সম্পাদকীয়

সংখ্যা: ২৪৭তম সংখ্যা | বিভাগ:

সম্পাদকীয় (২৪৭তম সংখ্যা)

মহান আল্লাহ পাক তিনিই সব প্রশংসার মালিক; যিনি বিচার দিনের অধিপতি। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ছালাত শরীফ ও ছালাম মুবারক; যিনি মানুষকে ভীতি প্রদর্শন করেছেন, সু-সংবাদ দিয়েছেন এবং তাযকিয়া করেছেন।

মানুষকে মহান আল্লাহ পাক তিনি শুধুমাত্র উনার ইবাদত-বন্দেগী করার জন্য তৈরি করেছেন। ইবাদত-বন্দেগী কেবল আনুষ্ঠানিকতা সর্বস্ব নয়। বরং অন্তরের সমগ্র অনুভূতির পুঞ্জীভূত নিবেদনের সঠিক প্রয়াস।

অন্তরের উৎস মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে। সে প্রেক্ষিতে অন্তরের আগমনটা ভালোই থাকে। কিন্তু সামাজিক আবহ সেই অন্তরের উপলব্ধি ও চেতনাকে পরিবর্তিত করে। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বলা হয়েছে, “প্রত্যেক শিশুই সত্যপথের উপর জন্মগ্রহণ করে। কিন্তু তার বাবা-মা তাকে বিপথগামী করে।”

বলাবাহুল্য, বাবা-মা পরিবেষ্টিত পরিবার, সমাজের একক। পরিবার সামাজিক পরিপার্শ্বিকতায় প্রভাবিত। তাই আগত মানব শিশুকে একটি অনাচার, পাপাচার মুক্ত আদর্শ পরিবেশ দেয়ার জন্য সমাজ দায়বদ্ধ। জন্ম হওয়া মাত্রই মুসলমান শিশুকে আযান শোনানো হয়। এর দ্বারা মূলত তাকে শিরক, কুফরী, বেশরা, বিদয়াত- এসব থেকে মুক্ত পরিবেশের অঙ্গীকারই জানানো হয়।

কিন্তু তাতে ব্যত্যয় ঘটিয়ে মানব শিশু যখন বেড়ে উঠে অনৈসলামিক আবহে, রকমফের পাপাচার যুক্ত পরিবেশে, সমাজের অবহেলায়, অনাগ্রহে, তখন তা তার চেতনাকে অবলুপ্ত করে অন্তরের উপলব্ধিকে বিকারগ্রস্ত করে।

তাই সমাজের কাছে সুস্থ পরিবেশ পাওয়া প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার। সে অধিকার থেকে যখন সে বঞ্চিত হয় তখন তাকে শোষিতের পর্যায়েই গণ্য করতে হয়। কেবল অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা আর চিকিৎসাহীনতার কারণেই নয়; বরং মূল্যবোধ বিবর্জিত সামাজিকতার প্রেক্ষিতেও মানুষ গভীরভাবে শোষিত, বঞ্চিত, নির্যাতিত।

সুদ-ঘুষ, যুলুম, দুর্নীতি, মাদকাসক্তি, পরকীয়া, বহুগামিতা, চরিত্রহীনতা- এক অর্থে সবই সামাজিক ব্যাধি। এই ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে মানুষ সাধারণভাবেই গান-বাজনায় অভ্যস্ত হয়। গানের সুর-লহরী তার হৃদয়-তন্ত্রীকে আবিষ্ট করে, সুদকে মুনাফা মনে করে, ঘুষকে প্রয়োজন মনে করে, দ্বিধাহীন চিত্তে মাদকাসক্ত হয়, পরকীয়া তথা চরিত্রহীনতাকে উপভোগ মনে করে এবং এভাবে প্রবাহমান সমাজকে ক্রমাগত ক্ষতির দিকে ধাবিত করে।

