সম্পাদকীয়

সংখ্যা: ২০৭তম সংখ্যা | বিভাগ:

সব প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত দুরূদ ও সালাম।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধানের ৩ নং ধারায় বলা হয়েছে- ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা বাংলা।’ এতদ্বপ্রেক্ষিতে প্রশাসন ও গণজীবনের সর্বত্র রাষ্ট্রভাষা বাংলার মূল্যায়ন ও প্রতিফলনের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। ব্যাপক পৃষ্ঠপোষকতা ও উৎসাহ-উদ্দীপনা দিয়ে থাকে। এমনকী ভাষার মাস হিসেবে ফেব্রুয়ারী মাসকে আলাদা বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করে পালন করা হয়ে থাকে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংবিধানে রাষ্ট্রভাষা বাংলা স্বীকার করার প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রভাষা বাংলার জন্য যদি ফেব্রুয়ারি মাস পালিত হতে পারে, মার্চ যদি স্বাধীনতার মাস হতে পারে, ডিসেম্বর যদি বিজয়ের মাস হতে পারে, তবে প্রশ্ন হল, সংবিধানের ২ (ক) ধারায় উল্লিখিত রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের মাস কোনটি? এবং তার মূল্যায়ন ও প্রতিফলন কোথায়?

প্রসঙ্গত: হাদীছ শরীফ-এ রমাদ্বান মাসকে বলা হয়েছে মহান আল্লাহ পাক উনার মাস। কিন্তু রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের এদেশে আল্লাহ পাক উনার মাসকেও আলাদা মর্যাদার সাথে পালনের যথাযথ অবকাশ নেয়া হলোনা কেন?

কেন রমাদ্বানে ছোলা, মুড়ি, চিনি, সব্জি, মাছ, গোশত সহ সব নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের চরম উর্ধ্বগতি হলো?

কেন রমাদ্বান শরীফ-এর পবিত্রতা রক্ষার্থে সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করা হলো না?

কেন রমাদ্বান শরীফ উপলক্ষে ৯৭ ভাগ মুসলমানের জন্য মওদুদীবাদ, ওহাবীবাদ, কওমীবাদ, খারেজীবাদ, অতিসুন্নীবাদের বিপরীতে ছহীহ ইসলামী শিক্ষার প্রচার-প্রসারের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করা হলো না?

মহান আল্লাহ পাক উনার মাস রমাদ্বান শরীফ উপলক্ষে কেন মসজিদে মসজিদে সরকারিভাবে ইফতারীর ব্যবস্থা করা হলো না?

এদেশে মাত্র ২ ভাগের কম হিন্দুর পূজা-পার্বণে যেরকম অঢেল সরকারী সাহায্য দেয়া হয়, কেন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গরীব-দুঃখী অসহায় মানুষের জন্য নতুন কাপড় ও প্রয়োজনীয় আর্থিক সাহায্যের ব্যবস্থা করা হলো না?

ইসলামের তৃতীয় স্তম্ভ যাকাত। তারপরেও কেন রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের এদেশে যাকাত বোর্ড নামে শতকরা ৯৭ ভাগ মুসলমানের এদেশে একটা দুর্বল, অন্ধ, খোঁড়া প্রতিষ্ঠান রাখা হয়?

কেন যাকাত মন্ত্রণালয় নামে এখানে আলাদা মন্ত্রণালয় করা হচ্ছে না? কেন মওদুদীবাদীদের দিয়ে যাকাত বোর্ড পরিচালিত হচ্ছে? আর যাকাত বোর্ডে চলতে দেয়া হচ্ছে লুটপাট এবং আদায়কৃত যাকাতের অর্থ অনৈসলামিক খাতে ব্যয় করা হচ্ছে?

যাকাত যথাযথভাবে আদায় হলে দেশে কোন গরীব থাকার কথা নয়। যাকাত ঠিকমত আদায় করা হলে বন্যা এবং খরা কোনটাই হয় না। কিন্তু তারপরেও রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের এদেশে যাকাতের সে সুবিধা থেকে ৯৭ ভাগ মুসলমানকে কেন বঞ্চিত করা হচ্ছে?

