সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সংখ্যা: ১৯৫তম সংখ্যা | বিভাগ:

খন্দকার সেলিম আহমদ

পাহাড় কাঞ্চনপুর, টাঙ্গাইল

 

সুওয়াল: হাটহাজারী মাদরাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা ফেব্রুয়ারী-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত-অক্টোবর ২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রদত্ত æমীলাদ-ক্বিয়াম” সম্পর্কিত বক্তব্যের সমালোচনা করতে গিয়ে  এবং একই বিষয়ে এপ্রিল-২০০৫ ঈসায়ী ও মে-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় এছাড়াও মাসিক মদীনা পত্রিকা ফেব্রুয়ারী-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে একই ধরনের জাওয়াব দেয়া হয়েছে।

তাদের বক্তব্যগুলোর মধ্যে যে বিষয়গুলো আমার নিকট সন্দেহজনক তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো-

যেমন, মে-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে বলা হয়েছে, æসমাজে বহুল প্রচলিত যে মীলাদ দেখা যায়, তা সম্পূর্ণ কুরআন সুন্নাহর খিলাফ, যা কোন দিন ভালো কাজ হতে পারে না।” …

এখন আমাদের সুওয়াল হলো, সমাজে বহুল প্রচলিত যে মীলাদ শরীফ দেখা যায়, সে সম্পর্কে তাদের উল্লিখিত বক্তব্য কতটুকু দলীলসম্মত? কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।

জাওয়াব: সমাজে বহুল প্রচলিত মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফ সম্পর্কে হাটহাজারী মাদরাসার অখ্যাত মাসিক পত্রিকার জিজ্ঞাসার সমাধানে এবং অপর একটি পত্রিকার প্রশ্নোত্তর বিভাগে যা বলা হয়েছে তা শুদ্ধ তো হয়ইনি, বরং সম্পূর্ণই মিথ্যা, ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন এবং অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদ ও ফক্বীহগণের সর্বজনমান্য ও স্বীকৃত বিশ্ব বিখ্যাত ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহের বক্তব্যের বিপরীত ও বিরুদ্ধমত। যা ইতঃপূর্বে আমাদের æমাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ”-এর অনেক সংখ্যায় খ-ন করে সঠিক ও দলীলভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হয়েছে। আর æমাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ”-এর জাওয়াবকে খ-ন করা হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের পক্ষে আদৌ সম্ভব হয়নি, কিয়ামত পর্যন্ত হবেও না ইনশাআল্লাহ।

এরপরেও হাটহাজারীর মৌলভী ছাহেব এবং তাদের সকল সমজাতীয়রা বার বার ‘মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফ’ সম্পর্কে বিনা তাহক্বীকে ও বিনা দলীলে উক্ত ভুলেরই পুনরাবৃত্তি করে যাচ্ছে।

(ধারাবাহিক)

যেমন, উল্লিখিত প্রথম বক্তব্যের প্রথমেই তারা বলেছে, æসমাজে বহুল প্রচলিত যে মীলাদ দেখা যায়  তা সম্পূর্ণ কুরআন সুন্নাহর খিলাফ, যা কোন দিন ভালো কাজ হতে পারে না।” নাউযুবিল্লাহ।

এর জাওয়াবে বলতে হয় যে, কুরআন শরীফ-এর কোন আয়াত শরীফ-এ ‘সমাজে বহুল প্রচলিত মীলাদ শরীফকে কুরআন শরীফ-এর খিলাফ বলা হয়েছে এবং হাদীছ শরীফ-এর কোন হাদীছ শরীফ-এ ‘সমাজে বহুল প্রচলিত মীলাদ শরীফকে সুন্নাহ বা হাদীছ শরীফ-এর খিলাফ বলা হয়েছে, তা হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবরা কুরআন শরীফ-এর আয়াত শরীফ, হাদীছ শরীফ-এর ইবারতসহ দলীল উল্লেখ করেনি। সুতরাং তাদের দলীলবিহীন, ইবারতবিহীন, মনগড়া ও মিথ্যা বক্তব্য মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।

নি¤েœ কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস এবং বুযূর্গদের আমল দ্বারা প্রমাণিত বিস্তারিত দলীল-আদিল্লাহ পেশ করা হলো-

স্মরণীয় যে, মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফ-এর মূল উদ্দেশ্য হলো সংক্ষেপে আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার ছানা-ছিফত ও বিলাদত শরীফ সম্পর্কে আলোচনা করা এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার প্রতি ছলাত-সালাম পাঠ করা।

এক কথায় মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফ বলতে কুরআন শরীফ তিলাওয়াত ও আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার ছানা-ছিফত, তা’রীফ, প্রশংসা, উনার মু’জিযা বর্ণনা, বিলাদত শরীফ-এর আলোচনা, না’ত, শে’র, কাছীদা শরীফ পাঠ ও উনার প্রতি ছলাত ও সালাম  প্রেরণ করা ইত্যাদি পাঠ করা হয়।

যেমন- মীলাদ শরীফ-এর প্রথমেই কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা হয়।

অতঃপর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার উপর ছলাত পাঠ করা হয়। কারণ ছলাত পাঠ করা আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনাদেরই নির্দেশ।

ছলাত-সালাম পাঠ সম্পর্কে আল্লাহ পাক-উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-

من صلى على مائة كتب الله بين عينيه براءة من النفاق وبراءة من النار.

অর্থ: æযে ব্যক্তি আমার প্রতি একশবার দরূদ শরীফ পাঠ করবে আল্লাহ পাক তার দু’চোখের মাঝখানে কুদরতিভাবে লিখে দিবেন, তাকে মুনাফিকী ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেয়া হলো।” (তবারানী, ছগীর)

ذكر الانبياء من العبادة

অর্থ: æনবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম-উনাদের আলোচনা ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত।” (দাইলামী)

ما جلس قوم مجلسا لم يذكروا لله تعالى فيه ولم يصلوا على نبيه صلى الله عليه وسلم الا كان عليهم من الله ترة يوم القيامة فان شاء عذبهم وان شاء غفرلهم.

অর্থ: æকোথাও যদি লোকজন কোন মজলিসে একত্রিত হয় বা বসে অথচ তারা সেখানে আল্লাহ পাক-উনার যিকিরও করেনা এবং রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার প্রতি দরূদ শরীফও পাঠ করেনা। তাহলে ঐ সকল লোকের জন্য আল্লাহ পাক-উনার তরফ থেকে ক্বিয়ামত দিবসে অনুতাপের কারণ হবে এবং আল্লাহ পাক ইচ্ছা করলের তাদেরকে শাস্তি দিবেন এবং ইচ্ছা করলে তাদেরকে ক্ষমা করবেন।”

ما اجتمع قوم فى بيت من بيوت الله يتلون كتاب الله ويتدارسونه بينهم الا نزلت عليهم السكينة وغشيتهم الرحمة وحفتهم الملئكة وذكرهم الله فيمن عنده.

অর্থ: æযখন কোন এলাকার লোক আল্লাহ পাক-উনার ঘরে অথবা কোন স্থানে একত্রিত হয়ে আল্লাহ পাক-উনার কিতাব তিলাওয়াত করে এবং পরস্পর দ্বীনি আলোচনা করে তখন আল্লাহ পাক-উনার রহমতের ফেরেশতা উনাদের দ্বারা তাদের বেষ্টন করে নেন, আল্লাহ পাক-উনার রহমত তাদের উপর ছেয়ে যায় এবং তাদের উপর আল্লাহ পাক-উনার নিকট হতে শান্তি বর্ষিত হয় এবং স্বয়ং আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন উনার নিকটবর্তী ফেরেশতা উনাদের সাথে সেই মাহফিলের লোকদের সম্পর্কে আলোচনা করেন।” (মিশকাত শরীফ)

সুতরাং মহান আল্লাহ পাক-উনার নির্দেশ صلو عليه (তোমরা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়া সাল্লাম-উনার উপর দরূদ শরীফ পাঠ কর) এ আয়াত শরীফ-এর নির্দেশ পালনার্থে এবং হাদীছ শরীফ-এর দরূদ শরীফ-এর প্রতি গুরুত্ব অনুধাবন করে মীলাদ শরীফ-এ কুরআন শরীফ এবং দরূদ শরীফ পাঠ করা হয়।

উপরোক্ত জবাব থেকে একথা প্রমাণিত হচ্ছে যে, আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফ-এ আর আল্লাহ পাক-উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হাদীছ শরীফ-এ পর্যায়ক্রমে কুরআন শরীফ তিলাওয়াত, যিকরুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার প্রতি ছলাত-সালাম পাঠ করা ও ফাযায়িল-ফযীলত বর্ণনা করা ইত্যাদি সম্পর্কে আদেশ দিয়েছেন, নির্দেশ করেছেন ও গুরুত্বারোপ করেছেন।

এক কথায় মীলাদ মাহফিলে তাই করা হয়। তাহলে এত দলীল-আদিল্লাহ থাকার পরও কি করে একথা বলা যেতে পারে, æসমাজে বহুল প্রচলিত যে মীলাদ দেখা যায়, তা সম্পূর্ণ কুরআন সুন্নাহর খিলাফ, যা কোন দিন ভালো কাজ হতে পারে না।”… নাঊযুবিল্লাহ!

প্রকৃতপক্ষে হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের এ বক্তব্য আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনাদের আদেশ-নির্দেশের সম্পূর্ণ খিলাফ হওয়ার কারণে কাট্টা কুফরী হয়েছে। কোন মুসলমান নামধারী ব্যক্তি কুফরী করলে সে মুরতাদ হয়ে যায়। আর মুরতাদের শরয়ী ফায়ছালা হলো তাকে তিন দিন সময় দেয়া হবে তওবা করার জন্য অন্যথায় মুরতাদের একমাত্র শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদন্ড ।

 

মুহম্মদ হুসাইন

নরসিংদী

 

সুওয়াল: মাসিক মদীনা নভেম্বর-২০০৯ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে নি¤েœাক্ত প্রশ্নোত্তর ছাপা হয়-

প্রশ্ন: মুসলমানগণ যে টুপি মাথায় পরেন তার আকৃতি সম্পর্কে যেমন গোল হওয়া চাই, না কিসতির মত লম্বা হওয়া চাই স্পষ্ট হাদীছ শরীফ আছে কিনা? হাদীছ শরীফ-এর নাম উল্লেখ করে জানাবেন আশা করি।

উত্তর: টুপি পরা সুন্নত। হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম টুপি পরেছেন এবং পাগড়ী পরার সময় পাগড়ীর নিচে টুপি পরতে তাগিদ দিয়েছেন। টুপি এবং পোশাক-পরিচ্ছদের ব্যাপারে তাই সুন্নত বলে স্বীকৃত যা সমকালীন নির্ভরযোগ্য ওলামা-মাশায়িখগণের মধ্যে সাধারণভাবে প্রচলিত। হাদীছ শরীফ-এ (শামায়িলে-তিরমিযী) বলা হয়েছে, হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মাথার টুপি ছিল চেপ্টা, যা মাথার সাথে লেগে থাকতো। সেই টুপির অনুকরণে ছাহাবীগণ এবং পরবর্তী যুগের ওলামা-মাশায়িখগণ কাপড়ের দ্বারা নির্মিত টুপি তৈরি করেছেন। কারো টুপি গোল ছিল, কারো টুপি কিসতি আকৃতির ছিল, কারো টুপি পাঁচকল্লি বা তিন কল্লির ছিল। এইসব ধরনের টুপি যেহেতু ওলামা-মাশায়িখগণের মধ্যে প্রচলিত ছিল এবং এ যুগেও রয়েছে, সুতরাং এসব ধরনের টুপিই সুন্নত অনুযায়ী মনে করে পরা যেতে পারে। অনুসরণযোগ্য ওলামাগণের পছন্দনীয় পোশাকাদি নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করা অভিপ্রেত নয়।

মাসিক মদীনা পত্রিকার উক্ত প্রশ্নের উত্তরে যে বিষয়গুলো আমার কাছে আপত্তিকর মনে হয়, তাহলো-

১. আল্লাহ পাক-উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে টুপি ও পোশাক-পরিচ্ছদের ব্যাপারে কোন সুন্নতের বর্ণনা নেই।

২. টুপি ও পোশাক-পরিচ্ছদের ব্যাপারে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে বাদ দিয়ে সমকালীন আলিমদেরকে অনুসরণ করতে হবে।

৩. শামায়িলে তিরমিযী-এর বরাতে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার নাম মুবারক এ মিথ্যারোপ করা হয়েছে।

৪. হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত ‘কুম্মাতুন (كمة) ও বুতহুন (بطح) শব্দের মনগড়া অর্থ ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

৫. হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারাও কিসতি, পাঁচ কল্লি, তিন কল্লি টুপি পরিধান করেছেন।

৬. সমকালীন আলিমগণের মধ্যে কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী আমল জারি থাকলেও সেটাই অনুসরণ করতে হবে। বিরোধিতা করা যাবেনা।

উপরোক্ত প্রতিটি বিষয়ের শরীয়তসম্মত জাওয়াব দিয়ে আমাদের ঈমান-আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।

জাওয়াব: মাসিক মদীনায় প্রদত্ত টুপি সম্পর্কিত প্রশ্ন-উত্তরের প্রেক্ষিতে আপনার তৃতীয় সুওয়াল হচ্ছে-

৩. শামায়িলে তিরমিযী-এর বরাতে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার নাম মুবারক এ মিথ্যারোপ করা হয়েছে।

এর জবাবে প্রথমত বলতে হয় যে, শামায়িলে তিরমিযী-এর বরাতে রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার টুপি সম্পর্কিত মাসিক মদীনার সম্পাদক মাহিউদ্দীনের উক্ত বক্তব্য ভুল, দলীলবিহীন, ডাহা মিথ্যা। কারণ শামায়িলে তিরমিযীতে রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার টুপি সম্পর্কে কোন বর্ণনা উল্লেখ নেই। সুতরাং প্রমাণিত হলো শামায়িলে তিরমিযী-এর বরাতে রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার টুপি সম্পর্কিত মাসিক মদীনার সম্পাদক মাহিউদ্দীনের উক্ত বক্তব্য ভুল, দলীলবিহীন, ডাহা মিথ্যা, যা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত ও জাহান্নামী হওয়ার কারণ। কেননা হাদীছ শরীফ-এ স্পষ্ট ইরশাদ হয়েছে, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন-

من كذب على متعمدا فليتبوا مقعده من النار

অর্থ: æযে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যারোপ করবে সে যেন যমিনে থাকতেই তার স্থান জাহান্নামে নির্ধারণ করে নিল। অর্থাৎ সে জাহান্নামী।” (বুখারী শরীফ, মিশকাত শরীফ)

দ্বিতীয়ত: বলতে হয় যে, মাসিক মদীনার সম্পাদক মাহিউদ্দীন সাহেব যদি সত্যবাদীই হয়ে থাকে তবে পরবর্তী সংখ্যায় প্রমাণ পেশ করুক শামায়িলে তিরমিযী-এর কোন বাবে, কত পৃষ্ঠায় রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার টুপি মুবারক-এ বর্ণনা উল্লেখ আছে। কিন্তু মাসিক মদীনার সম্পাদক মাহিউদ্দীন সাহেবের পক্ষে তা কস্মিনকালেও সম্ভব হবে না।

সুতরাং আবারো প্রমাণিত হলো যে, শামায়িলে তিরমিযী-এর বরাতে রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার টুপি সম্পর্কিত মাসিক মদীনার সম্পাদক মাহিউদ্দীনের উক্ত বক্তব্য রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার প্রতি সুস্পষ্ট মিথ্যারোপের শামিল। যা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত ও জাহান্নামী হওয়ার কারণ।

তৃতীয়ত বলতে হয় যে, শামায়িলে তিরমিযীতে নয়। বরং æআদদিমিয়াতী, মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া লিল কুস্তলানী, শরহে মাওয়াহিব লিয্যুরক্বানী” ইত্যাদি বিশ্ব বিখ্যাত কিতাবগুলোতে রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার টুপি সম্পর্কে অনেক বর্ণনা উল্লেখ আছে-

যেমন হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ আছে-

عن عائشة رضى الله تعالى عنها قالت كانت له كمة بيضاء

অর্থ: æহযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সাদা রংয়ের গোল টুপি ছিল।”

চতুর্থ বলতে হয় যে, শামায়িলে তিরমিযীতে নয়। তিরমিযী শরীফ-এর ১ম খন্ডের ২১০ পৃষ্ঠায়, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার টুপি সম্পর্কে নয়। বরং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের টুপি সম্পর্কে উল্লেখ আছে।

যেমন হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ আছে-

عن ابى كبشة رضى الله تعالى عنه يقول كانت كمام اصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم بطحا.

