সম্পাদকীয়

সংখ্যা: ২৮২তম সংখ্যা | বিভাগ:

সব প্রশংসা মুবারক খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য; যিনি সকল সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, হযরত রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত দুরূদ মুবারক ও সালাম মুবারক।

মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআন শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন, ‘আর কোন বিষয়ে কখনই বলোনা, আমি এটি নিশ্চয়ই কালকে করে ফেলবো। যদি না মহান আল্লাহ পাক তিনি ইচ্ছে না করেন।’ (পবিত্র সূরা কাহাফ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২৩-২৪)। এই আয়াত শরীফ উনার প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং আমল করেই বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণে বলেছিলেন, ‘এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ!’ অর্থাৎ সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস ব্যক্ত করার প্রেক্ষিতেই বাংলাদেশ নামক স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম।

মূলত; স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় এবং দ্বীন ইসলাম অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। ৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যে নিরঙ্কুশ বিজয় পেয়েছিলো তার মূলে যে প্রতিশ্রুতি কাজ করেছিলো তা হলো ‘পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র সুন্নাহ শরীফ বিরোধী কোনো আইন পাশ হবে না।’

প্রসঙ্গত, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ যতবারই ক্ষমতায় এসেছে ততবারই তাদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল ‘পবিত্র কুরআন শরীফ-পবিত্র সুন্নাহ শরীফ বিরোধী কোনো আইন পাশ হবেনা’। এর দ্বারা এদেশের জনসাধারণের মাঝে ইসলামী অনুভূতি যে কত প্রবল তা বিশেষ প্রতিভাত হয়। কিন্তু স্বাধীনতার পর যত বেশি সময় পার হচ্ছে রাষ্ট্রযন্ত্র তথা সরকার এ অমোঘ সত্যটি বুঝতে ততবেশি ব্যর্থ হচ্ছে।

ইতোপূর্বে প্রচার করা হয়েছে করোনা মোকাবেলায় ক্ষমতাসীন সরকার অভিনব কুশলী এবং বিশেষভাবে সফল। তথা বিশ্বে রোল মডেল। মুশরিকদের দেশ থেকে বিতর্কিত ভ্যাকসিন এনে সরকার নিজেদের সফল মনে করছে এবং তথাকথিত করোনার ঝামেলা শেষ মনে করে স্বস্তি বোধ করছে। কিন্তু এখন সরকার নিজেই আবার  তথাকথিত করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু বলে প্রচার করছে। প্রমাণিত হচ্ছে সরকারের তথাকথিত মোকাবেলা করার শক্তি মূলত শুণ্য। সরকারের গৃহীত ব্যবস্থা ভুল ও ব্যর্থ।

সরকারের তরফ থেকে প্রচার করা হয়েছিলো উন্নয়নের অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলছে দেশ। উন্নয়নের অগ্রযাত্রা কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবেনা। কিন্তু এখন সরকার নিজেই স্বীকার করছে যে কথিত করোনায় উন্নয়ন আটকে গেছে। উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। রফতানি কমে গেছে। জনজীবন থমকে গেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ অনেক কলকারখানা বন্ধ হয়ে আছে। হক্কানি রব্বানী আলেম সমাজ মনে করেন, সরকার যদি উন্নয়নের কথার সাথে বঙ্গবন্ধুর মত ‘ইনশাআল্লাহ’ বলতো তাহলে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ঠিকই অব্যাহত থাকত। ইনশাআল্লাহ!

বঙ্গবন্ধু বলেছেন, ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। মুসলমান তার দ্বীন পালন করবে। কিন্তু সরকার ধর্মহীন ধর্মনিরপেক্ষতার মতই আচরণ করছে। ধর্মহীন ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের মতোই প্রচার করছে ‘করোনা ছোঁয়াচে ও মহামারী’। অথচ, বঙ্গবন্ধুর প্রতিষ্ঠিত ইসলামী ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, তিরমিযী শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফের বাংলা অনুবাদে উল্লেখ আছে, ‘সংক্রমণ বা ছোঁয়াচে রোগ বলতে যে কোন কিছু নেই’। সংক্রামক বা ছোঁয়াচে রোগ বলে বিশ্বাস করা কাট্টা কুফরী ও শিরকীর অন্তর্ভুক্ত।

পাশাপাশি উল্লেখ্য, এ পর্যন্ত তাদের মিথ্যা বর্ণনা অনুযায়ী, তথাকথিত করোনায় একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর হার ৫৯ জন।  অথচ যক্ষা আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন মারা যায় ১৮০ জন। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন মারা যায় ৪৯৩ জন। কিডনী রোগে প্রতিদিন মারা যায় ৮০ জন। হেপাটাইটিস বি’তে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন মৃত্যু ১৩৭ জনের। ক্যান্সারে প্রতিদিন মারা যায় ২৫২ জন। এছাড়া সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন মারা যায় ৩০ জন। পানিতে ডুবে প্রতিদিন মারা যায় ২৭ জন। সাপের কামড়ে প্রতিদিন মারা যায় ১৬ জন। অন্যান্য বিষক্রিয়ায় প্রতিদিন মারা যায় ৫ জন। নিউমোনিয়ায় প্রতিদিন মারা যায় ৬৫ জন।

