সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সংখ্যা: ১৯২তম সংখ্যা | বিভাগ:

মুহম্মদ মুশফিকুর রহমান

ঝাউতলা স্টেশন রোড, চট্রগ্রাম।

সুওয়াল: চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত রেযাখানীদের অখ্যাত মাসিক মুখপত্র ডিসেম্বর-জানুয়ারী /২০০৬ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে একটি মাসিক পত্রিকার কথা উল্লেখ করে æআল ফিকহু আলাল মাযাহিবিল আরবায়া, আল জাওহারাতুন নাইয়ারাহ্ ও রদ্দুল মুহ্তার” কিতাবের বরাত দিয়ে বলেছে, আযানের মৌখিক জাওয়াব দেওয়া মুস্তাহাব”…।

এখন আমার সুওয়াল হল- তারা æআযানের মৌখিক জাওয়াব দেয়া সম্পর্কে যে সকল কিতাবের ইবারত উল্লেখ করেছে তা কতুটুকু গ্রহণযোগ্য?

জাওয়াব: আযানের মৌখিক জাওয়াব দেয়া সম্পর্কে রেযাখানীদের অখ্যাত মাসিক মুখপত্রের উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। বরং স্ববিরোধী, ভুল ও অশুদ্ধ হয়েছে এবং ছহীহ হাদীছ শরীফ ও হানাফী মাযহাবের নির্ভরযোগ্য বিশ্বখ্যাত অনুসরণীয় ফিক্বাহ ও ফতওয়ার  কিতাবসমূহে বর্ণিত তারজীহ্ বা প্রাধান্যপ্রাপ্ত তথা মুখতার বা গ্রহণযোগ্য মতের সম্পূর্ণ খিলাফ হয়েছে। কারণ আমাদের হানাফী মাযহাব মতে আযান শ্রবণকারীর সকলের জন্যই আযানের জাওয়াব মৌখিকভাবে দেয়া ওয়াজিব। আর এই আযানের মৌখিক জাওয়াব না দিলে, সে ওয়াজিব তরককারী হিসেবে সাব্যস্ত হয়ে নাফরমানের অন্তর্ভুক্ত হবে।

সুতরাং মুয়ায্যিনের আযান শুনে আযানের মৌখিক জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব এবং এর উপরই ফতওয়া। হানাফীদের জন্য এর বিপরীত মত পোষণ করা সম্পূর্ণই জিহালতী ও গুমরাহী।

রেযাখানী মৌলভী ছাহেবরা æআযানের মৌখিক জাওয়াব দেয়া মুস্তাহাব বলে জিহালতী ও গুমরাহীর পরিচয় দিয়েছে এবং কিতাবের নাম ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিয়েছে। নিম্নে পর্যায়ক্রমে তাদের প্রতিটি দলীলের খ-নসহ সঠিক ও গ্রহণযোগ্য ফতওয়া উল্লেখ করা হচ্ছে-

(ধারাবাহিক)

রেযাখানীদের বক্তব্য খণ্ডন

উল্লেখ্য, রেযাখানীরা পরিশেষে বলেছে, æতবে অধিকাংশ হানাফী ফক্বীহ ও ইমামগণ … আযান শুনে নামায ও জামায়াতের দিকে হাজির হওয়াকে ওয়াজিব বলে ফায়সালা প্রদান করেছেন। বিস্তারিত দেখুন- আল ফিক্বহ আলাল মাযাহিবিল আরবায়া ও রদ্দুল মুহ্তার।

এর জাওয়াবে বলতে হয় যে, রেযাখানীদের উক্ত বক্তব্য মিথ্যা ও দলীলবিহীন তা আমরা আমাদের মাসিক আল বাইয়্যিনাতে বিগত সংখ্যায় প্রমাণ করেছি যে, তাদের বক্তব্যের সাথে কিতাবের ইবারতের কোন মিল নেই।

কারণ তারা তাদের বক্তব্যের স্বপক্ষে দলীল হিসেবে ‘আল ফিক্বহু আলাল মাযাহিবিল আরবায়া ও রদ্দুল মুহতার’ কিতাবের বরাত দিয়েছে।

অথচ অধিকাংশ হানাফী ফক্বীহ ও ইমামগণ … আযান শুনে নামায ও জামায়াতের দিকে হাজির হওয়াকে ওয়াজিব বলে যে ফায়সালা প্রদান করেছেন, এধরনের কোন বক্তব্য, কোন বর্ণনা, কোন ইবারত তাদের উল্লিখিত ‘আল ফিক্বহু আলাল মাযাহিবিল আরবায়া ও রদ্দুল মুহতার’ কিতাবের ইবারতে উল্লেখ নেই।

দ্বিতীয়ত: অধিকাংশ হানাফী ফক্বীহ ও ইমামগণ … আযান শুনে নামায ও জামায়াতের দিকে হাজির হওয়াকে ওয়াজিব বলে যে ফায়সালা প্রদান করেছেন, এধরনের কোন বর্ণনা, কোন বক্তব্য, কোন ইবারত রেযাখানী মৌলভী সাহেবরা উল্লেখ করতে পারেনি।

সুতরাং রেযাখানীদের দলীলবিহীন বক্তব্য মোটেই গ্রহণযোগ্য নয় এবং পাশাপাশি এটাও প্রমাণিত হলো যে, রেযাখানীদের বক্তব্যের সাথে কিতাবের কোন মিল নেই। অতএব, রেযাখানীরা তাদের বক্তব্যের স্বপক্ষে ‘আল ফিক্বহু আলাল মাযাহিবিল আরবায়া ও রদ্দুল মুহতার’ কিতাবের নাম ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিয়েছে।

তৃতীয়তঃ জামায়াত যেখানে সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ, সেখানে আযান শুনে নামায ও জামায়াতের দিকে হাজির হওয়া ওয়াজিব হয় কি করে? কারণ নির্ভরযোগ্য সকল ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাবে এ কথাই উল্লেখ আছে যে, ‘জামায়াত হলো সুন্নতে মুয়াক্কাদা’। অর্থাৎ জামায়াতে নামায আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা।

যেমন বিশ্ব বিখ্যাত ফতওয়ার কিতাব, ‘ফতওয়ায়ে নাওয়াযিল’ কিতাবের ৪৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

اداء الصلوة بالجماعة سنة مؤكدة.

অর্থ: æজামায়াতে নামায আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা।”

সুতরাং জামায়াত সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ হলে, আযান শুনে নামায ও জামায়াতের দিকে হাজির হওয়া ওয়াজিব হতে পারে না।

অতএব রেযাখানীরা যে বলেছে, ‘অধিকাংশ হানাফী ফক্বীহ ও ইমামগণ … আযান শুনে নামায ও জামায়াতের দিকে হাজির হওয়াকে ওয়াজিব বলে ফায়সালা প্রদান করেছেন। ইহা তাদের দলীলবিহীন সর্বশেষ ধোঁকা।

চতুর্থতঃ বলতে হয় যে, রেযাখানীরা অধিকাংশ হানাফী ফক্বীহ ও ইমামগণ … বলে যে দুটি কিতাবের বরাত দিয়েছে উক্ত কিতাব দুটিতে ইমাম হালওয়ানির একটি মত উল্লেখ করা হয়েছে।

অথচ ইমাম হালাওয়ানীর মতের উপর ফতওয়া নয় বরং ফতওয়া হলো আমাদের হানাফী মাযহাবের ইমাম, ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে উপর।

যেমন মুয়াত্তা ইমাম মালিক, কিতাবের ২৩ পৃষ্ঠার ৪ নম্বর হাশিয়ায় উল্লেখ আছে-

قوله فقولوا مثل ما يقول اى وجوبا عند ابى حنيفة وندبا عند الشافعى.

অর্থ: আল্লাহ পাক উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, æযখন তোমরা আযান শুনবে, তখন মুয়ায্যিন যেরূপ বলে তোমরাও অনুরূপ বল।”

অর্থাৎ এই হাদীছ শরীফ-এর ভিত্তিতে আমাদের হানাফী মাযহাবের ইমাম, ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকট মৌখিকভাবে আযানের জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব।

পঞ্চমতঃ অধিকাংশ হানাফী ফক্বীহ ও ইমামগণ … আযান শুনে নামায ও জামায়াতের দিকে হাজির হওয়াকে ওয়াজিব বলে ফায়সালা প্রদান করেছেন। রেযাখানীরা তাদের উক্ত বক্তব্যের সপক্ষে ‘আল ফিক্বহু আলাল মাযাহিবিল আরবায়া ও রদ্দুল মুহতার’ কিতাবের বরাত দিয়েছে।

অথচ আমরাই ‘আল ফিক্বহু আলাল মাযাহিবিল আরবায়া ও রদ্দুল মুহতার’ কিতাব থেকে কিতাবের ইবারত উল্লেখ করে প্রমাণ করেছি যে, আযান শুনে নামায ও জামায়াতের দিকে হাজির হওয়া ওয়াজিব এটা মুশকিল ও অসম্ভব।

কেননা আযান শুনে নামায ও জামায়াতের দিকে হাজির হওয়া ওয়াজিব হলে, প্রথম ওয়াক্তেই নামায ও জামায়াতের দিকে হাজির হয়ে ওয়াজিব আদায় করা তার উপর লাযিম হয়ে যায়। আর আযানের পূর্ব থেকেই জামায়াতের জন্য মসজিদে উপস্থিত থাকলে নামায ব্যতীত আযানের জাওয়াব দেয়ার জন্য জামায়াতে হাজির হওয়া যে ওয়াজিব তা নিরর্থক হয়ে যায়। যেমন- ‘রদ্দুল মুহ্তার’ কিতাবের ১ম খ-ের ৩৯৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

قال فى النهر: وقوله بوجوب الاجابة بالقدم مشكل لانه يلزم عليه وجوب الاداء فى اول الوقت وفى المسجد اذلا معنى لايجاب الذهاب دون الصلاة.

অর্থ: ‘নাহরুল ফায়িক’ কিতাবে উল্লেখ আছে, (নিশ্চয়ই হালওয়ানীর বক্তব্য) কুদুম বা উপস্থিতির মাধ্যমে অর্থাৎ জামায়াতে নামায আদায় করার জন্য মসজিদে উপস্থিতির মাধ্যমে আযানের জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব এটা মুশকিল। কেননা জামায়াতে নামায আদায় করার জন্য মসজিদে উপস্থিতির (হাজিরের) মাধ্যমে আযানের জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব হলে প্রথম ওয়াক্তেই মসজিদে উপস্থিতির মাধ্যমে ওয়াজিব আদায় করা তার উপর লাযিম হয়ে যায়। আর আযানের পূর্ব থেকেই মসজিদে উপস্থিত থাকলে নামায ব্যতীত জাওয়াব দেয়ার জন্য মসজিদে হাজির হওয়া নিরর্থক। (কেননা সে তো আযানের পূর্ব থেকেই মসজিদে হাজির)

তাছাড়া হালওয়ানীর উক্ত বক্তব্যে এটাও প্রমাণিত হলো যে, আযানের পূর্ব থেকেই জামায়াতে নামায আদায় করার জন্য মসজিদে হাজির থাকলে নামায ব্যতীত আযানের জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব তার উপর বর্তায় না। কেননা সে তো قدم বা হাজির হয়েই আছে। যা সম্পূর্ণই হাদীছ শরীফ-এর খিলাফ হওয়ায় মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ হাদীছ শরীফ-এ আযানের জাওয়াবে قدم বা হাজির হওয়ার কথা বলা হয়নি। বরং হাদীছ শরীফ-এর মধ্যে قولوا শব্দটি উল্লেখ আছে।

যেমন- হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত আছে, আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

اذا سمعتم الموذن فقولوا مثل ما يقول

অর্থ: ‘যখন তোমরা মুয়ায্যিনের আযান শুনবে, তখন মুয়ায্যিন যা বলে তোমরাও তা বল।’ এই বর্ণিত হাদীছ শরীফ-এর মধ্যে قولوا শব্দটি امر (আমর) এর ছিগাহ, যা দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই ওয়াজিব প্রমাণিত হয়।

যেমন- এ প্রসঙ্গে ‘মুয়াত্তা ইমাম মুহম্মদ’ কিতাবের ৮৫ পৃষ্ঠার ৪ নম্বর হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,

قوله فقولوا استدل به على وجوب اجابة المؤذن حكاه الطحاوى عن قوم من السلف وبه قال الحنفية.

অর্থ: ‘হাদীছ শরীফ-এর ইবারতে উল্লিখিত فقولوا শব্দটির ভিত্তিতে দলীল গ্রহণ করা হয়েছে যে, মৌখিকভাবে মুয়ায্যিনের আযানের জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব। এটা হযরত ইমাম ত্বহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও ছলফে-ছালিহীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের এক জামায়াত থেকেও বর্ণনা করেছেন।’ আর হাদীছ শরীফ-এর ইবারতে উল্লিখিত فقولوا শব্দটির ভিত্তিতে দলীল গ্রহণ করে হানাফী ফক্বীহ ও ইমামগণ বলেন, মৌখিকভাবে আযানের জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব। (সমাপ্ত)

খন্দকার মুহম্মদ সেলিম আহমদ

পাহাড় কাঞ্চনপুর, টাঙ্গাইল

 সুওয়াল: হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা ফেব্রুয়ারী-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত-অক্টোবর ২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রদত্ত æমীলাদ-ক্বিয়াম” সম্পর্কিত বক্তব্যের সমালোচনা করতে গিয়ে  এবং একই বিষয়ে এপ্রিল-২০০৫ ঈসায়ী ও মে-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় এছাড়াও মাসিক মদীনা পত্রিকা ফেব্রুয়ারী-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে একই ধরনের জাওয়াব দেয়া হয়েছে।

তাদের বক্তব্যগুলোর মধ্যে যে বিষয়গুলো আমার নিকট সন্দেহজনক তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো-

যেমন, মে-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে বলা হয়েছে, বর্তমানে প্রচলিত মীলাদ হাসানা তথা ভালো কাজের অন্তর্ভুক্ত নয় বরং সাইয়্যিয়াহ অর্থাৎ মন্দ কাজের শামিল। কেননা, হাসানা বা সাইয়্যিয়ার বিবেচনা কুরআন সুন্নাহর দৃষ্টিতে হতে হবে, সাধারণ চর্ম চোখে নয়। …

এখন আমাদের সুওয়াল হলো, প্রচলিত মীলাদ-শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফ সম্পর্কিত তাদের উল্লিখিত বক্তব্য কতটুকু দলীলসম্মত? কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।

জাওয়াব: বর্তমানে প্রচলিত মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফ সম্পর্কে হাটহাজারী মাদ্রাসার অখ্যাত মাসিক পত্রিকার জিজ্ঞাসার সমাধানে এবং অপর একটি পত্রিকার প্রশ্নোত্তর বিভাগে যা বলা হয়েছে তা শুদ্ধ তো হয়ইনি, বরং সম্পূর্ণই মিথ্যা, ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন এবং অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদ ও ফক্বীহগণের সর্বজনমান্য ও স্বীকৃত বিশ্ব বিখ্যাত ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহের বক্তব্যের বিপরীত ও বিরুদ্ধ মত। যা ইতঃপূর্বে আমাদের æমাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ”-এর অনেক সংখ্যায় খ-ন করে সঠিক ও দলীলভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হয়েছে। আর æমাসিক আল বাইয়্যিনাত শীরফ”-এর জাওয়াবকে খ-ন করা হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের পক্ষে আদৌ সম্ভব হয়নি, হবেও না ইনশাআল্লাহ।

এরপরেও হাটহাজারীর মৌলভী ছাহেব এবং তাদের সকল সমজাতীয়রা বার বার ‘মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফ’ সম্পর্কে বিনা তাহক্বীকে ও বিনা দলীলে উক্ত ভুলেরই পুনরাবৃত্তি করে যাচ্ছে।

(ধারাবাহিক)

যেমন, উল্লিখিত প্রথম বক্তব্যের প্রথমেই তারা বলেছে, æবর্তমানে প্রচলিত মীলাদ হাসানাহ তথা ভালো কাজের অন্তর্ভুক্ত নয় বরং সাইয়্যিয়াহ অর্থাৎ মন্দ কাজের শামিল।” নাঊযুবিল্লাহ।

এর জাওয়াবে বলতে হয় যে, কুরআন শরীফ-এর কোন আয়াত শরীফ-এ ‘বর্তমানে প্রচলিত মীলাদ শরীফ হাসানা তথা ভালো কাজের অন্তর্ভুক্ত নয় বরং সাইয়্যিয়াহ অর্থাৎ মন্দ কাজের শামিল বলা হয়েছে এবং হাদীছ শরীফ-এর কোন্ হাদীছ শরীফ-এ বর্তমানে প্রচলিত মীলাদ শরীফ হাসানা তথা ভালো কাজের অন্তর্ভুক্ত নয় বরং মন্দ কাজের শামিল বলা হয়েছে এবং ইজমা ও ক্বিয়াসের কোথায়, কোন্ ইবারতে বর্তমানে প্রচলিত মীলাদ শরীফ হাসানা তথা ভালো কাজের অন্তর্ভুক্ত নয় বরং সাইয়্যিয়াহ অর্থাৎ মন্দ কাজের শামিল বলা হয়েছে, তা হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবরা কুরআন শরীফ-এর আয়াত শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের ইবারতসহ দলীল উল্লেখ করেনি। সুতরাং তাদের দলীলবিহীন, ইবারতবিহীন, মনগড়া ও মিথ্যা বক্তব্য মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।

দ্বিতীয়তঃ উল্লিখিত বক্তব্যের শেষের অংশে তারা বলেছে, ‘হাসানা বা সাইয়্যিয়ার বিবেচনা কুরআন সুন্নাহ’র দৃষ্টিতে হতে হবে, সাধারণ চর্ম চোখে নয়।’

এর জাওয়াবে বলতে হয় যে, হাসানা বা সাইয়্যিয়াহ-এর বিবেচনা যে চর্ম চোখে করা যাবে না বরং কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এর দৃষ্টিতে হতে হবে, হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবরা কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এর দৃষ্টিতে এ ব্যাপারে কোন দলীল প্রমাণও পেশ করতে পারেনি। সুতরাং আবারো প্রমাণিত হলো যে, হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের দলীলবিহীন, ইবারতবিহীন, মনগড়া ও মিথ্যা বক্তব্য মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।

কারণ মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,

هاتوا برهانكم ان كنتم صدقين

অর্থ: ‘যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাকো, তাহলে দলীল প্রমাণ পেশ করো।” (সূরা বাক্বারা-১১১)

সুতরাং হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবরা যদি তাদের উক্ত বক্তব্যে সত্যবাদী  হয়ে থাকে, তাহলে তারা যেন কুরআন শরীফ-এর আয়াত শরীফ উল্লেখ করে প্রমাণ করে দেয় যে, ‘বর্তমানে প্রচলিত মীলাদ শরীফ হাসানা তথা ভালো কাজের অন্তর্ভুক্ত নয় বরং সাইয়্যিয়াহ অর্থাৎ মন্দ কাজের শামিল এবং হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের ইবারতসহ দলীল উল্লেখ করে প্রমাণ করে দেয় যে, ‘বর্তমানে প্রচলিত মীলাদ শরীফ হাসানা তথা ভালো কাজের অন্তর্ভুক্ত নয় বরং সাইয়্যিয়াহ অর্থাৎ মন্দ কাজের শামিল।’

কিন্তু কস্মিনকালেও হাটহাজারীর মৌলভী ছাহেবরা কুরআন শরীফ-এর আয়াত শরীফ এবং হাদীছ শরীফ ও ইজমা-ক্বিয়াসের ইবারতসহ দলীল উল্লেখ করে প্রমাণ করতে পারবে না যে, ‘বর্তমানে প্রচলিত মীলাদ শরীফ হাসানা তথা ভালো কাজের অন্তর্ভুক্ত নয় বরং সাইয়্যিয়াহ অর্থাৎ মন্দ কাজের শামিল।

সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, তাদের উক্ত বক্তব্য মনগড়া, দলীলবিহীন, ইবারতবিহীন, মিথ্যা এবং কুফরীমূলক হয়েছে। আর মিথ্যাবাদীদের উপর আল্লাহ পাক উনার লা’নত। কারণ আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,

لعنت الله على الكاذبين

অর্থ: æমিথ্যাবাদীদের উপর আল্লাহ পাক উনার লা’নত।” (সূরা আলে ইমরান-৬১)

অথচ আমরা আমাদের ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ’-এ কিতাবের ইবারতসহ দলীল-প্রমাণ উল্লেখ  করে প্রমাণ করেছি যে, ‘বর্তমানে প্রচলিত মীলাদ শরীফ অবশ্যই হাসানা তথা ভালো কাজের অন্তর্ভুক্ত। শুধু তাই নয়, বরং আমরা কিতাবের ইবারত উল্লেখ করে আরও প্রমাণ করেছি যে, ‘বর্তমানে প্রচলিত মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফ শুধু হাসানা তথা ভালোই নয়, বরং বর্তমান প্রচলিত মীলাদ শরীফ, ক্বিয়াম শরীফ احسن  (আহসান) তথা অধিকতর ভালো কাজের অন্তর্ভুক্ত।

যেমন, বাংলার মুলুকে প্রায় ৫৫ বৎসর দ্বীনের তথা ইল্মে ফিক্বাহ ও ইল্মে তাছাউফের প্রচার-প্রসারকারী, হযরত মাওলানা কারামত আলী জৌনপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তদীয় ‘মুলাখ্খাছ’ কিতাবে উল্লেখ করেন-

قال علامة السيوطى اى نفع احسن من عمل المولد والقيام وانهم يهيجان محبة النبى صلى الله عليه وسلم عظمته وجلالته فى قلب فاعله.

অর্থ: আল্লামা ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, মীলাদ ও ক্বিয়াম অপেক্ষা (احسن) আহসান তথা অধিকতর উত্তম বা ফলদায়ক আমল আর কি হতে পারে? কারণ এর দ্বারা মীলাদ ক্বিয়ামকারীর হৃদয়ে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহব্বত, মর্যাদা ও মহিমার উদ্দীপনা জেগে উঠে।’

উপরে উল্লিখিত ইবারতের দ্বারা এটাই সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, ‘বর্তমানে প্রচলিত মীলাদ শরীফ (احسن) আহসান তথা অধিকতর ভালো কাজের অন্তর্ভুক্ত।

এছাড়াও বর্তমানে প্রচলিত মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফ শুধু হাসানাই নয়। বরং বর্তমানে প্রচলিত মীলাদ শরীফ-এর ক্বিয়াম শরীফকে مستحسن (মুসতাহ্সান) বলে ফতওয়া দেয়া হয়েছে।

যেমন, ‘ইক্বদুল জাওয়াহির’ নামক কিতাবের ২৯নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে,

قد استحسن القيام عند ذكر ولادته الشريفة صلى الله عليه وسلم ائمة ذو رواية ودراية.

অর্থ: æসাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর আলোচনাকালে ক্বিয়াম করাকে বিচক্ষণ ইমামগণ মুস্তাহসান বলেছেন।”

‘ইশবাউল কালাম’ নামক কিতাবের ৫৪নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে,

قد اجتمعت الامة المحمدية من الاهل السنة والجماعة على استحسان القيام المذكور وقال عليه السلام لا تجتمع امتى على الضلالة.

অর্থ: উম্মতে মুহম্মদীর আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের সকল আলিম মীলাদ শরীফ-এর ক্বিয়াম মুস্তাহসান হওয়ার বাপারে ইজমা বা ঐকমত্য পোষণ করেন। আর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমার উম্মত (আলিমগণ) কখনোই গুমরাহীর উপর একমত হবেনা।”

অতএব সুস্পষ্টভাবে এটাই প্রমাণিত হলো যে, ‘বর্তমানে প্রচলিত মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফ শুধু হাসানা তথা ভালোই নয়। বরং বর্তমানে প্রচলিত মীলাদ শরীফ, ক্বিয়াম শরীফ احسن (আহসান) তথা অধিকতর ভালো কাজের অন্তর্ভুক্ত। অধিকতর সুন্দর কাজের অন্তর্ভুক্ত। অধিকতর উৎকৃষ্ট কাজের অন্তর্ভুক্ত। অধিকতর উত্তম কাজের অন্তর্ভুক্ত। সুবহানাল্লাহ!

মুহম্মদ আনোয়ার হুসাইন, সউদী আরব

সুওয়াল: মাসিক মদীনা জানুয়ারী/২০০৯ এবং জুন/২০০৯ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে বলা হয়েছে পুরুষদের জামাতের সাথে পর্দা রক্ষা করে মহিলাগণ সব নামাযেই শামিল হতে পারবেন। এতে কোন প্রকার নিষেধাজ্ঞা নেই।

এখন আমার সুওয়াল হলো- মাসিক মদীনার উক্ত উত্তর সঠিক হয়েছে কি? দয়া করে দলীল-আদিল্লাহসহ সঠিক জাওয়াব জানিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।

জাওয়াব: পুরুষদের জামায়াতের সাথে মহিলাদের নামায পড়া সম্পর্কে মাসিক মদীনার সম্পাদক মাহীউদ্দীন ছাহেবের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই মিথ্যা, দলীলবিহীন এবং ইজমাকে অস্বীকার করায় কুফরী হয়েছে। কারণ পর্দা রক্ষা করে বা পর্দাসহকারে হলেও মহিলারা পুরুষদের জামায়াতে শামিল হয়ে নামায পড়তে পারবে না।

কেননা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আম ফতওয়া হলো মহিলাদের পাঁচ ওয়াক্ত, জুমুয়া, তারাবীহ্ ও ঈদের নামাযসহ সকল নামাযের জামায়াতের জন্য মসজিদ, ঈদগাহ ও যে কোন স্থানে যাওয়া মাকরূহ তাহরীমী তথা সম্পূর্ণই নিষিদ্ধ। আর খাছ ফতওয়া হলো কুফরী। কারণ আল্লাহ্ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর যামানায়, হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর যামানায় এবং হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর খিলাফতের প্রথম যামানায় মহিলাদের জামায়াত জারি ছিল। এতদ্বসত্বেও হযরত উমর ফারূক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মেয়েদের সর্বপ্রকার নামাযের জামায়াত নিষিদ্ধ ও বন্ধ করে দেন।

যেমন ‘ফতহুল ক্বাদীর’  কিতাবে উল্লেখ আছে,

ولقد نهى عمر رضى الله تعالى عنه النساء عن الخروج الى المساجد

অর্থ: নিশ্চয়ই হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মহিলাদেরকে জামায়াতের জন্য মসজিদে যেতে নিষেধ করেন। (ফতওয়ায়ে দেওবন্দ, ফতওয়ায়ে রহিমীয়া)

এ বিষয়টি মহিলারা হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহাকে অবগত করলে তিনিও তা সমর্থন করেন। অর্থাৎ তিনিও মেয়েদের সর্বপ্রকার নামাযের জামায়াত নিষিদ্ধ হওয়ার পক্ষে মত দেন এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণও তা সমর্থন করেন।

উল্লেখ্য, হযরত উমর ফারূক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর এই নিষিদ্ধকরণ এবং তা হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহাসহ সকল ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের সমর্থনের পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তিতে সকল ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ ফতওয়া দেন যে, মহিলাদের জন্য সকল নামাযের জন্য মসজিদ, ঈদগাহ ও যে কোন স্থানে যাওয়া মাকরূহ তাহরীমী।

যেমন, ‘ইমদাদুল আহ্কাম’ কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে,

قد اجتمعت الامة على كراهة خروج النساء الى الجماعة.

অর্থ: মহিলাদের জামায়াতের জন্য মসজিদে যাওয়া মাকরূহ্ তাহরীমী হওয়ার ব্যাপারে উম্মতের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

ঊমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী কিতাবের ৫ম খ-ের ১৫৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

قال صاحب الهداية ويكره لهن حضور الجماعات يعنى الشواب منهن. وقوله الجماعة يتناول الجمع والاعياد والكسوف والاستسقاء. قال اصحابنا لان فى خروجهن خوف الفتنة وهو سبب للحرام وما يقضى الى الحرام فهو حرام فعلى هذا قولهم يكره مرادهم يحرم

অর্থ: হেদায়ার লেখক বলেন, যুবতী মহিলাদের জামায়াতে যাওয়া মাকরূহ্ তাহরীমী। তিনি আরো বলেন, জামায়াত বলতে এখানে (পাঁচ ওয়াক্তসহ) জুমুয়া, ঈদাইন, কুসূফ, ইস্তিস্কা ইত্যাদি সকল নামাযই অন্তর্ভুক্ত। আমাদের ফক্বীহগণ বলেন, কেননা তাদের (মহিলাদের) জামায়াতের জন্য বের হওয়ার ফিতনার আশঙ্কা রয়েছে, আর ফিতনা হারামের অন্তর্ভুক্ত, আর যা হারাম কাজে সহায়তা করে তাও হারাম, এ কারণেই ফক্বীহ্গণের মাকরূহ্ তাহরীমীর দ্বারা মূলতঃ মহিলাদের জামায়াতে যাওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হওয়াই উদ্দেশ্য। (ফতহুল মুলহিম, শরহে মুসলিম ২য় জিল্দ পৃঃ ৪২৮, হাফহীমুল মুসলিম ১৪ জিল্দ পৃঃ ২১)

ফায়জুল বারী শরহে বুখারী কিতাবের ২য় খ-ের ৩২২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

ومنعهن المتأخرون عن الخروج فعن ابن مسعود مرفوعا صلوة المرأة فى بيتها افضل من صلاتها فى حجرتها وصلاتها فى مخدعها افضل من صلاتها فى بيتها وهذا يدل على ان مرضى الشرع ان لا تخرجن الى المساجد.

অর্থ: উলামায়ে মুতাআখ্খিরীনগণ মহিলাদের জামায়াতের জন্য মসজিদে যাওয়া নিষেধ বলে মত প্রকাশ করেন। কেননা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে মারফু হাদীছ হিসেবে বর্ণিত রয়েছে যে,  মহিলাদের হুজরায় নামায আদায় করার চেয়ে ঘরে নামায পড়া সর্বোত্তম এবং ঘরের চেয়ে গোপন প্রকোষ্ঠ সর্বোত্তম। উপরোক্ত হাদীছ শরীফ-এর আলোকে শরীয়ত এ মতই ব্যক্ত করে যে, মহিলাগণ জামায়াতের জন্য মসজিদে যাবে না।

‘সুনানে নাসাঈ শরহে ইমামুস সুয়ূতী’ কিতাবের ২য় খ-ের ২৮২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

وجب على الامام او نائبه منعهن من ذالك. قال المظهر فيه دليل على جواز خروجهن الى المساجد للصلاة. لكن فى زماننا مكروه. عمم المتأخرون المنع للعجائز واشواب فى الصلوات كلها

অর্থ: ইমাম অথবা তার প্রতিনিধির জন্য জরুরী যেন মহিলাদেরকে জামায়াতের জন্য মসজিদে আসতে নিষেধ করে। হযরত মাযহার রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, যদিও হাদীছ শরীফ দ্বারা মহিলাদের (প্রথম যুগে) মসজিদে যাওয়া প্রমাণিত কিন্তু আমাদের সময়ে তা মাকরূহ্ তাহ্রীমী, (কেননা) মুতাআখ্খিরীন আলিমগণ যুবতী ও বৃদ্ধা মহিলাদের যে কোন নামাযের জন্য মসজিদে যাওয়া নিষেধ হওয়ার ব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন।

আর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের বিরোধিতা কারার কারণে খাছ ফতওয়া হচ্ছে কুফরী। কারণ আল্লাহ পাক বলেন,

ليغيظ بهم الكفار

অর্থ: একমাত্র কাফিররাই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে।” (সূরা ফাতহ-২৯)

এর ব্যাখ্যায় হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে, হযরত মালিক বিন আনাস রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন-

من غاظ اصحاب محمد صلى الله عليه وسلم فهو كافر

অর্থ: যে ব্যক্তি রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছাহাবীগণের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ বা বিরোধিতা করে সে কাফির।

হাদীছ শরীফ-এ আরো বর্ণিত হয়েছে,

حب الصحابة ايمان وبغضهم كفر

অর্থ: হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের মুহব্বত হচ্ছে ঈমান। আর তাঁদের বিরোধিতা বা বিদ্বেষ পোষণ কুফরী। (কানযুল উম্মাল)

যার পরিপ্রেক্ষিতে আকাঈদের কিতাবে বর্ণনা করা হয়েছে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের মুহব্বত হচ্ছে ঈমানের কারণ। আর বিরোধিতা হচ্ছে কুফরীর কারণ। আর খাছভাবে বুখারী শরীফ-এ হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে,