অর্থ: æহযরত আবূ কাবশা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার ছাহাবীগণ উনাদের টুপি ছিল গোলা।”

(তিরমিযী শরীফ ১ম খন্ড, আবওয়াবুল লিবাস ২১০ পৃষ্ঠা, মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত ত্বীবী, তালীকুছ ছবীহ, মুযাহিরে হক্ব)

হাদীছ শরীফ-এর উপরোক্ত বর্ণনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার টুপি মুবারক ছিল গোল, সাদা যা চতুর্দিক থেকে মাথা মুবারকের সাথে লেগে থাকতো। তবে উক্ত গোল টুপি মুবারক কি ধরণের ছিল, তার সুন্দর ও সুস্পষ্ট বর্ণনা সম্পর্কে æমজমুয়ায়ে মালফুযাতে খাজেগানে চিশত” কিতাবের ১ম বাবের ১০-১১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

حضرت حاضی شریف زندنی رحمۃ اللہ علیہ ارشاد فرمایا کہ اے عثمان جبکہ تمنے کلاہ چھار ترکی سرپر رکھی ھے. لازم ھے کہ اسکا حق بجالاؤگے … حضرت خواجہء عالم صلی اللہ علیہ وسلم نے جس وقت سے اس کلاہ کو اپنے سر مبارک پر رکھا فقر  وفاقہ اختیار کیا. بعد اسکے حضرت علی کرم اللہ وجہہ نے پھنا اور فقر وفاقہ کو اپنے  ذات پر لازم گردانا. اسیطرح سلسلۃ مچھ تک پھنچا.

অর্থ: æহযরত হাজী শরীফ জিন্দানী রহমতুল্লাহি আলাইহি … বলেন, হে ওছমান হারূনী! (রহমতুল্লাহি আলাইহি) যখন আপনি চার টুকরা বিশিষ্ট টুপি মাথায় পরিধান করেছেন, তখন আপনার জন্য তার হক আদায় করা আবশ্যক। ..

সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন চার টুকরা বিশিষ্ট টুপি পরিধান করেন, তখন দারিদ্র্যতা ও উপবাসকে গ্রহণ করেন। তারপর হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু চার টুকরা বিশিষ্ট টুপি পরিধান করেন এবং দারিদ্র্যতা ও উপবাসকে নিজের জন্য জরুরী করে নেন। এরূপভাবে পর্যায়ক্রমে চার টুকরা বিশিষ্ট টুপি আমার নিকট পৌঁছে। (আনিসুল আরওয়াহ)

æইসরারুল আওলিয়া” কিতাবের ১১৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, æহে দরবেশগণ! চার টুকরা বিশিষ্ট গোল টুপিই প্রকৃত টুপি। হযরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম তিনি বেহেশত হতে এ টুপি এনে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পরিধান করতে দিয়ে বলেন, আপনি পরিধান করুন এবং আপনি যাকে ইচ্ছা তাকে এ টুপি দান করে আপনার খলীফা নিযুক্ত করুন। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি চার টুকরা বিশিষ্ট গোল টুপিটি মাথায় পরিধান করেন এবং পরবর্তীতে হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত উমর ফারূক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনাদেরকে একটি করে টুকরা দান করেন।” (অনুরূপ আনিসুল আরওয়াতেও উল্লেখ আছে)

অতএব প্রমাণিত হলো যে, æচার টুকরা বিশিষ্ট সাদা ও গোল টুপিই হচ্ছে খাছ সুন্নতী টুপি। কারণ আল্লাহ পাক-উনার রসূল নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম ও হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের টুপি ছিল সাদা, গোল ও চার টুকরা বিশিষ্ট। এছাড়াও সাদা ও চার টুকরা বিশিষ্ট গোল টুপির বহু দলীল হাদীছ শরীফ ও অন্যান্য নির্ভরযোগ্য ও অনুসরণীয় কিতাবসমূহে রয়েছে।

কাজেই, শামায়িলে তিরমিযী-এর বরাতে রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার টুপি সম্পর্কিত মাসিক মদীনার সম্পাদক মাহিউদ্দীনের উক্ত বক্তব্য ভুল, দলীলবিহীন, ডাহা মিথ্যা, যা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত ও জাহান্নামী হওয়ার কারণ বলে প্রমানিত হলো। এ ধরেেনর বক্তব্য থেকে সংশ্লিষ্ট সকলকেই খাছ তওবা করতে হবে। [বিশেষ দ্রষ্টব্য: চার টুকরা বিশিষ্ট সাদা ও গোল টুপিই হচ্ছে খাছ সুন্নতি টুপি। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ-এর ৫৩, ৫৪, ৫৫, ৫৬, ৫৭, ৫৮, ৫৯তম সংখ্যাগুলো পাঠ করলে টুপি সম্পর্কিত প্রশ্নোল্লিখিত বিষয়সহ যাবতীয় বিষয়ে সুস্পষ্ট দলীলভিত্তিক ফায়সালা পেয়ে যাবেন]

 

মুহম্মদ আজিজুর রহমান

সোনাপুর, নোয়াখালী

 

সুওয়াল: যারা শুধুমাত্র কুরআন শরীফ মানে কিন্তু হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস মানে না শরীয়তে তাদের কথা কতটুকু গ্রহণযোগ্য?

জাওয়াব: শরীয়তের ফতওয়া হলো, যারা শুধুমাত্র কুরআন শরীফ মানে বলে দাবি করে, তারা কাট্টা কাফিরের অন্তর্ভুক্ত। কাজেই তাদের কথা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।

স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

لا الفين احدكم متكيا على اريكته ياتيه الامر من امرى مما امرت به او نهيت عنه فيقول لا ادرى ما وجدنا فى كتاب الله اتبعناه.

অর্থ: আমি তোমাদের কাউকে যেন এরূপ না পাই সে তার গদিতে হেলান দিয়ে বসে থাকবে আর তার নিকট আমার আদেশাবলীর কোন একটি আদেশ পৌঁছবে যাতে আমি কোন বিষয় আদেশ করেছি অথবা কোন বিষয় নিষেধ করেছি তখন সে বলবে আমি এসব কিছু জানিনা, আল্লাহ তায়ালা-উনার কিতাবে অর্থাৎ কুরআন শরীফ-এ যা পাব তারই অনুসরণ করবো। (আহমদ, আবূ দাউদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ)

এ হাদীছ শরীফ-এর মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এ ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে, মুসলমান দাবিদারদের মধ্যে এমন এক শ্রেণীর অজ্ঞ লোক বের হবে যারা হাদীছ শরীফকে শরীয়তের দলীল নয় বলতে দ্বিধাবোধ করবে না। অথচ কুরআন শরীফ যেরূপ ওহী তদ্রƒপ হাদীছ শরীফও ওহী। কেননা স্বয়ং আল্লাহ পাক নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে ইরশাদ করেছেন-

وما ينطق عن الهوى ان هو الا وحى يوحى.

অর্থ: তিনি ওহী ব্যতীত নিজের থেকে কোন কথা বলেন না। (সুরা নজম-৩,৪)

হাদীছ শরীফ-এ আরো ইরশাদ হয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন-

الا انى اتيت القران ومثله معه.

অর্থ: সাবধান! জেনে রাখ, নিশ্চয়ই আমাকে কুরআন শরীফ দেয়া হয়েছে এবং তার সাথে তার অনুরূপ (হাদীছ শরীফ) দেয়া হয়েছে।

একইভাবে ইজমা ও ক্বিয়াস-এর সমর্থনে বহু আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে। সেগুলো মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ-এর বিগত সংখ্যাগুলোর মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে। তাই এখানে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো।

যেমন কালামুল্লাহ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-

واتبع سبيل من اناب الى

অর্থ: তোমরা ঐ ব্যক্তির পথ অনুসরণ করে চলো; যিনি আমার দিকে রুজু রয়েছেন।

আরো ইরশাদ হয়েছে-

اطيعوا الله واطيعوا الرسول واولى الامر منكم

অর্থ: আল্লাহ পাক-উনার ইতায়াত করো, আল্লাহ পাক-উনার হাবীব-উনার ইতায়াত করো এবং তোমাদের মধ্যে যারা উলিল আমর উনাদের ইতায়াত করো।

كذالك جعلناكم امة وسطا لتكون شهداء على الناس

অর্থ: এরূপে আমি তোমাদেরকে উম্মতে ওয়াসাত করেছি, যাতে তোমরা মানুষের জন্য সাক্ষী হতে পার।

‘ওয়াসাত’ শব্দের অর্থ মাধ্যম, শ্রেষ্ঠ বা নির্দোষ সাক্ষীর যোগ্য।

উল্লেখ্য, উম্মতে হাবীবীর সবচেয়ে উত্তম শ্রেণীর ব্যক্তিত্ব মুজতাহিদগণ একসাথে যদি কোন বিষয় সম্পর্কে ভাল অথবা মন্দ বলে সাক্ষ্য দান করেন তা আল্লাহ পাক-উনার নিকট অবশ্যই ভাল বলেই গণ্য।

হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন-

لا يجمع الله امتى على ضلاله ويد الله على الجماعة ومن شذ شذ فى النار.

অর্থ: আল্লাহ পাক আমার উম্মতকে গোমরাহীর উপর একমত করবেন না এবং জামায়াতের উপর আল্লাহ পাক-উনার হাত রয়েছে। উক্ত জামায়াতের অন্তর্ভুক্ত যে থাকবে না সে জাহান্নামী হবে।

এ হাদীছ শরীফ-এর দ্বারাই প্রমাণিত হচ্ছে মুজতাহিদগণের কোন বিষয় একমত হওয়া অর্থাৎ উনাদের ইজমা শরীয়তের দলীল।

‘ক্বিয়াস’ হলো কুরআন ও সুন্নাহ’র হুকুমগুলির যে কারণ নির্ধারিত হয়েছে, সে কারণ অন্যত্র পাওয়া গেলে সেখানেও সেই হুকুমকে প্রয়োগ করা। যেমন আল্লাহ তায়ালা বণী নযীর গোত্রের একটি শাস্তিমূলক ঘটনা উল্লেখ করার পর বলেন-

فاعتبروا يا اولى الابصار

অর্থ: হে চক্ষুষ্মান ব্যক্তিগণ! তোমরা এর দ্বারা উপদেশ গ্রহণ করো।

অর্থাৎ তোমরা নিজেদের অবস্থার সাথে তাদের অবস্থা মিলিয়ে দেখ। তাদের শাস্তির যে কারণ হয়েছিল সে কারণ তোমাদের মধ্যে যদি পাওয়া যায় তাহলে তোমাদেরও সেরূপ শাস্তি হবে।

হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন হযরত মুয়ায রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে ইয়ামানের গভর্নর করে পাঠিয়েছিলেন তখন উনাকে বলেছিলেন-

بم تقضى يا معاذ فقال بكتاب الله قال فان لم تجد قال بسنة رسول الله  قال فان لم تجد قال اجتهد برائى فقال الحمد لله الذى وفق رسول رسول الله بما يرضى به رسوله.

অর্থ: হে মুয়ায রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আপনি (সেখানে) কিসের সাহায্যে ফায়ছালা করবেন। তিনি বললেন, আল্লাহ তায়ালা-উনার কিতাবের মাধ্যমে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, যদি তাতে না পান? তিনি বললেন, আল্লাহ তায়ালা-উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার (আপনার) সুন্নাহ বা হাদীছ শরীফ-এর মাধ্যমে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, তাতেও যদি না পান? তিনি উত্তরে বললেন, তাহলে (কিতাব ও সুন্নাহর আলোকে) আমি ইজতিহাদ করে ফায়ছালা করবো। এ উত্তর শুনে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, আল্লাহ পাক-উনার শুকরিয়া, তিনি উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার প্রতিনিধিকে এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণের তাওফীক দিয়েছেন যাতে উনার হাবীব খুশি হন। অর্থাৎ এ হাদীছ শরীফখানা ক্বিয়াস-এর অন্যতম দলীল।

মোটকথা, কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর মতো ইজমা ও ক্বিয়াসও শরীয়তের অপর দুটি দলীল।

কাজেই, যারা কেবল কুরআন শরীফ মানার কথা বলে কিন্তু হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস অস্বীকার ও অমান্য করে তারা মুসলমানের অন্তর্ভুক্ত নয়। তারা কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী।

উল্লেখ্য, যারা হাদীছ শরীফ না মেনে শুধুমাত্র কুরআন শরীফ মানার কথা বলছে তাদের প্রতি জিজ্ঞাসা- তারা কুরআন শরীফ কোথায় পেল, কার মাধ্যমে পেল? কিভাবে পেল? তাদেরকে কে বলেছে যে, এটা কুরআন শরীফ? এসব জিজ্ঞাসার একটাই জাওয়াব তাহলো নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার মাধ্যমে যেভাবে মানুষ হাদীছ শরীফ লাভ করেছে তদ্রƒপ একইভাবে কুরআন শরীফও লাভ করেছে। হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামই বলেছেন এটা হলো কুরআন শরীফ। উনার বলা থেকেই আমরা কুরআন শরীফ চিনেছি ও জেনেছি। উনার বলাটা কি হাদীছ শরীফ নয়? তাহলে হাদীছ শরীফ ব্যতীত কুরআন শরীফ চেনা, জানা ও মানার যৌক্তিকতা কোথায়? হাদীছ শরীফ ছাড়া কুরআন শরীফ জানা, বুঝা ও মানা কি আদৌ সম্ভব হবে? কস্মিনকালেও সম্ভব হবে না।

আরো উল্লেখ্য, আমরা যে নামায পড়ে থাকি, নামায কত রাকায়াত তার বর্ণনা কি কুরআন শরীফ-এ আছে? আদৌ নেই। নামায কোন ওয়াক্তে কত রাকায়াত পড়তে হবে তার বর্ণনা রয়েছে হাদীছ শরীফ-এর মধ্যে।

এমনিভাবে ইসলামের আরো অনেক বিষয় রয়েছে যার বর্ণনা কুরআন শরীফ-এ নেই। তার বর্ণনা রয়েছে হাদীছ শরীফ-এর মধ্যে।

তাহলে যারা কেবল কুরআন শরীফ মানার দাবি করছে তাদের পক্ষে কি করে ইসলামের হুকুম-আহকামগুলো পালন করা সম্ভব? কস্মিনকালেও সম্ভব নয়। অতএব, বলার অপেক্ষা রাখেনা, হাদীছ শরীফ অতঃপর ইজমা ও ক্বিয়াস অস্বীকার ও অমান্যকারী ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষে ইসলাম তথা শরীয়তকেই অস্বীকার ও অমান্যকারী কাট্টা কাফিরের অন্তর্ভুক্ত।

 

 

মুহম্মদ ফারুকুর রহমান

রাজারহাট, কুড়িগ্রাম

 

সুওয়াল: অনেক হুযূরদের মুখে শুনে থাকি আল্লাহ পাক হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনাকে সৃষ্টি না করলে হযরত আদম আলাইহিস সালাম-উনাকেও সৃষ্টি করতেন না, এমনকি কোন মাখলূকই সৃষ্টি করতেন না। জানতে চাই, এ ব্যাপারে কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এ কোন দলীল-প্রমাণ আছে কিনা? থাকলে আয়াত নম্বর ও হাদীছ শরীফ-এর কিতাবের নামসহ জানাবেন।

জাওয়াব: হ্যাঁ, এ বিষয়ে সরাসরি হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে। আর হাদীছ শরীফ-এ থাকা মানে কুরআন শরীফ-এ থাকা। অর্থাৎ হাদীছ শরীফ-এ থাকা আর কুরআন শরীফ-এ থাকা একই কথা। কারণ আল্লাহ পাক সূরা নজম-এর ৩ ও ৪ নম্বর আয়াত শরীফ-এ ইরশাদ করেন-

وما ينطق عن الهوى ان هو الا وحى يوحى

অর্থ: হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ওহী ব্যতীত নিজের থেকে কোন কথা বলেন না।

কাজেই, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হলেন সৃষ্টির উৎস, সৃষ্টির মূল এবং তিনিই প্রথম সৃষ্টি অর্থাৎ উনার অজুদ মুবারক নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সর্বপ্রথম সৃষ্টি করা হয়। এবং সেই নূর মুবারক থেকেই পর্যায়ক্রমে সমস্ত সৃষ্টিকে আল্লাহ পাক কুদরতিভাবে সৃষ্টি করেন।

সুতরাং, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সৃষ্টি করা না হলে কুল-কায়িনাতের কোনকিছুই সৃষ্টি করা হতো না তা তো অবশ্যই সত্য কথা। শুধু তাই নয় হাদীছে কুদসীতে আল্লাহ পাক বলেন, হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!

لولاك لما اظهرت الربوبية

অর্থ: আপনি যদি না হতেন অর্থাৎ আপনাকে যদি সৃষ্টি না করতাম তাহলে আমি আমার রুবূবিয়াতও প্রকাশ করতাম না। সুবহানাল্লাহ! (কানযুল উম্মাল)

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সৃষ্টি করা না হলে হযরত আদম আলাইহিস সালামসহ কোন নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম, কোন জিন-ইনসান, কোন ফেরেশতা এমনকি সৃষ্টিরাজির কোন কিছুই সৃষ্টি করা হতো না।

এ সম্পর্কে নি¤েœ বর্ণিত হাদীছ শরীফগুলো তার দলীল।

যেমন হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে-

عن جابر رضى الله تعالى عنه قال قلت يا رسول الله بابى انت وامى اخبرنى عن اول شىء خلق الله تعالى قبل الاشياء قال يا جابر ان الله تعالى قد خلق قبل الاشياء نور نبيك من نوره فجعل ذالك النور يدور بالقدرة حيث شاء الله تعالى ولم يكن فى ذالك الوقت لوح ولا قلم ولا جنة ولا نار ولا ملك ولا سماء ولا ارض ولا شمس ولا قمر ولا جنى ولا انسى فلما اراد الله تعالى ان يخلق قسم ذالك النور اربعة اجزاء فخلق من الجزء الاول القلم ومن الثانى اللوح ومن الثالث العرش ثم قسم الرابع اربعة اجزاء فخلق من الاول حملت العرش ومن الثانى الكرسى ومن الثالث باقى الملئكة ثم قسم الرابع اربعة اجزاء فخلق من الاول السموت ومن الثانى الارضين ومن الثالث الجنة والنار ثم قسم الرابع اربعة اجزاء فخلق من الاول نور ابصار المؤمنين ومن الثانى نورقلوبهم وهى المعرفة بالله تعالى ومن الثالث نور انسهم وهو التوحيد لا اله الا الله محمد رسول الله.

অর্থ: হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আরজ করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক, আমাকে জানিয়ে দিন যে, আল্লাহ পাক সর্বপ্রথম কোন জিনিস সৃষ্টি করেন? তিনি বললেন, হে জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আল্লাহ পাক সব কিছুর পূর্বে আপনার নবীর নূর মুবারককে সৃষ্টি করেন।’ অর্থাৎ আল্লাহ পাক-উনার প্রথম সৃষ্টিই হচ্ছেন নূরে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। অতঃপর সেই নূর মুবারক আল্লাহ পাক-উনার কুদরতের মধ্যে অবস্থান করছিলেন। আর সে সময় লওহো, ক্বলম, বেহেশত, দোযখ, ফেরেশতা, আসমান, যমীন, চন্দ্র, সূর্য, মানুষ ও জ্বিন কিছুই ছিল না। অতঃপর আল্লাহ পাক যখন মাখলূকাত সৃষ্টি করতে ইচ্ছা পোষণ করলেন তখন তিনি সেই নূর মুবারক অর্থাৎ নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে একটা অংশ নিয়ে তাকে চার ভাগ করে তার

প্রথম ভাগ দ্বারা ক্বলম, দ্বিতীয় ভাগ দ্বারা লওহে মাহফূয, তৃতীয় ভাগ দ্বারা আরশে মুয়াল্লা সৃষ্টি করেন। অতঃপর চতুর্থ ভাগকে আবার চার ভাগ  করেন। তার প্রথম ভাগ দ্বারা আরশ বহনকারী ফেরেশতা উনাদেরকে, দ্বিতীয় ভাগ দ্বারা কুরসী, তৃতীয় ভাগ দ্বারা অন্যান্য ফেরেশতা উনাদেরকে সৃষ্টি করেন। অতঃপর চতুর্থ ভাগকে আবার চার ভাগ করেন। তার প্রথম ভাগ দ্বারা আসমান, দ্বিতীয় ভাগ দ্বারা যমীন, তৃতীয় ভাগ দ্বারা বেহেশত ও দোযখ সৃষ্টি করেন। অতঃপর চতুর্থ ভাগকে আবার চার ভাগ করেন। তার প্রথম ভাগ দ্বারা মু’মিন বান্দাদের চোখের জ্যোতি, দ্বিতীয় ভাগ দ্বারা তাদের ক্বলবের জ্যোতি আর এটাই মূলত আল্লাহ তায়ালার মা’রিফাত, তৃতীয় ভাগ দ্বারা মু’মিনদের উনসের নূর অর্থাৎ তাওহীদ বা একত্ববাদের নূর তথা কালিমা শরীফ-এর নূর সৃষ্টি করেন। (এমনিভাবে উক্ত নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে পর্যায়ক্রমে তামাম মাখলূক্বাত সৃষ্টি করেন)।

(মুসনাদে আব্দির রয্যাক, দালায়িলুন নুবুওওয়াত, মাদারিজুন নুবুওওয়াত, আফদ্বালুল কুরা, মাতালিউল মাসাররাত, তারীখুল খামীছ, মাওয়াহিব, শরহে যুরকানী, নূরে মুহম্মদী, ফতওয়ায়ে হাদীছিয়াহ, নশরুত তীব  ইত্যাদি।)

হাদীছ শরীফ-এ আরো বর্ণিত রয়েছে-

عن ابن عباس رضى الله تعالى عنهما قال اوحى الله الى عيسى عليه السلام يا عيسى امن بمحمد وامر من ادركه من امتك ان يؤمنوا به فلو لا محمد ما خلقت ادم ولولا محمد ما خلقت الجنة والنار ولقد خلقت العرش على الماء فاضطرب فكتبت عليه لا اله الا الله محمد رسول الله فسكن. فاذا حديث صحيح الاسناد.

অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা উনারা বর্ণনা করেন, মহান আল্লাহ পাক জলীলুল ক্বদর নবী ও রসূল হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম-উনাকে ওহী করলেন। হে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম! আপনি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার প্রতি ঈমান আনুন এবং আপনার উম্মতের মধ্যে যাঁরা উনাকে পেতে চায় তাঁদেরকে নির্দেশ করুন, তাঁরা যেন উনার প্রতি ঈমান আনে। যদি রসূলুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সৃষ্টি না হতেন, তাহলে হযরত আদম ছফীউল্লাহ আলাইহিস সালাম-উনাকে সৃষ্টি করতাম না। আমি যখন পানির উপর আরশ তৈরি করলাম তখন তা টলমল করছিল, যখনই আরশের মধ্যে

لا اله الا الله محمد رسول الله صلى الله عليه وسلم

(লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লিখে দেই তৎক্ষণাৎ আরশ স্থির হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ! এই হাদীছ শরীফখানার সনদ ছহীহ তথা বিশুদ্ধ। (আলমুসতাদরাক লিল হাকিম ৪র্থ খ- ১৫৮৩ পৃষ্ঠা, মুখতাছারুল মুসতাদরাক ২য় খ- ১০৬৭ পৃষ্ঠা)

হাদীছ শরীফ-এ আরো বর্ণিত রয়েছে-

عن عمر بن الخطاب رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لما افترى ادم الخطيئة قال يارب اسألك بحق محمد لما غفرت لى فقال الله يا ادم وكيف عرفت محمدا ولم اخلقه؟ قال يا رب لما خلقتنى بيدك ونفخت فى من روحك رفعت رأسى فرأيت على قوائم العرش مكتوبا لا اله الا الله محمد رسول الله صلى الله عليه وسلم فعلمت أنك لم تضف الى اسمك الا احب الخلق اليك فقال الله صدقت يا ادم انه لاحب الخلق الى ادعنى بحقه فقد غفرت لك ولو لا محمد ما خلقتك. هذا حديث صحيح الاسناد.

অর্থ: হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুনা হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, যখন হযরত আদম আলাইহিস সালাম- উনার দোয়া ক্ববূলের সময় হলো। তখন তিনি দোয়া করলেন, হে আমার রব! আমি আপনার কাছে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার ওয়াসীলায় প্রার্থনা করছি, অতএব আমার দুয়া ক্ববূল করুন। আল্লাহ তায়ালা বললেন, হে হযরত আদম আলাইহিস সালাম! আপনি কিভাবে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনাকে চিনলেন, অথচ এখনো উনাকে দুনিয়ায় প্রেরণ করিনি? জবাবে হযরত আদম আলাইহিস সালাম বললেন, হে আমার রব! আপনি যখন আমাকে আপনার কুদরতী হাত মুবারকে তৈরি করে আমার মধ্যে রূহ ফুঁকে দেন, তখন আমি আমার মাথা উত্তোলন করে আরশের খুঁটিসমূহে লিখিত দেখতে পাই-

 لا اله الا الله محمد رسول الله صلى الله عليه وسلم

(লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আল্লাহ পাক ব্যতীত কোন ইলাহ বা মাবূদ নেই সাইয়্যিদুনা হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আল্লাহ পাক-উনার রসূল।’ তখন আমি বুঝতে পারলাম আপনার নাম মুবারকের সাথে যাঁর নাম মুবারক সংযুক্ত আছে তিনি সৃষ্টির মধ্যে আপনার সবচেয়ে মুহব্বতের হবেন। আল্লাহ পাক বললেন, হে হযরত আদম আলাইহিস সালাম! আপনি ঠিকই বলেছেন। কারণ তিনি সৃষ্টির মধ্যে আমার কাছে সবচেয়ে মুহব্বতের। হযরত আদম আলাইহিস সালাম বললেন, আয় আল্লাহ পাক! উনার ওয়াসীলায় আমার প্রার্থনা ক্ববূল করুন। আল্লাহ পাক বললেন, আমি আপনার দোয়া কবূল করলাম। যদি আমার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি না হতেন তাহলে আমি আপনাকেও সৃষ্টি করতাম না। সুবহানাল্লাহ! এ হাদীছ শরীফখানার সনদ ছহীহ তথা বিশুদ্ধ।

(আল মুসতাদরাক লিল হাকিম ৪র্থ খ- ১৫৮৩ পৃষ্ঠা, আছ ছহীহাহ ১ম খ- ৮৮ পৃষ্ঠা, মুখতাছারুল মুস্তাদরাক ২য় খ- ১০৬৯ পৃষ্ঠা, আত তাওয়াসসুল ১১৫ পৃষ্ঠা, তাফসীরুদ দুররিল মানছূর লিছ ছূয়ূত্বী ১ম খ- ৫৮ পৃষ্ঠা, কানযুল উম্মাল ১১ খ- ৪৫৫ পৃষ্ঠা)

অতএব, কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর উল্লিখিত দলীলভিত্তিক বর্ণনা ও জাওয়াবের বিপরীতে কারো কোন মনগড়া বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। বরং তা হবে সম্পূর্ণরূপে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার শান, মর্যাদা ও ফযীলতের খিলাফ যা কুফরী এবং কাট্টা কাফির ও চিরজাহান্নামী হওয়ার কারণ।

 

মুহম্মদ রবিউল হাছান

মুহম্মদ ইবরাহীম

বি-বাড়িয়া

 

সুওয়াল: আমরা জানি, জুমুয়ার ছানী আযান মসজিদের ভিতরে মিম্বরের নিকটে ইমামের সম্মুখে দেয়াটা শরীয়তের ফতওয়া। কিন্তু আমাদের মসজিদে এক নতুন ইমাম এসে উক্ত ফতওয়ার বিপরীত নিয়ম চালু করে সমাজে ফিতনা সৃষ্টি করে দিয়েছে অর্থাৎ তার বক্তব্য হলো জুমুয়ার ছানী আযান মসজিদের বাইরে দিতে হবে এবং সেটাই সে করেছে।

এখন আমি জানতে চাই, কোন কিতাব বা দলীলসমূহের ভিত্তিতে জুমুয়ার ছানী আযান মসজিদের ভিতরে মিম্বরের নিকটে ইমামের সম্মুখে দেয়া শরীয়তে সাব্যস্ত হয়েছে। দয়া করে তা জানিয়ে আমাদের সমাজের ফিতনা নিরসন করবেন।

জাওয়াব: আখিরী যামানা ফিতনার যামানা। এ যামানা সম্পর্কে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আগেই ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন।

যেমন হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে-

عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يكون فى اخر الزمان دجالون كذابون يأتونكم من الاحاديث بما لم تسمعوا انتم ولاابائكم فاياكم واياهم لايضلونكم ولا يفتنونكم.

অর্থ: হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে। তারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি। সাবধান! তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকবে এবং তোমাদেরকে তাদের থেকে দূরে রাখবে। তবে তারা তোমাদেরকে পথভ্রষ্ট করতে পারবে না এবং ফিতনায় ফেলতে পারবে না। (মুসলিম শরীফ)

কাজেই, হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত মিথ্যাবাদী দাজ্জালদের থেকে আমাদেরকে সাবধান থাকতে হবে, সতর্ক থাকতে হবে তবে তারা আমাদের ফিতনায় ফেলতে পারবে না এবং পথভ্রষ্ট বা গোমরাহ করতে পারবে না।

আমরা মুসলমান। ইসলাম আমাদের দ্বীন। এ দ্বীন পরিপূর্ণ করে নাযিল করা হয়েছে। অর্থাৎ আমাদের এমন কোন বিষয় নেই যা আমাদের দ্বীন ইসলামে বর্ণনা করা হয়নি। অর্থাৎ প্রতিটি বিষয় দ্বীন ইসলামের দলীল- কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এ দলীল চতুষ্ঠয়ের মধ্যে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে।

কাজেই, এখানে কারো মনগড়া কথা বলার কোন সুযোগ নেই। কেউ তার বক্তব্য বা কথাকে সঠিক বলে প্রমাণ করতে চাইলে তাকে উল্লিখিত দলীল চতুষ্ঠয়ের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে। অন্যথায় সে মিথ্যাবাদী বলে প্রমাণিত হবে। আল্লাহ পাক সেটাই বলেছেন-

قل هاتوا برهانكم ان كنتم صادقين

অর্থ: বলে দিন, তোমরা সত্যবাদী হলে দলীল পেশ করো।

আমরা চ্যালেঞ্জ ঘোষণা করছি, উক্ত কথিত ইমাম কেন তার সমজাতীয় কোন ইমামের পক্ষে কিয়ামত পর্যন্ত প্রমাণ করা সম্ভব হবে না যে, ইসলামের শুরু থেকে এ পর্যন্ত কেউ জুমুয়ার ছানী আযান মসজিদের বাইরে কিংবা দরজায় দিয়েছেন ও দিতে বলেছেন।

কেননা আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনাদের সময়ে ছানী আযান বলতে কোন আযানই ছিল না। বরং উনাদের সময়ে জুমুয়ার দিনে একটিমাত্র আযান ছিল যা মসজিদের দরজায় দেয়া হতো। তৃতীয় খলীফা হযরত উছমান যুন নূরাইন রদিয়াল্লাহু আনহু ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনাদের সর্বসম্মত সিদ্ধান্তক্রমে আরেকটি আযান বৃদ্ধি করেন। আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনাদের সময়ে যে আযান মসজিদের দরজায় দেয়া হতো, হযরত উছমান যুন নূরাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সে আযানটি স্থানান্তরিত করে মিম্বরের নিকট ইমামের সম্মুখে দেয়ার নির্দেশ দেন। আর প্রবর্তিত ছানী আযানটি মসজিদের বাইরে æযাওরা” নামক স্থানে দেয়ার নির্দেশ দেন। তখন থেকে অদ্যাবধি এ নিয়মেই সারা বিশ্বে ছানী আযান প্রচারিত হয়ে আসছে। নিম্নে তার অকাট্য প্রমাণ পেশ করা হলো।

সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সময় পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের আযানের ন্যায় জুমুয়ার দিনেও একটিমাত্র আযান জারি ছিল যা মসজিদের বাইরে দরজার উপর দেয়া হতো। অনুরূপ খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং আমীরুল মু’মিনীন, হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনাদের খিলাফতকালেও জুমুয়ার নামাযে একটিমাত্র আযান জারি ছিল।

যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-

عن السائب بن يزيد قال كان الاذان على عهد رسول الله صلى الله عليه وسلم وابى بكر و عمر رضى الله تعالى عنهما اذا خرج الامام واذا اقيمت الصلاة فلما كان عثمان رضى الله تعالى عنه زاد النداء الثالث على الزوراء.

অর্থ: æহযরত সায়িব বিন ইয়াযীদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনাদের সময় একটিমাত্র আযানের প্রচলন ছিল। আর তা ইমাম সাহেব (হুজরা হতে) বের হলে দেয়া হতো। এরপর (খুৎবা পাঠ করার পর) নামাযের জন্য ইক্বামত দেয়া হতো। অতঃপর হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি (খিলাফতে আসীন হবার পর) æযাওরা” নামক স্থানে তৃতীয় আযান বৃদ্ধি করেন। (উল্লেখ্য, হাদীছ শরীফ-এর রাবীগণ ইক্বামতকেও আযান হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাই উনারা হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনার আযানকে তৃতীয় আযান বলেছেন) হযরত ইমাম তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি এ হাদীছ শরীফকে হাসান ও ছহীহ্ বলেছেন।

এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ æতাফসীরে খাযিন ও মাদারিকে” উল্লেখ রয়েছে-

فلما كان عثمان وكثر الناس زاد النداء الثانى على الزوراء.

অর্থ: æঅতঃপর হযরত উছমান রদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি খলীফা হওয়ার পর জনসংখ্যার আধিক্যতার কারণে æযাওরা” নামক স্থানে জুমুয়ার দ্বিতীয় আযান (বর্তমানে প্রথম আযান) বৃদ্ধি করেন।”

আর বুখারী শরীফ-এর শরাহ ফয়জুল বারীতে” উল্লেখ রয়েছে-

والظاهر ان الاذان الثانى هو الاول انتقل الى داخل المسجد

অর্থ: æপ্রকাশ থাকে যে, ছানী আযান যা প্রথম আযান ছিল (দরজার উপর দেয়া হতো)। অতঃপর স্থান পরিবর্তন করে মসজিদের ভিতরে নেয়া হয়।” অনুরূপ তিরমিযী শরীফ-এর শরাহ æআল উরফুশ শাজীতে”ও উল্লেখ আছে।

আমীরুল মু’মিনীন হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি যে শুধু একটি আযান বৃদ্ধি করেছেন তা নয়, বরং হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সময়কার আযানকেও (যা দরজায় দেয়া হতো) স্থানান্তরিত করে মসজিদের ভিতরে, ইমামের সম্মুখে, মিম্বরের নিকট দেয়ার ব্যবস্থা করেন।

যেমন এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত ও মশহুর তাফসীরগ্রন্থ তাফসীরে আহকামুল কুরআন লিল কুরতুবীতে” উল্লেখ আছে যে-

زاد عثمان رضى الله تعالى اذانا ثانيا يؤذنون بمدينة السلام وبعد اذان المنار بين يدى الامام تحت المنبر

অর্থ: æহযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি মদীনায় দ্বিতীয় আরেকটি আযান বৃদ্ধি করেন। অতঃপর ছানী আযানটি ইমামের সম্মুখে মিম্বরের নিকট দেয়া হয়।”

এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ রয়েছে-

الاذان الثالث هو الاول وجودا اذا كانت مشروعيته باجتهاد عثمان وموافقه سائر الصحابة له بالسكوت وعدم الانكار فصار اجماعا

অর্থ: æতৃতীয় আযান, এটাই মূলত প্রথম আযান, (তৃতীয় এ জন্য বলা হয় যে, ইক্বামতকেও আযান বলা হয়) যা হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনার ইজতিহাদের দ্বারা সাব্যস্ত করা হয়। (যখন হযরত উছমান রদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু দ্বিতীয় আরেকটি আযানের প্রচলন করেন) তখন প্রায় সকল ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনারা তা জ্ঞাত ছিলেন। কেউ এটার ব্যাপারে প্রতিবাদ না করার কারণে এর উপর ইজমা তথা ইজমায়ে আযীমত প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়।” (আইনী শরহে বুখারী, হাশিয়ায়ে আবু দাউদ)

উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, আমীরুল মু’মিনীন হযরত উছমান যুন্নূরাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনার পূর্বে ছানী আযান বলতে কোন আযানই ছিলনা।

তাই æছানী আযান মসজিদের বাইরে কিংবা দরজায় দিতে হবে বা দেয়াটা সুন্নত ও হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত” একথা সম্পূর্ণই বানোয়াট ও অবান্তর। সাথে সাথে এটাও প্রমাণিত হলো যে, ছানী আযান মসজিদের ভিতরে মিম্বরের নিকটে ইমামের সম্মুখে দিতে হবে। এটা ইজমায়ে আযীমত দ্বারাই সাব্যস্ত। যা মানা ফরয। অস্বীকার করা কুফরী ও গোমরাহীর কারণ।

অতএব, æছানী আযান মসজিদের বাইরে বা দরজায় দিতে হবে” এ বক্তব্য প্রদান করে উক্ত ইমাম নিজেকে একজন মিথ্যাবাদী ও ইজমা-ক্বিয়াস অস্বীকারকারী গইরে মুকাল্লিদ হিসেবে সাব্যস্ত করার সাথে সাথে শরীয়তের তৃতীয় দলীল ইজমায়ে আযীমতকে অস্বীকার করে সুস্পষ্ট কুফরী করেছে। এটা মূলত আমাদের ফতওয়া নয় বরং কুরআন-সুন্নাহরই ফতওয়া। যেমন এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ পাক রব্বুল আলামীন কালামে পাকে ইরশাদ করেন-

ومن يشاقق الرسول من بعد ماتبين له الهدى ويتبع غير سبيل المؤمنين نوله ما تولى ونصله جهنم وساءت مصيرا.

অর্থ: æকারো নিকট হিদায়েত প্রকাশিত হওয়ার পর যদি সে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার বিরুদ্ধাচরণ করে, আর মু’মিনগণের পথ বাদ দিয়ে ভিন্ন পথের অনুসরণ করে, আমি তাকে সে দিকেই ফিরাবো, যে দিকে সে ফিরেছে এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবো। আর তা অত্যন্ত নিকৃষ্ট গন্তব্যস্থল।” (সূরা নিসা-১১৫)

বিখ্যাত মুফাসসির, আলিমে হক্কানী, শায়খে রব্বানী, শায়খ আহমদ ইবনে আবূ সাঈদ মুল্লা জিউন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উপরোক্ত আয়াত শরীফ-এর তাফসীরে বলেন-

فجعلت مخالفة المؤمنين مثل مخالفة الرسول فيكون اجماعهم كخير الرسول حجة قطعية

অর্থ: æঅতঃপর সাব্যস্ত হয় যে, মু’মিনগণের বিরোধিতা করা মূলত হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার বিরোধিতা করারই অন্তর্ভুক্ত। তাই হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার হাদীছ শরীফ-এর ন্যায় মু’মিনগণের ইজমা ও অকাট্য ও প্রামাণ্য দলীল বলে পরিগণিত হবে।” (নূরুল আনোয়ার)

আর সে কারণেই হযরত মুল্লা জিউন রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ æতাফসীরে আহমদী”-এর মধ্যে ইজমার আহকাম সম্পর্কে চূড়ান্ত রায় পেশ করে বলেন-

فيكون الاجماع حجة يكفر جاحده كالكتاب والسنة

অর্থ: æইজমায়ে আযীমত কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফ-এর মতই একটি অকাট্য দলীল। যে ব্যক্তি এ ইজমাকে অস্বীকার করলো, সে মূলত কুফরী করলো।”

মূলকথা হলো, ছহীহ ও ফতওয়াগ্রাহ্য অভিমত এই যে, æজুমুয়ার ছানী আযান মসজিদের ভিতরে মিম্বরের নিকটে ইমামের সম্মুখে দেয়াই খাছ সুন্নত ও ইজমায়ে আযীমত দ্বারা প্রমাণিত। এটাকে অস্বীকার করা কুফরী। আর এর বিপরীত আমল করা বিদয়াত ও গোমরাহী।

ছানী আযান যে মসজিদের ভিতরে মিম্বরের নিকটে ইমামের সম্মুখে দিতে হবে বিশ্বখ্যাত কিতাবসমূহ হতে তার কতিপয় প্রমাণ পেশ করা হলো:

ফিক্বাহর বিখ্যাত কিতাব æআল জাওহারাতুন নাইয়্যারাহ”-এর ১১৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

واذا صعد الامام المنبر وجلس ويؤذن ثانيا بين يدى الخطبة

অর্থঃ- æইমাম যখন মিম্বরে উঠে বসবেন, তখন মুয়ায্যিন খতীবের সামনে আযান দিবে।” (কাজেই খতীবের  সম্মুখে আযান দেয়ার অর্থ হলো মসজিদের ভিতরে আযান দেয়া)।  অনুরূপ হিদায়া, রদ্দুল মুহতার, আইনী শরহে হিদায়া কিতাবেও উল্লেখ আছে।

হানাফী মাযহাবের বিশ্ব বিখ্যাত কিতাব æবাহরুর রায়িক”-এর ২য় জিলদ, ১৫৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

