সম্পাদকীয়

সংখ্যা: ২৮৮তম সংখ্যা | বিভাগ:

মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, তোমাদের কাছে তোমাদের জন্য একজন মহাসম্মানিত হযরত রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত তাশরীফ মুবারক এনেছেন, তোমাদের দুঃখ-কষ্ট উনার কাছে বেদনাদায়ক, তিনি তোমাদের ভালাই চান। তিনি মু’মিনদের প্রতি অত্যন্ত স্নেহশীল, সীমাহীন দয়ালু।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত সূরা তওবা শরীফ: সম্মানিত আয়াত শরীফ ১২৮)

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আমি ওই মহাসম্মানিত হযরত রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, যখন তুমি কোন বিপদে-আপদে বা দুঃখ-দুর্দশায় পতিত হও তখন তুমি আমার নিকট দোআ মুবারক করলে আমি তোমার দুঃখ-দূর্দশা দূর করে দেই, যখন তোমার জমিনে ফসল হয় না, তখন তুমি আমার নিকট দোআ মুবারক করলে আমি তোমার ক্ষেতে ফসল ফলিয়ে দেই, যখন তুমি কোন জনমানব শূন্য স্থানে, (খাল-বিল, নদী বা পানিতে) নির্জন প্রান্তরে, নির্জন মরুভূমিতে অথবা বনে, ঝোপ-ঝার, জঙ্গলে থাকো আর তোমার বাহন হারিয়ে যায় বা বাহন না থাকে, তখন তুমি আমার নিকট দোআ মুবারক করলে আমি তোমার বাহন ফিরিয়ে দেই, বাহনের ব্যবস্থা করে দেই।” সুবহানাল্লাহ! (আবূ দাঊদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ)

দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আজ মুসলমানরা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান-মান মুবারক, দয়া-ইহসান মুবারক সম্পর্কে বিন্দু থেকে বিন্দুতমও অবগত নয়। উনার মুহব্বত মুবারকে, উনার সম্পর্কিত সার্বিক ও ছহীহ আক্বীদা ধারণে ন্যূনতম নিবেদিত নয়। উনার সম্পর্কে ইলম অর্জনে নিবেদিত নয়। উনার এতটুকু অনুসরণ অনুকরণে বিন্দু মাত্রও স্বপ্রণোদিত নয়। অথচ উনিই রিযিক বন্টনকারী যা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে “মহান আল্লাহ পাক তিনি হচ্ছেন- দাতা আর আমি হচ্ছি বন্টনকারী। (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)

বলাবাহুল্য, বর্তমান সময়ে প্রায়ই মুসলমানদের ঈমান, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারকে অবমাননার বিষয়টি শুনতে হয়। দেখতে হয়। নাউযুবিল্লাহ!

এর মূল কারণ, মুসলমান মহান আল্লাহ পাক যিনি দাতা এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যিনি বন্টনকারী-উনাদের কাছে সসম্মানে ঈমানের সাথে থাকার আরজী করেনি। চায়নি। হিম্মত প্রার্থনা করেনি। এতদ্বসংক্রান্ত ইলম, আমল, আক্বলের জন্য দোয়া করেনি। নিজেরাও আমল করেনি।

উল্লেখ্য, মুশরিকদের দেশ ভারতে প্রায়ই সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার অবমাননাই শুধু করা হয়না পাশাপাশি মুসলমানদের নির্বিচারে শহীদও করা হয়। যা সম্প্রতি আরেক মুসলিম বিদ্বেষী দেশ আমেরিকাও ব্যক্ত করেছে এবং ভারত তার জবাব দিতেও ব্যর্থ হয়েছে। অথচ ভারত যে মুসলিম দেশগুলোর কাছে কতটা মুখাপেক্ষী সে বিষয়ে এতদিন যাবত মুসলিম দেশগুলো আক্বল খাটায়নি। ঈমানী দায়িত্ব পালন করেনি।

উল্লেখ্য, মুসলিম দেশগুলোর উপর ভারতের বিশাল আকারের বাণিজ্যিক সম্পর্ক নির্ভরশীল। কুয়েত, কাতার, সৌদি, বাহরাইন, ওমান এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাথে ২০২১-২২ সালে ভারতের বাণিজ্য দাঁড়িয়েছিল ১৫৪  বিলিয়ন ডলার বা ১৫ লাখ কোটি টাকারও বেশি। যা ভারতের মোট বাজেটের প্রায় অর্ধেক। অন্যদিকে, আরব আমিরাত রফতানি বাবদ ভারতের কাছে পায় মোট ৪৫ বিলিয়ন ডলার। এছাড়াও আরব অঞ্চলের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ প্রায় ৬৭ বিলিয়ন ডলার, যার পুরো দায় ভারতের। অর্থাৎ মুসলিম বাণিজ্যিক জোটভুক্ত দেশগুলোর সাথে ভারতের মোট লেনদেনের পরিমাণ প্রায় ২৪ লাখ কোটি টাকারও বেশি।

সেইসাথে ভারতের মোট আমদানির অর্ধেক আসে উপসাগরীয় দেশগুলোর জোট গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিলের সদস্য ৬টি দেশ থেকে। এছাড়া, ১ কোটি ভারতীয় নাগরিক এসব দেশে কাজ করে। লাখ লাখ ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠায়। সাম্প্রতিক হিসেব মতে, আরব মুসলিম দেশগুলো থেকে ভারতে রেমিটেন্স এসেছে ৫ লাখ ৭৯ হাজার কোটি টাকা।

