সম্পাদকীয়

সংখ্যা: ২৬৭তম সংখ্যা | বিভাগ:

সকল প্রশংসা মহামহিম আল্লাহ পাক উনার জন্য। মহান রমাদ্বান শরীফ প্রসঙ্গে তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আপনাদের উপর পবিত্র ছিয়াম ফরয করা হয়েছে, যেমন আপনাদের পূর্ববর্তীদের উপরও ফরয করা হয়েছিল।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ)

সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, রহমতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত পবিত্র দুরুদ শরীফ ও পবিত্র সালাম মুবারক। পবিত্র হাদীছ-এ কুদসী শরীফে তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “হে মানবজাতি! একটি মহান ও বরকতপূর্ণ মাস তোমাদের উপর ছায়া বিস্তার করার জন্য হাযির হয়েছে।”

পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসকে তিনভাগে ভাগ করা হয়েছে। রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত। পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে রহমতের কথা ১১৪ বার, মাগফিরাতের কথা ২৮ বার এবং নাজাতের কথা ৮৫ বার এসেছে। প্রথম দশদিন বলা হয়েছে রহমতের কথা। এ দশদিনে এমন খাছ রহমত নাযিল হয়; যা সারাবছর আর কখনো নাযিল হয় না। পৃথিবীতে সবচেয়ে বহু পঠিত পবিত্র সুরা ফাতিহা শরীফ উনার পবিত্র দ্বিতীয় আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বলা হয়েছে এবং মহান আল্লাহ পাক উনার পরিচয় দেয়া হয়েছে যে, উনি পরম করুণাময় ও চরম দয়াশীল। অপরদিকে এক পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আপনারা মহান আল্লাহ পাক উনার রঙে রঞ্জিত হন।” কাজেই সে হিসেবে প্রত্যেকটা মুসলমান তার অন্তর রহমত বা দয়ায় ভরপুর থাকার কথা। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এক শিশুকে অনেক আদর মুবারক করছিলেন। এটা দেখে এক বেদুইন বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি শিশুদের এত আদর মুবারক করেন? আমরা তো তা করিনা। জবাবে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, “তোমাদের অন্তর থেকে যদি মহান আল্লাহ পাক তিনি রহমত মুবারক উঠিয়ে নেন, তাহলে আমি কি করতে পারি?”

প্রসঙ্গত: প্রতিভাত হয় রহমত বা দয়া করা একটি চর্চারও বিষয়। মুসলমান মাত্রই সর্বক্ষণই এ রহমতের ব্যাপক বহিঃপ্রকাশ ঘটানো দরকার। পবিত্র হাদীছ-এ কুদসী শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “যে মহান আল্লাহ পাক উনার মাখলুকাতের উপর দয়া করে মহান আল্লাহ পাক তিনিও তার প্রতি দয়া মুবারক করেন।” আর পবিত্র হাদীছে কুদসী শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “গোটা সৃষ্টিজগত মহান আল্লাহ পাক উনার পরিবার। মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে সেই প্রিয় যে উনার সৃষ্টিজগতের কাছে প্রিয়।”

প্রসঙ্গত: আমাদের সমাজের ইমাম ও খতীব সাহেবগণ পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উপলক্ষে গৎবাঁধা ওয়াজ করে বেড়ান। কিন্তু পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার প্রায়োগিক দিক সম্পর্কে তারা কোনো আলোকপাত করেননা। করলে সমাজে বর্তমান নির্মম চিত্র দেখা যেতনা।

সারাদিন রোজা শেষে রোজাদার যে পবিত্র ইফতারী করবে তা বিষ দিয়ে তৈরি করা হয়। টেক্সটাইল কাপড়ের রঙ দিয়ে সুন্দর দেখানোর জন্য তৈরি করা হয় আলুর চপ, বেগুনী, পিঁয়াজো। বিক্রিত হয় মাত্রাধিক ফরমালিনযুক্ত খেজুর। বিষাক্ত, বাসি তেল দিয়ে তৈরি হয় পোকায় খাওয়া ছোলা। পোড়া মবিল দিয়ে ভাজা হয় গরম গরম শাহী জিলাপী।

অপরদিকে সারাদিন রোজা শেষে রোজাদার যে একটু শরবত পান করবে খোদ সরকারই সে চিনির দাম বাড়িয়ে ৬৫ টাকা থেকে ৭০ টাকা করে। এছাড়া রোজাদারদের অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির দাম বাড়ানোর জন্য আলাদা সিন্ডিকেট তো আছেই। এটা এক আশ্চর্যের দেশ বাংলাদেশ। অন্যান্য খ্রিস্টান দেশগুলোতে যখন ধর্মীয় উৎসব আসে তখন দাম কমে যায়। আর ৯৮ ভাগ মুসলমানের এদেশে বরাবরই রোজা আসলে সিন্ডিকেট করে সব জিনিসের দাম হু হু করে বেড়ে যায়। (নাঊযুবিল্লাহ)

