সম্পাদকীয়

সংখ্যা: ০১ম সংখ্যা | বিভাগ:

Imamul-Umamসম্পাদকীয়


 

বেশ কিছুদিন আগে এস বন্ধুর সাথে তর্ক হয়েছিল মানুষের নিঃস্বার্থপরতা নিয়ে। সে প্রতিবারই জোর গলায় বলছিল যে কোন ব্যক্তি কোন এক মূহুর্তের জন্যও নিঃস্বার্থপর হতে পারে না; আমার দাবী ছিল অন্ততঃ কিছু কিছু ক্ষেত্রে পারে। মাত্র কয়েকদিন আগে আরেক বন্ধুর সাথে মানুষের নিরপেক্ষতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সে কোন এক সাপ্তাহিকের জনৈক লেখকের উদ্ধৃতি দিয়ে বলল পৃথিবীর কোন লোকই নিরপেক্ষ নয়। অথচ আমার দাবী নিরপেক্ষ হওয়া সম্ভব। আজ কেন জানি মনে হচ্ছে নিঃস্বার্থপরতার সাথে নিরপেক্ষতার কেমন যেন একটা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। কিংবা বিপরীতভাবে বলতে গেলে স্বার্থপরতা আর পক্ষপাতিতা যেন একই সুত্রে গাঁথা। কথাটা অবশ্যই বিশ্লেষণসাপেক্ষ।

আমাদের দেশের যে কোন একটা ইস্যু নিয়ে রাজনৈতিক মহলে তুমুল হৈ চৈ পড়ে যায়। অবশ্য ইদানিং যেন কিছুটা স্তিমিত। বোধ হয় দেশের সাংবিধানিক গণতন্ত্রে প্রতিষ্ঠিত সরকার বলেই বিরোধী দলগুলো অন্ততঃ ঐ চিরপরিচিত স্বৈরাচারী আর একনায়কতন্ত্র শব্দগুলো আওড়াতে পারছে না। আর এই সুযোগে সরকারী দলও নিজের খুশীমত কাজ কারবার চালিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি বয়ে যাওয়া ভয়ংঙ্করী ঘুর্ণিঝড় আর জলোচ্ছাস নিয়ে শুরু হয়ে গেছে রাজনীতিতে যার স্বার্থ আদায়ে ব্যস্ত। কেউ চায় অর্থ, কেউ চায় খ্যাতি আবার কেউ উভয়টিই। সরকারী দল বলছে ত্রানকার্য সঠিকভাবে সমাধা হচ্ছে, বিরোধীদল বলছে যে সরকার ব্যর্থ হয়েছে সমস্যার মুকাবিলা করতে । আবার আরেকদল বলছে তাদের কার্যকলাপ প্রচার মাধ্যমগুলোতে প্রচার করা হচ্ছে না। উপদ্রুত এলাকার স্থানীয় নেতারা বলছে ত্রানসামগ্রী তাদের কাছে দেয়া হোক, তারা সেগুলো বন্টন করবে। বিরোধী সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর দাবি ছিল সরকারের উচিৎ সবদলকে নিয়ে ত্রানকার্য পরিচালনা করা। কিন্তু এই আপোষহীন সরকার তার নিজের সিদ্ধান্তে অটল। সে যা ভাল মনে করে তাই করছে, যে সমস্ত বিল পাশ করানো দরকার, তা দুর্যোগের আলোচনাকে স্থগিত করেই পাশ করিয়ে নিয়েছে, নিজের অপারগতার জন্য মার্কিন টাস্ক ফোর্সেকে আমন্ত্রণ জানানো দরকার মনে করেছে, তাই করেছে। অনেকে এবার বাড়ী-ঘর বিক্রি করে নির্বাচনে নেমেছেন এবং জিতেছেন। এতকিছু দেখে শুনে মনে হয় বুঝতে পারছি আমার বন্ধুমহল কেন এত বলিষ্ঠ গলায় মানুষের নিঃস্বার্থপরাতার বিরোধিতা করে। সবাই দেশপ্রেমিকের পরিচয় দিয়ে মঞ্চে দাড়িয়ে গলা ফাটিয়ে বলে দেশ উদ্ধার করবে, নিঃস্বার্থভাবে দেশ সেবায় জীবনকে উৎসর্গ করে দেবে। অথচ দেশ সেবার সুযোগ যদিবা কোনভাবে এসেই পড়ে, তবেই দেখা যায় তারা কার সেবা করছে। অবশ্য অনেকে হাস্যোচ্ছলে বলে থাকে দেশসেবা মানে জনগণের সেবা, আর আমি নিজেতো জনগণেরই একটি অংশ; কাজেই আমার সেবা আমি করলেইতো জনগণের সেবা তথা দেশসেবা হয়ে গেল। যুক্তি বটে।

