সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সংখ্যা: ২৯০তম সংখ্যা | বিভাগ:

সুওয়াল-জাওয়াব, মুহম্মদ আবূ খুবাইব,, শহীদবাগ, ঢাকা।

সুওয়াল: কিছু কিছু লোক বলে থাকে, ইসলামে নির্দিষ্ট কোন লেবাস বা পোশাক নেই। তাদের কথাটা কতটুকু ঠিক? দলীলসহ জানিয়ে বিভ্রান্তি দূর করবেন।

জাওয়াব: পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে সুন্নতী লিবাস বলতে কোন লেবাস বা পোশাক নেই অথবা পবিত্র ক্বুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে নির্দিষ্ট কোন পোশাকের বর্ণনা নেই একথা বলা কাট্টা কুফরী। যিনি খলিক্ব, যিনি মালিক, যিনি রব মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার পবিত্র কিতাব কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে সুন্নতী লেবাস-সহ মানব জীবনে যা কিছু প্রয়োজন সকল বিষয়ের সুষ্পষ্ট সমাধান দিয়েছেন। কোন বিষয়ের সমাধান উল্লেখ করা তিনি বাকী রাখেননি।

এ প্রসঙ্গে যিনি খলিক্ব, যিনি মালিক, যিনি রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

مَا فَـرَّطْنَا فِي الْكِتَابِ مِنْ شَيْءٍ

অর্থ: আমি মহাসম্মানিত মহাপবিত্র কিতাব পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে কোন কিছুই উল্লেখ করা বাকী রাখিনি। (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা আনয়া’ম শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ-৩৮)

যিনি খলিক্ব, যিনি মালিক, যিনি রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

وَنَـزَّلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ تِبْـيَانًا لِّكُلِّ شَيْءٍ

অর্থ: আমি আপনার প্রতি যে মহাসম্মানিত মহাপবিত্র কিতাব (পবিত্র কুরআন শরীফ) অবতীর্ণ করেছি উনার মধ্যে ছোট-বড়, খুটি-নাটি সকল কিছুই বর্ণনা করেছি। (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা নাহল শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ-৮৯)

যিনি খলিক্ব, যিনি মালিক, যিনি রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

كُلٌّ فِيْ كِتَابٍ مُّبِيْنٍ

অর্থ: মহাসম্মানিত মহাপবিত্র কিতাব (পবিত্র কুরআন শরীফ) উনার মধ্যে সুষ্পষ্টভাবে সকল কিছুই বর্ণনা করা হয়েছে। (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা হুদ শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ-৬)

তারপরও যারা বলে, পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে নির্দিষ্ট কোন পোশাকের বর্ণনা নেই। পবিত্র সুন্নতী লিবাস বলতে কোন লিবাস নেই। তারা পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাকে অপরিপূর্ণ বা অসম্পূর্ণ দ্বীন হিসেবে আখ্যায়িত করার কারণে এবং উল্লেখিত পবিত্র আয়াত শরীফ সমূহ অস্বীকার করার কারণে নিঃসন্দেহে মুরতাদ, কাফির ও মুনাফিকের অন্তর্ভুক্ত।

স্মরণীয় যে, পবিত্র সুন্নতী লিবাস মুবারকই হলো প্রতিটি মুসলমান পুরুষ-মহিলা উনাদের অন্যতম প্রাথমিক শি’য়ার বা বাহ্যিক পরিচয়। যিনি খ্বালিক, যিনি মালিক, যিনি রব, মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

ذٰلِكَ مِنْ اٰيَاتِ اللهِ لَعَلَّهُمْ يَذَّكَّرُوْنَ ـ

অর্থ: উহা (পবিত্র সুন্নতী পোশাক) মহান আল্লাহ পাক উনার নিদর্শন মুবারকের অন্তর্ভুক্ত। যাতে তারা নির্দেশ মেনে চলতে পারে। (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা আ’রাফ শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ-২৬)

আরবী প্রবাদে বলা হয়ে থাকে-

اَلنَّاسُ يُعْرَفُـوْنَ بِاللِّبَاسِ

অর্থ: পোশাকে মানুষের পরিচয়।

অর্থাৎ সম্মানিত সুন্নতী পোশাক-পরিচ্ছদ উনার মাধ্যমেই সম্মানিত মুসলমান আর ইহুদী-খৃষ্টানসহ অন্যান্য কাফির মুশরিকদের মধ্যে পার্থক্য নির্ণীত হয়।

পবিত্র সুন্নতী লিবাস মুবারক পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার অন্যতম একটি অপরিহার্য বিষয়। পোশাক ব্যতিত মানুষের যেমন বাহ্যিক পরিচয় প্রমাণিত হয়না, তেমনি পবিত্র সুন্নতী পোশাক ব্যতিত মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাবীব ও মাহবূব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মত বলেও প্রমাণিত হয়না।

মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللّٰهُ تَـعَالٰى عَنْهُ قَالَ قالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَـهُوَ مِنْـهُمْ

অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়া’লা আনহুমা উনার থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন- মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি কোন বিজাতীদের সাদৃশ্যতা অবলম্বন করলো, সে তাদের দলেরই অন্তর্ভুক্ত। (আবূ দাউদ শরীফ, আহমদ শরীফ)

উল্লেখিত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যা গ্রন্থে বলা হয়েছে-

قَـوْلُهٗ مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَـهُوَ مِنْـهُمْ  يَعْنِيْ مَنْ شَبَّهَ نَـفْسَهٗ بِالْكُفَّارِ فِي اللِّبَاسِ وَغَيْرِهٖ مِنَ الْمُحَرَّمَاتِ فَإِنْ اِعْتَـقَدَ تَـحْلِيْـلَهٗ فَـهُوَ كَافِرٌ وَإِنْ اِعْتَـقَدَ تَحْرِيْمَهٗ فَـقَدْ أَثِمَ

অর্থ: উল্লেখিত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার অর্থ হলো: যে ব্যক্তি কোন বিজাতীয় সম্প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্যতা রাখলো, সে তাদের দলের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে। অর্থাৎ যে ব্যক্তি নিজেকে কোন কাফিরদের সাথে পোশাক পরিধান করার ক্ষেত্রে বা অন্য কোন হারাম কাজের ক্ষেত্রে সাদৃশ্য রাখলো। সে যদি তাদের পোশাক বা অন্য হারাম কাজগুলি বৈধ বলে, তাহলে সে কাফির হবে। আর যদি হারাম জেনে করে থাকে, তাহলে সে গুনাহগার বা ফাসিক হবে। (আল-মাফাতীহু ফী শারহিল মাছাবীহ ৫/১৮)

পবিত্র সুন্নতী লিবাস মুবারক উনার বিষয়ে যিনি খালিক, যিনি মালিক, যিনি রব, মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

يَا بَنِيْۤ اٰدَمَ قَدْ أَنْـزَلْنَا عَلَيْكُمْ لِبَاسًا يُّـوَارِيْ سَوْاٰتِكُمْ وَرِيْشًا. وَلِبَاسُ التَّـقْوٰى ذٰلِكَ خَيْـرٌ .ذٰلِكَ مِنْ اٰيَاتِ اللهِ لَعَلَّهُمْ يَذَّكَّرُوْنَ ـ يَا بَنِيْۤ اٰدَمَ لَا يَـفْتِنَـنَّكُمُ الشَّيْطَانُ كَمَا أَخْرَجَ أَبَـوَيْكُمْ مِّنَ الْـجَنَّةِ يَـنْزِعُ عَنْـهُمَا لِبَاسَهُمَا لِيُرِيَـهُمَا سَوْاٰتِهِمَا إِنَّهٗ يَـرَاكُمْ هُوَ وَقَبِيْلُهٗ مِنْ حَيْثُ لَا تَـرَوْنَـهُمْ. إِنَّا جَعَلْنَا الشَّيَاطِيْنَ أَوْلِيَآءَ لِلَّذِيْنَ لَا يُـؤْمِنُـوْنَ. وَإِذَا فَـعَلُوْا فَاحِشَةً قَالُوْا وَجَدْنَا عَلَيْهَاۤ اٰبَآءَنَا وَاللّٰهُ أَمَرَنَا بِهَا قُلْ إِنَّ اللهَ لَا يَأْمُرُ بِالْفَحْشَآءِ أَتَـقُوْلُوْنَ عَلَى اللهِ مَا لَا تَـعْلَمُوْنَ