সমাজের এই কলুষতা অধিকাংশ সময়েই বিদ্যমান ছিল। সময়ের কছম করে তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “সময়ের কছম! নিশ্চয়ই মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। কিন্তু তারা নয়, যারা ঈমান এনেছে এবং নেক কাজ করেছে।” (পবিত্র সূরা আছর শরীফ)

উল্লেখ্য, সমাজকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থেই চাই সামাজিক সচেতনতা। এই উপলব্ধির তীব্র জাগরণ তাই অপরিহার্য যে, কেবল সমাজের নিচতলার মানুষগুলোই নয়; বরং কথিত উচ্চবিত্তওয়ালারাও মূলত অবক্ষয়যুক্ত সমাজের আবহে আচ্ছন্ন হওয়ার কারণে তথা সমাজ থেকে প্রাপ্ত মূল্যবোধহীন মানসিকতা লালনের প্রেক্ষিতে শোষিত, বঞ্চিত এবং মূল্যায়নের মাপকাঠিতে ধিকৃত ও লাঞ্ছিত।

বলাবাহুল্য, সামাজিক এই সচেতনতা সৃষ্টির ক্ষেত্রে আলিম সমাজের ভূমিকা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কিন্তু নামধারী আলিমরা তথাকথিত রাষ্ট্রীয় আন্দোলনের নামে এই কাঙ্খিত ও অনিবার্য সামাজিক সচেতনতা তথা সামাজিক মূল্যবোধের আন্দোলন থেকে ন্যক্কারজনকভাবে পিছিয়ে রয়েছে।

দুর্নীতিতে বাংলাদেশের বারবার শীর্ষস্থান লাভ করার পাশাপাশি বর্তমান দুর্নীতিবাজদের দৌরাত্ম্যের পেছনে ধর্মব্যবসায়ী মালানাদের ধর্মব্যবসার দুষ্ট প্রভাব কোনোক্রমেই খাটো করে দেখার অবকাশ নেই। দুর্নীতিতে জরাগ্রস্ত বাংলাদেশে দুর্নীতির ব্যাপকতার পেছনেও ধর্মের অভিভাবক সেজে ধর্মের নামে অধর্মের অনুশীলনই সাধারণ মানুষকে ধর্মের অনুভূতি সম্পর্কে সংবেদনশীল না করে দুর্নীতিতে উৎসাহিত করে।

তাই তারা পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার নামে হারাম সম্পৃক্ত মিডিয়া, নির্বাচন ইত্যাদি বিজাতীয়, বিধর্মীয় ইস্যুর উপর আন্দোলন তৈরির নিস্ফল প্রয়াস পেলেও নফসানিয়ত তথা স্বার্থান্বেষী কারণে আজও আদৌ প্রচেষ্ট হয়নি গান-বাজনা, বেপর্দা, সিনেমা, টিভি, ছবি, সুদ-ঘুষ, মাদকাসক্তি, দুর্নীতি ইত্যাদি হারাম-এর বিরুদ্ধে ব্যাপক সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে তথা সমাজের পরিবর্তন ঘটাতে।

স্মর্তব্য, কথিত রাষ্ট্রীয় কাঠামোর পট পরিবর্তনের অনিবার্য পূর্বশর্ত হচ্ছে- সম্মানিত ইসলামী আদর্শভিত্তিক সুস্থ সামাজিক প্রেক্ষাপট তৈরি।

আর সে প্রেক্ষাপট তৈরির জন্য কেবল মৌসুমী ও সুযোগসন্ধানী তথাকথিত ইসলামী আন্দোলন আর মুখোশধারী ইসলামী ব্যক্তিত্ব নয়; বরং এর জন্য চাই- মানুষের অন্তর শীতলকারী ইলমে তাছাউফের আলো ও যোগ্যতাধারী ব্যক্তিত্ব। কেবলমাত্র হক্কানী-রব্বানী শায়েখ তথা ওলীআল্লাহ তথা যুগের মুজাদ্দিদ বা সমাজ সংস্কারকের মাঝেই তা খুঁজে পাওয়া সম্ভব।

খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে তা যথাযথভাবে নসীব করুন। (আমীন)

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়