এদেশের জনগণের মধ্যে একটা সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করে আসছি। কোন এক দলের সমর্থক অন্য সমস্ত দলের তুমুল বিরোধিতা করে এবং নিজের দলের ব্যাপারে একেবারে অন্ধ। সে নিজের সমালোচনা করে না, নিজ দলের সমালোচনা করেনা, নিজ দলের হোতাদের বাণীকে ঐশীবাণী ভেবে কক্তস্থ করে রাখে, অন্য দলের যে কোন কার্যকলাপের কঠোর সমালোচনা করে। এখন কথা হচ্ছে একজন লোকতো ভালমন্দ মিলিয়েই তৈরী, মানুষ বা দলতো সমালোচনার উর্দ্ধে নয়। অপরের দোষ ধরবার পূর্বে নিজের সমালোচনা করে নেয়াইতো উচিৎ।

আত্মসমালোচনা ছাড়া কারো কোন উন্নতি সম্ভব নয়। নিজের দোষ ঢেকে কেবল গুনটুকু প্রচার করলেতো আত্মউন্নয়ন অসম্ভব। কাজেই আবারো সেই বন্ধুর কথার প্রশংসা না করে পারছি না। মানুষ নিরপেক্ষ হতে পারে না। সে কোন না কোন পক্ষাবলম্বনের মাধ্যমে পক্ষপাতিতার দোষে দুষ্ট কিংবা গুনে গুনান্বিত, যেটাই বলেন না কেন। কিন্তু তারপরও বলব, নিরপেক্ষ মানুষ কদাচিৎ যে চোখে পড়েনা তা নয়। যেমন কোন কোন সরকারী অফিসে গেলে দেখা যায় সেখানে পিওন থেকে শুরু করে অফিসার পর্যন্ত সবাই উৎকোচ ছাড়া নড়েচড়ে না; কিন্তু তারপরও দু’একজন ব্যক্তি ঠিকই সে প্রতিষ্ঠানের নিখাঁদ অলঙ্কার হিসাবে থাকে। তেমনি কিছু নিঃস্বার্থ ব্যক্তি, কিছু নিরপেক্ষ ব্যক্তি এদেশে এখনও আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে, অতীতেও ছিল, যারা এ দেশের গৌরব, এ জাতীর গৌরব।

ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় জীবনের সর্বত্র দোষ-ত্রুটিতে পূর্ণ হয়ে রয়েছে। আমাদের ব্যক্তি জীবনের দোষগুলো যদি পরিহার করতে পারি তবে অবশ্যই সমাজ জীবন এবং রাষ্ট্রীয় জীবন সুখময় হয়ে উঠবে। তবে ব্যক্তি জীবনকে কি করে সুন্দর করা যায় বা করার চেষ্টা করা যায় তা আগামীতে আলোচনা করার আশা রাখি। তবে এর প্রথম শর্ত হচ্ছে আমাদেরকে সুন্দর হবার বা সুন্দর সমাজ গড়ার প্রকৃত সদিচ্ছা পোষন করতে হবে।

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়