অর্থ: হে বনী-আদম অথার্ৎ হে মানুষেরা! আমি তোমাদের জন্যে পোশাক অবর্তীণ করেছি। যার দ্বারা তোমরা তোমাদের সতরকে আবৃত করবে এবং সৌন্দর্য মন্ডিত হবে। আর সম্মানিত তাক্বওয়া বা পরহেযগারীর পোশাকই সর্বোত্তম পোশাক মুবারক। উহা মহান আল্লাহ পাক উনার নিদর্শন মুবারকের অন্তর্ভুক্ত। যাতে তারা নির্দেশ মেনে চলতে পারে। হে বনী-আদম! শয়তান যেন তোমাদেরকে (সুন্নতী পোশাক মুবারক উনার ব্যাপারে) বিভ্রান্ত বা সন্দেহে নিপতিত না করতে পারে, সে ব্যাপারে তোমরা সাবধান ও সতর্ক থাকো। তোমরা যেনে রাখো মহান আল্লাহ পাক তিনি যখন তোমাদের পিতা মাতা উভয়কে জান্নাত থেকে জমিনে তাশরীফ মুবারক আনার ব্যবস্থা করেন তখন উনারা জান্নাতী লেবাছ রেখে অন্য লেবাছ পরিধান করেন যাতে উনাদের ছতর অনাবৃত না হয়। অর্থাৎ উনারা যেন উনাদের ছতর না দেখেন। নিশ্চয়ই শয়তান ও তার দলবল তোমাদের দিকে কুদৃষ্টিতে দেখে থাকে, কিন্তু তোমরা তাদেরকে দেখতে পাও না। নিশ্চয়ই যারা (সম্মানিত সুন্নতী লিবাস মুবারক) অস্বীকার করে, আমি শয়তানদেরকে তাদের বন্ধু করে দিয়েছি (অর্থাৎ তারা শয়তানের দলভুক্ত)। আর যখন তারা মন্দ কাজ করে (বিদয়তী পোশাক পরিধান করে, পবিত্র সুন্নতী পোশাক বর্জন করে) তখন তারা বলে আমরা আমাদের বাপ-দাদা, আকাবীরদেরকে এমন পোশাক পরিধান করতেই দেখেছি। এবং মহান আল্লাহ পাক তিনিও আমাদেরকে এই পোশাক পরিধান করতেই নির্দেশ দিয়েছেন। (নাঊযুবিল্লাহ)। আপনি তাদেরকে বলে দিন যে, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি কখনও কাউকে মন্দকাজের আদেশ দেন না। অবশ্যই তারা মহান আল্লাহ পাক উনার ব্যাপারে মিথ্যা কথা বলেছে যা তারা নিজেরাও জানেনা অর্থাৎ তারা পবিত্র সুন্নতী পোশাক বর্জন করে, মুরুব্বীদের অনুসরণ করে সঠিক পথে রয়েছে বলে মনে করে থাকে।(নাঊযুবিল্লাহ) (সম্মানিত ও  পবিত্র সূরা আ’রাফ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ- ২৬,২৭,২৮)

উপরে উল্লেখিত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ‘সতরকে আবৃত করার পোশাক মুবারক অর্থাৎ ফরয পরিমাণ পোশাক অতঃপর সৌন্দর্য মন্ডিত বা তাক্বওয়ার পোশাক মুবারক অর্থাৎ সুন্নতী পোশাক মুবারকের বর্ণনা করা হয়েছে।

পবিত্র সুন্নতী লিবাস মুবারকই পবিত্র জান্নাতী লিবাস মুবারক, যা হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার থেকে ধারাবাহিকভাবে চলে এসেছে।

মহান আল্লাহ পাক তিনি কার নিকট পোশাক অবতীর্ণ করেছেন? যিনি সমস্ত সৃষ্টির মূল, যাঁর মুহব্বতেই সকল কিছুই অস্তিত্বে এসেছে, সকল হযরত নবী-রাসূল আলাইহিমুস সালাম উনারাসহ সমস্ত সৃষ্টির যিনি মহাসম্মানিত মহাপবিত্র ঈমান ও মুবারক ক্বিবলা, যার ছানা-ছিফত মুবারক হলো সমস্ত হযরত নবী-রাসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত নুবুওওয়াত ও রিসালাত উনার মহাসম্মানিত মহাপবিত্র ভিত্তি মুবারক। সেই মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত শরীয়ত মুবারক উনার থেকেই সমস্ত হযরত নবীÑরাসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে সম্মানিত শরীয়ত দিয়ে নবী ও রাসূল হিসেবে দুনিয়ার যমীনে প্রেরণ করা হয়েছে। সেই সম্মানিত শরীয়ত উনার একটি বিষয় হলো সম্মানিত সুন্নতী লিবাস বা পোশাক মুবারক। যা মহান আল্লাহ পাক তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানার্থেই হযরত ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার থেকে শুরু করে সকল হযরত নবী-রাসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে হাদিয়া মুবারক করেছেন। সেজন্য হযরত আবূল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম থেকে শুরু করে আখেরী রাসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পর্যন্ত সকল হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা ও উনাদের উম্মতগণ মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুসরণেই সুন্নতী পোশাক মুবারক পরিধান করেছেন।

মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানার্থেই পবিত্র সুন্নতী জান্নাতী ক্বামিছ তথা লিবাস মুবারক সর্বপ্রথম পবিত্র জান্নাত মুবারকে হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার নিকট অবতীর্ণ করেছিলেন। তারপর উক্ত পবিত্র জান্নাতী পোশাক মুবারক সমস্ত হযরত নবী-রাসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের মাধ্যমে আজ অবধি চলে এসেছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত উক্ত সুন্নতী লিবাস মুবারক দুনিয়ার মধ্যে জারী থাকবে।

হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম এবং হযরত উম্মুল বাশার আলাইহাস সালাম উনাদের পবিত্র জান্নাতী পোশাক মুবারক ছিল পবিত্র নূর মুবারকের। সুবহানাল্লাহ!

এ সম্পর্কে কিতাবে বর্ণিত রয়েছে-

كَانَ لِبَاسُ حَضْرَتْ اٰدَمَ وَ حَضْرَتْ حَوَّاءَ عَلَيْهِمَا السَّلَامُ نُـوْرًا

অর্থ: হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম এবং হযরত উম্মুল বাশার আলাইহাস সালাম উনাদের পবিত্র জান্নাতী পোশাক মুবারক ছিল সম্মানিত নূর মুবারক উনার। (তাফসীরে খাযিন ২/১৯২, তাফসীরে ত্ববারী ১২/৩৫৫, ছফওয়াতুত তাফাসির ১/৪০৮, ফতহুল বারী লি ইবনি হাজার ৮/২৯৯, আদ দুররুল মানছূর ফীত তাফসীরি বিল মা-ছূর ১/৪৬, আল আসাসুন ফীত তাফসীর, ইবনে কাছীর ৩/৩৫৮)

হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার জন্য পবিত্র জান্নাতী পোশাক মুবারক পুনরায় অবতীর্ণ হয় এবং ধারবাহিকভাবে হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম উনার নিকট পৌঁঁছে। যেমন কিতাবে বর্ণিত রয়েছে-

أَنَّ نَـمْرُوْدَ لَمَّا أَلْقٰى سَيِّدَنَا حَضْرَتْ إِبْـرَاهِيْمَ خَلِيْلَ اللهِ عَلَيْهِ السَّلَامُ فِي النَّارِ نَـزَلَ إِلَيْهِ حَضْرَتْ جِبْرِيْلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ بِقَمِيْصٍ مِّنَ الْجَنَّةِ وَطَنْـفَسَةٍ مِّنَ الْجَنَّةِ فَأَلْبَسَهُ الْقَمِيْصَ وَأَقْـعَدَهٗ عَلَى الطَّنْـفَسَةِ وَقَـعَدَ مَعَهٗ يَـتَحَدَّثُ فَأَوْحَى اللهُ إِلَى النَّارِ فِيْ قَـوْلِهٖ: كُوْنِيْ بَـرْدًا وَّسَلَامًا

অর্থ: নিশ্চয়ই বর্বর জালিম নমরুদ যখন হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে তার অগ্নিকুন্ডে রেখেছিল, তখন হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র জান্নাত মুবারক থেকে একটি ক্বমীছ মুবারক এনে হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে পরিধান করিয়ে দিলেন। এবং একটি জান্নাতী বিছানায় বসিয়ে দিলেন। এবং হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সাথে আগুনের কুন্ডে বসে কথা মুবারক বলতেছিলেন। তার পূর্বে মহান আল্লাহ পাক তিনি আগুনের প্রতি নির্দেশনা মুবারক জারী করেছিলেন যে, আগুন তুমি হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার জন্য শান্তিপূর্ণ ঠান্ডা হয়ে যাও। (ফতহুল ক্বদীর লিশ-শাওকানী ৩/ ৬৬)

তাফসীরগ্রন্থ সমূহে উল্লেখ রয়েছে-

ذٰلِكَ الْقَمِيْصُ هُوَ مِنْ كِسْوَةِ الْجَنَّةِ كَانَ اللّٰهُ كَسَاهُ سَيِّدَنَا حَضْرَتْ إِبْـرَاهِيْمَ خَلِيْلَ اللهِ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَكَسَاهُ سَيِّدُنَا حَضْرَتْ إِبْـرَاهِيْمُ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّدُنَا حَضْرَتْ إِسْحَاقَ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَكَسَاهُ سَيِّدُنَا حَضْرَتْ إِسْحَاقُ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّدُنَا حَضْرَتْ يَـعْقُوْبَ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَكَسَاهُ سَيِّدُنَا حَضْرَتْ يَـعُقُوْبُ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّدُنَا حَضْرَتْ يُـوْسُفَ عَلَيْهِ السَّلَامُ

অর্থ: ঐ ক্বমীছ মুবারক। ইহা পবিত্র জান্নাতী ক্বামীছ মুবারক। যা মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশক্রমে হযরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম তিনি হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে হাদিয়া প্রদান করেছিলেন (যখন হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহস সালাম উনাকে নমরুদ তার জলন্ত অগ্নিকুন্ডে রেখেছিল)। পরবর্তী সময়ে হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি উক্ত ক্বামিছ মুবারক হযরত ইসহাক্ব আলাইহিস সালাম উনাকে হাদিয়া করেছিলেন। হযরত ইসহাক্ব আলাইহিস সালাম তিনি উক্ত ক্বামিছ মুবারক হযরত ইয়া’কূব আলাইহিস সালাম উনাকে হাদিয়া করেছিলেন। হযরত ইয়া’কূব আলাইহিস সালাম তিনি উক্ত ক্বামিছ মুবারক হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম উনাকে হাদিয়া করেছিলেন। (তাফসীরে মাতুরীদী ৬/২৮৫, ফতহুল ক্বদীর লিশ-শাওকানী আর-ইয়ামানী ৩/৬৩)

হযরত ইয়া’কূব আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র সুন্নতী ক্বমীছ উনার স্পর্শ মুবারকে স্বীয় দৃষ্টিশক্তি ফিরে পান। সুবহানাল্লাহ!