সঙ্গতকারণেই প্রশ্ন জ্বলন্ত হয় এ পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ ৫৯ জন মারা যাওয়ার কারণে যদি তথাকথিত করোনার নামে লকডাউন দিতে হয় তাহলে অন্য মৃত্যুর ক্ষেত্রে লকডাউনের কথা আসে না কেন? অন্যদিকে, রাজধানীতে বায়ু দূষণের মাত্রা ছুঁয়েছে ৬৬১ পিএম ২.৫। বায়ুর মান শূন্য থেকে ৫০ পিএম ২.৫ থাকলে সেটাকে বিশুদ্ধ বাতাস বলা হয়, সেখানে ৬৬১ পিএম ২.৫ হওয়াকে ভয়াবহ হিসেবে উল্লেখ করছে বিশেষজ্ঞরা। ঢাকার রাস্তার ধুলায় সর্বোচ্চ মাত্রায় সিসা, ক্যাডমিয়াম, দস্তা, ক্রোমিয়াম, নিকেল, আর্সেনিক, ম্যাঙ্গানিজ ও কপারের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে মাটিতে যে মাত্রায় ক্যাডমিয়াম থাকার কথা, ধুলায় তার চেয়ে প্রায় ২০০ গুণ বেশি পাওয়া গেছে। এক্ষেত্রে তো ঢাকার মধ্যে বসবাস করাই তথাকথিত করোনার চেয়েও ভয়াবহ বিষয়। কাজেই তথাকথিত করোনার নামে লকডাউন পুরোটাই অজ্ঞতা, হাস্যকর, স্ববিরোধী তথা আত্মঘাতি, অর্থনীতি বিধ্বংসী, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, জনজীবন বিধ্বস্থকারী তথা দেশ জাতি বিনাশকারী।

পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘তোমরা জালিমও হয়োনা, মজলুমও হয়োনা।’ কাজেই সরকার যাতে জালিম না হয় সে বিষয়ে সরকারকেই সতর্ক থাকতে হবে। সরকারের আদর্শ পুরুষ বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন তিনি মজলুমের পক্ষে। তাই মজলুম জনতার পক্ষ নিয়ে সরকারকে লকডাউন প্রক্রিয়া, মাস্ক প্রথা থেকে চিরতরে সরে আসতে হবে। বঙ্গবন্ধুর ধর্মনিরপেক্ষতার ব্যাখ্যা অনুযায়ী মুসলমানদের সব ইসলামী আমল যথাযথভাবে করতে দিতে হবে। মসজিদে জামায়াত, তারাবীহ এবং মাদ্রাসাসমূহ যথারীতি চালু রাখতে হবে। সবক্ষেত্রে সর্বশক্তিমান আল্লাহ পাক উনার প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস অকৃত্রিমভাবে ব্যক্ত ও পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে। ইনশাআল্লাহ!

ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধূর ‘ইনশাআল্লাহ’ বলার মাঝে সব বিপদ থেকে মুক্তি এবং সব সমৃদ্ধি অর্জনের জন্য ‘সর্বপ্রথম মহান আল্লাহ পাক’ উনার প্রতি মনোনিবেশ করার কথাই ব্যক্ত হয়েছে।

বলাবাহুল্য, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সব নির্বাচনসহ এখন পর্যন্ত সব ধরণের পোষ্টারে সবার উপরে যে বাক্য ছাপায় তা হলো ‘মহান আল্লাহ পাক সর্বশক্তিমান’।

সঙ্গতকারণেই বলতে হয়, সর্বশক্তিমান আল্লাহ পাক উনার প্রতি আস্থা থাকলে তথাকথিত করোনা নিয়ে ভয় নয়। করোনা মুসলমানদের জন্য আতঙ্ক নয়। করোনা নিয়ে ধর্মহীন ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের মতো ইসলামবিরোধী আচরণ ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ করতে পারেনা। করোনায় বিশ্বাস, লকডাউন, মাস্ক ইত্যাদির বিপরীতে ক্ষমতাসীন সরকারকে সর্বাগ্রে সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি নিবেদিত হতে হবে। বিনীত হতে হবে। সমর্পিত হতে হবে। আস্থা রাখতে হবে। পানাহ ও হেফাজত চাইতে হবে। এজন্য পবিত্র কুরআন শরীফ-পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের দিক নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে। বেশি বেশি দোয়া ইস্তেগফারের প্রচারণা ও পৃষ্ঠপোষকতা করতে হবে। সম্মানিত সুন্নতী খাদ্য গ্রহণের জন্য প্রণোদনা দিতে হবে। তাতে শুধু তথাকথিত করোনা নয় বরং সব বাধা-বিপত্তি রোগ-বালাই থেকে মুক্তি লাভ করে সমূহ সমৃদ্ধি লাভ করে অচিরেই সত্যিকারের সোনার বাংলা গড়ে উঠবে। ইনশাআল্লাহ!

ছহিবে পবিত্র সাইয়্যিদিল আইয়াদ শরীফ মামদুহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত আস সাফফাহ আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবতেই সে মহান ও অমূল্য নিয়ামত হাছিল সম্ভব।

খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সবাইকে তা নছীব করুন। (আমীন)

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়