সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সংখ্যা: ২৩৪তম সংখ্যা | বিভাগ:

মুহম্মদ রূহুল কুদুস, বগুরা।

ডা. মুহম্মদ আওক্বাত আলী, চাঁপাই নবাবঞ্জ।

সুওয়াল: মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ১০ম খলীফা এবং শাহযাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি ১১তম খলীফা এবং ‘আস সাফফাহ’ লক্বব মুবারক উনার অর্থ ও ব্যাখা-বিশ্লেষণ ও মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনিই যে সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহান খলীফা ‘হযরত আস সাফফাহ আলাইহিস সালাম’ এবং উনার মুবারক উছীলায় যে, অবশ্যই অবশ্যই বর্তমান যামানায় সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠিত হবে এ সম্পর্কে দলীল ভিত্তিক বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব :

(পূর্ব প্রকাশিতের পর- ৯)

মুজাদ্দিদে আ’যম, সাইয়্যিদুল খুলাফা, পবিত্র রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি অবশ্য অবশ্যই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ১২জন মহান খলীফা আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্য থেকে অন্যতম একজন আখাচ্ছুল খাছ বিশেষ খলীফা তথা ১০ম খলীফা এবং উনার সুমহান আওলাদ, খলীফাতুল উমাম, আল মানছূর হযরত শাহযাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি হচ্ছেন ১১তম খলীফা। সুবহানাল্লাহ!  ঃ

এতো সুস্পষ্ট প্রমাণের পরও যারা মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনাকে সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে বর্ণিত ১০ম খলীফা আস সাফফাহ আলাইহিস সালাম হিসেবে মানতে নারাজ। ওই সকল ব্যক্তিদেরকে প্রশ্ন করা উচিত যে, তাহলে ১০ম খলীফা কে? অথচ বুখারী, মুসলিম, আবূ দাঊদ, তিরমিযী, মুসনাদে আহমদ, মুসনাদে বাযযার, মুস্তারকে হাকিম, ছহীহ ইবনে হিব্বান থেকে শুরু করে পৃথিবীর প্রায় সমস্ত বিশুদ্ধ হাদীছ শরীফ উনাদের কিতাবে এসেছে-

لَا يَزَالُ الدِﹼيْنُ قَائِمًا حَتّٰى تَقُوْمَ السَّاعَةُ أَوْ يَكُوْنَ عَلَيْهِمُ اثْنَا عَشَرَ خَلِيْفَةً كُلُّهُمْ مّـِنْ قُرَيْشٍ.

‘ক্বিয়ামত অবধি সময়ের মধ্যে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম সুপ্রতিষ্ঠিত থাকবে ১২জন মহান খলীফা আলাইহিমুস সালাম উনাদের মাধ্যমে। উনারা প্রত্যেকেই সম্মানিত কুরাঈশ বংশীয় হবেন।’ (সুবহানাল্লাহ)

এই সম্মানিত হাদীছ শরীফখানা ছহীহ হওয়ার ব্যাপারে সমস্ত ইমাম মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা ঐক্যমত পোষণ করেছেন। এমনকি সমস্ত বাতিলপন্থীরা তথা বাতিল ৭২ ফিরক্বার লোকেরাও এই সম্মানিত হাদীছ শরীফখানা উনাকে ছহীহ হিসেবে মেনে নিয়েছে। এখন বলার বিষয় হচ্ছে, এই সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, ‘ক্বিয়ামত অবধি সময়ের মধ্যে ১২জন মহান খলীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা দুনিয়ার যমীনে তাশরীফ মুবারক নিবেন।’ তাহলে অবশ্যই অবশ্যই ক্বিয়ামত অবধি সময়ের মধ্যে ১২জন মহান খলীফা আলাইহিমুস সালাম উনারা দুনিয়ার যমীনে তাশরীফ মুবারক নিবেনই নিবেন। এতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। কেউ যদি এই ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করে, চূ-চেরা, ক্বীল-ক্বাল করে, তাহলে সে সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনাকে অস্বীকার করার কারণে কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী হয়ে। (নাঊযুবিল্লাহ)

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই ১২জন মহান খলীফা আলাইহিমুস সালাম উনারা কারা? পূর্বে কয়েকবার উল্লেখ করা হয়েছে যে, এই পর্যন্ত ৯জন মহান খলীফা আলাইহিমুস সালাম উনারা অতীত হয়েছেন। আমীরুল মু’মিনী হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হচ্ছেন ৯ম খলীফা। আর ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম তিনি হচ্ছেন ১২তম খলীফা। বাকী রইলেন ১০ম ও ১১তম খলীফা। সেই সম্মানিত ১০ম ও ১১তম খলীফা আলাইহিমাস সালাম উনারা কারা? তাহলে যারা খিলাফতের বিষয় চু-চেরা ও ক্বীল-ক্বাল করে তারা এবং তাদের সমগোত্রীয়রা ক্বিয়ামত পর্যন্ত আদৌ পারবে কি এর কোন সঠিক জবাব দিতে? কস্মিনকালেও পারবে না।

পূর্বে এই বিষয়টি আলোচিত হয়েছে যে, সম্মানিত যাহির খিলাফত মুবারক উনার বিষয়টি মাক্বামের সাথে সম্পৃক্ত। মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা দয়া ও ইহসান করে যাঁকে এই মাক্বাম মুবারকখানা হাদিয়া করেছেন, তিনি শুধু খলীফা হবেন এবং উনার দ্বারাই শুধু দুনিয়ার যমীনে সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠিত হবে। (সুবহানাল্লাহ) পূর্ববর্তী হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের মধ্যে কেবলমাত্র হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনাকে এবং সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদেরকে সম্মানিত যাহিরী খিলাফত মুবারক উনার সম্মানিত মাক্বাম মুবারকখানা হাদিয়া করা হয়েছিলো। তাই পূর্ববর্তী হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের মধ্যে শুধুমাত্র উনারা দু’জন খলীফা হয়েছেন এবং সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক পরিচালনা করেছেন।” (সুবহানাল্লাহ)

আর মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার যিনি হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা যাহিরী এবং বাতিনী উভয় প্রকার সম্মানিত খিলাফত মুবারক উনাদের সর্বোচ্চ মাক্বাম মুবারকখানা হাদিয়া করেছেন এবং আমাকে সর্বোচ্চ পন্থায় সম্মানিত খিলাফত মুবারক হাদিয়া করেছেন। অতীতের আর কোন হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদেরকে এরূপ সর্বোচ্চ পন্থায় সম্মানিত খিলাফত মুবারক প্রদান করা হয়নি।” (সুবহানাল্লাহ)

এখন বলার বিষয় হচ্ছে, হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে এবং হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদেরকে সম্মানিত যাহিরী খিলাফত মুবারক উনার মাক্বাম মুবারক হাদিয়া করার কারণে যদি উনারা যথাক্রমে ৮ম ও ৯ম খলীফা হন। তাহলে যেই সুমহান ব্যক্তিত্ব মুবারক পবিত্র রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা যাহিরী এবং বাতিনী উভয় প্রকার সম্মানিত খিলাফত মুবারক উনাদের সর্বোচ্চ মাক্বাম মুবারকখানা হাদিয়া করেছেন এবং সর্বোচ্চ পন্থায় সম্মানিত খিলাফত মুবারক হাদিয়া করেছেন। অতীতের আর কোন হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদেরকে এরূপ সর্বোচ্চ পন্থায় সম্মানিত খিলাফত মুবারক প্রদান করা হয়নি এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত আর কাউকে প্রদান করা হবেও না। (সুবহানাল্লাহ) সেই সুমহান ব্যক্তিত্ব মুবারক মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি কেন সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ১২জন খলীফা আলাইহিমুস সালাম উনাদরে মধ্য থেকে অন্যমত একজন বিশেষ খলীফা তথা ১০ম খলীফা হবেন না? তিনি অবশ্যই অবশ্যই সম্মানিত কুরআন শরীফ, সম্মানিত হাদীছ শরীফ এবং সম্মানিত আসমানী কিতাব মুবারক উনাদের মধ্যে বর্ণিত ১২জন মহান আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্য থেকে অন্যতম একজন বিশেষ খলীফা তথা ১০ম খলীফা হযরত আস সাফফাহ আলাইহিস সালাম। (সুবহানাল্লাহ) এখানে চূ-চেরা, ক্বীল-ক্বাল করার কোন সুযোগ নেই।

উপরোক্ত ধারাবাহিক দলীলভিত্তিক আলোচনা দ্বারা অত্যন্ত সুস্পষ্ট ও অকাট্যভাবে প্রমাণিত হলো যে, মুজাদ্দিদে আ’যম, সাইয়্যিদুল খুলাফা, পবিত্র রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি অবশ্যই অবশ্যই সম্মানিত কুরআন শরীফ, সম্মানিত হাদীছ শরীফ এবং সম্মানিত আসমানী কিতাব মুবারক উনাদের মধ্যে বর্ণিত ১২জন মহান আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্য থেকে অন্যতম একজন বিশেষ খলীফা তথা ১০ম খলীফা হযরত আস সাফফাহ আলাইহিস সালাম এবং উনার সুমহান আওলাদ খলীফাতুল উমাম হযরত শাহযাদা ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি হচ্ছেন ১১তম খলীফা হযরত আল মানছূর আলাইহিস সালাম। (সুবহানাল্লাহ) আর হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম তিনি হচ্ছেন ১২তম খলীফা। এতে বিন্দু থেকে বিন্দুতমও সন্দেহের অবকাশ নেই।

মুহম্মদ আব্দুল কাদির

সংযুক্ত আরব আমিরাত।

 

সুওয়াল: পবিত্র শবে বরাত কি? এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ-এ কোন বর্ণনা আছে কি? জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব: পবিত্র শবে বরাত হচ্ছে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার বিশেষ রাত্রিসমূহের মধ্যে একটি রাত্র। যা পবিত্র শা’বান মাস উনার চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত্রিতে হয়ে থাকে। শবে বরাত উনার অর্থ হচ্ছে ‘মুক্তির রাত’ বা ‘নাজাতের রাত।’

‘শব’ ফার্সী শব্দ। যার অর্থ হচ্ছে, রাত। আর বরাত আরবী শব্দ যা উর্দূ, ফার্সী, বাংলা ইত্যাদি সব ভাষাতেই ব্যবহার হয়ে থাকে। যার অর্থ ‘মুক্তি’ ও ‘নাজাত’ ইত্যাদি। পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের ভাষা যেহেতু আরবী তাই ফার্সী ‘শব’ শব্দটি পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে না থাকাটাই স্বাভাবিক।

স্মরণীয় যে, পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ভাষায় ‘শবে বরাতকে’ ‘লাইলাতুম মুবারাকাহ বা বরকতময় রাত্রি’ এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ভাষায় শবে বরাতকে ‘লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান’ বা শা’বান মাসের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত্রি’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

انا انزلنه فى ليلة مبركة انا كنا منذرين. فيها يفرق كل امر حكيم. امرا من عندنا انا كنا مرسلين.

অর্থ: “নিশ্চয়ই আমি বরকতময় রাত্রিতে (শবে বরাতে) পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিল করেছি অর্থাৎ নাযিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আর আমিই ভয় প্রদর্শনকারী। উক্ত রাত্রিতে আমার পক্ষ থেকে সমস্ত প্রজ্ঞাময় কাজগুলো ফায়সালা করা হয়। আর নিশ্চয়ই আমিই প্রেরণকারী।” (পবিত্র সূরা দুখান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩, ৪, ৫)

শবে বরাতে যে সকল বিষয়ের ফায়সালা করা হয় তা ‘পবিত্র সূরা দুখান উনার’ উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যেই উল্লেখ আছে। যেমন ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

فيها يفرق كل امر حكيم

অর্থাৎ- “উক্ত রাত্রিতে প্রজ্ঞাসম্পন্ন সকল বিষয়ের ফায়সালা করা হয়।”

উক্ত পবিত্র আয়াতাংশ উনার সমর্থনে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

فيها ان يكتب كل مولود  من بنى ادم فى هذه السنة وفيها ان يكتب كل هالك من بنى ادم فى هذه السنة وفيها ترفع اعمالـهم وفيها تنزل ارزاقهم.

অর্থাৎ- “বরাতের রাত্রিতে ফায়সালা করা হয় কতজন সন্তান আগামী এক বৎসর জন্ম গ্রহণ করবে এবং কতজন সন্তান মৃত্যুবরণ করবে। এ রাত্রিতে বান্দাদের আমলগুলো উপরে উঠানো হয় অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার দরবার শরীফ-এ পেশ করা হয় এবং এ রাত্রিতে বান্দাদের রিযিকের ফায়সালা করা হয়।” (বায়হাক্বী শরীফ, মিশকাত শরীফ)

কাজেই, মহান আল্লাহ পাক তিনি যেহেতু বলেছেন যে, বরকতময় রাত্রিতে সকল কাজের ফায়সালা করা হয় আর উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবূল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিও যেহেতু বলেছেন যে, বরাতের রাত্রিতেই সকল বিষয় যেমন- হায়াত, মউত, রিযিক, আমল ইত্যাদি যা কিছু মানুষের প্রয়োজন হয়ে থাকে তার ফায়সালা করা হয় সেহেতু বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, “পবিত্র সূরা দুখান শরীফ উনার” উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা পবিত্র শবে বরাতকেই বুঝানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, বরাতের রাত উদযাপন বা উক্ত রাতে খাছভাবে ইবাদত-বন্দেগী, দোয়া-ইস্তিগফার ও দিনে রোযা রাখা ইত্যাদির নির্দেশ পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের মধ্যে রয়েছে।

যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عن حضرت على كرم الله وجهه عليه السلام قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها وصوموا يومها فان الله تعالى ينزل فيها لغروب الشمس الى السماء الدنيا فيقول الا من مستغفر فاغفرله الا مسترزق فارزقه الا مبتلى فاعافيه الا كذا الا كذا حتى يطلع الفجر.

অর্থ: “হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যখন শা’বান মাসের ১৫ তারিখ রাত্রি অর্থাৎ বরাতের রাত্রি উপস্থিত হবে তখন তোমরা উক্ত রাত্রিতে নামায আদায় করবে এবং দিনে রোযা রাখবে। কেননা নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি উক্ত রাত্রিতে সূর্যাস্তের সময় পৃথিবীর আকাশে আসেন অর্থাৎ রহমতে খাছ নাযিল করেন। অতঃপর ঘোষণা করেন, “কোন ক্ষমা প্র্রার্থনাকারী আছো কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দিবো।” “কোন রিযিক প্রার্থনাকারী আছো কি? আমি তাকে রিযিক দান করবো।” “কোন মুছিবতগ্রস্ত ব্যক্তি আছো কি? আমি তার মুছিবত দূর করে দিবো।” এভাবে ফজর পর্যন্ত ঘোষণা করতে থাকেন।” (ইবনে মাজাহ শরীফ, মিশকাত শরীফ)

অতএব প্রমাণিত হলো যে, পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যেই শবে বরাতের কথা উল্লেখ আছে। তবে পবিত্র কুরআন শরীফে বরাতের রাতকে ‘লাইলাতুম মুবারকাহ’ আর পবিত্র হাদীছ শরীফে ‘লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান’ বলা হয়েছে।

অনেকে বলে থাকে যে, পবিত্র সূরা দুখান শরীফ উনার উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা শবে ক্বদরকে বুঝানো হয়েছে। কেননা উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফে স্পষ্টই উল্লেখ আছে যে, “আমি পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিল করেছি ….” আর পবিত্র কুরআন শরীফ যে ক্বদরের রাত্রিতে নাযিল হয়েছে তা ‘পবিত্র সূরা ক্বদর শরীফ’ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে।

মূলতঃ যারা উপরোক্ত মন্তব্য করে থাকে তারা ‘পবিত্র সূরা দুখান শরীফ উনার’ উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার সঠিক ব্যাখ্যা না জানা ও না বুঝার কারণেই করে থাকে। মহান আল্লাহ পাক তিনি যে ‘পবিত্র সূরা দুখান শরীফ’ উনার মধ্যে বলেছেন, “আমি বরকতময় রজনীতে পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিল করেছি।” এর ব্যাখ্যামূলক অর্থ হলো, “আমি বরকতময় রাত্রিতে পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিলের ফায়সালা করেছি।”

আর ‘পবিত্র সূরা ক্বদর শরীফ’ উনার মধ্যে যে বলেছেন, “আমি ক্বদরের রাত্রিতে পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিল করেছি।”

এর ব্যাখ্যামূলক অর্থ হলো, “আমি ক্বদরের রাত্রিতে পবিত্র কুরআন শরীফ একসাথে লৌহে মাহফূজ থেকে বাইতুল ইজ্জতে নাযিল করি।” যা সামায়ে দুনিয়া বা পৃথিবীর আকাশে অবস্থিত। সেখান থেকে মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ ইয়াওমুল ইছনাইন শরীফ বা সোমবার শরীফ থেকে পৃথিবীতে নাযিল শুরু করি।

অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি “লাইলাতুম মুবারকাহ বা শবে বরাতে” পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিলের সিদ্ধান্ত নেন আর শবে ক্বদরে তা বাইতুল ইজ্জতে নাযিল করেন।

এজন্যে হযরত মুফাসসিরীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা শবে বরাতকে ليلة التجويز  অর্থাৎ ‘ফায়সালার  রাত’ আর শবে ক্বদরকে ليلة التنفيذ অর্থাৎ ‘জারী করার রাত’ বলে উল্লেখ করেছেন।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে-

عن ام الـمؤمنين حضرت عائشة الصديقة عليها السلام قالت فقدت رسول الله صلى الله عليه وسلم ليلة فاذا هو بالبقيع فقال اكنت تخافين ان يحيف الله عليك ورسوله قلت يا رسول الله صلى الله عليه وسلم انى ظننت انك اتيت بعض نسائك فقال ان الله تعالى ينـزل ليلة النصف من شعبان الى السماء الدنيا فيغفر لاكثر من عدد شعر غنم كلب.

অর্থ: উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে কোন এক রাত্রিতে রাত্রিযাপন করছিলাম। এক সময় উনাকে বিছানা মুবারক-এ না পেয়ে আমি মনে করলাম যে, তিনি হয়তো অন্য কোন হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের হুজরা শরীফে তাশরীফ নিয়েছেন। অতঃপর আমি তালাশ করে উনাকে জান্নাতুল বাক্বীতে পেলাম। সেখানে তিনি উম্মতের জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছেন। এ অবস্থা দেখে আমি স্বীয় হুজরা শরীফে ফিরে আসলে তিনিও ফিরে এসে আমাকে বললেন, আপনি কি মনে করেছেন, মহান আল্লাহ পাক সুবহানাহূ ওয়া তায়ালা ও উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা আপনার সাথে আমানতের খিয়ানত করেছেন! আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি ধারণা করেছিলাম যে, আপনি হয়তো অপর কোন হুজরা শরীফে তাশরীফ নিয়েছেন। অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র শা’বান মাস উনার ১৫ তারিখ রাত্রিতে পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করেন অর্থাৎ রহমতে খাছ নাযিল করেন। অতঃপর তিনি বনী কালবের মেষের গায়ে যতো পশম রয়েছে তার চেয়ে অধিক সংখ্যক বান্দাকে ক্ষমা করে থাকেন।” (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, রযীন, মিশকাত)

কাজেই, পবিত্র শবে বরাত উদ্যাপন করা বা উক্ত রাত্রিতে ইবাদত-বন্দেগী করা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদেরই নির্দেশের অন্তর্ভুক্ত। মোটেও বিদয়াত ও নাজায়িয নয়। বরং সম্মানিত সুন্নত উনার অন্তর্ভুক্ত।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: পবিত্র শবে বরাত সম্পর্কে মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ উনার ১৯৫ থেকে ২১৩তম সংখ্যায় অর্থাৎ মোট ১৯টি সংখ্যায় ৩৮৬টি অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য দলীলের ভিত্তিতে বিস্তারিত ফতওয়া প্রদান করা হয়েছে। তাই এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে উল্লিখিত ফতওয়া সংগ্রহ করে পাঠ করুন।

 

মুহম্মদ রায়হান চৌধুরী

মহাখালী, ঢাকা।

 

সুওয়াল: জানাযা নামায আদায় করার পর হাত তুলে মুনাজাত করা যাবে কি না?

জাওয়াব: জানাযা নামায আদায়ের পর কাতার ভঙ্গ করে সম্মিলিতভাবে হাত তুলে দুয়া-মুনাজাত করা জায়িয ও সুন্নত। অনেকে এ দুয়াকে বিদয়াত বলতে চায়। আসলে তাদের ফতওয়া গ্রহণযোগ্য নয়। (বাহরে যুখখার, হাদিয়াতুল মুছল্লীন, শামী)

 

মুহম্মদ আযীযুর রহমান

পলাশ, নরসিংদী।

 

সুওয়াল: মেয়েরা পুরুষের নিকট পবিত্র কুরআন শরীফ শিক্ষা করতে পারবে কি না?

জাওয়াব: পাঁচ বৎসর বয়স পর্যন্ত শিক্ষা করতে পারবে। আর এর থেকে বয়সে বড় হলে পরপুরুষের কাছে সামনাসামনি কোনকিছুই শিক্ষা করতে পারবে না। তা নাজায়িয ও হারাম হবে। তবে খাছ পর্দার সাথে শিক্ষা করতে পারবে বা তা’লীম নিতে পারবে, তাতে কোন অসুবিধা নেই। (ফতওয়ায়ে আলমগীরী, ক্বাযীখান ও সমূহ ফিক্বাহর কিতাব)

 

মুহম্মদ নুরুল হুদা

মানিক খালী, কিশোরগঞ্জ।

 

সুওয়াল: দুয়া কুনুত ছাড়া বিতর নামায হবে কি?

জাওয়াব: সম্মানিত হানাফী মাযহাব মোতাবেক বিতর নামাযে দুয়ায়ে কুনুত পড়া ওয়াজিব। তাই দুয়া কুনুত ছাড়া বিতর নামায হবে না। যদি কেউ ভুলে দুয়া কুনুত না পড়ে থাকে, তাহলে শেষ বৈঠকে সিজদায়ে সাহু দিলে নামায আদায় হয়ে যাবে। যদি সিজদায়ে সাহু না দেয় তাহলে নামায আবার দোহরায়ে পড়তে হবে। (ফতওয়ায়ে শামী, তাতারখানিয়া, হিদায়াহ)

 

মুহম্মদ এমদাদ হুসাইন

বাগেরহাট, খুলনা।

 

সুওয়াল: ‘নূর মুহম্মদ’ নাম রাখা জায়িয আছে কিনা?

জাওয়াব: হ্যাঁ, নূর মুহম্মদ নাম রাখা অবশ্যই জায়িয আছে। কেননা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ এবং পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের কোথাও এ নাম রাখাকে নাজায়িয বলা হয়নি। (মুসনাদে আব্দুর রাযযাক শরীফ, মিশকাত শরীফ, মাদারিজুন নুবুওওয়াহ)

 

মুহম্মদ আযীমুর রহমান

সদর, চাঁদপুর।

সুওয়াল: মোজার উপর মাসেহ করা কি? উক্ত মোজা কি রকম হবে? চেইন লাগানো ও কাপড়ের মোজার উপর মাসেহ করা বৈধ কিনা? জানাবেন।

জাওয়াব: মোজার উপর মাসেহ করা বৈধ তো অবশ্যই বরং সুন্নত। তবে মোজার শর্ত রয়েছে তা হলো- উক্ত মোজা পুরোটিই চামড়ার হতে হবে, কোন দিকে ফাঁড়া বা খোলা থাকবে না। শুধু পা ঢুকানোর জন্য উপর দিকে খোলা থাকবে। চেইন বা বুতাম লাগানো থাকতে পারবে না। মোজা কাপড়েরও হতে পারবে না। কারণ কাপড়ের মোজার উপর মাসেহ করলে মাসেহের হক্ব আদায় হবে না। মোজা মাসেহের মাসয়ালা হচ্ছে- পবিত্র অবস্থায় মোজা পরিধান করলে মুসাফিরের জন্য তিন দিন তিন রাত আর মুক্বীমের জন্য ১দিন ১ রাত মোজার উপর মাসেহ করা বৈধ তো অবশ্যই বরং সুন্নত। (সমূহ ফিক্বাহের কিতাব)

 

মুহম্মদ আনিছুর রহমান

বাবুরহাট, চাঁদপুর।

সুওয়াল: কোন বিবাহিতা মহিলার জন্য তার পিতার বাড়ী মুসাফিরী দূরত্বে হলে সেখানে ক্বছর করবে কিনা?

জাওয়াব: পিতার বাড়ী মুসাফিরী দূরত্বে হলে সেখানে নামায ক্বছর করতে হবে। কেননা এ অবস্থায় সে  মুসাফির হয়ে যাবে। মহিলার জন্য তার স্বামীর বাড়ী আসল বাড়ী। কাজেই, স্বামীর বাড়ীতে মুক্বীম থাকবে। (সমূহ ফিক্বাহের কিতাব)

 

মুহম্মদ আশরাফুল ইসলাম

সদর, জয়পুরহাট।

সুওয়াল: মাজারে মান্নত ও দান করা জায়িয কি?

জাওয়াব: হ্যাঁ মাজারে মান্নত করা ও দান করা জায়িয। (ফতওয়ায়ে আযীযী)

 

মুহম্মদ আনোয়ার হুসাইন

পুরাতন ঢাকা।

সুওয়াল: ইসলামে ‘রাজনীতি’ আছে কি না?

জাওয়াব: পবিত্র দ্বীন ইসলামে ‘রাজনীতি’র কোন স্থান নেই। পবিত্র দ্বীন ইসলাম হচ্ছে পরিপুর্ণ জীবন ব্যবস্থা। সেখানে রাজনীতির স্থান কোথায়। তাই পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার নামে রাজনীতি আর রাজনীতির নামে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, রাজতন্ত্র ইত্যাদি কোন প্রকার তন্ত্র-মন্ত্র ও মতবাদ করা হারাম ও কুফরী। (পবিত্র কুরআন মাজীদ, বুখারী শরীফ)

 

মুহম্মদ রবীউল ইসলাম

শনি আখড়া, ঢাকা।

 

সুওয়াল: পীর-মাশায়িখ উনাদের ওসীলা দিয়ে দুয়া করা জায়িয কিনা?

জাওয়াব: হ্যাঁ পীর-মাশায়িখ তথা ওলীআল্লাহ উনাদের উসীলা দিয়ে দুয়া করা তো অবশ্যই জায়িয বরং দুয়া কবুল হওয়ার বিশেষ কারণ। কেননা উনাদেরকে মহান আল্লাহ পাক তিনি উসীলাহ হিসেবে মানুষদেরকে দিয়েছেন। (পবিত্র কুরআন শরীফ, বুখারী শরীফ, মিশকাত শরীফ)

 

মুহম্মদ জসীমুদ্দীন

কুড়িগ্রাম।

সুওয়াল: ঈছালে ছাওয়াব করা কি?

জাওয়াব: ঈছালে ছাওয়াব করা সুন্নত। আর এতে মাইয়্যিত উপকার লাভ করে থাকে। ঈছালে ছাওয়াবের উদ্দেশ্যে পবিত্র কুরআন শরীফ খতম করা, দুয়া কালাম পাঠ করা ও অযীফা পাঠ করা জায়িয। এক শ্রেণীর অসৎ আলিম এগুলোকে হারাম বলে থাকে। আসলে তারা উলামায়ে ‘সূ’। (ফতওয়ায়ে ছিদ্দীক্বিয়া)

 

মুহম্মদ হেদায়েতুল্লাহ

সদর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

সুওয়াল: কালো খেযাব ব্যবহার করা কি?

জাওয়াব: প্রলেপ পড়ে এমন খেজাব তা কালো হোক অথবা অন্য যেকোন রংয়ের হোক তা ব্যবহার করা হারাম। কারণ, এতে প্রলেপ পড়ার কারণে ওযূ গোসল শুদ্ধ হয় না। আর যে খেযাব ব্যবহার করলে কালো রং হয় কিন্তু প্রলেপ পরে না তা ব্যবহার করা হলো মাকরূহ তাহরীমী। (মুসলিম শরীফ, তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ)

 

মুহম্মদ আলাউদ্দীন

মতলব, চাঁদপুর

 

সুওয়াল:  শবে বরাতে কি আমল করতে হবে? দয়া করে জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব: শবে বরাত হচ্ছে মুক্তি বা ভাগ্য অথবা নাজাতের রাত।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে-

عن حضرت ابى موسى الاشعرى رضى الله تعالى عنه عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ان الله تعالى ليطلع فى ليلة النصف من شعبان فيغفر لجميع خلقه الا لـمشرك او مشاحن

অর্থ: “হযরত আবু মূসা আশ‘আরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি শা’বান মাসের ১৫ তারিখ রাত্রিতে ঘোষণা করেন যে, উনার সমস্ত মাখলূকাতকে তিনি ক্ষমা করে দিবেন। শুধু মুশরিক ও হিংসা-বিদ্বেষকারী ব্যতীত। (ইবনে মাজাহ শরীফ, আহমদ শরীফ, মিশকাত শরীফ)

এ ব্যতিত বরাতের রাত্রিতে ইবাদত-বন্দেগী করে ও পরবর্তী দিনে রোযা রেখে মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি অর্জন করাই মূল উদ্দেশ্য।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عن حضرت على كرم الله وجهه عليه السلام قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها وصوموا يومها فان الله تعالى ينزل فيها لغروب الشمس الى السماء الدنيا فيقول الا من مستغفر فاغفرله الا مسترزق فارزقه الا مبتلى فاعافيه الا كذا الا كذا حتى يطلع الفجر.

অর্থ: “হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যখন শা’বান মাসের ১৫ তারিখ রাত্রি অর্থাৎ বরাতের রাত্রি উপস্থিত হবে তখন তোমরা উক্ত রাত্রিতে নামায আদায় করবে এবং দিনে রোযা রাখবে। কেননা নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি উক্ত রাত্রিতে সূর্যাস্তের সময় পৃথিবীর আকাশে আসেন অর্থাৎ রহমতে খাছ নাযিল করেন। অতঃপর ঘোষণা করেন, “কোন ক্ষমা প্র্রার্থনাকারী আছো কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দিবো।” “কোন রিযিক প্রার্থনাকারী আছো কি? আমি তাকে রিযিক দান করবো।” “কোন মুছিবতগ্রস্ত ব্যক্তি আছো কি? আমি তার মুছিবত দূর করে দিবো।” এভাবে ফজর পর্যন্ত ঘোষণা করতে থাকেন।” (ইবনে মাজাহ, মিশকাত)

উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফসমূহের সংক্ষিপ্ত বিষয়বস্তু হলো, বরাতের রাত্রিতে ইবাদত-বন্দেগী করতে হবে এবং দিনে রোযা রাখতে হবে। যার মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক তিনি বান্দাকে ক্ষমা করে স্বীয় সন্তুষ্টি দান করবেন।

বরাতের রাত্রিতে যদিও পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের মাধ্যমে কোন্ কোন্ ইবাদত-বন্দেগী করতে হবে তা নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়নি। তবে ইবাদত-বন্দেগী করার জন্য নির্দেশ মুবারক দেয়া হয়েছে। সে লক্ষ্যে যেসব ইবাদত-বন্দেগী করতে হবে তার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া হলো-

বরাতের নামায

শবে বরাত উপলক্ষে ৪, ৬, ৮, ১০, ১২ রাকায়াত নফল নামায পড়া যেতে পারে।

ছলাতুত তাসবীহ নামায

অতঃপর ছলাতুত তাসবীহ নামায পড়বে, যার দ্বারা মানুষের সমস্ত গুণাহখতা ক্ষমা হয়।

তাহাজ্জুদ নামায

অতঃপর তাহাজ্জুদ নামায পড়বে, যা দ্বারা মহান আল্লাহ পাক উনার নৈকট্য হাছিল হয়।

পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত

পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করবে, যার মাধ্যমে মহান আল্লাহ তায়ালা উনার সন্তুষ্টি অর্জিত হয়। কেননা নফল ইবাদতের মধ্যে পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত হচ্ছে সর্বোত্তম আমল।

পবিত্র মীলাদ শরীফ ও দুরূদ শরীফ পাঠ

পবিত্র মীলাদ শরীফ ও পবিত্র দুরূদ শরীফ পাঠ করবে, যার দ্বারা মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তুষ্টি অর্জিত হয়।

যিকির-আযকার

যিকির-আযকার করবে, যার দ্বারা দিল ইছলাহ হয়।

কবর যিয়ারত

কবরস্থান যিয়ারত করবে, যার দ্বারা সুন্নত আদায় হয়। তবে কবর বা মাযার শরীফ যিয়ারত করতে গিয়ে সারারাত্র ব্যয় করে দেয়া জায়িয হবেনা। সুন্নত আদায়ের লক্ষ্যে নিকটবর্তী কোন কবরস্থান যিয়ারত করে চলে আসবে।

দান-ছদকা

গরীব-মিসকীনকে দান-ছদকা করবে ও লোকজনদের খাদ্য খাওয়াবে, যার দ্বারা হাবীবুল্লাহ হওয়া যায়।

হালুয়া-রুটি বা গোশত রুটি পাকানো

উল্লেখ্য, শবে বরাতে হালুয়া-রুটি অথবা অন্য কোন বিশেষ খাবার তৈরী করা শরীয়তে নাজায়িয নয়। শবে  বরাত উপলক্ষে বিশেষ করে আমাদের  দেশ ও তার আশ-পাশের দেশসমূহে যে রুটি-হালুয়ার ব্যাপক প্রচলন রয়েছে তার পিছনে ইতিহাস রয়েছে।

ইতিহাসে উল্লেখ করা হয়েছে, পূর্ববর্তী যামানায় যখন বর্তমানের মতো বাজার, বন্দর, হোটেল-রেঁস্তরা ইত্যাদি সর্বত্র ছিলোনা তখন মানুষ সাধারণতঃ সরাইখানা, লঙ্গরখানা, মুসাফিরখানা ইত্যাদিতে ছফর অবস্থায় প্রয়োজনে রাত্রিযাপন করতেন। অর্থাৎ মুসাফিরগণ তাদের সফর অবস্থায় চলার পথে আত্মীয়-স্বজন বা পরিচিত জনের ঘর-বাড়ি না পেলে সাধারণতঃ সরাইখানা, মুসাফিরখানা ও লঙ্গরখানায় রাত্রিযাপন করতেন। আর এ সমস্ত মুসাফিরখানা, লঙ্গরখানা ও সরাইখানার দায়িত্বে যারা নিয়োজিত থাকতেন উনারাই মুসাফিরদের খাবারের ব্যবস্থা করতেন।

বিশেষ করে মুসাফিরগণ শবে বরাতে যখন উল্লিখিত স্থানসমূহে রাত্রি যাপন করতেন তখন উনাদের মধ্যে অনেকেই রাত্রিতে ইবাদত-বন্দেগী করতেন ও দিনে রোযা রাখতেন। যার কারণে উল্লিখিত স্থানসমূহের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিগণ খাবারের ব্যাবস্থা করতেন যাতে মুসাফিরদের রাত্রে ইবাদত-বন্দেগী করতে ও দিনে রোযা রাখতে অসুবিধা না হয়।

আর যেহেতু হালুয়া-রুটি ও গোশ্ত-রুটি খাওয়া সুন্নত সেহেতু উনারা হালুয়া-রুটি বা গোশ্ত-রুটির ব্যবস্থা করতেন।

এছাড়াও আরবীয় এলাকার লোকদের প্রধান খাদ্য রুটি-হালুয়া বা রুটি-গোশ্ত। তারা ভাত, মাছ, ইত্যাদি খেতে অভ্যস্ত নয়। সেখান থেকে পর্যায়ক্রমে শবে বরাত উপলক্ষে হালুয়া-রুটির প্রচলন আমাদের দেশে ছড়িয়ে পড়ে।

উল্লেখ্য, কোন আমলের ক্ষেত্রেই বদ রছম বা বদ প্রথার অনুসরণ করা জায়িয নেই।

এখন মাসয়ালা হচ্ছে- কেউ যদি শবে বরাত উপলক্ষে রছম-রেওয়াজ না করে বা নিজের ইবাদত-বন্দেগীর ব্যাঘাত না ঘটিয়ে উক্ত হালুয়া-রুটির ব্যবস্থা করে তাহলে তা অবশ্যই জায়িয। শুধু জায়িযই নয় বরং কেউ যদি তার নিজের ইবাদত-বন্দেগী ঠিক রেখে অন্যান্যদের জন্য যারা রাত্রিতে ইবাদত-বন্দেগী করবে ও দিনে রোযা রাখবে তাদের ইবাদত-বন্দেগী ও রোযা পালনের সুবিধার্থে হালুয়া-রুটি বা গোশ্ত-রুটি অথবা আমাদের দেশে প্রচলিত খাদ্যসমূহের কোন প্রকারের খাদ্যের ব্যবস্থা করে তা অবশ্যই অশেষ ফযীলত ও নেকীর কারণ হবে।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عن حضرت عبد الله بن سلام رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يا ايها الناس افشوا السلام واطعموا الطعام وصلوا الارحام وصلوا بالليل والناس نيام تدخلوا الـجنة بسلام.

অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হে লোক সকল! তোমরা সালামের প্রচলন করো, মানুষকে খাদ্য খাওয়াও, আত্মীয়তার সর্ম্পক রক্ষা করো এবং মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন নামায পড়ো তাহলে শান্তির সাথে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।” (তিরমিযী শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ, দারিমী শরীফ)

তবে সতর্ক থাকতে হবে যে, এই কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে যাতে এমন পরিশ্রম তথা এমন সময় ব্যয় না হয় যাতে করে কারো শবে বরাতের ইবাদতে ঘাটতি হয়। আরো সতর্ক থাকতে হবে যে, খাদ্য বিতরণ যেনো আত্মীয়-স্বজন বা প্রতিবেশীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে বরং এক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে যেনো অভাবগ্রস্তদের প্রাধান্য দেয়া হয়।

দোয়া-ইস্তিগফার

মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট দোয়া করবে, যার কারণে মহান আল্লাহ পাক তিনি খুশি হবেন ও উনার নিয়ামত লাভ হবে। আর সর্বশেষ খালিছ ইস্তিগফার ও তওবা করবে, যার মাধ্যমে বান্দাহর সমস্ত গুণাহ-খতা মাফ হয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার খালিছ সন্তুষ্টি অর্জিত হয়। অর্থাৎ শবে বরাত উনার বারাকাত, ফুয়ূজাত, নিয়ামত, রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত ইত্যাদি হাছিল করা যায়।

স্মরণীয় যে, অনেক স্থানে দেখা যায় যে, লোকজন ছুবহে ছাদিকের পর আখিরী মুনাজাত করে থাকে। মূলতঃ মুনাজাত যে কোন সময়েই করা যায়। তবে বরাতের রাতে দোয়া কবুল করার যে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তা ছুবহ্ েছাদিকের পূর্ব পর্যন্ত। এরপর বরাতের রাত অবশিষ্ট থাকেনা। কেননা, হাদীছ শরীফে স্পষ্টই বলা হয়েছে যে-

حتى يطلع الفجر

অর্থ: “ফজর বা ছুবহ্ িছাদিক পর্যন্ত মহান আল্লাহ পাক তিনি দোয়া কবুল করেন।”

অতএব, সকলের উচিৎ হবে মূল বা আখিরী মুনাজাত ছুবহে ছাদিকের পূর্বেই করা।

{দলীলসমূহঃ- (১) তাফসীরে কুরতুবী, (২) মাযহারী, (৩) রুহুল বয়ান, (৪) রুহুল মায়ানী, (৫) খাযিন, (৬) বাগবী, (৭) তিরমিযী, (৮) ইবনে মাজাহ, (৯) আহমদ, (১০) রযীন, (১১) মিশকাত, (১২) মিরকাত, (১৩) আশয়াতুল লুময়াত, (১৪) লুময়াত, (১৫) ত্বীবী, (১৬) ত্বালীক,  (১৭) মুযাহিরে হক্ব ইত্যাদি।}

 

হাফিয মুহম্মদ মুশাররফ হুসাইন

নরসিংদী

 

সুওয়াল:  “ছলাতুত্ তাসবীহ” নামাযের ফযীলত ও নিয়ম জানতে বাসনা রাখি।

জাওয়াব:  “ছলাতুত্ তাসবীহ” নামাযের বহু ফযীলত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে। যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه ان النبى صلى الله عليه وسلم قال للعباس بن عبد الـمطلب يا عباس يا عماه الا اعطيك الا امنحك الا اخبرك الا افعل بك عشر خصال اذا انت فعلت ذلك غفر الله لك ذنبك اوله واخره قديـمه وحديثه خطأه وعمده صغيره وكبيره سره وعلانيته ان تصلى اربع ركعات … ان استطعت ان تصليها فى كل يوم مرة فافعل فان لـم تفعل ففى كل جمعة مرة فان لـم تفعل ففى كل سنة مرة فان لـم تفعل ففى عمرك مرة.

অর্থ: “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। একদা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি (আমার পিতা) হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে বলেন, ‘হে হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! হে আমার চাচা! আমি কি আপনাকে দিবোনা, আমি কি আপনাকে দান করবোনা, আমি কি আপনাকে বলবোনা, আমি কি আপনার সাথে করবোনা দশটি কাজ? (অর্থাৎ শিক্ষা দিবোনা দশটি তাস্বীহ) যখন আপনি তা আমল করবেন মহান আল্লাহ পাক আপনার প্রথম গুণাহ, শেষ গুণাহ, পুরাতন গুণাহ, নতুন গুণাহ, অনিচ্ছাকৃত গুণাহ, ইচ্ছাকৃত গুণাহ, ছোট গুণাহ, বড় গুণাহ, গোপন গুণাহ, প্রকাশ্য গুণাহ ইত্যাদি সকল গুণাহ-খতা ক্ষমা করে দিবেন। আপনি (ছলাতুত তাসবীহ উনার) চার রাকায়াত নামায পড়বেন। …. যদি সম্ভব হয় তবে প্রতিদিন একবার এ নামায আপনি পড়বেন। যদি সম্ভব না হয় তবে সপ্তাহে একবার, তাও যদি সম্ভব না হয় তবে বৎসরে একবার, তাও যদি সম্ভব না হয় তবে জীবনে অন্ততঃ একবার এ নামায আপনি পড়বেন।” সুবহানাল্লাহ! (আবূ দাউদ শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ, বায়হাকী ফী দাওয়াতিল কবীর শরীফ, তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ)

আর ‘ছলাতুত্ তাসবীহ’ নামায উনার নিয়ম সম্পর্কে কিতাবে দু’টি মত উল্লেখ আছে। একটি হানাফী মাযহাব অনুযায়ী এবং অপরটি শাফিয়ী মাযহাব অনুযায়ী।

এখানে আমাদের হানাফী মাযহাব উনার নিয়মটিই উল্লেখ করা হলো-

প্রথমতঃ এই বলে নিয়ত করবে যে, “আমি ছলাতুত তাসবীহ উনার চার রাকায়াত সুন্নত নামায ক্বিবলামুখী হয়ে আদায় করছি।”

অতঃপর তাকবীরে তাহরীমা বেঁধে ছানা পাঠ করবে, ছানা পাঠ করে সূরা ক্বিরায়াত পাঠ করার পূর্বেই ১৫বার নিম্নোক্ত তাসবীহ পাঠ করবে-

سبحان الله والحمد لله ولا اله الا الله والله اكبر

উচ্চারণ: “সুব্হানাল্লাহি ওয়ালহাম্দু লিল্লাহি ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার।”

অতঃপর সূরা- ক্বিরায়াত পাঠ করে রুকূতে যাওয়ার পূর্বে ১০বার, রুকূতে গিয়ে রুকূর তাসবীহ পাঠ করার পর ১০বার, রুকূ থেকে উঠে (ক্বওমায়) সিজদায় যাওয়ার পূর্বে দাঁড়িয়ে ১০বার, অতঃপর সিজদায় গিয়ে সিজদার তাসবীহ পাঠ করে ১০বার, সিজদা থেকে উঠে দ্বিতীয় সিজদায় যাওয়ার পূর্বে (জলসায়) বসে ১০বার, অতঃপর দ্বিতীয় সিজদায় গিয়ে সিজদার তাসবীহ পাঠ করে ১০ বার অর্থাৎ এরূপভাবে প্রতি রাকায়াতে ৭৫ বার উক্ত তাসবীহ  পাঠ করবে।

অতঃপর পরবর্তী রাকায়াতের জন্য দাঁড়াবে। দাঁড়িয়ে প্রথমেই ১৫বার উক্ত তাসবীহ পাঠ করবে। তারপর প্রথম রাকায়াতের মতোই উক্ত তাসবীহগুলো আদায় করবে। অর্থাৎ চার রাকায়াত নামাযে মোট ৩০০ বার উক্ত তাসবীহ পাঠ করবে।

জরুরী মাসয়ালা

উল্লেখ্য, ছলাতুত তাসবীহ নামায আদায়কালীন হাতে তাসবীহ নিয়ে গণনা করা মাকরূহ। অঙ্গুল টিপে টিপে তাসবীহগুলো গণনা করতে হবে। কোন স্থানে তাসবীহ পড়তে ভুলে গেলে পরবর্তী তাসবীহ পাঠের সময় তা আদায় করে নিতে হবে। তবে শর্ত হচ্ছে ক্বওমায় ও জলসায় ১০ বারের বেশী তাসবীহ আদায় করা যাবেনা। যেমন, সূরা-ক্বিরায়াত পাঠের পূর্বে তাসবীহ ভুলে গেলে তা ক্বিরায়াতের পর আদায় করতে হবে। ক্বিরায়াতের পর তাসবীহ ভুলে গেলে রুকূতে আদায় করতে হবে। রুকূতে তাসবীহ ভুলে গেলে উক্ত তাসবীহ ক্বওমায় আদায় না করে প্রথম সিজদাতে গিয়ে আদায় করতে হবে। ক্বওমায় তাসবীহ ভুলে গেলে তাও প্রথম সিজদাতে গিয়ে আদায় করতে হবে। প্রথম সিজদাতে তাসবীহ ভুলে গেলে তা জলসায় আদায় না করে দ্বিতীয় সিজদাতে গিয়ে আদায় করতে হবে। জলসায় তাসবীহ ভুলে গেলে তাও দ্বিতীয় সিজদায় আদায় করতে হবে। আর দ্বিতীয় সিজদাতে তাসবীহ ভুলে গেলে সূরা-ক্বিরায়াত পাঠ করার পূর্বে আদায় করে নিতে হবে আর ভুলে যাওয়া তাসবীহ প্রত্যেক স্থানে নির্ধারিত তাসবীহ আদায় করার পর আদায় করতে হবে।

{দলীলসমূহ ঃ- (১) আবূ দাউদ শরীফ, (২) ইবনে মাজাহ শরীফ্, (৩) বায়হাক্বী শরীফ, (৪) তিরমিযী শরীফ, (৫) মিশকাত শরীফ, (৬) বযলুল মাজহুদ শরীফ, (৭) আওনুল মা’বুদ শরীফ, (৮) তুহ্ফাতুল আহওয়াযী শরীফ, (৯) মা’য়ারিফুস্ সুনান শরীফ, (১০) মিরকাত শরীফ, (১১) লুময়াত শরীফ, (১২) আশয়াতুল লুময়াত, (১৩) শরহুত্ ত্বীবী শরীফ, (১৪) তা’লীকুছ ছবীহ্ শরীফ, (১৫) মুজাহিরে হক্ব শরীফ, (১৬) ফতহুল ক্বাদীর শরীফ, (১৭) বাহরুর রায়েক শরীফ, (১৮) মারাকিউল ফালাহ্ শরীফ, (১৯) আলমগীরী, (২০) শরহে বিক্বায়া শরীফ, (২১) হিদায়া শরীফ, (২২) আইনুল হিদায়া শরীফ ইত্যাদি}

 

মুহম্মদ উবায়দুল্লাহ

রাজারহাট, কুড়িগ্রাম

 

সুওয়াল: শবে বরাতকে কেন্দ্র করে সমাজের এক শ্রেণীর মানুষেরা আতশবাজি ও আলোকসজ্জা করে থাকে। সম্মানিত শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে এটা জায়িয আছে কি-না?

জাওয়াব: শবে বরাতে আলোকসজ্জা ও আতশবাজি করা সম্মানিত শরীয়ত সম্মত নয়। ইতিহাসে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আলোকসজ্জা হচ্ছে গ্রীক ধর্মের একটি ধর্মীয় প্রথা। সেখান থেকে পর্যায়ক্রমে হিন্দু ধর্মের ধর্মীয় প্রথা হিসেবে রূপ লাভ করে যা শেষ পর্যন্ত দেয়ালী পূজা নামে মশহূর হয়। আলোকসজ্জা সেখান থেকে পর্যায়ক্রমে মুসলমানদের মধ্যে প্রবেশ করে যা প্রকৃত দ্বীন ইসলাম উনার শেয়ার বা তর্জ-ত্বরীক্বার অন্তর্ভুক্ত নয়। আর আতশবাজিও সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার কোন শেয়ারের অন্তর্ভুক্ত নয়। প্রকৃতপক্ষে আতশবাজিও হিন্দু ধর্মের একটি ধর্মীয় প্রথার অন্তর্ভুক্ত।

আর এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عن حضرت عبد الله بن عمر رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من تشبه بقوم فهو منهم.

অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল বা সাদৃশ্য রাখবে তার হাশর-নশর তাদের সাথেই হবে।” (আহমদ শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ)

এ প্রসঙ্গে হিন্দুস্তানের একটি ঘটনা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। “হিন্দুস্তানে একজন জবরদস্ত ওলীআল্লাহ ছিলেন। যিনি ইন্তিকালের পর অন্য একজন বুযূর্গ ব্যক্তি উনাকে স্বপ্নে দেখে জিজ্ঞেস করেন, আপনি কেমন আছেন? তখন সেই ওলীআল্লাহ তিনি জাওয়াবে বললেন, আপাতত আমি ভালোই আছি; কিন্তু আমার উপর দিয়ে এক কঠিন সময় অতিবাহিত হয়েছে, যা বলার অপেক্ষা রাখে না। তখন স্বপ্নদ্রষ্টা ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কি আমাকে আপনার সেই কঠিন অবস্থা সম্পর্কে বলবেন? তিনি জবাব দিলেন, অবশ্যই বলবো। কারণ এতে যমীনবাসীদের জন্য শক্ত ইবরত ও নছীহত রয়েছে। এরপর বলা শুরু করলেন, আমার ইন্তিকালের পর আমাকে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা সরাসরি মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মুখে পেশ করেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের বললেন, হে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালামগণ! তোমরা কেন তাকে এখানে নিয়ে এসেছো? হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালামগণ উনারা বললেন, আয় আল্লাহ পাক!  আমরা উনাকে আপনার খাছ বান্দা হিসেবে আপনার সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য নিয়ে এসেছি। তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, তার হাশর-নশর তো হিন্দুদের সাথে হওয়ার কথা। বিছালপ্রাপ্ত ওলীআল্লাহ তিনি বলেন, একথা শুনে আমি ভয়ে থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে বললাম, আয় বারে ইলাহী! আমার হাশর-নশর হিন্দুদের সাথে হবে কেন? আমি তো মুসলমান ছিলাম। মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, যেহেতু আপনি পূজা করেছেন তাই আপনার হাশর-নশর হিন্দুদের সাথেই হবে। আমি বললাম, আয় আল্লাহ পাক, আপনার কসম! পূজা করা তো দূরের কথা আমি জীবনে কোনো দিন মন্দিরের আশপাশ দিয়েও হাঁটিনি। তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, আপনি সেদিনের কথা স্মরণ করুন, যেদিন হিন্দুস্তানে হোলি পূজা হচ্ছিলো। আপনি রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। আপনার সামনে-পিছনে, ডানে-বামে, উপরে-নিচে, আশে-পাশে সমস্ত গাছপালা, পশুপাখি, কীট-পতঙ্গ, বাড়ি-ঘর, সবকিছুতেই রঙ দেয়া হয়েছিলো। এমতাবস্থায় আপনার সামনে দিয়ে একটি গর্দভ (গাধা) হেঁটে যাচ্ছিলো যাকে রঙ দেয়া হয়নি। তখন আপনি পান চিবাচ্ছিলেন, আপনি সেই গর্দভের গায়ে এক চিপটি পানের রঙিন রস নিক্ষেপ করে বলেছিলেন, হে গর্দভ! তোমাকে তো এই হোলি পূজার দিনে কেউ রঙ দেয়নি তাই আমি তোমাকে রঙ দিয়ে দিলাম। (নাউযুবিল্লাহ) এতে কি আপনার পূজা করা হয়নি? আপনি কি জানেন না যে, আমার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন-

من تشبه بقوم فهو منهم.

 “যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখবে, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত এবং তার হাশর-নশর তাদের সাথে হবে।” সুতরাং আপনার হাশর-নশর হিন্দুদের সাথে হওয়ারই কথা। এটা শুনে বিছালপ্রাপ্ত ওলীআল্লাহ তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট অনেক কান্না-কাটি, রোনাজারি করে বললেন, বারে ইলাহী! আমি বিষয়টি বুঝতে পারিনি। কেউ আমাকে বিষয়টি বুঝিয়েও দেয়নি। আর এ বিষয়ে আমার অন্তরও সাড়া দেয়নি। তাই আমি বিষয়টি বুঝতে পারিনি বারে ইলাহী। দয়া করে আমাকে ক্ষমা করে দিন। তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, আপনার অন্যান্য আমলের কারণে আপনাকে ক্ষমা করা  হলো।”

কাজেই, মুসলমানদের জন্য শুধু শবে বরাতকেই কেন্দ্র করে নয় বরং কোন অবস্থাতেই আতশবাজি ও আলোকসজ্জা ইত্যাদি কাফির, মুশরিক, বেদ্বীন বদদ্বীনদের কোন আমলের অনুসরণ করা সম্মানিত শরীয়ত সম্মত নয়।

{দলীলসমূহ ঃ (১) আহমদ শরীফ (২) আবূ দাউদ শরীফ (৩) বযলুল মাজহুদ শরীফ (৪) আউনুল মা’বূদ শরীফ (৫) মাছাবাতা বিসসুন্নাহ শরীফ (৬) গ্রীক জাতির ইতিহাস (৭) হিন্দু ধর্মের ইতিহাস ইত্যাদি।}

 

মুহম্মদ আশরাফুল ইসলাম

সদর, নীলফামারী

 

সুওয়াল: শবে বরাতে ইবাদতে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে সারারাত্র ওয়াজ মাহফিল করা যাবে কিনা?

পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে জাওয়াব দিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব: প্রকৃতপক্ষে শবে বরাত হচ্ছে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার বিশেষ রাত্রিসমূহের মধ্যে একটি রাত্র। যা শা’বানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত্রিতে হয়ে থাকে। “শবে বরাত” এর অর্থ হচ্ছে “মুক্তির রাত্র” বা “না’জাতের রাত্র।” বরাতের রাত্রে ইবাদত-বন্দেগী করতে হয় আর দিনে রোযা রাখতে হয়। সেজন্য এ রাতে দোয়া কবুল হওয়ার ও ইবাদত বন্দেগী করার কথাই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ব্যক্ত হয়েছে। যেমন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

عن حضرت على كرم  الله وجهه عليه السلام قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها وصوموا يومها فان الله تعالى ينزل فيها لغروب الشمس الى السماء الدنيا فيقول الا من مستغفر فاغفرله الا مسترزق فارزقه الا مبتلى فاعافيه الا كذا الا كذا حتى يطلع الفجر.

অর্থ: “হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যখন শা’বানের ১৫ তারিখ রাত্রি উপস্থিত হবে তখন তোমরা উক্ত রাত্রিতে নামায আদায় করবে এবং দিনে রোযা রাখবে। কেননা নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি উক্ত রাত্রিতে সূর্যাস্তের সময় পৃথিবীর আকাশে আসেন অর্থাৎ রহমতে খাছ নাযিল করেন, অতঃপর ঘোষণা করেন, “কোন ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছ কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দিব। কোন রিযিক প্রার্থনাকারী আছ কি? আমি তাকে রিযিক দান করব। কোন মুছিবতগ্রস্থ ব্যক্তি আছ কি? আমি তার মুছিবত দূর করে দিব। এভাবে ফযর বা ছুবহে ছাদিক পর্যন্ত ঘোষণা করতে থাকেন।” (ইবনে মাজাহ শরীফ, মিশকাত শরীফ)

সম্মানিত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে-

ان الدعاء يستجاب فى خمس ليال اول ليلة من رجب وليلة النصف من شعبان وليلة القدر المباركة وليلتا العيدين.

অর্থ: “নিশ্চয়ই পাঁচ রাত্রিতে দোয়া নিশ্চিতভাবে কবুল হয়ে থাকে। (১) রজব মাসের প্রথম রাতে (২) শবে বরাতের রাতে (৩) ক্বদরের রাতে (৪) ঈদুল ফিতরের রাতে (৫) ঈদুল আযহার রাতে।” (আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাহ)

উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় হযরত ইমাম-মুজতাহিদগণ উনারা বলেন যে-

ليلة العفو والكرم- ليلة التوبة والندم- ليلة الذكر والصلوة- ليلة الصدقات والخيرات- ليلة الدعاء والزيارة- ليلة الصلاة على النبى صلى الله عليه وسلم وليلة التلاواة القران الكريم.

অর্থ: “বরাতের রাত্র হলো ক্ষমা ও দয়ার রাত্র, তওবা ও লজ্জিত হওয়ার রাত্র, যিকির ও নামাযের রাত্র, ছদক্বা ও খয়রাতের রাত্র, দোয়া ও যিয়ারতের রাত্র, দুরূদ শরীফ তথা ছলাত-সালাম পাঠ করার রাত্র এবং পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াতের রাত্র।”

কাজেই, বরাতের রাতে যেহেতু ওয়াজ নছীহতের আদেশও করা হয়নি এবং নিষেধও করা হয়নি, তাই মুছল্লীদেরকে বরাতের ফযীলত ও ইবাদত বন্দেগীর নিয়ম-কানুন, তর্জ-তরীক্বা বাতিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত ওয়াজ-নছীহত করা জায়িয বটে। তাই বলে, সারা রাত্র ওয়াজ করে মুছল্লীদেরকে নামায, তিলাওয়াত, যিকির-আযকার ইত্যাদি ইবাদত বন্দেগীতে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে, ফযীলতপূর্ণ রাত্রির ফযীলত থেকে মাহরূম করা কখনোই শরীয়ত সম্মত নয়। বরং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার খিলাফ। শুধু তাই নয় এতে হক্কুল ইবাদ নষ্ট করা হয়। আর হক্কুল ইবাদ নষ্ট করা কবীরা গুণাহর অন্তর্ভুক্ত।

কারণ ওয়াজ বৎসরের যে কোন দিনেই করা যায়। কিন্তু বরাতের রাত্র বৎসরে মাত্র একবারই পাওয়া যায়। যদি কেউ পরবর্তী বৎসর হায়াতে থাকে তবেই সে বরাতের রাত্র পাবে। কাজেই এই মহামূল্যবান রাত্রকে শুধুমাত্র ওয়াজ করে ও ওয়াজ শুনে আমলহীন অবস্থায় সারারাত্র অতিবাহিত করা সম্মানিত সুন্নত উনার খিলাফ।

আর সম্মানিত সুন্নত উনার খিলাফ কাজ করে মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রেজামন্দী বা সন্তুষ্টি কস্মিনকালেও হাছিল করা সম্ভব নয়।

মূলকথা হলো, বরাতের রাত্র মূলতঃ ইবাদত-বন্দেগীর রাত্র, সারা রাত্র ওয়াজ করে ইবাদত বন্দেগীতে বিঘœ ঘটানো এবং মানুষদেরকে ইবাদত থেকে মাহরূম করা সর্ম্পূণই শরীয়তের খিলাফ। এ ধরণের কাজ থেকে বেঁচে থাকা সকলের জন্যেই দায়িত্ব ও কর্তব্য।

{দলীলসমূহ ঃ (১) আহকামুল কুরআন জাসসাস শরীফ (২) কুরতুবী শরীফ (৩) রুহুল মা’য়ানী শরীফ (৪) রুহুল বয়ান শরীফ (৫) ইহইয়াউ উলুমিদ্দীন শরীফ (৬) কিমিয়ায়ে সা’য়াদাত শরীফ (৭) ইবনে মাজাহ শরীফ (৮) মিশকাত শরীফ (৯) মাসাবাতা বিস সুন্নাহ শরীফ (১০) মিরকাত শরীফ (১১) আশয়াতুল লুময়াত শরীফ (১২) লুময়াত শরীফ (১৩) শরহুত ত্বীবী শরীফ (১৪) তালিকুছ ছবীহ (১৫) মুযাহিরে হক্ব (১৬) মাসাবাতা বিস সুন্নাহ শরীফ (১৭) আমালুল ইয়াউমি ওয়াল লাইলা ইত্যাদি।}

মুহম্মদ আব্দুল্লাহ

ভোলাহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

 

সুওয়াল: উশর কাকে বলে? উশরের বিধান সবিস্তারে জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব: ‘উশর’ শব্দটি আরবী আশরাতুন (দশ) শব্দ হতে উৎসরিত বা উৎকলিত হয়েছে। এর অভিধানগত বা শাব্দিক অর্থ হলো এক দশমাংশ। আর সম্মানিত শরীয়ত উনার পরিভাষায় কৃষিজাত পণ্য- ফল ও ফসলের যাকাতকে উশর বলে।

পবিত্র উশর সম্পর্কে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার দলীল:

পবিত্র উশর সম্পর্কে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার একাধিক পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে। মহান আল্লাহ পাক সুবহানাহূ ওয়া তায়ালা তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وانفقوا من طيبات ماكسبتم ومـما اخرجنا لكم من الارض.

অর্থ: তোমরা তোমাদের উপার্জিত হালাল সম্পদ হতে এবং যা আমি তোমাদের জন্য যমীন হতে উৎপন্ন করিয়েছে তা থেকে দান করো। (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২৬৭)

তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

واتوا حقه يوم حصاده

অর্থ: ফসল কাটার সময় তার হক (পবিত্র উশর) আদায় করো। (পবিত্র সূরা আনআম শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৪১)

পবিত্র উশর সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দলীল:

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে পবিত্র উশর সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে-

عن حضرت عبد الله بن عمر رضى الله تعالى عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم قال فيما سقت السماء والعيون او كان عشريا العشر وما سقى بالنضح نصف العشر.

অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যাতে অর্থাৎ যে যমীনকে আসমান অথবা প্রবাহমান কূপ পানি দান করে অথবা যা নালা দ্বারা সিক্ত হয়, তাতে পবিত্র উশর অর্থাৎ দশ ভাগের এক ভাগ আর যা সেচ দ্বারা সিক্ত হয়, তাতে অর্ধ উশর অর্থাৎ বিশ ভাগের এক ভাগ। (বুখারী শরীফ)

পবিত্র উশর সম্পর্কে সম্মানিত হানাফী মাযহাব উনার ফতওয়া:

সম্মানিত হানাফী মাযহাব উনার ইমাম হযরত ইমামে আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, যমীনে উৎপন্ন যাবতীয় ফসলেরই পবিত্র উশর অথবা নিছফু উশর দিতে হবে। চাই দীর্ঘস্থায়ী শস্য হোক, চাই ক্ষণস্থায়ী শস্য অর্থাৎ শাক-সবজি হোক। তিনি আরো বলেন, কম-বেশি যাই হোক পবিত্র উশর আদায় করতে হবে।

পবিত্র উশর আদায়ের সময়:

পবিত্র উশর আদায়ের নির্দিষ্ট কোন সময় নেই। যতোবারই ফসল উৎপন্ন হবে ততোবারই ফসলের পবিত্র উশর দিতে হবে।

পবিত্র উশর প্রদানকারী:

যে বা যারা ফসলের মালিক হবে সে বা তারাই পবিত্র উশর প্রদান করবে।

পবিত্র উশর ব্যয়ের খাতসমূহ:

যে খাতে বা স্থানে যাকাত ব্যয় করতে হয়, সে খাত বা স্থানেই পবিত্র উশর ব্যয় করতে হবে।

পবিত্র উশরের নিছাব:

সম্মানিত হানাফী মাযহাব মতে পবিত্র উশরের কোন নিছাব নেই। বিনা পরিশ্রমে উৎপাদিত ফসল ও ফল ফলাদির দশ ভাগের এক ভাগ বা তার মূল্য দান করে দিতে হবে। আর পরিশ্রম করে ফসল বা ফল ফলাদি ফলানো হলে তখন বিশ ভাগের এক ভাগ বা তার মূল্য দান করে দিতে হবে। ধান, চাল, গম ব্যতীত ফল-ফলাদির ১০টির ১টি বা ২০টির একটি দিতে হবে। আর যদি ৫টি হয় তবে একটার অর্ধেক দিতে হবে।

পবিত্র উশর আদায়ের হুকুম:

পবিত্র উশর আদায় করা পবিত্র যাকাত উনার মতই ফরয। কেউ যদি পবিত্র উশর আদায় না করে তাহলে সে ফরয অনাদায়ের গুনাহে গুনাহগার হবে।

কর ও খাজনা প্রদানকৃত যমীনের ফসলে পবিত্র উশর দেয়ার হুকুম:

কর ও খাজনা প্রদানকৃত যমীনের ফসলেও পবিত্র উশর আদায় করতে হবে। কেননা কর ও খাজনা দেয়া হয় সরকারি খাতে জমি জরিপ ও দেখাশুনা করার জন্য। অনেক জমিতে ফসল না হলেও খাজনা দিতে হয়। আবার পূর্ব যামানায় জমিতে খাজনাও দিতে হতো না। অতএব, কর ও খাজনা প্রদানকৃত যমীনের ফসলেও পবিত্র উশর আদায় করতে হবে। যা ফরযের অন্তর্ভুক্ত।

পবিত্র উশর আদায়ের উদাহরণ:

কারো যমীনে পরিশ্রমের মাধ্যমে ৫০ মণ ধান উৎপন্ন হলো সে নিছফু উশর অর্থাৎ বিশ ভাগের ১ ভাগ উশর প্রদান করবে, অর্থাৎ আড়াই মণ ধান দান করবে। আর যদি বিনা পরিশ্রমে উৎপন্ন হয় তাহলে উশর তথা দশভাগের একভাগ ধান দান করবে, অর্থাৎ ৫ মণ ধান পবিত্র উশর হিসেবে আদায় করবে।

পবিত্র উশর আদায়ের ফযীলত:

যাকাত দিলে যেমন সম্পদ বৃদ্ধি পায় এবং পবিত্র হয়, ঠিক তেমনি পবিত্র উশর আদায় করলেও ফসল, ফল-ফলাদি বৃদ্ধি পায় ও পবিত্র হয়। সাথে সাথে বিভিন্ন প্রকার দুর্যোগ যেমন- ঝড়-তুফান, বন্যা-খরা, পোকা-মাকড়ের আক্রমণ ইত্যাদি থেকেও ফসল ও ফল-ফলাদি হিফাযত হয়। সুবহানাল্লাহ!

পবিত্র হাদীছে কুদসী শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, মহান আল্লাহ পাক সুবহানাহূ ওয়া তায়ালা তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

انفق يا ابن ادم انفق عليك

অর্থ: হে আদম সন্তান! তুমি দান করো; আমি তোমাকে দান করবো। (বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ)

পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

فمن تطوع خيرا فهو خير له

অর্থ: যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় কোন নেক কাজ করে, তা তার জন্য কল্যাণ বা বরকতের কারণ হবে। (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ:  পবিত্র আয়াত শরীফ ১৮৪)

যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে পূর্ববর্তী (বণী ইসরাঈল) যামানার একটি ঘটনা বর্ণিত রয়েছে। তা হলো, “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, এক ব্যক্তি এক মাঠে অবস্থান করছিলেন। এমন সময় তিনি মেঘের মধ্যে এক শব্দ শুনতে পেলেন যে, অমুকের বাগানে পানি দাও। অতঃপর মেঘমালা সেই দিকে ধাবিত হলো এবং এক প্রস্তরময় স্থান পানি বর্ষণ করলো। তখন দেখা গেলো, সেখানকার নালাসমূহের এক নালা সমস্ত পানি নিজের মধ্যে ভর্তি  করে নিলো। তখন সে ব্যক্তি পানির অনুসরণ করলেন এবং দেখলেন যে, এক ব্যক্তি উনার বাগানে দাঁড়িয়ে সেচুনী দ্বারা পানি সেচতেছেন। তখন তিনি উনাকে জিজ্ঞেস করলেন, হে মহান আল্লাহ তায়ালা উনার বান্দা! আপনার নাম কি? তিনি বললেন, আমার নাম অমুক- যে নাম তিনি মেঘের মধ্যে শুনেছিলেন সে নাম। তখন এ ব্যক্তি বললেন, হে মহান আল্লাহ তায়ালা উনার বান্দা! আপনি কেন আমাকে আমার নাম জিজ্ঞাসা করলেন? তিনি বললেন, যেই মেঘের এই পানি সেই মেঘের মধ্যে আমি একটি শব্দ শুনেছি। আপনার নাম নিয়ে বলা হয়েছে যে, অমুকের বাগানে পানি দাও। (তিনি আরো বললেন, হে মহান আল্লাহ তায়ালা উনার বান্দা!) আপনি ফসলের দ্বারা কি কি কাজ করেন। তিনি উত্তরে বললেন, যখন আপনি জানতে চাইলেন তখন শুনুন, এই জমিতে যা ফলে তা আমি তিন ভাগ করি। এক ভাগ দান করি, এক ভাগ আমি ও আমার পরিবারের খাবারের জন্য রাখি এবং অপর ভাগ ফসল উৎপাদনের জন্য লাগিয়ে থাকি। (মুসলিম শরীফ, মিশকাতুল মাছাবীহ কিতাবুয যাকাত বাবুল ইনফাক্বা ওয়া কারাহিয়াতিল ইমসাক)

অতএব, প্রমাণিত হলো যে, কেউ যদি তার যমীন থেকে উৎপাদিত ফসল ও ফল-ফলাদির যথাযথ হক্ব আদায় করে তথা দান-ছদকা করে তাহলে মহান আল্লাহ পাক তিনি কুদরতীভাবেই তার ফসলের হিফাযত করবেন এবং তার ফসলে বরকত দান করবেন। তার ফসল কখনো নষ্ট হবে না। সুবহানাল্লাহ!

