সম্পাদকীয়

সংখ্যা: ২৫৩তম সংখ্যা | বিভাগ:

সব প্রশংসা মহামহিম মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য। মহান রমাদ্বান শরীফ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “তোমাদের উপর ছিয়াম ফরয করা হয়েছে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপরও ফরয করা হয়েছিল।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ)

সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, রহমতুল্লিল আলামীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “হে মানবজাতি! একটি মহান ও বরকতপূর্ণ মাস তোমাদের উপর ছায়া বিস্তার করার জন্য হাযির হয়েছে।”

চন্দ্র মাসের পরিক্রমায় পবিত্র রমাদ্বান শরীফ নিয়ে আসে অনেক ফযীলতের অনুষঙ্গ। পবিত্র রমাদ্বান শরীফ রাতের শেষভাগে উঠে সাহরী গ্রহণের উদ্দীপনা, সারাদিন রোযা রেখে মাগরিবে ইফতারী করার খুশি, পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াতের মোহিত আবেশ, যিকরুল্লাহ প্রশান্তি, দুরূদ শরীফ পাঠের ফযীলত, পবিত্র যাকাত দানের বরকত, ফিতরা আদায়ের ইতমিনান, ই’তিকাফের উদ্যম, পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর লাভের ব্যাকুলতার আবহে এক অভাবনীয় রহমত, বরকত ও নাজাতের প্রাচুর্য।

উল্লেখ্য, ইসলামপূর্ব যুগেও রোযা প্রচলিত ছিল, কিন্তু রোযার দিন, সময়, সংখ্যা, ধারাবাহিকতা, সুনির্দিষ্টভাবে পালিত হতো না। চলতো, খেয়াল-খুশির চরিতার্থকরণ তথা অবহেলা, অলসতা, আর অনিয়ম পালন। কিন্তু পবিত্র দ্বীন ইসলাম সে যথেচ্ছাচার সর্বোতরূপেই নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন। ইখতিয়ারের পরিবর্তে দ্বীন ইসলাম দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন নির্দিষ্ট পথের এবং নির্ভেজাল আনুগত্যের। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আমাদের ও আহলে কিতাবদের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টিকারী বিষয় হচ্ছে সাহরী।” (মুসলিম শরীফ)

অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইহুদী-নাছারাদের ন্যায় বিলম্বে ইফতারকরণের প্রতি অসন্তুষ্টি ব্যক্ত করা হয়েছে। (আবু দাউদ শরীফ)

মূলত, ইসলামের মৌলিক আদর্শই হলো- ইহুদী-নাছারার খিলাফকরণ, তাদের আদর্শ না অনুসরণ। রমাদ্বান শরীফ সে সত্যই উদারভাবে উদ্ভাসিত করে। কিন্তু দাজ্জালের চেয়েও বেশি ভয়ঙ্কর উলামায়ে ‘সূ’রা সে সত্যটিকে বার বার উপেক্ষা করে উম্মাহকে ভ্রষ্ট পথে পরিচালিত করছে। নাউযুবিল্লাহ!

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আমি তোমাদের ব্যাপারে কতিপয় ব্যক্তিকে দাজ্জালের চেয়েও বেশি ভয়ঙ্কর মনে করি। প্রশ্ন করা হলো, তারা কারা? তিনি বললেন, ভ্রষ্ট পথে পরিচালনাকারী সমাজ ও জাতির নেতা তথা উলামায়ে ‘সূ’র দল।” (মুকাশাফাতুল কুলুব)

সঙ্গতকারণেই আমরা মনে করি, জাতির নেতা বা শাসক দলও দেশবাসীর দ্বীন ইসলাম পালন বা আমলে ঘাটতি অথবা শূন্যতার দায় থেকে রেহাই পেতে পারে না। প্রাসঙ্গিকভাবেই প্রশ্ন উঠে, শাসকগোষ্ঠী কী এদেশের ৯৮ ভাগ জনগোষ্ঠী মুসলমান উনাদের রোযা পালন বা সত্যিকার দ্বীন ইসলাম পালনে সক্রিয় পৃষ্ঠপোষকতা করছে? রোযা উনার আদর্শ বা ইহুদী-খ্রিস্টান তথা বিধর্মীদের প্রতি মুহব্বত ত্যাগ করার প্রচারণা চালিয়েছে? বিধর্মীদের খিলাফ করা বা আলাদাভাবে থাকার মানসিকতা বা জনমত তৈরির রাষ্ট্রীয় প্রয়াস চালিয়েছে?

জনমনে তাক্বওয়া তৈরির প্রচেষ্টা চালিয়েছে? গান-বাজনা, খেলাধুলা, বেপর্দা-বেশরা ত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছে? রোযা উনার প্রতি এদেশের ৯৮ ভাগ জনগোষ্ঠী মুসলমান উনার যে শ্রদ্ধা ও মুহব্বত এবং ত্যাগ সে মহামূল্যবান দ্বীনী অনুভূতিকে জাগরুক করে সব অসততা ও অন্যায় পরিহারের প্রবণতা তৈরির সুযোগকে কাজে লাগিয়েছে? পাশাপাশি যাকাত আদায়কে স্বতঃস্ফূর্ত ও সক্রিয় করে অর্থনৈতিক মুক্তির সফল কার্যক্রম গ্রহণ করেছে?

উল্লেখ্য, পবিত্র রোযা উনার সাথে পবিত্র যাকাত উনার একটা অন্তর্নিহিত সম্পর্ক রয়েছে। কারণ পবিত্র যাকাতও পবিত্রতা ঘটায়। তবে এ পবিত্রতা মালের বা অর্থের।

পবিত্র যাকাতই একমাত্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। যার ফলশ্রুতিতে পুঁজিবাদী, সুদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার কুফল থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব। সুদী তথা পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থা কোনোদিনই সমাজের সাধারণ মানুষের জন্য সুখকর নয়। উদাহারণতঃ ইউরোপ, আমেরিকার মতো দেশেও আয় বণ্টনের আনুপাতিক হার ১:৬০। প্রাপ্ত তথ্য মতে, বিশ্বে মোট আয়ের শতকরা ৭৬% কেবল ১২-১৫% লোকের হাতে সীমাবদ্ধ। অপরদিকে বর্তমানে বাংলাদেশে সরকারি হিসাব অনুযায়ীই কোটিপতি রয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ২৬৫ জন। প্রকৃত হিসাব এর চেয়েও অনেক বেশি। আবার ১০ কোটি টাকার উপরে মালিক রয়েছে ৫০ হাজারেরও উর্ধ্বে। এরাই দেশের মোট ৭৫% সম্পদের  মালিক। পক্ষান্তরে দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে ৬০%-৮৭% লোক।

দেশের তফসিলী ব্যাংকগুলোতেই আমানত আছে প্রায় ৮ লাখ কোটি টাকা। তার সাথে আরো রয়েছে প্রায় লাখো কোটি কালো টাকা। এসব টাকা এবং অন্যান্য সব ক্ষেত্র থেকে বাংলাদেশে পবিত্র যাকাত, পবিত্র উশর ইত্যাদি আদায় হতে পারে ৫০ হাজার কোটি টাকার উপরে।

স্মর্তব্য যে, কিছুকাল পূর্বে এক সমীক্ষায় বলা হয়েছিলো যে, কেবলমাত্র ১০ হাজার কোটি টাকার সুষ্ঠু প্রয়োগের দ্বারাই বাংলাদেশের দারিদ্র্য মোচন সম্ভব। কিন্তু তারপরেও যারা এপথ পরিহার করে, তাদেরকে উদ্দেশ্য করে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “উত্তম জিনিসের পরিবর্তে নিকৃষ্ট জিনিসই কি তোমাদের পছন্দ?”

মূলত, দেশের সরকার ও জনগণ রোযা উনার আদর্শ তথা তাক্বওয়াকে মূল্যায়ন ও অনুশীলন না করে সে নিকৃষ্ট পথেই নিজেদের নিযুক্ত করেছে। নাঊযুবিল্লাহ! কিন্তু রোযা উনার মাস সবাইকে খাছ তওবার সুযোগ দিয়ে খাঁটি রোযাদার হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে।

উল্লেখ্য, যোগ্যতা ও মর্যাদা সাপেক্ষে রোযাদারের রোযা তিন প্রকারে মূল্যায়িত হয়ে থাকে। পানাহার, কাম ইত্যাদি থেকে বিরত থাকা সাধারণ লোকের রোযা বলে গণ্য হয়। এই বিরতির সাথে সাথে সর্বাঙ্গকে যাবতীয় ছগীরাহ্-কবীরাহ্ গুনাহ্ থেকে বিরত থাকা মধ্যম স্তরের ওলীআল্লাহ্গণের রোযা বলে বিবেচিত হয়। কিন্তু এরপরেও যাবতীয় গাইরুল্লাহ্ থেকে ফারাক হয়ে দিলকে সর্বোতরূপেই মহান আল্লাহ পাক উনার দিকে রুজু করাই হচ্ছে আখাসসুল খাছ ওলীআল্লাহ্, ছিদ্দীক্ব এবং আম্বিয়া আলাইহিমুস্ সালামগণ উনাদের রোযা উনার শান। অর্থাৎ ইলমে তাছাওউফ শিক্ষার মাধ্যমে খাছ ওলীআল্লাহ্ হওয়ার দ্বারাই তথা যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, সাইয়্যিদে মুজাদ্দিদে আ’যম, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম উনার এবং উনার সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের খাছ ছোহ্বত মুবারক লাভের দ্বারাই হাক্বীক্বী রোযা উনার নিয়ামত লাভ সম্ভব।

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়