মহান আল্লাহ পাক উনার মাস পবিত্র রমাদ্বান শরীফ-এর মূল কথা হল- তাক্বওয়া হাছিল। তাহলে কেন গণজীবনের সর্বত্র তাক্বওয়া হাছিলের জন্য রাষ্ট্র পৃষ্ঠপোষকতা করছেনা? কেন রাষ্ট্র বেপর্দা বেশরাসহ সব ধরনের অনৈসলামিক কার্যক্রম নিরুৎসাহিত করছেনা?

দেশের প্রধানমন্ত্রী সুদখোর বলে সমালোচনা করেন। সিন্ডিকেটের সমালোচনা করেন। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আইনের কঠোর প্রয়োগ করলে ব্যবসায়ীরা দ্রব্য সরবরাহ বন্ধ করে দিবে বলে আশঙ্কা করেন। ‘উৎসবের সময় সবাই কমায়, আর আমাদের দেশে সবাই দাম বাড়ায়’ বলে হতাশা প্রকাশ করেন! কিন্তু এতসব ভয়, আশঙ্কা, হতাশা, সমালোচনার সমাধান কী? তা কী তিনি বা তার সরকার ভেবে দেখেছেন?

এই রমাদ্বান শরীফ থেকে কী তারা তার নগদ নছীহত খুঁজে পান না? যে রোযা রাখে সে যত গুনাহগারই হোক, ঘরে একাকী থাকেন, পুকুরে ডুব দেন তারপরেও তিনি পানি পান করেন না। অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস তার মাঝে কাজ করে। আল্লাহভীতি তার মধ্যে কাজ করে।

সুতরাং এটা খুব গুছিয়ে বলার দরকার নেই যে ৯৭ ভাগ মুসলমানের এদেশে, নাগরিকদের যদি দুর্নীতি থেকে মুক্ত করতে হয়, সৎ ও দেশপ্রেমিক নাগরিক করতে হয় তবে তাদের মাঝে ইসলামী মূল্যবোধ বিস্তারের কোনো বিকল্প নেই। মূলত: সেটাই একমাত্র কার্যকরী পন্থা।

সুতরাং এ বিষয় অনুধাবনে ও প্রতিফলনে রাষ্ট্রযন্ত্র ও সরকার যত দ্রুত এগিয়ে আসবে ততই সরকার ও দেশবাসীর জন্য কল্যাণকর।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম দাবীদাররা কখনও চিন্তা করেছেন কী যে ইসলাম কাদের ওসীলায় আমাদের পর্যন্ত পৌঁছলো? মাহে রমাদ্বান শরীফ-এর ১৭ই তারিখ, উম্মুল মু’মিনীন হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম, উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম, আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্যতম ইসলামের চতুর্থ খলীফা আসাদুল্লাহিল গালিব হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের সুমহান বিছাল শরীফ। পাশাপাশি ঐতিহ্যমন্ডিত, বেমেছাল ফযীলতযুক্ত বদর জিহাদ দিবস।

কিন্তু রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের এদেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে উনাদের স্মরণ, মূল্যায়ন ও প্রতিফলনের প্রচেষ্টা বা পৃষ্ঠপোষকতা কোথায়?

বলাবাহুল্য, এক্ষেত্রে রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের দেশ ব্যর্থ ও বিপর্যস্ত হতে চলছে। তা অস্বীকার করার উপায় কোথায়? কিন্তু ৯৭ ভাগ মুসলমান তা আদৌ মেনে নেবে কী?

মূলত: ৯৭ ভাগ মুসলমানের ঈমানের অনুভূতি, রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের দেশের সরকারকে টিকে থাকার স্বার্থেই অনিবার্য কারণে অনুভব করতে হবে। বাস্তবায়ন করতে হবে।

মূলত: ইসলামী অনুভূতি ও জজবা মহান আল্লাহ পাক উনার দান। এটা আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে কুদরতীভাবে ও গায়েবী মদদে আসবে। কিন্তু তার জন্য দরকার আমলে ছলেহ করা তথা খালিছ আল্লাহওয়ালা হওয়া। আর এ জন্য যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী উনার নেক ছোহবতেই সে মহান নিয়ামত হাছিল সম্ভব।

মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের তা নছীব করু, কবুল ও কামিয়াবী দান করুন। (আমীন)

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়