সম্পাদকীয়

সংখ্যা: ২১০তম সংখ্যা | বিভাগ:

সময়ের মালিক আল্লাহ পাক উনার জন্যই সব প্রশংসা। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য সকল ছলাত সালাম।

সময়ের পরিক্রমায় মুহররমের আবর্তনে আরেকটি নতুন হিজরী সন আমাদের মাঝে উপস্থিত।

সৃষ্টির শুরু থেকেই গণনায় মাসের সংখ্যা বারটি বলে, মহান রব তায়ালা নির্ধারিত করে দিয়েছেন। এবং এক্ষেত্রে মুহররমুল হারাম হিজরী সালের প্রথম মাস বা পয়লা মুহররম নতুন হিজরী সনের প্রথম দিন। তাই মুহররমের আগমন মুসলমানদের জন্য যেমন বিগত এক বৎসরের জিন্দেগীর মূল্যায়নের অবকাশ রাখে তেমনি প্রেরণা দেয় পরিশুদ্ধ চেতনায় নতুন সালে পদার্পণ করার দীপ্ত অভিপ্রায়ের ও নব চেতনার।

উল্লেখ্য পবিত্র আশুরার দিবসে সবচেয়ে হৃদয়বিদারক, মর্মস্পর্শী ও ব্যথাহত বিষয়টি হলো- হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কলিজার টুকরা, নয়নের তারা, প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র, হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার শাহাদাত বরণ। এ শাহাদাতের ঘটনা একদিকে যেমন আমাদের ভারাক্রান্ত করে, ন্যায়ের পথে অটল থাকার ও ত্যাগের মহান আদর্শে উজ্জীবিত করে, তেমনি অপরদিকে কিছু কিছু ফায়দালোভী, বিভ্রান্ত বা জাহিল সম্প্রদায়ের বিকৃত ব্যাখ্যা যারপর নাই বিস্মিত, আহত ও ক্ষুব্ধ করে তোলে। যারা চরম জেহালতের সাথে এই মন্তব্য করে যে, “হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম তিনি গণতন্ত্রের জন্য শাহাদাত বরণ করেছেন।” (নাউযুবিল্লাহ্)

বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, গণতন্ত্রে জনগণই সকল সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক। যদিও তথাকথিত ইসলামিক দলগুলো প্রকাশ্যে দাবি করে যে, তারা পাশ্চাত্য গণতন্ত্র এবং ‘সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ’, এ কথায় তারা বিশ্বাসী নয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই বিশ্বাসই তারা তাদের কাজে প্রতিফলিত করে। যার প্রমাণ হচ্ছে- তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায়, জনগণকে ভোট দানের মালিক করে সে সার্বভৌম ক্ষমতারই অধিকারী করে দেয়া হয়। এ ক্ষমতা অবিভাজ্য যা প্রয়োগে কোন দায়বদ্ধতা তথা জবাবদিহিতা থাকেনা। আর স্বেচ্ছাচারী এই ক্ষমতা প্রয়োগের ফলেই গণতন্ত্রে কোন সরকার গঠিত হয় বা পতিত হয়। এবং এভাবেই গণতন্ত্রে জনগণ, তাদের সার্বভৌম ক্ষমতার প্রয়োগ ঘটিয়ে থাকে। অতএব স্মরণীয়, নির্বাচনে অংশগ্রহণই হচ্ছে-“জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস”- এ বিশ্বাসে স্বীকৃতি জ্ঞাপন। ইসলামের দৃষ্টিতে যা কুফরী এবং ঈমান হারাবার প্রত্যক্ষ কারণ।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য অধুনা ইসলামের নামে গণতন্ত্রীরা এ ধারণা প্রবর্তনে প্রচেষ্টা যে, ইসলামের দোহাই দিয়ে নির্বাচন অস্বীকার করার অর্থ হল সন্ত্রাসবাদ সমর্থন করা। বিষয়টি যুগপৎ জেহালতি ও প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়। বরং সত্য কথা এই যে, ইসলাম যেখানে নির্বাচন নামক ফাসাদই সমর্থন করেনা সেখানে নির্বিচারে হত্যা, বোমা হামলা, মৌলবাদ তথা সন্ত্রাসবাদ সমর্থন করে কি করে?

তথাকথিত “ইসলামী দলের নির্বাচনী প্রচারণা”যে কতবড় প্রতারণা তা বোঝার জন্য সামান্য ফিকিরই যথেষ্ট। তারা যদি নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভও করে তবে তাদেরকে প্রথমে বাংলাদেশের প্রচলিত সংবিধানকে সমুন্নত রাখার পক্ষে শপথ নিতে হবে। সেই শপথ নেয়ার পর তা ভঙ্গ করে তথাকথিত ইসলামী খিলাফতের পক্ষে এবং প্রচলিত সংবিধানের বিপক্ষে তারা কাজ করবেন। কিন্তু সৃষ্টি যেমন সৃষ্টিকর্তাকে ধ্বংস করতে পারেনা তেমনি উল্লেখ্য সংবিধানের সৃষ্টি হল পার্লামেন্ট। কাজেই গণতান্ত্রিক ধারণায় পার্লামেন্ট কখনো সংবিধানকে ধ্বংস করতে পারেনা। সে কারণে প্রচলিত গণতন্ত্রের নির্বাচনে কখনই ইসলাম প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়না। যেমনটি সম্ভব হয়নি তুরস্কে তথা আলজেরিয়ায়, তিউনিসিয়ায় এবং অতি সম্প্রতি মরক্কোয়।

মূলত এরূপ নামধারী ইসলামী দলসমূহ যারা গণতন্ত্র, নির্বাচন ইত্যাদিসহ ইহুদী-নাছারাদেরই অনুসরণ করে তারা নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বারবার করুণভাবে ব্যর্থ ও লাঞ্ছিত হয়ে আসলে ইসলামের চরম অবমাননা ছাড়া আর কিছুই করতে পারেনা, আর এটাই তাদের অনিবার্য পরিণতি। কারণ যে পথ ইসলামসম্মত নয়, সে পথে মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত, কামিয়াবী আসা আকাশ কুসুম কল্পনা মাত্র। আর তাই আজ অবধি সারা বিশ্বে কোন দেশে নির্বাচনের মাধ্যমে ইসলামী সরকার হয়নি এবং হবেও না।

ফিকিরযোগ্য যে, সকল ইসলামী দল যদি একতাবদ্ধভাবে ইসলামের এই আদর্শ প্রচারে প্রচেষ্ট হয় যে, ইসলামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন জায়িয নেই তাহলে শতকরা ৯৭ ভাগ মুসলমানের এই দেশে আর কোন নির্বাচনই অনুষ্ঠিত হতে পারতো না। ইসলাম প্রিয় মুসলমানগণ নির্বাচন বয়কট করতেন এবং পাশ্চাত্য গণতন্ত্র ও নির্বাচন পর্যুদস্ত হতো এবং খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়ার পথ প্রশস্ত হতো। কিন্তু তথাকথিত ইসলামী দলগুলো সর্বদাই জিহালতে মত্ত থাকায় কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এর এই সঠিক বুঝ উপলব্ধিতে ন্যক্কারজনকভাবে ব্যর্থ হচ্ছে আর মানুষকে বিভ্রান্ত করছে এবং ইসলামের অবমাননা করছে।

অতএব, আজ নতুন হিজরী সনের শুরুতে এসব মতলববাজ, ধর্মব্যবসায়ী, বাচাল, মুনাফিক এবং জাহিল, বিদয়াতী ও গোমরাহ উলামায়ে ছূ’দের সম্পর্কে আমাদের সাবধান ও সচেতন হতে হবে। তাদেরকে প্রতিরোধ করার দীপ্ত শপথ নিতে হবে এবং মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার স্বতঃস্ফূত অনুসারী হতে হবে। তাতে করেই মহান আল্লাহ পাক উনার রহমতে আমাদের কামিয়াবীর পথ প্রশস্ত হবে ইনশাআল্লাহ। (আমীন)

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়