اذان الثانى الذى يكون بين يدى المنبر لانه لم يكن فى زمنه على السلام

অর্থ: æছানী আযান যা মিম্বরের সম্মুখে বা সন্নিকটে দিতে হবে, আর হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সময় এটা ছিলনা।” অনুরূপ æহিদায়া মায়াদ্দিরায়া” কিতাবেও উল্লেখ আছে।

বিশ্ব বিখ্যাত ফিক্বাহর কিতাব ফতহুল ক্বাদীর”-এর ২য় জিলদ ১২০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

وكان المعتبر هو الاذان الثانى عند المنبر بين يدى الخطيب الخ

অর্থ: æহানাফী মাযহাবের একজন শ্রেষ্ঠ ইমাম হযরত আবু জা’ফর ত্বহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, নির্ভরযোগ্য মত হলো- জুমুয়ার দিন খতীবের সামনে মিম্বরের নিকট যখন খুৎবার জন্য আযান দিবে তখন হতে মসজিদের দিকে তাড়াতাড়ি যাওয়া ওয়াজিব।” অনুরূপ মা’রাকিউল ফালাহ” কিতাবেও উল্লেখ আছে।

এছাড়াও নিম্নল্লিখিত পঞ্চাশের অধিক তাফসীর শরীফ, হাদীছ শরীফ, ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহে ছানী আযান মিম্বরের নিকটে ইমামের সম্মুখে দেয়ার কথা বলা হয়েছে। অথচ মসজিদের তথাকথিত ইমাম বিশ্ববিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহের বক্তব্য ও অনুসরণীয় ইমামগণের মতকে উপেক্ষা করে ভুল, বিভ্রান্তিকর ও কুফরীমূলক মতটিকেই অনুসরণ করছে ও প্রচার করছে। বস্তুত এর দ্বারা সে নিজে যেমন কুফরীতে নিমজ্জিত রয়েছে তদ্রƒপ মানুষকেও কুফরীর দিকে ধাবিত করছে। নাঊযুবিল্লাহ!

অতএব, কথিত ইমাম ছাহেবের উচিত সময় থাকতে হক্বের পথে ফিরে আসা এবং তার কুফরীমূলক মতবাদ পরিহার করে হক্কানী-রব্বানী ইমামগণের কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও ক্বিয়াসসম্মত ফতওয়াকে অনুসরণ করা  ও প্রচার করা। আল্লাহ পাক হিদায়েত দানের মালিক।

{দলীলসমূহঃ- (১) তাফসীরে আহকামুল কুরআন লিল জাসসাস,(২) কুরতুবী, (৩) রুহুল মায়ানী, (৪) হাশিয়াতুশ শারক্বাবী, (৫) মোরাগী, (৬) মাযহারী, (৭) ওসমানী, (৮) সিরাজুম মুনীর, (৯) ইবনুল আরাবি, (১০) কামালাইন, (১১) মাআরিফুল কুরআন, (১২) এলাউস্ সুনান, (১৩) ফতহুল বারী, (১৪) ফয়জুল বারী, (১৫) শরহে জামেউস সহীহ, (১৬) আল আরফুশ শাজী,(১৭) মিরকাত, (১৮) হেদায়া, (১৯) রদ্দুল মোহতার, (২০) আইনী, (২১) আল জাওহারাতুন নাইয়্যারা, (২২) দুররুল মুখতার, (২৩) আল কাহেসতানী, (২৪)  গায়াতুল আওতার, (২৫) বাহরুর রায়েক, (২৬) হিদায়া মায়াদ্দিরায়া, (২৭) মারাকিউল ফালাহ্, (২৮) ফতহুল ক্বাদীর, (২৯) হালবিয়ে কবীর, (৩০) শরহে বেক্বায়া, (৩১) শরহে নিক্বায়া, (৩২) শরহে সিক্বায়া, (৩৩) ফতওয়ায়ে শরীয়ত, (৩৪) ইসলামী ফিক্বাহ, (৩৫) জামিউর রুমুজ, (৩৬) কবীরী, (৩৭) এনায়া, (৩৮) কিফায়া, (৩৯) আল মুখতাছারুল কুদুরী, (৪০) উমদাতুর রিওয়ায়া, (৪১) ইলমুল ফিক্বাহ, (৪২) বেহেশতী জিওর, (৪৩ ) আল মাজমু শরহুল মুহাযযাব, (৪৪) তোহফাতুল মোহতাজ বি শরহিল মিনহাজ, (৪৫) বিদায়াতুল মুজতাহিদ, (৪৬) শরহু মুলতাক্বাল আবহুর, (৪৭) মাজমাউল আনহুর, (৪৮) মাদানুল হাক্বায়িক্ব, (৪৯) আলমগীরী, (৫০) আইনুল হিদায়া, (৫১) শামী, (৫২) বাদায়িউস সানায়ে, (৫৩) মারাকিউল ফালাহ, (৫৪) কিফায়া, (৫৫) নিহায়া, (৫৬) দারুল উলুম দেওবন্দ, (৫৭) আযীযুল ফতওয়া,  (৫৮) ইমদাদুল ফতওয়া, (৫৯) আহসানুল ফতওয়া ইত্যাদি।}

বিঃ দ্রঃ ছানী আযান সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ৯, ৪৭, ৪৮, ৪৯, ৫০তম সংখ্যা পাঠ করুন।

মুহম্মদ মুখতার হুসাইন

 কুড়িগ্রাম

 

সুওয়াল: সম্প্রতি মিসরে বিবাহ বিষয়ক একটি নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে তাতে বলা হয়েছে। বর ও কনের বয়সের পার্থক্য ২৫ বছরের বেশি হতে পারবে না।। এ আইন কতটুকু শরীয়তসম্মত হয়েছে? দয়া করে জানাবেন।

জাওয়াব: উক্ত আইন সম্পূর্ণরূপে কুফরী হয়েছে। যারা সে আইন প্রণয়ন করেছে তারা সবাই কাফির ও মুরতাদ হয়ে গেছে। শুধু তাই নয় সে আইনকে যারা সমর্থন করবে ও মানবে তারাও কাফিরে পরিণত হবে।

কারণ শরীয়তের যিনি ধারক-বাহক, যিনি শারি’  বা শরীয়ত প্রণেতা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার যমীনে অবস্থানকালীন ৫১তম বয়স মুবারকে উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-উনাকে যখন বিবাহ মুবারক সম্পন্ন করেন তখন উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-উনার বয়স মুবারক ছিল ৬ বছর। তাহলে দেখা যাচ্ছে এখানে ৫১-৬=৪৫ বৎসরের পার্থক্য।

অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সাথে উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-উনার ৪৫ বছরের পার্থক্যে বিবাহ মুবারক সম্পাদিত হয়। কাজেই বর ও কনের বয়সের পার্থক্য ২৫ বছরের বেশি হতে পারবে না- এ আইন সরাসরি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার মুুবারক আমলের বিরুদ্ধে। নাঊযুবিল্লাহ! অতএব উক্ত আইন কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।

আসলে মুসলমানরা ইহুদী-নাছারাদের গোলামী করার কারণে তাদের ঈমান-আক্বীদা, আমল-আখলাক, ইলম-ইখলাছ সবকিছু নষ্ট ও বরবাদ করে দিয়েছে। সেটাই আল্লাহ পাক মুসলমানদেরকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন-

ود كثير من اهل الكتاب لو يردونكم من بعد ايمانكم كفارا حسدا من عند انفسهم.

অর্থ: আহলে কিতাব অর্থাৎ ইহুদী-নাছারাদের অধিকাংশরাই চেয়ে থাকে মুসলমাদের ঈমান আনার পরে কি করে তাদেরকে কাফির বানানো যায়। এটা ব্যক্তিগত হিংসাবশত তারা চেয়ে থাকে। নাঊযুবিল্লাহ! (সূরা বাক্বারা-১০৯)

মূলত বিবাহের ব্যাপারে ইসলামের বা শরীয়তের যে ফায়ছালা তাহলো যে কোন বয়সের বর যে কোন বয়সের কনেকে বিবাহ করতে পারবে

অতএব, বলার অপেক্ষা রাখেনা উক্ত কুফরী আইন ইহুদী-নাছারাদের এজেন্ট মুসলমান ছূরতে মুনাফিক দ্বারা প্রণিত। মুসলমানদের জন্য সেই আইন গ্রহণ করা বা মানা সম্পূর্ণরূপে কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।

(দলীল: মুসনাদে আহমদ, তারীখ, তবাকাত, সীরাতে আয়িশা, ছাহাবিয়াত, সিয়ারু আ’লাম, আন নুবালা ইত্যাদি।)

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