সম্মানিত মুহররম শরীফ ও সম্মানিত ছফর শরীফ মাস এবং উনাদের প্রাসঙ্গিক আলোচনা -আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ শুয়াইব আহমদ

সংখ্যা: ২৭৫তম সংখ্যা | বিভাগ:

হিজরী সনের প্রথম মাস হচ্ছে সম্মানিত মুহররমুল হারাম শরীফ এবং দ্বিতীয় মাস হচ্ছে সম্মানিত ছফর শরীফ। সম্মানিত মাস দু’টি ফযীলতপূর্ণ হওয়ার ক্ষেত্রে মূল কারণ হচ্ছেন মহাসম্মানিত রসূল, সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রকাশিত ও সংঘটিত শান মুবারকসমূহ সংযুক্ত থাকা। সুবহানাল্লাহ!

উল্লেখ্য, যিনি খ্বালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার মনোনীত ও পছন্দনীয় বান্দা উনাদের সাথে সংশ্লিষ্ট দিবস সমূহের নাম আইয়্যামুল্লাহ শরীফ। উক্ত দিবসসমূহ পালন করার ব্যাপারে পবিত্র সূরা ইবরাহীম শরীফ উনার ৫নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَذَكِّرْهُمْ بِأَيَّامِ اللهِ ۚ إِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّكُلِّ صَبَّارٍ شَكُوْرٍ

অর্থ:  (আমার মহাসম্মানিত হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি তাদেরকে (উম্মতদেরকে) মহান আল্লাহ পাক উনার বিশেষ দিনসমূহের কথা স্মরণ করিয়ে দিন। নিশ্চয়ই এতে প্রত্যেক ছবরকারী এবং শোকরগোযার ব্যক্তিদের জন্য নিদর্শনাবলী রয়েছে।

অর্থাৎ উক্ত দিবসসমূহে মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার মহাসম্মানিত রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের তরফ থেকে খাছ রহমত ও নিয়ামত মুবারক নাযিল করা হয়।

স্মরণীয় যে, মহান আল্লাহ পাক উনার মনোনীত ও পছন্দনীয় বান্দা উনাদের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন যথাক্রমে সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং উনার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা। অতঃপর সকল হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনারা। অতঃপর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা। অতঃপর হযরত তাবিয়ীন, ইমাম-মুজতাহিদীন, আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা।

উনাদের পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবসসমূহ, পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ দিবসসমূহ, পবিত্র নিসবতে আযীমাহ শান মুবারক প্রকাশ দিবসসমূহ এবং বিশেষ ঘটনা ও শান মুবারক প্রকাশ দিবসসমূহ পবিত্র আইয়্যামুল্লাহ শরীফ উনাদের অন্তর্ভুক্ত। সুবহানাল্লাহ!

তবে বলার অপেক্ষা রাখে না যে, সর্বশ্রেষ্ঠ আইয়্যামুল্লাহ শরীফ হচ্ছেন সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সাথে সংশ্লিষ্ট আইয়্যামুল্লাহ শরীফ দিবসসমূহ। কেননা সৃষ্টি কায়িনাতের মধ্যে উনারাই হচ্ছেন সর্বশ্রেষ্ঠ ও সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তিত্ব। উনাদের উসীলায় কায়িনাত সৃষ্টি হয়েছে, অস্তিত্ব লাভ করেছে, টিকে আছে, নিরাপত্তা ও নিয়ামত লাভ করেছে, করছে ও ক্বিয়ামত পর্যন্ত এমনকি ক্বিয়ামতের পরেও অনন্তকাল ধরে করতেই থাকবে। সুবহানাল্লাহ!

কাজেই, উম্মত তথা কায়িনাতবাসীর জন্য অপরিহার্য কর্তব্য হচ্ছে, উনাদের সংশ্লিষ্ট উক্ত পবিত্র আইয়্যামুল্লাহ শরীফ দিবসসমূহ পালন করা আর সে লক্ষ্যেই আলোচ্য প্রবন্ধে উল্লেখিত মাসসমূহে প্রকাশিত পবিত্র আইয়্যামুল্লাহ শরীফ দিবসসমূহ উল্লেখ করা হলো।

১ মুহররমুল হারাম: আমিরুল মুমিনীন, খলীফায়ে ছালিছ, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার খিলাফত মুবারক গ্রহণ দিবস।

২ মুহররমুল হারাম: সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ রসূলিল্লাহ যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ দিবস।

৫ মুহররমুল হারাম:

* সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আত তাসিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশ দিবস।

* সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু উম্মিল উমাম আলাইহাস সালাম উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশ দিবস।

৮ মুহররমুল হারাম: সাইয়্যিদাতুনা হযরত বানাতু রসূল আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ দিবস।

১০ মুহররমুল হারাম:

* সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম উনার শাহাদাত মুবারক তথা বিছালী শান মুবারক প্রকাশ দিবস।

* পবিত্র আশূরা মিনাল মুহররমুল হারাম শরীফ দিবস।

১২ মুহররমুল হারাম: পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’দাদ শরীফ অর্থাৎ ১২ই শরীফ দিবস। এ দিন কোটি কোটি কণ্ঠে পবিত্র মীলাদ শরীফ অনুষ্ঠিত হয়।

১৬ মুহররমুল হারাম: সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছানিয়াহ আশার আলাইহাস সালাম উনার পবিত্রতম বিছালী শান মুবারক প্রকাশ দিবস।

২৩ মুহররমুল হারাম: নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মুমিনীন আত তাসিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার নিসবাতে আযীমাহ শরীফ সংঘটিত হওয়ার দিবস।

