সুওয়াল-জাওয়াব

সংখ্যা: ২১৩তম সংখ্যা | বিভাগ:

খন্দকার সেলিম আহমদ

পাহাড় কাঞ্চনপুর, টাঙ্গাইল

 সুওয়াল: হাটহাজারী মাদরাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা ফেব্রুয়ারী-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত-অক্টোবর ২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রদত্ত  মীলাদ শরীফ-ক্বিয়াম শরীফসম্পর্কিত বক্তব্যের সমালোচনা করতে গিয়ে এবং একই বিষয়ে এপ্রিল-২০০৫ ঈসায়ী ও মে-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় এছাড়াও মাসিক মদীনা পত্রিকা ফেব্রুয়ারী-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে একই ধরনের জাওয়াব দেয়া হয়েছে।

তাদের বক্তব্যগুলোর মধ্যে যে বিষয়গুলো আমার নিকট সন্দেহজনক তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো-

যেমন, হাটহাজারী মুখপত্র মে-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে বলা হয়েছে,  বর্তমানে প্রচলিত মীলাদের মধ্যে এমন কিছু দিক বা ধারা রয়েছে যেগুলো শরীয়ত মনোনীত নয়।” …

এখন আমাদের সুওয়াল হলো, বর্তমানে প্রচলিত যে মীলাদ শরীফ দেখা যায়, সে সম্পর্কে তাদের উল্লিখিত বক্তব্য কতটুকু দলীলসম্মত? কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।

জাওয়াব: বর্তমানে প্রচলিত মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফ সম্পর্কে হাটহাজারী মাদরাসার অখ্যাত মাসিক পত্রিকার জিজ্ঞাসা সমাধানে এবং অপর একটি পত্রিকার প্রশ্নোত্তর বিভাগে যা বলা হয়েছে তা শুদ্ধ তো হয়ইনি, বরং সম্পূর্ণই মিথ্যা, ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন এবং অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদ ও ফক্বীহগণ উনাদের সর্বজনমান্য ও স্বীকৃত বিশ্ব বিখ্যাত ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহের বক্তব্যের বিপরীত ও বিরুদ্ধ মত। যা ইতঃপূর্বে আমাদের  মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ”-এর অনেক সংখ্যায় খ-ন করে সঠিক ও দলীলভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হয়েছে। আর  মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ”-এর জাওয়াবকে খণ্ডন করা হাটহাজারী মৌলভীদের পক্ষে আদৌ সম্ভব হয়নি, হবেও না ইনশাআল্লাহ। এরপরেও হাটহাজারীর মৌলভী এবং তাদের সকল সমজাতীয়রা বারবার মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফসম্পর্কে বিনা তাহক্বীকে ও বিনা দলীলে উক্ত ভুলেরই পুনরাবৃত্তি করে যাচ্ছে।

(ধারাবাহিক)

যেমন, উল্লিখিত বক্তব্যের প্রথমেই তারা বলেছে,  বর্তমানে প্রচলিত মীলাদের মধ্যে এমন কিছু দিক বা ধারা রয়েছে যেগুলো শরীয়ত মনোনীত নয়।” …

এর জাওয়াবে বলতে হয় যে, কুরআন শরীফ-এর কোন আয়াত শরীফ-এ বর্তমানে প্রচলিত মীলাদ শরীফ-এর মধ্যে কোন দিক বা কোন ধারাগুলোকে শরীয়ত মনোনীত নয়বলা হয়েছে এবং হাদীছ শরীফ-এর কোন হাদীছ শরীফ-এ বর্তমানে প্রচলিত মীলাদ শরীফ-এর মধ্যে কোন দিক বা কোন ধারাগুলোকে শরীয়ত মনোনীত নয়বলা হয়েছে, তা হাটহাজারী মৌলভীরা কুরআন শরীফ-এর আয়াত শরীফ, হাদীছ শরীফ-এর ইবারতসহ দলীল উল্লেখ করেনি। সুতরাং তাদের দলীলবিহীন, ইবারতবিহীন, মনগড়া ও মিথ্যা বক্তব্য মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।

নিম্নে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস এবং বুযুর্গদের আমল দ্বারা প্রমাণিত বিস্তারিত দলীল-আদিল্লাহ পেশ করা হলো-

স্মরণীয় যে, মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফ-এর মূল উদ্দেশ্য হলো আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা-ছিফত করা ও উনার বিলাদত শরীফ সম্পর্কে আলোচনা করা এবং উনার প্রতি ছলাত-সালাম পাঠ করা।

যেমন- মীলাদ শরীফ-এর প্রথমেই কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা হয়। কেননা, কোনো নেক কাজ কুরআন শরীফ তিলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু করা রহমত, বরকত, সাকীনা তথা মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি লাভের কারণ। সেহেতু প্রথমেই পবিত্র কালামে পাক হতে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ফযীলত সম্বলিত আয়াত শরীফ তিলাওয়াত করা হয়। যাতে স্বয়ং আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারই মীলাদ শরীফ বা ছানা-ছিফত বর্ণনা করা হয়েছে।

অতঃপর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর ছলাত পাঠ করা হয়। কারণ ছলাত পাঠ করা মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরই নির্দেশ।

তাছাড়া আমরা যেভাবে মজলিস করে মীলাদ শরীফ-এর মাহফিল করে থাকি তা খোদ মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের যামানাতেই ছিল।

আর হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের থেকেও  মীলাদ শরীফ”-এর প্রমাণ রয়েছে। শুধু তাই নয়, হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা স্বয়ং নিজেরাই  মীলাদ শরীফ”-এর তাগিদ করেছেন ও ফযীলত বর্ণনা করেছেন।

এছাড়াও হযরত ইমাম-মুজতাহিদীন, সলফে ছালিহীন, বুযুর্গানে দ্বীন রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের থেকেও মীলাদ শরীফএর প্রমাণ রয়েছে।

যেমন,  ইক্বদুল জাওয়াহিরনামক কিতাবের ২৯নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে-

قد استحسن القيام عند ذكر ولادته الشريفة صلى الله عليه وسلم ائمة ذو رواية ودراية.

অর্থ:  সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর আলোচনাকালে ক্বিয়াম করাকে বিচক্ষণ ইমামগণ উনারা মুস্তাহ্সান বলেছেন।

 ইশবাউল কালামনামক কিতাবের ৫৪নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে-

قد اجتمعت الامة الـمحمدية من اهل السنة والجماعة على استحسان القيام الـمذكور وقال عليه السلام لا تجمع امتى على الضلالة.

অর্থ:  উম্মতে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামগণ উনাদের আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের সকল আলিম মীলাদ শরীফ-এর ক্বিয়াম মুস্তাহ্সান হওয়ার ব্যাপারে ইজমা বা ঐকমত্য পোষণ করেন। আর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, আমার উম্মত (আলিমগণ) কখনোই গোমরাহীর উপর একমত হবে না।

আশরাফ আলী থানবীসহ সকল দেওবন্দীদের পীর ও মুর্শিদ, শায়খে আরব ওয়াল আযম, হযরতুল আল্লামা, হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার  হাফতে মাসায়িলকিতাবে উল্লেখ করেন যে-

مولود  شر یف کو ذریعہ برکات سمجھ کر ہر سال منعقد کرتا ہوں اور قیام کے وقت بے حد لطف ولذت پاتا ہوں.

অর্থ:  মীলাদ শরীফ-এর মাহফিলকে বরকত লাভের ওসীলা মনে করে আমি প্রতি বৎসর মীলাদ শরীফ-এর মজলিস করি এবং মীলাদ মাহফিলে ক্বিয়াম করার সময় আমি অশেষ আনন্দ ও স্বাদ উপভোগ করি।

আশরাফ আলী থানবী তার  তরীক্বায়ে মীলাদ”  কিতাবের ৮ম পৃষ্ঠায় উল্লেখ করে-

ভাবার্থ:  ওই সকল কার্যাবলী (অর্থাৎ শিরনী, ক্বিয়াম ইত্যাদি) প্রকৃতপক্ষে মুবাহ কাজসমূহের অন্তর্ভুক্ত। তাতে কোন ক্ষতি নেই এবং সেজন্য প্রকৃত মীলাদ শরীফ-এর ব্যাপারে কোন প্রকার নিষেধ আসতে পারেনা।

আশরাফ আলী থানবী তার  ইমদাদুল ফতওয়ার৪র্থ খণ্ডে ৩২০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছে-

والاحتفال بذكر الولادة ان كان خاليا عن البدعة الـمروجة جائز بل مندوب كسائر اذكاره صلى الله عليه وسلم. والقيام عند ذكر ولادته الشريفة حاشا الله ان يكون كفرا.

অর্থ:  হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার বিলাদত শরীফ-এর বর্ণনা করার জন্য মাহফিল করা জায়িয বরং মুস্তাহাব, যখন উহা (হিন্দুস্থানে) প্রচলিত বিদয়াত হতে পবিত্র হবে এবং (মীলাদ শরীফে) তাওয়াল্লুদ শরীফ পাঠ করার সময় ক্বিয়াম করা কখনো কুফরী নয়।

 সীরাতে হালবীয়াকিতাবের ১ম খ- ৯৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে-

جرت عادة كثيرة من الـمحبين اذا سمعوا بذكر وضعه صلى الله عليه وسلم ان يقاموا لتعظيم النبى صلى الله عليه وسلم

অর্থ:  হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার অধিকাংশ মুহব্বতকারীর স্বভাব এটাই ছিল যে, তারা হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার বিলাদত শরীফ-এর কথা শুনে সাথে সাথেই হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সম্মানার্থে ক্বিয়াম করেছেন।

সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার তাযীম করা সম্পর্কে আল্লামা কাজী আয়ায রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার  কিতাবুশ শিফায়উল্লেখ করেন-

اعلم ان حرمة النبى صلى الله عليه وسلم بعد موته وتوقيره وتعظيمه لازم كما كان حال حياته وذالك عند ذكره صلى الله عليه وسلم وذكر حديثه وسنته وسماع اسمه وسيرته

অর্থ:  জেনে রাখ! সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার বিছাল শরীফ-এর পর উনার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা বা তাযীম-তাকরীম করা ওইরূপই ওয়াজিব, যেরূপ হায়াত মুবারকে ওয়াজিব ছিল। কাজেই উনার বরকতময় জীবনী শ্রবণকালে, পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনাকালে, নাম মুবারক উচ্চারণকালে ও উনার বরকতময় ও উৎকৃষ্টতম আখলাকের কথা শ্রবণকালে, উনার প্রতি তাযীম-তাকরীম বা সম্মান প্রদর্শন করা ওয়াজিব।

আর এ ব্যাপারে সকলেই একমত যে, মীলাদ শরীফ-এ যে ক্বিয়াম করা হয়, তা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার প্রতি সম্মান প্রদর্শন বা তাযীম-তাকরীম করার জন্যেই করা হয়।

সুতরাং প্রমাণিত হলো, আশরাফ আলী থানভী, গাঙ্গুহীসহ সকল দেওবন্দীদের পীর ও মুর্শিদ শায়খুল আরব ওয়াল আযম, আল্লামা হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি স্বয়ং নিজেই মীলাদ-ক্বিয়াম করেছেন, যা তিনি উনার  হাফ্তে মাসায়িল ও মরকুমাতে ইমদাদিয়াকিতাবে  উল্লেখ করেছেন।

তাছাড়া বড় কাটারা ও লালবাগ খারেজী মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা, শামসুল হক ফরিদপুরী ক্বিয়াম সম্পর্কে তার  তাছাউফ তত্ত্বকিতাবে লিখে যে,  মীলাদ শরীফ-এর মধ্যে ক্বিয়াম করা আদব, শরাফত বা ভদ্রতা।

উপরোক্ত কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের আলোচনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, আল্লাহ পাক তিনি স্বয়ং নিজেই কুরআন শরীফ-এ উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা ছিফত করেছেন। আর আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হাদীছ শরীফ-এ স্বয়ং নিজেই নিজের ছানা-ছিফত করেছেন। শুধুমাত্র এতটুকুই নয় বরং স্বয়ং আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের দ্বারা করিয়েছেন এবং ইজমা, ক্বিয়াসে তথা ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহতেও এর বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে।

আর মীলাদ শরীফ-এর আলোচ্য বিষয়ই হচ্ছেন আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা-ছিফত করা। তাহলে কি করে একথা বলা যেতে পারে যে,  বর্তমানে প্রচলিত মীলাদের মধ্যে এমন কিছু দিক বা ধারা রয়েছে যেগুলো শরীয়তে মনোনীত নয়।

প্রকৃতপক্ষে তাদের এ বক্তব্য দ্বারা তারা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসকেই অস্বীকার করেছে। যার ফলে তারা ঈমান ও ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে গেছে। কারণ, আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ঈমান না আনা পর্যন্ত শুধুমাত্র তাওহীদের উপর ঈমান আনলে ক্বিয়ামত পর্যন্ত কোন ব্যক্তির পক্ষে ঈমানদার হওয়া সম্ভব নয় বা কোন ব্যক্তি ঈমানদার হতে পারবে না। (চলবে)

 মুহম্মদ আলাউদ্দীন

সদর, চাঁদপুর

 

সুওয়াল: মাসিক মদীনার সম্পাদক মাহিউদ্দীন সেপ্টেম্বর, জুন, জুলাই-২০১১ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মাটির তৈরী প্রমাণ করতে গিয়ে যেসব বক্তব্য ও যুক্তি দিয়েছে নি¤œ তা উল্লেখ করা হলো।

১। নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নূরের তৈরী একথা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ-এর কোথাও নেই।

২। কুরআন শরীফ-এর অনেক আয়াত শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত যে, নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মাটির তৈরী।

৩। সমস্ত নবীগণই হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার সন্তান। তিনি যেহেতু মাটির তৈরী, তার সন্তানেরা কি করে নূরের তৈরী হতে পারে?

৪। কুরআন শরীফ-এর অনেক আয়াতে নূর শব্দ দ্বারা কুরআন শরীফ ও হেদায়েতের আলোকে বুঝানো হয়েছে। রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নয়।

৫। রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রক্তে গোশতের গঠনে (মাটির) মানুষ ছিলেন বলে উনার শরীর মুবাক থেকে তায়েফ ও উহুদে রক্ত মুবারক ঝড়েছে। নূরের হলে রক্ত মুবারক ঝড়ার প্রশ্নই আসতো না।

মাসিক মদীনার সম্পাদক মাহিউদ্দীনের উল্লিখিত বক্তব্যসমূহের সঠিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের ঈমান-আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।

জাওয়াব: মাটির তৈরী সম্পর্কে মাহিউদ্দীনের তৃতীয় বক্তব্য হচ্ছে-

৩। সমস্ত নবীগণই হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার সন্তান। তিনি যেহেতু মাটির তৈরী, তার সন্তানেরা কি করে নূরের তৈরী হতে পারে?                                                                                                                                                                                            

এর জাওয়াবে বলতে হয় যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মাটির তৈরী সম্পর্কিত মাসিক মদীনা পত্রিকার সম্পাদক মাহিউদ্দীনের উক্ত বক্তব্য কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ্্ শরীফ-এর খিলাফ। কারণ হযরত আদম আলাইহিস্্ সালাম তিনি মাটির তৈরী হলে উনার সন্তানেরা মাটির তৈরী হবেন এ ধারণা সম্পুর্ণই কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ্্ শরীফ-এর খিলাফ। কেননা কুরআন শরীফ-এর যে সকল আয়াত শরীফ-এ মানুষ মাটির তৈরী বলা হয়েছে, সে সকল আয়াত শরীফ দ্বারা শুধুমাত্র  হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে বুঝানো হয়েছে। উনার সন্তানদেরকে নয়।

যেমন, কুরআন শরীফ-এ্র মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-

فانا خلقناكم من تراب ثم من نطفة ثم من علقة ثم من مضغة مخلقة وغير مخلقة لنبين لكم

অর্থ:  (হে লোক সকল! যদি তোমরা পুনরুত্থানের ব্যাপারে সন্দীহান হও, তবে (ভেবে দেখ) আমি তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি। এরপর নুতফা থেকে, এরপর জমাট রক্ত থেকে এরপর পূর্ণাকৃতি বিশিষ্ট ও অপূর্ণাকৃতি বিশিষ্ট গোস্ত পিন্ড থেকে। তোমাদের কাছে ব্যক্ত করার জন্যে।” (সূরাতুল হজ্জ: আয়াত শরীফ ৫)

উপরোক্ত আয়াত শরীফ-এ বর্ণিত خلقناكم শব্দ দ্বারা মুলত হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকেই বুঝানো হয়েছে। উনার সন্তানদেরকে নয়।

যেমন, এ প্রসঙ্গে ফক্বীহুল আছর, প্রখ্যাত মুফাস্সির আল্লামা আবুল লাইছ সামারকান্দী রহমাতুল্লাহি আলাইহি  তাঁর বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ  তাফসীরে সামারকান্দীকিতাব-এর  ২য় খণ্ডের  ৩৮০ পৃষ্ঠায় লিখেন-

(فانا خلقناكم …) اى خلقناكم اباكم الذى هو اصل البشر يعنى حضرت ادم عليه السلام (من تراب) (ثم) خلقنا ذريته (من نطفة) وهو المنى

অর্থঃ-  (আর নিঃসন্দেহে আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি) অর্থাৎ তোমাদের পিতা যিনি মানবজাতীর মূল অর্থাৎ  হযরত আদম আলাইহিস সালামউনাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি। (অতঃপর নুত্্ফা থেকে) উনার সন্তানদেরকে সৃষ্টি করেছি। অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার সন্তানদেরকে মনি থেকে সৃষ্টি করেছি। (অতঃপর নুত্্ফা থেকে) উনার সন্তানদেরকে সৃষ্টি করেছি। অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার সন্তানদেরকে মনি থেকে সৃষ্টি করেছি।

আল্লামা আলাউদ্দীন আলী ইবনে মুহম্মদ ইবনে ইবরাহীম রহমতুল্লাহি আলাইহি  তাফসীরে খাযিন”-এর ৩য় খ-ের ২৮১ পৃষ্ঠায় লিখেন-

(فانا خلقناكم من تراب) يعنى اباكم حضرت ادم عليه السلام الذى هو اصل البشر (ثم من نطفة) يعنى ذريته من الـمنى.

অর্থ: (আমি তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি) অর্থাৎ তোমাদের পিতা হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি। যিনি মানব জাতির মূল। (অতঃপর নুতফা থেকে) অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার সন্তানদেরকে মনি থেকে সৃষ্টি করেছি।

 তাফসীরে কুরতুবীকিতাব-এ উল্লেখ আছে-

(فانا خلقناكم) اى خلقنا اباكم الذى هو اصل البشر يعنى ادم عليه السلام (من تراب) ثم خلقنا زريته (من نطفة) وهو الـمنى.

অর্থ: (নিঃসন্দেহে আমি তোমাদেরকে) অর্থাৎ তোমাদের পিতা যিনি বাশারের মূল অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি, (অতঃপর) উনার সন্তানদেরকে নুতফাথেকে সৃষ্টি করেছি। অর্থাৎ মনীথেকে।

তাফসীরে  মুদ্বীহুল কুরআন”-এর ৪০০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

(والله خلقكم من تراب) اور خدائے تعالی نے پیدا کیا تم کو یعنی تم سب کے باپ  حضرت ادم علیہ السلام کو خاک سے پھر تم کو یعنی حضرت ادم علیہ السلام کی اولاد کو پیدا کیا بدند (نطفہ) سے.

অর্থ:  খোদা তায়ালা তোমাদেরকে অর্থাৎ তোমাদের সকলের পিতা হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তোমাদেরকে অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার সন্তানদেরকে নুতফা থেকে সৃষ্টি করেন।

উপরোক্ত বিস্তারিত ও দলীল ভিত্তিক আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে সরাসরি মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। আর উনার সন্তানদেরকে নুতফা থেকে কুদরতীভাবে সৃষ্টি করেছেন। অর্থাৎ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত হাওয়া আলাইহাস সালাম ও হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনারা ব্যতীত সকল মানুষই নুতফা থেকে কুদরতীভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে।

কাজেই, মাসিক মদীনা পত্রিকার সম্পাদক মাহিউদ্দীন যে বলেছে,  সমস্ত নবীগণই হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার সন্তান। তিনি যেহেতু মাটির তৈরী, তার সন্তানেরা কি করে নূরের তৈরী হতে পারে?” তার এ বক্তব্য ডাহা মিথ্যা, দলীলবিহীন ও তাফসীর বির রায় হওয়ার কারণে কুফরী বলেই প্রমাণিত হলো। (চলবে)

 

মুহম্মদ আনোয়ার হুসাইন

সউদী আরব

 সুওয়াল: বর্তমানে সউদী ওহাবী বাদশার মজলিসে, সালাফী, লা-মাযহাবীদের মিটিং-এ, দেওবন্দ মাদরাসার মাহফিলে, জাকির নায়েক ওরফে কাফির নায়েকের মজমাতে, এমনকি বাংলাদেশে জামাতে মওদুদী ও দেওবন্দীদের সমাবেশে কোন কিছুতে খুশি প্রকাশ করে আলিম উলামা নামধারী সকলেই হাত তালি দেয়। এছাড়া নদভী মাওলানাদের মুরব্বী আবুল হাসান আলী নদভীর তালিমেও হাত তালি দেয়া হয়েছে। আসলে হাত তালি দেয়াটা কি ইসলামে জায়িয? এ বিষয়ে শরীয়তের ফায়ছালা কি?

জাওয়াব: হাত তালি বা করতালি ইসলামী শরীয়তে সম্পূর্ণরূপে হারাম ও কুফরী। হাত তালি এটি মূলত কাফির মুশরিকদের বদ স্বভাব ও অপকর্মের অন্তর্ভুক্ত। এ প্রসঙ্গে কালামুল্লাহ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-

وما كان صلاتـهم عند البيت الا مكاء وتصدية فذوقوا العذاب بما كنتم تكفرون.

অর্থ: আর কাবা শরীফ-এর নিকট তাদের উপাসনা বলতে শিস দেয়া আর তালি বাজানো ছাড়া অন্য কোন কিছুই ছিল না। অতএব, এবার তোমরা তোমাদের কৃত কুফরীর আযাবের স্বাদ গ্রহণ করো। (সূরা আনফাল: আয়াত শরীফ ৩৫)

এ আয়াত শরীফ-এর মধ্যে শিস দেয়া ও করতালি দেয়া কাফির-মুশরিকদের উপাসনা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। নাঊযুবিল্লাহ!

এ সম্পর্কে হযরত সাঈদ ইবনে যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেছেন, মুসলমানদেরকে মসজিদে হারাম অর্থাৎ কাবা শরীফ-এ নামায আদায় এবং অন্যান্য দ্বীনী কাজ থেকে বিরত রাখার উদ্দেশ্যে কাফির-মুশরিকরা করতালি বা হাত তালি দিতো। এ অপকর্ম তারা হরহামেশাই করতো। তারা যে নিকৃষ্ট সে বিষয়টা প্রকাশার্থে আলোচ্য আয়াত শরীফ-এ শিস ও করতালিকে তাদের উপাসনা বলা হয়েছে।

হযরত সাঈদ ইবনে যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আরো বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কাবা শরীফ তাওয়াফ করার সময় বিধর্মী কুরাইশরা বিদ্রূপ বশত উনার সামনে শিস ও করতালি দিতো। নাঊযুবিল্লাহ! এই প্রেক্ষাপটে আলোচ্য আয়াত শরীফ নাযিল হয়।

অতএব, হাততালি বা করতালি এবং শিস এ অপকর্ম দুটি বিধর্মী, কাফির-মুশরিকদের বদ স্বভাব ও উপাসনার শামিল; যা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত এবং এ কুফরীর পরিণাম হলো জাহান্নামের কঠিন শাস্তি।

স্মরণীয় যে, সুওয়ালে উল্লেখিত যাদের বা যেসব মজলিসে হাত তালি দেয়া হয় তারা হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত ৭২টি বাতিল ও জাহান্নামী ফিরক্বার অন্তর্ভুক্ত। যেমন ৭২টি বাতিল ও জাহান্নামী ফিরক্বার অন্যতম ফিরক্বা হচ্ছে খারিজী। বর্তমানে খারিজী ফিরক্বা সালাফী নামে মশহূর। এরা কয়েক ভাগে বিভক্ত। (১) মুসাবিয়া বা তাইমিয়া (২) ওহাবী (৩) দেওবন্দী (৪) মওদুদী ইত্যাদি। আর কাফির নায়েক ও আবুল হাসান নদভী এরা তো সেই ওহাবী ও দেওবন্দীদেরই মতাদর্শী। অর্থাৎ সব কাফিরের ধর্ম যেমন এক; তদ্রূপ সব বাতিল ফিরক্বার আক্বীদা ও আমলের মধ্যে রয়েছে কুফরী।

কাজেই, যার বা যাদের মজলিসে হাত তালি দেয়া হয় অথচ তারা সেটা বারণ বা নিষেধ করে না বরং তা নীরবে সমর্থন করে। হাক্বীক্বত তারা ৭২টি বাতিল ও জাহান্নামী ফিরক্বার অন্তর্ভুক্ত এবং তাদের মধ্যে কেউ কেউ কাফির মুশরিকদেরই এজেন্ট। যে কারণে তাদের আক্বীদা ও আমল বিধর্মী কাফির-মুশরিক, ইহুদী, নাছারা ইত্যাদিদের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। নাউযুবিল্লাহ!

 

মুহম্মদ নওয়াব আলী, বস টেইলার্স, চিলমারী, কুড়িগ্রাম।

সাইয়্যিদ মুহম্মদ হারুনুর রশীদ, রংপুর।

মুহম্মদ যুফার, ভোলাহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।

মুহম্মদ আল আমীন, পলাশ, নরসিংদী।

মুহম্মদ জান্নাত আক্তার, সদর, চাঁদপুর।

 

সুওয়াল: আলাইহিস সালাম বাক্যটির অর্থ কি? এ বাক্যটি নবী ও রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের নাম ব্যতীত অন্য কারো নামের সাথে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে শরীয়তে কোন বিধি-নিষেধ আছে কি?

জাওয়াব: আলাইহিস সালামবাক্যটির অর্থ হলো উনার উপর সালাম অর্থাৎ খাছ শান্তি বর্ষিত হোক।

উল্লেখ্য, এক মুসলমান অপর মুসলমানের সাথে সাক্ষাত হলে সালাম দেয়া ও নেয়া কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এরই নির্দেশ।

কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-

اذا حييتم بتحية فحيوا باحسن منها او ردوها ان الله كان على كلى شىء حسيبا

অর্থ: যখন তোমাদেরকে কেউ সালাম দেয় তখন তোমরাও তদপেক্ষা উত্তম বাক্যে সালামের জবাব প্রদান করো অথবা তদানুরূপই জবাব প্রদান করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক তিনি সর্ববিষয়ে হিসাব গ্রহণকারী। (সূরা নিসা: আয়াত শরীফ ৮৬)

হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-

عن حضرت عبد الله بن عمرو رضى الله تعالى عنه ان رجلا سال رسول الله صلى الله عليه وسلم اى الاسلام خير قال تطعم الطعام وتقرئ السلام على من عرفت ومن لـم تعرف.

অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞেস করলেন, ইসলামের কোন বিষয়টি উত্তম? তিনি বললেন, (ক্ষুধার্তকে) খাদ্য খাওয়ানো এবং পরিচিত ও অপরিচিত সকল মুসলমানকে সালাম দেয়া। (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)

হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, নুরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, এক মুসলমানের উপর আরেক মুসলমানের সদ্ব্যবহারের ছয়টি হক্ব রয়েছে। তারমধ্যে প্রথমটিই হচ্ছে

يسلم عليه اذا لقيه

অর্থাৎ  যখন কারো সাথে সাক্ষাৎ হবে তাকে সালাম দিবে।” (তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ)

মূল কথা হলো, একজন মুসলমান আরেকজন মুসলমানের সাথে সালাম বিনিময়ের যে উদ্দেশ্য; কোন মুসলমানের নামের সাথে আলাইহিস সালাম ব্যবহারের সে একই উদ্দেশ্য।

এছাড়া একজনের সালাম আরেকজনের নিকট পৌঁছানোর মাসয়ালা হলো: সে বলবে যে, অমুক ব্যক্তি আপনাকে সালাম দিয়েছেন। এর উত্তরে সালামের উত্তরদাতা বলবেন-

وعليكم السلام وعليه السلام

অর্থাৎ:  আপনার প্রতি এবং যিনি সালাম পাঠিয়েছেন উনার প্রতিও সালাম অর্থাৎ শান্তি বর্ষিত হোক।

দেখা যাচ্ছে, সালাম প্রেরণকারী ব্যক্তির সালামের জাওয়াব দানকালে উনার ক্ষেত্রে

 ‘আলাইহিস সালামব্যবহৃত হচ্ছে।

عليه السلام

কাজেই, বলার অবকাশ রাখে না যে, ‘আলাইহিস সালামবাক্যটি হযরত নবী ও রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের ব্যতীত অন্যান্যদের ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা শরীয়তের বিধানে নিষেধ তো নেই বরং আদেশ রয়েছে।

স্মরণীয় যে, শরীয়তের অনেক বিষয়ে দুধরণের ফতওয়া বা মাসয়ালা বর্ণনা করা হয়। এক. আম বা সাধারণ মাসয়ালা। দুই. খাছ বা বিশেষ মাসয়ালা।

প্রথমত: সাধারণ মাসয়ালা হলো, কুল-মাখলূক্বাতের নবী ও রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক-এর সাথে ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামযুক্ত করে বলতে হবে বা লিখতে হবে। এবং এটা উম্মতের জন্য ফরযের অন্তর্ভুক্ত।

যেমন এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক তিনি নির্দেশ করেছেন-

يايها الذين امنوا صلوا عليه وسلموا تسليما.

অর্থ: হে ঈমানদাররা! তোমরা হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ছলাত পাঠ করো এবং সালামের মতো সালাম পেশ করো অর্থাৎ আদব রক্ষা করে তথা দাঁড়িয়ে সালাম পেশ করো। (সূরা আহযাব: আয়াত শরীফ ৫৬)

দ্বিতীয়ত: অন্যান্য নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের নাম মুবারক-এর সাথে আলাইহিস সালামযুক্ত করে বলতে হবে বা লিখতে হবে। এটাও ফরযের অন্তর্ভুক্ত। এ সম্পর্কে কালামুল্লাহ শরীফ-এর অনেক আয়াত শরীফ-এ উনাদের প্রতি সালাম বর্ষিত হওয়ার বিষয়টি ইরশাদ হয়েছে।

যেমন কালামুল্লাহ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-

سلم على نوح فى العالـمين.

অর্থ: বিশ্ববাসীর মধ্যে হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার প্রতি সালাম বা শান্তি বর্ষিত হোক। (সূরা ছফফাত: আয়াত শরীফ ৭৯)

سلم على ابراهيم.

অর্থ: হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার প্রতি সালাম বা শান্তি বর্ষিত হোক। (সূরা ছফফাত: আয়াত শরীফ ১০৯)

سلم على موسى وهرون.

অর্থ: হযরত মূসা আলাইহিস সালাম এবং হযরত হারূন আলাইহিস সালাম উনাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। (সূরা ছফফাত: আয়াত শরীফ ১২০)

سلم على ال ياسين.

অর্থ: হযরত ইল্ইয়াসীন আলাইহিস সালাম উনার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। (সূরা ছফফাত: আয়াত ১৩০)

سلم على الـمرسلين.

হযরত রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি সালাম বা শান্তি বর্ষিত হোক। (সূরা ছফফাত: আয়াত শরীফ ১৮১)

একইভাবে আল্লাহ পাক উনার নবী ও রসূল হযরত ইয়াহ্ইয়া আলাইহিস সালাম উনার সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে-

سلم عليه يوم ولدت ويوم اموت ويوم ابعث حيا.

অর্থ: উনার প্রতি সালাম (শান্তি বা অবিভাদন) যেদিন তিনি বিলাদত শরীফ লাভ করেন এবং যেদিন তিনি বিছাল শরীফ লাভ করেন এবং যেদিন তিনি জীবিত অবস্থায় পুনরুত্থিত হবেন। (সূরা মারইয়াম আয়াত শরীফ ১৫)

উল্লেখ্য, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম এবং সর্বোপরি সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের যারা পিতা-মাতা, আহলে বাইত, আযওয়াজ-আহলিয়া, আল-আওলাদ বা সন্তান-সন্ততি আলাইহিমুস সালাম উনারা উনাদের পবিত্র যাত-এর সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার কারণে উনারা উনাদের অর্থাৎ নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানে সম্মানিত। সুতরাং উনাদের নামের সাথেও আলাইহিস সালাম ও আলাইহাস সালাম সংযুক্ত করে বলতে হবে বা লিখতে হবে।

এ বিষয়ে যেমন রয়েছে নক্বলী তথা কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর দলীল তদ্রূপ রয়েছে আক্বলী তথা জ্ঞানভিত্তিক দলীল।

যেমন সূরা নমল-এর ৫৯নং আয়াত শরীফ-এর মধ্যে ইরশাদ হয়েছে, মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-

قل الحمد لله وسلام على عباده الذين اصطفى

অর্থ: হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি বলুন, সমস্ত প্রশংসাই মহান আল্লাহ পাক উনার জন্যে এবং সালাম বা শান্তি বর্ষিত হোক উনার মনোনীত বান্দাগণ উনাদের প্রতি।

এ আয়াত শরীফ-এর ব্যাখ্যায় বর্ণিত রয়েছে, পূর্ববর্তী নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের উম্মতের ধ্বংসযজ্ঞ কিছু অবস্থা বর্ণনা করার পর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে যে, আপনি মহান আল্লাহ পাক উনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। কারণ, আপনার উম্মতকে দুনিয়ার ব্যাপক আযাব থেকে নিরাপদ করে দেয়া হয়েছে। অতঃপর মহান আল্লাহ পাক উনার যারা মনোনীত বান্দা উনাদের প্রতি সালাম বা শান্তির সুসংবাদ দান করুন।

রঈসুল মুফাসসিরীন হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত এক রেওয়ায়েতে আছে, আয়াত শরীফ-এ

عباده الذين اصطفى

 ‘মনোনীত বান্দাবলতে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে বোঝানো হয়েছে। হযরত ইমাম ছুফিয়ান ছওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও এ মতই গ্রহন করেছেন। মূলত

 عباده الذين اصطفى

এ আয়াতে কারীমা দ্বারা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারাসহ সমস্ত আওলিয়ায়ে কিরাম উনাদেরকে বোঝানো হয়েছে। (তাফসীরে মাযহারী, তাফসীরে কুরতুবী, ইবনে কাছীর, তাফসীরে কবীর ইত্যাদি)

উল্লেখ্য, মিরাজ শরীফকালে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন মহান আল্লাহ পাক উনার সমীপে সমস্ত পবিত্রতা, ছলাত-সালাম নিবেদন করে বললেন-

التحيات لله والصلوات والطيبات

তখন মহান আল্লাহ পাক তিনিও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে উদ্দেশ্য করে বললেন-

السلام عليك ايها النبى ورحمة الله وبركاته.

আপনার উপর সালাম (শান্তি) এবং মহান আল্লাহ পাক উনার সমস্ত রহমত ও বরকত।

অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উম্মতের প্রতি এত মেহেরবান ও দয়ালু যে, উনার উপর মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে প্রদত্ব সালাম, রহমত ও বরকতের হিসসা উম্মতও যাতে লাভ করেন সেজন্য তিনি পূনরায় বললেন-

السلام علينا وعلى عباد الله الصالـحين

অর্থ: মহান আল্লাহ পাক উনার প্রদত্ব সালাম, রহমত, বরকত আমাদের উপর অর্থাৎ সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের উপর এবং মহান আল্লাহ পাক উনার যারা ছালিহীন বা নেককার বান্দা উনাদেরও উপর।

প্রতিভাত হলো যে, আমরা নামাযে যে তাশাহহুদ পাঠ করে থাকি যা প্রত্যেক নামাযে পাঠ করা ওয়াজিব; সেখানে যারা নেককার, আল্লাহওয়ালা বান্দা উনাদের প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে সালাম (শান্তি) বর্ষিত হোকএ দুয়া প্রতিনিয়ত করছি।

তাশাহহুদ পাঠের এ হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের শানে السلام (সালাম) শব্দের ব্যবহার জায়িয।

এছাড়া অনেক দুরূদ শরীফ-এর মধ্যে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে উনার আল-আওলাদ অর্থাৎ পবিত্র বংশধর উনাদের শানে ছলাত-এর সাথে সালাম-এর বিষয়টিও উল্লেখ রয়েছে। যেমন-

اللهم صل على سيدنا نبينا حبيبنا شفيعنا مولانا وسيلتى اليك واله وسلم.

উচ্চারণ: আল্লাহুমা ছল্লি আলা সাইয়িদিনা নাবিইয়িনা হাবীবিনা শাফীয়িনা মাওলানা ওয়াসীলাতী ইলাইকা ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লিম।

অর্থ:  আয় আল্লাহ পাক! আপনি ছলাত (খাছ রহমত) ও সালাম (খাছ শান্তি) নাযিল করুন আমাদের সাইয়্যিদ, আমাদের নবী, আমাদের হাবীব, আমাদের শাফায়াতকারী, আমাদের অভিভাবক নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর যিনি আপনার প্রতি আমার ওসীলা এবং উনার পবিত্র বংশধর উনাদের উপরও।

اللهم صل على سيدنا نبينا حبيبنا شفيعنا مولانا معدن الجود والكرم واله وسلم.

উচ্চারণ: আল্লাহুমা ছল্লি আলা সাইয়িদিনা নাবিইয়িনা হাবীবিনা শাফীয়িনা মাওলানা মাদানিল জূদি ওয়াল কারামি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লিম।

অর্থ:  আয় আল্লাহ পাক! আপনি ছলাত (খাছ রহমত) ও সালাম (খাছ শান্তি) নাযিল করুন আমাদের সাইয়্যিদ, আমাদের নবী, আমাদের হাবীব, আমাদের শাফায়াতকারী, আমাদের অভিভাবক নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর যিনি দান ও বখশীশের খনি এবং উনার পবিত্র বংশধর উনাদের উপরও।

اللهم صل على سيدنا نبينا حبيبنا شفيعنا مولانا النبى الامى واله وسلم.

উচ্চারণ: আল্লাহুমা ছল্লি আলা সাইয়িদিনা নাবিইয়িনা হাবীবিনা শাফীয়িনা মাওলানা আন্নাবিইয়িল উম্মিইয়ি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লিম ।

অর্থ:  আয় আল্লাহ পাক! আপনি ছলাত (খাছ রহমত) ও সালাম (খাছ শান্তি) নাযিল করুন আমাদের সাইয়্যিদ, আমাদের নবী, আমাদের হাবীব, আমাদের শাফায়াতকারী, আমাদের অভিভাবক যিনি প্রধান ও মূল নবী নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর এবং উনার পবিত্র বংশধর উনাদের উপরও।

এ প্রসঙ্গে তাফসীরে রূহুল বয়ান ৭ম খ- ২২৮ পৃষ্ঠায় সূরা নমল-এর উক্ত আয়াত শরীফ-এর তাফসীর বা ব্যাখ্যায় বর্ণিত রয়েছে-

والارجح فى مثل لقمان ومريم والـخضر والاسكندر الـمختلف فى نبوته ان يقال رضى الله عنه او عنها ولو قال عليه السلام او عليها السلام لا بأس به.

অর্থ: অতএব প্রণিধানযোগ্য উদাহরণ হলো: হযরত লুক্বমান, হযরত মারইয়াম, হযরত খিযির, হযরত সেকেন্দার যুল ক্বরনাইন। উনাদের নবী হওয়ার ব্যাপারে ইখতিলাফ থাকার করণে উনাদের শানে রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু অথবা আনহা বলা হয়। আর কেউ যদি উনাদের শানে আলাইহিস সালাম অথবা আলাইহাস সালাম বলে, এতে কোনই অসুবিধা নেই।

মূল কথা হলো: উল্লেখিত ব্যক্তিগণ উনারা কেউই নবী-রসূল ছিলেন না। বরং উনারা প্রত্যেকেই ছিলেন বিশেষ শ্রেণীর ওলীআল্লাহ।

এখন উনাদের শানে যদি আলাইহিস সালাম কিংবা আলাইহাস সালাম ব্যবহারে কোন রকম অসুবিধা বা নিষেধ না থাকে তাহলে অন্যান্য বিশেষ শ্রেণীর পুরুষ ওলীআল্লাহ কিংবা মহিলা ওলীআল্লাহ উনাদের শানে অসুবিধা বা নিষেধ হবে কেন? বরং ক্ষেত্র বিশেষে ব্যবহার করাটাই আদব এবং ফযীলত হাছিলের কারণ। যার কারণে যামানার লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ, যামানার লক্ষ্যস্থল আওলাদে রসূল, যামানার শ্রেষ্ঠতম মুজতাহিদ ও ইমাম, মুজাদ্দিদ আযম ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি হযরত উম্মাহাতুল মুমিনীন আলাইহিন্নাস সালাম, হযরত আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম এবং হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন ছাহাবা আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রত্যেকের শান মুবারক-এ আলাইহিস সালাম ও আলাইহাস সালাম ব্যবহার করার অনন্য তাজদীদ প্রকাশ করেছেন। সুবহানাল্লাহ!

আর আক্বলী দলীল প্রসঙ্গে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের খাদিম হলেন হযরত জিবরীল আলাইহিস সালামসহ সমস্ত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম।

উনাদের যারা খাদিম হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের নামে যদি আলাইহিস সালাম যুক্ত হতে পারে তাহলে উনাদের যারা সম্মানিত পিতা-মাতা উনাদের নামে আলাইহিস সালাম যুক্ত হবে না কেন? মূলত: উনাদের নামে আলাইহিস সালাম যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে সর্বাধিক হক্বদার উনারাই । আর আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের ঐকমত্য হলো, কোন নবী ও রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের পিতা-মাতা কেউই কাফির কিংবা মুশরিক ছিলেন না। উনারা প্রত্যেকেই ঈমানদার ছিলেন এবং আল্লাহ পাক উনার মনোনীত ও মক্ববুল বান্দা ও বান্দীর অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। সুবহানাল্লাহ!

এরপর হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের যারা পবিত্রা আহলিয়া-আযওয়াজ আলাইহিন্নাস সালাম উনারাও নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানে সম্মানিত। উনারা হলেন উম্মতের মা। উম্মতের রূহানী ও ঈমানী পিতা হযরত নবী ও রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের নাম মুবারক-এ যদি আলাইহিস সালাম-এর ব্যবহার অপরিহার্য হয় তাহলে যারা উম্মতের রূহানী ও ঈমানী মা উনাদের নাম মুবারক-এ আলাইহাস সালাম-এর ব্যবহার অপরিহার্য হবে না কেন?

অতঃপর হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের যারা আল-আওলাদ, সন্তান-সন্ততি উনারা তো নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের পবিত্র যাত মুবারক-এর অংশ, পবিত্র দেহ মুবারক-এর অংশ। কাজেই, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানের মতোই উনাদের আল-আওলাদ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মান করা ফরয-ওয়াজিব।

অতএব বলার অপেক্ষা রাখে না, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের যারা আল-আওলাদ উনাদের নাম মুবারক-এ আলাইহিস সালাম ব্যবহার করাটাই হচ্ছে উনাদের হক্ব।

তৃতীয়ত: হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের নাম মুবারক-এর সাথে রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুযুক্ত করে বলতে হবে বা লিখতে হবে। যেমন এ প্রসঙ্গে কালামুল্লাহ শরীফ-এ একাধিক আয়াত শরীফ-এ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের ফযীলত বর্ণনা প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে-

رضى الله عنهم ورضوا عنه

অর্থাৎ- আল্লাহ পাক তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং উনারাও আল্লাহ পাক উনার প্রতি সন্তুষ্ট। (সূরা বাইয়্যিনাহ)

চতুর্থত: হযরত তাবিয়ীন, তাবি-তাবিয়ীন, ইমাম, মুজতাহিদ ও আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম যাঁরা অতীত হয়ে গেছেন উনাদের নাম মুবারক-এ রহমতুল্লাহি আলাইহিযুক্ত করে ব্যবহার করতে হবে। যেমন এ প্রসঙ্গে কালামুল্লাহ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-

ان رحمة الله قريب من الـمحسنين

অর্থ: নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক উনার রহমত মুহসিনীন বা আল্লাহওয়ালা উনাদের নিকটে।

উপরে বর্ণিত দলীলভিত্তিক আলোচনা দ্বারা প্রতিভাত হয় যে, আম বা সাধারণ মাসয়ালা বা ফতওয়া হলো, কুল-কায়িনাতের নবী ও রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক-এ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামযুক্ত করে বলতে হবে বা লিখতে হবে। আর উনার পিতা-মাতা এবং উনার আহলে বাইত- হযরত উম্মুল মুমিনীন ও আল-আওলাদ উনাদের নাম মুবারক-এ আলাইহিস সালাম কিংবা আলাইহাস সালাম যুক্ত করে বলতে হবে বা লিখতে হবে।

অনুরূপভাবে অন্যান্য নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম এবং উনাদের পিতা-মাতা ও আল-আওলাদ উনাদের নাম মুবারক-এর সাথে আলাইহিস সালামকিংবা আলাইহাস সালামযুক্ত করে বলতে হবে বা লিখতে হবে।

হযরত ছাহাবায়ে কিরাম উনাদের নাম মুবারক-এ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুযুক্ত করে বলতে হবে বা লিখতে হবে।

আর হযরত তাবিয়ীন, তাবি-তাবিয়ীন, ইমাম, মুজতাহিদ ও আওলিয়ায়ে কিরাম যাঁরা অতীত হয়ে গেছেন উনাদের নাম মুবারক-এ রহমতুল্লাহি আলাইহিবলতে হবে বা লিখতে হবে। এটা হলো আম বা সাধারণ মাসয়ালা বা ফতওয়া।

আর খাছ বা বিশেষ ফতওয়া মতে, ব্যক্তি বিশেষে আলাইহিস সালাম, রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মধ্যে ব্যতিক্রম বলা বা লিখা জায়িয রয়েছে। তবে ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএ বাক্যটি অন্যদের জন্য ব্যবহার জায়িয থাকলেও তা শুধুমাত্র নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক-এ বলা বা লেখার ক্ষেত্রে খাছ করে নেয়া উচিত এবং এটা আদবেরও অন্তর্ভুক্ত।

এছাড়া অন্যান্য বাক্যগুলি ব্যবহারে কোন অসুবিধা নেই। ফলে, উঁচু স্তরের ওলীআল্লাহ হওয়ার কারণে হযরত লুক্বমান আলাইহিস সালাম, হযরত খিযির আলাইহিস সালাম, হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম উনাদের নাম মুবারক উচ্চারণকালে আলাইহিস সালাম ব্যবহার করা হয়ে থাকে। একইভাবে হযরত আছিয়া আলাইহাস সালাম, হযরত উম্মু কুলছূম আলাইহাস সালাম উনাদের নাম মুবারক-এ আলাইহাস সালাম ব্যবহার করা হয়।

আবার উঁচু স্তরের ওলীআল্লাহ হওয়ার কারণে হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের নাম মুবারক-এ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুব্যবহৃত হতে দেখা যায়।

উল্লেখ্য, পুরুষের জন্য একজনের ক্ষেত্রে আলাইহিস সালাম, দুইজনের ক্ষেত্রে আলাইহিমাস সালাম, তিন বা ততোধিক হলে আলাইহিমুস সালাম ব্যবহার করার  নিয়ম। আর মহিলার জন্য একজনের ক্ষেত্রে আলাইহাস সালাম, দুইজনের ক্ষেত্রে আলাইহিমাস সালাম এবং তিন বা ততোধিকের ক্ষেত্রে আলাইহিন্নাস সালাম ব্যবহার করার নিয়ম।

অনুরূপভাবে রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুব্যবহারের নিয়ম হলো- একজন পুরুষের ক্ষেত্রে রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা-এর পর আনহুদুইজনের ক্ষেত্রে আনহুমাএবং তিন বা ততোধিকের জন্য আনহুম। আর একজন মহিলার ক্ষেত্রে আনহা’, দুইজনের ক্ষেত্রে আনহুমাএবং তিন বা ততোধিকের ক্ষেত্রে আনহুন্নাব্যবহার করা।

একইভাবে রহমতুল্লাহি আলাইহিব্যবহারের নিয়ম হলো: একজন পুরুষের ক্ষেত্রে রহমতুল্লাহিশব্দের পর আলাইহিদুজনের ক্ষেত্রে আলাইহিমা’, তিন বা ততোধিকের ক্ষেত্রে আলাইহিম। আর মহিলার ক্ষেত্রে একজন হলে আলাইহা’, দুজন হলে আলাইহিমাএবং তিন বা অধিকজন হলে আলাইহিন্না

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