পবিত্র উশর আদায় না করার শাস্তি:

হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যাকে মহান আল্লাহ পাক সম্পদ বা ফসল দান করেছেন আর সে তার পবিত্র যাকাত অর্থাৎ পবিত্র উশর আদায় করেনি, কিয়ামতের দিন তার সম্পদকে টেকো মাথা সাপ স্বরূপ বানানো হবে, যার চক্ষুর উপর কিসমিসের দানার মতো দুটি কালো বিন্দু থাকবে। কিয়ামতের দিন সাপটাকে তার গলায় বেড়ি স্বরূপ পড়ানো হবে। অতঃপর উক্ত সাপ তার মুখের দু’দিকে কামড় দিতে থাকবে আর বলবে, আমি তোমার সঞ্চিত সম্পদ আমি তোমার মাল। (বুখারী শরীফ)

অতএব, প্রত্যেক ব্যক্তিরই উচিত যমীনে উৎপাদিত ফসলের পবিত্র উশর আদায়ের মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মতে মত ও পথে পথ হয়ে হাক্বীক্বী রিযামন্দী মুবারক হাছিল করা।

মুহম্মদ আব্দুল আহাদ

পলাশ, নরসিংদী।

 

সুওয়াল: পবিত্র রমযান শরীফ মাস আসলেই কেউ কেউ পেপার-পত্রিকায় ও প্রচার মাধ্যমে প্রচার করে থাকে যে, “রোযা অবস্থায় ইনজেকশন এমনকি স্যালাইন ইনজেকশন নিলেও রোযা ভঙ্গ হয়না।”

এখন আমার সুওয়াল হলো- তাদের উক্ত বক্তব্যের স্বপক্ষে নির্ভরযোগ্য কোন দলীল আছে কি?

জাওয়াব: না তাদের উক্ত বক্তব্যের স্বপক্ষে নির্ভরযোগ্য কোন দলীল নেই। যারা বলে থাকে যে, “রোযা অবস্থায় ইনজেকশন বা স্যালাইন ইনজেকশন নিলেও রোযা ভঙ্গ হয়না” তাদের এ বক্তব্য সম্পূর্ণই সম্মানিত শরীয়ত উনার খিলাফ। কেননা, তারা তাদের উক্ত বক্তব্যের স্বপক্ষে নির্ভরযোগ্য একটি দলীলও পেশ করতে পারবেনা। পক্ষান্তরে রোযা অবস্থায় যে কোন ইনজেকশন নিলে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে এর স্বপক্ষে ফিক্বাহ ও ফতওয়ার নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহের অসংখ্য দলীল বিদ্যমান রয়েছে। নি¤েœ কিছু দলীল উল্লেখ করা হলো, যেমন, “হিদায়া মা’য়াদ দিরায়া” নামক কিতাব উনার ১ম খ-ের ২২০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

ومن احتقن … افطر لقوله صلى الله عليه وسلم الفطر مما دخل

অর্থ: “এবং যদি কোন ব্যক্তি ইনজেকশন নেয় … তাহলে রোযা ভঙ্গ হবে। কারণ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “কিছু ভিতরে প্রবেশ করলে রোযা ভঙ্গ হবে।”

“বাহরুর রায়িক” নামক কিতাব উনার ২য় খ-ের ২৭৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

واذا احتقن … افطر لقوله عليه السلام الفطر مما دخل وليس مما خرج

অর্থ: “যদি কোন ব্যক্তি ইনজেকশন নেয় … তাহলে রোযা ভঙ্গ হবে। কারণ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, কিছু ভিতরে প্রবেশ করলে রোযা ভঙ্গ হবে এবং বের হলে রোযা ভঙ্গ হবেনা।”

“ফতওয়ায়ে আলমগীরী” নামক কিতাব উনার ১ম খ-ের ২০৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

ومن احتقن .. افطر

অর্থ: “এবং যদি কোন ব্যক্তি ইনজেকশন নেয় … তাহলে রোযা অবশ্যই ভঙ্গ হবে।” অনুরূপ “ফতওয়ায়ে শামীতে”ও উল্লেখ আছে।”

অতএব, উপরোক্ত নির্ভরযোগ্য দলীলভিত্তিক আলোচনা থেকে প্রমাণিত হলো যে, ছহীহ ও বিশুদ্ধ এবং গ্রহনযোগ্য ফতওয়া হলো, ইনজেকশন, স্যালাইন ইত্যাদি নিলে রোযা ভঙ্গ হবে। এর বিপরীত ফতওয়া যারা দেয় তাদের ফতওয়া হলো অজ্ঞতা প্রসূত,  দলীলবিহীন ও গুমরাহীমূলক যা থেকে বেঁচে থাকা প্রত্যেক মু’মিন-মুসলমানগণের জন্য ফরয।

{বিঃ দ্রঃ এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ২১, ২২, ৪৬ ও ৪৭তম সংখ্যা পাঠ করুন।}

{দলীলসমূহঃ (১) বুখারী, (২) মুসলিম, (৩) মিশকাত, (৪) ফতহুল বারী, (৫) উমদাতুল ক্বারী, (৬) ইরশাদুছ্ সারী, (৭) শরহে নববী, (৮) ফতহুল মুলহিম, (৯) মুফহিম, (১০) মিরকাত, (১১) আশয়াতুল লুময়াত, (১২) লুময়াত, (১৩) শরহুত্ ত্বীবী, (১৪) তালিক্বুছ্ ছবীহ্, (১৫) মুযাহিরে হক্ব, (১৬) মাবছুত, (১৭) মাবছুত্ লি সারাখসী, (১৮) ফতহুল ক্বাদীর, (১৯) আলমগীরী, (২০) বাহরুর রায়িক্ব, (২১) ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া, (২২) হিদায়া মায়াদ দিরায়া, (২৩) শামী, (২৪) বাদায়িউছ্ ছানায়ে, (২৫) খুলাছুতল ফতওয়া ইত্যাদি।

 

মুহম্মদ আব্দুর রহিম

মাদারটেক, ঢাকা।

 

সুওয়াল:  আমরা দেওবন্দীদের অনেক কিতাবেই দেখতে পাই যে, তারা ফতওয়া দিয়েছে- “পবিত্র তারাবীহ উনার নামাযে বা অন্যান্য সময়ে পবিত্র কুরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা হারাম।”

এখন আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে যে, দেওবন্দীদের উপরোক্ত ফতওয়া কতটুকু গ্রহণযোগ্য, দয়া করে বিস্তারিত জানাবেন।

জাওয়াব: দেওবন্দীদের উপরোক্ত ফতওয়া মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। বরং পবিত্র কুরআন শরীফ খতম বা তিলাওয়াত করে উজরত গ্রহণ করা সম্পর্কিত দেওবন্দীদের উক্ত ফতওয়া অসম্পূর্ণ ও অশুদ্ধ এবং সম্মানিত শরীয়ত উনার খিলাফ। এ সমস্ত দলীলবিহীন গুমরাহীমূলক ফতওয়া থেকে বেঁচে থাকা প্রত্যেক মু’মিন-মুসলমানগণের জন্য ফরয। কারণ উজরত গ্রহণ করা শর্ত সাপেক্ষে জায়িয, আবার শর্ত সাপেক্ষে নাজায়িয। অর্থাৎ সময় অথবা স্থান নির্ধারণ করে দেয়া হলে ইমামতী, শিক্ষকতা, হজ্জের মাসয়ালা-মাসায়িল ও পবিত্র কুরআন শরীফ শিক্ষা দিয়ে খতম বা তিলাওয়াত করে উজরত গ্রহণ করা জায়িয। আর সময় অথবা স্থান নির্ধারণ করা না হলে উজরত গ্রহণ করা জায়িয নেই। এর উপরই উলামায়ে মুতাআখ্খিরীন উনাদের ফতওয়া এবং ইহাই শরঈ দলীলভিত্তিক ছহীহ-শুদ্ধ ও গ্রহনযোগ্য এবং সর্বজনমান্য ফতওয়া।

যেমন, ফিক্বাহর বিখ্যাত কিতাব “বাহরুর রায়িকে” উল্লেখ আছে-

ان الـمفتى به جواز الاخذ على القرائة.

অর্থ: “নিশ্চয়ই পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করে উজরত গ্রহণ করা জায়িয হওয়া ফতওয়াগ্রাহ্য মত।”

বিঃ দ্রঃ- এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ২৩ ও ২৪তম সংখ্যা পাঠ করুন। সেখানে ৫১টি নির্ভরযোগ্য কিতাবের দলীল পেশ করা হয়েছে।

{দলীলসমূহঃ-  (১) বাহরুর রায়িক, (২) আলমগীরী, (৩) তাতারখানিয়া, (৪) ফতওয়ায়ে আযীযী, (৫) দুররুল মুখতার, (৬) আশবাহু ওয়ান্ নাজায়ির, (৭) ফতওয়ায়ে আলী আফেন্দী, (৮) জাওহারাতুন নাইয়্যারাহ, (৯) কাশফুল গুম্মাহ, (১০) ফতওয়ায়ে ফয়জী, (১১) তাফসীরে আযীযী, (১২) তাফসীরে ইক্লীল ইত্যাদি।}

 

মুহম্মদ আবুল হায়াত

কক্সবাজার।

সুওয়াল: আমরা জানি যে, পবিত্র তারাবীহ উনার নামায ২০ রাকায়াত এবং  তা আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। অথচ কেউ কেউ বলে, ৮ রাকায়াত পড়াই সুন্নত। আবার কেউ কেউ বলে, ১২ রাকায়াত পড়াই সুন্নত।

এখন দয়া করে জানাবেন কোন মতটি ছহীহ?

জাওয়াব: সম্মানিত আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের ফতওয়া মুতাবিক পবিত্র তারাবীহ উনার নামায ২০ রাকায়াত পড়াই সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। অতএব, কেউ যদি ২০ রাকায়াত থেকে এক রাকায়াতও কম পড়ে, তবে তার সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ তরক করার গুণাহ হবে। অর্থাৎ পবিত্র তারাবীহ উনার নামায ২০ রাকায়াতই পড়তে হবে এবং এর উপরই ইজমা হয়েছে।

যারা পবিত্র তারাবীহ উনার নামায ৮ রাকায়াত বলে থাকে, তারা বুখারী শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত একখানা পবিত্র হাদীছ শরীফ দলীলস্বরূপ পেশ করে থাকে। যাতে বর্ণিত আছে যে, “মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র রমযান শরীফ মাসে এবং পবিত্র রমযান শরীফ ব্যতীত অন্যান্য মাসে (বিতরসহ) ১১ রাকায়াত নামায আদায় করতেন।”

মূলতঃ এটি হচ্ছে পবিত্র তাহাজ্জুদ নামায উনার বর্ণনা, পবিত্র তারাবীহ উনার নামাযের বর্ণনা নয়। কারণ পবিত্র তারাবীহ উনার নামায শুধু পবিত্র রমযান শরীফ মাসের জন্যই নির্দিষ্ট। পবিত্র রমযান শরীফ ব্যতীত অন্যান্য মাসে পবিত্র তারাবীহ উনার নামায নেই। আর তাহাজ্জুদ নামায সারা বৎসরই পড়তে হয়।

এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার ২৫, ২৬, ২৭, ২৮, ২৯ ও ৩০তম সংখ্যা পাঠ করুন। সেখানে ৩০৪ খানা অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য দলীলের ভিত্তিতে ছাবিত করা হয়েছে যে, তারাবীহর নামায ২০ রাকায়াত পড়াই সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ এবং ইহাই দলীলভিত্তিক ফতওয়া, যা সর্বজনমান্য, গ্রহণযোগ্য ও ছহীহ ফতওয়া।

{দলীলসমূহঃ  (১) মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বা, (২) সুনানুল কুবরা লিল বাইহাক্বী, (৩) আল কবীর লিত্ তিবরানী, (৪) আল জাওহারুন্নাকী, (৫) নাইনুল আওতার, (৬) ইরশাদুস্ সারী, (৭) মিরকাত, আওজাজুল মাসালিক, (৮) মা’আরিফে মাদানীয়া, (৯) ফতহুল বারী, (১০) উমদাতুল ক্বারী, (১১) বজলুল মাযহুদ, (১২) ফিক্হুস্ সুনান ওয়াল আছার, (১৩) নছবুর রাইয়াহ, (১৪) আইনী শরহে বুখারী, (১৫) আত্ তা’লীকুল হাছানাহ, (১৬) মুজাহিরে হক্ব, (১৭) আশয়াতুল লুময়াত, (১৮) ইলাউস্ সুনান, (১৯) ফতওয়ায়ে আলমগীরী, (২০) খুলাসাতুল ফতওয়া, (২১) মজমুয়াতুল ফতওয়া, (২২) বাহ্রুর রায়িক, (২৩) মারাকিউল ফালাহ্, (২৪) ইহ্ইয়াউ উলূমিদ্দীন, (২৫) গুন্ইয়াতুত্ ত্বালেবীন ইত্যাদি}

 

মুহম্মদ মুঈনুল ইসলাম

কাজলা, ঢাকা।

সুওয়াল: অনেকে বলে থাকে ‘খত্মে তারাবীহ পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ’ তাদের এ বক্তব্য কতটুকু সঠিক?