২৫ মুহররমুল হারাম: * সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস সাদিসাহ আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবস।

* নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মুমিনীন আল আশিরাহ আলাইহাস সালাম উনার নিসবাতে আযীমাহ শরীফ সংঘটিত হওয়ার দিবস।

* সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রাবি’ আলাইহিস সালাম উনার শাহাদাত মুবারক তথা বিছালী শান মুবারক প্রকাশ দিবস।

২৬ মুহররমুল হারাম: সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম ইবনু যিন নূর আল আউওয়াল আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবস।

৩ ছফর শরীফ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মুমিনীন আল হাদিয়াহ আশার আলাইহাস সালাম উনার নিসবাতে আযীমাহ শরীফ সংঘটিত হওয়ার দিবস।

৫ ছফর শরীফ: সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবস।

৭ ছফর শরীফ: সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাবি’ আলাইহিস সালাম উনার বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ।

১২ ছফর শরীফ: পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’দাদ শরীফ ১২ই শরীফ দিবস। অর্থাৎ ১২ই শরীফ দিবস। এ দিন কোটি কোটি কণ্ঠে পবিত্র মীলাদ শরীফ অনুষ্ঠিত হয়।

২৪ ছফর শরীফ: নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মুমিনীন আছ ছানিয়াহ আশার আলাইহাস সালাম উনার নিসবাতে আযীমাহ শরীফ সংঘটিত হওয়ার দিবস।

শেষ ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার): পবিত্র আখিরী চাহার শোম্বাহ শরীফ দিবস।

২৭ ছফর শরীফ: সিবত্বতু রসূল সাইয়্যদাতুনা হযরত বিনতু যিন নূর আলাইহাস সালাম উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশ দিবস।

২৮ ছফর শরীফ: * সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী আলাইহিস সালাম উনার শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশ দিবস। * ক্বইয়্যূমে আউওয়াল হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিছাল শরীফ দিবস।

প্রতিভাত যে, পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে পবিত্র আইয়্যামুল্লাহ শরীফ সমূহ বর্ণিত হয়েছে এবং সেই সাথে পবিত্র আইয়্যামুল্লাহ শরীফ সমূহ পালনে বেমেছাল ফযীলত, নিয়ামত, রহমত, বরকত, সাকীনা, মাগফিরাত, নাজাত, শাফায়াত, রেযামন্দী, কুরবত মুবারক ইত্যাদি হাছিলের সুসংবাদ দেয়া হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!

পক্ষান্তরে যে সমস্ত দিবস  কাফির, মুশরিক, মুনাফিকরা তাদের ধর্মীয় ও কুফরী মতবাদ পালনের জন্য নির্ধারণ করেছে এবং করে থাকে সেগুলি পালন করা সম্মানিত মুসলমান উনাদের জন্য সম্পূর্ণরূপে নাজায়িয, হারাম, শিরক ও কুফরের অন্তর্ভুক্ত।

যেমন, পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

اِنَّ شَرَّ الدَّوَابِّ عِندَ اللهِ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا فَهُمْ لَا يُؤْمِنُوْنَ

অর্থ: “নিশ্চয়ই সমস্ত প্রাণীর মাঝে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট কাফিররাই নিকৃষ্ট, যারা ঈমান আনেনি।” (পবিত্র সূরা আনফাল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৫)

অন্যত্র ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

وَلَا تُطِعِ الْكَافِرِيْنَ وَالْـمُنَافِقِيْنَ

অর্থ: কাফির ও মুনাফিকদের অনুসরণ করো না। (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ১)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ

অর্থ:  “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি যে স¤প্রদায়ের সাথে মিল রাখে, সে তাদের দলভুক্ত অর্থাৎ তার হাশর-নশর তাদের সাথেই হবে।” (সুনানে আহমদ শরীফ, সুনানে আবূ দাউদ শরীফ)

সম্মানিত মুসলমান উনাদের জ্ঞাতার্থে কাফির, মুশরিক, মুনাফিকদের পালিত কতিপয় দিবস এখানে উল্লেখ করা হলো:

পহেলা বৈশাখ, পহেলা জানুয়ারী, থার্টি ফাস্ট নাইট, পথ শিশু দিবস, বিশ্ব ভালবাসা দিবস, বিশ্ব ক্যান্সার দিবস, আন্তর্জাতিক শহীদ দিবস, বিশ্ব স্কাউট দিবস, আন্তর্জাতিক নারী দিবস, বিশ্ব নাট্য দিবস, বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস, শ্রমিক দিবস, বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস, বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ দিবস, বিশ্ব আদিবাসী দিবস, আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস, বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস, বিশ্ব খাদ্য দিবস, জাতিসংঘ দিবস, বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস, বিশ্ব এইডস দিবস, বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস ইত্যাদি।

উক্ত প্রতিটি দিবস কাফির, মুশরিক মুনাফিকদের তর্জ-তরীক্বায় পালিত হয়ে থাকে। যা সম্মানিত মুসলমান উনাদের জন্য পালন করা জায়িয নেই। যে পালন করবে তাকে তওবা করে ফিরে আসতে হবে। অন্যথায় কাট্টা কাফিরদের সঙ্গী হয়ে জাহান্নামী হতে হবে। নাউজুবিল্লাহ!

 

মাহে যিলহজ্জ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে মুহররমুল হারাম ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে রবীউল আউয়াল শরীফ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে রবীউছ ছানী ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে জুমাদাল উখরা ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা