সম্পাদকীয় 

সংখ্যা: ২৫২তম সংখ্যা | বিভাগ:

সব প্রশংসা খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত দুরূদ ও সালাম মুবারক।

গণতন্ত্রের ভিত্তি হলো নির্বাচনী প্রক্রিয়া। কিন্তু কোনো নির্বাচনেই পরাজয়ী দল প্রতিক্রিয়াবিহীনভাবে নির্বাচনী ফলাফল মেনে নেয় না। অর্থাৎ দলগতভাবেও নির্বাচনের প্রতি অনাস্থা পেশ করা হয়। অপরদিকে নির্বাচনী ফলাফলে ক্ষমতাসীনের প্রত্যাবর্তনের পরিবর্তে পরিবর্তনও হয়। দেখা যায়, জনগণ নতুন প্রার্থীকে বেছে নেয়। অর্থাৎ ক্ষমতাসীন প্রার্থীর দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, স¦জনপ্রীতি, সে¦চ্ছাচারিতা, অসততা ইত্যাদি জনগণকে এই পরিবর্তনে সোৎসাহী করে তোলে। কিন্তু এজন্য জনগণকে পাঁচ বছর তিলে তিলে নিঃশেষ হতে হয়। সুতরাং নির্বাচন সম্পর্কে তিক্ত অভিজ্ঞতা রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি ও জনগণ- সবার। নির্বাচনে শুধু প্রতিদ্বন্দ্বী দুই দলের মধ্যেই সংঘাত হয় না, নিজ দলের মধ্যেও মনোনয়ন প্রাপ্ত এবং মনোনয়ন বঞ্চিতদের মধ্যেও ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। সদ্য অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে এ সত্য নতুন করে উদ্ভাসিত হয়েছে। প্রসঙ্গত, নির্বাচনের প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে খোদ আওয়ামী লীগে ৭৭৬ জন বিদ্রোহী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে। এছাড়াও ইউপি নির্বাচনে ২ ধাপে ৫৬ জনের প্রাণহানি হয়েছে এবং আহত হয়েছে ৫০০০ জন।

প্রসঙ্গত, ‘পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার নামে ও দৃষ্টিতে নির্বাচন হারাম’ সাইয়্যিদে মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার যুগান্তকারী এ তাজদীদ অকাট্য এবং অনিবার্য। তারপরেও কী অজ্ঞ মানুষ হারাম নির্বাচন করবে আর তিলে তিলে মার খাবে? হাজারো কুফলের সমাহার এ নির্বাচনকে তারপরেও বর্জন করা হচ্ছে না কেন? নির্বাচন সম্পর্কে মানুষ নেতিবাচক ধারণা পোষণ করছে না কেন? এখনো কী সময় আসেনি দেশের ৯৮ ভাগ মুসলমান জনগোষ্ঠীর জন্য নির্বাচনকে বয়কট করার?

মহান আল্লাহ পাক উনার অপূর্ব রহমত মুবারক উনার ভা-ার এ বাংলাদেশ। শীতে সবজি, গ্রীষ্মে ফল এদেশের বিশেষ বৈশিষ্ট্য। বিশেষতঃ গ্রীষ্মে ফলের সমাহারে তা মধুমাস হিসেবে আখ্যায়িত হয়েছে। জানা গেছে, এ মধুমাসের অন্যতম মধু ‘আম’ মুকুল থেকে শুরু করে গাছ থেকে পাড়ার আগ পর্যন্ত দফায় দফায় নানা ধরনের কীটনাশক, কেমিক্যাল ও বিষ দেয়া হচ্ছে। এছাড়া নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই অপরিপক্ব থাকা অবস্থায় কেমিক্যাল দিয়ে আম পাকানো হচ্ছে। মানুষ টাকা দিয়ে ফলের নামে ‘মরণব্যাধি’ কিনছে। বাজারে যে লিচু বিক্রি করা হয়, তাতেও মেশানো হয় বিষাক্ত রাসায়নিক।

মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা মুকুল আসার পর থেকে ফল পাড়ার আগ পর্যন্ত ভারতীয় বিষ ইতোফোন গ্রুপের বাইজার, হারবেস্ট, প্রমাড ও ক্রমপমেক্স, ম্যালথান গ্রুপের কীটনাশক কট, টিভো, ফাইটার, ম্যানকোজের গ্রুপের ভায়াথেন অথবা কার্বন্ডাজিন গ্রুপের নইন পাউডার, এনটাকল, ব্যাপিস্টিন, ফ্লোরা, টিডো প্রিমিয়ার ও ইন্টারফলসহ ১৬ প্রকার কীটনাশক মেশানো। সর্বশেষ সেই লিচু পচন রোধে ও টাটকা রাখতে ফরমালিন মেশানো হচ্ছে।

কেমিক্যালের হাত থেকে রেহাই পায়নি দেশের জাতীয় ফল কাঁঠালও। পাকাতে ও পচনরোধে নানা বিষাক্ত কেমিক্যাল এবং ফরমালিনমিশ্রিত পানিতে চুবানো হচ্ছে কাঁঠাল।

অসুস্থ মানুষজনকে দেখতে গেলে প্রায় সবাই তার জন্য যে ফলটি সবচেয়ে বেশি নিয়ে যান তা হলো আঙ্গুর। রোগীর স¦জন কিংবা বন্ধুরা মনে করে, ফলটি সুস¦াদু এবং রোগীর জন্য ভালো হবে। কিন্তু তারা কি জানেন এই আঙ্গুরে ঠিক কি পরিমাণে রাসায়নিক কেমিক্যাল মেশানো হয়?

মূলত, আঙ্গুর আমদানি হয়ে দেশে আসার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক স্প্রে করে।

রাজধানীসহ দেশের আনাচে কানাচে সব ফলের দোকানে সারা বছর বিক্রি হয় আপেল। কিন্তু সুস¦াদু এই ফলটিতেই সবচেয়ে বেশি মেশানো হয় বিষাক্ত রাসায়নিক। সব ধরনের চিকিৎসকরা যে ফলটি খাওয়ার জন্য পরামর্শ দিতো সেই ফল- মাল্টা যেন বিষের আধার! মাল্টা তরতাজা রাখতে এবং হলুদ রাখার জন্য খুবই শক্তিশালী রাসায়নিক কেমিক্যাল দেয়া হয়। যার ফলে এই মাল্টা খাওয়া ও বিষ খাওয়ার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।

পোকা মারার বিষ ‘ডিডিটি’ স্প্রে করে পাকানো হচ্ছে কলা। কলা খাওয়ার নামে ক্রেতা যে বিষ খাচ্ছেন তা দেখার কেউ নেই।

অপরদিকে দুধ, মাছ, সবজি কোনোটাই ফরমালিন মুক্ত নয়। কাঁচা মরিচেও ফরমালিন দেয়া হচ্ছে। আবার এখন এমন ফরমালিন আমদানি করা হচ্ছে, যা মাছিকে আকৃষ্ট করবে।

প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স¦প্ন দেখিয়েছিল। কিন্তু ডিজিটাল বাংলাদেশের পরিবর্তে ডিজিটাল ভেজাল ও দুর্নীতি বিস্তার লাভ করেছে। দুর্নীতি দমন করার জন্য যে দুদক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে; সে দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমানের বিরুদ্ধে একশ কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ উঠেছে। এর আগের চেয়ারম্যান চৌধুরী হাসান মসউদসহ আরো অনেকের বিরুদ্ধেও শত শত কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।

উল্লিখিত সবই হচ্ছে হারাম গণতন্ত্রের কুফল। কারণ গণতন্ত্রে আইন মানুষের রচিত। গণতন্ত্রের আইনের উৎস মানুষ। গণতন্ত্রে বিচারের মালিক মানুষ। গণতন্ত্রে সব ক্ষমতার উৎস মানুষ। সুতরাং এক মানুষ অন্য মানুষকে মানেও না। ভয়ও পায় না। বরং মানুষ জানে কীভাবে আরেক মানুষকে ঠকিয়ে দুর্নীতি করতে হয়। ভেজাল মিশাতে হয়। নিজের স¦ার্থ উদ্ধার করতে হয়। সর্বোপরি মানুষের আবেদন, মানুষের ভয়, মানুষের শাসন- মানুষকে আদর্শবান হতে অনুপ্রাণিত করে না। আদর্শবান করার প্রচেষ্টা ফলপ্রসূ হয় না।

কেবলমাত্র খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন উনার ভয়ই মানুষের মধ্যে কাজ করতে পারে। এজন্য রোযাদার মানুষ ঘরে একাকী থেকে ফ্রিজ ভর্তি খাবার রেখেও কোনো খাবার খায় না। প্রচ- গরমের দিনে পুকুরে ডুব দিয়েও পানি পান করে না। কাজেই কী খাদ্যে ভেজাল? কী প্রশাসনে দুর্নীতি ঠেকাতে; হারাম গণতন্ত্রের পরিবর্তে আমাদেরকে তাক্বওয়াভিত্তিক সমাজ গঠন করতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে ধর্মব্যবসায়ীরা অনেক আগ থেকেই এ তাক্বওয়াভিত্তিক সমাজের কথা প্রচার করে আসলেও তারা নিজেরাই চরম ফাসিক ও গুমরাহ।

মূলত, যারা পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার নাম দিয়ে হারাম গণতান্ত্রিক দল করে তারা সবাই গুমরাহ। তারা স¦াধীনতার বিপক্ষ শক্তি। তাদের দিয়ে কিছু হবে না। কেবলমাত্র যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, যামানার মুজাদ্দিদে, সাইয়্যিদে মুজাদ্দিদ আ’যম আলাইহিস সালাম উনার খাছ ছোহবত মুবারক উনার মাধ্যমেই এ মহান নিয়ামত প্রাপ্তি সম্ভব।

খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার উসীলায় আমাদের সবাইকে তা নছীব করুন। (আমীন)

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়