সম্মানিত মাহে শা’বান শরীফ এবং উনার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

সংখ্যা: ২৫৩তম সংখ্যা | বিভাগ:

-আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ শুয়াইব আহমদ

খ্বালিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি যেসব সম্মানিত দিনে খাছভাবে রহমত, বরকত, সাকীনা, সালাম মাগফিরাত, নাজাত, নিয়ামত, কামিয়াবী, কুরবত, সন্তুষ্টি-রেযামন্দি মুবারক বান্দাকে প্রদান করেন উক্ত দিনসমূহকে আইয়্যামুল্লাহ বলা হয়।

এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وذكرهم بايام الله ان فى ذالك لايات لكل صبار شكور

অর্থ: আপনি তাদেরকে (উম্মতকে) মহান আল্লাহ পাক উনার দিনসমূহ স্মরণ করিয়ে দিন, নিশ্চয়ই এর মধ্যে ছবরকারী ও শোকর গোযার প্রত্যেক বান্দা-বান্দীদের জন্য নিদর্শণাবলী রয়েছে অর্থাৎ ইবরত-নছীহত অতঃপর নিয়ামত ও কামিয়াবী হাছিলের বিষয় রয়েছে। (পবিত্র সূরা আম্বিয়া শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৫)

অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ উনার বাস্তবতা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে লক্ষ্য করা যায়, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত আইয়্যামুল্লাহ দ্বারা ভরপুর মাহে রমাদ্বান শরীফ আসার পূর্বেই উক্ত মাস উনার ফাযায়িল-ফযীলত, বুযুর্গী-সম্মান সম্পর্কে উম্মতকে অবহিত করতেন। যেমন ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عن حضرت سلمان الفارسى رضى الله تعالى عنه قال خطبنا رسول الله صلى الله عليه وسلم فى اخر يوم من شعبان فقال يايها الناس قد اظلكم شهر عظيم شهر مبارك شهر فيه ليلة خير من الف شهر جعل الله صيامه فريضة وقيام ليله تطوعا من تقرب فيه بخصلة من الخير كان كمن ادى فريضة فيما سواه ومن ادى فريضة فيه كان كمن ادى سبعين فريضة فيما سواه وهو شهر الصبر والصبر ثوابه الجنة وشهر المواسة وشهر يزاد فيه رزق المؤمن من فطر فيه صائما كان له مغفرة لذنوبه وعتق رقبته من النار وكان له مثل اجره من غير ان ينتقص من اجره شىء قلنا يا رسول الله صلى الله عليه وسلم ليس كلنا نجد ما نفطربه الصائم فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم يعطى الله هذا الثواب من فطر صائما على مذقة لبن او تمرة او شربة من ماء ومن اشبع صائما سقاه الله من حوضى شربة لايظمأ حتى يدخل الجنة وهو شهر اوله رحمة واوسطه مغفرة واخره عتق من النار ومن خفف عن مملوكه فيه غفر الله له واعتقه من النار.

অর্থ: “হযরত সালমান ফারসী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শা’বান মাসের শেষ তারিখে আমাদের উদ্দেশ্যে খুৎবা দান করতঃ ইরশাদ মুবারক করেন, হে মানুষেরা! নিশ্চয়ই এক মহান ও কল্যাণময় মাস তোমাদের উপর ছায়া বিস্তার করেছে। এটা এমন এক মাস যাতে এমন একটি রাত্রি রয়েছে, যা হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। মহান আল্লাহ পাক তিনি এ সম্মানিত মাসে পবিত্র রোযাসমূহ (তোমাদের জন্য) ফরয করেছেন এবং রাত্রিতে নামায আদায় করাকে নফল (সুন্নত) করেছেন। যে ব্যক্তি এ মাসে মহান আল্লাহ পাক উনার নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে একটি নফল ইবাদত করলো সে যেন অন্য মাসে একটি ফরয ইবাদত সম্পন্ন করলো। আর যে ব্যক্তি এ মাসে একটি ফরয ইবাদত সম্পন্ন করলো সে যেন অন্য মাসে সত্তরটি ফরয ইবাদত সম্পন্ন করলো। এটা ধৈর্যের মাস। আর ধৈর্য এমন একটি গুণ যার প্রতিদান হলো “জান্নাত”। এটা পারস্পরিক সহানুভূতির মাস। এটা এমন মাস যার মধ্যে মু’মিনের রিযিক বৃদ্ধি করা হয়। এ মাসে যে ব্যক্তি একজন রোযাদারকে ইফতার করাবে সেটা তার গুণাহসমূহের ক্ষমা স্বরূপ হবে এবং তার জন্য জাহান্নামের আগুন হতে মুক্তির কারণ হবে এবং তাকে উক্ত রোযাদারের সমান ছাওয়াব প্রদান করা হবে। অথচ রোযাদারের ছাওয়াব হতে বিন্দুমাত্রও কমানো হবেনা। আমরা বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমাদের মধ্যে প্রত্যেক ব্যক্তি তো এমন সামর্থ রাখেননা, যা দ্বারা তিনি কোন রোযাদারকে ইফতার করাতে পারেন? তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি এই ছাওয়াব ঐ ব্যক্তিকেও প্রদান করবেন, যে ব্যক্তি কোন রোযাদারকে এক চুমুক দুধ দ্বারা অথবা একটি খেজুর দ্বারা অথবা এক ঢোক পানি দ্বারা ইফতার করায়। আর যে ব্যক্তি কোন রোযাদারকে তৃপ্তির সহিত আহার করাবে মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে আমার হাউজে কাওছার হতে পানি পান করাবেন ফলে বেহেশতে প্রবেশ করা পর্যন্ত সে কখনো তৃষ্ণার্ত হবে না। এটা এমন এক মাস যার প্রথম ভাগ রহমত, মধ্যম ভাগ ক্ষমা এবং শেষ ভাগ জাহান্নাম হতে নাজাত হাছিলের। যে ব্যক্তি এ মাসে আপন গোলাম-বাঁদী বা অধীনস্তদের কর্মভার হালকা করে দিবে মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে মাফ করে দিবেন এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিবেন।” সুবহানাল্লাহ! (বায়হাক্বী শরীফ, মিশকাত শরীফ)

স্মরণীয় যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার নূরানী সম্মানিত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের বিলাদতী শান মুবারক বা বিছালী শান মুবারক অথবা উনাদের কোন বিশেষ শান মুবারক প্রকাশের দিনসমূহই হচ্ছে সম্মানিত আইয়্যামুল্লাহ। সুবহানাল্লাহ!

অতএব, মাহে রমাদ্বান শরীফ উনার ১লা তারিখ, ৩ তারিখ, ৬ তারিখ, ৯ তারিখ, ১৭ তারিখ ও ১৮ তারিখ দিনসমূহ সম্মানিত আইয়্যামুল্লাহ হিসেবে বিশেষভাবে উদযাপন করতে হবে। এছাড়া ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯ তারিখ রাত্রিসমূহ সজাগ থেকে ইবাদত-বন্দিগী করে অতিবাহিত করতে হবে।

মাহে যিলহজ্জ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে মুহররমুল হারাম ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে রবীউল আউয়াল শরীফ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে রবীউছ ছানী ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে জুমাদাল উখরা ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা