সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ:

সংখ্যা: ২৮৯তম সংখ্যা | বিভাগ:

মুহম্মদ আনোয়ার হুসাইন কিশোরগঞ্জ

সুওয়াল: ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর সাহেব সারা জীবনে যত মিথ্যাচার করেছেন, আলেম সেজে আর কেউই এমন মিথ্যাচার করেছেন কি না, আমার জানা নেই। তিনি বলেছেন, খইরুল কুরূনে ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং মীলাদ-ক্বিয়াম শরীফের কোন অস্তিত্ব ছিল না। অথচ খইরুল কুরূনে খলীফা হারুনুর রশীদের যামানায় পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন ও মীলাদ শরীফ পাঠ করার জন্য এক ব্যক্তি ওলীআল্লাহ হিসেবে আখ্যায়িত হয়েছিলেন।

তাহলে পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং মীলাদ-ক্বিয়ামকে নিয়ে কেন এত মিথ্যাচার ও অপপ্রচার? জ্ঞানের অভাবে নাকি মুনাফিকির কারণে এই অন্ধ বিরোধিতা? জানতে ইচ্ছুক।

জাওয়াব: ক্বিল্লতে ইলিম এবং ক্বিল্লতে ফাহ্ম্ তথা কম জ্ঞান ও কম বুঝই হচ্ছে সমস্ত ফিতনার মূল। উল্লেখিত সুওয়ালের ক্ষেত্রেও সেই একই কারণ। যা কুষ্টিয়া ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তার শিক্ষকের মিথ্যাচারের বিষয়টি প্রকাশ করেছে। ছাত্র বলেছে, স্যার জীবনে যত মিথ্যাচার করেছেন, আলেম সেজে আর কেউ এমন মিথ্যাচার করেছেন কি না, তা তার জানা নেই। তিনি (স্যার) বলেছেন, খইরুল কুরূনে আব্বাসীয় শাসক হারুনুর রশীদের যামানায় পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন ও মীলাদ শরীফ পাঠ করার জন্য এক ব্যক্তি আমলে ত্রুটি থাকা সত্বেও ওলীআল্লাহ হিসেবে আখ্যায়িত হয়েছিলেন। যেমন এ সম্পের্ক কিতাবে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, আল্লামা সাইয়্যিদ আবু বকর মক্কী আদদিমইয়াতী আশ শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি (১৩০২ হিজরী) তিনি উনার বিখ্যাত ‘ইয়ানাতুত ত্বালিবীন’ কিতাবের মধ্যে বর্ণনা করেছেন-

اِنَّهٗ كَانَ فِيْ زَمَانِ اَمِيْرِ الْـمُؤْمِنِيْنَ هَارُوْنَ الرَّشِيْدِ شَابٌّ فِي الْبَصْرَةِ مُسْرِفٌ عَلٰى نَـفْسِهٖ وَكَانَ اَهْلُ الْبَـلَدِ يَـنْظُرُوْنَ اِلَيْهِ بِعَيْنِ التَّحْقِيْرِ لِاَجْلِ اَفْـعَالِهِ الْـخَبِيْـثَةِ، غَيْـرَ اَنَّهٗ كَانَ اِذَا قَدِمَ شَهْرُ رَبِيْعِ الْاَوَّلِ غَسَلَ ثِيَابَهٗ وَتَـعَطَّرَ وَتَـجَمَّلَ وَعَمِلَ وَلِيْمَةً وَاسْتَـقَرَّا فِيْهَا مَوْلِدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَدَامَ عَلٰى هٰذَا الْـحَالِ زَمَانًا طَوِيْلًا، ثُـمَّ لَـمَّا مَاتَ سَـمِعَ اَهْلُ الْبَـلَدِ هَاتِفًا يَّـقُوْلُ: اُحْضُرُوْا يَا اَهْلَ الْبَصْرَةِ وَاشْهَدُوْا جَنَازَةً وَلِيَّ مِّنْ اَوْلِيَاءِ اللهِ فَاِنَّهٗ عَزِيْـزٌ عِنْدِىْ، فَحَضَرَ اَهْلُ الْبَـلَدِ جَنَازَتَهٗ وَدَفَـنُـوْهُ، فَـرَاوْهُ فِي الْـمَنَامِ وَهُوَ يَـرْفُلُ فِيْ حُلَلٍ سُنْدُسٍ وَاسْتَـبْـرَقٍ، فَقِيْلَ لَهٗ بِـمَ نِلْتَ هٰذِهِ الْفَضِيْلَةَ؟ قَالَ بِتَعْظِيْمِ مَوْلِدِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

অর্থ : “আব্বাসীয় শাসক হারুনুর রশীদের যামানায় বছরা শহরের এক যুবক সে নফসের অনুসরণ করে চলতো। শহরের লোকেরা নিন্দনীয় আমলের জন্য তাকে নিন্দার চোখে দেখতো। তবে যখন সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিশ শুহূরিল আ’যম শরীফ পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ মাস আসতেন, এই যুবক কাপড় ধৌত করতেন, সুগন্ধি ব্যবহার করতেন ও সম্মানিত শরীয়ত বিরোধী কাজ থেকে বিরত থাকতেন, সেই সাথে ভালো খাবারের ব্যবস্থাও করতেন এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ অর্থাৎ পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উপলক্ষে মাসব্যাপী এ আমল করতেন। অতঃপর যখন তিনি ইন্তিকাল করেন তখন শহরবাসীগণ গায়েবী আহ্বান শুনতে পান। সেখানে বলা হচ্ছিলো, হে বছরাবাসী! আপনারা মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী উনাদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত একজন ওলীর জানাযায় শরীক হোন। নিশ্চয়ই তিনি আমার কাছে খুবই প্রিয়। অতঃপর শহরবাসী উনার জানাযায় উপস্থিত হলেন এবং দাফন সম্পন্ন করলেন। উনারা (শহরবাসী) স্বপ্নে দেখলেন, উক্ত যুবক কারুকার্যপূর্ণ রেশমী কাপড় পরিহিত অবস্থায় জান্নাতে ঘোরাফেরা করছেন। উনাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, এ ফযীলত আপনি কি করে লাভ করলেন? তিনি বললেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবস উনাকে সম্মান করার কারণে অর্থাৎ পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করার কারণে।” (ইয়ানাতুল ত্বলেবীন ৩য় খণ্ড ৬১৩ পৃষ্ঠা)

অর্থাৎ, পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালনকারী দুনিয়াবাসীর নিকট গুণাহগার হিসেবে পরিচিত হলেও ইন্তেকালের পরে উনাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার মকবুল বান্দা হিসেবে পরিচিত করেন, বিনা হিসেবে জান্নাত নছীব করেন এবং সীমাহীন মর্যাদা-মর্তবা দান করেন। সুবহানাল্লাহ!

স্মরণীয় যে, আব্বাসীয় শাসক হারুনুর রশীদের যামানা (১৭০-১৯৪ হিজরী) হচ্ছে খইরুল কুরূনের যামানা। অথার্ৎ ছাহাবায়ে কিরাম, তাবিয়ীনে কিরাম ও তাবে’ তাবিয়ীনে কিরাম এই তিন শ্রেণীর সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ উনাদের যামানাকেই খইরুল কুরূন বলে আখ্যায়িত করা হয়। এবং উপরে উল্লেখিত ঘটনা দ্বারা প্রতিভাত হয় যে, খইরুল কুরূনের মধ্যে পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ বা পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন ও পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠের রীতি ছিল।

অথার্ৎ পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করার ব্যাপারে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের মধ্যে বহু দলীল আদিল্লাহ বিদ্যমান থাকার পরও ইহুদী-নাছারাদের দোষর, মুনাফিক, মুরতাদ, উলামায়ে সূ, জাহান্নামের কীট, বাতিল ফিরক্বার লোকগুলো উক্ত  সর্বশ্রেষ্ঠ আমল ও ইবাদত মুবারক সম্পর্কে মিথ্যাচার করে থাকে। নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ!

এসব জাহান্নামী ফিরক্বার লোকদের সম্পর্কেই যিনি খলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার সম্মানিত কিতাব পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেছেন-

وَلَقَدْ ذَرَأْنَا لِـجَهَنَّمَ كَثِيْـرًا مِّنَ الْجِنِّ وَالْإِنْسِ ۖ لَـهُمْ قُـلُوْبٌ لَّا يَـفْقَهُوْنَ بِهَا وَلَـهُمْ أَعْيُنٌ لَّا يُـبْصِرُوْنَ بِـهَا وَلَهُمْ اٰذَانٌ لَّا يَسْمَعُوْنَ بِهَا ۚ أُولٰٓئِكَ كَالْأَنْـعَامِ بَلْ هُمْ أَضَلُّ ۚ أُولٰٓئِكَ هُمُ الْغَافِلُوْنَ

অর্থ: আর আমি জিন- ইনসানের মধ্য হতে অনেককে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি অথার্ৎ তাদের বদ আক্বীদা ও আমলের কারণে তারা জাহান্নামী হবে। তাদের অন্তর থাকার পরও তারা বুঝবে না, চোখ থাকার পরও তারা দেখবে না এবং কান থাকার পরও তারা শুনবে না। তারা চতুষ্পদ পশুর মতো। বরং চতুষ্পদ পশু অপেক্ষা নিবোর্ধ। তারা চরম গাফিল অথার্ৎ মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার মহাসম্মানিত হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সম্পর্কে চরম জাহিল এবং উনাদের ছানা-ছিফত মুবারক করার ব্যাপারে তারা গাফিল বা অমনোযোগী। নাঊযুবিল্লাহ! (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা আ’রাফ শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ১৭৯)

উল্লেখ্য, সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ উপলক্ষে উনার ছানা-ছিফত মুবারক প্রকাশ করতঃ খুশি মুবারক প্রকাশ করার নামই হচ্ছে পবিত্র মীলাদ শরীফ, পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ।

জানা আবশ্যক, মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীনে তাশরীফ মুবারক নিয়েছেন অর্থাৎ পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন সেজন্য খুশি মুবারক প্রকাশ করার জন্য স্বয়ং যিনি খলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনিই বান্দা ও উম্মতকে আদেশ মুবারক করেছেন। যেমন এ প্রসঙ্গে সম্মানিত ও পবিত্র সূরা ইউনুস শরীফ উনার ৫৭ ও ৫৮ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মানুষ জাতিকে সম্বোধন করে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

يَاۤ أَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَآءَتْكُم مَّوْعِظَةٌ مِّن رَّبِّكُمْ وَشِفَآءٌ لِّمَا فِي الصُّدُوْرِ وَهُدًى وَّرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِيْنَ. قُلْ بِفَضْلِ اللهِ وَبِرَحْمَتِهٖ فَبِذٰلِكَ فَـلْيَـفْرَحُوْا هُوَ خَيْـرٌ مِّـمَّا يَجْمَعُوْنَ

অর্থ: হে মানুষেরা, তোমাদের নিকট মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে মহান নছীহতকারী, অন্তরের মহান শিফা দানকারী, মহান হিদায়েত দানকারী এবং মু’মিনদের জন্য মহান রহমত দানকারী আগমন করেছেন। অর্থাৎ আমার মহাসম্মানিত হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাশরীফ মুবারক নিয়েছেন। আপনি (উম্মতদেরকে) বলে দিন, মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ফদ্বল ও মহাসম্মানিত রহমত মুবারক স্বরূপ আপনাকে তারা যে পেয়েছে এ কারণে তারা যেন অবশ্যই খুশি মুবারক প্রকাশ করে। এটা তাদের সমস্ত নেক আমল বা ইবাদত থেকে শ্রেষ্ঠ।

সম্মানিত ও পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ উনার ৫৬ নং সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে উক্ত ছানা-ছিফত মুবারক প্রকাশ করতঃ খুশি মুবারক প্রকাশ করার জন্য ঈমানদার বান্দা-বান্দী ও উম্মতকে আদেশ মুবারক করেছেন। ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

يَاۤ أَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُـوْا صَلُّوْا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوْا تَسْلِيْمًا

অর্থ: হে ঈমানদাররা! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি তোমরাও ছলাত শরীফ পেশ করো এবং যথাযথ সম্মান প্রদর্শনপূর্বক সালাম শরীফ পেশ করো।

সম্মানিত ও পবিত্র সূরা ফাত্হ্ শরীফ উনার ৯নং সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

وَتُـعَزِّرُوْهُ وَتُـوَقِّرُوْهُ وَتُسَبِّحُوْهُ بُكْرَةً وَّأَصِيْلًا

 অর্থ: মহাসম্মানিত হাবীব ও মাহবূব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার গোলামী মুবারক করো এবং উনাকে তা’যীম বা সম্মান মুবারক করো এবং উনার ছানা-ছিফত মুবারক করো সকাল-সন্ধ্যা তথা দায়িমীভাবে।

তাছাড়া মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে নিয়ে সম্মিলিতভাবে উনার মহাসম্মানিত হাবীব ও মাহবূব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা-ছিফত মুবারক প্রকাশ করতঃ খুশি প্রকাশ করেন। এ প্রসঙ্গে সম্মানিত ও পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ উনার ৫৬ নং সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

إِنَّ اللهَ وَمَلَآئِكَتَهٗ يُصَلُّوْنَ عَلَى النَّبِيِّ

অর্থ: নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার সকল হযরত ফেরেশ্তা আলাইহিমুস সালাম উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ছলাত শরীফ পেশ করেন অথার্ৎ ছানা-ছিফত মুবারক প্রকাশ করেন।

অনুরূপ মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সকলের নিকট উনার মহাসম্মানিত হাবীব ও মাহবূব নূরে মুজাসাসম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা-ছিফত মুবারক প্রকাশ করেন। যেমন পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

وَإِذْ أَخَذَ اللهُ مِيْـثَاقَ النَّبِيِّيْنَ لَمَا اٰتَـيْـتُكُمْ مِّنْ كِتَابٍ وَّحِكْمَةٍ ثُمَّ جَآءَكُمْ رَسُوْلٌ مُّصَدِّقٌ لِّمَا مَعَكُمْ لَتُـؤْمِنُنَّ بِهٖ وَلَتَـنْصُرُنَّهٗ ۚ قَالَ أَأَقْـرَرْتُمْ وَأَخَذْتُمْ عَلٰى ذٰلِكُمْ إِصْرِيْ ۖ قَالُوْاۤ أَقْـرَرْنَا ۚ قَالَ فَاشْهَدُوْا وَأَنَا مَعَكُمْ مِّنَ الشَّاهِدِيْنَ ‎

অর্থ: স্মরণ করুন ঐ সময়ের কথা যখন মহান আল্লাহ পাক তিনি সকল হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের নিকট এই মর্মে অঙ্গীকার  গ্রহণ করলেন যে, আমি আপনাদেরকে কিতাব ও হিকমত দান করবো অর্থাৎ আপনাদেরকে নুবুওওয়াত ও রিসালাত মুবারক দান করবো। অতঃপর আপনাদের সকলের পরে আমার যিনি হাবীব ও মাহবূব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাশরীফ মুবারক আনবেন এবং আপনাদেরকে প্রদত্ব নিয়ামত মুবারকের সত্যায়িত করবেন। অতএব উনার প্রতি আপনারা অবশ্যই ঈমান আনবেন এবং উনার খিদমত বা গোলামী মুবারকের আঞ্জাম দিবেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, আপনারা কি স্বীকার করে নিলেন এবং আপনাদের প্রতি আমার এই অঙ্গীকার মেনে নিলেন? উনারা সকলেই বললেন, আমরা স্বীকার করে নিলাম। তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি পুনরায় বললেন, তাহলে আপনারা সাক্ষী থাকুন এবং আমিও আপনাদের সাথে সাক্ষী থাকলাম। (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৮১)

প্রতিভাত যে, যিনি খলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই উনার মহাসম্মানিত হাবীব ও মাহবূব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি দায়িমীভাবে ছলাত শরীফ পেশ করছেন, ছানা-ছিফত মুবারক করছেন, পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠ করছেন। অনুরূপভাবে হযরত ফেরেশ্তা আলাইহিমুস সালাম উনারাও করছেন। হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারও করেছেন। ঈমানদার পুরুষ-মহিলা, জিন-ইনসান, ছেলে-মেয়ে, ছোট-বড় সকলের জন্য উনার প্রতি ঈমান মুবারক আনা, উনাকে মুহব্বত মুবারক করা, উনার প্রতি সুধারণা মুবারক পোষণ করা, উনাকে সম্মান মুবারক করা, উনার খিদমত মুবারক বা গোলামী মুবারকে আঞ্জাম দেয়া, উনার ছানা-ছিফত মুবারক করা এবং উনার আদেশ-নিষেধ মুবারক পরিপূর্ণরূপে পালন করা এককথায় পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করা ফরযে আইন করে দিয়েছেন।

মহাসম্মানিত হাবীব মাহবূব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ পালন করেছেন এবং উম্মতকে পালন করার

জন্য উৎসাহিত করেছেন:

এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, হযরত আবু ক্বাতাদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত-

سُئِلَ عَنْ صَوْمِ الْاِثْـنَـيْنِ فَـقَالَ فِيْهِ وُلِدْتُّ وَفِيْهِ أُنْزِلَ عَلَيَّ

অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার দিন) রোযা রাখার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি ইরশাদ মুবারক করেন: এদিন আমি পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছি এবং এ দিনেই আমার প্রতি পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিল আরম্ভ হওয়ার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক রিসালাত মুবারক প্রকাশিত হয়েছে। (মুসলিম শরীফ: পবিত্র হাদীছ শরীফ নং ২৮০৭)

এ প্রসঙ্গে মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

مَنْ عَظَّمَ مَوْلِدِىْ وَهُوَ لَيْـلَةُ اثْـنَـىْ عَشَرَ مِنْ رَّبِيْع الْاَوَّلِ بِاتِّـخَاذِهٖ فِيْهَا طَعَامًا كُنْتُ لَهٗ شَفِيْـعًا يَّـوْمَ الْقِيَامَةِ

অর্থ: যে ব্যক্তি আমার মহাসম্মানিত বরকতময় বিলাদত শরীফ মহাপবিত্র ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ মহিমান্বিত রাত (ও দিবস) উনাকে খাদ্য খাওয়ানোর মাধ্যমে যথাযথভাবে সম্মান করবে, আমি ক্বিয়ামতের দিন তার জন্য মহান শাফায়াতকারী হবো। সুবহানাল্লাহ! (নি’মতে কুবরা উর্দূ ১১ পৃষ্ঠা, নাফহাতুল আম্বরিয়া ৮ পৃষ্ঠা, মাদারিজুস সউদ ১৫ পৃ., তালহীনুছ ছাননাজ ৫ পৃষ্ঠা)

সুপ্রসিদ্ধ আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম কিতাবে পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণিত হয়েছে, যে ব্যক্তি মহাসম্মানিত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করবে মহান আল্লাহ পাক তিনি তার জন্য রহমত মুবারক উনার সমস্ত দরজা খুলে দিবেন, তার জন্য সকল হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা ক্ষমাপ্রার্থনা করবেন এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের ন্যায় সে ব্যক্তি নাজাত ও ফযীলত লাভ করবে। সুবহানাল্লাহ!

