সম্মানিত শরীয়ত মুবারক উনার সম্মানিত ফতওয়া মুবারক অনুযায়ী ‘নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের যারা মানহানী করবে সেটা সরাসরি হোক বা ইশারা ইঙ্গিতেই হোক- তাদের একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদ-। তারা নামধারী মুসলমান হোক বা কাফির হোক অথবা নাস্তিক হোক কিংবা যে কোন ধর্মেরই অনুসারী হোক না কেন। তাদের তাওবা গ্রহণযোগ্য হবে না। যেকোনো পদ্ধতিতেই হোক অবশ্যই তাদেরকে সবচেয়ে কঠিন ও লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি দিয়ে হত্যা করতে হবে। এমনকি যারা তাদেরকে সমর্থন করবে, তাদেরও ঠিক একই হুকুম’

সংখ্যা: ২৬৫তম সংখ্যা | বিভাগ:

ফক্বীহুল মাগরিব হযরত ইমাম ইবনে সাহনূন রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিছাল শরীফ: ২৬৫ হিজরী শরীফ) তিনি বলেন-

اَجْمَعَ الْعُلَمَاءُ اَنَّ شَاتِـمَ النَّبِـىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمُتَنَقِّصَ لَه كَافِرٌ وَالْوَعِيْدُ جَارٍ عَلَيْهِ بِعَذَابِ اللهِ لَه وَحُكْمُه عِنْدَ الْاُمَّةِ الْقَتْلُ وَمَنْ شَكَّ فِـىْ كُفْرِه وَعَذَابِه كَفَرَ.

অর্থ: “সমস্ত ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনারা এই বিষয়ে ইজমা’ করেছেন যে, নিঃসন্দেহে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে গাল-মন্দকারী, মর্যদাহননকারী, মানহানীকারী ব্যক্তি কাফির এবং তার জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। তার  ব্যাপারে সমস্ত উম্মত উনাদের ফায়ছালা হলো, তাকে শাস্তিস্বরূপ ক্বতল করতে হবে, মৃত্যুদ- দিতে হবে। আর যে ব্যক্তি এ ধরণের লোকদের কাফির হওয়ার ব্যাপারে এবং শাস্তিযোগ্য হওয়ার বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করবে, সে নিজেও কাফির হবে (এবং তাকেও হত্যা করতে হবে)।” সুবহানাল্লাহ!  (আশ শিফা ২/২১৫, আস সাইফুল মাসলূল ১২০ পৃ., নিহায়াতুস সুওয়াল ২৬১ পৃ.)

হযরত ইমাম আলী ইবনে আব্দুল কাফী সুবুকী শাফি‘য়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিছাল শরীফ : ৭৫৬) তিনি বলেন,

قَالَ حَضْرَتْ عَبْدُ اللهِ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ سَاَلْتُ اَبِىْ عَمَّنْ شَتَمَ النَّبِـىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُسْتَتَابُ قَالَ قَدْ وَجَبَ عَلَيْهِ الْقَتْلُ وَلَا يُسْتَتَابُ خَالِدُ بْنُ الْوَلِيْدِ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَتَلَ رَجُلًا شَتَمَ النَّبِـىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلَـمْ يَسْتَتِبْهُ.

অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আহমদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমি আমার সম্মানিত পিতা (হাম্বলী মাযহাব উনার সম্মানিত ইমাম হযরত ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি) উনাকে যেই ব্যক্তি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে গালি দেয়, তিরস্কার করে, উনার মানহানী করে তার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলাম যে, তাকে কি তওবার সুযোগ দেয়া হবে অর্থাৎ তার কি তাওবা গ্রহণ করা হবে? (আমার সম্মানিত পিতা হযরত ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি) তিনি বললেন, নিশ্চয়ই তার উপর ক্বতল তথা মৃত্যুদ- ওয়াজিব হয়ে গেছে। তার তাওবা গ্রহণ করা হবে না। (অতঃপর তিনি এই বিষয়ে সাইফুল্লাহিল মাসলূল হযরত খালিদ ইবনে ওয়ালীদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার সম্মানিত আমল মুবারক দলীল হিসেবে পেশ করে বলেন,) এক ব্যক্তি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে তিরস্কার করার কারণে, উনার মানহানী করার কারণে তাকে সাইফুল্লাহিল মাসলূল (মহান আল্লাহ পাক উনার উম্মুক্ত তরবারী মুবারক) হযরত খালিদ ইবনে ওয়ালীদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি ক্বতল করেছেন, মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। তিনি তার তাওবা গ্রহণ করেননি। সুবহানাল্লাহ! (আস সাইফুল মাসলূল ১৩০ পৃ:, আশ শিফা লিআবী বকর)

হযরত ইমাম কাযী আবুল ফযল ‘আয়ায আন্দালুসী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-

وَاحْتَجَّ حَضْرَتْ اِبْرَاهِيْمُ بْنُ حُسَيْنِ بْنِ خَالِدِ ۣ الْفَقِيْهُ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ فِىْ مِثْلِ هٰذَا بِقَتْلِ حَضْرَتْ خَالِدِ بْنِ الْوَلِيْدِ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ مَالِكَ بْنَ نُوَيْرَةَ بِقَوْلِه عَنِ النَّبِـىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَاحِبُكُمْ

অর্থ: “বিশিষ্ট্য ফক্বীহ হযরত আবূ ইসহাক্ব ইবরাহীম বিন হুসাইন বিন খালিদ কুরতুবী মালিকী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিছাল শরীফ : ২৪৯ হিজরী শরীফ) তিনি (নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মানহানীকারীদের একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদ-) এ ব্যাপারে  হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার সম্মানিত আমল মুবারককে দলীল হিসেবে পেশ করেছেন। তিনি বলেন যে, বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি মালিক বিন নুয়াইরাকে শুধু এজন্যই ক্বতল করেছেন, মৃত্যুদ- দিয়েছেন যে, সে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে صَاحِبُكُمْ ‘তোমাদের সাথী’ বলেছে (‘আপনাদের সম্মানিত রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ বলেনি)।” (আশ শিফা ২/২১৫, আস সাইফুল মাসলূল ১২৫)

হযরত আহমদ শিহাবুদ্দীন খাফাজী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-

(وَاحْتَجَّ حَضْرَتْ اِبْرَاهِيْمُ بْنُ حُسَيْنِ بْنِ خَالِدِۣ الْفَقِيْهُ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ فِىْ مِثْلِ هٰذَا) وَفِـىْ نُسْخَةٍ عَلـٰى مِثْلِ هٰذَا (بِقَتْلِ حَضْرَتْ خَالِدِ بْنِ الْوَلِيْدِ) رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ (مَالِكَ بْنَ نُوَيْرَةَ) عَلَمٌ مِّنْ تَصْغِيْرِ نَارٍ (لِقَوْلِه عَنِ النَّبِـىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَاحِبُكُمْ) يَعْنِىْ بِهِ النَّبِـىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَفِيْهِ تَنْقِيْصٌ لَّه بِتَعْبِيْرِه عَنْهُ بِصَاحِبِكُمْ دُوْنَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَنَـحْوَه.

অর্থ: “বিশিষ্ট্য ফক্বীহ হযরত আবূ ইসহাক্ব ইবরাহীম বিন হুসাইন বিন খালিদ কুরতুবী মালিকী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি (নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মানহানীকারীর একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদ-) এ ব্যাপারে  হযরত খালিদ ইবনে ওয়ালীদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার সম্মানিত আমল মুবারককে দলীল হিসেবে পেশ করেছেন। এক নুসখায় هٰذَا فِىْ مِثْلِ স্থলে عَلـٰى مِثْلِ هٰذَا উল্লেখ রয়েছে। তিনি বলেন যে, বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত খালিদ বিন ওয়ালীদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি মালিক বিন নুওয়াইরাকে। নুওয়াইরাহ نُوَيْرَةُ)) শব্দটি ‘আলাম। এটি নার (نَارٌ) শব্দের ইসমে তাছগীর। শুধু এজন্যই ক্বতল করেছেন, মৃত্যুদ- দিয়েছেন যে, সে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে صَاحِبُكُمْ ‘তোমাদের সাথী’ বলেছে। না‘ঊযুবিল্লাহ! অর্থাৎ সে صَاحِبُكُمْ দ্বারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্বোধন করেছে। না‘ঊযুবিল্লাহ! সে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারক-এ রসূলুল্লাহ তথা মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং এজাতীয় সম্মানিত শব্দ মুবারক ব্যবহার না করে صَاحِبُكُمْ বলেছে। না‘ঊযুবিল্লাহ! সে তার এই বচনভঙ্গির মাধ্যমে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মর্যাদাহানী করেছে।” না‘ঊযুবিল্লাহ! (নাসীমুর রিয়াদ্ব ৪/৩৩৮-৩৩৯)

মালিক ইবনে নুওয়াইরাহ ছিলো বনী তামীম গোত্রের প্রধান। সে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যামানায় সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করে। কিন্তু সে ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত খিলাফত মুবারককালে যাকাত দিতে অস্বীকৃতি জানায়। তখনও সে বনী তামীম গোত্রের প্রধানই ছিলো। তারপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মানহানী করার কারণে হযরত খালিদ ইবনে ওয়ালীদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি তাকে শাস্তি স্বরূপ ক্বতল করেন, শাস্তি স্বরূপ মৃত্যুদণ্ড দেন। সুবহানাল্লাহ! যদিও সে পরে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার স্বীকৃতি দিয়েছিলা। কিন্তু হযরত খালিদ ইবনে ওয়ালীদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি তার থেকে তা গ্রহণ করেননি। সুবহানাল্লাহ! তিনি উনার এই সম্মানিত আমল মুবারক দ্বারা এই বিষয়টিই স্পষ্ট করে দিলেন যে, যারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মর্যাদাহানী করবে, মানহানী করবে, তাদের একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। তাদের তাওবা গ্রহণযোগ্য হবে না। এই সম্পর্কে কিতাবে বর্ণিত রয়েছে-

اَنَّه مَنَعَ الزَّكٰوةَ زَمَنَ حَضْرَتْ اَبِىْ بَكْرٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ فَاَرْسَلَ اِلَيْهِ حَضْرَتْ خَالِدَ بْنَ الْوَلِيْدِ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ فِـىْ مَنْعِ الزَّكـٰوةِ فَقَالَ مَالِكٌ اَنَا اٰتِـىٌ بِالصَّلـٰوةِ دُوْنَ الزَّكٰوةِ فَقَالَ حَضْرَتْ خَالِدٌ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ اَمَا عَلِمْتَ اَنَّ الصَّلـٰوةَ وَالزَّكٰوةَ لَا تُقْبَلُ وَاحِدَةٌ دُوْنَ الْاُخْرٰى فَقَالَ مَالِكٌ قَدْ كَانَ صَاحِبُكُمْ يَقُوْلُ ذٰلِكَ فَقَالَ حَضْرَتْ خَالِدٌ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ وَمَا تَرَاهُ لَكَ صَاحِبًا وَّاللهِ لَقَدْ هَمَمْتُ اَنْ اَضْرِبَ عُنُقَكَ ثُـمَّ تَـجَادَلَا فِـى الْكَلَامِ فَقَالَ حَضْرَتْ خَالِدٌ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ اِنِّـىْ قَاتِلُكَ قَالَ اَوْ بِذٰلِكَ اَمَرَكَ صَاحِبُكَ قَالَ وَهٰذِه بَعْدَ تِلْكَ وَكَانَ عَبْدُ اللهِ بْنُ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ وَاَبُوْ قَتَادَةَ الْاَنْصَارِىُّ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ حَاضِرَيْنِ فَكَلَّمَا حَضْرَتْ خَالِدًا رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ فِـىْ اَمْرِه فَكَرِهَ كَلَامَهُمَا فَقَالَ مَالِكٌ يَا حَضْرَتْ خَالِدُ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ اِبْعَثْنَا اِلـٰى حَضْرَتْ اَبِـىْ بَكْرٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ فَيَكُوْنُ هُوَ الَّذِىْ يَـحْكُمُ فِيْنَا فَقَالَ خَالِدٌ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ لَا اَقَالَنِـىَ اللهُ اَنْ اَقَلْتُكَ فَاَمَرَ حَضْرَتْ ضِرَارَ بْنَ الْاَزْوَرِ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ بِضَرْبِ عُنُقِه فَالْتَفَتَ مَالِكٌ اِلـٰى زَوْجَتِه وَكَانَتْ فِـىْ غَايَةٍ مِّنَ الْـجَمَالِ فَقَالَ لِـحَضْرَتْ خَالِدٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ هٰذِه هِىَ الَّتِـىْ قَتَلَتْنِىْ فَقَالَ حَضْرَتْ خَالِدٌ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ بَلِ اللهُ قَتَلَكَ بِرُجُوْعِكَ عَنِ الْاِسْلَامِ فَقَالَ مَالِكٌ اَنَا عَلَى الْاِسْلَامِ فَقَالَ حَضْرَتْ خَالِدٌ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ يَا حَضْرَتْ ضِرَارُ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ اِضْرِبْ عُنُقَه فَضَرَبَ عُنُقَه.