حب ابى بكر وعمر رضى الله تعالى عنهما ايمان وبغضهما كفر

অর্থ: হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর প্রতি মুহব্বত পোষণ করা হচ্ছে ঈমান আর তাঁদের প্রতি বিরোধিতা বা বিদ্বেষ পোষণ করা হচ্ছে কুফরী।

অতএব, উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর ফতওয়া, হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর সমর্থন এবং ছাহাবা আজমাঈন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের ইজমাকে উপেক্ষা করে যারা মহিলাদের জামায়াত জারি কারার কোশেশ করবে তারা মুসলমানের অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারবেনা। তারা কাট্টা কাফির হয়ে যাবে।

(বিঃ দ্রঃ- এ ব্যাপারে জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ-এর ১১তম সংখ্যা পাঠ করুন সেখানে প্রায় ৬৫টি অকাট্য দলীল পেশ করা হয়েছে)

 

মুসাম্মত সানজিদা আক্তার

সভানেত্রী- ছাত্রী আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত

মুহম্মদপুর, ঢাকা।

 

সুওয়াল: অখ্যাত মাসিক রাহমানী পয়গাম এপ্রিল/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-জবাব বিভাগে নিম্নোক্ত ১২৪৭ নম্বর জিজ্ঞাসার জবাব ছাপা হয়।

জিজ্ঞাসা: ছাহাবী আবু সাঈদ খুদরী ও আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা বলেন যে, রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন আমার মৃত্যুর পর পূর্ব দেশগুলির মধ্য হতে কোন একটি দেশ হতে আমার উম্মতের ভিতর হতে একটি দল বের হবে। এই দলের সদস্যগণ হবে অশিক্ষিত ও মূর্খ। এদের মধ্যে কোন শিক্ষিত লোক গেলে সেও হয়ে যাবে মূর্খের মত। তাদের বক্তৃতা হবে বহু বহু গুণের ফযীলতের। তাদের মত বক্তৃতা বা বয়ান কারো হবে না। …… তারা কুরআনের উপর আমল কিম্বা কুরআন প্রতিষ্ঠার একটু চেষ্টাও করবে না কখনো। উক্ত অখ্যাত পত্রিকা হাদীছ শরীফ ছহীহ স্বীকার করলেও মন্তব্য করেছে যে, প্রচলিত তাবলীগের কার্যক্রম পুরোপুরি শরীয়তসম্মত। ইসলাম পরিপন্থী কোন কিছু এতে নেই।

উক্ত অখ্যাত পত্রিকার উল্লিখিত æজিজ্ঞাসা-জবাবের” প্রেক্ষিতে আমার সুওয়াল বা জানার বিষয় হলো-

…. (৪) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের পৃষ্ঠপোষকতায় বা পরিচালনায় যারা রয়েছে তারা সকলেই হক্কানী আলিম, তাদের এ দাবি কতটুকু সঠিক? আসলে হক্কানী আলিমের সংজ্ঞা বা পরিচিতি কি?

কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে উল্লিখিত সুওয়ালগুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।

জাওয়াব: প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ জামায়াত সম্পর্কে উক্ত অখ্যাত পত্রিকার জবাব শুদ্ধ হয়নি। বরং ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন হয়েছে।

তাই নিম্নে সুওয়ালে বর্ণিত বিষয়গুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হলো-

ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে প্রশ্নে উল্লিখিত অখ্যাত পত্রিকার অপব্যাখ্যা ও মিথ্যাচারিতার খ-নমূলক জবাব (৪)

প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে অখ্যাত পত্রিকার জিজ্ঞাসার জবাবের প্রেক্ষিতে আপনার চতুর্থ সুওয়াল হলো-

(৪) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগের পৃষ্ঠপোষকতায় বা পরিচালনায় যারা রয়েছে তারা সকলেই হক্কানী আলিম, তাদের এ দাবি কতটুকু সঠিক? আসলে হক্কানী আলিমের সংজ্ঞা বা পরিচিতি কি?

আপনার উক্ত সুওয়ালের প্রেক্ষিতে বলতে হয় যে, প্রচলিত ছয় উছূলীদের উক্ত দাবি সম্পূর্ণই অবান্তর, মিথ্যা ও দলীলবিহীন। কারণ গত দুই সংখ্যায় প্রদত্ত হক্কানী আলিমের সংজ্ঞা বা পরিচিতিমূলক আলোচনা দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হয়েছে যে, হক্কানী আলিম বা সত্যিকার নায়িবে নবী তিনিই (১) যিনি ইসলামের প্রতিটি বিষয়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত অনুযায়ী আক্বীদা পোষণ করেন, (২) ইলমে ফিক্বাহ অর্জন করার সাথে সাথে একজন হক্কানী শায়খ বা মুর্শিদের নিকট বাইয়াত গ্রহণ করে তাছাউফ চর্চা করতঃ অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে আল্লাহভীতি বা তাক্বওয়া অর্জন করেছেন, (৩) অর্জিত ইলম অনুযায়ী পরিপূর্ণ আমল করেন, (৪) সুন্নতের পূর্ণ  পায়রবী করেন, (৫) হারাম-নাজায়িয ও শরীয়তবিরোধী কাজে লিপ্ত হননা। কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর দৃষ্টিতে তাঁরাই আলিম বা নায়িবে নবী।

অথচ প্রচলিত ছয় উছূলীদের কথিত আলিমদের মধ্যে উল্লিখিত গুণাবলীসমূহের কোনটাই বিদ্যমান নেই। আমরা যদি উল্লিখিত পাঁচটি বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করি তবে বিষয়টি আরো সুস্পষ্ট হয়ে যাবে।

হক্কানী আলিম হওয়ার জন্য তৃতীয় শর্ত হচ্ছে-

(৩) অর্জিত ইলম অনুযায়ী পরিপূর্ণ আমল করা।

অর্থাৎ হক্কানী আলিম তিনিই যিনি ফরয, ওয়াজিব, সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ আমল বা পালন করার সাথে সাথে সুন্নতে যায়িদাহ বা মুস্তাহাবগুলোও পালন করেন। অথচ ছয় উছূলীরা সুন্নতে যায়িদাহ বা মুস্তাহাব পালন করা তো দূরের কথা বরং ফরযই সঠিকভাবে পালন করে না। এখানে প্রমাণস্বরূপ দুই একটি বিষয় উল্লেখ করা হলো। আর তাতেই মূলতঃ বিষয়টি সবার নিকট সুস্পষ্ট হয়ে যাবে। কেননা প্রবাদ রয়েছে,

العاقل تكفيه الاشارة

‘জ্ঞানীদের জন্য ইশারাই যথেষ্ট।’ তাছাড়া রাঁধুনী যখন ভাত পাক করে তখন ভাত হয়েছে কিনা তা জানার জন্য কিন্তু সবগুলো ভাত টিপ দেয়না বরং দুই একটি ভাত টিপলেই বুঝা যায় যে, ভাত হয়েছে কিনা।

অনুরূপভাবে কেউ ভ-, প্রতারক, নাহক্ব কিনা তা বুঝার জন্য সেই ব্যক্তির সারা জীবনের সব আমল দেখার প্রয়োজন নেই দুই একটি আমলই যথেষ্ট। কাজেই, ছয় উছূলীদের কথিত মাওলানারা যে হক্কানী আলিম নয় তা বুঝার জন্যও নিম্নে উল্লিখিত দুটি বিষয়ই যথেষ্ট।

১.   তারা ছবি তুলে বা তোলায়। তাদের প্রোগ্রামগুলো ভিডিও করে এমনকি তাদের কথিত ইস্তেমায় নিরাপত্তার অজুহাতে সিসি টিভি লাগায়। তাদের কথিত ইস্তেমা টিভি চ্যানেলে প্রচার করায়। অথচ ইসলামের দৃষ্টিতে ছবি তোলা বা তোলানো, ভিডিও করা, সিসিটিভি লাগানো ও টিভি চ্যানেলে প্রোগ্রাম করা ইত্যাদি সবই হারাম। আর হারাম হতে বেঁচে থাকা হচ্ছে ফরয। নিম্নে ছবি হারাম হওয়ার কিছু প্রমাণ উল্লেখ করা হলো।

ছিহাহ সিত্তাহসহ সকল হাদীছ শরীফ-এর শরাহ, ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহে æছবি তোলা শক্ত হারাম” বলে বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন æছহীহ বুখারী শরীফ”-এ ইরশাদ হয়েছে-

عن عبد الله بن مسعود رضى الله تعالى عنه قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول ان اشد الناس عذابا عند الله المصورون.

অর্থ: æহযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমি শুনেছি আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই মানুষের মধ্যে ঐ ব্যক্তিকে আল্লাহ পাক কঠিন শাস্তি দিবেন, যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি তোলে বা আঁকে।”

æছহীহ নাসায়ী শরীফ”-এ ইরশাদ হয়েছে-

عن ابن عمر رضى الله تعالى عنه ان النبى صلى الله عليه وسلم قال ان اصحاب هذه الصور الذين يصنعونها يعذبون يوم القيمة ويقال لهم احيوا ما خلقتم.

অর্থ: æহযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই প্রাণীর ছবি তৈরিকারীদের ক্বিয়ামতের দিন শাস্তি দেয়া হবে এবং তাদেরকে বলা হবে, তোমরা যে ছবিগুলো তৈরি করেছ তার মধ্যে প্রাণ দাও। (কিন্তু তারা প্রাণ দিতে সক্ষম হবে না)”

æছহীহ বুখারী শরীফ” ২য় জিল্দ ৮৮০ পৃষ্ঠা, মিশকাত শরীফ ৩৮৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

عن عائشة رضى الله تعالى عنها ان النبى صلى الله عليه وسلم لم يكن يترك فى بيته شيئا فيه تصاليب الا  نقضه

অর্থ: æহযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বর্ণনা করেন যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘরে প্রাণীর ছবি বা ছবিযুক্ত সকল জিনিস (থাকলে) ধ্বংস করে ফেলতেন।”

æছহীহ বুখারী শরীফ” ২য় জিল্দ, ৮৮০ পৃষ্ঠা, æছহীহ মুসলিম শরীফ” ২য় জিল্দ, ২০১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

عن عائشة رضى الله تعالى عنها قالت قدم رسول الله صلى الله عليه وسلم من سفر وقد سترت بقرام لى على سهوة لى فيه تماثيل فلما راه رسول الله صلى الله عليه وسلم هتكه وقال اشد الناس عذابا يوم القيمة الذين يضاهون بخلق الله. قالت فجعلناه وسادة او وسادتين. وفى رواية اخرى قالت قدم النبى صلى الله عليه وسلم من سفر وعلقت درنوكا فيه تماثيل فامرنى ان انزعه فنزعته.

 অর্থ: উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বলেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন এক সফর হতে ঘরে তাশরীফ আনলেন এবং আমি ঘরের মধ্যে প্রাণীর ছবিযুক্ত একখানা পর্দা লাগিয়েছিলাম। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওটা দেখে ছিঁড়ে ফেললেন এবং বললেন, æক্বিয়ামতের দিন ঐ সমস্ত মানুষের কঠিন আযাব হবে যারা আল্লাহ পাক উনার সৃষ্টির সাদৃশ্য কোন প্রাণীর ছুরত সৃষ্টি করে।” অতঃপর আমি ওটা দ্বারা একটা অথবা দুইটা বালিশ বানালাম। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বলেন, হুযূর  পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম সফর হতে বাড়ি ফিরলেন, এবং আমি ঘরের মধ্যে প্রাণীর ছবিযুক্ত একখানা পর্দা ঝুলিয়েছিলাম, হুযূর  পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে ওটা সরিয়ে ফেলার আদেশ দিলেন, অতঃপর আমি ওটা সরিয়ে ফেললাম।

æছহীহ মুসলিম শরীফ” ২য় জিল্দ, ২০০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

عن عائشة رضى الله تعالى عنها قالت دخل على رسول الله صلى الله عليه وسلم وانا مسترة بقرام فيه صورة فتلون وجهه ثم تناول الستر فهتكه ثم قال ان من اشد الناس عذابا يوم القيمة الذين يشبهون بخلق الله تعالى.

অর্থ: হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বলেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার নিকট আসলেন। প্রাণীর ছবিযুক্ত একখানা চাদর গায়ে দেয়া ছিলাম। এটা দেখে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চেহারা মুবারক রঙিন হয়ে গেল। অতঃপর তিনি চাদরখানা নিয়ে ছিঁড়ে ফেললেন এবং বললেন, æক্বিয়ামতের দিন মানুষের মধ্যে ঐ ব্যক্তির কঠিন শাস্তি হবে, যে ব্যক্তি আল্লাহ পাক উনার সৃষ্টির সাদৃশ্য (কোন প্রাণীর ছূরত) সৃষ্টি করে।”

æছহীহ মুসলিম শরীফ” ২য় জিল্দ ২০১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

عن ابى معاوية رضى الله تعالى عنه ان من اشد اهل النار يوم القيمة عذابا المصورون.

অর্থ: হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, æনিশ্চয়ই ক্বিয়ামতের দিন দোযখবাসীদের মধ্যে ঐ ব্যক্তির কঠিন আযাব হবে, যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি আঁকে বা তোলে।”

উল্লিখিত ছহীহ হাদীছ শরীফসমূহের ব্যাখ্যায় æছহীহ বুখারী শরীফ”-এর বিখ্যাত ব্যাখ্যাগ্রন্থ উমদাতুল ক্বারীতে উল্লেখ আছে-

وان كان ورد فى حق عاص فيكون اشد عذابا من غيره من العصاة ويكون ذلك ذالا على المعصية المذكورة. وفى التوضيح قال اصحابنا وغيرهم صورة الحيوان حرام اشد التحريم وهم من الكبائر سواء صنعه لما يمتهن او لغيره فحرام بكل حال لان فيه مضاهاة لخلق الله وسواء كان فى ثوب او بساط او دينار اودرهم او فلس او اناء او حائط.

অর্থ: যদিও অন্যান্য গুরুতর পাপের জন্য হাদীছ শরীফ-এ কঠিন শাস্তির কথা বলা হয়েছে, কিন্তু ছবি বা প্রতিমূর্তি নির্মাণকারীর শাস্তি সর্বাপেক্ষা কঠিন হবে এবং কঠোর শাস্তিই পাপের গুরুত্ব প্রমাণ করছে। তাওজীহ কিতাবে উল্লেখ আছে যে, জীব-জন্তুর ছবি বা প্রতিমূর্তি নির্মাণ করা নিষেধ, বরং কঠোর নিষিদ্ধ কাজ (অর্থাৎ হারাম) এটা কবীরা গুনাহ। চাই ওটাকে যত্ন বা সম্মান প্রদর্শন করুক কিংবা অন্য যে কোন উদ্দেশ্যেই বানিয়ে থাকুক। কেননা এরূপ কাজে আল্লাহ পাক উনার সৃষ্টির অনুকরণ করা হয়। ওটা বস্ত্রে, বিছানায়, মোহরে, মুদ্রায়, পয়সায়, পাত্রে কিংবা প্রাচীর গাত্রে যে কোন স্থানে আঁকা বা নির্মাণ করা হরাম। অনুরূপ ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়া ও আয্যাওয়ায়ির নামক কিতাবে উল্লেখ আছে।

æছহীহ মুসলিম শরীফ”-এর ব্যাখ্যাগ্রন্থ শরহে নববীতে উল্লেখ আছে-

وهذه الاحاديث صريحة فى تحريم تصوير الحيوان وانه  غليظة  التحريم ايضا فيه  وما من لم يقصد بها العبادة   ولمضاهاة  فهو فاسق  صاحب  ذنب كبير.

অর্থঃ উক্ত হাদীছ শরীফসমূহে প্রাণীর ছবি তৈরী করা বা মূর্তি নির্মাণ করা হারাম হওয়া সম্মন্ধে প্রকাশ্যেই বলা হয়েছে। এটা তৈরি বা নির্মাণ করা জঘন্যতম পাপের কাজ ও হারামও বটে। উক্ত কিতাবে আরো আছে, যদি কেউ মূর্তি বা প্রাণীর ছবি পূজা বা সৃষ্টির অনুকরণের জন্য নাও বানিয়ে থাকে তবুও সে ফাসিক হবে এবং কবীরা গুনাহে গুনাহগার হবে।

মিশকাত শরীফ-এর বিখ্যাত ব্যাখ্যাগ্রন্থ মিরকাত শরীফ ও নাইলুল আওতার ২য় জিল্দ ১০৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

قال اصحابنا وغيرهم من العلماء تصوير صورة للحيوان حرام شديد التحريم وهو من الكبائر لانه  متوعل عد عليه بهذا الوعيد الشديد المذكور فى الاحاديث سواء صنعه فى ثوب او بساط او دينار  او درهم.

অর্থ: আমাদের মাশায়িখগণ ও উলামাগণ বলেছেন যে, প্রাণীর ছবি তৈরি করা হারাম, এমনকি গুরুতর হারাম। এটা কবীরা গুণাহ। কেননা এরূপ কাজের জন্য বিশেষ ভীতিপ্রদ অবস্থা হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ করা হয়েছে। ওটা কাপড়ে, বিছানায়, মোহরে কি টাকা-পয়সায় কিংবা যে কোন স্থানে আঁকা থাকনা কেন তা সমান কথা।

কাজেই, যারা প্রকাশ্যে বেপর্দা হয়, ছবি তুলে অর্থাৎ ফরয তরক করে ও হারাম কাজে মশগুল থাকে তারা কি করে হক্কানী আলিম হতে পারে? সুতরাং æছয় উছূলী তাবলীগের পৃষ্ঠপোষকতায় যারা রয়েছে তারা সকলেই হক্কানী আলিম” ছয় উছূলীদের এ দাবি সম্পূর্ণই মিথ্যা প্রমাণিত হলো। (চলবে)

 

সাইয়্যিদা মুছাম্মত জাহানারা খাতুন

উলিপুর, কুড়িগ্রাম।

সুওয়াল:  বর্তমান সময়ে বিভিন্ন দেশে নববর্ষ উপলক্ষে পহেলা তারিখে যেমন- ১লা বৈশাখ, ১লা জানুয়ারি ইত্যাদি তারিখে ভাল ভাল খাওয়ার জন্য উৎসাহ দেয়া হয়, এটা কতটুকু শরীয়তসম্মত? আর শরীয়তে কোন নির্দিষ্ট দিনে ভাল খাওয়ার জন্য উৎসাহ দেয়া হয়েছে কি?

জাওয়াব:  শরীয়তের দৃষ্টিতে পহেলা বৈশাখ, পহেলা জানুয়ারিতে ভাল খাওয়ার জন্য আলাদাভাবে কোন তাগিদ করা হয়নি। বরং দশই মুর্হরমে প্রত্যেক পরিবারের প্রধান ব্যক্তিকে তার পরিবারের সদস্যদেরকে ভাল খাদ্য খাওয়ানোর জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

من وسع على عياله فى النفقة يوم عاشورا وسع الله عليه سائر سنته

অর্থ: æযে ব্যক্তি তার পরিবারবর্গকে আশুরার দিন অর্থাৎ দশই মুর্হরমে ভাল খাদ্য খাওয়াবে, আল্লাহ পাক তাকে এক বৎসরের জন্য সচ্ছলতা দান করবেন।” (তবারানী শরীফ, মা-ছাবাতা বিস্সুন্নাহ)

এ প্রসঙ্গে কিতাবে একটি ওয়াকিয়া বর্ণিত রয়েছে, এক ব্যক্তি ছিল গরিব, দিনমজুর ও আলিম। একবার অসুস্থতার কারণে তিনি তিন দিন যাবৎ কাজ করতে পারলেন না। চতুর্থ দিন ছিল আশুরার দিন। তিনি আশুরার দিনে ভাল খাওয়ার ফযীলত সম্পর্কে জানতেন। তখন ছিল কাজীদের (বিচারক) যুগ। এলাকার কাজী ছাহেব ধনী ব্যক্তি ছিলেন।

গরিব আলিম, কাজী ছাহেবের কাছে আশুরার ফযীলতের কথা বলে এবং নিজের অসুস্থতা ও পরিবারের অভুক্ত থাকার কথা উল্লেখ করে ১০ সের আটা, ১০ সের গোশ্ত ও দুই দিরহাম হাদিয়া অথবা কর্জ হিসেেেব চাইলেন। কাজী ছাহেব তাকে যোহরের সময় আসতে বললো। যোহরের সময় কাজী ছাহেব বললো, আছরের সময় আসতে। কিন্তু এরপরে আছরের সময় মাগরিব, মাগরিবের সময় ইশা এবং ইশার সময় সরাসরি না করে দিলো। তখন গরিব, আলিম ব্যক্তি বললেন: হে কাজী ছাহেব! আপনি আমাকে দিতে পারবেন না সেটা আগেই বলতে পারতেন, আমি অন্য কোথাও ব্যবস্থা করতাম। কিন্তু তা না করে আমাকে সারাদিন ঘুরিয়ে এই শেষ মুহূর্তে নিষেধ করলেন? কাজী ছাহেব সেই গরিব, আলিম ব্যক্তির কথায় কর্ণপাত না করে গেটের দরজা বন্ধ করে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলো।

মনের দুঃখে গরিব আলিম ব্যক্তি তখন কাঁদতে কাঁদতে বাড়ির দিকে রওয়ানা হলেন। পথে ছিল এক খ্রিস্টানের বাড়ি। একজন বয়স্ক ব্যক্তিকে কাঁদতে দেখে উক্ত খ্রিস্টান তাকে কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করলো। কিন্তু বিধর্মী বিধায় খ্রিস্টানকে প্রথমে তিনি কিছু বলতে চাইলেন না। অতঃপর খ্রিস্টানের অধীর আগ্রহের কারণে তিনি আশুরার ফযীলত ও তাঁর বর্তমান অবস্থার কথা ব্যক্ত করলেন। খ্রিস্টান ব্যক্তি তখন উৎসাহী হয়ে তাকে আশুরার সম্মানার্থে ১০ সের আটা, ১০ সের গোশ্ত, ২ দিরহাম এবং অতিরিক্ত আরো ২০ দিরহাম দিল এবং বললো যে, আপনাকে আমি আশুরার সম্মানার্থে প্রতিমাসে এ পরিমাণ হাদিয়া দিব। গরিব আলিম তখন তা নিয়ে বাড়িতে গেলেন এবং খাবার তৈরি করে ছেলে-মেয়েসহ আহার করলেন। অতঃপর দোয়া করলেন, æআয় আল্লাহ পাক! যে ব্যক্তি আমাকে সন্তুষ্ট করলো, আমার ছেলে-মেয়েদের মুখে হাসি ফোটালো, আল্লাহ পাক! আপনি তার দিল খুশি করে দিন, তাকে সন্তুষ্ট করে দিন।”

ঐ রাতে কাজী ছাহেব স্বপ্ন দেখলো, স্বপ্নে কাজী ছাহেবকে বলা হচ্ছে, হে কাজী! তুমি মাথা উত্তোলন করো। মাথা তুলে কাজী দেখতে পেলো যে, তার সামনে দুটি বেহেশ্তের বালাখানা। একটি স্বর্ণের আরেকটি রৌপ্যের। কাজী ছাহেব বললো, ‘আয় আল্লাহ পাক! এটা কি?’ গায়িবী আওয়াজ হলো, ‘এ বালাখানা দুটি তোমার ছিল। কিন্তু এখন আর তোমার নেই। কারণ তোমার কাছে যে গরিব আলিম লোকটি আশুরা উপলক্ষে সাহায্যের জন্য এসেছিলেন তাকে তুমি সাহায্য করনি। এজন্য এ বালাখানা দু’টি এখন ওমুক খ্রিস্টান লোকের হয়েছে।’ কারণ সে খিস্টান লোকটা আশুরার সম্মানার্থে গরিব আলিমকে সাহায্য করেছে। অতঃপর কাজী ছাহেবের ঘুম ভেঙে গেলো। ঘুম থেকে উঠে ওযু ও নামায আদায় করে সেই খ্রিস্টানের বাড়িতে গেলো। খ্রিস্টান কাজী ছাহেবকে দেখে বিস্ময়াভূত হলো। কারণ কাজী ছাহেব খ্রিস্টানের পড়শী হওয়া সত্ত্বেও জন্মের পর থেকে এ পর্যন্ত কোন সময় তার বাড়িতে আসতে দেখেনি।

অতঃপর  খ্রিষ্টান কাজী ছাহেবকে বললো, ‘আপনি এত সকালে কি জন্য এলেন?’ কাজী ছাহেব বললো, ‘হে খ্রিস্টান ব্যক্তি! তুমি গত রাতে যে নেক কাজ করেছ সেটা আমার কাছে বিক্রি করে দাও। খ্রিস্টান ব্যক্তি বললো, কাজী সাহেব! আপনি কি বলতে চাচ্ছেন আমি বুঝতে পারছি না। আপনি স্পষ্ট করে বলুন। তখন কাজী সাহেব তার স্বপ্নের কথা বললো এবং বললো তুমি নিশ্চয়ই সেই গরিব, আলিম লোকটিকে সাহায্য করেছ।’ তখন খ্রিস্টান ব্যক্তি তা স্বীকার করলো। কাজী ছাহেব বললো যে, ‘তুমি তো খ্রিস্টান, তুমি তো এই বালাখানা পাবেনা। তোমার এটা নিয়ে কি ফায়দা হবে? তুমি তোমার এই নেক কাজ এক লক্ষ দিরহামের বিনিময়ে আমার নিকট বিক্রি করে দাও এবং তুমি তার কাছে প্রত্যেক মাসে যে ওয়াদা করেছ আমি তাকে তা দিয়ে দিব।’ খ্রিস্টান ব্যক্তি বললো, হে কাজী ছাহেব! আমি যদি মুসলমান হয়ে যাই তাহলে কি সেই বালাখানা পাবো? তখন কাজী সাহেব বললো হ্যাঁ, তুমি যদি মুসলমান হও তবে বালাখানা পাবে। তখন খ্রিস্টান ব্যক্তি বললো, কাজী সাহেব আপনি সাক্ষী থাকুন, আমি কালিমা শরীফ পড়ে মুসলমান হয়ে গেলাম।” অতঃপর সত্যি সে খ্রিস্টান ব্যক্তি মুসলমান হয়ে গেল।

অতএব এটা ফিকিরের বিষয় যে, মুর্হরম মাস তথা আশুরাকে সম্মান করার কারণে আল্লাহ পাক খ্রিস্টানকে ঈমান দিয়ে দিলেন এমনকি জান্নাত নছীব করলেন।  (সুবহানাল্লাহ)

 

মুহম্মদ হুমায়ুন কবীর, বানারীপাড়া, বরিশাল।

 

সুওয়াল:  আশুরাকে কেন্দ্র করে কিছু লোক নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ সম্পর্কে এলোমেলো বক্তব্য পেশ করে থাকে। যেমন তারা বলে থাকে যে, হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম গন্দম খেয়ে ভুল করেছিলেন ইত্যাদি।

এখন আমার প্রশ্ন হলো- সত্যিই কি নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ ভুল-ত্রুটি করেছিলেন অথবা করেননি? সঠিক জাওয়াব দানে বাধিত করবেন।

জাওয়াব:  আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা হলো কোন নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ কখনো ভুল করেননি। ইচ্ছাকৃত তো নয়ই, অনিচ্ছাকৃতও নয়। অর্থাৎ নবী আলাইহিমুস সালামগণ কোন ভুলই করেননি। (শরহে আক্বাইদে নসফী, ফিক্বহে আকবর, তাকমীলুল ঈমান, আক্বাইদে হাক্কাহ)

অর্থাৎ সকল নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণই ছিলেন আল্লাহ পাক উনার খাছ ও মনোনীত বান্দাহ্গণের অন্তর্ভুক্ত। তাঁরা প্রত্যেকেই ছিলেন ওহীর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। কুরআন শরীফ-এর একাধিক স্থানে ইরশাদ  হয়েছে,

نوحى اليهم

অর্থ: æআমি তাঁদের (নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ-এর) প্রতি ওহী পাঠাতাম।” (সূরা ইউসূফ-১০৯, নহল-৪৩, আম্বিয়া-৭)

অর্থাৎ নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের যাবতীয় কার্যাবলীই ওহীর দ্বারা (আল্লাহ পাক কর্তৃক) পরিচালিত হতো। যার পরিপ্রেক্ষিতে আক্বাইদের কিতাবে বর্ণিত হয়েছে,

الانبياء عليهم السلام كلهم معصومون

অর্থঃ- æসকল আম্বিয়া আলাইহিমুস্ সালামগণ মা’ছূম বা নিষ্পাপ।” (শরহে আক্বাইদে নছফী)

আরো উল্লেখ করা হয়েছে যে,

الانبياء عليهم السلام كلهم منزهون عن الصغائر والكبائر والكفر والقبائح

অর্থঃ- æসকল আম্বিয়া আলাইহিমুস্ সালামগণই ছগীরা, কবীরা, কুফরী এবং অপছন্দনীয় কাজ হতেও পবিত্র।” (আল ফিক্বহুল আকবার লি ইমাম আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি)

অতএব, যারা নবী আলাইহিমুস্ সালামগণের ভুল সম্পর্কে বলে থাকে, আক্বাইদ সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণেই তারা তা বলে থাকে। যেমন তারা বলে থাকে যে, হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম গন্দম খেয়ে ভুল করেছিলেন। (নাঊযুবিল্লাহ্)

মূলতঃ তাদের একথা সঠিক নয়। প্রকৃত ঘটনা হলো- আল্লাহ পাক যখন হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম ও হযরত হাওয়া আলাইহাস্ সালামকে আদেশ করেছিলেন যে,

لا تقربا هذه الشجرة

অর্থ: আপনারা এই (গন্দমের) গাছের নিকটবর্তী হবেন না।” (সূরা বাক্বারা-৩৫)

তখন তাঁরা আল্লাহ পাক উনার এ আদেশ অনুযায়ী সে গাছের নিকটবর্তী হননি। বরং উক্ত গাছের অনুরূপ বিপরীত দিকের অন্য একটি গাছ দেখিয়ে, ইবলিস শয়তান এসে হযরত হাওয়া আলাইহাস্ সালামকে মিথ্যা কছম খেয়ে বলেছিল যে, যদি আপনারা এ গাছের ফল খান, তবে আপনারা ফেরেশ্তা হয়ে যাবেন অথবা স্থায়ীভাবে বেহেশ্তে বসবাস করতে পারবেন। কোন কোন বর্ণনা মোতাবেক, তখন হযরত হাওয়া আলাইহাস্ সালাম সে গাছ হতে ফল এনে শরবত বানিয়ে হযরত আদম আলাইহিস্ সালামকে খাইয়েছিলেন। অপর বর্ণনায়, ফল কেটে খাইয়েছিলেন। এ ঘটনা হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম-এর অজান্তেই সংঘটিত হয়েছিল। সুতরাং যা অজান্তে সংঘটিত হয়, তা কি করে ভুল বা অপরাধ হতে পারে? বাস্তবিক তা কখনই ভুল  হতে পারেনা। (সমূহ তাফসীরের কিতাব)

এর মেছালস্বরূপ উল্লেখ করা যায়- হযরত ইমাম হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর শাহাদতের ঘটনা। তিনি যে শাহাদত বরণ করেছিলেন, এ ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই। তাঁকে ইসলামের শত্রুরা শহীদ করার জন্য একে একে পাঁচবার বিষ পান করায়। কিন্তু আল্লাহ পাক উনার রহ্মতে তিনি প্রত্যেক বারই বেঁচে যান। ষষ্ঠবার তাঁকে শহীদ করার জন্য তাঁর পানির কলসিতে, যে কলসির মুখ কাপড় দিয়ে বেঁধে রাখতেন, (যেন তার ভিতর কিছু ফেলা না যায়,) সেই কাপড়ের উপর শত্রুরা হিরক চূর্ণ বিষ তাঁর অজান্তে মিশিয়ে দিয়েছিল। তিনি গভীর রাত্রিতে হিরক চূর্ণ বিষ মিশ্রিত পানি কলসি থেকে ঢেলে পান করেন, যার ফলশ্রুতিতে তিনি শাহাদাত বরণ করেন। যা তাঁর অজান্তেই সংঘটিত হয়েছিল। (সিররুশ্ শাহাদাতাঈন, শুহাদায়ে কারবালা, সীরতে ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন (রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা)

এখন প্রশ্ন উঠে, শরীয়তের দৃষ্টিতে তাঁর শাহাদাতকে আত্মহত্যা বলতে হবে, না ভুল করার কারণে বিছাল শরীফ লাভ করেছেন, তা বলতে হবে?

