সম্পাদকীয়

সংখ্যা: ২০৮তম সংখ্যা | বিভাগ:

লা-শরীক আল্লাহ পাক তিনি সব নিয়ামত, হামদ ও মুলকিয়তের মালিক। আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত দুরূদ ও সালাম। যিনি পরিপূর্ণ দ্বীন নিয়ে পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছেন।
আখিরী উম্মতের জন্য হজ্জ ফরয হিসেবে গণ্য। বদনী ও মা’লী ইবাদতের সমন্বয়ে জামিউল ইবাদত হজ্জের মত আলাদা বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত একটি ফরয আদায় করতে গেলেও এখন তুলতে হচ্ছে ছবি। কিন্তু কুরআন শরীফ-এর তাফসীর এবং শত শত হাদীছ শরীফ-এর প্রেক্ষিতে এ কথা স্বতঃসিদ্ধ যে, ‘ইসলামের দৃষ্টিতে প্রাণীর ছবি তোলা, রাখা, দেখা, আঁকা হারাম।’
অথচ নামধারী মাওলানারা বর্তমান যুগের দোহাই দিয়ে বলছে যে, ‘বর্তমান যুগে মিডিয়ার প্রভাব সর্বগ্রাসী। এ যুগে ছবিকে নাজায়িয মানা, টিভি চ্যানেলকে অস্বীকার করার অর্থ যুগ থেকে পিছিয়ে পড়া। শুধু পিছিয়ে পড়াই নয়, ইসলামের প্রচার-প্রসারের কাজ থেকে বর্ণনাতীতভাবে পিছিয়ে যাওয়া।”(নাঊযুবিল্লাহ)
উল্লেখ্য, তাদের মতের প্রেক্ষিতে আজ ইন্টারনেটে প্রায় হাজার হাজার তথাকথিত ইসলামী ওয়েব সাইট, ইসলামী টিভি চ্যানেল, রেডিও, ম্যাগাজিন, ইসলামিক সেন্টার তথা প্রকাশনালয় রয়েছে যারা ছবির মাধ্যমে ইসলামের প্রচার-প্রসার করছে বলে দাবী করছে।
কিন্তু কথা হলো যে, তাদের এ প্রচারণা অমুসলিম বিশ্বের ক’জনকে মুসলমান করতে পেরেছে? প্রায় তিনশ’ কোটি মুসলমানের ক’জনের অন্তরে ঈমানী ও আমলী জজ্বা তৈরী করতে পেরেছে?
বরং ছবিকে জায়িয বলার প্রেক্ষিতে আজ সিনেমা, নাটক, ব্যান্ড শো, ফ্যাশন শো, র্যা গডে, থার্টি ফার্স্ট নাইট কালচার ইত্যাদির গ্যাড়াকলে পড়ে এখন প্রায় তিনশ’ কোটি মুসলমানের ক’জন হাক্বীক্বী মুসলমান তাই খুঁজে বের করা কঠিন কষ্টসাধ্য কাজ হয়ে পড়েছে।
তাহলে ছবিভিত্তিক এই প্রচারণার কী গুরুত্ব থাকতে পারে? যেমন, হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, æআখিরী যামানায় মসজিদগুলো হবে নকশাখচিত, কারুকার্যমণ্ডিত, মনোলোভা, সুরম্য অট্টালিকা; কিন্তু তা হবে অন্তঃসারশূন্য, আমলহীন।” অন্য হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, æযে ঘরে ছবি থাকে সে ঘরে রহমতের ফেরেশ্তা থাকেনা।”অর্থাৎ ছবি মাধ্যম, রহমতশূন্য মাধ্যম। এ মাধ্যমে কাজ করলে রহমতের পরিবর্তে জহমত হাছিলই অনিবার্য। ছবির মাধ্যমে ইসলাম প্রচারের প্রেক্ষিতে বর্তমান বিরাজমান অবস্থা তারই উদাহরণ।
“বর্তমান যুগে ইসলাম প্রচারে ছবির ব্যবহার অত্যাবশ্যকীয়”- এ বক্তব্যধারীরা আদৌ মুসলমান কি-না ইসলামের নিরিখে তাই বিবেচ্য। কারণ, ছবি ব্যবহারকারীরা মনে করছে যে, দৃশ্যমান মাধ্যম ছাড়া ইসলামের প্রচার ফলপ্রসূ হয়না।’ অথচ ইসলাম এমন অন্তর্নিহীত শক্তিসম্পন্ন যে, দৃশ্যতা এখানে গৌণ। অদৃশ্যতাই এখানে মুখ্য। এজন্য কুরআন শরীফ-এর একেবারে প্রথমেই মুসলমানের পরিচয় দিতে গিয়ে বলা হয়েছে, “যারা অদৃশ্যের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে।”(সূরা বাক্বারা : আয়াত শরীফ ৩)
