সাইয়্যিদুশ শুহূর শাহরুল আ’যম মাহে রবীউল আউওয়াল শরীফ ও উনার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

সংখ্যা: ২৪০তম সংখ্যা | বিভাগ:

-আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ শুয়াইব আহমদ

শাহরুল আ’যম মাহে রবীউল আউওয়াল শরীফ এ সুমহান মাসটি কুল-মাখলূক্বাতের যিনি নবী ও রসূল, যিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, যিনি ইমামুল মুরসালীন, যিনি খাতামুন নাবিয়্যীন, যিনি রহমাতুল্লিল আলামীন, যিনি নূরুম মুজাসসাম, যিনি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত বিলাদত শরীফ গ্রহণের মাস। সুবহানাল্লাহ!

কাজেই, উনার সম্মানার্থে এ মাসে বিশেষভাবে খুশি প্রকাশ করা, উনার ছানা-ছিফত করা, উনার শান মুবারকে ছলাত (দুরূদ শরীফ) পাঠ করা, সালাম পেশ করা, উনার খিদমত করা, তা’যীম-তাকরীম করা এবং এ উদ্দেশ্যে মজলিস বা মাহফিলের আয়োজন করা, তাবারুকের ব্যবস্থা করা, নতুন বা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করা, সুগন্ধির জন্য আগরবাতি বা ধুপ জ্বালানো, আতর-গোলাপ ব্যবহার করা এসবই শ্রেষ্ঠতম ও সর্বোত্তম আমল মুবারকের অন্তর্ভুক্ত।

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

قل بفضل الله وبرحمته فبذلك فليفرحوا هو خير مما يجمعون

অর্থ: (হে আমার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি বলে দিন যে, মহান আল্লাহ পাক উনার বরকতময় ফদ্বল ও সম্মানিত রহমত স্বরূপ আপনাকে পাওয়ার কারণে তাদের (উম্মতের তথা সমস্ত কায়িনাতের) উচিত বা দায়িত্ব কর্তব্য অর্থাৎ ফরয হচ্ছে খুশি প্রকাশ করা। ইহা অর্থাৎ খুশি প্রকাশ করার আমল মুবারক তাদের সমস্ত আমল অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ও উত্তম। সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা ইউনুস শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৮)

এই শ্রেষ্ঠতম ও সর্বোত্তম আমল মুবারক সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنهما انه كان يحدث ذات يوم فى بيته وقائع ولادته صلى الله عليه وسلم لقوم فيستبشرون ويحمدون الله ويصلون عليه صلى الله عليه وسلم فاذا جاء النبى صلى الله عليه وسلم قال حلت لكم شفاعتى .

অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি একদা উনার নিজগৃহে সমবেত ছাহাবীগণ উনাদেরকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উনার ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছিলেন। এতে শ্রবণকারীগণ আনন্দ ও খুশি প্রকাশ করছিলেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার প্রশংসা তথা তাসবীহ-তাহলীল পাঠ করছিলেন এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর ছলাত বা দুরূদ শরীফ পাঠ করছিলেন। এমন সময় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেখানে উপস্থিত হলেন এবং (পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠের অনুষ্ঠান দেখে) বললেন, “আপনাদের জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব।” সুবহানাল্লাহ! (আত তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর, মাওলূদুল কাবীর, দুররুল মুনাযযাম, সুবুলুল হুদা ফী মাওলিদিল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ইশবাউল কালাম ফী ইছবাতিল মাওলিদি ওয়াল ক্বিয়াম, হাক্বীক্বতে মুহম্মদী মীলাদে আহমদী)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে-

عن حضرت ابى الدرداء رضى الله تعالى عنه انه  مر مع النبى صلى الله عليه وسلم الى بيت عامر الانصارى وكان يعلم وقائع ولادته صلى الله عليه وسلم لابنائه وعشيرته ويقول هذا اليوم هذا اليوم فقال عليه الصلوة والسلام ان الله فتح لك ابواب الرحمة والـملائكة كلهم يستغفرون لك من فعل فعلك نجى نجتك .

অর্থ:  হযরত আবু দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে যে, একদা তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে হযরত আমির আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার গৃহে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলেন যে, তিনি উনার সন্তান-সন্তুতি এবং আত্মীয়-স্বজন, জ্ঞাতি-গোষ্ঠী, পাড়া-প্রতিবেশীদেরকে নিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উনার ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছেন এবং বলছেন, এই দিবস; এই দিবস (অর্থাৎ এই দিবসে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীনে তাশরীফ এনেছেন এবং ইত্যাদি ইত্যাদি ঘটেছে)। এতদশ্রবণে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার রহমতের দরজাসমূহ আপনার জন্য উম্মুক্ত করে দিয়েছেন এবং সমস্ত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা আপনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছেন এবং যে কেউ আপনার মত এরূপ আমল করবে, সেও আপনার মত নাজাত (ফযীলত) লাভ করবে।” সুবহানাল্লাহ! (আত তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর, মাওলূদুল কাবীর, দুররুল মুনাযযাম, সুবুলুল হুদা ফী মাওলিদিল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ইশবাউল কালাম ফী ইছবাতিল মাওলিদি ওয়াল ক্বিয়াম, হাক্বীক্বতে মুহম্মদী মীলাদে আহমদী)