অর্থ: “মালিক ইবনে নুওয়াইরাহ সে সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত খিলাফত মুবারক কালে যাকাত দিতে অস্বীকৃতি জানায়। তাই সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি হযরত খালিদ বিন ওয়ালীদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনাকে মালিক ইবনে নুওয়াইরার নিকট প্রেরণ করেন। মালিক ইবনে নুওয়াইরাহ হযরত খালিদ ইবনে ওয়ালীদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনাকে বললো, আমি নামায আদায় করবো, যাকাত প্রদান করবো না। নাঊযুবিল্লাহ! হযরত খালিদ ইবনে ওয়ালীদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি তাকে বললেন, তুমি কি জানো না যে, ‘সম্মানিত নামায’ এবং ‘সম্মানিত যাকাত’ এই দুইটি একটি ব্যতীত আরেকটি কবুল হয় না। সুবহানাল্লাহ! তখন সে বললো, ‘তোমাদের সাথী’ কি এরূপ বলতেন? নাঊযুবিল্লাহ! জবাবে হযরত খ্বাালিদ ইবনে ওয়ালীদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি বললেন, তুমি কি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে তোমার মালিক হিসেবে দেখো না? মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! আমি শপথ করেছি যে, অবশ্যই অবশ্যই আমি তোর গর্দান উড়িয়ে দিবো। অতঃপর উভয়ের মাঝে তর্কযুদ্ধ শুরু হলো। তারপর হযরত খ্বাালিদ ইবনে ওয়ালীদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি বললেন, অবশ্যই আমি তোকে ক্বতল করবো? মালিক ইবনে নুওয়াইরাহ বললো, ‘তোমার সাথী’ কী তোমাকে এরূপ করার নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন? নাঊযুবিল্লাহ! হযরত খালিদ ইবনে ওয়ালীদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি তাকে বললেন, এরপরেও তুই একথা বললি? সেখানে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ‘উমর রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি এবং হযরত আবূ ক্বাতাদাহ আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি অর্থাৎ উনারা উভয়ে উপস্থিত ছিলেন। উনারা উভয়ে হযরত খালিদ ইবনে ওয়ালীদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার সাথে উনার সিদ্ধান্ত মুবারক উনার ব্যাপারে কথা বললেন। তিনি উনাদের উভয়ের কথা অপছন্দ করলেন। তখন মালিক ইবনে নুওয়াইরাহ হযরত খালিদ ইবনে ওয়ালীদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনাকে বললো, হে হযরত খালিদ ইবনে ওয়ালীদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু! আপনি আমাদেরকে সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার নিকট প্রেরণ করুন। তিনিই আমাদের মাঝে মীমাংসা করবেন। জবাবে হযরত খালিদ ইবনে ওয়ালীদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে তোকে ক্বতল করার বিষয়ে অব্যাহতি দেননি যে, আমি তোকে অব্যাহতি দিবো। অর্থাৎ আমি তোকে অবশ্যই ক্বতল করবো। সুবহানাল্লাহ! (কারণ তুই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মর্যাদা হনন করেছিস।) তারপর তিনি হযরত দ্বিরার ইবনে আয্ওয়ার রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনাকে নির্দেশ মুবারক দিলেন তার গর্দান উড়িয়ে দেয়ার জন্য। সুবহানাল্লাহ! মালিক ইবনে নুওয়াইরার স্ত্রী ছিলেন সৌন্দর্যের শেষ সীমায় উপনীত। তখন সে তার স্ত্রীর দিকে দৃষ্টি দিয়ে হযরত খ্বাালিদ ইবনে ওয়ালীদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনাকে উদ্দেশ্য করে (কারূনের ন্যায় অপবাদ দিয়ে) বললো, সেই (আমার স্ত্রীই) কি আমাকে হত্যা করছেন? (অর্থাৎ আমার স্ত্রীর সীমাহীন সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়েই কি আপনি আমাকে ক্বতল করতে যাচ্ছেন? না‘ঊযুবিল্লাহ!) জবাবে হযরত খালিদ ইবনে ওয়ালীদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি বললেন, না। বরং তুই সম্মানিত দ্বীন ইসলাম থেকে দূরে সরে যাওয়ার কারণে মহান আল্লাহ পাক তিনিই তোকে ক্বতল করছেন। সুবহানাল্লাহ! তখন মালিক ইবনে নুওয়াইরাহ বললো, আমি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার উপর রয়েছি। (কিন্তু হযরত খালিদ ইবনে ওয়ালীদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি মালিক ইবনে নুওয়াইরার নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ‘তোমাদের সাথী’ বলে মানহানী করার পর, তার সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার স্বীকৃতির বিষয়টি গ্রহণ করলেন না। সুবহানাল্লাহ! বরং) হযরত খালিদ ইবনে ওয়ালীদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি বললেন, হে হযরত দ্বিরার রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু! আপনি তার গর্দান উড়িয়ে দিন। তখন হযরত দ্বিরার রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি তার গর্দান উড়িয়ে দিলেন।” সুবহানাল্লাহ! (শরহুশ শিফা লিল ক্বারী ২/৩৯৩)

হযরত আহমদ শিহাবুদ্দীন খ্বাাফাজী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-

اَمَرَ حَضْرَتْ ضِرَارَ بْنَ الْاَزْوَرِ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ فَضَرَبَ عُنُقَه لِاِنْكَارِه قَوْلِه صَاحِبُكُمْ مَرَّتَيْنِ اسْتِصْغَارًا لَّه صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

অর্থ: “হযরত খালিদ ইবনে ওয়ালীদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি হযরত দ্বিরার ইবনে আয্ওয়ার রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনাকে নির্দেশ মুবারক দিলেন মালিক ইবনে নুওয়াইরাকে ক্বতল করার জন্য। তখন হযরত দ্বিরার ইবনে আয্ওয়ার রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি তার গর্দান উড়িয়ে দিলেন, তার অবাধ্যতার কারণে। সুবহানাল্লাহ! তার অবাধ্যতা হলো সে তার কথা ‘তোমাদের সাথী’ এটা দুইবার বলার মাধ্যমে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হেয়জ্ঞান করেছে, মানহানী করেছে।” না‘ঊযুবিল্লাহ! (নাসীমুর রিয়াদ্ব লিল খ্বাফাজী ৪/৩৩৯)

বিষয়টি যখন ছড়িয়ে পড়লো যে হযরত খালিদ ইবনে ওয়ালীদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি একজন মুসলামনকে ক্বতল করেছেন, তখন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনাকে বললেন-

فِاِنَّه قَدْ قَتَلَ مُسْلِمًا فَاقْتُلْهُ قَالَ مَا كُنْتُ اَقْتُلُه اَنَّه تَاَوَّلَ قَالَ فَاَعْزِلْهُ قَالَ مَا كُنْتُ اَعْمِدُ سَيْفًا سَلَّهُ اللهُ تَعَالـٰى عَلَى الْمُشْرِكِيْنَ وَفِـىْ رِوَايَةٍ لَّا اَعْزِلُ وَالِيًا وَّلَّاهُ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ تَعَالـٰى عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

অর্থ: “হযরত খ্বাালিদ ইবনে ওয়ালীদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি একজন মুসলামনকে ক্বতল করেছেন, আপনিও উনাকে (কিছাছ স্বরূপ) ক্বতল করুন। সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, না আমি উনাকে ক্বতল করবো না, কেননা তিনি তাহক্বীক্ব করেছেন। তিনি বললেন, তাহলে আপনি উনাকে অপসারণ করুন। সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, না। যেই সম্মানিত তরবারী মুবারক উনাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি মুশরিকদের উপর কোষমুক্ত করে দিয়েছেন, আমি সেই সম্মানিত তরবারী মুবারক উনাকে কোষবদ্ধ করবো না। সুবহানাল্লাহ! অপর বর্ণনায় রয়েছে, যেই সুমহান ব্যক্তিত্ব মুবারক উনাকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দায়িত্ব মুবারক দিয়েছেন, আমি সেই সুমহান দায়িত্বশীল উনাকে অপসারণ করবো না।” সুবহানাল্লাহ! (শরহুশ শিফা লিলক্বারী ২/৩৯৩-৩৯৪)

হযরত খালিদ ইবনে ওয়ালীদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার এই সম্মানিত আমল মুবারক, সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার এই শক্ত জাওয়াব মুবারক এবং সমস্ত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদের এই বিষয়ে সম্মতি মুবারক দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, যারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মানহানী করবে, মর্যাদাহানী করবে, সেটা সরাসরি হোক বা ইশারা ইঙ্গিতেই হোক- তাদের একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। তাদের তাওবা গ্রহণযোগ্য হবে না। যেমনিভাবে মালিক ইবনে নুওয়াইরার সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার স্বীকৃতি গ্রহণযোগ্য হয়নি।

সে জন্যই হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-

مَنْ قَالَ اِنَّ رِدَاءَ النَّبِـىِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَيُرْوٰى زِرَّ النَّبِـىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَسِخٌ اَرَادَ بِه عَيْبَه قُتِلَ.