স্মর্তব্য, ইসলাম প্রচারের মালিক আল্লাহ পাক। হযরত ইবনে আবী হাতিম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেন যে, যখন হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম উনাকে হজ্জ ফরয হওয়ার কথা ঘোষণা করার আদেশ দেয়া হয় তখন তিনি আল্লাহ পাক উনার কাছে আরয করেন, “এখানে তো জনমানবহীন মরু প্রান্তর। ঘোষণা শোনার মত কেউ নেই।’ আল্লাহ পাক তিনি বললেন, ‘আপনার দায়িত্ব শুধু ঘোষণা দেয়া, সারাবিশ্বে পৌঁছানোর দায়িত্ব আমার।” বর্ণনা রয়েছে, অতঃপর হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম আবু কুবায়স পাহাড়ে উঠে ঘোষণা দেন, “হে মানব সম্প্রদায়! তোমাদের রব উনার নিজের ঘর তৈরী করেছেন। তোমাদের এই ঘরের হজ্জ ফরয। তোমরা তোমাদের রব উনার আদেশ পালন কর।’
রেওয়ায়েতে বলা হয়েছে যে, হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম উনার এই আওয়াজ আল্লাহ পাক তিনি স্বয়ং বিশ্বের কোণে কোণে পৌঁছে দেন এবং শুধু তখনকার জীবিত মানুষ পর্যন্তই নয় বরং ভবিষ্যতে ক্বিয়ামত পর্যন্ত যত মানুষ আগমনকারী, সবার কানে তথা আলমে আরওয়াহ্ পর্যন্ত এ আওয়াজ পৌঁছে দেয়া হয়। হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম উনার আওয়াজের জাওয়াবই হচ্ছে, ‘লাব্বাইকা বলার আসল ভিত্তি।” (তাফসীরে কুরতুবী, তাফসীরে মাযহাবী)
অতএব, প্রতিভাত হচ্ছে যে, দৃশ্যমান, ছূরতান বা সাধারণ দুনিয়াবী অবস্থা ও মানসিকতা নিয়ে চলা ঠিক নয়। বিরাজমান দুনিয়াবী অবস্থা কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এর প্রতিকূল থাকলেও হক্বের উপর ইস্তিকামত থাকতে হবে। তখন তা মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশিত মতে, পছন্দনীয় পথে হচ্ছে বলে গৃহীত হবে। তখন তার জিম্মাদারী স্বয়ং আল্লাহ পাক তিনি নিবেন। তিনি কুদরতী সাহায্য করবেন। যা সব মানবীয় প্রচেষ্টার বহুগুণ ঊর্ধ্বে। রাতে মানুষ লক্ষ-কোটি বাতি জ্বালায় আর সকালে আল্লাহ পাক তিনি উনার এক সূর্য দিয়ে সারাবিশ্বকে আলোয় ঝলমল করে দেন।
প্রচলিত রাজনৈতিক প্রক্রিয়া যে ইসলাম নয়- একথা রাজনীতিকরাও স্বীকার করেন। অবস্থার প্রেক্ষিতে কেউ কেউ মনে করেন বর্তমান রাজনীতি একটা অসভ্যনীতি। আর কমপক্ষে সবাই প্রচলিত রাজনীতিকে একটা বিতর্কিত বিষয় বলে ব্যক্ত করেন এবং এরকম বিতর্কিত ক্ষেত্রে ইসলামকে টেনে আনা বা ব্যবহার করার ক্ষেত্রে ঘোর আপত্তি জানান। অর্থাৎ প্রচলিত রাজনীতির পথ ও প্রক্রিয়া আর ইসলামী আন্দোলনের যোগ্যতা ও কর্মসূচী যে সম্পূর্ণ আলাদা সে কথা সাধারণেও বুঝেন। কিন্তু চরম স্বার্থবাদিতার মোহে প্রচলিত রাজনীতির পঙ্কিল পথেই চলছে ইসলামের নামধারী দলগুলো।
বলাবাহুল্য, এসব ধর্মব্যবসায়ীদের আমলহীনতার কারণেই ইসলামের আদর্শ মুসলমানগণের মধ্যে সঞ্চালিত হয়নি। দুর্নীতি, হত্যা ও সন্ত্রাস, ক্ষমতার লোভ, একগুয়েমি এসব যে ইসলামের দৃষ্টিতে মহা নিন্দিত সে মূল্যবোধ জনগণের মাঝে জাগরিত হয়নি। যার পরিণতি আজকের রাজনৈতিক সহিংসতা, অরাজকতা আর অস্থিরতা। আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, “যমীনে যত ফিতনা-ফ্যাসাদ সব মানুষের হাতের কামাই।” কাজেই সাধারণ ধর্মপ্রাণদের মাঝে ধর্মীয় চেতনা জাগরুক করার জন্য চাই ধর্ম ব্যবসায়ীদের নির্মূলকরণ। আর এজন্য যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম উনার নেক ছোহবত ও ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহর বিকল্প নেই। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সবাইকে তা নছীব করুন। (আমীন)

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়