর সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রদ্বীন হিসেবে পবিত্র দ্বীন ইসলামই যদি অন্তর্ভুক্ত হয়, তাহলে তো ধর্মনিরপেক্ষতা সন্নিভুক্ত হতে পারে না। পবিত্র দ্বীন ইসলাম ও ধর্মনিরপেক্ষতা পাশাপাশি থাকতে পারে না। ধর্মনিরপেক্ষতা থাকলে পবিত্র দ্বীন ইসলাম পালনের অধিকার রয়েছে সে কথা বলা যায় না এবং সঙ্গতকারণেই দেশের ৯৮ ভাগ মুসলমান তা মেনে নিতে পারে না। বরদাশতও করতে পারে না।

মূলত, এসব অনুভূতি ও দায়িত্ববোধ আসে পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ অনন্তকালব্যাপী পালন উনার ইলম ও জজবা থেকে। আর তার জন্য চাই নেক ছোহবত তথা মুবারক ফয়েয-তাওয়াজ্জুহ।

যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবত মুবারকেই কেবলমাত্র সে মহান ও অমূল্য নিয়ামত হাছিল সম্ভব। আর ইতিহাসে তিনিই সর্বপ্রথম দিচ্ছেন অনন্তকালব্যাপী পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার মহামহিম নিয়ামত মুবারক। সুবহানাল্লাহ!

খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে তা নছীব করুন। (আমীন)

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়