অর্থ: “যে ব্যক্তি বলবে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত ও পবিত্র চাদর মুবারক বা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত ও পবিত্র কোর্তা মুবারক উনার সম্মানিত ও পবিত্র গুটলী মুবারক অপরিচ্ছন্ন ছিলেন। নাঊযুবিল্লাহ! আর এতে তার উদ্দেশ্য হলো নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মানহানী করা। নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ! (অবশ্যই অবশ্যই) তাকে শাস্তিস্বরূপ ক্বতল করতে হবে, শাস্তিস্বরূপ মৃত্যুদণ্ড দিতে হবে।” সুবহানাল্লাহ! (আশ শিফা ২/২১৭, আস সাইফুল মাসলূল ১২৮ পৃ.)

তাহলে বর্তমানে যারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের বেমেছাল সম্মানিত শান মুবারক-এ নানা অশ্লীল-অশালীন, এলোমেলো কুফরী-শিরকীমূলক বক্তব্য পেশ করে যাচ্ছে, উনাদের মর্যাদাহানী করে যাচ্ছে, উনাদেরকে গালমন্দ করছে, উনাদের মানহানী করছে, তাদের ফায়ছালা কী? অবশ্যই অবশ্যই তাদের প্রত্যেককেই শাস্তিস্বরূপ ক্বতল করা, শাস্তিস্বরূপ মৃত্যুদ- দেয়া ফরয-ওয়াজিব এবং অবশ্যই অবশ্যই তাদের প্রত্যেককে শাস্তিস্বরূপ ক্বতল করতে হবে, শাস্তিস্বরূপ মৃত্যুদ- দিতে হবে। তাদের তাওবা গ্রহণযোগ্য হবে না। শুধু তাই নয়, যেকোনো পদ্ধতিতেই হোক অবশ্যই তাদেরকে সবচেয়ে কঠিন ও লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি দিয়ে হত্যা করতে হবে। সুবহানাল্লাহ! আর যারা তাদেরকে সমর্থন করবে, তাদেরও ঠিক একই হুকুম।

এই সম্পর্কে হযরত ইমাম কাযী আবুল ফযল আয়ায রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-

وَاَفْـتٰـى فُقَهَاءُ الْقَيْرَوَانِ وَاَصْحَابُ سَحْنُوْنٍ بِقَتْلِ اِبْرَاهِيْمَ الفَزَارِىِّ وَكَانَ شَاعِرًا مُّتَفَنِّنًا فِـىْ كَثِيْرٍ مِّنَ الْعُلُوْمِ وَكَانَ مِـمَّنْ يَّـحْضُرُ مَـجْلِسَ حَضْرَتْ اَلْقَاضِىْ اَبِـى الْعَبَّاسِ بْنِ طَالِبٍ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ لِّـلْمُنَاظَرَةِ فَرُفِعَتْ عَلَيْهِ اُمُوْرٌ مُّنْكَرَةٌ مِّنْ هٰذَا الْبَابِ فِـى الْاِسْتِهْزَاءِ بِاللهِ وَاَنْۢبِيَائِه وَنَبِيِّنَا صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاَحْضَرَ لَهُ الْقَاضِىَ يَـحْيَـى بْنَ عُمَرَ وَغَيْرَه مِنَ الْفُقَهَاءِ وَاَمَرَ بِقَتْلِه وَصَلْبِه فَطُعِنَ بِالسِّكِّيْنِ وَصُلِبَ مُنَكَّسًا ثُـمَّ اُنْزِلَ وَاُحْرِقَ بِالنَّارِ وَحَكٰى بَعْضُ الْمُؤَرِّخِيْنَ اَنَّه لَمَّا رُفِعَتْ خَشَبَتُه وَزَالَتْ عَنْهَا الْاَيْدِىُ اسْتَدَارَتْ وَحَوَّلَتْهُ عَنِ الْقِبْلَةِ فَكَانَ اٰيَةً لِّـلْجَمِيْعِ وَكَبَّرَ النَّاسُ وَجَاءَ كَلْبٌ فَوَلَغَ فِـىْ دَمِه فَقَالَ حَضْرَتْ يَـحْيَـى بْنُ عُمَرَ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ صَدَقَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَذَكَرَ حَدِيْثًا عَنْهُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَنَّه قَالَ لَا يَلَغُ الْكَلْبُ فِـىْ دَمِ مُسْلِمٍ.

অর্থ: “কায়রাওয়ানের সম্মানিত ফক্বীহগণ এবং হযরত সাহনূন রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার অনুসারীগণ উনারা ইবরাহীম ফাযারীকে হত্যা করার ফতওয়া দেন। ইবরাহীম অভিজ্ঞ ও খ্যাতনামা কবি ছিলো এবং দর্শনশাস্ত্র ও যাহিরী বিদ্যার অন্যান্য শাখায় অনেক পারদর্শী ছিলো। সে কাযী হযরত আবুল আব্বাস ইবনে তালিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মজলিসে বিভিন্ন বিষয়ে মুনাযারাহ বা বিতর্ক করার জন্য উপস্থিত হতো। তার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছিলো যে, সে অনেক কাব্যে মহান আল্লাহ পাক উনার, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত শান মুবারক-এ কুটূক্তি করেছে। তখন কাযী হযরত আবুল আব্বাস ইবনে তালিব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তাকে কায়রাওয়ানের ক্বাযী ও ফক্বীহ ইয়াহ্ইয়া বিন উমর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার আদালতে উপস্থিত করেন, ওই সময় আদালতে অসংখ্য খ্যাতনামা যুগশ্রেষ্ঠ ফক্বীহগণ উপস্থিত ছিলেন। শাস্তিস্বরূপ বিচারক তাকে ক্বতল করার এবং ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলানোর ও আগুনো পুড়ানোর আদেশ মুবারক দেন। তাই তাকে ছুরি দ্বারা আঘাত করে উল্টিয়ে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে রাখা হয়। এরপর তার মৃতদেহ নামিয়ে আগুনে পোড়ানো হয়। সুবহানাল্লাহ! কোনো কোনো ঐতিহাসিকগণ বলেন, যখন তাকে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলানো হয়, তার ফাঁসির রশি এমনিতে ঘুরতে শুরু করে। যখন তার চেহারা সম্মানিত ক্বিবলা উনার বিপরীত হয়ে যেতো, তখন ফাঁসির রশি ঘুরা বন্ধ হয়ে যেতো। উপস্থিত লোকজন এটাকে মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত ক্বুদরত মুবারক উনার নিদর্শন মুবারক মনে করে তাকবীর ধ্বনি উচ্চারণ করেন। এরপর কুকুর এসে তার রক্ত খেয়ে ফেলে। হযরত ইমাম ক্বাযী ইয়াহিয়া ইবনে উমর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যথার্থই বলেছেন যে-

لَا يَلَغُ الْكَلْبُ فِـىْ دَمِ مُسْلِمٍ

কুকুর মুসলমানের রক্ত খায় না।” সুবহানাল্লাহ! (আশ শিফা ২/২১৮, নাসীমুর রিয়াদ্ব ৪/ ৩৪৫-৩৪৬পৃ.)

সম্মানিত ও পবিত্র কুরআন শরীফ এবং সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের আলোকে সর্বাধিক বিশুদ্ধ ফতওয়া হচ্ছে- যে ব্যক্তি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে গালি দিবে, উনার মানহানী করবে, তাকে দৃষ্টান্তমূলকভাবে ব্যভিচার বা শরীয়তের অন্যান্য বিধান অমান্য করার কারণে যেরূপ কঠিন শাস্তি দেয়া হয়, তার চেয়ে আরো অত্যধিক কঠিন ও লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি দিয়ে ক্বতল করতে হবে, মৃত্যুদণ্ড দিতে হবে। কেননা স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই ইরশাদ মুবারক করেছেন-

وَالَّذِيْنَ يُؤْذُوْنَ رَسُوْلَ اللهِ لَـهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ

অর্থ: “আর যারা মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কষ্ট দেয়, তাদের জন্য রয়েছে কঠিন যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।” (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা তাওবা শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৬১)

মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

اِنَّ الَّذِيْنَ يُؤْذُوْنَ اللهَ وَرَسُوْلَه لَعَنَهُمُ اللهُ فِـى الدُّنْيَا وَالْاٰخِرَةِ وَاَعَدَّ لَـهُمْ عَذَابًا مُّهِيْنًا.

অর্থ: “নিশ্চয়ই যারা মহান আল্লাহ পাক উনাকে এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অর্থাৎ উনাদেরকে কষ্ট দেয়, তাদের উপর দুনিয়া ও আখিরাতে মহান আল্লাহ পাক উনার লা’নত এবং মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদের জন্য লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছেন।” (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৭)

আলোচ্য সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যারা কষ্ট দিবে তাদেরকে কঠিন যন্ত্রণাদায়ক ও লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি প্রদানের কথা বর্ণনা করেছেন। সুবহানাল্লাহ!

স্বাভাবিকভাবে সম্মানিত শরীয়ত মুবারক উনার বিধান হচ্ছে, কতলের পরিবর্তে কতল। কিন্তু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিতা বানাত (মেয়ে) সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা (হযরত যাইনাব) আলাইহাস সালাম উনাকে যারা কষ্ট দিয়েছিলো, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাদের বিরুদ্ধে সারিয়্যাহ প্রেরণ করেছেন। শুধু তাই নয়, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন, তাদেরকে পেলেই আগুনে পুড়িয়ে মারার জন্য। সুবহানাল্লাহ! যেমন ‘বুখারী শরীফ’সহ আরো অন্যান্য কিতাবে বর্ণিত রয়েছে-

اِنْ لَقِيْتُمْ فُلَانًا وَفُلَانًا لِّرَجُلَيْنِ مِنْ قُرَيْشٍ سَـمَّاهُـمَا فَحَرِّقُوْهُـمَا بِالنَّارِ

 অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কুরাইশদের দু’জন ব্যক্তির নাম ধরে ইরশাদ মুবারক করলেন, যদি আপনারা অমুক ও অমুককে পান, তাহলে তাদেরকে আগুনে পুড়িয়ে ফেলবেন।” সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ, সুনানে দারিমী, সুনানে সা‘ঈদ ইবনে মানছূর, মুসনাদে বাযযার, আস সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, ছহীহ ইবনে হিব্বান ইত্যাদি)

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পরবর্তীতে ইরশাদ মুবারক করেন-

اِنْ وَّجَدْتُّـمُوْهُ فَاقْطَعُوْا يَدَه ثُـمَّ اقْطَعُوْا رِجْلَه ثُـمَّ اقْطَعُوْا يَدَه ثُـمَّ اقْطَعُوْا رِجْلَه

অর্থ: “যদি আপনারা তাকে পান, তাহলে প্রথমে তার ডান হাত কাটবেন। তারপর ডান পা কাটবেন। অতঃপর বাম হাত কাটবেন। তারপর বাম পা কাটবেন।” সুবহানাল্লাহ! (সুনানে সা‘ঈদ ইবনে মানছূর ২/২৮৬)

কাজেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের যারা মানহানী করবে, সেটা সরাসরি হোক বা ইশারা ইঙ্গিতেই হোক- তাদের একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদ-। অবশ্যই অবশ্যই তাদেরকে দৃষ্টান্তমূলকভাবে ব্যভিচার বা শরীয়তের অন্যান্য বিধান অমান্য করার কারণে যেরূপ কঠিন শাস্তি দেয়া হয়, তার চেয়ে আরো অত্যধিক কঠিন তর্য-তরীক্বায় আরো অত্যধিক কঠিন ও লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি দিয়ে ক্বতল করতে হবে, মৃত্যুদ- দিতে হবে। সুবহানাল্লাহ!

-আল্লামা মুহম্মদ ইবনে মানছূর

 

খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক স্বয়ং নিজেই সর্বপ্রথম ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে ঈদ উদযাপন করেন

সাইয়্যিদুল মুরসালীন, সাইয়্যিদুল কাওনাইন, সাইয়্যিদুল ফারীক্বাইন হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং নিজেই নিজের বিলাদত শরীফ পালন করে খুশি প্রকাশ করেন

হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনারা উনাদের খিলাফতকালে নাবিইয়ুর রহমাহ, নাজিইয়ুল্লাহ, নূরুম মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করেছেন এবং এ উপলক্ষে ব্যয় করার ফযীলতও বর্ণনা করেছেন

হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা উৎসাহ-উদ্দীপনার সাথে সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদুল ঈদিল আ’যম, সাইয়্যিদুল ঈদিল আকবার ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে ঈদ উদযাপন করেছেন

বান্দা-বান্দী ও উম্মতের জন্য সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদুল ঈদিল আ’যম, সাইয়্যিদুল ঈদিল আকবার ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা ফরয হওয়ার প্রমাণ