আরব দেশগুলো ছাড়াও অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোর সাথে ভারতের বাণিজ্য রয়েছে। ইরান এবং ইরাককে যোগ করলে উপসাগরীয় দেশগুলো থেকেই আসে ভারতের পেট্রলের ৮০ শতাংশ। পাশাপাশি, মুসলিম দেশগুলোর সাথেই ভারতের সিংহভাগ বাণিজ্যিক সম্পর্ক বিদ্যমান। এর মধ্যে, ইরানের সাথে প্রায় ১ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা, ইরাকের সাথে প্রায় ২ লাখ কোটি, বাংলাদেশের সাথে ৯০ হাজার কোটি, মিসরের সাথে ৩৩ হাজার কোটি, পাকিস্তানের সাথে ৪৯০০ কোটি, ইন্দোনেশিয়ার সাথে ৩৫ হাজার কোটি, মালয়েশিয়ার সাথে ১ লাখ কোটি টাকার বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে। সব মিলিয়ে মুসলিম দেশগুলোর সাথে ভারতের বাজেটের প্রায় সমপরিমাণ লেনদেন রয়েছে। যা বন্ধ করে দিলে ভারতীয় অর্থনীতি সম্পূর্ণই দেউলিয়া হয়ে যাবে।

অপরদিকে, আভ্যন্তরিনভাবে মুসলিম স্থাপনাগুলো থেকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পায় ভারত। বিভিন্ন সময়ে মুসলিম শাসকরা এ সব স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। আর এসব স্থাপনা দেশটির পর্যটন খাতে বিশাল অবদান রাখে। সম্প্রতি উগ্র হিন্দুত্ববাদী কিছু সংগঠন মুসলিম স্থাপনা নিশ্চিহ্ন করতে বদ্ধপরিকর। যার ফলশ্রম্নতিতে ৪০০ বছরেরও পুরনো ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলা হয়েছে। আরও ৩২ হাজার মুসলিম স্থাপনা ভেঙে সেখানে মন্দির নির্মাণের পরিকল্পনা করছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদসহ কট্টর হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসী সংগঠন। অথচ, ভারত তাদের পর্যটন খাতের সবচেয়ে বেশি রাজস্ব পায় মুসলিম স্থাপনাগুলো থেকে। আগ্রার দূর্গ, কুতুব মিনার, তাজমহল, লালকেল্লা, ফতেহপুর সিকরি, আগ্রার দূর্গের পর্যটন থেকে ভারত প্রতি বছর শত শত কোটি রুপি আয় করে থাকে।

প্রসঙ্গত আমরা মনে করি, ভারতে দ্বীন ইসলামবিদ্বেষ ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধে শুধু ভারতীয় পণ্য বর্জনই সমাধান নয়। বরং এক্ষেত্রে বিদয়াতী পণ্যের পরিবর্তে সুন্নতী দ্রব্য এবং খাদ্যসামগ্রী গ্রহণই মূল প্রতিকার।

কারণ একটি মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক একটি বিদয়াতকে বিদূরীত করে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, মুসলমানদের মাঝে আজ সম্মানিত সুন্নতী খাদ্য ও দ্রব্যাদি ব্যবহারের অনুভূতি ও অনুশীলন নেই। যার কারণে মুসলমানদের অন্তরে সম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার নূর তথা ঈমান উনার নূর নেই। যা মুসলমান অনুধাবন করতে না পারলেও কাফের মুশরিকরা ঠিকই নির্ণয় করতে পারে। ফলত; তারা নির্বিচারে মুসলমানদের উপর নির্যাতন করে। মহাসম্মানিত মহাপবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার অবমাননা করে। নাউযুবিল্লাহ!

প্রসঙ্গত, সারা বিশ্বব্যাপী মহাসম্মানিত সুন্নতী দ্রব্য ব্যবহার, পবিত্র সুন্নতী খাদ্য খাদ্য গ্রহণ তথা আমলের জন্য ছহিবে সাইয়্যিদিল আইয়াদ শরীফ, সাইয়্যিদে মুজাদ্দিদে আযম, রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র। মুসলিম দেশগুলোর সরকার প্রধান এবং সারা বিশ্বের মুসলমানদের উচিত মহাসম্মানিত মহাপবিত্র আন্তর্জাতিক সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্রের সাথে সংযুক্ত হওয়া। সুন্নতের আবহে সমৃদ্ধ হওয়া।

মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক পালন করলে, প্রচার করলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র ঈমানী নূর দিবেন। শান্তি দিবেন। সংহতি দিবেন। সহমর্মিতা দিবেন। বিশ্ব মুসলিম ভ্রাতৃত্ব দিবেন। মুসলমানদের শক্তিমত্তা সমৃদ্ধি দিবেন। বিশেষ বুদ্ধিমত্তা, দুরদশীর্দা বা সূক্ষè আক্বল দিবেন। মুহব্বত মারিফাত মুবারক দিবেন। পাশাপাশি, এমন রোব দিবেন যে কাফির মুশরিক মুসলিম বিশ্বের ভয়ে থরথর কম্পায়মান থাকবে।

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়