বিশ্ব সমাদৃত ও সুপ্রসিদ্ধ মীলাদ শরীফ উনার কিতাব “আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম ফী মাওলিদি সাইয়্যিদি উলদি আদম”-এর মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

قَالَ حَضْرَتْ عَلِىٌّ كَرَّمَ اللهُ وَجْهَهٗ عَلَيْهِ السَّلَامُ مَنْ عَظَّمَ مَوْلِدَ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَكَانَ سَبَـبًا لِّقِرَائَتِهٖ لايَـخْرُجُ مِنَ الدُّنْـيَا اِلَّا بِالْاِيْـمَانِ وَيَدْخُلُ الْـجَنَّةَ بِغَيْرِ حِسَابٍ

অর্থ: হযরত ইমামুল আউওয়াল কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র মীলাদ শরীফ যথাযথ সম্মানের সাথে পালন করলো, সে ব্যক্তি অবশ্যই ঈমান নিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিবে এবং বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” সুবহানাল্লাহ!

অনুসরণীয় ইমাম মুজতাহিদ ও আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারাও পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করেছেন এবং পালন করার

জন্য উৎসাহিত করেছেন:

বিশিষ্ট তাবিয়ী, ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত তরীক্বত হযরত ইমাম হাছান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-

وَدِدْتُّ لَوْ كَانَ لِىْ مِثْلُ جَبَلِ اُحُدٍ ذَهَبًا فَاَنْـفَقْتُهٗ عَلٰى قِرَاءَةِ مَوْلِدِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

অর্থ: “আমার একান্ত ইচ্ছা হয় যে, আমার যদি উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ থাকতো তাহলে আমি তা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র মীলাদ শরীফ উপলক্ষে ব্যয় করতাম।” সুবহানাল্লাহ!

শাফিয়ী মাযহাবের ইমাম হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-

مَنْ جَـمَعَ لِمَوْلِدِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِخْوَانًا وَهَيَّاَ طَعَامًا وَاَخْلٰى مَكَانًا وَعَمِلَ اِحْسَانًا وَصَارَ سَبَـبًا لِّقِرَائَتِهٖ بَعَثَهُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَعَ الصِّدِّيْقِيْنَ وَالشُّهَدَاءِ وَالصَّالِـحِيْنَ وَيَكُوْنُ فِىْ جَنَّاتِ النَّعِيْمِ

অর্থ: যে ব্যক্তি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র মীলাদ শরীফ উপলক্ষে লোকজন একত্রিত করলো এবং খাদ্য তৈরি করলো ও জায়গা নির্দিষ্ট করলো এবং উত্তমভাবে পবিত্র মীলাদ শরীফ পালন করলো, উক্ত ব্যক্তিকে মহান আল্লাহ পাক তিনি হাশরের দিন ছিদ্দীক্ব, শহীদ ও ছালিহীনগণের সাথে উঠাবেন এবং উনার ঠিকানা হবে জান্নাতুন নায়ীমে।” সুবহানাল্লাহ!

মুসলমানদের মধ্যে পৃথিবীতে যিনি সবচেয়ে বেশি কিতাব লিখেছেন, যিনি উনার যামানায় মুজাদ্দিদ ও সুলত্বানুল আরিফীন ছিলেন সেই হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার “আল্ ওসায়িল ফী শরহিশ শামায়িল” নামক কিতাবে বলেন-

مَا مِنْ بَـيْتٍ أَوْمَسْجِدٍ أَوْمَـحَلَّةٍ قُرِئَ فِيْهِ مَوْلِدُ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَّا حَفَّتِ الْمَلَائِكَةُ ذٰلِكَ الْبَـيْتَ أَوِالْمَسْجِدَ أَوِالْمَحَلَّةَ وَصَلَّتِ الْمَلَائِكَةُ عَلٰى أَهْلِ ذٰلِكَ الْمَكَانِ وَعَمَّهُمُ اللهُ تَـعَالٰى بِالرَّحْمَةِ وَالرِّضْوَانِ وَأَمَّا الْمُطَوَّقُـوْنَ بِالنُّـوْرِ يَعْنِىْ جِبْـرَائِيْلُ وَمِيْكَائِيْلُ وَإِسْرَافِيْلُ وَعَزْرَائِيْلُ عَلَيْهِمُ السَّلَامُ فإِنَّـهُمْ يُصَلُّوْنَ عَلٰى مَنْ كَانَ سَبَـبًا لِّقِرَائَةِ مَوْلِدِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

অর্থ: যে কোন ঘরে অথবা মসজিদে অথবা মহল্লায় পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠ করা হয় তথা পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা হয় সেই স্থানকে অবশ্যই মহান আল্লাহ পাক উনার ফেরেশ্তা আলাইহিমুস সালাম উনারা বেষ্টন করে নেন। এবং উনারা সেই স্থানের অধিবাসীগণের প্রতি ছলাত-সালাম মুবারক পাঠ করতে থাকেন। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদেরকে স্বীয় রহমত ও সন্তুষ্টি মুবারকের আওতাভুক্ত করে নেন। আর নূর মুবারক দ্বারা সজ্জিত প্রধান চার ফেরেশ্তা- হযরত জিবরায়ীল আলাইহিস সালাম, হযরত মীকায়ীল আলাইহিস সালাম, হযরত ইসরাফীল আলাইহিস সালাম এবং হযরত আজরায়ীল আলাইহিস সালাম উনারা পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠকারীর প্রতি বা পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনকারীর প্রতি ছলাত-সালাম মুবারক পেশ করেন। সুবহানাল্লাহ!

বিখ্যাত মুহাদ্দিছ, মুফাসসির, ফক্বীহ ও যুগশ্রেষ্ঠ আলিম, যিনি এ উপমহাদেশে পবিত্র হাদীছ শরীফ শাস্ত্রের প্রচার-প্রসারকারী, যিনি শতাধিক কিতাবের সম্মানিত মুছান্নিফ বা প্রণেতা, যিনি প্রত্যহ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যিয়ারত মুবারক লাভে ধন্য হতেন এবং যিনি সুপ্রসিদ্ধ ক্বদিরিয়া তরীক্বার বিশিষ্ট বুযুর্গ হযরত শায়েখ আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-

مَنْ عَظَّمَ لَيْلَةَ مَوْلِدِهٖ بِـمَاۤ اَمْكَنَهٗ مِنَ التَّـعْظِيْمِ وَالْاِكْرَامِ كَانَ مِنَ الْفَائِزِيْنَ بِدَارِ السَّلَامِ

 অর্থ: “যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ দিবসকে তা’যীম করবে এবং সে উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করবে; সে চির শান্তিময় জান্নাতের অধিকারী হবে।” সুবহানাল্লাহ! (খুতবায়ে ইবনে নুবাতা)

উপরে উল্লেখিত বর্ণনার আলোকে প্রমাণিত যে, পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুধু খইরুল কুরূনেই পালিত হয়েছে তা নয়, বরং সৃষ্টির শুরু থেকেই অদ্যাবধি পালিত হয়ে আসছে এবং অনন্তকাল ব্যাপী পালিত হতেই থাকবে। সুবহানাল্লাহ!

উল্লেখ্য, বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মুসনাদে আহমদ শরীফ, মুসনাদে বাযযার শরীফ ইত্যাদি কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, একটি আয়াত বা বাক্য হলেও আমার পক্ষ থেকে পৌঁছিয়ে দাও। এক্ষেত্রে বণী ঈসরাইল থেকে শ্রম্নত বাক্যও বর্ণনা করাতে দোষের কিছু নাই। কিন্তু যে ব্যক্তি ইচ্ছা করে আমার প্রতি মিথ্যারোপ করবে সে যেন তার স্থান জাহান্নামে নির্ধারণ করে নেয়।

এ পবিত্র হাদীছ শরীফ থেকে প্রতিভাত যে, বণী ইসরায়ীল তথা ইহুদী সম্প্রদায়ও যদি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্পৃক্ত করে কিছু বলে তা অস্বীকার করা যাবে না। তা বিশ্বাস করতে হবে। যেমন খলীফাতু রসূলিল্লাহ হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি এক কুরাইশ কাফিরের মুখ থেকে পবিত্র মি’রাজ শরীফের ঘটনা মুবারক শুনে বিশ্বাস করেছেন বলেই মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে তিনি ছিদ্দীক্ব (চরম সত্যবাদী) উপাধি মুবারক লাভ করেন। এবং বণী ইসরাঈলের দুইশত  বছরের এক চরম গুনাহগার ব্যক্তি পবিত্র তাওরাত শরীফ উনার একটি নুসখার মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা-ছিফত উল্লেখপূর্বক নাম মুবারক দেখে তাতে বুছা দেয় এবং চোখে  মুখে স্পর্শ করে এবং ছলাত শরীফ পেশ করে। যার কারণে তার দুইশত বছরের গুনাহ মাফ করে দেয়া হয় এবং তার গোসল, কাফন-দাফন ও জানাযার জন্য জলীলুল ক্বদর রসূল হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে ওহী মুবারক করা হয় এবং ঐ ব্যক্তির সাথে জান্নাতে ৭০ জন সম্মানিতা হুরদের বিবাহ সুসম্পন্ন করা হয়। সুবহানাল্লাহ!

অতএব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান, মান, ফযীলত সংক্রান্ত বর্ণনার বিষয়ে সনদ নেই বলে কোনরূপ চু-চেরা, ক্বীল-ক্বাল করা যাবে না। কেননা আক্বাঈদের মাসয়ালা হচ্ছে, কেউ যদি একটি চুল নিয়ে বলে এ চুল মুবারকখানা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তখন যারা সেটা শুনবে তাদের সকলের জন্য ফরযে আইন হবে সেটা বিশ্বাস করা। কিন্তু যে বললো, সে যদি মিথ্যা বলে সেজন্য সে জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।

কাজেই, সববিষয়ে সনদ তালাশ করা গোমরাহীর কারণ। এটা ওহাবী সালাফীদের বদ স্বভাব। এদের থেকে দূরে থাকতে হবে। সনদ বিষয়ে হযরত মুহাদ্দিছীনে কিরাম উনারা স্পষ্ট উল্লেখ করেছেন-

كَانَ الْاِسْنَادُ لِئَلَّا يَدْخُلَ فِى الدِّيْنِ مَا لَيْسَ مِنْهُ لَا يَـخْرُجُ مَا ثَـبَتَ مِنْ عَمَلِ اَهْلِ الْاِسْنَادِ

অথার্ৎ- সনদ এজন্য যে, শরীয়ত বহিভূর্ত বিষয় যেন শরীয়তের মধ্যে প্রবেশ না করে। আর ইমাম মুজতাহিদের মাধ্যমে প্রমাণিত বিষয়কে শরীয়ত থেকে বের করার জন্যে সনদ নয়। (আজউয়ীবাহ-২৩৮ পৃ., ওহাবীদের চক্রান্ত উন্মোচন-৮ পৃ.)

জানা আবশ্যক, অনুসরণীয় কোন ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন বা উদযাপন করাকে বিদয়াত বলেননি। বরং উনারা পবিত্র মীলাদ শরীফ পালন করার কারণেই অনুসরণীয় হয়েছেন। অথার্ৎ একেক ইমাম, মুজতাহিদ, আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা একেকভাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা ছিফত মুবারক প্রকাশ করেছেন, সম্মান মুবারক প্রদর্শন করেছেন, গোলামী মুবারকে আঞ্জাম দিয়েছেন। কেউ পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন, প্রচার প্রসার করেছেন, কেউ পবিত্র হাদীছ শরীফ গবেষণা করে মাসয়ালা-মাসায়িল বর্ণনা করেছেন। কেউ উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক প্রকাশ করেছেন। কেউ উনার সুন্নত মুবারক সমূহ বর্ণনা করেছেন ইত্যাদি। উক্ত প্রতিটি বিষয় পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার অন্তর্ভুক্ত।

হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি লটারীর মাসয়ালা প্রসঙ্গে বলেছেন, আমি লটারী হারাম ফতওয়া দিয়েছি। কিন্তু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সফরকালে হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মধ্যে কাকে সফরে নিবেন তা ফায়ছালার জন্য যে লটারী মুবারক করেছেন তা জায়িয ও সুন্নত বলে ফতওয়া দিয়েছি।  তিনি একখানা সুন্নত-মুস্তাহাব আমল করার জন্য বিগত বিশ বছরের নামায দোহরায়ে পড়েছেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি  আরো বলেছেন-

اِذَا سَمِعْتُ فَـعَنْكَ قَـوْلًا طَيِّبًا وَاِذَا نَظَرْتُ فَلَا اَرٰى اِلَّاكَ

অথার্ৎ- ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি যা কিছু শুনি শুধু আপনার পবিত্র কথা  মুবারকই শুনি এবং যেদিকে দেখি শুধু আপনাকেই দেখি। সুবহানাল্লাহ! (ক্বছীদায়ে নু’মান শরীফ)

উক্ত বর্ণনা থেকে প্রমাণিত হয় যে, হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি কতখানি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্মান ও অনুসরণ করেছেন এবং কতখানি উনার নিছবত মুবারক হাছিল করেছেন তা কল্পনার উর্ধ্বে। সর্বোপরি তিনি আহলে বাইতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের পঞ্চম ও ষষ্ঠ ইমাম আলাইহিমাস সালাম উনাদের নিকট বাইয়াত গ্রহন করতঃ উনাদের ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করেছেন এবং উনাদের  গোলামী মুবারকে আঞ্জাম দেয়ার মাধ্যমে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাক্বীক্বী মুহব্বত ও সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল করেছেন। সুবহানাল্লাহ!

উপরোক্ত দলীলসমৃদ্ধ আলোচনা থেকে প্রতিভাত যে, পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খইরুল কুরূনের মধ্যেও পালিত হয়েছে এবং তারপরেও পালিত হয়েছে ও হচ্ছে। এমনকি হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সহ অনুসরণীয় সকল ইমাম-মুজতাহিদ-আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারাও পালন করেছেন। যদিওবা পালন করার ক্ষেত্রে তরীক্বা ও তরতীবের মধ্যে কিছুটা পাথর্ক্য বিদ্যমান।

 

হাফিয মুহম্মদ জামাল উদ্দীন মৌলভী বাজার

সুওয়াল: কয়েকজনের শরীকি কোন ১টি গরু কুরবানীতে ওয়াজিব কুরবানীর সাথে শরীকানগণের সমান অর্থ দিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ইসিম বা নাম মুবারকে কুরবানী দিতে পারবে কি?

সম্মিলিতভাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ইসিম বা নাম মুবারকে দেয়া ঐ কুরবানীর গোশ্ত সমান ভাগে ভাগ করে নেয়া যাবে কি?

অনুরূপভাবে মৃত পিতা-মাতার নামে সন্তানেরা সম্মিলিত ও সমানভাবে অর্থ দিয়ে কুরবানী দিতে পারে কি এবং গোশ্ত সমান ভাগে ভাগ করে নিতে পারে কি? দলীলসহ বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব: কুরবানী’র পশু গরু হোক, মহিষ হোক, উট হোক সেটা ৭ জনের তরফ থেকে বা ৭ জনের নামে কুরবানী দেয়ার বিধান রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ جَابِرٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ قَالَ نَـحَرْنَا مَعَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَامَ الْـحُدَيْبِيَّةِ اَلْبُدْنَةُ عَنْ سَبْعَةٍ وَالْبَـقَرَةُ عَنْ سَبْـعَةٍ

অর্থ : “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা হুদায়বিয়ার বছরে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে কুরবানী করলাম উট সাত নামে এবং গরু সাত নামে।” (মুসলিম শরীফ, তিরমিযী শরীফ)

হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত এক পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে-

خَرَجْنَا مَعَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُهَلِّيْنَ بِالْـحَجّ فَاَمَرَنَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَنْ نَّشْتَرِكَ فِي الْاِبِلِ وَالْبَـقَرِ كُلُّ سَبْـعَةٍ مِّنَّا فِيْ بَدَنَةٍ

অর্থ: “আমরা পবিত্র হজ্জ উনার ইহরাম বেঁধে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে বের হলাম। তিনি আমাদেরকে আদেশ মুবারক করলেন, যেন উট ও গরু প্রতিটি কুরবানীর পশুতে সাতজন করে শরীক হয়ে কুরবানী করি।” (মুসলিম শরীফ)

অন্য বর্ণনায় রয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

اَلْبَـقَرَةُ عَنْ سَبْـعَةٍ وَالْـجَزُوْرُ عَنْ سَبْـعَةٍ

অর্থ: “একটি গরু সাতজনের পক্ষ হতে এবং একটি উট সাত জনের পক্ষ হতে।” (আবূ দাঊদ শরীফ, মুসলিম শরীফ)

অর্থাৎ পবিত্র কুরবানী উনার পশু উট, গরু ও মহিষে সাত নাম এবং দুম্বা, মেষ বা ভেড়া, বকরী, খাসীতে এক নাম দেয়ার হুকুম মুবারক রয়েছে। গরু, মহিষ, উটে সাত নামের বেশী দিলে কুরবানী জায়িয হবে না। আর সাত নামের কমে কুরবানী করলে জায়িয হবে। আর ছাগল, দুম্বা, ভেড়া এক নামের বেশী নামে কুরবানী করলে কারো কুরবানী জায়িয হবে না। (হিদায়া, কুদূরী)

কাজেই, কয়েকজনের শরিকী কোন একটি কুরবানী’র গরুতে ওয়াজিব কুরবানীর সাথে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এক নাম মুবারক অবশ্যই দেয়া যাবে। বরং ৭ নামের শরিকী প্রতিটি কুরবানীর পশুতেই মহাসম্মানিত হাবীব মাহবূব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য এক নাম মুবারক দেয়া আবশ্যক। যা শরিকানদের কুরবানী নিশ্চিতভাবে কবুল হওয়ারও উসীলা বটে।

আর মহাসম্মানিত হাবীব মাহবূব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পক্ষ থেকে বা উনার মহাসম্মানিত ইসিম বা নাম মুবারকে দেয়া কুরবানীর পশুর গোশ্ত শরিকানরা সমানভাবে ভাগ করে নিতে পারবে এবং তা নিজেরাও খেতে পারবে এবং অন্য কাউকে হাদিয়াও দিতে পারবে অথবা দানও করে দিতে পারবে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ইসিম বা নাম মুবারকে কুরবানী দেয়া প্রত্যেক উম্মতের জন্যেই অপরিহার্য কর্তব্য।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ حَنَشٍ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ رَاَيْتُ حَضْرَتْ عَلِيًّا عَلَيْهِ السَّلَامُ يُضَحِّى بِكَبْشَيْنِ فَـقُلْتُ لَهُ مَا هٰذَا فَـقَالَ اِنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَوْصَانِـىْ اَنْ اُضَحِّىَ عَنْهُ فَانَا اُضَحِّىْ عَنْهُ

অর্থ : “হযরত হানাশ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে দুটি দুম্বা কুরবানী করতে দেখলাম এবং জিজ্ঞাসা করলাম, এটা কি? (দুটি কেন?) জবাবে তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে ওছিয়ত মুবারক করে গিয়েছেন যে, আমি যেন উনার পক্ষ হতে পবিত্র কুরবানী করি। সুতরাং আমি উনার পক্ষ থেকে (একটি) পবিত্র কুরবানী করছি।” (আবূ দাঊদ শরীফ ২য় খণ্ড ২৯ পৃষ্ঠা, তিরমিযী শরীফ ১ম খণ্ড ১৮০ পৃষ্ঠা, মিশকাত শরীফ ১২৮ পৃষ্ঠা)

উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ হতে এটা স্পষ্ট যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তরফ থেকে কুরবানী করার জন্য ওছিয়ত মুবারক করেছেন।

এখন ফিকিরের বিষয় হচ্ছে, সাধারণ একজন উম্মত যদি তার সন্তানদেরকে ওছিয়ত করেন তাহলে সন্তানের জন্য তা মান্য করা ফরয-ওয়াজিব হয়ে যায়। সন্তান যদি সামর্থ থাকা সত্ত্বেও সে ওছিয়ত পূর্ণ না করে তাহলে শরীয়ত অনুযায়ী গুনাহগার সাব্যস্ত হবে।

একজন পিতার ওছিয়ত পালন না করলে সন্তান যদি গুনাহগার হয় তাহলে যিনি সকল হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, সকল হযরত রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল, যিনি সমস্ত বাবারও বাবা! মহান আল্লাহ পাক উনার পরে যিনি মর্যাদা বা মাক্বাম মুবারক উনার অধিকারী সেই মহাসম্মানিত রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে ওছিয়ত মুবারক করেছেন, উক্ত ওছিয়ত মুবারক পালনের গুরুত্ব কত বেশি তা উম্মত মাত্রই সকলকে উপলব্ধি করে উনার সম্মানিত নাম মুবারকে কুরবানী করতে হবে।

বলার অপেক্ষা রাখে না, উক্ত ওছিয়ত মুবারক যিনি পালন করবেন তিনি কিন্তু নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তুষ্টি মুবারক নিঃসন্দেহে লাভ করবেন। সুবহানাল্লাহ!

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتِ الْعِرْبَاضِ ابْنِ سَارِيَّةَ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَيْكُمْ بِتَـقْوَى اللهِ. وَالسَّمْعِ وَالطَّاعَةِ وَاِنْ كَانَ عَبْدًا حَبَشِيًّا. وَسَتَـرَوْنَ مِنْ بَـعْدِيْ اِخْتِلَافًا كَثِيْـرًا. فَـعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِيْ وَسُنَّةِ الْـخُلَفَاءِ الرَّاشِدِيْنَ الْـمَهْدِيّـيْنَ تَـمَسَّكُوْا بِـهَا وَعَضُّوْا عَلَيْـهَا بِالنَّـوَاجِذِ

অর্থ : “হযরত ইরবায ইবনে সারিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আপনাদেরকে আমি উপদেশ দিচ্ছি যে, আপনারা (খাছভাবে) মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করুন। আর যিনি প্রকৃত খলীফা হবেন তিনি যদি হাবশী গোলামও হন, তবুও উনার নির্দেশ পালন করবেন ও উনার অনুসরণ করবেন। কেননা আমার পরে আপনাদের মধ্যে যারা থাকবেন, উনাদের মাঝে অনেক মতবিরোধ দেখা দিবে। কাজেই (এমন মতবিরোধপূর্ণ ও সঙ্কটাপন্ন অবস্থায়) আপনাদের জন্য আমার ও আমার হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত সুন্নত মুবারক (আদর্শ মুবারক) পালন করা ওয়াজিব। আপনারা তা মাড়ির দাঁত দিয়ে শক্ত করে অঁাকড়ে ধরবেন।” (আহমদ শরীফ, আবূ দাঊদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ)

উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মাধ্যমে হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত সুন্নত বা আদর্শ মুবারক পালন করা ওয়াজিব সাব্যস্ত হয়েছে। আর হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজজাহূ আলাইহিস সালাম তিনি হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্তভুর্ক্ত চতুর্থ খলীফা।

সুতরাং হযরত ইমামুল আউওয়াল মিন আহলে বাইতে রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাররামাল্লাহু ওয়াজজাহূ আলাইহিস সালাম উনার আদর্শ বা সুন্নত মুবারক- “প্রতি বছর নিজের তরফ থেকে একটি এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তরফ থেকে আরেকটি কুরবানী করা” এই সম্মানিত আদর্শ বা সুন্নত মুবারক প্রতিটি মুসলমানের মাড়ির দাঁত দিয়ে শক্ত করে অঁাকড়ে ধরতে হবে অর্থাৎ দৃঢ়তার সাথে দায়িমীভাবে পালন করতে হবে।

তাছাড়া নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেও উম্মতের পক্ষ থেকে কুরবানী দিয়েছেন। তাহলে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তরফ থেকে কুরবানী করার সুমহান দায়িত্ব তো স্বাভাবিকভাবেই উম্মতের উপর বর্তায়। এই ব্যাপারে চু-চেরা, ক্বীল-ক্বাল করার কোন অবকাশই নেই। বরং উম্মতের দায়িত্ব-কর্তব্য হচ্ছে চূড়ান্ত মুহব্বত ও আনুগত্যতার সাথে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তরফ থেকে পবিত্র কুরবানী করা।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে- “উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত রয়েছে, একবার নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, এমন একটি শিংওয়ালা দুম্বা আনতে যা কালোতে হাঁটে, কালোতে শোয় ও কালোতে দেখে অর্থাৎ যার পা, পেট ও চোখ সবই কালো। অতঃপর কুরবানী দেয়ার উদ্দেশ্যে উনার জন্য এরূপ একটি দুম্বা আনা হলো। তখন তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হে উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম! ছুরিটি দিন! অতঃপর বললেন, পাথরে তা ধারালো করুন। উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, আমি তা করলাম। অতঃপর তিনি তা গ্রহণ করলেন এবং দুম্বাটিকে ধরলেন তারপর পার্শ্বদেশ করে শোয়ালেন এবং যবেহ করতে গিয়ে বিসমিল্লাহ বললেন আরো বললেন, আয় বারে ইলাহী মহান আল্লাহ পাক! আপনি এই কুরবানী কবুল করুন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তরফ থেকে এবং উনার সম্মানিত পরিবার উনাদের তরফ থেকে এবং উনার উম্মতগণ উনাদের তরফ থেকে। অতঃপর উক্ত দুম্বাটি দ্বারা সকালের খাবার খাওয়ালেন।” (মুসলিম শরীফ, আবূ দাঊদ শরীফ)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ رَضِيَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ قَالَ شَهِدْتُّ مَعَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْأَضْحٰى بِالْمُصَلّٰى فَـلَمَّا قَضٰى خُطْبَـتَهٗ نَـزَلَ مِنْ مِّنْـبَرِهٖ وَأُتِـيَ بِكَبْشٍ فَذَبَـحَهٗ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِيَدِهٖ وَقَالَ بِسْمِ اللهِ وَاللهُ أَكْبَـرُ هٰذَا عَنِّيْ وَعَمَّنْ لَّـمْ يُضَحِّ مِنْ أُمَّتِىْ

অর্থ : “হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, আমি কুরবানীর দিন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে ঈদগাহে উপস্থিত হলাম। যখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি (নামাযের পর) খুতবা মুবারক শেষ করলেন এবং পবিত্র মিম্বর শরীফ থেকে নেমে আসলেন এরপর উনার জন্য একটি দুম্বা আনা হলো। তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজ পবিত্র নূরুল মাগফিরাহ বা হাত মুবারকে সেটা যবেহ করলেন এবং বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবার বললেন অর্থাৎ বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবার বলে যবেহ মুবারক করলেন আরো বললেন, এই কুরবানী আমার তরফ থেকে এবং আমার ঐ সকল উম্মতের তরফ থেকে যারা কুরবানী দেননি অর্থাৎ যাদের কুরবানী করার সামর্থ নেই।” (আবূ দাঊদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ)

সুতরাং উম্মতেরও দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে যে, সামর্থ্য থাকলে নিজের ওয়াজিব কুরবানীর পাশাপাশি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পক্ষ হতে কুরবানী দেয়া। আর যদি আর্থিক সামর্থ্য না থাকে তাহলে কয়েকজন মিলে উনার পক্ষ হতে কুরবানী দেয়া কিংবা ঋণ করে হলেও উনার পক্ষ হতে কুরবানী দেয়া।

বর্তমানে চরম ফিতনা-ফ্যাসাদের যামানায় উক্ত বিলুপ্তপ্রায় সুন্নত মুবারক আমাদেরকে যিনি জানাচ্ছেন তিনি হচ্ছেন- আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আস সাফফাহ, সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম, যিনি ঢাকা রাজারবাগ শরীফ উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম।

মূলতঃ মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি মুহব্বত থাকলে কোন পিছুটানই কাজ করে না। যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছেন আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আস সাফফাহ, সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম। তিনি হযরত আবূ রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত উম্মু রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম, হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম, হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের  নাম মুবারকে উনাদের তরফ থেকে প্রতি বছর শত শত কুরবানী করে থাকেন। সুবহানাল্লাহ!

এমনিক প্রতিটি মুসলমান যাতে কুরবানীর ফযীলত হাছিল করতে পারে সেজন্য তাজদীদী মাসয়ালা প্রদান করেছেন। যাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব নয় অথচ তারা কিছু লোক মিলে পশু কিনে যবেহ করে গোশত বণ্টন করে অথবা হাটবাজার থেকে গোশত কিনে খেয়ে থাকে। এ সকল লোকেরাও যদি ইচ্ছে করে তবে তারাও কুরবানীর ফযীলত ও ছওয়াব লাভ করতে পারে। এ সকল ব্যক্তিদের করণীয় হচ্ছে- তারা হাটবাজার থেকে গোশত না কিনে বরং কিছু লোক মিলে কুরবানীর পশু কিনে এক বা একাধিক নামে কুরবানী করবে। যেহেতু কুরবানীর পশু উট, গরু ও মহিষ ৭ নাম এবং দুম্বা, মেষ বা ভেড়া, বকরী, খাসীতে ১ নাম দেয়ার হুকুম মুবারক রয়েছে। তাই যদি ৪০ জন ব্যক্তি মিলে ১টি উট, গরু বা মহিষ কিনে ৭ নামে বা তার থেকে কম নামে কুরবানী করে গোশত বণ্টন করে নেয়, তাতেও কুরবানী শুদ্ধ হবে। তদ্রুপ ১টি খাসী তিনজনে বা পাঁচজনে মিলে পয়সা দিয়ে খরীদ করে যদি ১ নামে কুরবানী করে গোশত বণ্টন করে নেয়, তবে সে কুরবানীও শুদ্ধ হবে।

তবে স্মরণীয় যে, যারা শরীক হয়ে এ ধরণের কুরবানী দিবে তারা প্রত্যেকে চাইবে নিজেদের নামে কুরবানী দিয়ে কুরবানীর ফযীলত হাছিল করতে। আর উট, গরু ও মহিষে সাত নামের বেশি এবং দুম্বা, ছাগল ও ভেড়াতে এক নামের বেশি দেয়া যায় না। এক্ষেত্রে কার নাম দিবে বা কার নাম বাদ দিবে, এ নিয়ে ঝগড়া-ফ্যাসাদ ও মনোমালিন্যের সৃষ্টি হবে। তাছাড়া যদি কারো নামে দেয়া হয়, অন্য কেউ প্রকাশ্যে আপত্তি না করে, কিন্তু অন্তরে সম্মতি না থাকে তাহলে কুরবানী শুদ্ধ হবে না। কারণ একজনের টাকা দিয়ে অন্যজনের নামে কুরবানী করলে কুরবানী শুদ্ধ হবে না টাকাওয়ালার সম্মতি ব্যতিত।

সেজন্য নাম দেয়ার ক্ষেত্রে উত্তম তরীক্বা ও আদব হচ্ছে, যদি কুরবানীর পশু এক নামে কুরবানী করা হয়, তাহলে মহাসম্মানিত হাবীব ও মাহবূব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারকে কুরবানী করে সকল শরীক সমানভাবে গোশত বণ্টন করে নিবে। এতে যেমন তাদের কুরবানী নিশ্চিতরূপে মহান আল্লাহ পাক উনার দরবার শরীফ-এ কবুল ও মঞ্জুর হবে, সাথে সাথে তাদের জন্য ফযীলত, বারাকাত, ফুয়ুজাত, নিয়ামত, রহ্মত, মাগফিরাত, নাযাত সর্বপোরি মহান আল্লাহ্ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের খাছ সন্তুষ্টি মুবারক লাভ করার উছীলাও হবে। আর যে সকল পশুতে সাত নামে কুরবানী দেয়ার বিধান রয়েছে, তাতে প্রথমতঃ এক নাম মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ইসিম বা নাম মুবারকে এবং বাকী ছয় নামের মধ্যে পর্যায়ক্রমে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত আব্বা-আম্মা আলাইহিমাস সালাম উনাদের মহাসম্মানিত নাম মুবারকে, হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম, হযরত আহলু বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মহাসম্মানিত নাম মুবারকে কুরবানী করে সকল শরীক সমানভাবে গোশত বণ্টন করে নিবে।

এছাড়াও হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম, হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম, হযরত উম্মু যাবীহিল্লাহ আলাইহাস সালাম, হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম ও হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের নাম মুবারক থেকে ইচ্ছে মুতাবিক পবিত্র কুরবানী দিতে পারে। তাহলে এতে কোন ফিৎনা পয়দা হবে না, সাথে সাথে পবিত্র কুরবানী উনার দিন মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট সবচেয়ে পছন্দনীয় আমল হচ্ছে পবিত্র কুরবানী করা, তাও আদায় হলো। আর কুরবানীর বরকতময় গোশতও লাভ হলো। সুবহানাল্লাহ! (মিশকাত শরীফ, শামী, আলমগীরী, ফতহুল ক্বাদীর, শরহে হিদায়া, কাজীখান)

সুতরাং উপরোক্ত আলোচনা হতে এটাই প্রতিভাত হয় যে, প্রত্যেক উম্মতের জন্য দায়িত্ব কর্তব্য হচ্ছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ইসিম বা নাম মুবারকে কুরবানী করা। এক্ষেত্রে  যাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব তার ওয়াজিব কুরবানী দেয়ার পাশাপাশি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ইসিম বা নাম মুবারকেও কুরবানী দেয়া। এটা তার নিজের কুরবানী নিশ্চিতভাবে কুবুল হওয়ার কারণ এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল হওয়ারও কারণ। সুবহানাল্লাহ!

যাদের একাধিক কুরবানী করার সামর্থ রয়েছে, তাদের উচিত নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ইসিম বা নাম মুবারকে এবং উনার মহাসম্মানিত হযরত আব্বা আলাইহিস সালাম, মহাসম্মানিতা হযরত আম্মা আলাইহাস সালাম, মহাসম্মানিতা হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম, মহাসম্মানিত হযরত আবনাউ রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং মহাসম্মানিতা হযরত বানাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলে বাইতি রসূলিল্লাহ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম এবং ইমামুছ ছালিছ মিন আহলে বাইতি রসূলিল্লাহ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাদের মহাসম্মানিত ইসিম বা নাম মুবারকে কুরবানী দেয়া।

আর যাদের কুরবানী করার সামর্থ নেই বা যাদের উপরে কুরবানী ওয়াজিব নয় উনাদের কর্তব্য হচ্ছে উনারা একাধিকজন মিলে পশু কিনে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম ও আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মহাসম্মানিত ইসিম বা নাম মুবারকে কুরবানী করা।

দলীলসমূহ: মুসলিম শরীফ, আবূ দাঊদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ, হিদায়া, শরহে হিদায়া, কুদূরী, আলমগীরী, ফতহুল ক্বাদীর, ফতওয়ায়ে ক্বাযীখান, ফতওয়ায়ে শামী, আল বাইয়্যিনাত শরীফ ইত্যাদি।

মুহম্মদ রিদ্বওয়ানুল্লাহ পাটওয়ারী, শাহজাহানপুর, ঢাকা

সুওয়াল: আমরা জানি, মহাম্মাানিত হাবীব ও মাহবূব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যামানা থেকেই প্রতিষ্ঠিত একটি ইবাদত হচ্ছে, পবিত্র ছলাতুল জুমু‘আহ উনার পূর্বে ৪ রাকা‘আত ‘ক্বাবলাল জুমু‘আহ’ নামায। যা সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ।

কিন্তু ইদানিংকালে বাতিল ফিরক্বা ও বদ আক্বীদাভুক্ত কামালুদ্দীন জাফরী নামে এক কুখ্যাত উলামায়ে সূ উক্ত পবিত্র নামায নিয়ে অত্যন্ত কুরুচিপূর্ণ, মিথ্যা, মনগড়া, বিভ্রান্ত্রিকর ও গোমরাহীমূলক বক্তব্য প্রদান করে। সে প্রচার করছে যে, ‘জুমু‘আর আগে বিধিবদ্ধ কোন সুন্নাত নামায নেই, এর কোনো দলীল নেই। এমনকি সে উক্ত সম্মানিত নামাযকে ফালতু বলেও আখ্যায়িত করে।’ না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ!

এ বিষয়ে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে সঠিক ফায়ছালা জানিয়ে বিভ্রান্তি নিরসন করার জন্য আরজি জানাচ্ছি।

জাওয়াব: ‘ক্বাবলাল জুমু‘আহ’ নামায সম্পর্কে সুওয়ালে উল্লেখিত মুসলমান নামধারী কাট্টা মুনাফিক ও মুরতাদ, দাজ্জালে কাযযাব, কুখ্যাত উলামায়ে সূ ব্যক্তিটি যেসব বক্তব্য উচ্চারণ করেছে তা চরম মিথ্যা, মনগড়া, গোমরাহীমূলক ও বিভ্রান্তিকর এবং সবোর্পরি পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার স্পষ্ট খিলাফ বা বিরোধী হওয়ার কারণে কাট্টা কুফরী হয়েছে।

কেননা পবিত্র ছলাতুল জুমু‘আর পূর্বে চার রাকা‘আত ক্বাবলাল জুমু‘আ নামায পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত।

যেমন পবিত্র  ছলাতুল জুমু‘আহ’র পূর্বে চার রাকা‘আত নামায সম্পের্ক পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ سَيِّدِنَا حَضْرَتِ الْاِمَامِ الْاَوَّلِ كَرَّمَ اللهُ وَجْهَهٗ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي قَبْلَ الْجُمُعَةِ أَرْبَعًا وَبَعْدَهَا اَرْبَعًا يَجْعَلُ التَّسْلِيْمَ فِـىْ اٰخِرِهِنَّ رَكْعَةً

অর্থ: সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আউওয়াল কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। (তিনি বলেন,) নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র ছলাতুল জুমু‘আহ’র পূর্বে চার রাকা‘আত এবং পরে চার রাকা‘আত ছলাত আদায় করতেন এবং শেষ রাকা‘আতে সালাম ফিরাতেন।’’ (আল মু’জামুল আওসাত্ব লিত্ব তবারানী ২/১৭২, আল মু’জামু ইবনিল আরাবী ২/৪৪৮, লিসানুল মীযান ৭/২৭৮, নছবুর র-ইয়াহ লি আহাদীছিল হিদায়াহ ২/২০৬, আনীসুস সারী ৬/৪২৩১ ইত্যাদি)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى الله عَليْهِ وَسَلَّمَ يَرْكَعُ قَبْلَ الْجُمُعَةِ أَرْبَعًا لَا يَفْصِلُ فِيْ شَيْءٍ مِّنْهُنَّ

অর্থ: “রঈসুল মুফাসসিরীন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি (পবিত্র জুমুআ’হর দিন) পবিত্র ছলাতুল জুমু‘আহ্ আদায় করার পূর্বে পৃথক না হয়ে অর্থাৎ এক সালামে ৪ রাকা‘আত ছলাত আদায় করতেন।” সুবহানাল্লাহ! (ইবনে মাজাহ শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ নং ১১২৯)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَرْكَعُ قَبْلَ الْجُمُعَةِ اَرْبَعًا وَبَعْدَهَا اَرْبَعًا لَا يَفْصِلُ بَيْنَهُنَّ

অর্থ: “রঈসুল মুফাসসিরীন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি (পবিত্র জুমুআ’র দিন) পবিত্র ছলাতুল জুমু‘আহ্ আদায় করার পূর্বে চার রাকা‘আত এবং পরে চার রাকা‘আত পৃথক না হয়ে অর্থাৎ এক সালামে চার রাকা‘আত ছলাত আদায় করতেন।” (আল মু’জামুল কাবীর ১০/২৭৬, মাজমাউয যাওয়ায়িদ ২/২৩০, পবিত্র হাদীছ শরীফ নং ৩১৯০ ইত্যাদি)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُودٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي قَبْلَ الْجُمُعَةِ أَرْبَعًا وَبَعْدَهَا أَرْبَعًا

অর্থ: “ফক্বীহুল উম্মত হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাস‘ঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি (পবিত্র জুমুআ’র দিন) পবিত্র ছলাতুল জুমু‘আহ্ আদায় করার পূর্বে ৪ রাকা‘আত এবং পরে চার রাকা‘আত ছলাত আদায় করতেন।” সুবহানাল্লাহ! (মু’জামুল আওসাত্ব, নছবুর র-ইয়াহ লি আহাদীছিল হিদায়াহ ২/২০৬)

عَنْ حَضْرَتْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ كَانَ مُصَلِّيًا فَلْيُصَلِّ قَبْلَ الْجُمُعَةِ أَرْبَعًا وَبَعْدَهَا أَرْبَعًا

অর্থ: “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি পবিত্র জুমু‘আহর নামায পড়বে, সে যেন পবিত্র জুমু‘আহর নামাযের পূর্বে চার রাকা‘আত এবং পরে চার রাকা‘আত নামায আদায় করে।” (শরহু মুশকিলিল আছার ১০/২৯৯, কানযুল উম্মাল ৭/৭৪৯, জামিউল কাবীর লিস সূয়ূতী পৃষ্ঠা নং ২৪২২৯, আল ইমাউ ইলা যাওয়ায়িদিল হাদীছ ৬/৩০১, মাউসূয়াতু আত্বরাফিল হাদীছ ইত্যাদি)

হযরত মোল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-

قَالَ الْحَافِظُ الْعِرَاقِيُّ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ أَنَّهٗ  صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ  كَانَ يُصَلِّيْ قَبْلَهَا أَرْبَعًا

 অর্থ: ইমাম যাইনুদ্দীন ইরাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র ছলাতুল জুমু‘আহ্ উনার পূর্বে ৪ রাকা‘আত নামায পড়েছেন।” সুবহানাল্লাহ! (মিরকাতুল মাফাতীহ শরহে মিশকাতুল মাছাবীহ ৩/৮৯৩)

আরো বর্ণিত হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ إِبْرَاهِيْمَ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ اَنَّ حَضْرَتْ عَبْدَ اللهِ بْنَ مَسْعُودٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ كَانَ يُصَلِّىْ قَبْلَ الْجُمُعَةِ اَرْبَعًا وَبَعْدَهَا اَرْبَعًا لَا يَفْصِلُ بَيْنَهُنَّ بِتَسْلِيْمٍ

অর্থ: “হযরত ইবরাহীম নাখ‘য়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। (তিনি বলেন,) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাস‘ঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি পবিত্র জুমু‘য়ার নামাযের পূর্বে এবং পরে চার রাকা‘য়াত নামায পড়তেন। মাঝে পৃথক হতেন না অর্থাৎ এক সালামে চার রাকা‘য়াত পড়তেন।” (শরহু মা‘য়ানিইল আছার ১/৩৩৫)

হযরত আবূ ইসহাক্ব আস সাবীয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আসিম ইবনে দমরা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেন, তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আউওয়াল কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ছলাতুল জুমু‘আহ’র পূর্বে ৪ রাকা‘আত নামায পড়তেন। (আল-ফাওয়াইদ, তরহুত তাছরীব ৩/২৯২)

উপরে উল্লেখিত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দ্বারাই প্রতিভাত হয়েছে যে, পবিত্র ছলাতুল জুমু‘আর পূর্বে চার রাকা‘আত ক্বাবলাল জুমু‘আ নামায স্বয়ং যিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পড়েছেন। অনুরূপভাবে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকেও পড়ার জন্য আদেশ মুবারক করেছেন। যা অসংখ্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বর্ণনা মুবারক দ্বারা সাব্যস্ত ও প্রমাণিত রয়েছে।

আর পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত কোনো ইবাদত বা আমলকে ফালতু বলার অর্থ হচ্ছে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাকে অস্বীকার করা, অমান্য করা, অবজ্ঞা বা ইহানত করার শামিল। যা সুস্পষ্ট কুফরী এবং কাফির ও জাহান্নামী হওয়ার কারণ। না‘ঊযুবিল্লাহ!

সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ফতওয়া হচ্ছে- মুসলমান নামধারী কোন ব্যক্তি যদি কুফরী করে, সে মুরতাদ হয়ে যায়। আর মুরতাদের শরঈ হুকুম হচ্ছে, বিবাহ করে থাকলে তার আহলিয়া বা স্ত্রী তালাক্ব হয়ে যাবে, হজ্জ করে থাকলে বাতিল হয়ে যাবে, তার জিন্দেগীর সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে যাবে। তাকে তওবার জন্য ৩ দিন সময় দেয়া হবে। যদি তওবা না করে তাহলে তার শরঈ শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদণ্ড। তার জানাযা, দাফন, কাফন কোনো কিছুই করা যাবে না। মুসলমানদের কবরস্থানেও তাকে দাফন করা যাবে না। বরং কুকুর-শৃগালের ন্যায় তাকে মাটিতে পঁুতে রাখতে হবে। কেউ যদি তার জানাযা, দাফন,কাফন করে তার প্রতিও একই হুকুম বর্তাবে। সম্মানিত ইসলামী খিলাফত থাকলে এই সমস্ত মুনাফিক, মুরতাদ, উলামায়ে সূ’দের উপর উক্ত হুকুমই আরোপ করা হতো।

কাজেই, এ সকল উলামায়ে সূ’দের বিভ্রান্তি থেকে ঈমান-আক্বীদা ও আমল হিফাযত করার ব্যাপারে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে সতর্ক করা হয়েছে। যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَكُوْنُ فِىْ اٰخِرِ الزَّمَانِ دَجَّالُوْنَ كَذَّابُوْنَ يَأْتُوْنَكُمْ مِّنَ الْاَحَادِيْثِ بِـمَا لَـمْ تَسْمَعُوْا اَنْتُمْ وَلَا اٰبَاؤُكُمْ فَاِيَّاكُمْ وَاِيَّاهُمْ لَا يُضِلُّوْنَكُمْ وَلَا يُفْتِنُوْنَكُمْ

অর্থ: হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আখিরী যামানায় কিছু মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি। সাবধান! তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকবে এবং তোমাদেরকে তাদের থেকে দূরে রাখবে। তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ করতে পারবে না এবং ফিতনায় ফেলতে পারবে না। (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)

অর্থাৎ উলামায়ে ‘সূ’ বা ধর্মব্যবসায়ীদের ওয়াজ শোনা, তাদের ফতওয়া মানা, তাদেরকে অনুসরণ করা হারাম আর তাদের ছোহবত থেকে দূরে থাকা ফরয-ওয়াজিব। (৭৩ পৃষ্ঠায় দেখুন)

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ‘পবিত্র সূরা কাহাফ’ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

وَلَا تُطِعْ مَنْ اَغْفَلْنَا قَلْبَهٗ عَنْ ذِكْرِنَا وَاتَّبَعَ هَوَاهُ وَكَانَ اَمْرُهٗ فُرُطًا

অর্থ: “তোমরা ঐ ব্যক্তিকে অনুসরণ করোনা যার ক্বল্ব্ আমার যিকির থেকে গাফিল। সে নফসের পায়রবী করে আর তার কাজগুলো সম্মানিত শরীয়ত উনার খিলাফ।” অর্থাৎ যারা শরীয়তের খিলাফ কাজ করে তথা টিভি চ্যানেলে প্রোগ্রাম করে, হারাম কাজ করে তাদেরকে মহান আল্লাহ পাক তিনি অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন।

আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

اِنَّ هٰذَا الْعِلْمَ دِيْنٌ فَانْظُرُوْا عَمَّنْ تَأْخُذُوْنَ دِيْنَكُمْ

 অর্থ: “নিশ্চয়ই (পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনার) ইলিমই হচ্ছে দ্বীন। সুতরাং, তোমরা কার নিকট থেকে দ্বীন গ্রহণ করছো তাকে লক্ষ্য করো।” (মিশকাত শরীফ)

অর্থাৎ যাদের আক্বীদা ও আমল সম্মানিত শরীয়ত উনার খিলাফ তথা যারা টিভিতে প্রোগ্রাম করে, ওয়াজ ভিডিও করে, হারাম কাজ করে এরা উলামায়ে সূ’র অন্তর্ভুক্ত। এদের কাছ থেকে ইলিম গ্রহণ করা যাবে না, এদের ওয়াজ শুনা যাবে না, এদের ফতওয়া মানা যাবে না, এদের পিছনে নামায পড়া যাবে না। কারণ এরা গুমরাহ সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত। নাঊযুবিল্লাহ!

মূলকথা হচ্ছে, পবিত্র  ছলাতুল জুমুয়ার দু’রাকায়াত ফরয নামাযের পূর্বে ৪ রাকায়াত ক্বাবলাল জুমুয়াহ এবং পবিত্র  ছলাতুল জুমুয়ার দু’রাকায়াত ফরয নামাযের পর ৪ রাকায়াত বা’দাল জুমুয়াহ  এবং ২ রাকায়াত সুন্নাতুল ওয়াক্ত মোট ১০ রাকায়াত নামায সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ উনার অন্তর্ভুক্ত। উক্ত ১০ রাকায়াত নামাযই পড়তে হবে। এক রাকায়াতও বাদ দেয়া যাবে না। বাদ দিলে সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ ছেড়ে দেয়ার কারণে ওয়াজিব তরকের গুনাহে গুনাহগার হতে হবে।

দলীলসমূহ:- (১) “শারহু মায়া’নিল আছার” (২) “শারহু মুশকিল আছার” (৩) “নাসায়ী শরীফ” (৪) “তিরমিযী শরীফ” (৫) “আবূ দাউদ শরীফ” (৬) “ইবনে মাজাহ শরীফ” (৭) “উমদাতুল ক্বারী শরহে ছহীহুল বুখারী” (৮) “জাহেরুর রেওয়ায়েত” (৯) “ক্বুওওয়াতুল ক্বুলূব ফী মুয়ামালাতিল মাহবূব” (১০) “মা’রিফাতুস সুনান ওয়াল আছার লিল বাইহাক্বী” (১১) “মুছান্নিফু আব্দির রজ্জাক” (১২) “আল্মু’জামুল কাবীর লিত্ত্ববারানী” (১৩) “সুনানে দারিমী” (১৪) “শরহে ইবনে বাত্তাল শরহে বুখারী”(১৫) “লুমআত” (১৬) “মাজমাউল আনহুর ফী শারহি মুলতাকাল আবহুর” (১৭) “শারহুন্ নিক্বায়াহ” (১৮) “আল্ মাবসূত্ব লিস্্সারাখসী” (১৯) “শরহে ইলইয়াস” (২০) “আল ঊয়ূন” (২১) “আল্ মাতূন” (২২) “মুলতাকাল আবহুর” (২৩) “বাহরুর রায়িক্ব শারহু কানযিদ দাক্বায়িক্ব” (২৪) “শারহুল বিক্বায়াহ্” (২৫) “যখীরা” (২৬) “কাশফুল হাক্বায়িক্ব” (২৭) “ঊমদাতুর রিয়ায়াহ্ আলা শারহিল বিক্বায়াহ্” (২৮) “মিনহাতুল খালিক্ব” (২৯) “আল্ জাওহারাতুন নাইয়্যারাহ” (৩০) “হাশিয়ায়ে আলা মারাকিউল ফালাহ” (৩১) “আল্ হাদ্দাদী” (৩২) “আল্ কুহেস্তানী” (৩৩) “হাশিয়াতুত্ ত্বাহত্বাবী আলাদ দুররিল মুখতার”  (৩৪) “কারখী” (৩৫) “মানযূমাত” (৩৬) “ফতওয়ায়ে তাতারখানীয়া” (৩৭)“ফতওয়ায়ে খাইরিয়্যাত”(৩৮) “মুলাখ্খাছ” (৩৯) “তাজনীস” (৪০) “বাদায়িউস্্ সানায়া” (৪১) “মুনীয়াতুল মুছাল্লী” (৪২) “কিতাবুল হুজ্জাত আলা আহলে মাদীনা” (৪৩) “মালাবুদ্দা মিনহু”  (৪৪) “আনওয়ারে মাহমূদাহ” (৪৫) “ফতওয়ায়ে দারুল উলূম দেওবন্দ”।

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