এ প্রসঙ্গে বিশ্ব সমাদৃত, সর্বজন স্বীকৃত ও সুপ্রসিদ্ধ “আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম ফী মাওলিদি সাইয়্যিদি উলদি আদম” কিতাবে আরো বর্ণিত রয়েছে- আফদ্বালুন নাস, বা’দাল আম্বিয়া, খলীফাতু রসূলিল্লাহ হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম তিনি বলেন-

مَنْ اَنْفَقَ دِرْهَمًا عَلٰى قِرَائَةِ  مَوْلِدِ النَّبِىِّ صَلّٰى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ رَفِيْقِىْ  فِىْ الْجَنَّةِ.

অর্থ: “যে ব্যক্তি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র মীলাদ শরীফ উপলক্ষে এক দিরহাম ব্যয় করবে, সে জান্নাতে আমার বন্ধু হয়ে থাকবে।” সুবহানাল্লাহ!

আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বলেন-

مَنْ عَظَّمَ مَوْلِدَ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ  عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَدْ  اَحْيَا الاِسْلامَ.

অর্থ: “যে ব্যক্তি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র মীলাদ শরীফ উনাকে বিশেষ মর্যাদা দিল, সে মূলত ইসলামকেই পুনরুজ্জীবিত করলো।” সুবহানাল্লাহ!

আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত যুননূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি বলেন-

مَنْ اَنْفَقَ  دِرْهَمًا عَلٰى قِرَائَةِ مَوْلِدِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَكَاََنَّمَا شَهِدَ  غَزْوَةَ  بَدْرٍ وَحُنَيْنٍ.

অর্থ: “যে ব্যক্তি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র মীলাদ শরীফ উপলক্ষে এক দিরহাম খরচ করল, সে যেন বদর ও হুনাইন যুদ্ধে শরীক থাকলো।” সুবহানাল্লাহ!

আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বলেন-

مَنْ عَظَّمَ مَوْلِدَ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَكَانَ سَبَبًا لِِّقِرَائَتِهٖ لايَخْرُجُ مِنَ الدُّنْيَا اِلا بِالاِيْمَانِ وَيَدْخُلُ الْجَنَّةَ بِغَيْرِ حِسَابٍ.

অর্থ: “যে ব্যক্তি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠের বিষয়টিকে মর্যাদা প্রদান করলো, সে ব্যক্তি অবশ্যই ঈমান নিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিবে এবং বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” সুবহানাল্লাহ!

প্রতিভাত হলো, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করার শ্রেষ্ঠতম ও সর্বোত্তম আমল মুবারক নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের পছন্দনীয় আমল মুবারকের অন্তর্ভুক্ত।

কাজেই, এই মুবারক আমল অর্থাৎ ঈদে মীলাদে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তথা মহা সম্মানিত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার বিরোধিতা করার অর্থ হচ্ছে স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের বিরোধিতা করা।

বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের যারা বিরোধী তারা প্রত্যেকেই জাহান্নামী। যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

تفترق امتى على ثلاث وسبعين ملة كلهم فى النار الا ملة واحدة قالوا من هى يا رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ما  انا عليه واصحابى

অর্থ: আমার উম্মত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে। একটি দল ব্যতীত সকলেই জাহান্নামী হবে। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা জান্নাতী দলটির পরিচয় জানতে চাইলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, যার উপর আমি এবং আমার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা রয়েছেন তার উপর যারা থাকবে। (তিরমিযী শরীফ, আহমদ শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ, মিশকাত শরীফ)

অর্থাৎ, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মত মুবারক ও পথ মুবারক অর্থাৎ উনাদের আক্বীদা ও আমল-আখলাক্ব মুবারক উনার অনুসরণকারী যারা হবে কেবল উনারাই হক্ব ও জান্নাতী।

অতএব, মহা সম্মানিত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালনকারীগণই হচ্ছেন একমাত্র হক্ব এবং জান্নাতী দল। আর মহা সম্মানিত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার বিরোধিতাকারীরা হচ্ছে ৭২টি বাতিল ও জাহান্নামী ফেরকা বা দলের অন্তর্ভুক্ত।

মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে বাতিল ও জাহান্নামী ফেরকার দলভুক্ত হওয়া থেকে দূরে রাখুন। আমীন।

মাহে শাওওয়াল-যিলক্বদ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে যিলহজ্জ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে মুহররমুল হারাম ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে রবীউল আউয়াল শরীফ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে রবীউছ ছানী ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা