সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সংখ্যা: ২৩৫তম সংখ্যা | বিভাগ:

মুহম্মদ রূহুল কুদুস, বগুরা।

ডা. মুহম্মদ আওক্বাত আলী, চাঁপাই নবাবঞ্জ।

সুওয়াল: মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ১০ম খলীফা এবং শাহযাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি ১১তম খলীফা এবং ‘আস সাফফাহ’ লক্বব মুবারক উনার অর্থ ও ব্যাখা-বিশ্লেষণ ও মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনিই যে সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহান খলীফা ‘হযরত আস সাফফাহ আলাইহিস সালাম’ এবং উনার মুবারক উছীলায় যে, অবশ্যই অবশ্যই বর্তমান যামানায় সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠিত হবে এ সম্পর্কে দলীল ভিত্তিক বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব :

(পূর্ব প্রকাশিতের পর- ১০)

মুজাদ্দিদে আ’যম, সাইয়্যিদুল খুলাফা, পবিত্র রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি অবশ্য অবশ্যই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ১২জন মহান খলীফা আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্য থেকে অন্যতম একজন আখাচ্ছুল খাছ বিশেষ খলীফা তথা ১০ম খলীফা এবং উনার সুমহান আওলাদ, খলীফাতুল উমাম, আল মানছূর হযরত শাহযাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি হচ্ছেন ১১তম খলীফা। সুবহানাল্লাহ!

এই সম্পর্কে সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰی عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنَّا السَّفَّاحُ وَمِنَّا الْـمَنْصُوْرُ وَمِنَّا الْـمَهْدِىُّ.

অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমার হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্য থেকে আখাছুল খাছ তিনজন বিশেষ খলীফা আলাইহিমুস সালাম হবেন। উনারা হচ্ছেন- এক. হযরত আস সাফফাহ আলাইহিস সালাম, দুই. হযরত আল মানছুর আলাইহিস সালাম এবং তিন. হযরত মাহদী আলাইহিস সালাম।” (দালাইলুন নুবুওওয়াহ লিল বাইহাক্বী-৬/৫১৪, খছাইছুল কুবরা লিস সুয়ুত্বী-২/২০৩, জামিউল আহাদীছ লিস সুয়ুত্বী-৭/৪১৯ এবং ২০/১৯৬, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ১০/৯২ ইত্যাদি)

আলোচ্য সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে বর্ণিত এই তিনজন আখাচ্ছুল খাছ মহান খলীফা আলাইহিমুস সালাম উনারা হচ্ছেন- এক. হযরত আস সাফফাহ আলাইহিস সালাম তথা  সাইয়্যিদুল খুলাফা, আওলাদে রসূল, আস সাফফাহ মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম, দুই. হযরত আল মানছূর আলাইহিস সালাম তথা খলীফাতুল উমাম, আল মানছূর হযরত শাহযাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম এবং তিন. হযরত মাহদী আলাইহিস সালাম তথা মুহম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম। (সুবহানাল্লাহ)

এখানে ধারাবাহিকভাবে ৩জন মহান খলীফা আলাইহিমুস সালাম উনাদের নাম মুবারক উল্লেখ করা হয়েছে। আর এটা সকলেরই জানা রয়েছে যে, হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম তিনি ১২তম খলীফা। তাহলে হযরত আল মানছূর আলাইহিস সালাম তিনি যে ১১তম এবং হযরত আস সাফফাহ আলাইহিস সালাম তিনি যে ১০ম খলীফা তা আলোচ্য সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার থেকে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত। সুবহানাল্লাহ!

সুতরাং এই বিষয়টি আবারও দিবালোকের ন্যায় অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, মুজাদ্দিদে আ’যম, সাইয়্যিদুল খুলাফা, আবুল খুলাফা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিস সালাম তিনি হচ্ছেন সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে বর্ণিত ১২জন মহান খলীফা আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্য থেকে ১০ম খলীফা এবং উনার সুমহান আওলাদ, খলীফাতুল উমাম আল মানছূর হযরত শাহযাদা ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি হচ্ছেন ১১তম খলীফা। সুবহানাল্লাহ! এতে বিন্দু থেকে বিন্দুতমও কোন সন্দেহের অবকাশ নেই।

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَعَدَ اللهُ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مِنْكُمْ وَعَمِلُوا الصّٰلِـحٰتِ لَيَسْتَخْلِفَنَّهُمْ فِى الْاَرْضِ كَمَا اسْتَخْلَفَ الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِهِمْ.

অর্থ : “মহান আল্লাহ পাক তিনি ওয়াদা মুবারক দিচ্ছেন যে, যাঁরা ঈমান আনবেন এবং আমলে ছালিহ করবেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি স্বয়ং নিজে উনাদেরকে অবশ্য অবশ্যই দুনিয়ার যমীনে সম্মানিত খিলাফত মুবারক হাদিয়া করবেন, যেমন তিনি পূর্ববর্তী উনরাদেরকে সম্মানিত খিলাফত মুবারক হাদিয়া করেছিলেন।” (সুবহানাল্লাহ) (সম্মানিত সূরা নূর শরীফ : সম্মানিত আয়াত শরীফ- ৫৫)

এই সম্মানিত আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন যে, ঈমান আনলে এবং আমলে ছালিহ করলে মহান আল্লাহ পাক তিনি দুনিয়ার যমীনে সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক হাদিয়া করবেন, যেমনিভাবে তিনি পূর্ববতীদেরকে হাদিয়া করেছিলেন। উল্লেখ্য যে, সম্মানিত ‘সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ’ যেহেতু সবচাইতে বড় আমলে ছালিহ তথা নেক আমল। আর মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি যেহেতু পৃথিবীর ইতিহাসে এই প্রথম অনন্তকালব্যাপী ‘সম্মানিত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ’ উনার মহাসম্মানিত মাহফিল মুবারক ইন্তিযাম করেছেন, তা অনন্তকালের জন্য জারি করেছেন এবং কায়িনাতবাসীকে নিয়ে তা দায়িমীভাবে পালন করে যাচ্ছেন। সুতরাং উনার মুবারক উছীলায় অবশ্যই অবশ্যই দুনিয়ার যমীনে সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠিত হবেই হবে ইনশআল্লাহ। এটা মহান আল্লাহ পাক উনার ওয়াদা মুবারক। (সুবহানাল্লাহ) আর উনার মুবারক উছীলায় যেহেতু অবশ্যই অবশ্যই দুনিয়ার যমীনে সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠিত হবে, তাই তিনি অবশ্যই অবশ্যই সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ১২জন মহান খলীফা আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্যে ১০ম খলীফা। সুবহানাল্লাহ! এতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই।

আর মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি যেহেতু উনার মুরীদানদেরকে নিয়ে দায়িমীভাবে সবচেয়ে বড় সম্মানিত নেক আমল মুবারক তথা ‘সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ’ পালন করে যাচ্ছেন এবং তা অনন্তকালের জন্য জারি করেছেন। সুতরাং তিনিই যদি হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ১০ম খলীফা না হন। তাহলে আর কোন ওলীউল্লাহই হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ১২জন মহান খলীফা আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্তর্ভুক্ত হবেন না। ১০ম খলীফাতো হওয়ার প্রশ্নই আসে না। সুতরাং মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি অবশ্যই অবশ্যই সম্মানিত কুরআন শরীফ, সম্মানিত হাদীছ শরীফ এবং সম্মানিত আসমানী কিতাব মুবারক উনাদের মধ্যে বর্ণিত ১২জন মহান খলীফা আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্য থেকে ১০ম খলীফা (খলীফায়ে ‘আশির)  হযরত আস সাফফাহ আলাইহিস সালাম। (সুবহানাল্লাহ)

 

সাইয়্যিদ মুহম্মদ সিরাজুদ্দীন আব্দুল্লাহ

মনিডাকুয়া, কুড়িগ্রাম

 

সুওয়াল: পবিত্র আযান উনার পর মাসনূন দুয়া মুবারক হাত তুলে করতে হবে, নাকি হাত তোলা ছাড়া করতে হবে?

জাওয়াব: হাত তুলে করাই আদব ও সুন্নত। (ফতওয়ায়ে শামী, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীক্বিয়া, ইমদাদুল ফতওয়া)

 

মুহম্মদ আব্দুস সামী’, জয়পুরহাট

 

সুওয়াল: পবিত্র শবে ক্বদর ও পবিত্র শবে বরাতে সম্মিলিতভাবে একত্রিত হয়ে রাত্রিযাপন করা প্রয়োজন, নাকি একাকী?

জাওয়াব: একত্রিত হয়ে সম্মিলিতভাবে মসজিদে রাত্রিযাপন করাই উত্তম ও সুন্নত। (ইবনে মাজাহ, মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ, মাছাবীহুস সুন্নাহ ইত্যাদি)

 

 সাইয়্যিদ মুহম্মদ আফতাবুয যামান

মিরপুর, ঢাকা

 

সুওয়াল: দেশে প্রচলিত কোমল পানীয় যেমন কোকাকোলা, ফানটা, হান্টার, টাইগার ইত্যাদি পান করা হালাল কিনা?

জাওয়াব: গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, এ সকল কোমলপানীয়তে এলকোহল মিশানো থাকে, তাই এগুলো পান করা হারাম। (বুখারী শরীফ, মুসনাদে আহমদ, আইনী শরহে বুখারী, উমদাতুল ক্বারী, ইরসাদুস সারী ইত্যাদি)

 

মুহম্মদ আব্দুর রউফ

ঠনঠনিয়া, বগুড়া

 

সুওয়াল: সরকারী নিয়ম বা আইন হলেই কি সম্মানিত শরীয়ত কর্তৃক বর্ণিত হারাম বিষয়গুলি হালাল হবে?

জাওয়াব: সরকারী নিয়ম বা আইন সম্মানিত শরীয়তসম্মত হলেই তা গ্রহনযোগ্য হবে। আর যদি সম্মানিত শরীয়ত উনার পরিপন্থী হয়, তাহলে তা অবশ্যই পরিত্যাজ্য। অতএব, সম্মানিত শরীয়ত কর্তৃক  বর্ণিত হারামকে সরকারী নিয়মের বা আইনের কারণে হালাল মনে করা কুফরী হবে। কারণ, সরকার তো সম্মানিত শরীয়ত প্রণেতা নয়। (বুখারী শরীফ, ফতহুল বারী, উমদাতুল ক্বারী, ইরসাদুস সারী, আক্বাঈদে নাসাফী, আক্বাঈদে হাক্কাহ, তাকমীলুল ঈমান)

মুহম্মদ ইরশাদুল আলম

পাটগ্রাম, লালমনিরহাট

 

সুওয়াল: জমি ক্রয়-বিক্রয় ও পরীক্ষা দেয়ার জন্য ছবি তোলা যায় কি না?

জাওয়াব: হারাম সর্বদা হারাম থাকবে। যে কোন কারণে হোক ছবি তোলা জায়িয নয়, বরং হারাম। এ অবস্থায় কোন ব্যক্তি যদি হারাম জেনে তোলে তাহলে সে ফাসিক হবে, আর হালাল জেনে তুললে কাফির হবে। তবে কেউ যদি সম্মানিত শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে মা’জুর হয়, আর এমতাবস্থায় যদি সে ছবি তোলে তবে তা মুবাহ হবে। তবে মা’জুর হিসেবে যতটুকু প্রয়োজন তাও আবার হারাম জেনেই তুলতে হবে। (সমূহ হাদীছ শরীফ, তাফসীর শরীফ ও ফিক্বাহর কিতাব)

 

মুহম্মদ বদরুয যামান

কটিয়াদী, কিশোরগঞ্জ

সুওয়াল: অপবিত্র শরীরে অর্থাৎ গোসল ফরয অবস্থায় দুয়া পড়া জায়িয আছে কিনা?

জাওয়াব: হ্যাঁ, অপবিত্র শরীরে অর্থাৎ গোসল ফরয হওয়া অবস্থায় দুয়া পড়া জায়িয। যদিও পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত দুয়ামূলক আয়াত শরীফ হয়। কিন্তু অপবিত্র অবস্থায় কোন মতেই পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা জায়িয নেই। (সমূহ ফিক্বাহর কিতাব)

 

মুহম্মদ বাক্বীবিল্লাহ

চিকন্দী, শরীয়তপুর।

সুওয়াল: পবিত্র তারাবীহ নামায পড়িয়ে উজরত বা পারিশ্রমিক নেয়া জায়িয কিনা?

জাওয়াব: হ্যাঁ উলামায়ে মুতাআখখিরীন উনাদের ফতওয়াগ্রাহ্য মতে: নামায পড়িয়ে, পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করে ও দ্বীনি শিক্ষা দিয়ে উজরত বা পারিশ্রমিক নেয়া অবশ্যই জায়িয। (বাহরুর রায়িক, জাওহারাতুন নাইয়্যিরাহ, ফতওয়ায়ে আলমগীরী, ফতওয়ায়ে আযীযী)

মুহম্মদ আব্দুল বাক্বী

নওগাঁ

 

সুওয়াল: প্রয়োজনে বাইরে বের হওয়ার সময় মহিলাদেরকে কতটুকু অঙ্গ ঢেকে বের হতে হবে? জানাবেন।

জাওয়াব: বেগানা পুরুষের সামনে বেগানা মহিলার সম্পূর্ণ অঙ্গ ঢেকে রাখা ফরয। সুতরাং মুখে নেকাব ঝুলাতে হবে এবং হাত ও পায়ে মোজা পরিধান করতে হবে। আর বোরকা দিয়ে মাথা থেকে পা পর্যন্ত সমস্ত দেহ ঢেকে বের হতে হবে। তাহলেই খাছ পর্দা পালিত হবে। অন্যথায় হবে না। (তাফসীরে কবীর, তাফসীরে মাযহারী, তাফসীরে কুরতুবী, তাফসীরে রূহুল বয়ান, তাফসীরে রূহুল মায়ানী, বুখারী শরীফ, মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ, ফতওয়ায়ে শামী, আলমগীরী, আইনুল হিদায়া)

 

ক্বারী মুহম্মদ আব্দুল্লাহ

ঢাকা

 

সুওয়াল: মেয়েদের গলার আওয়াজ শ্রবন করা কি?

জাওয়াব: বিনা জরুরতে বেগানা পুরুষের জন্য বেগানা মহিলার কণ্ঠস্বর শ্রবন করা জায়িয নেই। কারণ, মেয়েদের গলার আওয়াজও আওরাত বা সতরের অন্তর্ভুক্ত। (তাফসীরে কবীর, তাফসীরে মাযহারী, তাফসীরে কুরতুবী, তাফসীরে রূহুল বয়ান, তাফসীরে রূহুল মায়ানী, ছফওয়াতুত তাফাসীর, বুখারী শরীফ, তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ ইত্যাদি)

 

মুহম্মদ শহীদুল্লাহ

সিলেট

 

সুওয়াল: হিন্দু-খ্রিস্টান অর্থাৎ বিধর্মীদের হাদিয়া গ্রহন করা যাবে কিনা?

জাওয়াব: হালাল হলে তাদের হাদিয়া গ্রহণ করা জায়িয। তবে হ্যাঁ তারা যদি তা মুসলমান উনাদেরকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার জন্য দেয় তবে তা নেয়া জায়িয নেই বরং তা গ্রহণ করা হারাম। আর যদি হিদায়েত লাভের উদ্দেশ্যে বা মুহব্বত হাছিলের জন্য দেয় তবে তা নেয়া জায়িয। (সীরাতগ্রন্থসমূহ, নাওয়াদিরুল ফতওয়া)

 

মুহম্মদ বাইজীদুর রহমান

এন. গঞ্জ (নূরানীগঞ্জ)

সুওয়াল: প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ জামাতে চিল্লা দিলে নাকি হিজরতের ছাওয়াব পাওয়া যায়? জানাবেন।

জাওয়াব: প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ জামাতের লোকদের অসংখ্য কুফরী আক্বীদাহ রয়েছে। তাই তাদের সাথে চিল্লা দেয়াই জায়িয নেই। আর তাদের সাথে চিল্লা দিলে হিজরতের ছাওয়াব পাওয়া যাবে একথা সম্পূর্ণরূপে কুফরী। বরং তাদের কুফরী আক্বীদা থাকার কারণে তাদের ছোহবতে থাকলে নিজের পবিত্র ঈমান ও আমল ধ্বংস হবে। (তাফসীরে আহকামুল কুরআন জাসসাস, তাফসীরে মাযহারী, তাফসীরে কবীর, তাফসীরে রূহুল বয়ান, বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মিরকাত শরীফ, মিশকাত শরীফ, ফতওয়ায়ে আলমগীরী, শামী, আক্বাঈদে নাসাফী, শরহে আক্বাঈদে নাসাফী, তাহাবী শরীফ ইত্যাদি)

 

মুহম্মদ আব্দুর রশীদ

রাজারহাট, কুড়িগ্রাম

সুওয়াল: ফজরের নামাযে কুনূতে নাযিলা পড়ার বিধান কি?

জাওয়াব: আমাদের সম্মানিত হানাফী মাযহাব উনার মতে ফজরের নামাযে কুনূতে নাযিলা পড়া নাজায়িয। কারণ, তার বিধান মানসূখ হয়েছে। তাই কেউ যদি ফজর নামাযে কুনূতে নাযেলা পড়ে, তাহলে তার নামায ফাসিদ হয়ে যাবে। (তাফসীরে কুরতুবী, আবূ দাউদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, নাসায়ী শরীফ, মিরকাত শরীফ, বযলুল মাযহূদ, শরহে মায়ানিল আছার, বাহরুর রায়িক, কাশফুল হাক্বায়িক্ব, আইনী, হিদায়া, শরহুয যারকানী ইত্যাদি)

 

মুহম্মদ কাওছার

বানারীপাড়া, বরিশাল

 

সুওয়াল: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কিসের তৈরী?

জাওয়াব: তিনি পবিত্র নূর মুবারক উনার তৈরী। উনাকে মাটির তৈরী বা মাটি ও নূর মিশ্রিত বলা কাট্টা কুফরী। (তাফসীরে রূহুল মায়ানী, দালায়িলুন নুবুওওয়াহ, আফদ্বালুল কুরা, মাতালিউল মাসাররাত, তারীখুল খমীস, মাওয়াহিব, মাদারিজুন নুবুওওয়াত, নূরে মুহম্মদী, ফতওয়ায়ে হাদীছিয়্যাহ, নশরুত তীব, মুসনাদে আব্দুর রাযযাক, শরহে যারক্বানী ইত্যাদি)

 

মুহম্মদ নূরুল ইসলাম

বরিশাল

 

সুওয়াল: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মৃত বলা কি?

জাওয়াব: উনাকে মৃত বলা কাট্টা কুফরী। বরং উনি হায়াতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। যেখানে শহীদগণ উনাদেরকে মৃত বলতে নিষেধ করা হয়েছে। সেখানে উনাকে মৃত বলা কত বড় কুফরী তা সহজেই অনুমেয়। (তাফসীরে মাযহারী, সিররুল আসরার, সীরাতে গউছুল আ’যম, আল বুনিয়ানুল মুশাইয়্যাদ, সীরাতুন্নবী বা’দ আয বিসালুন্নবী, রওদ্বাতুল ক্বইয়্যূমিয়াত, তারীখুল আউলিয়া, স্বপ্নযোগে প্রিয় নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তবাকাত, আবে হায়াত, হাক্বীক্বতে মুহম্মদী মীলাদে আহমদী ইত্যাদি)

 

মুহম্মদ জাকির হুসাইন

হিলি, দিনাজপুর

 

সুওয়াল: পবিত্র মীলাদ শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াম শরীফ উনার বিধান জানতে চাই।

জাওয়াব: পবিত্র মীলাদ শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াম শরীফ পাঠ করা সুন্নত। পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে উনার প্রমাণ পাওয়া যায়। যাঁরা পবিত্র মীলাদ শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াম শরীফ করবে তারা অবশ্যই নাজাত লাভ করবে। সুবহানাল্লাহ! এজন্য দেখা যায় হযরত ছাহাবায়ে কিরাম, তাবিয়ীন, তাবে-তাবিয়ীন ও হক্কানী-রব্বানী সকল উলামায়ে কিরাম উনারা পবিত্র মীলাদ শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াম শরীফ উনার অনুষ্ঠান করেছেন এবং স্ব স্ব কিতাবে এ বিষয়ে ফযীলত বর্ণনা করেছেন। সুবহানাল্লাহ! (সুবুলুল হুদা ফী মাওলিদে মুস্তফা, আততানবীর, আননি’মাতুল কুবরা)

 

মুহম্মদ ইসলামুদ্দীন

শাজনপুর, কিশোরগঞ্জ

 

সুওয়াল: বাদশা আবূ সাঈদ মুজাফফরুদ্দীন কৌকরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি কেমন ছিলেন?

জাওয়াব: ৬০৪ হিজরী সনে ইরাকের মুসেল শহরের বাদশা হযরত আবু সাঈদ মুজাফফরুদ্দীন কৌকরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সর্বপ্রথম রাষ্ট্রীয়ভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে পবিত্র মীলাদ শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াম শরীফ উনার মাহফিল করেন। উনি ছিলেন বিজ্ঞ সুন্নী আলিম, পরহেযগার, মুত্তাক্বী, সখি বা দানশীল ও ন্যায় পরায়ন বাদশা। (ইবনে কাছীর, সিয়ারু আ’লামীন নুবালা, ওয়াফইয়াতুল আ’ইয়ান, বিদায়া ওয়ান নিহায়া)

 

মুহম্মদ ফারূকুয যামান

মোমেনশাহী

 

সুওয়াল: পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করার বিধান কি? জানতে চাই।

জাওয়াব: সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ, পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন বা উদযাপন করা সকলের জন্য ফরযে আইন। উনার বিরোধিতাকারীরা কাফির। (পবিত্র সূরা ইউনুস ৫৮নং পবিত্র আয়াত শরীফ, তাফসীরে রুহুল মায়ানী)

 

মুহম্মদ হুজ্জাতুল্লাহ

মহজমপুর, মোমেনশাহী

 

সুওয়াল: সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সকল স্থানে হাযির-নাযির হতে পারেন কি না?

জাওয়াব: নূরুম মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সর্বত্র হাযির-নাযির। এটাই আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াহ উনার ফাতওয়া। এর স্বপক্ষে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের অনেক দলীল প্রমাণ রয়ে গেছে। (তাফসীরে মাযহারী, রুহুল বয়ান, মিশকাত শরীফ, ইহইয়াউ উলূমিদ্দীন)

 

আল্লামা মুহম্মদ শিবলী

উলিপুর, কুড়িগ্রাম

 

সুওয়াল: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যে ব্যক্তি পাঁচ জায়গায় দুনিয়াবী কথা বলবে তার চল্লিশ বছরের ইবাদত নষ্ট হয়ে যাবে। ১. মাসজিদে ২. পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াতের সময়, ৩. আযানের সময়, ৪. হক্কানী আলিমের মাজলিসে ও ৫. কবরস্থানে।” এ পবিত্র হাদীছ শরীফখানা ছহীহ কি না?

জাওয়াব: অবশ্যই অত্র পবিত্র হাদীছ শরীফখানা ছহীহ বা বিশুদ্ধ।

 

মুহম্মদ মুঈনুদ্দীন

চট্টগ্রাম

 

সুওয়াল: ফরয নামাযের পর হাত তুলে মুনাযাত করা কি জরুরী?

জাওয়াব: ফরয নামাযের পর হাত তুলে মুনাযাত করা জায়িয ও সুন্নত এবং দুয়া কবুলের অন্যতম কারণ। (তাফসীরে রূহুল মায়ানী, তিরমিযী শরীফ, মাআরিফুস সুনান, মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বা, আল মুরীদ ইলাল মুরাদ, সাবাহাতুল ফিকির, কিতাবুল আযকার, নুযহাতুল মাজালিস, মারাকিউল ফালাহ, মাজমাউয যাওয়ায়িদ, নূরুল ইদ্বাহ, ফতওয়ায়ে বাজ্জাজিয়া, সাআইয়াহ, নাফায়িসুল মারগুবাহ, ইমদাদুল ফতওয়া, ইমদাদুল মুফতিয়ীন, ফতওয়ায়ে দেওবন্দ)

 

মুহম্মদ যাহিদুল ইসলাম

নাটোর।

 

সুওয়াল: নূরুম মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কি গইব জানতেন?

জাওয়াব: হ্যাঁ, তিনি অবশ্যই গইব জানতেন। উনার গইব জানাকে বলে মুত্তালাউন আলাল গইব। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি হলেন আলিমুল গইব। (তাফসীরে রুহুল বয়ান, রুহুল মায়ানী, খাযিন, বাগবী, জালালাইন, সাবী, আযীযী, মাআলিমুত তানযীল, হুসাইনী, বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, শরহুস সুন্নাহ শরীফ, মিশকাত শরীফ, তবারানী শরীফ, ইবনে আবী শয়বা, আবু ইয়ালা, কানযুল উম্মাল, লুগাতুল আহাদীছ, মাকতুবাত শরীফ, মাদারিজুন নুবুওয়াত)

 

মুহম্মদ আলী আকবার, চাঁদপুর

 

সুওয়াল: নির্দিষ্ট তারিখে তথা ইন্তিকালের তৃতীয় দিন, সপ্তম দিন, চল্লিশতম দিন ও বার্ষিকী পালন উদ্দেশ্যে পবিত্র কুরআন শরীফ খতম করা এবং খানার ব্যবস্থা করা জায়িয আছে কি না?

জাওয়াব: হ্যাঁ, এগুলো অবশ্যই জায়িয আছে। কারণ এতে মৃত ব্যক্তির উপকার হয়। (বুখারী শরীফ, মিশকাত শরীফ, ফতওয়ায়ে আযীযী, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীক্বিয়া, জাআল হক্ব, এবং সীরতগ্রন্থসমূহ)

 

মুহম্মদ হিলালুদ্দীন

চাঁদপুর

 

সুওয়াল: কবরের উপর গম্বুজ বা ঘর নির্মাণ করার বিধান কি?

জাওয়াব: কবরের উপর গম্বুজ বা ঘর নির্মাণ করা জায়িয। (ফতওয়ায়ে আযীযী, জাআল হক্ব)

 

মুহম্মদ উওয়ায়েস ক্বরনী

কুমিল্লা

 

সুওয়াল: কবরে বাতি জ্বালানো জায়িয কি না?

জাওয়াব: কবর যিয়ারতের সুবিধার্থে ক্ববরস্থানকে আলোকিত করার জন্য বাতি জ্বালানো জরুরী। তবে অপ্রয়োজনীয় অতিরিক্ত বাতি জালানো ঠিক হবে না। (ফতওয়ায়ে আযীযীয়া)

 

মুহম্মদ আব্দুল মাজিদ

রাজবাড়ী

 

সুওয়াল: খইরুল কুরূনে পবিত্র মীলাদ শরীফ ছিলো কিনা?

জাওয়াব: হ্যাঁ খইরুল কুরূনে পবিত্র মীলাদ শরীফ অবশ্যই ছিল। কেননা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, হযরত তাবিয়ীন ও তাবি’ তাবিয়ীন রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের যামানাতেই পবিত্র মীলাদ শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াম শরীফ পাঠ করা হতো। তাই তা সুন্নতে ছাহাবা উনার অন্তর্ভুক্ত। (আত তানবীর ফী মাউলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর, সুবুলুল হুদা, আন নি’মাতুল কুবরা)

 

মুহম্মদ রিয়াদুয যামান

বরিশাল

 

সুওয়াল: নখ, চুল কাটার নির্দিষ্ট কোন দিন আছে কিনা?

জাওয়াব: সপ্তাহে দুই দিন ইয়াওমুস সাবত্ বা শনিবার ও ইয়াওমুল আরবিয়া  বা বুধবার নখ কাটা ও চুল কাটা নিষেধ। আর ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম বা সোমবার শরীফ, ইয়াওমুল খমীস বা বৃহস্পতিবার ও ইয়াওমুল জুমুয়াহ বা জুমুয়াবার নখ কাটা ও চুল কাটা উত্তম অর্থাৎ সুন্নত। (শামায়িল শরীফ)

 

আল্লামা মুহম্মদ শাহীনুর রহমান

নাগেশ্বরী, কুড়িগ্রাম

 

সুওয়াল: খেলাধুলা দেখে খুশি প্রকাশ করা বা বাহবা দেয়া জায়িয কি না?

জাওয়াব: সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে সর্বপ্রকার খেলাধুলা হারাম। তাই খেলাধুলা দেখে খুশি প্রকাশ করা বা বাহবা দেয়া কুফরী। এতে হারাম কাজে খুশি প্রকাশ করার কারণে ঈমান চলে যাবে। বিয়ে করে থাকলে স্ত্রী তালাক হবে, হজ্জ করে থাকলে হজ্জ বাতিল হবে। (মুস্তাদরিক লিল হাকিম, বাহরুর রায়িক, খানিয়া, দুররুল মুখতার, আক্বাঈদে নাসাফী, ফিক্বহুল আকবার ইত্যাদি)

সাইয়্যিদ মুহম্মদ নূরুল আবছার নূরা

পাটপুকুরিয়া, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম

 

সুওয়াল: নামাযে থাকা অবস্থায় বিদ্যুৎ চলে গেলে চার্জ লাইট বা টর্চ লাইট জ্বালানো যাবে কিনা?

জাওয়াব: নামাযে থাকা অবস্থায় বিদ্যুৎ চলে গেলে চার্জ লাইট বা টর্চ লাইট অথবা অন্য যে কোন লাইট বা বাতি জ্বালানো যাবে। তবে যিনি নামায পড়ছেন তিনি নামায পড়া অবস্থায় উক্ত লাইট বা বাতি জ্বালাতে পারবেন না। উনাকে লাইট বা বাতি জ্বালাতে হলে উনি যে নামায পড়ছেন সেই নামাযের সালাম ফিরানোর  পর জ্বালাতে হবে।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

تحريـمها التكبير وتحليلها التسليم

অর্থাৎ নামাযে তাকবীরে তাহরীমার দ্বারা (বাইরের সব কাজ) নিষিদ্ধ হয়ে যায় আর সালাম ফিরানোর দ্বারা তা হালাল বা বৈধ হয়ে যায়। (আহমদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ, ইবনু মাজাহ শরীফ ইত্যাদি)

অর্থাৎ মুছল্লী নামায পড়া অবস্থায় বাইরের কোন কাজ করতে পারবে না, করলে তার নামায ফাসিদ বা ভঙ্গ হয়ে যাবে। শুধু তাই নয় পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় ফিক্বাহর কিতাবসমূহে বর্ণিত হয়েছে, একই রোকনে দুবারের বেশি শরীর চুলকালে এবং চুলকানোর পরিমাণ দু’ তাসবীহের বেশি হলে সেটা আমলে কাছীরের অন্তর্ভুক্ত। আমলে কাছীর নামায ভঙ্গের একটি অন্যতম কারণ।

এছাড়া কেউ নামায পড়ছেন এমন অবস্থায় বিদ্যুৎ চলে গেল তখন যদি কেউ এমন থাকেন যিনি নামাযে নেই তখন যিনি নামাযে নেই তিনি লাইট বা বাতি জ্বালাতে পারবেন।

 

মুহম্মদ তৈমুর রহমান

আটোয়ারী, পঞ্চগড়।

 

সুওয়াল: ই’তিকাফের জন্য বয়স নির্দিষ্ট আছে কিনা? ১২-১৩ বৎসরের ছেলের মাধ্যমে ই’তিকাফ করালে আদায় হবে কিনা?

জাওয়াব: সাধারণভাবে যে কেউ বা যে কোন বয়সের পুরুষ বা মহিলা ই’তিকাফ করতে পারেন। তবে পুরুষদের জন্য মসজিদে আর মহিলাদের জন্য ঘরে ই’তিকাফ করা শর্তারোপ করা হয়েছে। ই’তিকাফ নফল, সুন্নত, ওয়াজিব বিভিন্ন প্রকার রয়েছে। কেউ ই’তিকাফের মানত করলে যতদিন বা যত মাস মানত করেছে ততদিন ই’তিকাফ করাটা তার জন্য ওয়াজিব হবে। আর নফল ই’তিকাফ হলো, বছরের যে কোন সময় নফল ই’তিকাফ করতে পারে। অর্থাৎ কেউ যদি মনে করে, সে যতক্ষণ মসজিদে অবস্থান করবে ততক্ষণ সে ই’তিকাফ অবস্থায় থাকবে, এবং সে অনুযায়ী সে নিয়ত করলে সে মু’তাকিফ হিসেবে গন্য হবে।

আর রমাদ্বান মাসের শেষ দশদিনের যে ই’তিকাফ তা সুন্নতে মুয়াক্কাদায়ে কিফায়া। উক্ত ই’তিকাফ কোন নাবালেগ বা অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালক যদি করে তবে সে তার ফযীলত পাবে- যেমন সে রোযা রাখার কারণে রোযার ফযীলত পেয়ে থাকে, যদিও তার উপর রোযা ফরয নয়। কিন্তু কেউ রোযার কাফফারা আদায় করার জন্য এমন ব্যক্তিকে খাওয়াতে হবে বা খাদ্য দান করতে হবে যার উপর রোযা ফরয। একইভাবে ১২-১৩ বছরের অপ্রাপ্ত কোন বালকের দ্বারা ই’তিকাফ করানো হলে সুন্নতে মুয়াক্কাদা ই’তিকাফ আদায় হবে না। উক্ত ই’তিকাফ আদায় করতে হলে প্রাপ্ত বয়স্ক মু’তাকিফ হতে হবে।

 

মুহম্মদ ওয়ালীউল্লাহ

বানারীপাড়া, বরিশাল

 

সুওয়াল: মোবাইল বন্ধ না করে নামায শুরু করলে যদি কল আসে তখন পকেট থেকে নিয়ে দেখে বন্ধ করা যাবে কিনা?

জাওয়াব: নামাযে দাঁড়ানোর পূর্বে অবশ্যই মোবাইল ফোন বন্ধ করে নামাযে দাঁড়াতে হবে। এ ব্যাপারে খুব সতর্ক থাকতে হবে। কেননা যে কোন সময় মোবাইলে কল আসতে পারে তাতে মুছল্লী বা নামাযীদের মন সেদিকে ধাবিত হবে এবং হুযূরী বা একনিষ্ঠতার ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে।

কদাচিৎ ভুলে, বেখেয়ালে কেউ মোবাইল ফোন বন্ধ না করে নামায শুরু করলো এবং নামায পড়া অবস্থায়ই কল আসলো, সেক্ষেত্রে শুরু করা নামায যথারীতি শেষ করতে হবে। কিন্তু নামায পড়া অবস্থায় পকেট থেকে মোবাইল বের করে, কে কল করেছে সেটা দেখে, তারপর মোবাইল বন্ধ করা কখনোই শুদ্ধ হবে না। বরং সেটা আমলে কাছীর হবে এবং নামায ভঙ্গের কারণ হবে। কেউ এরূপ করলে তাকে উক্ত নামায পুনরায় আদায় করতে হবে।

 

মুহম্মদ আলাউদ্দীন আল আযাদ

মতলব, চাঁদপুর

সুওয়াল: ই’তিকাফের সময় মোবাইলে মা-বাবা ও আত্মীয়-স্বজনদের সাথে কথা বললে ই’তিকাফের ক্ষতি হবে কিনা?

জাওয়াব: ই’তিকাফকারীর জন্য সাধারণভাবে মোবাইল ব্যবহার করাই অনুচিত। কেননা ই’তিকাফ হচ্ছে দুনিয়াবী যাবতীয় কার্যকলাপ ও পরিবার-পরিজন হতে ভিন্ন হয়ে আলাদাভাবে পুরুষদের জন্য জামে মসজিদে ও মহিলাদের জন্য ঘরে ইবাদত কার্যে মশগুল থাকা। যার কারণে ই’তিকাফ অবস্থায় জাগতিক ফায়দাদায়ক কাজ করা অবস্থাভেদে হারাম ও মাকরূহ তাহরীমী বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

কাজেই, সাধারণভাবে ই’তিকাফ অবস্থায় পিতা-মাতা হোক কিংবা পরিবারের অন্য কেউ হোক অথবা কোন আত্মীয়-স্বজন হোক কারো সাথেই মোবাইলে কথা বলা জায়িয নেই।

তবে যদি ছেলে-মেয়ে, পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনরা নামায-কালাম, যিকির-আযকার, রোযা ইত্যাদি ইবাদত-বন্দেগী ঠিকমতো করে কিনা তা খোঁজখবর নেয়ার জন্য হয় তাহলে ওজরে জায়িয হবে। (সমূহ ফিক্বাহর কিতাব)

 

মুহম্মদ আতাউর রহমান

রাজশাহী

 

সুওয়াল: একজন বড় অঙ্কের টাকা একজনের কাছে আমানত রেখেছে, তবে প্রয়োজনে ব্যবহার করতে বলেছে। যিনি টাকা আমানত রেখেছেন উনাকে যাকাত দিতে হবে কিনা?

জাওয়াব: হ্যাঁ, আমানতদাতা যত টাকা আমানত রেখেছে, উক্ত সম্পূর্ণ টাকারই যাকাত প্রদান করতে হবে আমানতদাতাকে, যেহেতু টাকার মালিক আমানতদাতা নিজেই। (আহকামুয যাকাত)

 

মুহম্মদ ছগীর হুসাইন

নরসিংদী

 

সুওয়াল: যদি লিমিটেড কোম্পানী বা যুক্ত মালিকানায় কোন ব্যবসা পরিচালিত হয় এবং যারা টাকা বিনিয়োগ করেছেন তাদের পূঁজির যাকাত দিলে সেই টাকায় কেনা ব্যবসার মালামালের উপর আলাদা যাকাত দিতে হবে কিনা?

জাওয়াব: লিমিটেড কোম্পানী বা যৌথ মালিকানায় বিনিয়োগকৃত পূঁজির যাকাত দিলে সেই টাকায় কেনা ব্যবসার মালামালের উপর আর যাকাত দিতে হবে না। কারণ বৎসরে একবারই যাকাত ফরয হয়। (আহকামুয যাকাত)

 

মুহম্মদ আব্দুর রশীদ, রংপুর

 

সুওয়াল: কোন ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নেয়ার পর সেই টাকায় কেনা ব্যবসার মালামালের উপর যাকাত দিতে হবে কিনা?

জাওয়াব: ব্যাঙ্ক থেকে ঋণের টাকায় ক্রয়কৃত ব্যবসার মালামালের উপর যাকাত দিতে হবে না। (আহকামুয যাকাত)

 

মুহম্মদ জাহাঙ্গীর হুসাইন, গাজীপুর

 

সুওয়াল: সোনা কেনার সময় একমূল্য এবং বিক্রি করতে গেলে কম মূল্য। যিনি নিসাবের হিসাব করেন তিনি সোনা বিক্রী করতে গেলে কম মূল্য পাবেন। তাহলে নিসাবের হিসাব কোন মূল্যের উপর করতে হবে? নতুন সোনা কেনা মূল্যে না কি পুরান সোনা বিক্রীর মূল্যে?

জাওয়াব: যিনি স্বর্ণের যাকাত দিবেন উনার কাছে যে মানের (ক্যারেটের) স্বর্ণ আছে, তার বাজার মূল্য অনুযায়ী যাকাত প্রদান করতে হবে। পুুরাতন স্বর্ণের বাজারমূল্য অনুযায়ী যাকাত দিলে চলবে না। তবে যদি স্বর্ণ বিক্রি করে নগদ টাকা নেয় তাহলে নগদ টাকার হিসেবে যাকাত দিবে। আর যিনি স্বর্ণ বেচা-কেনা করেন তাকে কেনা দর অনুযায়ী নিসাব হিসাব করে যাকাত আদায় করতে হবে। (আহকামুয যাকাত)

 

মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, চাঁদপুর

 

সুওয়াল: তারাবীহ নামাযে দু’ রাকায়াত ও চার রাকায়াতের পর কি দুয়া পড়তে হয়? এবং কত রাকায়াত পর পর মুনাজাত করার নিয়ম?

জাওয়াব: হ্যাঁ তারাবীহ নামাযে দু রাকায়াত পর এবং চার রাকায়াত পর দুয়া পড়তে হয়। আর চার রাকায়াত পর পর মুনাযাত করতে হয়। নি¤েœ বিস্তারিত বর্ণনা করা হলো:

তারাবীহ নামাযে দু’রাকায়াতের পর নিম্নোক্ত দুয়া পড়তে হয়-

هذا من فضل ربى يا كريم المعروف يا قديم الاحسان احسن الينا باحسانك القديم ثبت قلوبنا على دينك برحمتك يا ارحم الرحمين.

উচ্চারণ: হাযা মিন ফাদ্ব্লি রব্বী, ইয়া কারীমাল মা’রূফ, ইয়া ক্বদীমাল ইহসান, আহ্সিন ইলাইনা বিইহ্সানিকাল ক্বদীম, ছাব্বিত কুলূবানা আলা দ্বীনিকা বিরহ্মাতিকা ইয়া র্আহামার রাহিমীন।

অর্থ: ‘ইহা (পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার রোযা ও তারাবীহ নামায) আমার মহান রব তায়ালা উনার অনুগ্রহ। হে সুপরিচিত বা মহানতম অনুগ্রহকারী। হে চির ইহসানকারী। আপনার চিরন্তন ইহসানের দ্বারা আমাদের প্রতি ইহসান করুন এবং আপনার সদয় অনুগ্রহের দ্বারা আমাদের দিল-মনকে আপনার দ্বীনের উপর কায়িম রাখুন হে শ্রেষ্ঠতম অনুগ্রহকারী।

আর চার রাকায়াতের পর নিম্নোক্ত দুয়া পড়তে হয়-

سبحان ذى الـملك والـملكوت سبحان ذى العزة والعظمة والهيبت والقدرة والكبرياء والجبروت. سبحن الـملك الحى الذى لا ينام ولا يموت ابدا ابدا سبوح قدوس ربنا ورب الـملئكة والروح.

উচ্চারণ: সুবহানা যিল মুল্কি ওয়াল মালাকূতি সুবহানা যিল ইয্যাতি ওয়াল আয্মাতি ওয়াল হাইবাতি ওয়াল কুদরতি ওয়াল কিব্রিয়ায়ি ওয়াল জাবারূত, সুবহানাল মালিকিল হাইয়িল লাযী লা-ইয়ানামু ওয়ালা-ইয়ামূতু আবাদান আবাদা, সুব্বূহুন কুদ্দূসুন রব্বুনা ওয়া রব্বুল মালায়িকাতি ওর্য়া রূহ।

অর্থ: ‘আমি ঐ মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি যিনি সমস্ত কর্তৃত্ব ও সমস্ত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের মালিক। আমি উনারই পবিত্রতা ঘোষণা করছি যিনি সমস্ত ইজ্জত, আযমত, হাইবত (প্রভাব), কুদরত, বড়ত্ব ও শক্তিমত্তার অধিকারী। আমি সেই চিরজীবি মালিক উনারই পবিত্রতা ঘোষণা করছি যিনি নিদ্রা যান না অর্থাৎ সদা জাগ্রত, যিনি কখনো বিছাল শরীফ লাভ করবেন না অর্থাৎ চির অমর, যিনি মহামহিম, পুতঃপবিত্র, তিনিই আমাদের রব এবং হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের ও রূহসমূহ উনাদের রব।’

উল্লেখ্য, যদি কারো উপরোক্ত দুয়া জানা না থাকে তবে সে দুরূদ শরীফ পাঠ করবে।

তারাবীহর নামাযে চার রাকায়াত পর পর মুনাজাত করার নিয়ম। মুনাজাতটি নিম্নরূপ-

اللهم صل على سيدنا نبينا حبيبنا شفيعنا مولانا وسيلتى اليك واله وسلم.

رب ارحم هما كما ربيانى صغيرا. ربنا افرغ علينا صبرا وتوفنا مسلمين. ربنا اتنا فى الدنيا حسنة وفى الاخرة حسنة وقنا عذاب النار.

اللهم صل على سيدنا نبينا حبيبنا شفيعنا مولانا معدن الجود والكرم واله وسلم.

اللهم انا نسئلك الجنة ونعوذبك من النار يا خالق الجنة والنار برحمتك يا عزيز يا غفار يا كريم يا ستار يا رحيم يا جبار يا خالق يا بار. اللهم اجرنا من النار يا مجير يا مجير يا مجير برحمتك يا ارحم الرحمين.

اللهم صل على سيدنا نبينا حبيبنا شفيعنا مولانا النبى الامى واله وسلم.

سبحن ربك رب العزة عما يصفون وسلم على الـمرسلين والحمد لله رب العالـمين.

উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ছল্লি আলা সাইয়্যিদিনা ওয়া নাবিইয়িনা, ওয়া হাবীবিনা ওয়া শাফীয়িনা ওয়া মাওলানা ওয়াসীলাতী ইলাইকা ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লিম। রর্ব্বিহাম হুমা কামা রব্বাইয়ানী ছগীরা। রব্বানা আফ্রিগ আলাইনা ছবরাঁও ওয়া তাওয়াফ্ফানা মুসলিমীন। রব্বানা আতিনা ফিদ্ দুন্ইয়া হাসানাহ, ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাহ, ওয়া ক্বিনা আযাবান্ নার।

আল্লাহুম্মা ইন্না নাস্আলুকাল জান্নাতি ওয়া নাউযুবিকা মিনান নার, ইয়া খালিক্বাল জান্নাতি ওয়ান্ নার, বিরহ্মাতিকা ইয়া আযীযু, ইয়া গফ্ফারু, ইয়া কারীমু, ইয়া সাত্তারু, ইয়া রহীমু, ইয়া জাব্বারু, ইয়া খালিকু, ইয়া র্বারু, আল্লাহুম্মা আর্জিনা মিনান নার, ইয়া মুজীরু, ইয়া মুজীরু, ইয়া মুজীরু বিরহ্মাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমীন।

সুবহানা রব্বিকা রব্বিল ইয্যাতি আম্মা ইয়াছিফূন ওয়া সালামুন আলাল মুরসালীন ওয়াল হামদু লিল্লাহি রব্বিল আলামীন।’

অর্থ: “আয় খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক! আপনার ছলাত (খাছ রহমত মুবারক) ও সালাম (খাছ শান্তি মুবারক) আমাদের সাইয়্যিদ, আমাদের নবী, আমাদের হাবীব, আমাদের শাফায়াতকারী, আমাদের অভিভাবক নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর যিনি আপনার প্রতি আমার ওসীলা এবং উনার আযওয়াজ, আহলে বাইত ও আছহাবগণ উনাদের উপরও।

আয় মহান আল্লাহ পাক! আপনি আমাদের পিতা-মাতা উনাদের প্রতি দয়া-ইহসান করুন। যেরূপ উনারা আমাদেরকে ছোট বেলায় দয়া-ইহসানের সাথে লালন-পালন করেছেন। আয় মহান আল্লাহ পাক! আপনি আমাদেরকে ধৈর্য্যরে উপর ইস্তিক্বামত করে দিন এবং আমাদেরকে মুসলমান হিসেবে ইন্তিকাল দান করুন। আয় আমাদের মহান রব তায়ালা! আমাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে ভালাই দান করুন এবং জাহান্নামের শাস্তি থেকে পরিত্রাণ দিন।

অর্থ: “আয় খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক! আপনার ছলাত (খাছ রহমত মুবারক) ও সালাম (খাছ শান্তি মুবারক) আমাদের সাইয়্যিদ, আমাদের নবী, আমাদের হাবীব, আমাদের শাফায়াতকারী, আমাদের অভিভাবক নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর যিনি দান ও বখশীশের খনি এবং উনার আযওয়াজ, আহলে বাইত ও আছহাবগণ উনাদের উপরও।

আয় মহান আল্লাহ পাক! নিশ্চয়ই আমরা আপনারই নিকট জান্নাতের আরজু করছি এবং আপনারই নিকট জাহান্নাম থেকে পানাহ তলব করছি। আপনার সদয় অনুগ্রহে আমাদেরকে জান্নাত দান করুন এবং জাহান্নাম হতে পানাহ দান করুন হে জান্নাত-জাহান্নাম সৃষ্টিকারী, হে ক্ষমতাশীল, হে অতিশয় ক্ষমাকারী, হে পরম অনুগ্রহকারী, হে অপরাধ গোপনকারী, হে পরম অনুগ্রহপরায়ন, হে পরাক্রমশালী, হে সৃজনকারী, হে পরম অনুগ্রহকারী। আয় মহান আল্লাহ পাক! আপনার সদয় অনুগ্রহে আমাদেরকে জাহান্নামের আগুন হতে মুক্তিদান করুন, হে মুক্তিদানকারী, হে মুক্তিদানকারী, হে মুক্তিদানকারী হে শ্রেষ্ঠতম দয়ালু মহান আল্লাহ পাক।

অর্থ: “আয় খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক! আপনার ছলাত (খাছ রহমত মুবারক) ও সালাম (খাছ শান্তি মুবারক) আমাদের সাইয়্যিদ, আমাদের নবী, আমাদের হাবীব, আমাদের শাফায়াতকারী, আমাদের অভিভাবক যিনি মহান আল্লাহ পাক উনার লক্ষস্থল নবী নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর এবং উনার আযওয়াজ, আহলে বাইত ও আছহাবগণ উনাদের উপরও।

সমস্ত ইজ্জত-সম্মানের মালিক আপনার মহান রব তায়ালা উনার জন্যেই। যিনি পবিত্রতম তারা যা বর্ণনা করে থাকে তা থেকে। সালাম বা খাছ শান্তি বর্ষিত হোক রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের উপর। আর তামাম আলমের রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্যেই সমস্ত প্রশংসা।’ (দলীল: সমূহ হাদীছ শরীফ, তাফসীর ও ফিক্বাহর কিতাব)

 

মুহম্মদ তাজুল ইসলাম

মালয়েশিয়া

 

সুওয়াল: মহিলাদের জন্য তারাবীহ নামায জামায়াতে পড়ার হুকুম কি?

জাওয়াব: আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের আম ফতওয়া হলো মহিলাদের পাঁচ ওয়াক্ত, জুমুয়া, তারাবীহ ও ঈদের নামাযসহ সকল নামাযের জামায়াতের জন্য মসজিদ, ঈদগাহ  যে কোন স্থানে যাওয়া মাকরূহ তাহরীমী। আর খাছ ফতওয়া হলো কুফরী।

(এ সম্পর্কে বিস্তারিত ফতওয়া জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ১১, ১৪, ১৯, ২২, ২৯, ৩৭, ৪৪, ৪৭, ৪৮, ৫৫, ৬৫, ৭১, ৮২, ১০১ ও ১০২তম সংখ্যাগুলো পড়–ন যাতে বিশ্বখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহ হতে প্রায় ১০০টি দলীল-আদিল্লাহ পেশ করা হয়েছে।

 

মুসাম্মত সেলিনা আক্তার

 সদর, চাঁদপুর

 

সুওয়াল:  রোযা অবস্থায় সন্তানকে দুধ পান করালে মায়ের রোযা ভঙ্গ হবে কি?

জাওয়াব:  না, রোযা অবস্থায় সন্তানকে দুধ খাওয়ালে মায়ের রোযা ভঙ্গ হবে না, এমন কি ওযুও ভঙ্গ হবে না। (আলমগীরী)

 

মুহম্মদ বাহাউল ইসলাম

যাত্রাবাড়ী, ঢাকা।

 

সুওয়াল:  তরকারী পাক করার সময় লবন হয়েছে কিনা, তা দেখার জন্য জিহ¡ার অগ্রভাগ দিয়ে স্বাদ পরীক্ষা করা জায়িয আছে কিনা?

জাওয়াব:  সাধারণভাবে এরূপ করা জায়িয নেই। হ্যাঁ, যদি কেউ সতর্কতার সাথে এরূপ করে, তবে তা মাকরূহের সহিত জায়িয রয়েছে, না করাই উচিৎ। তবে কারো স্বামী যদি এমন জালিম হয় যে, তরকারীতে লবন কম বা বেশি হলে মারধর, জুলুম ইত্যাদি করে, তাহলে জালিমের জুলুম হতে বাঁচার জন্য জিহ¡ার অগ্রভাগ দিয়ে তরকারীর স্বাদ পরীক্ষা করা জায়েয রয়েছে। এক্ষেত্রে মাকরূহ্ হবেনা।

লক্ষ্যণীয় যে, তরকারীযুক্ত থুথু কোন ক্রমেই যেন ভিতরে প্রবেশ না করতে পারে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। (সমূহ ফিক্বাহ্র কিতাব)

 

মুহম্মদ শামীম হুসাইন (শামীম)

গুলবাগ, ঢাকা।

 

সুওয়াল: কোন ব্যক্তি যদি রোযা রেখে স্বপ্নে অথবা জাগ্রত অবস্থায় ভুলে কিছু পান করে অথবা খেয়ে ফেলে, তবে রোযা ভঙ্গ হবে কি?

জাওয়াব: না, রোযা রাখা অবস্থায় স্বপ্নে কিছু পান করলে বা খেলে রোযা ভঙ্গ হবে না। আর জাগ্রত অবস্থায় ভুলে পেট ভরে পানাহার করলেও রোযা ভঙ্গ হবেনা। তবে অবশ্যই রোযার কথা স্মরণ হওয়ার সাথে সাথেই পানাহার থেকে বিরত থাকতে হবে। রোযার কথা স্মরণ হওয়ার পরও যদি সামান্য খাদ্য বা পানীয় গিলে ফেলে, তবে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে। এতে শুধু উক্ত রোযার কাযা আদায় করতে হবে, কাফফারা দিতে হবেনা। (দুররুল মুখতার, শামী)

 

মুহম্মদ নাজমুল হুদা

পলাশ, নরসিংদী

 

সুওয়াল:  রোযা রাখা অবস্থায় বমি করলে রোযার কোন ক্ষতি হবে কি?

জাওয়াব: রোযা রাখা অবস্থায় বমি করার ব্যাপারে কয়েকটি সূরত কিতাবে বর্ণিত হয়েছে। বমি করাটা সাধারণতঃ দু’প্রকারের হয়ে থাকে- (১) ইচ্ছাকৃত, (২) অনিচ্ছাকৃত।

কেউ যদি ইচ্ছাকৃত মুখ ভরে বমি করে, তাহলে রোযা ভঙ্গ হবে। আর ইচ্ছাকৃত অল্প বমি করলে রোযা ভঙ্গ হবেনা। অনিচ্ছাকৃতভাবে মুখ ভরে বমি হোক অথবা অল্প বমি হোক, তাতে রোযা ভঙ্গ হবেনা। কেউ যদি ইচ্ছাকৃত মুখ ভরে অথবা অল্প বমি গিলে ফেলে, তাতে তার রোযা ভঙ্গ হবে। আর যদি অনিচ্ছাকৃতভাবে অল্প বমি ভিতরে চলে চায়, তাতে রোযা ভঙ্গ হবেনা। কিন্তু মুখ ভরা বমি অনিচ্ছাকৃতভাবেও ভিতরে চলে গেলে রোযা ভঙ্গ হবে।

উপরোল্লিখিত কোন কারণে রোযা ভঙ্গ হলে সেটার কাযা আদায় করতে হবে কিন্তু কাফ্ফাারা দিতে হবেনা।  (আলমগীরী)

 

মুহম্মদ আলমগীর হুসাইন

বাগাদী, চাঁদপুর

সুওয়াল:  রোযা রেখে নাকে পানি দেয়া ও গড়গড়া করা যাবে কিনা?

জাওয়াব: রোযা রেখে নাকে পানি দেয়া যাবে, তবে রোযা অবস্থায় নাকে পানি দিয়ে উপরের দিকে টান দেয়া যাবে না। আর কুল্লি করার সময় বা অন্য সময় গড়গড়া করা যাবে না। তবে ওযু করার সময় মুখের ভিতর পানি নিয়ে গড়গড়া না করে স্বাভাবিকভাবে মুখ নিচের দিকে রেখে পানি ফেলে দিতে হবে। (সমূহ ফিক্বহ্রে কিতাব)

 

মুহম্মদ সিরাজুল ইসলাম

উত্তর শাহ্জাহানপুর, ঢাকা।

 

সুওয়াল:  রোযা রাখা অবস্থায় চোখে ওষুধ বা সুরমা দিলে রোযা ভঙ্গ হবে কি?

জাওয়াব: না, রোযা রাখা অবস্থায় চোখে ওষুধ বা সুরমা দিলে রোযা ভঙ্গ হবে না। এমনকি যদি ওষূধের স্বাদ গলায় অনুভব হয় বা সুরমার রং যদি থুথুর সাথে দেখা দেয়, তাতেও রোযা ভঙ্গ হবেনা। (আলমগীরী, মাবছূত, আইনুল হেদায়া)

 

মুহম্মদ সোহেল, দুবাই।

 

সুওয়াল: রোযা রেখে টুথপেষ্ট, দাঁতের মাজন, কয়লা বা ছাই ইত্যাদি দ্বারা দাঁত মাজলে রোযার কোন ক্ষতি হবে কি?

জাওয়াব:  উপরে উল্লিখিত মাজনের দ্বারা দাঁত মাজলে রোযা মাকরূহ হবে। তবে যদি মাজনের সামান্য পরিমাণ ভিতরে চলে যায়, তাহলে রোযা ভঙ্গ হবে এবং ক্বাযা করা ওয়াজিব হবে, কাফ্ফারা আদায় করতে হবে না। (ফতওয়ায়ে আলমগীরী)

 

মুসাম্মত সুলতানা আক্তার, পিরোজপুর

 

সুওয়াল:  অনেকে দেখা যায়, রোযা রেখে বার বার থুথু ফেলে থাকে। এই থুথু না ফেলে গিলে ফেললে রোযার কোন ক্ষতি হবে কি?

জাওয়াব:  রোযা রেখে মুখের থুথু বার বার না ফেলে গিলে ফেললে রোযার কোন ক্ষতি হবে না। (আলমগীরী)

 

মুহম্মদ বায়েজীদ আলম

কদম তলা, রাজারবাগ, ঢাকা

 

সুওয়াল:  ই’তিকাফ  করার ফযীলত ও গুরুত্ব কতটুকু?

জাওয়াব:  পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে, যে ব্যক্তি পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার শেষ দশ দিন (সুন্নতে মুয়াক্কাদায়ে ক্বিফায়া) ই’তিকাফ করবে, মহান আল্লাহ পাক তাকে দু’টি পবিত্র হজ্জ ও দু’টি পবিত্র ওমরাহ করার সমতুল্য ছওয়াব দান করবেন।

আরো উল্লেখ করা হয়েছে যে, মহান আল্লাহ পাক তার পিছনের গুণাহখতা ক্ষমা করে দিবেন।

আরো বর্ণিত রয়েছে, যে ব্যক্তি একদিন ই’তিকাফ করবে, মহান আল্লাহ পাক তাকে জাহান্নাম থেকে তিন খন্দক দূরে রাখবেন। প্রতি খন্দকের দূরত্ব পাঁচশত বছরের রাস্তা।

ই’তিকাফের গুরুত্ব সম্পর্কে বলতে হয় যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রতি রমাদ্বান শরীফ মাসেই ই’তিকাফ করেছেন। এক রমাদ্বান শরীফ মাসে বিশেষ কোন কারণে ই’তিকাফ করতে না পারায় পরবর্তী রমাদ্বান শরীফ মাসে ২০ দিন ই’তিকাফ করেন। এমনকি উনার বিছাল শরীফ গ্রহণ করার পর উনার এ আমল মুবারক হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা জারী রেখেছিলেন। সুবহানাল্লাহ!

 

মুহম্মদ আতিকুর রহমান

সদর, চাঁদপুর

সুওয়াল:  ই’তিকাফের আহকাম সম্বন্ধে জানালে কৃতজ্ঞ হবো?

জাওয়াব:  ই’তিকাফের আভিধানিক অর্থ হলো গুণাহ হতে বেঁচে থাকা, অবস্থান করা, নিজেকে কোন স্থানে আবদ্ধ রাখা, কোণায় অবস্থান করা।

আর শরীয়তের পরিভাষায় রমাদ্বান মাসের শেষ দশ দিন দুনিয়াবী যাবতীয় কার্যকলাপ ও পরিবার-পরিজন হতে ভিন্ন হয়ে, আলাদাভাবে পুরুষের জন্য জামে মসজিদে ও মহিলাদের জন্য ঘরে ইবাদত কার্যে মশগুল থাকাকে ই’তিকাফ বলে।

ই’তিকাফ তিন প্রকার- (১) ওয়াজিব, (২) সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ, (৩) নফল। যিনি ই’তিকাফ করেন, তাকে বলে মু’তাকিফ। রমযানের শেষ দশ দিন ই’তিকাফ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ কিফায়া। প্রতি মসজিদে এলাকার তরফ হতে একজন মুতাকিফ হলেই সকলের পক্ষ হতে আদায় হয়ে যাবে, আর যদি কেউই ই’তিকাফ না করে, তাহলে সকলেরই সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ তরক করার গুণাহ হবে।

ই’তিকাফের শর্ত তিনটি- (১) পুরুষের জন্য মসজিদে, মহিলাদের জন্য ঘরের মধ্যে। (২) ই’তিকাফের জন্য নিয়ত করা, হদছে আকবর হতে পাক হওয়া। (৩) রোযা রাখা। তবে সাধারণভাবে ই’তিকাফের জন্য বালিগ হওয়া শর্ত নয়। ই’তিকাফ অবস্থায় জাগতিক ফায়দাদায়ক কাজ করা অবস্থাভেদে হারাম ও মাকরূহ্ তাহরীমী।

মু’তাকিফ ব্যক্তি মসজিদে এসে কোন বেহুদা কথা বা কাজ করবে না বা চুপ করে বসে থাকবে না। বরং ঘুম ব্যতীত বাকি সময় ইবাদত কার্যে মশগুল থাকতে হবে। যেমন- নফল নামায, কুরআন শরীফ তিলাওয়াত, যিকির, ইলম অর্জন ইত্যাদি। ই’তিকাফকারী বাইরে বের হওয়ার দু’টি জরুরত হতে পারে- (১) শরয়ী, (২) তবয়ী।

শরয়ী জরুরত হলো- যে মসজিদে ই’তিকাফ করছে, সেখানে জুমুয়া হয় না, অন্য কোন মসজিদে যেখানে জুমুয়া হয়, সেখানে  জুমুয়ার নামায পড়তে যাওয়া এবং নামায পড়ে চলে আসা। মু’তাকিফ যদি অহেতুক  এক সেকেন্ডের জন্য মসজিদের বাইরে অবস্থান করে, তাহলে ই’তিকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে।

তবয়ী জরুরত হলো- ইস্তিঞ্জা অর্থাৎ পায়খানা-প্রস্রাব ইত্যাদির জন্য বের হওয়া এবং কাজ সেরে চলে আসা।

 

আহমাদুর রহমান

উত্তরা, ঢাকা

 

সুওয়াল:  অনেকে বলে থাকে, পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার শেষে তিনদিন বা একদিন ই’তিকাফ করলেই সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ কিফায়া ই’তিকাফ হয়ে যায়, এটা কতটুকু সত্য?

জাওয়াব: পবিত্র রমাদ্বান মাসের শেষ দশদিন অর্থাৎ ২০ তারিখ বাদ আছর ও ২১ তারিখ মাগরিবের পূর্ব হতে ঈদের বা শাওওয়াল মাসের চাঁদ দেখা পর্যন্ত ই’তিকাফ করলে সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ কিফায়া ই’তিকাফ আদায় হবে। অন্যথায় একদিন, তিনদিন, পাঁচদিন এবং সাতদিন ই’তিকাফ করলে সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ কিফায়া ই’তিকাফ আদায় হবেনা। অর্থাৎ ৩০শে রমাদ্বানের দশদিন কিংবা ২৯শে রমাদ্বানের নয়দিনের এক মিনিট কম হলেও সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ কিফায়া ই’তিকাফ আদায় হবেনা। (মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ)

মুহম্মদ আবুল হায়াত

টেকনাফ, কক্সবাজার

সুওয়াল:  পবিত্র যাকাত দেয়ার সময় নিয়ত করা শর্ত কিনা?

জাওয়াব: হ্যাঁ পবিত্র যাকাত দেয়ার জন্য নিয়ত করা শর্ত। নিয়ত করা ব্যতিত দান করলে পবিত্র যাকাত আদায় হবে না। পবিত্র যাকাত আদায় করার সময় অথবা যাকাতের মাল অন্যান্য মাল হতে আলাদা করার সময় নিয়ত করতে হবে। অর্থাৎ উক্ত আলাদাকৃত মাল সম্পর্কে কেউ জিজ্ঞাসা করলে বিনা চিন্তায় যেনো বলতে পারে যে, এটা যাকাতের মাল। অতএব নিয়ত ব্যতীত সারা বছর দান করলো, অতঃপর দানকৃত মাল দ্বারা পবিত্র যাকাত আদায়ের নিয়ত করলো, তাতে পবিত্র যাকাত আদায় হবেনা। (আলমগীরী)

 

মুহম্মদ হাবীবুর রহমান

সদর, রাজশাহী

 

সুওয়াল:  পবিত্র যাকাত কাদের উপর ফরয?

জাওয়াব: যারা মালিকে নিছাব বা ছাহিবে নিছাব, তাদের উপর পবিত্র যাকাত ফরয। আর মালিকে নিছাব বা ছাহিবে নিছাব বলতে বুঝায়, যে মুসলমান স্বাধীন, বালেগ বা বালেগার নিকট ‘হাওয়ায়েজে আছলিয়াহ (নিত্য প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র, মাল-সামানা) বাদ দিয়ে কর্জ ব্যতীত নিজ মালিকানাধীনে সাড়ে বায়ান্ন ভরি রৌপ্য বা তার সমপরিমাণ মূল্য পূর্ণ এক বছর থাকে, তাহলে তার উপর পবিত্র যাকাত ফরয। অর্থাৎ নিম্ন বর্ণিত দশ প্রকার গুণ সম্পন্ন লোকের উপর পবিত্র যাকাত ফরয-

(১) মুসলমান হওয়া। (২) বালিগ  হওয়া। (৩) জ্ঞানবান হওয়া। (৪) স্বাধীন হওয়া। (৫) নিছাব পরিমাণ মালের মালিক হওয়া (৬) যাকাতের মালের পূর্ণ মালিকানা থাকা। (৭) নিছাব করজমুক্ত হওয়া (৮) নিছাব পরিমাণ মাল হাওয়ায়িজে আছলিয়ার অতিরিক্ত হওয়া। (৯) মাল বর্ধনশীল হওয়া। (১০) নিছাবের মালের বৎসর শেষ হওয়া। (দলীলসমূহঃ  আলমগীরী, আইনুল হেদায়া, বাহরুর রায়েক, ফতওয়ায়ে আমিনীয়া ইত্যাদি।)

 

মুহম্মদ  আশিকুর রহমান

সদর, কুষ্টিয়া

 

সুওয়াল:  পবিত্র যাকাত কে কে গ্রহণ করতে পারে? কাদেরকে পবিত্র যাকাত দেয়া উত্তম? জানাবেন।

জাওয়াব: পবিত্র যাকাত কে কে গ্রহণ করতে পারবে এবং কাদেরকে দিতে হবে, এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার পবিত্র কালাম পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

انـما الصدقات للفقراء والـمسكين والعملين عليها والـمؤلفة قلوبـهم وفى الرقاب والغرمين وفى سبيل الله وابن السبيل فريضة من الله والله عليم حكيم.

অর্থ: “নিশ্চয়ই ছদকা তথা পবিত্র যাকাত ফকির, মিসকীন, পবিত্র যাকাত আদায়কারী কর্মচারী, নও মুসলিম, গোলামদের আযাদকার্যে, ঋণগ্রস্ত, জিহাদে লিপ্ত ব্যক্তি এবং মুসাফিরের জন্য। এটা মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে নির্ধারিত। আর মহান আল্লাহ পাক সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়।” (পবিত্র সূরা তওবা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৬০)

মূলতঃ এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার দ্বারাই মহান আল্লাহ পাক পবিত্র যাকাত প্রদানের ৮টি খাত নির্ধারণ করে দিয়েছেন।

পবিত্র যাকাত প্রদানের সব খাতগুলি অনেক সময়ই একইসাথে পাওয়া সম্ভব হয় না, তাই যে কোন একটি খাতে পবিত্র যাকাত প্রদান করলেই পবিত্র যাকাত আদায় হয়ে যাবে। এটাই ইমামে আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার অভিমত।

উল্লেখ্য যে, বর্তমানে যেহেতু দেশে খিলাফত কায়িম নেই ফলে পবিত্র যাকাত বায়তুল মালেও জমা দেয়া যাচ্ছে না এবং পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে উল্লিখিত সর্বপ্রকার খাতও সবসময় পাওয়া যাচ্ছে না। আর অনেক পবিত্র যাকাতদাতার গরীব আত্মীয়-স্বজন ও গরীব প্রতিবেশী রয়েছে এবং অনেক মাদরাসা রয়েছে যেখানে ইয়াতীমখানাও আছে। তাই পবিত্র যাকাত দেয়ার সহজ ও উত্তম পদ্ধতি হলো- যাকাতের মালকে তিনভাগ করে একভাগ গরীব আত্মীয়-স্বজন, একভাগ গরীব প্রতিবেশী ও একভাগ মাদরাসার এতিমখানায় প্রদান করা।

আর যদি গরীব আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশী না থাকে, তবে সবটাই মাদরাসার ইয়াতীমখানায় দেয়া আফযল ও উত্তম। তবে এক্ষেত্রে লক্ষ্যণীয় যে, উলামায়ে ছূ’ বা ধর্মব্যবসায়ী আলিমদের দ্বারা পরিচালিত মাদরাসা অর্থাৎ যারা মৌলবাদ, সন্ত্রাসবাদ, গণতন্ত্র ও অন্যান্য কুফরী মতবাদের সাথে সম্পৃক্ত সেই সমস্ত মাদরাসাতে পবিত্র যাকাত প্রদান করলে পবিত্র যাকাত আদায় হবে না।

স্মরণীয়, আফদ্বালুল আউলিয়া, ক্বইয়ূমে আউওয়াল হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, পবিত্র যাকাত, ফিৎরা ইত্যাদি সর্বপ্রকার দান-ছদকা অন্যান্য খাতে না দিয়ে কোন মাদরাসার ইয়াতীম, গরীব ছাত্রদেরকে প্রদান করলে অন্যান্য খাতের চেয়ে লক্ষগুণ ছওয়াব বেশী হবে। কারণ তাদের ইলমে দ্বীন অর্জনের সহায়তা করা হয়।

হ্যাঁ, এ তিন প্রকার ব্যতীত যদি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখিত যাকাতের হক্বদারদের মধ্যে আরো কাউকে পাওয়া যায়, তবে তাদেরকেও পবিত্র যাকাত দিয়ে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার উপর আমল করা উত্তম। তবে অবশ্যই সর্বক্ষেত্রে আক্বীদার বিষয়টা প্রাধান্য দিতে হবে। অর্থাৎ আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামায়াত উনাদের আক্বীদাভুক্ত হতে হবে। (সমূহ ফিক্বহের কিতাব)

 

মুহম্মদ শাহ আলম

শান্তিবাগ, ঢাকা

 

সুওয়াল: বর্তমানে দেখা যায় যাকাতদাতাগণ যাকে খুশি তাকে যাকাত ও অন্যান্য দান-ছদক্বা দিয়ে থাকেন। প্রকৃতপক্ষে যাকাত ও অন্যান্য দান-ছদক্বা কিরূপ ব্যক্তিকে দেয়া উচিত। এ বিষয়ে সম্মানিত শরীয়ত উনার কোন বিধি-বিধান আছে কিনা? দয়া করে জানাবেন।

জাওয়াব: হ্যাঁ, পবিত্র যাকাত ও অন্যান্য দান ছদকা দেয়ার ব্যাপারে অবশ্যই সম্মানিত শরীয়ত উনার বিধান রয়েছে। স্মরণীয় এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

تعاونوا على البر والتقوى ولاتعاونوا على الاثم والعدوان واتقوا الله ان الله شديد العقاب.

অর্থ: তোমরা নেকী ও পরহিযগারীর মধ্যে সাহায্য করো। আর পাপ ও শত্রুতা অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের বিরোধিতাকারীদের বা নাফরমানদেরকে সাহায্য করো না। এ বিষয়ে তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি কঠোর শাস্তিদাতা। (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২) অর্থাৎ ঐ সমস্ত ব্যক্তিদের যাকাত, ফিৎরা ইত্যাদি দিলে ছওয়াবের পরিবর্তে গুনাহ হবে।

যাদের আক্বীদা ও আমলের মধ্যে কুফরী রয়েছে অথবা যারা হারাম-নাজায়িয, বিদয়াত-বেশরা কাজে মশগুল অথবা যারা নামায-কালাম পড়ে না, পর্দা-পুশিদায় চলেনা, গান-বাজনা করে, টিভি-সিনেমা দেখে, খেলাধুলা করে ইত্যাদি; যা চরম ফাসিকী ও নাফরমানী কাজের অন্তর্ভুক্ত অথবা যেসব মাদরাসার ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে পর্দা নেই, যারা হারাম খেলাধুলায় লিপ্ত, যারা হারাম দল-মত ও আন্দোলনের সাথে জড়িত এদেরকে পবিত্র যাকাত, ফিতরা, কুরবানীর চামড়া ইত্যাদি ফরয, ওয়াজিব দান-ছদকা দেয়া মোটেই সম্মানিত শরীয়ত সম্মত নয়।

তাই যাকাতদাতাগণ যেনো সঠিক স্থানে উনাদের পবিত্র যাকাত, ফিতরা ইত্যাদি দান-ছদকা দিয়ে পরিপূর্ণ ফায়দা হাছিল করতে পারেন সেজন্যেই যামানার লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ, যামানার লক্ষ্যস্থল আওলাদে রসূল, মুজাদ্দিদ আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি ঢাকা রাজারবাগ শরীফে মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ বালক বালিকা মাদরাসা ও ইয়াতীমখানা প্রতিষ্ঠা করেছেন। এ মাদরাসার অনেক শাখা রয়েছে সারাদেশব্যাপী। এ মাদরাসার ছাত্র ও ছাত্রীরা সম্মানিত সুন্নাত পালন করার মাধ্যমে আল্লাহওয়ালা ও আল্লাহওয়ালী হচ্ছে।

মুহম্মদ জুনায়েদুর রহমান

পটিয়া, চট্ট্রগাম

সুওয়াল: যাকাতের টাকা মসজিদ, মাদরাসা ও কাফন-দাফনের কাজে ব্যবহার করা যাবে কিনা?

জাওয়াব: যাকাতের টাকা মসজিদ, মাদ্রাসা ও কাফন-দাফনের কাজে ব্যবহার করতে পারবেনা। তবে মাদ্রাসার লিল্লাহ বোডিংয়ে ব্যবহার করতে পারবে। কারণ যাকাতের টাকা গরীব-মিসকীনের হক্ব। যদি তা মসজিদ, মাদ্রাসা বা কাফন-দাফনের কাজে ব্যবহার করতে চায়, তবে প্রথমে উক্ত টাকা কোন গরীব-মিসকীনকে দান করে তাকে এর মালিক করে দিবে। অতঃপর সে ব্যক্তি তা মসজিদ-মাদ্রাসা অথবা কাফন-দাফনের জন্য দান করে দিবে। তখন তা উক্ত কাজে ব্যবহার করতে পারবে। অন্যথায় তা ব্যবহার করা জায়িয হবেনা।

এরূপক্ষেত্রে পবিত্র যাকাতদাতা ও উক্ত মিসকীন ব্যক্তি উভয়ই সমান সওয়াব পাবে। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “শত হাত ঘুরেও যদি কোন দান-ছদ্কা করা হয়, তাতে প্রত্যেকেই সমান ছওয়াব লাভ করবে।” (রদ্দুল মুহ্তার)

 

মুহম্মদ হেলালুদ্দীন

সদর, চাঁদপুর

 

সুওয়াল: জামাতে মওদূদী, খিলাফত আন্দোলন, ঐক্যজোট, শাসনতন্ত্র আন্দোলন, খিলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, ইসলামী মোর্চা, আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলাম, হেফাযতে ইসলাম তথা হেক্বারতে ইসলাম ইত্যাদি ইসলামী নামধারী যেসব দল রয়েছে তারা পবিত্র ইসলাম উনার নামে গণতন্ত্র করা জায়িয ফতওয়া দেয় এবং এই গণতন্ত্র ভিত্তিক আন্দোলনকে তারা জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ বলে থাকে। আর পবিত্র কুরআন শরীফ-এ জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ এর মধ্যে যারা মশগুল তাদেরকে পবিত্র যাকাত প্রদানের হুকুম দেয়া হয়েছে। এই বরাতে তারা তাদের গণতন্ত্রভিত্তিক আন্দোলনকে জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ বলে মানুষের নিকট থেকে পবিত্র যাকাত, ফিতরা, উশর ইত্যাদি গ্রহণ করে থাকে।

এখন আমার সুওয়াল হচ্ছে- এদেরকে পবিত্র যাকাত, ফিতরা, উশর ইত্যাদি প্রদান করলে তা আদায় হবে কি না? দ্বিতীয়ত এতে আদায়কারী কোন ছওয়াব পাবে কি না?

জাওয়াব: দ্বীন ইসলাম উনার নামে যারা গণতন্ত্রভিত্তিক আন্দোলন করে তাদের এ আন্দোলনের জন্য পবিত্র যাকাত, ফিতরা, উশর ইত্যাদি প্রদান করলে তা আদায় হবে না এবং এজন্য প্রদানকারী কোন ছওয়াবও পাবে না। কারণ, যারা গণতন্ত্রভিত্তিক আন্দোলন করে তাদের আন্দোলন ইসলামের বোল-বালা, প্রচার-প্রসার বা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য নয়; বরং তাদের আন্দোলন হচ্ছে গণতন্ত্র অর্থাৎ কুফরী মতবাদকেই প্রতিষ্ঠা করা। নাউজুবিল্লাহ!

অতএব, তাদের সে আন্দোলন জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ নয়। বরং তাদের সে আন্দোলন জিহাদ ফী সাবীলিশ শয়তান।

প্রকৃতপক্ষে তারা জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহর নামে সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিয়ে যাচ্ছে। তাদের এ ধোঁকা থেকে সাবধান সতর্ক হওয়া উচিত।

প্রকাশ থাকে যে, গণতন্ত্রভিত্তিক যত তথাকথিত ইসলামী দল রয়েছে তারা গণতন্ত্র ও তার কার্যসমূহকে শুধু জায়িযই মনে করে না বরং তারা গণতন্ত্র এবং তার কার্যসমূহ যেমন ভোট দেয়া, নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া ইত্যাদিকে ফরয-ওয়াজিবও বলে থাকে। নাঊযুবিল্লাহ!

কিন্তু শরীয়তের ফতওয়া হচ্ছে- কোন হারাম ও কুফরী বিষয়কে হালাল বা জায়িয মনে করা কুফরী। যেমন এ প্রসঙ্গে আক্বাঈদের কিতাবে উল্লেখ রয়েছে-

استحلال الـمعصية كفر

অর্থ: কোন নাফরমানিমূলক বিষয়কে হালাল বা জায়িয মনে করা কুফরী। (শরহে আক্বাঈদে নাসাফী শরীফ)

অর্থাৎ শরীয়ত কর্তৃক সাব্যস্ত কোন হারাম ও কুফরী বিষয়কে কেউ যদি হালাল বা জায়িয মনে করে তবে সে কুফরী করলো। আর যারা কুফরী করে তারা মুরতাদ হয়ে যায়।

অতএব, সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার নামে গণতন্ত্র করা সম্পূর্ণ হারাম। এটাকে হালাল বা জায়িয মনে করা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।

অতএব, যারা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার নামে গণতন্ত্র করে তারা কুফরী করে আর যারা কুফরী করে তাদেরকে পবিত্র যাকাত, ফিতরা, উশর ইত্যাদি প্রদান করলে তা কস্মিনকালেও আদায় হবে না; বরং কবীরা গুনাহ ও কুফরী হবে।

দলীল-আদিল্লাহসমূহ জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত ৮৪ ও ৯০তম সংখ্যা পাঠ করুন।

 

মাওলানা হাফিজুর রহমান

সদর, নোয়াখালী

 

সুওয়াল:  আপন আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে কাকে কাকে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে?

জাওয়াব:  নিজের পিতা, দাদা, পুত্র, নাতী, স্ত্রী, স্বামী ইত্যাদি পরস্পর পরস্পরকে পবিত্র যাকাত দিতে পারবে না।

তবে পুত্রবধু, জামাতা, বিমাতা, স্ত্রীর অন্য ঘরের সন্তান অথবা স্বামীর অন্যান্য স্ত্রীর সন্তানদেরকে পবিত্র যাকাত দেয়া যায়। আর পিতা-মাতা যদি অভাবগ্রস্থ হয়, তবে হিলা করে তাদেরকে যাকাতের টাকা দেয়া জায়িয, তবে তা মাকরূহ। অনুরূপভাবে হিলা করে নিজের সন্তানকেও পবিত্র যাকাত দেয়া মাকরূহের সাথে জায়িয। (দুররুল মুখতার, রদ্দুল মুহতার, আলমগীরী)

 

মীর মুহম্মদ আমজাদ আলী

কুমারখালী, কুষ্টিয়া।

সুওয়াল:  ধনী লোকের আপন আত্মীয় ও স্বামীহীন ধনী মহিলার সন্তানকে পবিত্র যাকাত দেয়া জায়িয হবে কিনা?

জাওয়াব:  ধনী লোকের নাবালিগ সন্তানকে পবিত্র যাকাত দেয়া জায়িয নেই। কিন্তু ধনী লোকের বালিগ সন্তান যদি ফকির হয়, তাহলে তাকে পবিত্র যাকাত দেয়া জায়িয। এমনকি ধনী লোকের স্ত্রী ও পিতা যদি নেছাবের মালিক না হয়, তবে তাদেরকেও পবিত্র যাকাত দেয়া জায়িয আছে। আর পিতৃহীন শিশুর মাতা যদি নিছাবের মালিকও হয়, তবে সে শিশুকে পবিত্র যাকাত দেয়া জায়িয আছে। (দুররুল মুখতার, আলমগীরী, জাওহারাতুন্ নাইয়্যারা)

মুহম্মদ জাকির হুসাইন

মতলব, চাঁদপুর

সুওয়াল:   খাঁদযুক্ত সোনা-চান্দির যাকাতের হুকুম কি?

জাওয়াব: সোনা-চান্দির মধ্যে খাঁদ থাকলে এবং সোনা-চান্দীর পরিমাণ বেশি হলে একে সোনা-চান্দি হিসাবেই পবিত্র যাকাত দিতে হবে, যদি তা নিছাব পরিমাণ হয়। আর যদি নিছাব পরিমাণ না হয়, তবে এর মূল্য হিসাব করে অন্যান্য মালের সাথে মিলিয়ে নিছাব পূর্ণ হলে পবিত্র যাকাত আদায় করতে হবে। যদি সোনা-চান্দি কম হয় ও খাঁদ বেশি হয় তবে শুধু সোনা-চান্দি উভয় মিলে যদি এক নিছাব বা তার চেয়ে বেশি হয়, তাহলে পবিত্র যাকাত দিতে হবে। খাদযুক্ত সোনা-চান্দি এত কম হয় যে, উভয়টি মিলেও এক নিছাব হয়না কিন্তু তার দ্বারা ব্যবসা করা হয়, তবে উহা ব্যবসার মালের নিছাব হিসাবে হলে পবিত্র যাকাত দিতে হবে; অন্যথায় পবিত্র যাকাত দিতে হবেনা। (দুররুল মুখতার)

মুহম্মদ আমানত হুসাইন

সদর, মাদারীপুর

সুওয়াল:  খাজনা দেয়া হয়, এমন জমির পবিত্র যাকাত দিতে হবে কিনা?

জাওয়াব: যে জমির খাজনা দেয়া হয়, উক্ত জমির ফসলের পবিত্র যাকাত দিতে হবে। এমনকি উক্ত জমি বিক্রি করলেও বিক্রিত টাকা নেছাব পরিমাণ হলে এবং উক্ত টাকা পূর্ণ এক বছর হাতে থাকলে অথবা অন্যান্য টাকার সাথে মিলিয়ে নিছাব পূর্ণ হলে তার পবিত্র যাকাত দিতে হবে। (ফতওয়ায়ে আলমগীরী)

 

মুহম্মদ আনিছুর রহমান

বাবুরহাট, চাঁদপুর

সুওয়াল:  জমির ফসলের পবিত্র যাকাত বা উশর আদায় করার জন্য বৎসর পূর্ণ হওয়া ও নিছাব পরিমাণ মাল হওয়া শর্ত কিনা?

জাওয়াব: উশর বা জমির পবিত্র যাকাত আদায় করার জন্য বৎসর পূর্ণ হওয়া ও নিছাব পরিমাণ মাল হওয়া শর্ত নয়। বরং একই জমিতে প্রতি মৌসুমে যে পরিমাণ ফসলই হোক না কেন তার দশ ভাগের একভাগ পবিত্র যাকাত আদায় করা ফরয। তবে যদি পরিশ্রম করে ফসল ফলানো হয়, তবে বিশ ভাগের এক ভাগ ফসলের পবিত্র যাকাত দিতে হবে। (দুররুল মুখতার)

 

 

মুহম্মদ আবুল হায়াত

নরসিংদী

সুওয়াল: বেশি লোককে পবিত্র যাকাত দেয়ার জন্য কম দামের খদ্দরের লুঙ্গি ও পাতলা শাড়ি কাপড় পবিত্র যাকাত হিসেবে দিলে পবিত্র যাকাত আদায় হবে কি না?

জাওয়াব: না, যাকাত আদায় হবে না। তবে অনেককে দেখা যায়, বেশি লোককে পবিত্র যাকাত দেয়ার জন্য তারা কম দামের খদ্দরের পাতলা লুঙ্গি ও পাতলা শাড়ি দিয়ে থাকে যা সাধারণভাবে পড়ার উপযুক্ত নয়। উক্ত লুঙ্গি ও শাড়ি পবিত্র যাকাত দানকারী ও যাকাত দানকারিণী পরিধান করতে কখনই রাজি হবে না বা পছন্দ করবে না। যদি তাই হয়, যে পবিত্র যাকাত দানকারী ও যাকাত দানকারিণী নিজেরা গ্রহণ করতে রাজী না হয়, তাহলে মহান আল্লাহ পাক তিনি কি করে গ্রহণ করবেন? মূলত সে দান আদৌ মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট গৃহীত হবে না। মহান আল্লাহ পাক তিনি তা পরিষ্কার কালাম পাক উনার মধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন। ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

لن تنالوا البر حتى تنفقوا مما تحبون. وما تنفقوا من شىء فان الله به عليم.

অর্থ: তোমরা কখনই নেকী, কল্যাণ হাছিল করতে পারবে না, যে পর্যন্ত না তোমরা তোমাদের প্রিয় বা পছন্দনীয় বস্তু দান করবে। এবং তোমরা যা কিছু দান করো সে সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি অবশ্যই পূর্ণ খবর রাখেন। (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৯২)

মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ ইরশাদ মুবারক করেন-

يايها الذين امنوا انفقوا من طيبت ما كسبتم ومما اخرجنا لكم من الارض ولا تيمموا الخبيث منه تنفقون ولستم باخذيه الا ان تغمضوا فيه واعلموا ان الله عزيز حميد.

অর্থ: “হে ঈমানদারগণ! তোমরা স্বীয় উপার্জন থেকে এবং আমি তোমাদের জন্য ভূমি থেকে যা উৎপন্ন করেছি তা থেকে উৎকৃষ্ট বস্তু ব্যয় করো এবং নিকৃষ্ট জিনিস ব্যয় করতে নিয়ত বা মনস্থ করো না। কেননা তোমরা তা অনিচ্ছাকৃত ব্যতীত গ্রহণ করবে না। জেনে রাখ, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি অভাবমুক্ত, প্রশংসিত।” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২৬৭)

এখানে সম্পদের পবিত্র যাকাত, ফিতরা ও জমির ফসলের উশর ইত্যাদি ফরয, ওয়াজিব, নফল সকল প্রকার দান-ছদক্বার কথাই বলা হয়েছে। অর্থাৎ যেটা উত্তম উৎকৃষ্ট, মূল্যবান সেটাই দিতে হবে। যেটা নিকৃষ্ট, নি¤œমানের, নি¤œমূল্যের সেটা দেয়া তো দূরের কথা সেটা দেয়ার কল্পনা বা চিন্তা করাও যাবে না। কেননা খারাপটা কেউই গ্রহণ করতে চায় না। তাহলে মহান আল্লাহ পাক তিনি সেটা কি করে গ্রহণ করবেন। এখন কেউ যদি চোখ বন্ধ করে নিজের খেয়াল খুশি মতো সেটা দিয়ে দেয় সেক্ষেত্রে মহান আল্লাহ পাক তিনি জানিয়েছেন দেখো, মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাদের এসব দানের মুখাপেক্ষী নন। তিনি গণী বা অভাবমুক্ত এবং হামীদ বা পরম প্রশংসিত।

অতএব, যেটা সবচেয়ে ভাল, পছন্দনীয় ও মূল্যবান সেটাই পবিত্র যাকাত হিসেবে দান করতে হবে। কম দামের খদ্দরের লুঙ্গি ও পাতলা শাড়ি কাপড় পবিত্র যাকাত হিসেবে দিলে পবিত্র যাকাত কস্মিনকালেও আদায় হবে না।  (সমূহ হাদীছ, তাফসীর ও ফিক্বাহর কিতাব দ্রষ্টব্য)

 

মুহম্মদ মাজিদুল ইসলাম

রংপুর

সুওয়াল : যদি কারও নিজে থাকা বাড়ির পর আরও অ্যাপার্টমেন্ট থাকে তবে কিভাবে পবিত্র যাকাত দিবে?

জাওয়াব : নিজের থাকার জন্য হোক অথবা ভাড়া দেয়ার জন্য হোক- এ প্রকার কোনো স্থাবর সম্পত্তির যাকাত দেয়ার নিয়ম শরীয়তে নেই। তবে কেউ যদি অতিরিক্ত বাড়ী, ঘর অথবা অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া দেয়, তাহলে রক্ষণাবেক্ষণের খরচের পর অতিরিক্ত যে ভাড়ার টাকা জমা থাকবে তা যদি নিছাব পরিমাণ হয় এবং এক বছর অতিবাহিত হয়; তখন উক্ত টাকার যাকাত আদায় করতে হবে। অন্যথায় পবিত্র যাকাত ফরযও হবে না এবং আদায়ও করতে হবে না। তবে যদি ব্যবসার জন্য হয় তাহলে তার মূল্য হিসেব করে সে টাকার পবিত্র যাকাত দিতে হবে। যদি তা নিছাব পরিমাণ হয় এবং এক বছর পূর্ণ হয়।

 

মুহম্মদ মোতাহার হুসাইন

রাজশাহী

 

সুওয়াল : জিপিএফ-এর টাকা মালিকানা কার? জিপিএফ-এর টাকা যেহেতু যখন প্রয়োজন তখনই উঠানো যায় না, তাহলে কি করে এর উপর পবিত্র যাকাত হবে?

জাওয়াব : যারা সরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বা চাকুরীজীবি তারাই এ টাকার মালিক। কেননা, এ টাকা তাদেরই বেতন-ভাতা থেকে কর্তিত জমা টাকা। তাদেরকে এককালীন সুবিধা দেয়ার জন্য এ ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ টাকা যখন প্রয়োজন তখনই তোলা না গেলেও এ টাকার মালিকানা কিন্তু বাদ যায় না। এ টাকার মালিক সে নিজেই থাকে। এটা অনেকটা (সুদমুক্ত) সেভিংস একাউন্টের মতো। সেভিংস একাউন্ট থেকে কারেন্ট বা চলতি একাউন্টের মতো যখন ইচ্ছা তখন টাকা উত্তোলন করা যায় না। নির্দিষ্ট সময়ে টাকা উত্তোলন করতে হয়। এর একটা উদাহরণ হলো, পাওনা টাকার মতো। পাওনাদারের কাছে টাকা পাওনা থাকা সত্ত্বেও, যখন তখন টাকা পাওয়া যায় না। তাই বলে কি পাওনা টাকার যাকাত দিতে হবে না? অবশ্যই পবিত্র যাকাত দিতে হবে। যদি নিছাব পূর্ণ হয় এবং বছর পুরা হয়।

কাজেই, মালিকানা যেহেতু বাদ যায় না; বরং টাকা যেহেতু তারই থাকে সুতরাং এ টাকা নিছাব পরিমাণ হলে এবং এক বৎসর অতিবাহিত হলে তাকে অবশ্যই এর যাকাত দিতে হবে।

 

মুহম্মদ মুনিরুল ইসলাম

নাটোর

 

সুওয়াল: জিপিএফ-এর টাকা অগ্রিম নিলে তা আবার কিস্তিতে পরিশোধ করতে হয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো- আমার মালিকানা যদি পূর্ণই থাকে তাহলে তা আবার কিস্তিতে পরিশোধ করতে হবে কেন? তাহলে কি বোঝা যাচ্ছে না, নির্দিষ্ট মাসের পূর্বে এই সম্পূর্ণ টাকা আমার মালিকানা বা অধীনে থাকে না, ফলে এর উপর কি যাকাত হবে?

জাওয়াব: সাধারণত সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বা চাকুরীজীবিকে তাদের চাকুরী শেষে এককালীন সুবিধা দেয়ার জন্য জিপিএফ অর্থাৎ প্রভিডেন্ট ফান্ড-এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখন কেউ যদি কোনো প্রয়োজনে সেখান থেকে আগে টাকা নেয়,  সেজন্য তাকে তা আবার কিস্তিতে পরিশোধ করতে হয়। এ নিয়ম এজন্য করা হয়েছে যেন তাকে চাকুরী শেষে যে পরিমাণ সুবিধা দেয়ার কথা সেটা পুরা করা যায়।

আসলে শরয়ী অর্থনীতি ব্যবস্থা চালু না থাকার কারণে একেক সরকার একেক নিয়ম চালু করে থাকে।

কিন্তু কথা হলো, যদিও চাকুরীর মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বে টাকা নেয়ায় শর্ত হিসেবে তাকে পূর্বের উত্তোলনকৃত টাকা কিস্তিতে জমা দিতে হচ্ছে, এতে কিন্তু তার জমাকৃত টাকার মালিকানা রহিত হচ্ছে না; বরং জমাকৃত টাকার মালিকানা তারই থাকছে, যা চাকুরী শেষে সে প্রাপ্ত হবে।

কাজেই, প্রভিডেন্ট ফান্ডে প্রতিমাসে জমাকৃত কিংবা উত্তোলনকৃত টাকা কিস্তিতে জমাকৃত টাকার পরিমাণ নিছাব পরিমাণ হলে তার পবিত্র যাকাত আদায় করতে হবে।

 

মুহম্মদ ওলীউল্লাহ

নেত্রকোনা

 

সুওয়াল: জীবন বীমার প্রীমিয়ামের উপর (বীমার টাকা+প্রীমিয়ামের টাকা) পবিত্র যাকাত হবে কিনা?

জাওয়াব:  হ্যাঁ, বীমার প্রীমিয়ামের উপর পবিত্র যাকাত হবে। অর্থাৎ ব্যক্তিগত কিংবা পোষ্যের নামে বীমায় জমাকৃত মোট প্রিমিয়ামের পবিত্র যাকাত আদায় করতে হবে। যদি নিছাব পূর্ণ হওয়ার পর এক বছর অতিবাহিত হয়।

মুহম্মদ ফখরুল ইসলাম

উলিপুর, কুড়িগ্রাম

 

সুওয়াল: এফডিআর, এপিএস, ডিপিএস অর্থাৎ ফিক্সড ডিপোজিট বা যে কোনো ধরনের সঞ্চয় মেয়াদ ভিত্তিক হলে সেটা নির্দিষ্ট মেয়াদের পূর্বে উত্তোলন করা যায় না। তাহলে কি নির্দিষ্ট মেয়াদে জমাকৃত টাকার পবিত্র যাকাত হবে না?

জাওয়াব: ফিক্সড ডিপোজিড সেটা নিছাব পরিমাণ হওয়ার পর এক বৎসর অতিবাহিত হলেই সেটার উপর যাকাত ফরয হবে এবং তা আদায় করতে হবে। সেটা উত্তোলন করা যাক বা না যাক। পবিত্র যাকাত ফরয হওয়ার জন্য মালিকানা শর্ত।

 

মুহম্মদ আব্দুল্লাহ মুঈনুদ্দীন

দিনাজপুর

 

সুওয়াল: বিভিন্ন ক্যারেটের স্বর্ণ পাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে কিভাবে পবিত্র যাকাত দিতে হবে?

জাওয়াব: যাকাত দাতার নিকট যে ক্যারেটের স্বর্ণ রয়েছে, সে ক্যারেটের স্বর্ণের মূল্য অনুযায়ী যাকাত আদায় করতে হবে। একাধিক ক্যারেটের স্বর্ণ থাকলে সে অনুযায়ী মূল্য নির্ধারণ করে পবিত্র যাকাত আদায় করতে হবে।

 

মুহম্মদ মোশাররফ হুসাইন

নিলফামারী

সুওয়াল:  যে মূল্যে শেয়ার কেনা ছিলো পবিত্র যাকাত দেয়ার সময় মূল্য বৃদ্ধি পেলে বা কমলে কোনো টাকার উপর পবিত্র যাকাত হবে?

জাওয়াব: যে মূল্যে শেয়ার কেনা হয়েছে, পবিত্র যাকাত দেয়ার সময় মূল্য বৃদ্ধি পেলেও কেনা মূল্যেই যাকাত আদায় করতে হবে। আর যদি শেয়ার বিক্রি করে, তাহলে বিক্রিত মোট মূল্যের উপর যাকাত আদায় করতে হবে। আর যদি শেয়ারের মূল্য কমে যায় তাহলে পবিত্র যাকাত প্রদানের সময়কার মূল্যে পবিত্র যাকাত আদায় করতে হবে।

 

মুহম্মদ রাহিবুল ইসলাম

রংপুর

সুওয়াল: ব্যবসার উদ্দেশ্যে জমি কিনলে কিভাবে পবিত্র যাকাত দিবে?

জাওয়াব: ব্যবসার উদ্দেশ্যে যে জমি কেনা হয়েছে সেই জমির কেনা মূল্যের উপর পবিত্র যাকাত আদায় করতে হবে।

 

মুহম্মদ মাহতাবুদ্দীন

বগুড়া

 

সুওয়াল: ঔষধ কোম্পানীগুলোর ব্যাঙ্কে টাকা থাকে। আবার মার্কেটে বহু টাকার প্রডাক্ট থাকে। তবে কিভাবে কোম্পানীগুলো পবিত্র যাকাত দিবে? আবার তাদের অনেক টাকা বকেয়া হিসেবে মার্কেটে আছে সেই টাকার উপর কি পবিত্র যাকাত হবে?

জাওয়াব: যে টাকা ব্যাঙ্কে আছে তার পবিত্র যাকাত যেমন আদায় করতে হবে এবং তেমন মার্কেটে যত টাকার প্রডাক্ট আছে তারও পবিত্র যাকাত আদায় করতে হবে। আর যে টাকা বকেয়া হিসেবে দেয়া আছে তা যদি দেনাদাররা স্বীকার করে যে, আদায় করে দিবে তবে তা হস্তগত হওয়ার পূর্বেও আদায় করতে পারবে। অন্যথায় হস্তগত হওয়ার পরও আদায় করতে পারবে। আর দেনাদার যদি দেনা অস্বীকার করে অথবা টাকা দিতে অস্বীকার করে তবে সে টাকার পবিত্র যাকাত দিতে হবে না।

 

মুহম্মদ ফুয়াদ

দিরাই, সুনামগঞ্জ

 

সুওয়াল: একজনকে টাকা দেয়া হয়েছিলো জমি নেয়ার জন্য, এখন সে ব্যক্তি টাকাও ফেরত দেয় না, জমিও দেয় না, তাহলে কিভাবে পবিত্র যাকাত হবে?

জাওয়াব: বাসস্থানের জন্য অথবা চাষাবাদ করার জন্য যদি জমি কেনার জন্য টাকা দিয়ে থাকে তাহলে সে টাকার পবিত্র যাকাত দিতে হবে না।

উল্লেখ্য, টাকা গ্রহীতা যদি জমি না দিয়ে টাকা ফেরত দেয়; আর সে টাকা যদি নিছার পরিমাণ হয় এবং বছর পূর্ণ হয় তাহলে সে টাকারও পবিত্র যাকাত দিতে হবে।  আর যদি ব্যবসার উদ্দেশ্যে জমি কেনার জন্য টাকা দিয়ে থাকে তাহলে সে টাকার অবশ্যই পবিত্র যাকাত আদায় করতে হবে। জমিদাতা যদি জমি না দিয়ে টাকা আটকে রাখে তবে টাকা দাতা ইচ্ছা করলে তখনও পবিত্র যাকাত আদায় করতে পারে অথবা যখন জমি অথবা টাকা পাওয়া যাবে তখন যত বছর এ অবস্থায় অতিবাহিত হয়েছে ততো বছরেরই যাকাত অবশ্যই আদায় করতে পারবে।

 

মুহম্মদ রুকনুদ্দীন

টাঙ্গাইল

 

সুওয়াল: কেউ বিগত বহু বছর পবিত্র যাকাত আদায় করেনি। কিন্তু সে মালিকে নিছাব ছিলো। তখন স্বর্ণ ও রূপার মূল্য বিভিন্ন ছিলো। তাহলে কিভাবে পবিত্র যাকাত আদায় করবে?

জাওয়াব: নিছাব সম্পন্ন ব্যক্তিযত বছর পবিত্র যাকাত আদায় করেনি; হিসাব করে তত বছরেরই পবিত্র যাকাত তাকে আদায় করতে হবে। কারণ পবিত্র যাকাত হচ্ছে ফরযের অন্তর্ভুক্ত।

আর ফরযের ক্বাযা আদায় করাও ফরয। বিগত বছরগুলির পবিত্র যাকাতের হিসেব যদি থেকে থাকে তাহলে সে অনুযায়ী পবিত্র যাকাত আদায় করবে। আর যদি বিগত বছরগুলির কোন হিসেব না থেকে থাকে তাহলে বর্তমানে যে সময়ে সে ব্যক্তি পবিত্র যাকাত আদায় করবে সে সময়ের স্বর্ণ ও রূপার মূল্য অনুযায়ী বিগত সমস্ত বছরের পবিত্র যাকাত আদায় করতে হবে।

অর্থাৎ বিগত বছরগুলিতে তার যে পরিমাণ সম্পদ ছিলো তা হিসাব করে পবিত্র যাকাত আদায় করতে হবে।

 

মুহম্মদ মিছবাহুদ্দীন

চট্টগ্রাম

 

সুওয়াল: সারা বছর ধরে পবিত্র যাকাত দেয়া যায় কিনা?

জাওয়াব: আরবী বা হিজরী বছরের যে কোনো মাসের যে কোনো দিনে পবিত্র যাকাত আদায় করা যায়। তবে হিসাবের সুবিধার জন্য যাকাতদাতার পক্ষ থেকে আরবী মাসের যে কোনো একটি তারিখ নির্দিষ্ট করে নিতে হবে। যেমন, পহেলা রবীউল আউয়াল শরীফ অথবা পহেলা রমাদ্বান শরীফ ইত্যাদি।

উল্লেখ্য, হিজরী সন ব্যতীত অন্য কোনো সন হিসেবে বছর গণনা করে পবিত্র যাকাত আদায় করলে যাকাত আদায় শুদ্ধ হবে না। যেমন ঈসায়ী সন বা ইংরেজি বছর অথবা ফসলী সন বা কথিত বাংলা সন ইত্যাদি।

 

মুহম্মদ আমীরুল ইসলাম

নরসিংদী।

সুওয়াল: এ বছর ছদাক্বাতুল ফিতর কত টাকা?

জাওয়াব: ছদাক্বাতুল ফিতর সম্পর্কে হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে-

عن حضرت عبد الله بن ثعلبة او حضرت ثعلبة بن عبد الله بن ابى صعير رحمة الله عليه عن ابيه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم صاع من بر او قمح على كل اثنين صغير او كبير حر او عبد ذكر او انثى

অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সা’লাবা অথবা হযরত সা’লাবা ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আবু সুআইর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার পিতা হতে বর্ণনা করেন যে, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, এক সা’ গম বা আটা দু’ব্যক্তির পক্ষ থেকে আদায় করতে হবে- ছোট হোক বা বড় হোক, আযাদ হোক বা গোলাম হোক এবং পুরুষ হোক বা মহিলা হোক।” (আবূ দাউদ শরীফ, মিশকাত শরীফ)

আমাদের হানাফী মাযহাব মুতাবিক অর্ধ সা’ বলতে ১ সের সাড়ে ১২ ছটাক বুঝানো হয়েছে। যা গ্রাম হিসেবে ১৬৫৭ গ্রাম (প্রায়) হয়।

এ বছর অর্থাৎ ১৪৩৫ হিজরীতে ঢাকা শহরে ৩৯.০০ টাকা কেজি হিসাবে অর্ধ সা’ অর্থাৎ এক সের সাড়ে বার ছটাক বা ১৬৫৭ গ্রাম আটার মূল্য- ৬৫ টাকা (প্রায়)।

যেমন, ১ কেজি বা ১০০০ গ্রাম আটার মূল্য ৩৯.০০ টাকা।

প্রতি গ্রাম আটার মূল্য ৩৯.০০স্ট১০০০= ০.০৩৯ টাকা।

১৬৫৭ গ্রাম আটার মূল্য ১৬৫৭ী০.০৩৯=৬৪.৬২৩ টাকা অর্থাৎ ৬৫ টাকা (প্রায়)। এর কম দেয়া যাবে না। তবে ইচ্ছা করলে বেশি দিতে পারবে।

যাদের উপর ছদাক্বাতুল ফিতর ওয়াজিব অর্থাৎ ঈদের দিন ছুব্হে ছাদিকের সময় যাদের নিকট নিছাব পরিমাণ (সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ অথবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা অথবা এর সমপরিমাণ মূল্য, যা বর্তমানে ১,১৬৬ টাকা তোলা হিসেবে ৬১,২১৫ টাকা) সম্পদ থাকে, তাদের প্রত্যেককেই উল্লিখিত ১ সের সাড়ে ১২ ছটাক বা ১৬৫৭ গ্রাম আটা বা তার মূল্য দান করতে হবে।

দেশের বিভিন্ন এলাকায় আটার দাম বিভিন্ন রকম। কাজেই যাদের উপর ছদাক্বাতুল ফিতর ওয়াজিব, তাদেরকে বর্তমান মূল্য হিসাবে একসের সাড়ে বার ছটাক বা ১৬৫৭ গ্রাম আটার মূল্য হিসাবে দিতে হবে।

 

মুহম্মদ রফিকুল ইসলাম

পঞ্চগড়

 

সুওয়াল:  যেদিন পবিত্র যাকাত দিবে অর্থাৎ যেদিন নিছাবের এক বছর পূর্ণ হবে তার একদিন পূর্বে আরও টাকা হাতে আসলে (যদিও নতুন আসা টাকা এক বছর ছিলো না) কিভাবে পবিত্র যাকাত দিতে হবে?

জাওয়াব:  নিছাবের মালিক হয়ে এক বছর পূর্ণ হলেই পবিত্র যাকাত দিতে হয়। যখন বা যেদিন পবিত্র যাকাত-এর নিছাবের এক বছর পূর্ণ হবে সেদিন তার নিকট (নিত্যপ্রয়োজনীয় টাকা ব্যতীত) যত টাকা থাকবে অর্থাৎ নিছাবের সাথে যত টাকাই সংযুক্ত হোক না কেন, সমস্ত টাকারই পবিত্র যাকাত আদায় করতে হবে যদিও কতক টাকা যাকাতদাতার হস্তগত হওয়ার পর এক বছর অতিবাহিত হয়নি তা সত্ত্বেও।

 

মুহম্মদ তরিকুল ইসলাম

তেতুঁলিয়া, পঞ্চগড়

 

সুওয়াল: অনেকে দেখা যায় হাত ও মুখ পানি দিয়ে ধৌত করে অথচ পা ধৌত করার সময় মোজার উপর মাসেহ করে, আসলে তা জায়িয আছে কি? জানতে বাসনা রাখি।

জাওয়াব: হ্যাঁ, ওযূর মধ্যে অন্যসব অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ধুয়ে এবং পায়ে মোজা পরিহিত থাকায় তা না খুলে পা ধৌত করার পরিবর্তে মোজার উপর মাসেহ করাটা জায়িয রয়েছে। তবে মোজার উপর মাসেহ করার ব্যাপারে যে নিয়ম রয়েছে তা জেনে সে মুতাবিক মাসেহ করতে হবে। অন্যথায় মাসেহ শুদ্ধ হবে না। মাসেহ শুদ্ধ হওয়ার জন্য সম্পূর্ণ চামড়ার মোজা হতে হবে। চেইন বা বোতাম দিয়ে আটকানো মোজার উপর মাসেহ শুদ্ধ হবে না এবং মোজা কাপড়ের হলে তার উপরও মাসেহ শুদ্ধ হবে না।

মোজা সম্পূর্ণ চামড়ার হলে এবং তা ওযূর সহিত পরিধান করলে এমন ব্যক্তি মুকীম হলে তার জন্য একদনি এক রাত অর্থাৎ চব্বিশ ঘণ্টা মাসেহ করা জায়িয রয়েছে। আর মুসাফির হলে তিন দিন তিন রাত অর্থাৎ ৭২ ঘণ্টা মাসেহ করতে পারে।

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