সম্পাদকীয়

সংখ্যা: ২৩৩তম সংখ্যা | বিভাগ:

সব প্রশংসা খালিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত দুরূদ শরীফ ও সালাম মুবারক।

বাংলাদেশের ৯৭ ভাগ জনগোষ্ঠী মুসলমান। তারপরেও প্রচারণা চালানো হয়- মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক চেতনার উপর দাঁড়িয়ে আছে। বলা হয় না যে, সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত রাষ্ট্রদ্বীন পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার বাংলাদেশ সম্মানিত ইসলামী মূল্যবোধ লালন করে। ভাবখানা এই- যেন পবিত্র দ্বীন ইসলাম মানেই সাম্প্রদায়িক। নাঊযুবিল্লাহ!

এরাই সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা অন্তর্ভুক্তির কারিগর। এদের কথিত ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থ হলো ইসলামহীনতা। নাঊযুবিল্লাহ! যে কারণে এদের দৃষ্টিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মালি পরেশের পরিবারসহ পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণের সংবাদ পরিবেশনও অপরাধ। তাতে সাম্প্রদায়িকতার বিস্তার হয়। মুসলমানদের উপর নির্মম অত্যাচার, নিপীড়ন, নির্বিচারে মুসলিম নারীদের সম্ভ্রম লুণ্ঠন এমনকি শহীদ করার প্রতিবাদে টু শব্দ উচ্চারণেও এরা সাম্প্রদায়িকতার গন্ধ পায়। নাঊযুবিল্লাহ!

অথচ পাশ্ববর্তী উগ্র হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্র ভারতে প্রকাশ্যে হিন্দুরা মুসলমান ও পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাকে আক্রমণ করে যে অমার্জনীয় ও অবরদাশতযোগ্য বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে তারা তার বিন্দুমাত্র প্রতিবাদ করছে না। এবং তাতে সাম্প্রদায়িকতারও কিছু দেখছে না।

প্রসঙ্গত, সচেতন পাঠক মাত্রই জানেন, ভারতের নির্বাচন উপলক্ষে হিন্দুরা মুসলিমবিদ্বেষী কি নির্মম ও নিষ্ঠুর বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে।

বিজেপি’র সভাপতি রাজনাথ সিং আসামের করিমগঞ্জে এক জনসভায় বলেছে, তারা ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশ থেকে ১৯৭১ সালের পর ভারতে চলে আসা মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের ফেরত পাঠাবে।

বিজেপি’র চরমপন্থী নেতা সুব্রামনিয়ম নতুন উদ্ভট এক তত্ত্ব হাজির করেছে। অবৈধ অনুপ্রবেশ মোকাবিলায় সে সোজাসুজি বাংলাদেশের কাছে এক-তৃতীয়াংশ ভূখ- দাবি করে বসেছে! সে বলেছে যে, ‘খুলনা থেকে সিলেট পর্যন্ত সমান্তরাল রেখা টেনে এ জমি ভারতের হাতে ছেড়ে দিক বাংলাদেশ।’

ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে আসন্ন নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় আসলে পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তান অখ- ভারতের অধীনে আসবে বলে মন্তব্য করেছে যোগ ব্যায়াম গরু রামদেব। ভারতীয় টিভি চ্যানেল ‘নিউজ ২৪’ এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রচার করেছে।

বিজেপি নেতা গিরিরাজ সিং সে মোদী বিরোধীদের পাকিস্তানে পাঠানোর যে হুমকি দিয়েছে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রামদেব বলেছে, নরেন্দ্র মোদী সরকার যদি ঠিকঠাক মতো ৫ বছর ক্ষমতায় থাকতে পারে তাহলে আফগানিস্তান, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ আবার অখ- ভারতের অংশ হবে।

হিন্দু মহল্লা থেকে মুসলিমগণ উনারা ঝেঁটিয়ে বিদায় করার ডাক দিয়েছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) সভাপতি তোগাড়িয়া।

২০১৫ সালের মধ্যে গুজরাটকে হিন্দু রাজ্য ঘোষণা করার কথা জানিয়েছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। দলের নেতা তোগাড়িয়া এ কথা ঘোষণা করেছে।

মুসলিমগণ উনারা হিন্দু এলাকায় বাড়ি-সম্পত্তি কিনলে হিন্দুদের তা দখল করে নেয়ারও ডাক দিয়েছে তোগাড়িয়া। মুসলিমদের বাড়িতে থুতু ছিটিয়ে, পঁচা টমেটো ছুঁড়ে তাদের পাড়া ছাড়া করার ঘোষণা দিয়েছে তোগাড়িয়া। ‘ওই বাড়িতে পাথর ছুড়ুন, টায়ার জ্বালিয়ে ছুড়ে দিন’ বলে হুঙ্কার দিয়েছে তোগাড়িয়া।

গত ২৭ এপ্রিল (২০১৪ ঈসায়ী) পশ্চিমবঙ্গের শ্রীরামপুরে বিজেপি প্রার্থী বাপ্পি লাহিড়ির সমর্থনে জনসভায় মোদী বলেছে, “বাংলাদেশীদের বিছানা, বালিশ গুছিয়ে তৈরি থাকতে।”

মোদী আরো বলেছে, “কুকুর মরলে দুঃখ পাবো, মুসলিম মরলে নয়।”

বলাবাহুল্য, উপরের মুসলিমবিদ্বেষী বক্তব্য শুধু মোদী বা রামদেব বা তেগরিয়ার নয়। এটি মূলত ভারতে বসবাসকারী প্রতিটি হিন্দুর তো বটেই, এমনকি বাংলাদেশে বসবাসকারী সংখ্যালঘু হিন্দুরাও স্বপ্ন দেখে কি করে বাংলাদেশ থেকে স্পেনের মতো সব মুসলমানদের তাড়িয়ে দেয়া যাবে অথবা শহীদ করা যাবে। অথবা এদেশকে ভারতের হাতে তুলে দেয়া যাবে। নাঊযুবিল্লাহ!

দুঃখজনক হলেও সত্য যে, কেউ কেউ প্রায়ই শ্লোগান তুলে ‘হিন্দু-মুসলমান ভাই ভাই’। কিন্তু আসলে হিন্দু যে কখনোই মুসলমানের ভাই নয়; বরং জাত শত্রু- তা ভারতের নির্বাচনে আবারো প্রকাশ্যভাবে প্রকট হয়েছে।

অপরদিকে কিছু নামধারী মুসলমান আছে, যারা হিন্দুদেরকে কাফির বলে ঘৃণা করতে নারাজ। কিন্তু তারা কি পবিত্র কুরআন শরীফ পড়েছে? পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “সমস্ত জীবের মাঝে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট তারাই সবচেয়ে নিকৃষ্ট, যারা কাফির, যারা ঈমান আনেনি।” (পবিত্র সূরা আনফাল শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৫)

“নিশ্চিতই যারা কাফির তাদেরকে আপনি ভয় প্রদর্শন করুন আর নাই করুন, তারা ঈমান আনবে না।” (পবিত্র সূরা বাকারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৬)

“হে ঈমানদারগণ! তোমরা যদি কাফিরদের কথা শোনো, তাহলে ওরা তোমাদেরকে পেছনে ফিরিয়ে দেবে, তাতে তোমরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পড়বে।”  (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৪৯)

“মু’মিনগণ যেন অন্য মু’মিনকে ছেড়ে কোনো কাফিরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। যারা এরূপ করবে মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে তাদের কোনো সম্পর্ক থাকবে না।” (পবিত্র সূরা আল ইমরান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৮)

মহান আল্লাহ পাক তিনি মুসলমানগণ উনাদেরকে আরো সতর্ক করে স্পষ্টভাবে বলেন, “তোমরা তোমাদের সবচেয়ে বড় শত্রুরূপে পাবে ইহুদীদেরকে অতঃপর মুশরিক তথা হিন্দুদেরকে।”

প্রসঙ্গত, আমরা মনে করি, আজকে শুধু বাংলাদেশ নয়, বরং গোটা উপমহাদেশের মুসলমানগণ উনাদের চরম সময় তাদের ভীষণ শত্রু হিন্দুদের গভীর ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সচেতন হওয়ার ও প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করার। বিশেষ করে বাংলাদেশে যে হিন্দু আগ্রাসন ও লুণ্ঠন চলছে, স্বাধীনতা বিপন্নের ষড়যন্ত্র চলছে তা সর্বোতভাবে প্রতিহত করার।

মূলত, এসব অনুভূতি ও দায়িত্ববোধ আসে পবিত্র ঈমান ও পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাদের অনুভূতি ও প্রজ্ঞা থেকে। আর তার জন্য চাই নেক ছোহবত তথা মুবারক ফয়েজ, তাওয়াজ্জুহ।

যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবত মুবারক-এ সে মহান ও অমূল্য নিয়ামত হাছিল সম্ভব। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে তা নছীব করুন। (আমীন)

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়