মূলতঃ উপরোক্ত দুটির কোনটিই বলা যাবেনা। যদি কেউ কোন একটিও বলে, তবে সে মিথ্যা তোহ্মত দেয়ার গুনাহে গুনাহ্গার হবে, যা কুফরীর শামিল হবে। তদ্রুপ হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম-এর ঘটনাও। যা তাঁর অজান্তে সংঘটিত হলো।

অনুরূপ অন্যান্য নবী নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ-এর ঘটনাও। মানুষ সঠিক ইতিহাস না জানার কারণে এবং কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর সঠিক ব্যাখ্যা না বুঝার কারণে, নবী আলাইহিমুস্ সালামগণ-এর শানে বেয়াদবীমূলক কুফরী কথাবার্তা বলে থাকে।

হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের সাথে কতটুকু আদব রক্ষা করতে হবে, সে প্রসঙ্গে কিতাবে, ইমামুত তরীক্বত ওয়াশ্ শরীয়ত, হযরত ইমাম র্সারী সাক্তী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর ঘটনা উল্লেখ করা হয়, যিনি তাঁর যামানায় আল্লাহ পাক উনার লক্ষ্যস্থল ছিলেন। যিনি ইমামুশ্ শরীয়ত ওয়াত্ব তরীক্বত ছিলেন। তিনি একবার স্বপ্নে দেখেন আল্লাহ পাক উনার নবী হযরত ইয়াকুব আলাইহিস্ সালামকে। দেখে প্রশ্ন করেছিলেন, হে আল্লাহ পাক উনার নবী হযরত ইয়াকুব আলাইহিস্ সালাম! আমরা জানি আপনার অন্তরে আল্লাহ পাক উনার মহব্বত সত্যিকারভাবেই প্রবল ছিল, তারপরও আপনি কি কারণে আপনার ছেলে আল্লাহ পাক উনার নবী হযরত ইউসুফ আলাইহিস্ সালাম-এর জুদায়ীর (বিচ্ছেদের) কারণে উনার মুহব্বতে চল্লিশ বছর যাবৎ কেঁঁদে কেঁদে আপনার চক্ষু মুবারক নষ্ট করেছিলেন? একথা বলার সাথে সাথে গায়িব থেকে নেদা (আওয়াজ) হলো, æহে র্সারী সাক্তী রহমতুল্লাহি আলাইহি! নবীদের শানে সাবধানে কথা বলুন।” এরপর হযরত ইউসুফ আলাইহিস্ সালামকে উনার সামনে পেশ করা হলে তিনি দেখে বেহুঁশ হয়ে পড়ে যান এবং এভাবে একাধারা তের দিন, তের রাত্রি বেহুশ থাকার পর হুঁশ ফিরে পান। তখন গায়েব থেকে পুনরায় নেদা হয়, æআল্লাহ পাক উনার নবীদের শানে এরকম কথা বললে এরূপই অবস্থা হয়ে থাকে।” (তাযকিরাতুল আওলিয়া)

উপরোক্ত ওয়াকিয়ার আলোকে প্রতিভাত হয় যে, আদব কত সূক্ষ্ম জিনিস এবং হযরত নবী আলাইহিস্ সালামগণের ক্ষেত্রে কি পরিমাণ আদবের সাথে কথা বলতে হবে? সত্যিই তা চিন্তা-ফিকিরের বিষয়। আদব সম্পর্কে হযরত জালালুদ্দীন রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,

بے ادب محروم گشت از لطف رب

অর্থ: æবেয়াদব আল্লাহ পাক উনার রহ্মত থেকে বঞ্চিত।” (মসনবী শরীফ)

অতএব, প্রতীয়মান হয় যে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ-এর প্রতি কতটুকু আদব রক্ষা করা দরকার।

উল্লেখ্য যে, হযরত র্সারী সাক্তী রহমতুল্লাহি আলাইহি ইমামুজ্জামান, ইমামুশ্ শরীয়ত ওয়াত্ব তরীক্বত ও আল্লাহ পাক উনার লক্ষ্যস্থল ওলী হওয়া সত্ত্বেও তাঁর প্রতি সতর্কবাণী ও সাবধানবাণী উচ্চারিত হয়েছে। মূলতঃ নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ ভুল করা তো দূরের কথা, কোন প্রকার অপছন্দনীয় কাজও তাঁরা করতেন না। বরং সর্ব প্রকার অপছন্দনীয় কাজ থেকেও বেঁচে থাকতেন বা পবিত্র থাকতেন, সে প্রসঙ্গে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র  সীরত মুবারক থেকে একটি ঘটনা উল্লেখ করা যায়-

æএকবার আল্লাহ পাক উনার রসূল  হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হুজরা শরীফ-এ বসা ছিলেন। এমতাবস্থায় এক ব্যক্তি এসে আল্লাহ পাক উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া  সাল্লাম উনার সাথে সাক্ষাৎ করার অনুমতি চাইলেন। এ সংবাদ উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট পৌঁছালেন। তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, সে ব্যক্তিকে অপেক্ষা করতে বলুন। একথা বলে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পাগড়ী মুবারক, কোর্তা মুবারক ইত্যাদি গুছগাছ করে নিলেন। এমন কি হুজরা শরীফ থেকে বের হওয়ার মুহূর্তে পানির গামলাতে নিজের চেহারা মুবারক দেখে গুছিয়ে নিচ্ছিলেন। তা দেখে সে সময় হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বললেন, æইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনিও কি এরূপ করেন?”

তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, æকিরূপ করি?” হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বললেন, æএরূপ পরিপাটি।” এর জবাবে আল্লাহ পাক উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, æহ্যাঁ, আমরা আল্লাহ পাক উনার নবী। আমাদের কোন কাজ কারো অপছন্দ হলে, সে ঈমান হারা হয়ে যাবে।” (আল্ মুরশিদুল আমীন)

অতএব, নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ যে কতটুকু অপছন্দনীয় কাজ থেকে বেঁচে থাকতেন, এ হাদীছ শরীফ-এর বর্ণিত ঘটনা তারই প্রমাণ। তাহলে কি করে এ কথা বলা যেতে পারে বা বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে যে, নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ ভুল-ত্রুটি করেছিলেন? বস্তুতঃ এরূপ আক্বীদা পোষণ করা সম্পূর্ণই হারাম ও কুফরী।

তদ্রুপ নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের সম্পর্কে ও তাঁদের শানের খিলাফ কোন অর্থ গ্রহণ করা যাবেনা বরং এমন অর্থ ব্যবহার বা গ্রহণ করতে হবে, যাতে তাঁদের শান সমুন্নত থাকে।

উল্লেখ্য যে, আল্লাহ পাক উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাদীছ শরীফ বর্ণনা কারীদেরকে রাবী বলা হয়। এই রাবীগণের মধ্যে যাঁরা প্রথম শ্রেণীর, তাঁদেরকে বলা হয় ছিক্বাহ্ রাবী।

হাদীছ বিশারদগণ ছিক্বাহ্ রাবী হওয়ার জন্য যে মানদ- নির্ধারণ করেছেন, তার মধ্যে মূল বিষয় হচ্ছে- (১) আদালত ও (২) জব্ত।

জব্ত হচ্ছে- প্রখর স্মরণশক্তি। তা এমন যে, একবার শুনলে আর ভুলেনা।

আর আদালত-এর মধ্যে চারটি শর্ত রয়েছে। তার মধ্যে প্রধান হলো দুটি। যথা- (ক) তাক্বওয়া, (খ) মুরুওওয়াত।

(ক) তাক্বওয়া হচ্ছে- কুফরী, শেরেকী, বিদ্য়াতী, ফাসিকী কাজ থেকে বেঁচে থাকার সাথে সাথে কবীরা গুনাহ্ থেকে, এমনকি ছগীরা গুনাহ্ও বার বার করা থেকে বেঁচে থাকা। (খ) আর মুরুওওয়াত হচ্ছে- অশালীন, অশোভনীয়, অপছন্দনীয়, এমনকি দৃষ্টিকটু কাজ থেকে বিরত থাকা। যেমন- রাস্তায় হেঁটে হেঁটে খাদ্য খাওয়া, রাস্তায় অট্টহাস্য করা, চিৎকার করা ইত্যাদি। (তাদরীবুর রাবী, মুকাদ্দামাতুশ শায়খ, মীযানুল আখবার)

এখন ফিকিরের বিষয় এই যে, হাদীছ শরীফ বর্ণনাকারী ছিক্বাহ্ রাবী যদি এত গুণ ও যোগ্যতাসম্পন্ন এবং তাক্বওয়াধারী হন অর্থাৎ হাদীছ বিশারদ উম্মতে হাবীবীর নিকট যদি ছিক্বাহ্ রাবী হিসেবে হাদীছ বর্ণনাকারী হওয়ার জন্য ছগীরা গুনাহ্ বার বার না করা ও দৃষ্টিকটু সাধারণ অপছন্দনীয় কাজও না করা শর্ত হয়, তাহলে যাঁরা আল্লাহ পাক উনার নবী হবেন এবং আল্লাহ পাক উনার কালাম বর্ণনা করবেন, তাঁদের জন্য আল্লাহ পাক কি মানদ- নির্ধারণ করেছেন বা তাঁদের ক্ষেত্রে কতটুকু মা’ছূম ও মাহ্ফুজ হওয়া নির্দিষ্ট করেছেন তা সহজেই অনুধাবনীয়।

অতএব, যে কোন লোকের জন্যই নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ-এর শানের বিন্দুমাত্র খিলাফ কথাবার্তা বলা সম্পূর্ণ নাজায়িয, হারাম ও কুফরী। এ ধরনের কুফরী আক্বীদা থেকে বেঁচে থাকা সমস্ত মুসলমান নর-নারীর জন্য ফরয।

 

মুহম্মদ শাহ ইমরান (শিশির)

সভাপতি- ছাত্র আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত রংপুর জেলা শাখা।

 

সুওয়াল: আশুরা উপলক্ষে কয়টি রোযা রাখা সুন্নত, জানতে বাসনা রাখি।  জাওয়াব: হাদীছ শরীফ-এর বর্ণিত রয়েছে, আল্লাহ পাক উনার রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-

صومو يوم عاشوراء وخالفوا فى اليهود صوموا قبله يوما او بعده يوما.