জাওয়াব: ‘যারা বলে, ‘খত্মে তারাবীহ পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ’ তাদের সে বক্তব্য মোটেও শুদ্ধ নয়। কারণ, খত্মে তারাবীহ সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ হলে প্রত্যেক পুরুষ ও মহিলাকে তা পড়তে হবে। অন্যথায় সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ তরকের গুনাহে গুনাহ্গার হবে।

আর খত্মে তারাবীহ পড়তে হলে প্রত্যেককে হাফিযে কুরআন হতে হবে। চাই জামায়াতে পড়ুক অথবা একা পড়ুক। অথচ সম্মানিত শরীয়ত উনার ফতওয়া হলো হাফিয হওয়া ফরযে কিফায়া।

আর পবিত্র তারাবীহ উনার জামায়াত যেহেতু সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ কিফায়া সেহেতু কিছু লোক একাও পবিত্র ছলাতুত তারাবীহ পড়তে পারে। এছাড়া অসুস্থ ব্যক্তির জন্য একা পড়ার হুকুমই রয়েছে। আর মহিলাদের জন্য তো তারাবীহ্সহ সকল প্রকার নামাযের জামায়াতে যাওয়া হারাম ও কুফরী।

কাজেই, যারা একা নামায পড়বে, তারা যদি হাফিযে কুরআন না হয়, তবে তারা খত্মে তারাবীহ কি করে পড়বে?

যে ব্যক্তি হাফিয নয় সে খত্মে পবিত্র ছলাতুত তারাবীহ উনার জামায়াতে নামায পড়া শুরু করলো হঠাৎ কোন কারণবশতঃ সে ২ বা ৪ রাকায়াত বা তার চেয়ে কম-বেশী রাকায়াত পড়তে পারলোনা। এখন সে যে কয় রাকায়াত পড়তে পারলোনা তা কিভাবে পড়বে?

খত্মে তারাবীহ যদি সুন্নতে মুয়াক্কাদা হয়, তাহলে পৃথিবীর প্রতিটি মসজিদে তারাবীহ্ নামাযে অবশ্যই পবিত্র কুরআন শরীফ খতম করতে হবে। অথচ পৃথিবীতে এমন অনেক স্থান, গ্রাম-গঞ্জ রয়েছে, যেখানে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার হাফিয পাওয়া অসম্ভব, সেখানে কি করে পবিত্র কুরআন শরীফ খতম করা হবে?

সঙ্গতকারণে বিশ্বখ্যাত ফতওয়ার কিতাবসমূহে ফতওয়া দেয়া হয়েছে যে, খত্মে তারাবীহ ও সূরা তারাবীহ কোনটিই সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ নয়। বরং উভয়টিই সুন্নতে মুয়াক্কাদা কিফায়া। সুবহানাল্লাহ!

অএতব, কেউ ইচ্ছা করলে খতম তারাবীহ পড়তে পারে। আবার কেউ ইচ্ছা করলে সূরা তারাবীহ পড়তে পারে।

{দলীলসমূহ : (১) বাহরুর রায়িক, (২) হিদায়া, (৩) আলমগীরী, (৪) ফতহুল ক্বাদীর, (৫) ইনায়া  ইত্যাদি।}

(এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ ১০০তম সংখ্যা পাঠ করুন।)

 

মুহম্মদ মুশাররফ হুসাইন

দুবাই

 

সুওয়াল: মহিলাদের জন্য তারাবীহ নামায জামায়াতে পড়ার হুকুম কি?

জাওয়াব: সম্মানিত আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের আম ফতওয়া হলো মহিলাদের পাঁচ ওয়াক্ত, জুমুয়া, তারাবীহ ও ঈদের নামাযসহ সকল নামাযের জামায়াতের জন্য মসজিদ, ঈদগাহ বা যে কোন স্থানে যাওয়া হারাম ও কুফরী। (দলীলসমূহ: বাহরুর রায়েক, আলমগীরী, ফতহুল কাদীর, হেদায়া, মাবসূত, মারাক্বিউল ফালাহ)

(এ সম্পর্কে বিস্তারিত ফতওয়া জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ১১, ১৪, ১৯, ২২, ২৯, ৩৭, ৪৪, ৪৭, ৪৮, ৫৫, ৬৫, ৭১, ৮২, ১০১ ও ১০২তম সংখ্যাগুলো পড়–ন যাতে বিশ্বখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহ হতে প্রায় ১০০টি দলীল-আদিল্লাহ পেশ করা হয়েছে।

 

মুহম্মদ আলী

পঞ্চগড়।

সুওয়াল: প্রচলিত ছয় উছূল ভিত্তিক তাবলীগ যারা করবে তাদেরই হাশর-নশর নবীদের সাথে হবে। আর যারা করবে না তাদের হাশর-নশর নবীদের সাথে হবে না। একথা কতটুকু শরীয়তসম্মত?

জাওয়াব: সুওয়ালে বর্ণিত বক্তব্য সম্পূর্ণ কুফরীমূলক। কারণ প্রচলিত ছয় উছূল ভিত্তিক তাবলীগওয়ালারা তারা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের কোন দলীলের দ্বারা প্রমাণ করতে পারবেনা যে, প্রচলিত ছয় উছূল ভিত্তিক তাবলীগ করলে তাদের হাশর-নশর হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সাথে হবে। কারণ তাদের প্রচলিত ছয় উছূল ভিত্তিক তাবলীগ জামাতের লোকদের পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের বিরোধী আক্বীদা ও আমল রয়েছে। শুধু তাই নয় তারা যে ছয় উছূলী তাবলীগ করছে, এবং যে তাবলীগ করার কারণে তারা বলছে যে, যারা সে তাবলীগ করবে তাদের হাশর-নশর হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের সাথে হবে, তাদের কথিত সে তাবলীগও পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের খিলাফ বা বিরোধী। তাদের কৃত তাবলীগের সাথে হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের তাবলীগের কোনরূপ মিল নেই। কথিত ছয় উছূলী তাবলীগের মধ্যে অসৎ বা অন্যায় কাজে বাধা প্রদান করতে হবে এ বিষয়টি আদৌ নেই।

অথচ হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের তাবলীগী কার্যক্রমের মধ্যে অসৎ বা অন্যায় কাজে বাধা প্রদান হচ্ছে একটি অন্যতম বিষয়।

আর প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ জামাতের অসংখ্য কুফরী আক্বীদার মধ্যে একটি হচ্ছে হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনারাও ভুল-ত্রুটিযুক্ত। নাউযুবিল্লাহ! যেমন তারা বলে থাকে-

১। হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনি গন্ধম খেয়ে ভুল করেছিলেন। নাউযুবিল্লাহ!

২। হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম তিনি দাওয়াতের কাজ না করার কারণে মহান আল্লাহ পাক উনার গযবে পড়েছিলেন। নাউযুবিল্লাহ!

৩। এবং হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালাম তিনি গাছের নিকট আশ্রয় চেয়েছিলেন ইত্যাদি। নাউযুবিল্লাহ!

উক্ত আক্বীদা বা বক্তব্যগুলো প্রত্যেকটি হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের শান মুবারকের খিলাফ এবং আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াত উনাদের আক্বীদা বিরোধী। কেননা আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়াত উনাদের আক্বীদা হচ্ছে- হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা ওহী মুবারক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। উনার মা’ছূম বা নিষ্পাপ, উনারা যাবতীয় ভুল-ত্রুটি, গুনাহখতা থেকে পবিত্র।

অনুরূপভাবে ছয় উছূলী তাবলীগীদের আরেকটি কুফরী আক্বীদা হলো- অধিকাংশ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা মূর্খ ছিলেন। নাউযুবিল্লাহ! এটি আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়াত উনাদের আক্বীদা বিরোধী। স্মরণযোগ্য যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা যদি মুর্খ হন, যমীনের বুকে তাহলে আলিম কারা? মূলতঃ হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের শান-মান বিরোধী যাবতীয় বক্তব্য ও আক্বীদা সুস্পষ্ট কুফরী যা কাফির ও জাহান্নামী হওয়ার জন্য যথেষ্ট।

আসলে প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ হচ্ছে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ৭২টি বাতিল ও জাহান্নামী ফিরক্বার অনুসারী একটি দল। যাদের আক্বীদা আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়াত উনাদের খিলাফ এবং তাদের আমলও পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের খিলাফ। যেমন তারা হারাম ও কুফরী দল-মত করে, ছবি তুলে থাকে, ভিডিও করে থাকে, বেপর্দা হয়ে থাকে ইত্যাদি।

কাজেই, যাদের আক্বীদা-আমল পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের খিলাফ বা বিরোধী, যাদের আক্বীদা ও আমলের মধ্যে কুফরী ও হারাম রয়েছে তাদের হাশর-নশর কস্মিনকালেও হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের সাথে হতে পারে না।

মূলতঃ তাদের উক্ত কথা সম্পূর্ণরূপে দলীলবিহীন, মনগড়া, মিথ্যা ও ধোকাপূর্ণ।

প্রকৃত পক্ষে তারা মানুষকে ধোঁকা দেয়ার জন্য এরূপ কথা বলে থাকে।

ধোকা দেয়া সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

من غش فليس منا.

অর্থ : “যে ধোঁকা দেয়, সে আমার উম্মত নয়।”

আর ধোঁকা দেয়ার লক্ষ্যে মিথ্যা বলে থাকে। মিথ্যাবাদীদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

لعنة الله على الكاذبين.

অর্থ : “মিথ্যাবাদীদের প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার লা’নত।” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৬১)

আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

انما الكذب لكل الذنوب ام.

অর্থ : “নিশ্চয়ই মিথ্যা সমস্ত গুণাহর মূল।”

অতএব, প্রচলিত তাবলীগওয়ালারা যদি বলে, একমাত্র প্রচলীত তাবলীগ করলেই ঈমান মজবুত হবে, তাহলে তাদের প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার লা’নত বর্ষিত হয়ে তারা মাল’উন হবে এবং তারা ধোঁকাবাজ হিসেবে সাব্যস্ত হবে।

উল্লেখ্য, কোন হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা ছয় উছূল ভিত্তিক তাবলীগ করেননি। কারণ প্রচলিত ছয় উছূল ভিত্তিক তাবলীগ শুরু হয়েছে ১৩৪৫ হিজরী সন থেকে। এর পূর্বে প্রচলিত তাবলীগের কোন অস্তিত্বই ছিল না।

তাহলে প্রচলিত ছয় উছূল ভিত্তিক তাবলীগ কি করে গ্রহণযোগ্য হতে পারে এবং এ কথাও কি করে বলা যেতে পারে যে, প্রচলিত ছয় উসূল ভিত্তিক তাবলীগ করলে হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের সাথে হাশর-নশর হবে?

আর প্রচলিত ছয় উছূল ভিত্তিক তাবলীগ না করলে তাদের হাশর-নশর হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের সাথে হবে না, তাহলে বলতে হয়: প্রচলিত ছয় উছূল ভিত্তিক তাবলীগের প্রতিষ্ঠাতা ইলিয়াছ মেওয়াতীর বাপ-দাদা, পূর্ব পুরুষ ও তার পীর ছাহিব খলীল আহমদ সাহরানপুরী এবং তাদের মুরুব্বী কাছেম নানুতুবী, ইয়াকুব নানুতুবী, রশীদ আহমদ গাংগুহী, আশরাফ আলী থানবী গং তারা কেউই প্রচলিত ছয় উছূল ভিত্তিক তাবলীগ করেনি। তাহলে এদের কারও হাশর-নশর হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের সাথে হবে না।

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