প্রসঙ্গত: আমরা মনে করি এটা সমাজের ইমাম-খতীবদের ব্যর্থতা। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “কোনো  রোযাদারকে পবিত্র ইফতারী করানো হলে তাকে ক্ষমা করা হবে এবং তাকে পবিত্র জান্নাত দেয়া হবে।” পাশাপাশি রোজাদারের সমান ছওয়াব তার আমলনামায় লিখে দেয়া হবে। সুবহানাল্লাহ! একজন হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, “আমাদের মধ্যে অনেকে এ সামর্থ্য রাখেনা।” তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে পবিত্র ইফতার করাবে এক ঢোক দুধ দ্বারা অথবা একটা খেজুর অথবা এক ঢোক পানি দ্বারা তাকেই মহান আল্লাহ পাক তিনি এ ফযীলত মুবারক দান করবেন। সুবহানাল্লাহ!

উল্লেখ্য, আমাদের কথিত ইমাম-খতীব সাহেবরা শুধু এ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাকে অক্ষর-ভিত্তিক উচ্চারণ করে গেছেন কিন্তু এর বিশ্লেষণে তারা যেতে পারেনি। এর একমাত্র বিশ্লেষণ হল দয়া করা, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র দয়া হলেও দয়া করা। দয়া করার প্রবণতা থাকা। যে কারণে একটি খেজুর বা এক ঢোক পানির কথাও বলা হয়েছে। আর এর আরেকটি দিক হলো যে এত ক্ষুদ্র দয়া করলেও যদি এত ফযীলত হয় তাহলে বেশি দয়া করলে কী হবে। এতদ্বপ্রেক্ষিতে ছোলা, তেল, চিনি ব্যবসায়ীরা যদি রোজাদারদের স্বার্থে দাম কমিয়ে দেন তাহলে তারা কত বড় ফযীলত মুবারক পাবেন? সুবহানাল্লাহ!

এ বোধ উন্মেষ যদি হয় তাহলে সমাজে কোনো সিন্ডিকেট গড়ে উঠতে পারেনা। পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি হতে পারেনা। অপরদিকে এ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার অপর একটি শিক্ষা এই যে, সামান্য একটি খেজুর বা এক ঢোক পানি দিয়ে পবিত্র ইফতার করালে যদি পবিত্র জান্নাত হাছিল হয় তাহলে রোজাদারের মুখে বিষযুক্ত ও ভেজাল ইফতারী তুলে দিলে কত বড় জাহান্নাম হাছিল হবে? (নাঊযুবিল্লাহ) কিন্তু এ প্রায়োগিক শিক্ষা আমাদের ইমাম-খতীবরা দেয়না, দিতে পারেনা। নাঊযুবিল্লাহ!

অপরদিকে আমাদের সমাজে এখন সামান্য কারণে মারামারি, বাস-ভাংচুর, জ্বালাও পোড়াও, মারপিট ইত্যাদির প্রচলন হয়েছে। কিন্তু মহান আল্লাহ পাক তিনি ক্ষমাকারী। তিনি ক্ষমা করাকে পছন্দ করেন। তিনি ক্ষমাকারীকে পছন্দ করেন। আর রোজার দ্বিতীয় দশদিনে মহান আল্লাহ পাক তিনি খাছভাবে ক্ষমা করেন। কাজেই মহান আল্লাহ পাক উনার এই ছিফতের অনুকরণে রোজার দ্বিতীয় দশদিনে যদি আমরা ক্ষমা করার শিক্ষা নিতাম তাহলে আমাদের মধ্যে মারামারি, হানাহানি, কাটাকাটি আর থাকতো না। সুবহানাল্লাহ!

অপরদিকে তৃতীয় দশদিনে বলা হয়েছে জাহান্নাম থেকে নাজাত উনার কথা। মূলত: জাহান্নাম এর ভয় যদি আমাদের সমাজে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়তো তাহলে এতসব বেশরা, বিদয়াত কিছুই সমাজে থাকতো না।

আমাদের ইমাম ও খতীবরা যদি নাজাতের প্রসঙ্গক্রমে জাহান্নামের পরিচয় ও বর্ণনা সাধারণ মানুষের মনে বদ্ধমূল করতে পারতো তাহলে সাধারণ মানুষ এমনিতেই সব অনৈসলামিক থেকে ফিরে থাকতো। সুবহানাল্লাহ!

প্রসঙ্গত: আমরা মনে করি পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসে ত্রিশ দিনের তিনটি শিক্ষাই সব মুসলমানকে সম্মানিত ইসলামী জিন্দেগীতে পর্যবসিত করতে পারে।

মূলত এসব অনুভূতি ও দায়িত্ববোধ আসে ইসলামী অনুভূতি ও প্রজ্ঞা থেকে। আর তার জন্য চাই নেক ছোহবত মুবারক তথা ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ মুবারক। যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবত মুবারকই সে মহান ও অমূল্য নিয়ামত হাছিল সম্ভব।

মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের তা নছীব করুন। (আমীন)

 

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়