অর্থ: æতোমরা আশুরার রোযা রাখ এবং (এ ব্যাপারে) ইহুদীদের বিপরীত কর। তোমরা আশুরার আগের দিন অথবা পরের দিনেও রোযা রাখো।”

এ হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আশুরার উদ্দেশ্যে দুটি রোযা রাখা সুন্নত। মুর্হরমের ৯ ও ১০ তারিখে অথবা ১০ ও ১১ তারিখে। তবে উত্তম হলো ৯ ও ১০ তারিখে রোযা রাখা। শুধু ১০ই মুহররম আশুরার উদ্দেশ্যে ১টি রোযা রাখা মাকরূহ। কারণ ইহুদীরা সেদিনটিতে রোযা রেখে থাকে। {দলীলসমূহঃ (১) বুখারী শরীফ, (২) মুসলিম শরীফ, (৩) মিশকাত, (৪) তিরমিযী, (৫) মুয়াত্তা ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি, (৬) জামিউল ফাওয়ায়েদ, (৭) মুসনাদে ফেরদৌস দায়লামী, (৮) মাসাবাতা বিস্ সুন্নাহ্, (৯) মুসনাদে ইমাম আহ্মদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি ইত্যাদি}

 

মুহম্মদ আতিকুল্লাহ

পুরান বাজার, চাঁদপুর

  সুওয়াল: হযরত ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর শাহাদাতকে কেন্দ্র করে অনেকে জলীলুল ক্বদর ছাহাবী হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে দোষারোপ করে থাকে। এটা কতটুকু শরীয়তসম্মত? দয়া করে জানাবেন।

জাওয়াব: কোন নবী-রসূল আলাইহিস্ সালামকে যেমন কোন ব্যাপারে দোষারোপ করা জায়িয নেই। তদ্রুপ কোন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকেও কোন ব্যাপারে দোষারোপ করা জায়িয নেই।

এ বিষয়ে আল্লাহ পাক উনার কালাম পাকে ইরশাদ করেন,

ولا تزر وازرة وزر اخرى

অর্থ: æএকজনের পাপের বোঝা অপরজন বহন করবেনা।” (সূরা আনয়াম-১৬৪)

এ আয়াত শরীফ-এর তাফসীরে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সন্তানের অপরাধের জন্য পিতাকে এবং পিতার অপরাধের জন্য সস্তানকে দায়ী করা বৈধ নয়। যেমন, কাবিলের অপরাধের জন্য হযরত আদম আলাইহিস্ সালামকে, কেনানের অপরাধের জন্য হযরত নূহ আলাইহিস্ সালামকে দায়ী করা বৈধ নয়। তেমনি ইয়াযীদের অপরাধের জন্য হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে দায়ী করাও বৈধ নয়। বরং সম্পূর্ণ নাজায়িয, হারাম ও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।

আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,

ليغيظبهم الكفار

অর্থ: æকাফিররাই তাঁদের (হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ-এর) প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে থাকে।” (সূরা ফাতহ্-২৯)

আর হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে-

 عن مالك بن انس رحمة الله عليه قال من غاظ اصحاب محمد صلى الله عليه وسلم فهو كافر

অর্থ:æহযরত মালিক ইবনে আনাস রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, যে ব্যক্তি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ-এর প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে, সে কাফির।” (নাসীমুর রিয়াদ্ব)

এখানে একটা বিষয় মনে রাখা দরকার যে, আল্লাহ পাক উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদরের দৌহিত্র হযরত ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর মর্মান্তিক শাহাদাতে মুসলিম উম্মাহ’র অন্তর ব্যথাতুর হবে তা চরম সত্য কথা এবং এটি ঈমান মজবুতীর আলামতও বটে। কিন্তু এজন্য হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যিনি আল্লাহ পাক উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জলীলুল ক্বদর ছাহাবী তাঁকে দোষারোপ করা কস্মিনকালেও শরীয়ত সম্মত হতে পারে না।

হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে-

 عن ابى سعيد الخدرى رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لا تسبوا اصحابى فلو ان احدكم انفق مثل احد ذهبا ما بلغ مد احدهم ولا نصيفه

অর্থ: æহযরত আবু সায়ীদ খুদুরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে গালি দিওনা। কেননা তোমাদের কেউ যদি উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় দান কর, তবুও ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ-এর এক মূদ্ (১৪ ছটাক) বা অর্ধ মূদ্ (৭ ছটাক) গম দান করার ফযীলতের সমপরিমাণ ফযীলত অর্জন করতে পারবে না।” (বুখারী শরীফ)

হাদীছ শরীফ-এ আরো ইরশাদ হয়েছে যে-

 عن عويمر بن ساعدة رضى الله تعالى عنه انه صلى الله عليه وسلم قال ان الله اختارنى واختارلى اصحابا فجعل لى منهم وزراء وانصار واصهارا فمن سبهم فعليه لعنة الله والملئكة والناس اجمعين ولا يقبل الله منهم صرفا وعدلا.

অর্থ: æহযরত উয়াইমির ইবনে সায়িদাহ রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক আমাকে মনোনীত করেছেন এবং আমার ছাহাবায়ে কিরামগণকে মনোনীত করেছেন এবং তাঁদের মধ্য থেকে আমার কার্য সম্পাদনকারী, খিদমতকারী ও বৈবাহিক সূত্রের আত্মীয়বর্গ নির্ধারণ করেছেন। অতএব যারা তাঁদেরকে গালি দিবে বা দোষারোপ করবে, তাদের প্রতি আল্লাহ পাক, ফেরেশ্তা ও মানুষ সকলেরই লা’নত এবং তাদের কোন ফরয ও নফল ইবাদত আল্লাহ পাক কবুল করবেন না।” (তবারানী , হাকিম)

স্মরণযোগ্য যে, হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছাহাবীগণ-এর মধ্যে একজন বিশেষ শ্রেণীর ছাহাবী যাকে ‘উলুল আ’যম বা জলীলুল ক্বদর ছাহাবী বলা হয়। তিনি ছিলেন আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন, কাতিবীনে ওহীর সদস্য, হাদীছ শরীফ-এর রাবী, ফক্বীহ ইত্যাদি মর্যাদার অধিকারী। তাঁর ইল্মের পূর্ণতা, হিদায়েতের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকা, তাঁর দ্বারা লোকদের হিদায়েত লাভ, কিতাব শিক্ষাদান এবং জাহান্নাম থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার ক্ষেত্রে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ পাক উনার নিকট দোয়া করেছেন।

হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে-

 عن ام حرام رضى الله تعالى عنها انها سمعت النبى صلى الله عليه وسلم يقول اول جيش من امتى يغزون البحر قد اوجبوا.

অর্থ: æহযরত উম্মু হারাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হতে বর্ণিত। তিনি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছেন, তিনি বলেন, আমার উম্মতের প্রথম যে দল সমুদ্রের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবে তাঁদের জন্য জান্নাত ওয়াজিব।” (বুখারী শরীফ)

হযরত ইমাম তাবারী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, æহযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ২৮ হিজরীতে সর্বপ্রথম সমুদ্র যুদ্ধের মাধ্যমে কাবরাসের উপর আক্রমণ করেন এবং কাবরাস তিনিই বিজয় করেন।”

হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর মর্যাদা-মর্তবার মধ্যে অন্যতম মর্যাদা হলো, তিনি ছিলেন একজন আদিল বা ইনসাফগার খলীফা। তাঁর ন্যায় বিচার ও ইনসাফ সম্পর্কে কিতাবে উল্লেখ করা হয় যে, জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত ছাহাবী হযরত সা’দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমার দৃষ্টিতে হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, এরপর হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর চেয়ে অধিক ন্যায় বিচারক কেউ নেই।”

এক ব্যক্তি হযরত মুয়াফা ইবনে ইমরান রহমতুল্লাহি আলাইহিকে বললো, ন্যায় বিচারের দিক দিয়ে হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ? একথা শুনে তিনি রাগান্বিত হয়ে বললেন, æহযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ-এর প্রতি কোন প্রকার কিয়াস করা যাবে না। হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তো হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছাহাবী, কাতিবে ওহী ও আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ‘আমীন’ (আমানতদার)।”

আমীরুল মু’মিনীন ফিল হাদীছ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহমতুল্লাহি আলাইহিকে জিজ্ঞাসা করা হলো যে, æহযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু শ্রেষ্ঠ, না হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি শ্রেষ্ঠ?” তিনি বলেন, æআল্লাহ পাক উনার কছম! হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে ঘোড়ায় চড়ে জিহাদে যেতেন, তখন ঘোড়ার নাকে যে ধুলোবালিগুলো প্রবেশ করতো, সে ধুলোবালিগুলোও হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বহুগুণে শেষ্ঠ।” (ফতওয়ায়ে হাদীছিয়াহ)

সুতরাং এত সব মর্যাদা ও মর্তবার পরও যারা হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে, তাঁকে নাকিছ বলে গালি দেয়, তাদের জন্যে হযরত ইমাম শিহাবুদ্দীন খাফ্ফাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর কথাই অধিক প্রযোজ্য। তিনি বলেন, æযে ব্যক্তি হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে গালি দেয়, নাকিছ বলে, সমালোচনা করে, সে হাবিয়া দোযখের কুকুরসমূহের মধ্য হতে একটি কুকুর।”

উপরোক্ত সংক্ষিপ্ত আলোচনা থেকে স্পষ্ট প্রমাণিত হলো যে, হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু শুধু ছাহাবীই ছিলেন না, বরং উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন, জলীলুল ক্বদর ছাহাবী ও খলীফা ছিলেন। সুতরাং হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুসহ সকল ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম সম্পর্কে সাবধানে কথা বলতে হবে। মূলত তাঁদের সকলের প্রতিই সুধারণা পোষণ করতে হবে, মুহব্বত করতে হবে এবং উনাদেরকে অনুসরণ-অনুকরণও করতে হবে।

কেননা উনারা হলেন দ্বীনের ইমাম এবং হাবীবে খোদা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদর্শের বাস্তব প্রতিফলন। এই জন্য উনারা যেভাবে ঈমানের স্বীকৃতি দিয়েছেন এবং আমলে যেভাবে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন, ঠিক সেভাবেই ঈমানের স্বীকৃতি দেয়া এবং আমলে নিয়োজিত হওয়া পরবর্তী উম্মতের দায়িত্ব-কর্তব্য।

এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে,

امنوا كما امن الناس

æতোমরা ঈমান আন যেভাবে অন্যান্য লোক  অর্থাৎ ছাহাবায়ে কিরাম ঈমান এনেছেন।” (সূরা বাক্বারা-১৩)

আল্লাহ পাক হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম সম্পর্কে ইরশাদ করেন,

رضى الله عنهم ورضوا عنه

æঅর্থ: আল্লাহ পাক উনাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং উনারাও আল্লাহ পাক উনার প্রতি সন্তুষ্ট।” (সূরা তওবা-১০০)

তিনি আরো ইরশাদ করেন-

والذين اتبعوهم باحسان رضى الله عنهم

æআল্লাহ পাক ঐ সকল বান্দাগণের প্রতিও সন্তুষ্ট যারা হযরত ছাহাবায়ে কিরামকে উত্তমরূপে অনুসরণ করেন।” (সূরা তওবা-১০০)

হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে-

عن عمر بن الخظاب رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اصحابى كالنجوم فبايهم اقتديتم اهتديتم.

অর্থ: হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, æআমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ তারকা সাদৃশ্য। তাঁদের যে কাউকে তোমরা অনুসরণ করবে, তোমরা হিদায়েত প্রাপ্ত হবে।” (মিশকাত শরীফ)

অতএব, আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরাসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তুষ্টি লাভ করতে চাইলে অবশ্যই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে অনুসরণ-অনুকরণ করতে হবে এবং তাঁদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা, সমালোচনা করা ও নাকিছ বলা হতে বিরত থাকতে হবে।

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