বর্ণিত রয়েছে, হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম তিনি মিশরের কতৃর্ত্ব বা ক্ষমতা গ্রহণ করার পর যখন দুর্ভিক্ষ দেখা দিল, তখন ঐ দুর্ভিক্ষের অভাব-অনটন গড়াতে গড়াতে কিনয়া’নে হযরত ইয়া’কূব আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র হুজরা শরীফ পর্যন্ত পেঁৗছে যায়। তখন হযরত ইয়া’কূব আলাইহিস সালাম তিনি উনার আওলাদগণকে লক্ষ্য করে বললেন যে, হে আমার আওলাদগণ! আমি জানতে পেরেছি মিশরে একজন নতুন শাসনকর্তা এসেছেন। যিনি অত্যন্ত সৎ ও দয়ালু। এই দুর্ভিক্ষের সময় তিনি মানুষের অভাব-অনটন দূর করার জন্য সামান্য অর্থ-কড়ির বিনিময়ে উট বোঝাই খাদ্যশস্য দিয়ে থাকেন। আপনারা উনার নিকট থেকে খাদ্যশস্য নিয়ে আসুন। হযরত ইয়া’কূব আলাইহিস সালাম উনার নির্দেশ মোতাবিক যখন দশ ভাই উনারা মিশরে গেলেন, তখন হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম তিনি উনার দশ ভাইকে চেনার পর তৃতীয়বারে যখন উনারা মিশরে আসলেন, তখন কিনয়া’ন তথা স্বীয় বাড়ীতে প্রত্যাবর্তনের পূর্বে হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম তিনি উনার ভাইদেরকে বললেন, হে আমার ভ্রাতাগণ! আমার জানা আছে যে, আমার পিতা হযরত ইয়া’কূব আলাইহিস সালাম তিনি আমার জন্য কান্না করতে করতে উনার দৃষ্টিশক্তি মুবারক হারিয়ে ফেলেছেন। এ কথা বলে তিনি উনার ভাইদেরকে যে নির্দেশ মুবারক দিলেন, সে বিষয়টি যিনি খ্বালিক্ব যিনি মালিক যিনি রব মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার কিতাব মুবারক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করে দিয়েছেন-

اِذْهَبُـوْا بِقَمِيْصِيْ هٰذَا فَأَلْقُوْهُ عَلٰى وَجْهِ أَبِيْ يَأْتِ بَصِيْـرًا وَأْتُـوْنِيْ بِأَهْلِكُمْ أَجْمَعِيْنَ

অর্থ: আপনারা আমার এই পবিত্র জান্নাতী ক্বমীছ মুবারক নিয়ে যান। অতঃপর এই পবিত্র জান্নাতী ক্বমীছ মুবারক আমার পিতা হযরত ইয়া’কূব আলাইহিস সালাম উনার পবিত্রতম চেহারা মুবারকে রাখলেই তিনি উনার দৃষ্টি মুবারক ফিরে পাবেন। এবং পরবর্তীতে আমাদের পরিবারের সকলকে নিয়ে মিশরে চলে আসবেন। (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা ইউসুফ শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ-৯৩)

কাফেলা বাড়ীতে গিয়ে হযরত ইয়া’কূব আলাইহিস সালাম উনার পবিত্রতম চেহারা মুবারকে পবিত্র জান্নাতী সুন্নতী ক্বমীছ মুবারক রাখলে সাথে সাথেই তিনি উনার দৃষ্টি শক্তি মুবারক ফিরে পান। সুবহানাল্লাহ!

কাট্টা কাফির হামানও সুন্নতী ক্বামীছ মুবারকের উসীলায় আযাব-গযব থেকে রক্ষা পাচ্ছিল।

হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি যখন উনার প্রতি পবিত্র ঈমান আনয়নকারী উম্মতগণকে নিয়ে লোহিত সাগর পার হয়ে ওপারে চলে গেলেন। তখন ফেরাউন তার দল-বলসহ সকলেই ডুবে জাহান্নামে চলে গেল। তখন হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি ওপার থেকে দেখলেন ফেরাউনের দল-বল সকলেই ডুবে মারা গেল। কিন্তু হামান নামক দুষ্ট কাফির সে সাঁতরিয়ে কিনারে উঠার চেষ্টা করতেছে। তখন হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, আয় মহান আল্লাহ পাক! আপনি এখনও কেন দুষ্ট কাফির হামানকে জিন্দা রাখলেন? তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি জানালেন, হে আমার নবী হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম! আপনি জানেন, তার পরিধানে আপনার অনুরূপ সুন্নতী ক্বমীছ রয়েছে। যদিও সে আপনাকে তিরস্কার করার জন্য তা পরিধান করেছে, তবুও উক্ত পোশাক উনার কারণে তাকে এ মুহূর্তে আমি আযাব-গযবে ধ্বংস করবোনা। আপনি অপেক্ষা করে দেখতে থাকুন কি হয়। তখন দেখা গেল, হামান যতই সাঁতরিয়ে কিনারে উঠার চেষ্টা করতেছে কিন্তু সে নিজেকে ঘুরে-ফিরে একজায়গাই দেখতে পায়, কিনারে যেতে পারছেনা। তখন সে ভাবল যে, জামার ভিতরে পানি তাকে আটকিয়ে রেখেছে। সে কারণে সে সুন্নতী জামা যখনই খুলে ফেলল, সাথে সাথে লোহিত সাগরের অতল তলদেশে ডুবে সেও জাহান্নামে চলে গেল। নাউযুবিল্লাহ!

মোটকথা, সকলের জন্য সর্বক্ষেত্রে একমাত্র মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেই অনুসরণ করতে হবে। তিনি হচ্ছেন কায়িনাতবাসী সকলের পিতা। আর হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা হচ্ছেন কায়িনাতবাসী সকলের মাতা। তাই প্রতিটা ক্ষেত্রে উনাদেরকেই অনুসরণ করতে হবে। এ মর্মে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِـيْ رَسُوْلِ اللهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ

অর্থ: মহাসম্মানিত মহাপবিত্র রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মধ্যেই রয়েছেন তোমাদের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ মুবারক। (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ২১)

মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

وَمَاۤ اٰتَاكُمُ الرَّسُوْلُ فَخُذُوْهُ وَمَا نَـهَاكُمْ عَنْهُ فَانْـتَـهُوْا وَاتَّـقُوا اللهَ إِنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ

অর্থ: মহাসম্মানিত রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তোমাদেরকে যা বা যে আদর্শ মুবারক দান করেছেন তা গ্রহণ করো এবং তোমাদেরকে যা নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাক। আর এ বিষয়ে মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি কঠিন শাস্তিদাতা। (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা হাশর শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ০৭)

অতএব, মহাসম্মানিত রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেসব এবং যে ধরণের পোশাক মুবারক পরিধান করেছেন পুরুষদের জন্য সে পোশাকই পরিধান করতে হবে। আর হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা যেসব এবং যে ধরণের পোশাক মুবারক পরিধান করেছেন মহিলাদের জন্য সেই পোশাক পরিধান করতে হবে। উনাদের পরিহিত পোশাক মুবারকই হচ্ছেন সুন্নতী পোশাক মুবারক। সকলের অবগতির জন্য সুন্নতী পোশাক মুবারকের বর্ণনা উল্লেখ করা হলো।

কোর্তা বা ক্বমীছ: পুরুষদের সুন্নতি কোর্তা লম্বায় “নিছফু সাক্ব” অর্থাৎ হাঁটু ও গিরার মাঝামাঝি হবে। এবং ৬ কল্লি বিশিষ্ট কোনাবন্ধ ও গোল হতে হবে, কোনা ফাঁড়া হতে পারবে না, কারণ কোনা ফাঁড়া সুন্নত নয়। আস্তিন হবে কব্জি পর্যন্ত। অবশ্য কব্জি থেকে সামান্য লম্বাও সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত। এবং গলায় গুট্লী (শুধু কাপড় দিয়ে তৈরী গোলাকৃতি বিশিষ্ট যা দ্বারা গলা বন্ধ করা হয়) দেয়া সুন্নত, কিন্তু বোতাম দেয়া সুন্নত নয়। সুন্নতি কোর্তার ক্ষেত্রে সূতি ও মিশরী কাপড় হলো খাছ সুন্নত, অবশ্য মিশরী ব্যতীত অন্য সূতিও খাছ সুন্নত উনার অন্তর্ভুক্ত হবে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খাছ করে সাদা রং পছন্দ করতেন। এছাড়া খয়েরী, সবুজ, ধুসর, ঘিয়া ইত্যাদি রংও সুন্নত উনার অন্তর্ভুক্ত।

