সম্পাদকীয়

সংখ্যা: ২৪৪তম সংখ্যা | বিভাগ:

সম্পাকীয়


সব প্রশংসা মুবারক খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য; যিনি সকল সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক। সেই মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র রমাদ্বান প্রসঙ্গে ইরশাদ মুবারক করেন, “তোমাদের উপর সিয়াম ফরয করা হয়েছে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপরও ফরয করা হয়েছিল।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ)

আর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত পবিত্র দুরূদ শরীফ ও সালাম মুবারক। তিনিও পবিত্র রমাদ্বান প্রসঙ্গে ইরশাদ মুবারক করেন, “হে মানবজাতি! একটি মহান ও বরকতপূর্ণ মাস তোমাদের উপর ছায়া বিস্তার করার জন্য হাযির হয়েছে।”

মহান আল্লাহ পাক তিনি মানুষের কাছে রিযিক চান না। কিন্তু ইবাদতের জন্যই মানুষের সৃষ্টি। ইবাদত অস্বীকারকারীদের সম্পর্কে বলা হয়েছে, “যারা অবিশ্বাসী তারা ভোগ-বিলাস ও পানাহারে ডুবে আছে, যেমন চতুষ্পদ জন্তু পানাহারে লিপ্ত থাকে। জাহান্নামই তাদের শেষ মঞ্জিল।”

পক্ষান্তরে ইবাদতের আহ্বান জানিয়ে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর সিয়াম (রোযা) ফরয করা হয়েছে। যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরয করা হয়েছিল। সন্দেহ নেই যে, তোমরা মুত্তাক্বী হতে পারবে।”

প্রকৃতপক্ষে সিয়াম বা রোযার অর্থই হলো মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ মুবারক উনার কাছে স্বতঃস্ফূর্ত ও নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ। মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ মুবারক গ্রহণ ও বর্জন। এক্ষেত্রে রোযাদার নিজের নফসের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ঊর্ধ্বে উঠে যতটা মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশের অনুগত হবে, তার আবদিয়াতের মাক্বাম তত সমুন্নত হবে। সাহরীতে বিলম্ব এবং তাড়াতাড়ি ইফতার করার মাধ্যমে সে আবদিয়াতই ফুটে উঠে। পাশাপাশি পানাহার থেকে বিরত থাকায় বান্দার মাঝে সামাদিয়াতও প্রকাশ পায়। পানাহার থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি সমস্ত পাপাচার থেকে মুক্ত থেকে তাসবীহ-তাহলীল, তারাবীহ, যিকির-আযকার, ইতিকাফ করা, বেশি বেশি পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত এবং সর্বোপরি পবিত্র যাকাত-ফিতরা আদায়ের মাধ্যমে বান্দার আবদিয়াতই পূর্ণঙ্গতা পায়।

পশু প্রবৃত্তি তথা নফসানিয়তকে বিলীন করে আখলাকে এলাহীতে ভূষিত হওয়ার মাঝেই রোযার সার্থকতা। সংযমের পাশাপাশি সহানুভূতির অনুশীলনই রোযার শিক্ষা। রোযা রেখে বিত্তবানও ভুখা থাকার কষ্ট প্রত্যক্ষভাবে অনুভব করে। যা তাকে সহানুভূতিতে অনুপ্রাণিত করে। এক ফরযে ৭০ ফরযের ফযীলতের পাশাপাশি এই সহমর্মিতা তাই বিত্তবানদেরকে পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসে পবিত্র যাকাত প্রদানে উৎসাহিত করে।

মূলত, পবিত্র ছলাত উনার পরেই পবিত্র যাকাত উনার স্থান। পবিত্র যাকাত পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার তৃতীয় স্তম্ভ। পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে পবিত্র যাকাত শব্দটি বিভিন্ন গঠন প্রক্রিয়ায় ৫৮বার এসেছে। এর মধ্যে ৯বার ‘পবিত্র যাকাত প্রদান করো’ বলে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র যাকাত আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন এবং যাকাত দানকারীর জন্য দোয়া মুবারকও করেছেন।”

উল্লেখ্য, পবিত্র রোযা উনার সাথে পবিত্র যাকাত উনার একটা অন্তর্নিহিত সম্পর্ক রয়েছে। কারণ পবিত্র যাকাতও পবিত্রতা ঘটায়। তবে এ পবিত্রতা মালের বা অর্থের। আর অর্থের মূল মালিক হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক তিনি। কাজেই মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশিত পথে অর্থ আয়-ব্যয়েই, ব্যক্তি, সমাজ তথা রাষ্ট্রের সফলতা ও সমৃদ্ধি। সে সফলতার দ্বার বন্ধ রেখে ভিন্ন পথে ঘুরে যে ব্যর্থতায় পর্যবষিত হয় তার জন্য কেবল আফসুসই করা যায়।

প্রসঙ্গত বিবেচ্য, অপেক্ষাকৃত অনেক বড় স্বার্থ বিকিয়ে দেবার পাঁয়তারার অভিযোগের পরিবর্তে সামান্য গঙ্গার পানি নিয়ে চুক্তি ও তার ব্যর্থতার আমাদের যে পরিহাস, সে পরিহাস কি সত্যিই কবুল করার মতো? অথচ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে, “পবিত্র যাকাত অনাদায়ের কারণে অতিবৃষ্টি আর অনাবৃষ্টি হয়।”

মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে এই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার প্রতি অবমাননা করাই কি হবে আমাদের সার্থক পরিচয়? সম্মানিত ইসলামী আইনশাস্ত্র বিশারদদের মতানুযায়ী যাবতীয় অবৈধ কর রহিতকরণের বিপরীতে বলিষ্ঠভাবে পবিত্র যাকাত আদায়ের কোনো সদিচ্ছাই কি আমাদের জাগবে না?

পবিত্র যাকাতই একমাত্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যার ফলশ্রুতিতে পুঁজিবাদী, সুদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার কুফল থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব।

উল্লেখ্য, আজকের বিশ্ব অর্থনীতি সুদের ভয়াবহতা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে। বিশ্ব ব্যাংকের সম্প্রতি রিপোর্টে বলা হয়েছে, “বিশ্বে ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান ক্রমশঃ বেড়েই চলছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় কারণ হলো সুদ।” সুদী তথা পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থা কোনদিনই সমাজের সাধারণ মানুষের জন্য সুখকর নয়।

বলার অপেক্ষা রাখে না, পবিত্র যাকাতবিহীন, পুঁজিবাদী, সুদী ও দুর্নীতি নির্ভর অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বাংলাদেশেও দরিদ্রদের আরো দরিদ্র এবং বিত্তশালীদের আরো বিত্তবান করছে।

গভীর পরিতাপের বিষয়, আজকে মুসলমানগণ নামাযকে যতটা গুরুত্ব দেয়, যতটা আগ্রহভরে তারা মসজিদের পর মসজিদ করে, রোযা তাদের জীবনে যতটা প্রভাব বিস্তার করে সে তুলনায় যাকাতের বিষয়টি তাদের মানসিকতা থেকে অনেক দূরে অবস্থান করছে।

মূলত, পবিত্র যাকাত অনাদায়ে এতসব ব্যর্থতার মুলে আমাদের নামধারী আলিমদের নির্লিপ্ততাই অনেকাংশে দায়ী। কারণ পবিত্র যাকাত উনার গুরুত্ব ও তত্ত্ব ও তথ্য সংগ্রহ, এর প্রয়োগিক দিক বিশ্লেষণ ও সচেতনতা সৃষ্টি এবং এ সম্পর্কিত গবেষণা ও সমন্বয় সাধণের মতো মৌলিক কাজের।

ঠিকভাবে পবিত্র যাকাত আদায় করা হলে বাংলাদেশে সম্ভাব্য পবিত্র যাকাত উনার পরিমাণ হতে পারে বছরে লাখো কোটি টাকারও বেশী। পবিত্র যাকাত উনার এই বিশাল অঙ্ক বাস্তবায়ন করা গেলে এক বছরেই বাংলাদেশ থেকে দারিদ্র্য দূরীভূত করা যাবে। কাজেই বাংলাদেশ সরকারের উচিত সুদভিত্তিক ও আয়করভিত্তিক অর্থনীতি বাদ দিয়ে যাকাতভিত্তিক অর্থনীতি চালু করা।

মূলত, এসব অনুভূতি ও দায়িত্ববোধ আসে পবিত্র ঈমান ও পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাদের অনুভূতি ও প্রজ্ঞা মুবারক থেকে। আর তার জন্য চাই নেক ছোহবত মুবারক তথা ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ মুবারক। যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবত মুবারক-এ সে মহান ও অমূল্য নিয়ামত হাছিল সম্ভব।

খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে তা নছীব করুন। (আমীন)

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়