মহিলাদের ক্বমীছও লম্বায় “নিছফু সাক্ব” অর্থাৎ হাঁটু ও গিরার মাঝামাঝি হবে। তবে মহিলাদের ক্বামীছ কিছুটা লম্বাও হতে পারে। এবং ৬ কল্লি বিশিষ্ট কোনাবন্ধ ও গোল হতে হবে, কোনা ফাঁড়া হতে পারবে না। তবে পুরুষদের ন্যায় গলায় গুটলী হবে না বরং ডান কাঁধে, বাম কাঁধে অথবা পিছন দিকে গুটলী দিতে হবে। প্রয়োজনবোধে সামনেও দিতে পারে।

ইযার বা লুঙ্গি: ইযার তথা সেলাইবিহীন সাদা লুঙ্গি মুবারক পরিধান করা খাছ সুন্নত মুবারক। যার দৈর্ঘ্য সাড়ে চার হাত লম্বা এবং প্রস্থ আড়াই হাত। হাঁটু ও গিরার মাঝামাঝি হবে, একটু লম্বা হতে পারে। পুরুষদের জন্য কোন অবস্থায়ই কোর্তা, ইযার বা লুঙ্গি ও সেলোয়ার গিরার নীচে পড়া জায়েয নেই। তবে মহিলাদের প্রয়োজনে জায়েয রয়েছে।

মহিলাদের জন্য খাছ সুন্নাত হলো ক্বামীছের সাথে সেলোওয়ার এবং ওড়না পরিধান করা। ওড়নার মাপ হলো (৪.৫) সাড়ে ৪ হাত লম্বা ও (২.৫) আড়াই হাত প্রশস্ত। এছাড়া মহিলাদের পর্দার জন্য বোরকা’ পরিধান করা ফরজ। প্রথম যামানায় পর্দার জন্য বড় চাদর পরিধান করা হতো। চাদরের প্রশস্ততা ছিলো পরিধানকারিণী থেকে দেড়/দুই হাত লম্বা। আর লম্বা ছিলো কমপক্ষে ১২/১৪ হাত। পরবর্তীতে মহিলাদের সুবিধার জন্য ইমাম মুজতাহিদগণ বর্তমানে প্রচলিত বোরকা’ প্রচলন করেন। সে হিসেবে বর্তমানে বোরকা’ও সুন্নত। তবে বর্তমানে আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম-মাক্বামে উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম তিনি যে বোরকা’র প্রচলন করেছেন সেটাই সর্বোত্তম বোরকা’।

সুন্নতী টুপি: চার টুকরা বিশিষ্ট সাদা গোল সুতি কাপড়ের এবং মাথার সাথে লেগে থাকে, মাথা থেকে উঁচু হয়ে থাকে না, উপরে এক টুকরা আর চারদিকে তিন টুকরা এমন টুপি পরিধান করা খাছ সুন্নত মুবারক। কপালের সিজদার স্থান খোলা থাকবে।

সুন্নতী পাগড়ী: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অধিকাংশ সময় যে পাগড়ী মুবারক ব্যবহার করতেন তা ছিল ৭ হাত লম্বা, যা হুজরা শরীফ হতে বের হওয়ার সময় তিনি পরিধান করে বের হতেন। জিহাদের ময়দানেও এ ধরণের পাগড়ী মুবারক ব্যবহার করতেন। হুজরা শরীফ উনার মধ্যে যে পাগড়ী মুবারক ব্যবহার করতেন তা ছিল ৩ হাত লম্বা। ঈদ, জুমুয়া ও বিশেষ মাহফিলে ১২ হাত লম্বা পাগড়ী মুবারকও ব্যবহার করেছেন। সব ধরণের পাগড়ীর চওড়া কমপক্ষে আধ হাত আর সর্বোচ্চ দুই হাত পর্যন্ত হতো। পাগড়ীর রং : নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কালো, সবুজ, সাদা ইত্যাদি রংয়ের পাগড়ী মুবারক পরিধান করতেন। তবে কালো পাগড়ী মুবারক বেশী ব্যবহার করতেন। পাগড়ীর শিমলা: মাথায় পাগড়ী বাঁধার সময় পাগড়ীর যে অংশটুকু কাঁধের দিকে ঝুলিয়ে রাখা হয় তাকে শিমলা বলা হয়। শিমলা এক বিঘত থেকে এক হাত হওয়া বাঞ্চনীয় এবং তা দু’ কাঁধের মধ্যখানে ঝুলিয়ে রাখা উত্তম। শিমলা ছাড়া পাগড়ী পরিধান করা বিজাতীয় লক্ষণ।

সুন্নতী রুমাল: পাগড়ীর উপর সাদা রুমাল ব্যবহার করা সুন্নত মুবারক। সুন্নতী রুমাল পরিধান করার তরতীব হচ্ছে- সুন্নতী পাগড়ী উনার উপর মাঝ বরাবর রাখতে হবে। অতঃপর সুন্নতী রুমালের ডানপাশ বাম কাঁধের উপর দিয়ে নীচের দিকে নামিয়ে দিতে হবে। যা পিঠের উপর ঝুলন্ত অবস্থায় থাকবে। দুই রকমভাবে পড়া যাবে। যথা- (১) পাগড়ীর সাথে টাইট করে পড়া (২) আলগাভাবে পড়া।

রুমালের সুন্নতী মাপ: সাধারণতঃ আড়াই হাত, পৌনে তিন হাত ও তিন হাত বর্গাকৃতি।

সুন্নতী কেনায়া: সম্মানিত সুন্নতী টুপির নিচে ডিম আকৃতির সাদা সুতি কাপড়ের সুন্নতী কেনায়া পরিধান করাও সম্মানিত সুন্নত মুবারক।

সুন্নতী পোষাক সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ গবেষণা কেন্দ্র হতে প্রকাশিত ৮ খণ্ডের রেসালা শরীফ ‘উসওয়াতুন হাসানাহ’ পাঠ করুন।

গোলাম মুনযির মুহম্মদ উম্মিয়্যি, ঢাকা।

মুহম্মদ আসিফ মুহিউদ্দীন, চট্টগ্রাম।

মুহম্মদ ইরফানুল হক, বরিশাল।

মুহম্মদ মীলাদ হুসাইন, সিলেট।

মুহম্মদ আকরাম হুসাইন, রাজশাহী।

মুহম্মদ মুনিরুল ইসলাম, রংপুর।

সুওয়াল: সম্প্রতি বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা হয়েছে। এবারের বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজক দেশ হচ্ছে আরব দেশের কাতার। মুসলিম অধ্যূষিত দেশ কাতারে ফুটবলের এমন বিশ্ব আসর বসার কারণে কিছু প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে। তাহচ্ছে-

১) মুসলমান দেশ কাতারে বিশ্ব কাপ ফুটবলের আয়োজনকে অনেকেই মুসলমানদের বিশাল অর্জন ও নিয়ামতের কারণ হিসেবে বর্ণনা করেছে।

২) এই প্রথম কোন বিশ্বকাপ আসরে পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত দ্বারা শুরু হওয়ায় মুসলমানদের মধ্যে বিশাল উদ্দীপনা কাজ করেছে এবং অনেকে শুকরিয়া প্রকাশ করেছে।

৩) পবিত্র কুরআন শরীফ তেলাওয়াত দ্বারা বিশ্বকাপ ফুটবল আসর শুরু হওয়ার সাথে সাথে ব্যাপক গান বাদ্যের সাথে সাথে উপস্থিত দর্শকরা করতালি ও শিস দিয়ে আয়োজনকে স্বাগত জানিয়েছে।

৪) বিশ্বকাপে মুসলিম দেশ বনাম কাফির দেশের মধ্যে ফুটবল ম্যাচে মুসলিম দেশ জিতে যাওয়ায় অনেকে শুকরিয়ার সিজদা করেছে এবং অনেকে এই বিজয়কে ইসলাম উনার বিজয় হিসেবে বর্ণনা করেছে।

৫) বিশ্বকাপ ফুটবলকে কেন্দ্র করে দলাদলি প্রতিনিয়ত হচ্ছে। একদল আরেক দলকে নাজেহাল করার মত সব ধরণের কাজ করে যাচ্ছে, এমনকি সেটা হাতাহাতি থেকে খুনাখুনিতে পরিণত হয়েছে।

৬) বিশ্বকাপ ফুটবলকে জায়েয করতে গিয়ে অনলাইনের অনেক মুফতি বিভিন্ন শর্ত দিয়ে এমন খেলাধুলা করাকে জায়েয হালাল বলেছে।

৭) বিশ্বকাপ ফুটবল ম্যাচ দেখা তথা উপভোগের সুবিধার জন্য দেশ বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় মসজিদে জামায়াতে নামায পড়ার সময়কে আগ পিছ করা হয়েছে।

৮) বিশ্বকাপ ফুটবলকে কেন্দ্র করে ইহুদী, নাছার, মুশরিকরা মুসলমানদের সাথে একত্রিত হয়ে নারী পুরুষ একাকার করে বেশরা বেলেল্লাপনায় মেতে উঠেছে।

৯) বিশ্বকাপ ফুটবলের মধ্যে অংশগ্রহণকারী কয়েকটি দেশের মধ্যে মুসলিম অধ্যুষিত কতিপয় দেশ রয়েছে। সেজন্য খেলার সময় মুসলিম দেশকে সাপোর্ট দেয়া মুসলমানদের ঈমানী দায়িত্ব বলে প্রচার করেছে।

১০) অনেক মালানা- মুফতি বিশ্বকাপ ফুটবলকে জায়েয করার জন্য হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম উনার সন্তানদেরকে খেলাধুলা করতে উৎসাহিত করেছেন বরং নিষেধ করেননি।

উপরোক্ত প্রতিটি বিষয়ে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার হুকুম আহকাম সম্পর্কে জানিয়ে গোটা বিশ্বের মুসলমান উনাদের ঈমান আমল হিফাজতের আরজু করছি।

উল্লেখিত সুওয়ালের জাওয়াব:

১) প্রথমত বলতে হয় যে, ফুটবলসহ সর্বপ্রকার খেলাই হারাম। হারাম আমলকে নিয়ামত মনে করা কাট্টা কুফরী। হারামকে নিয়ামত মনে করা কুফরী। কুফরী বিষয়কে মুসলমানদের জন্য বিশাল অর্জন মনে করাও কুফরী।

২) দ্বিতীয়ত বলতে হয় যে, কোন হারাম বিষয় কুরআন শরীফ তিলাওয়াত দ্বারা শুরু করা কুফরী। হারাম কাজ বিসমিল্লাহ বলে করাটাও কুফরী। হারাম কাজে শুকরিয়া প্রকাশ করাও কুফরী।

৩) তৃতীয়ত বলতে হয় যে, গান-বাজনা তো হারাম। গান-বাজনার মজলিসে যাওয়াও হারাম। গান শুনা গুনাহ, গানের মজলিসে বসা ফাসিকী, গানের স্বাধ গ্রহণ করা কুফরী। অনুরূপ করতালি ও শিস দেয়াও হারাম ও কুফরী।

৪) চতুর্থত বলতে হয় যে, হারাম কাজে জিতার কারণে শুকরিয়ার সিজদা করা এবং এটাকে ইসলাম উনার বিজয় বলা উভয়টাই কুফরী।

৫) পঞ্চমত বলতে হয় যে, হারাম থেকে হারামই পয়দা হয়। আর এ কারণেই ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে প্রতিনিয়ত দলাদলি, একদল আরেক দলকে নাজেহাল করা, এমনকি সেটা হাতাহাতি থেকে খুনাখুনিতে পরিণত হচ্ছে। নাঊযুবিল্লাহ!

৬) ষষ্ঠত বলতে হয় যে, খেলাধুলা পুরোটাই হারাম। যে শর্ত দিয়ে জায়িয বলবে, সে গুমরাহ ও মুরতাদ হবে।

৭) সপ্তমত বলতে হয় যে, বিশ্বকাপ ফুটবল ম্যাচ দেখার জন্য মসজিদে জামায়াতে নামায পড়ার সময়কে আগ পিছ করাটাও কুফরী।

৮) অষ্টমত বলতে হয় যে, বেপদার্ হওয়া আরেক হারাম ও কুফরী। যারা বেপর্দা হয় তারা দাইয়ূছ। দাইয়ূছ তো জান্নাতে প্রবেশ করবে না।

৯) নবমতম বলতে হয় যে,  হারাম কাজে সমর্থন দেয়াকে ঈমানী দায়িত্ব মনে করাও কুফরী। মুসলমান দেশ তাদের তওবা করে ফিরে আসা উচিত। কাতারের এটা করা উচিত হয়নি। কাতার দেশের সব লোকদেরকে খালিছ তওবা করা উচিত।

১০) দশমতম বলতে হয় যে, হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম তিনি উনার সন্তানদেরকে খেলাধুলা করতে উৎসাহিত করেছেন। নাঊযুবিল্লাহ! এটা মিথ্যা কথা। কোথায় দলীল আছে? কোন আয়াত শরীফে বলা হয়েছে?

মূল কথা হচ্ছে, খেলাধুলা হারাম। খেলাধুলা সংশ্লিষ্ট সবই হারাম। খেলাধুলার সাথে যারা জড়িত তারা সকলেই হারাম ও কুফরী কাজে মশগুল। এরা যদি তওবা না করে তাহলে এদের প্রত্যেকের উপর পবিত্র শরীয়ত উনার হুকুম মুতাবেক মুরতাদের হুকুম বর্তাবে।

আর শরীয়তে মুরতাদের ফায়ছালা হলো, বিবাহ-শাদী করে থাকলে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে পুনরায় তওবা করে, বিবাহ না দোহরানো ব্যতীত আহলিয়া বা স্ত্রীর সাথে বসবাস করা বৈধ হবে না। আর এ অবৈধ অবস্থায় সন্তান হলে সে সন্তানও বৈধ হবে না। হজ্জ বাতিল হয়ে যাবে যদি হজ্জ করে থাকে। সমস্ত নেক আমল বরবাদ হয়ে যাবে। ওয়ারিশসত্ব বাতিল হবে। ইসলাম খিলাফত জারী থাকলে মুরতাদকে তিন দিন সময় দেয়া হবে তওবা করার জন্য এবং যদি তওবা করে, তবে ক্ষমা করা হবে। অন্যথায় তার একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। মুরতাদ মারা যাওয়ার পর যারা জানাযার নামায পড়ে বা পড়ায় বা জানাযার নামাযে সাহায্য-সহযোগিতা করে, তাদের সকলের উপরই মুরতাদের হুকুম বর্তাবে এবং এ সকল মুরতাদ মরলে বা নিহত হলে তাকে মুসলমানগণের কবরস্থানে দাফন করা যাবে না। এমনকি মুসলমানের মতো দাফনও করা যাবে না।  বরং কুকুরের ন্যায় গর্তের মধ্যে পুঁতে রাখতে হবে। নাঊযুবিল্লাহ!

মুসলমান ঈমান রক্ষার্থে নিম্নে হারাম ফুটবল খেলা সম্পর্কে তার হাক্বীক্বতও ইতিহাস বর্ণনা করা হলো:

ফুটবলের আদি ইতিহাস:

ফুটবল খেলার আদি নাম সু-চু। আজ হতে প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে চীনে এ খেলার প্রচলন ছিলো। ‘সু’ অর্থ বলকে পা দিয়ে লাথি মারা এবং ‘চু’ অর্থ চামড়া দিয়ে তৈরী বল। জাপানে সপ্তম শতাব্দীর দিকে ফুটবল খেলাটি ক্যাসারি নামে পরিচিত ছিলো। মাত্র চৌদ্দ বর্গমিটার জায়গা জুড়ে ৮ জন খেলোয়াড় হুড়োহুড়ি করে খেলতো এ খেলা। রোমদের মধ্যে এ খেলার প্রচলন করে জুলিয়াস সীজার। গ্রীকরা এর নাম দিয়েছিল ‘অ্যাপিসকিরোস।’ রোমানরা একে বলতো ‘হ্যারাপাসতুম।’ উইলিয়াম হেস্টিংস ১০৬৬ সালে ইংল্যান্ডে খেলাটির প্রচলন করে। ইংল্যান্ডে প্রচলিত খেলাটিতে নিয়মকানুনের কোন বালাই ছিলোনা। দু’দলে প্রতিটিতে প্রায় ৫০০ জন ব্যক্তির মধ্যে দুপুরে শুরু হয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত খেলা চলত। মাঠের দৈর্ঘ্য হত প্রায় আধা মাইল। এর মধ্যে প্রায়ই রক্তারক্তি ও বীভৎসতার রূপ লাভ করত। বিপদজনক এই গণফুটবলের নাম ছিলো মিলিস কিংবা মেলাস। হিংস্র এ উম্মত্ততা ১৩১৪ সালে প্রথমবারের মত ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় এডওয়ার্ড আইন করে খেলা ইংল্যান্ডে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।  কারণ এমন বিপদজনক খেলায় বহু যুবকের জীবনাবসান ঘটত এবং বহু যুবক আহত ও পঙ্গু হত। ফলে সেনা দলে ভাল যুবকের অভাব পড়বে ভেবে এ খেলা নিষিদ্ধ করা হয়। ষোড়শ শতাব্দীতে ইটালিতে প্রথম ফুটবল খেলা প্রচলিত হয়। ইটালিতে এ খেলার নাম ছিল ক্যাসালিও। এ সময় এ খেলা পরিচালনা করত ইংল্যান্ডের একজন হেডমাস্টার রিচার্ড মূল কাস্টমার। যার নির্দেশে বিরোধ নিষ্পত্তি ঘটত। সে এ খেলার প্রশিক্ষকও বটে।

ফুটবলের নতুন যুগ:

ষোড়শ শতাব্দীতে ফুটবলের বর্তমান যুগের সূচনা হয়। ইংল্যান্ডের ইটন, হ্যারো ও ইউনচেস্টার প্রমূখ স্কুল ফুটবলকে নিয়মতান্ত্রিক খেলা হিসেবে  সংগঠিত করে। ১৮৪৮ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল নিয়ন্ত্রণের জন্য সর্বপ্রথম কিছু নিয়ম-কানুন প্রবর্তন করে। এটি কেমব্রিজ রুলস নামে খ্যাত। এ ব্যাপারে ফুটবল ইতিহাসে জে.সি থিঙ্কস অন্যতম। সে ১৮৬২ সালে ফুটবলের ১০টি মৌলিক আইন প্রবর্তন করে।

১৮৫৫ সালে ইংল্যান্ডে শিফিল্ড ইউনাইটেড ফুটবল ক্লাব ১ম গড়ে উঠে ১৮৬৩ সালে ‘লেদার বল’ নামে একটি সংগঠন প্রথম ফুটবলের রীতিনীতি প্রণয়ন করে। ১৮৬৩ সালে ডিফ্রিংগ রচিত ফুটবলের উপর প্রথম বই প্রকাশিত হয়। ১৮৭২ সালে স্কটল্যান্ড ও ইংলান্ডের মধ্যে প্রথম আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। স্কটল্যান্ডের প্রাসগো  শহরে এ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়।

ফিফার জন্ম:

FIFA (ফিফা) Fedaration International Football association ২১ মে ১৯০৪ সালে ফিফা গঠিত হয়। ফিফা’র বর্তমান সদস্য দেশ ২০৪টি। ফিফার প্রতিষ্ঠাকারী ফরাসি হেনরি ডেলনে ও জুলে রিমে। ফিফা’র বর্তমান সদর দফতর সুইজারল্যান্ডের জুরিখে।

বিশ্বকাপ ট্রফি:

বিশ্বকাপ ফুটবলের জন্য ২টি ট্রফি নির্মিত হয়, জুলেরিমে ও ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপ ট্রফি। বর্তমান বিশ্বকাপ ট্রফির নাম ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপ ট্রফি। জুলেরিমে ট্রফি নামকরণ করা হয় ফিফা’র প্রতিষ্ঠাকারী জুলে রিমের নামানুসারে। এর নির্মাণ শৈলী ভাস্কর্যের প্রতীক মাথার উপর দু’হাত উচিয়ে উল্লাসিত ফরাসীদের বিজয়ের দেবী এক পরী। ফিফা বিশ্বকাপ ট্রফি ১৯৭৪ সালের বিশ্বকাপ থেকে শুরু হয়। এই কাপের ডিজাইনার হচ্ছে ইতালির ভাস্কর শিল্পী সিলভিও গাজ্জানিগা। ১৮ ক্যারেটের ৪.৯৭ কেজি ওজনের স্বর্ণের কাপটি ৩৬ সে.মি. লম্বা, যাতে দু’জন অ্যথেলেট পিঠাপিঠি করে ধরে আছে তাদের উপর গোটা বিশ্বকে। অর্থাৎ বিশ্বকাপ উচ্চারণ হচ্ছে ‘দু’টো মূর্তির হাতের উপর বিশ্ব’- এরকম ধারণাকে আওড়ানো যা কিনা মূর্তি সংস্কৃতিকে স্বীকৃতি দেয়ার নামান্তর।

বিশ্বকাপ ফুটবল শুরু:

১৯৩০ সালে উরুগুয়েতে প্রথম বিশ্বকাপ ফুটবল অনুষ্ঠিত হয়। টেলিভিশনে ১৯৫৪ সালে প্রথম বিশ্বকাপ দেখানো হয়। ১৯৩০ থেকে নিয়ে ২০০২ সাল পর্যন্ত ১৭টি বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতা হয়েছে। এবার হলো ১৮তম পর্ব।

বিশ্বকাপে মুসলিম দেশের ইতিহাস:

১৯৩০ সালে উরুগুয়ে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে কোন মুসলিম দেশ অংশ নেয়নি। তবে এতে অংশ গ্রহণের জন্য মুসলিম বিশ্বের উপর চলতে থাকে ইহুদী-খ্রীস্টানদের নিরন্তর প্রচেষ্টা ও প্রলোভন। সে প্রক্রিয়ায় ইতালিতে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় বিশ্বকাপে প্রথম মুসলিম দেশ হিসেবে বিশ্বকাপে অংশ নেয় মিসর। ১৯৫৪ সালে সুইজারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত পঞ্চম বিশ্বকাপে দ্বিতীয় মুসলিম দেশ হিসেবে অংশ নেয় তুরস্ক। ১৯৭০ সালে মেক্সিকো বিশ্বকাপে তৃতীয় মুসিলম দেশ হিসেবে আফ্রিকার মরক্কো খেলতে আসে।  প্রথম মুসলিম দেশ হিসেবে ১৯৮৬ সালে মেক্সিকো বিশ্বকাপে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠেছিল মরক্কো। একাদশ বিশ্বকাপের আসর বসে ১৯৭৮ সালে আর্জেন্টিনায়। ওই আসরে দুটি মুসলিম দেশ ইরান এবং তিউনিসিয়া অংশগ্রহণ করে। ইরান ১৯৯৮ সালে ফ্রান্স বিশ্বকাপে দ্বিতীয়বারের মতো খেলতে আসে। ১৯৮২ সালে স্পেন বিশ্বকাপে আফ্রিকার আলজেরিয়া এবং এশিয়ার কুয়েত অংশ নেয়। ১৯৯৪ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলতে আসে সৌদি আরব। ২০০৬ সালেও বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করে ইরান, সৌদি আরব, তিউনিশিয়া প্রভৃতি মুসলিম দেশ অর্থাৎ বিশ্বকাপ ফুটবল যে মুসলমানদের স্বতঃস্ফূর্ত বিষয় নয় উপরোক্ত ইতিহাসে তাই প্রমাণিত হয়। ফুটবলের উপরোক্ত সংক্ষিপ্ত ইতিহাস থেকে সুস্পষ্ট ও অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হলো যে, ফুটবল বা এ জাতীয় সকল খেলাধুলার উদ্ভাবক হচ্ছে বিধর্মীরা। অর্থাৎ প্রচলিত সমস্ত খেলাধুলাই বিধর্মীদের প্রবর্তিত নিয়ম-নীতি, তর্জ-তরীক্বা। যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে মুসলমানদের জন্য তা অনুসরণ ও সমর্থন করা কি করে জায়েয হতে পারে? অর্থাৎ সম্পূর্ণরূপে হারাম নাযায়িজ ও কাট্টা কুফরী।

বিশ্বকাপ ফুটবলের ইতিহাস থেকে প্রমাণিত যে, ফুটবল এবং এ জাতীয় সমস্ত খেলাধুলার উদ্ভাবক হচ্ছে বিধমীর্রা। অথার্ৎ প্রচলিত সমস্ত খেলাধুলাই বিধমীর্দের প্রবর্তিত নিয়ম-নীতি, তর্জ-তরীক্বার অন্তর্ভুক্ত। যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে মুসলমানদের জন্য তা অনুসরণ করা কি করে জায়িয হতে পারে? কস্মিনকালেও জায়িয হতে পারে না। সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে ফুটবলসহ সমস্ত খেলাধুলাই হারাম। আর হারাম সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

وَالَّذِيْ خَبُثَ لَا يَخْرُجُ إِلَّا نَكِدًا

অর্থ: যা হারাম তা থেকে খারাপ বা নিকৃষ্ট ব্যতীত কিছু বের হয় না। (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা আ’রাফ শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৮)

কাজেই যত প্রকার খেলাধুলা রয়েছে তার প্রত্যেকটির মধ্যেই না কোন দুনিয়াবী ফায়দা রয়েছে আর না কোন দ্বীনি ফায়দা রয়েছে। বরং প্রতিটি খেলা তিনটি অবস্থার কোন একটি অবস্থা থেকে খালি নয়। (এক) হয় তা কুফরী হবে। (দুই) অথবা হারাম হবে। (তিন) আর না হয় তা মাকরূহ হবে।

স্মরণীয় যে, মুসলমানদের ঈমান-আমল নষ্ট করে কুফরীতে নিমজ্জিত করার ক্ষেত্রে ইহুদী-খ্রীস্টানদের প্রবর্তিত বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা এক ধরণের কুটকৌশল। তাদের এ কুটকৌশলের মধুমাখা শ্লোগান হলো ‘বিশ্বায়ন।’ এ বিশ্বায়নের নামে তারা বিশ্বকাপ ফুটবল, ক্রিকেট, অলিম্পিক ইত্যাদি হুজুগ দ্বারা মুসলমানদেরকে হারাম আনন্দে ভুলিয়ে ঈমান-আমল ধ্বংস করে থাকে।

মূলতঃ যারা ইহুদী-খ্রীস্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ, মজুসী ও মুশরিক তারা সদাসর্বদা চেষ্টা করে থাকে, মুসলমানদেরকে কি করে ঈমান-আমল নষ্ট করে কাফিরে পরিণত করা যায়। এ প্রসঙ্গে কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

وَدَّ كَثِيْـرٌ مِّنْ أَهْلِ الْكِتَابِ لَوْ يَـرُدُّوْنَكُمْ مِّنْ بَعْدِ إِيْـمَانِكُمْ كُفَّارًا حَسَدًا مِّنْ عِنْدِ أَنْـفُسِهِمْ

অর্থ: “ইহুদী-নাছারা তথা আহলে কিতাবদের মধ্যে অনেকেই প্রতিহিংসাবশতঃ চায় যে, মুসলমান হওয়ার পর তোমাদের কোন রকমে কাফিরে পরিণত করতে।” (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ১০৯)

আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

لَتَجِدَنَّ أَشَدَّ النَّاسِ عَدَاوَةً لِّلَّذِيْنَ اٰمَنُوا الْيَهُوْدَ وَالَّذِيْنَ أَشْرَكُوْا

অর্থ:“তোমরা তোমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু হিসেবে পাবে ইহুদীদেরকে। অতঃপর যারা মুশরিক তাদেরকে।” (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৮২)

তাই তারা বিভিন্নভাবে চেষ্টা করে থাকে, মুসলমানদেরকে ঈমানহারা করার জন্য।

যেমন একদিকে খেলার সাথে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে চেষ্টা করে, অপরদিকে টেলিভিশনে খেলা ও হাজারো অশ্লীলতা দেখিয়ে মুসলমানদের দ্বীনি অনুভূতি নষ্ট করে তথা চরম পাপাচারে লিপ্ত করে।

ইসলাম বহির্ভুত বিজাতীয় তর্জ-তরীক্বা, নিয়ম-নীতি গ্রহণ করা কোন মুসলমানের জন্য জায়িয নেই। তা কাট্টা কুফরী। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَمَنْ يَّـبْـتَغِ غَيْـرَ الْإِسْلَامِ دِيْـنًا فَـلَنْ يُّـقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْاٰخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ

অর্থ: “যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দ্বীন (নিয়ম-নীতি, অন্য ধর্ম) তালাশ করে, তা কখনোই তার থেকে গ্রহণ করা হবে না এবং সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তভুক্ত হবে।” (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৮৫) অর্থাৎ মুসলমানকে কোন আমল করতে হলে, বিধর্মী ও বিজাতীয় কোন পন্থা অনুসরণ করা যাবে না বা তাদের কোন নিয়ম-নীতি গ্রহণ করা যাবে না।

আর এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حِيْنَ أَتَاهُ عُمَرُ عَلَيْهِ السَّلَامُ فَـقَالَ إِنَّا نَسْمَعُ أَحَادِيْثَ مِنْ يَّـهُوْدَ تُـعْجِبُـنَا أَفَـتَـرَى أَنْ نَّكْتُبَ بَعْضَهَا فَـقَالَ أَمُتَهَوِّكُوْنَ أَنْـتُمْ كَمَا تَـهَوَّكَتِ الْيَـهُوْدُ وَالنَّصَارٰى لَقَدْ جِئْـتُكُمْ بِهَا بَـيْضَاءَ نَقِيَّةً وَلَوْ كَانَ مُوْسٰى عَلَيْهِ السَّلَامُ حَيًّا مَّا وَسِعَهٗ إِلَّا اِتِّبَاعِيْ

অর্থ: “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন যে, একদিন হযরত ফারূকে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট এসে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমরা ইহুদীদের থেকে তাদের কিছু ধর্মীয় কথা শুনে থাকি, যাতে আমরা আশ্চর্যবোধ করি, ওটার কিছু আমরা লিখে রাখবো কি? হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, আপনারাও কি দ্বিধাদন্দ্বে রয়েছেন? যে রকম ইহুদী নাছারারা দ্বিধাদন্দ্বে রয়েছে? অবশ্যই আমি আপনাদের নিকট পরিপূর্ণ, উজ্জ্বল ও পরিষ্কার দ্বীন নিয়ে এসেছি। হযরত মূসা আলাইহিস সালাম তিনিও যদি দুনিয়ায় থাকতেন, তাহলে উনাকেও আমার অনুসরণ করতে হতো।” (মুসনদে আহমদ, বায়হাক্বী, মিশকাত)

অথার্ৎ উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ হতে বুঝা গেল যে, সম্মানিত দ্বীন ইসলাম অথার্র্ৎ পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ ছাড়া বিজাতীয় কোন পন্থার অনুসরণ করা হারাম।

উপরোক্ত আয়াত শরীফ, হাদীছ শরীফ এবং তার ব্যাখ্যা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, বিজাতীয়, বিধর্মীদের কোন নিয়ম-নীতি, আমল-আখলাক ও সীরত-ছূরত কোনটাই অনুসরণ-অনুকরণ করা যাবে না। কেননা, বিধর্মীরা মূলতঃ মুসলমানদের ঈমান-আমল বিনষ্ট করার উদ্দেশ্যে নিত্য নতুন ষড়যন্ত্র করে থাকে। যার একটি হলো বিশ্বকাপ ফুটবল বা খেলাধুলা। যা মূলতঃ বিধর্মীদেরই আবিষ্কার বা তাদের উদ্ভাবিত নিয়ম-নীতি।

দলীলসমূহঃ (১) শরহে ফিক্বহে আকবর, (২) শরহে আক্বায়েদে নাসাফী,(৩) তাকমিলুল ঈমান,(৪) আক্বায়েদে হাক্কাহ, (৫) জামেউল ফুছুলিন, (৬) হেদায়া, (৭) দুররুল মুখতার, (৮) বাহরুর রায়েক, (৯) কাজী খান, (১০) আলমগীরী, (১১) আল বাযযাযিয়া, (১২) আনকারোবিয়া, (১৩) বেনায়া, (১৪) আল ফিক্বহু আলা মাযাহিবিল আরবাআ, (১৫) ফতওয়ায়ে আমিনিয়া, (১৬) কবিরী, (১৭) খানিয়াহ্, (১৮) তিরমিযী শরীফ, (১৯) আবূ দাউদ শরীফ, (২০) নাসাঈ শরীফ, (২১) ইবনে মাজাহ শরীফ (২২) কানযুল উম্মাহ্, (২৩) বায়হাক্বী (৬৫ পৃষ্ঠায় দেখুন) (২৪) নাছবুর রেওয়াইয়াহ্, , (২৫) তাফসীরে আহ্কামুল কুরআন, (২৬) তাফসীরে কুরতুবী, (২৭) তাবারী, (২৮) তাফসীরে মাযহারী, (২৯) দুররে মানছূর, (৩০) মাআরিফুল কুরআন ইত্যাদি।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: খেলাধুলা হারাম হওয়া সম্পের্ক দলীল-প্রমাণ সহ বিস্তারিত জানতে হলে পাঠ করুন যামানার তাজদীদী মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ ৭১তম ও ১৫৫তম সংখ্যা।

মুহম্মদ আব্দুল হাকিম, মুন্সিগঞ্জ।

সুওয়াল: মুসলমানগণ ইন্তিকাল করলে “ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন” পড়া হয়। কোন বিধমীর্ মারা গেলে উক্ত কালাম মুবারক পড়া যাবে কী? জানতে চাই।

জাওয়াব: মহান আল্লাহ পাক উনার কালাম-

اِنَّا لِلّٰهِ وَاِنَّاۤ اِلَيْهِ رَاجِعُوْنَ

“ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন” কালাম মুবারক উনার অর্থ হচ্ছে নিশ্চয়ই আমরা মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তষ্টি মুবারক হাছিল করার উদ্দেশেই সৃষ্টি হয়েছি এবং নিশ্চয়ই আমরা উনার নিকট বা কাছেই প্রত্যাবর্তন করবো। এটা সম্মানিত মুসলমান উনাদের আক্বীদা বা বিশ্বাসের অন্তভুর্ক্ত। যার কারণে শুধু মুসলানদের ইন্তেকালে উক্ত কালাম মুবারক পড়া হয় এবং পড়তে হবে। আর কাফির-মুশরিক, বেদ্বীন-বিধর্মীরা যেহেতু উক্ত আক্বীদা ও বক্তব্যে বিশ্বসী নয় তাই তাদের মৃত্যুতে উক্ত কালাম মুবারক বলা যাবে না। বরং কাফির-মুশরিকরা তাদের কুফরী আক্বীদা ও আমলের কারণে তারা মৃত্যুর পর জাহান্নামে যাবে। তাই তাদের মৃত্যুতে কেউ কিছু বলতে চাইলে “ফী নারি জাহান্নাম” বলতে পারে।

মুহম্মদ রহমতুল্লাহ

চাঁপাইনবাবগঞ্জ

সুওয়াল: সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার সফর সঙ্গী হিসেবে কারবালার প্রান্তরে সর্বমোট কতোজন ছিলেন? সর্বমোট কতোজন শহীদ হয়েছেন? সর্বমোট কতোজন জীবিত ছিলেন?

জাওয়াব: সর্বাধিক বিশুদ্ধ মতে, কারবালার প্রান্তরে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম উনার সফর সঙ্গী ছিলেন সর্বমোট ৮২ জন। উনাদের মধ্যে ৫১ জন শহীদ হয়েছেন। আর ৩১ জন জীবিত ছিলেন।

মুহম্মদ ইয়াকুব আলী

পীরগঞ্জ, রংপুর

সুওয়াল: শিয়া কারা? শিয়াদের আগমন কি করে হলো?

জাওয়াব: শিয়া হচ্ছে ৭২টি বাতিল ও জাহান্নামী ফিরক্বার  অন্তর্ভুক্ত ১টি ফিরক্বার নাম। যাদের আক্বীদাহ সম্মানিত আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের খিলাফ বা বিপরীত। শিয়ারা মুসলমানের অন্তভুর্ক্ত নয়। এদের  বহু কুফরী আক্বীদা রয়েছে। শিয়ারা ২০টি দল- উপদলে বিভক্ত। শিয়ারা মহাসম্মানিত হাবীব মাহবূব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চেয়ে হযরত ইমামুল আউওয়াল মিন আহলে বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা আলী ইবনে আবী ত্বালিব আলাইহিস সালাম উনাকে বেশি মর্যাদা দিয়ে থাকে। নাঊযুবিল্লাহ! এছাড়া তারা বলে থাকে যে, তাদের অর্থাৎ শিয়াদের ইমামদের মর্যাদা আমাদের যিনি মহাসম্মানিত রসূল নুরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বেশি। নাঊযুবিল্লাহ!

অন্যান্য বাতিল ও জাহান্নামী ফিরকাগুলোর যেভাবে কুফরী আক্বীদা ও সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার বিরোধী আমলের কারণে উদ্ভব ঘটেছে শিয়া ফিরকারও সেভাবেই উদ্ভব ঘটেছে।

আহমদ আরিফা

উলিপুর, কুড়িগ্রাম

সুওয়াল: সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার সন্তান মোট কতজন ছিলেন?

জাওয়াব: সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ হযরত আন নূরুর রাবিয়াহ যাহরা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত আওলাদ বা সন্তান আলাইহিমুস সালাম মোট ৬ জন। ৩ জন আবনা (ছেলে) আলাইহিমুস সালাম এবং ৩ জন বানাত (মেয়ে) আলাইহিন্নাস সালাম।

মুহম্মদ ইরফান

কাপাসিয়া, গাজীপুর

সুওয়াল: একজন ব্যক্তি আমার কাছে জানতে চেয়েছেন “আল্লাহ” এ নাম মুবারক আল্লাহ পাক উনার খাছ নাম, না জাতী নাম? খাছ ও জাত এর মধ্যে পার্থক্য কি? দয়া করে বিশ্লেষণ করে জানাবেন।

জাওয়াব: “আল্লাহ” নাম মুবারক মহান আল্লাহ পাক উনার জাতী বা সত্বাগত নাম মুবারক অর্থাৎ মূল বা আসল নাম মুবারক। একইসাথে উক্ত “আল্লাহ” নাম মুবারক উনার খাছ নাম মুবারক উনারও অন্তর্ভুক্ত। খাছ শব্দের একাধিক অর্থের মধ্যে নিজস্ব, নির্দিষ্ট, একান্ত ইত্যাদি অর্থও রয়েছে।

কাজেই, “আল্লাহ” লফ্জ মুবারক বা নাম মুবারক মহান আল্লাহ পাক উনার খাছ নাম মুবারক ও জাতী নাম মুবারক উভয়টিই বলা যায়। খাছ ও যাত শব্দ দ্বয়ের মধ্যে শব্দ ও অর্থ উভয়ের মধ্যে পার্থক্য থাকলেও “আল্লাহ” লফ্জ বা শব্দ মুবারক উনার অর্থ মুবারক প্রকাশের ক্ষেত্রে এক ও অভিন্নতা রয়েছে।

মুহম্মদ রুস্তম আলী

পলাশাড়ী, গাইবান্ধা

সুওয়াল: সম্মানিত নতুন উম্মিয়্যা তরীক্বার বাইয়াত মুবারক উনার বাংলা উচ্চারণ লেখা পোস্ট করা যাবে কি?

জাওয়াব: আরবীর উচ্চারণ বাংলায় পুরোপুরি সঠিক হয় না। যার কারণে সম্মানিত উম্মিয়্যা তরীক্বার বাইয়াত মুবারকের নিয়মটি আরবীতেই প্রকাশ করা হয়েছে এবং হয়ে থাকে। তাই সম্মানিত উম্মিয়্যা তরীক্বার বাইয়াত মুবারকের নিয়ম মুবারক সহ সকল আরবী শব্দ বা বাক্যাবলী আরবীতেই শেখা উচিত বা শেখার জন্য চেষ্টা করা উচিত। এতে শব্দগত ও অর্থগত উভয় প্রকার ত্রুটি থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব।

 

মুহম্মদ ইমরান হুসাইন

কাহালু, বগুড়া।

সুওয়াল: আমার বাসায় কাসার থালা ও গ্লাস রয়েছে। এখন কাসার থালা ও গ্লাসে খেলে কি সুন্নত মুবারক আদায় হবে? জানতে বাসনা রাখি।

জাওয়াব: কাসার থালায় খাবার খাওয়া ও কাসার গ্লাসে পানি পান করা সুন্নত নয়। সুন্নত মুবারক হচ্ছে কাঠ ও মাটির বাসনে খাবার খাওয়া। আর কাঠের পেয়ালায় পানি পান করা খাছ সুন্নত মুবারক।

মুহম্মদ বাহাউল ইসলাম

মানিক নগর, ঢাকা।

 

সুওয়াল: সুন্নতি দেনমোহর কত টাকা হওয়া উচিত এবং আমার একবারে সবটুকু ৮০ হাজার টাকা দেনমোহর পরিশোধ করার ক্ষমতা নাই তাহলে কি আমি মাঝে মাঝে দেনমোহর বাবদ  অল্প পরিমাণ করে দিলে দেনমোহরের হক আদায় হবে? জানালে উপকৃত হব।

জাওয়াব: একশত সোয়া একত্রিশ তোলা বা ভরি রুপার বাজার মূল হচ্ছে সুন্নতী দেনমোহর মুবারকের পরিমাণ। হ্যাঁ, কারো পক্ষে যদি একবারে পুরো দেনমোহর পরিশোধ করার সামর্থ না থাকে তাহলে সে ধাপে ধাপে বা কিস্তি হিসেবেও দেনমোহর পরিশোধ করতে পারে। এক্ষেত্রে দেন মোহরের হক আদায় হবে।

 

নূরের ফোয়ারা

মানিকগঞ্জ

 

সুওয়াল: পুরুষের মোছ কতটুকু রাখা সুন্নাত?। চেঁছে ফেলা কি?

জাওয়াব: পুরুষের মোছ ভ্রম্ন পরিমাণ রাখা সুন্নত মুবারক। মোছ চেঁছে ফেলা মাকরূহ তাহরীমী।

 

মুহম্মদ ইমদাদ, মুন্সীগঞ্জ

সুওয়াল: নামাযে যদি ওয়াজিব তরক হয় তাহলে সাহূ সিজদা দিতে হয়, এখন আবার যদি সাহূ সিজদা দেয়ার সময় ওয়াজিব তরক হয় তখন কি করতে হবে?

জাওয়াব: এক নামাযের মধ্যে সাহূ সিজদা একবারই হয়ে থাকে। এক নামাযের মধ্যে যতটিই ওয়াজিব তরক হোক না কেন সাহূ সিজদা একবারই দিতে হবে।

মুহম্মদ আমীনুল ইসলাম, ফরিদপুর

সুওয়াল: রাতের বেলা কেউ যদি গরমে জামা খুলে ফেলে তাহলে এটা কি সম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার খিলাফ হবে?

জাওয়াব: না। গরমে হোক অথবা অন্য কোন প্রয়োজনে হোক অথবা নিরিবিলি অবস্থানকালে বা একাকী থাকা কালে কোর্তর্া বা জামা খুললে সেটা সুন্নত মুবারক উনার খিলাফ হবে না।

 

মুহম্মদ আনোয়ার হুসাইন, ফরিদপুর

 

সুওয়াল: বাবরী চুল রাখা কি জায়িয? কতটুকু রাখা যাবে?

জাওয়াব: বাবরী চুল রাখা কেবল জায়িযই নয়। বরং সম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত। বাবরী চুল চার প্রকারে রাখা সুন্নত মুবারক। (১) জুম্মা অথার্ৎ কানের লতি বরাবর, (২) লিম্মা অথার্ৎ জুম্মা হতে একটু নীচে, (৩) অফরা অথার্ৎ লিম্মা হতে আরো নীচে তথা কাঁধের উপরে। মনে রাখতে হবে, পুরুষের চুল কাঁধ স্পর্শ করা হারাম। (৪) নিছফু উযনাইহি অথার্ৎ কানের মাঝামাঝি বা মাঝ বরাবর।

মুহাম্মদ আব্দুস সালাম শিপন

ভুরুঙ্গামারী, কুড়িগ্রাম

সুওয়াল: গ্রামে-গঞ্জে বলে, সমাজের মসজিদ। যদি মসজিদ কমিটির কথা মত কেউ না চলে, তখন তাকে সমাজের মসজিদ থেকে বের করে দেয়। এ কাজটা ঠিক কি না?

জাওয়াব: না, এ কাজটা ঠিক নয়। তবে হ্যাঁ, মসজিদ কমিটি যদি পরিপূর্ণরূপে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে পরিচালিত হয় সেক্ষেত্রে মসজিদ কমিটির কথা মতো প্রত্যেককে চলার জন্য বলতে পারবে, বুঝাতে পারবে এবং তাকিদও করতে পারবে। এমনকি চলার জন্য বাধ্যও করতে পারবে।

মুহম্মদ আব্দুর রহমান

ভেড়ামারা, কুষ্টিয়া

সুওয়াল: চুল বাড়ানোর জন্য এক ধরণের তেল পাওয়া যায়। এটা ৩/৪ ঘন্টা দিতে থাকলে নাকি চুল বড় হয়। এটা কি মাথায় দেয়া যাবে?

জাওয়াব: চুল বড় করার জন্য তেল হোক, সেম্পু হোক ব্যবহার করা যাবে। এতে কোন নিষেধ নেই। তবে উক্ত তেল বা শ্যাম্পু অবশ্যই হারাম কেমিক্যাল যেমন এ্যালকোহল ইত্যাদি হতে মুক্ত হতে হবে।

 

মুহম্মদ সুলতান আহমদ

বরিশাল

সুওয়াল: ঘুমানোর সময় কাপড় হাটুর উপরে উঠে গেলে কি ওযূ ভেঙ্গে যাবে?

জাওয়াব: ঘুমানোর সময় হোক কিংবা জাগ্রত অবস্থায় হোক হাঁটুর উপরে কাপড় উঠলে ওযূ ভঙ্গ হবে না। মূলতঃ হাঁটুর উপর কাপড় উঠা ওযূ ভঙ্গের কারণ নয়। তবে ইচ্ছাকৃত হাঁটুর উপর কাপড় উঠালে ফরয তরক হওয়ার কারণে গুনাহ হবে। কিন্তু তাতেও ওযূ ভঙ্গ হবে না।

মুহম্মদ নূর আলম

হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর

সুওয়াল: হানাফি মাযহাব মতে সর্বনিম্ন দেন মোহরের পরিমান কত?

জাওয়াব: দশ দিরহাম। এক দিরহাম হচ্ছে এক ভরি বা এক তোলা রুপার চার ভাগের এক ভাগ।

 

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