সুওয়াল-জাওয়াব

সংখ্যা: ২১০তম সংখ্যা | বিভাগ:

খন্দকার সেলিম আহমদ

পাহাড় কাঞ্চনপুর, টাঙ্গাইল

 

সুওয়াল: হাটহাজারী মাদরাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা ফেব্রুয়ারী-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত-অক্টোবর ২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রদত্ত “মীলাদণ্ডক্বিয়াম” সম্পর্কিত বক্তব্যের সমালোচনা করতে গিয়ে এবং একই বিষয়ে এপ্রিল-২০০৫ ঈসায়ী ও মে-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় এছাড়াও মাসিক মদীনা পত্রিকা ফেব্রুয়ারী-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে একই ধরনের জাওয়াব দেয়া হয়েছে।

তাদের বক্তব্যগুলোর মধ্যে যে বিষয়গুলো আমার নিকট সন্দেহজনক তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো-

যেমন, মে-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে বলা হয়েছে, “বর্তমানে প্রচলিত মীলাদের মধ্যে এমন কিছু দিক বা ধারা রয়েছে যেগুলো শরীয়ত মনোনীত নয়।” …

এখন আমাদের সুওয়াল হলো, বর্তমানে প্রচলিত যে মীলাদ শরীফ দেখা যায়, সে সম্পর্কে তাদের উল্লিখিত বক্তব্য কতটুকু দলীলসম্মত? কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।

জাওয়াব: বর্তমানে প্রচলিত মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফ সম্পর্কে হাটহাজারী মাদরাসার অখ্যাত মাসিক পত্রিকার জিজ্ঞাসার সমাধানে এবং অপর একটি পত্রিকার প্রশ্নোত্তর বিভাগে যা বলা হয়েছে তা শুদ্ধ তো হয়ইনি, বরং সম্পূর্ণই মিথ্যা, ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন এবং অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদ ও ফক্বীহগণের সর্বজনমান্য ও স্বীকৃত বিশ্ব বিখ্যাত ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহের বক্তব্যের বিপরীত ও বিরুদ্ধ মত। যা ইতঃপূর্বে আমাদের “মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ”-এর অনেক সংখ্যায় খণ্ডন করে সঠিক ও দলীলভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হয়েছে। আর “মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ”-এর জাওয়াবকে খণ্ডন করা হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের পক্ষে আদৌ সম্ভব হয়নি, হবেও না ইনশাআল্লাহ।

এরপরেও হাটহাজারীর মৌলভী ছাহেব এবং তাদের সকল সমজাতীয়রা বারবার ‘মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফ’ সম্পর্কে বিনা তাহক্বীকে ও বিনা দলীলে উক্ত ভুলেরই পুনরাবৃত্তি করে যাচ্ছে।

(ধারাবাহিক)

যেমন, উল্লিখিত বক্তব্যের প্রথমেই তারা বলেছে, “বর্তমানে প্রচলিত মীলাদের মধ্যে এমন কিছু দিক বা ধারা রয়েছে যেগুলো শরীয়ত মনোনীত নয়।” …

এর জাওয়াবে বলতে হয় যে, কুরআন শরীফ-এর কোন আয়াত শরীফ-এ ‘বর্তমানে প্রচলিত মীলাদ শরীফ-এর মধ্যে কোন দিক বা কোন ধারাগুলোকে শরীয়ত মনোনীত নয়’ বলা হয়েছে এবং হাদীছ শরীফ-এর কোন হাদীছ শরীফ-এ ‘বর্তমানে প্রচলিত মীলাদ শরীফ-এর মধ্যে কোন দিক বা কোন ধারাগুলোকে শরীয়ত মনোনীত নয়’ বলা হয়েছে, তা হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবরা কুরআন শরীফ-এর আয়াত শরীফ, হাদীছ শরীফ-এর ইবারতসহ দলীল উল্লেখ করেনি। সুতরাং তাদের দলীলবিহীন, ইবারতবিহীন, মনগড়া ও মিথ্যা বক্তব্য মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।

নি¤েœ কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস এবং বুযুর্গদের আমল দ্বারা প্রমাণিত বিস্তারিত দলীল-আদিল্লাহ পেশ করা হলো-

স্মরণীয় যে, মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফ-এর মূল উদ্দেশ্য হলো আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা-ছিফত ও বিলাদত শরীফ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ছলাত-সালাম পাঠ করা।

যেমন- মীলাদ শরীফ-এর প্রথমেই কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা হয়। কেননা, কোনো নেক কাজ কুরআন শরীফ তিলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু করা রহমত, বরকত, সাকীনা তথা আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি লাভের কারণ। সেহেতু প্রথমেই পবিত্র কালামে পাক হতে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ফযীলত সম্বলিত আয়াত শরীফ তিলাওয়াত করা হয়। যাতে স্বয়ং আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারই মীলাদ বা ছানা-ছিফত বর্ণনা করা হয়েছে।

অতঃপর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর ছলাত পাঠ করা হয়। কারণ ছলাত পাঠ করা আল্লাহ পাক ও উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরই নির্দেশ।

তাছাড়া আমরা যেভাবে মজলিস করে মীলাদ শরীফ-এর মাহফিল করে থাকি তা খোদ আল্লাহ পাক উনার হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের যামানাতেই ছিল।

আর হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের থেকেও “মীলাদ শরীফ”-এর প্রমাণ রয়েছে। শুধু তাই নয়, হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা স্বয়ং নিজেরাই “মীলাদ শরীফ”-এর তাগিদ করেছেন ও ফযীলত বর্ণনা করেছেন।

এছাড়াও হযরত ইমাম-মুজতাহিদীন, ছলফে ছালিহীন, বুযুর্গানে দ্বীন রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের থেকেও ‘মীলাদ শরীফ’ এর প্রমাণ রয়েছে।

এছাড়াও হযরত ইমাম-মুজতাহিদীন, ছলফে ছালিহীন, বুযুর্গানে দ্বীন রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের থেকেও ‘মীলাদ শরীফ’ এর প্রমাণ রয়েছে।

যেমন, এ প্রসঙ্গে বিশ্বখ্যাত মুহাদ্দিছ হযরত আল্লামা শায়েখ আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাবে লিখেন-

من عظم ليلة مولده بما امكنه من التعظيم والاكرام كان من الفائزين بدار السلام.

অর্থ: যে ব্যক্তি সাধ্য ও সামর্থ অনুযায়ী হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মীলাদ শরীফকে ইজ্জত ও সম্মান করলো তাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে সম্মানিত করা হবে।

বিশ্বখ্যাত মুহাদ্দিছ, শায়খ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ‘কারামাতে আযীযিয়াহ’ নামক কিতাবে উল্লেখ করেন-

در تمام سال در مجلس در خانہ منعقد شوند اول کہ مردم روز عاشوراء یا دویک روز پیش ازیس قریب چہار صد کس یا پنج صد  کس بلکہ ہزار فراہم می أیندہ وذکر فضائل حسنین کہ در حدیث وارد شدہ در بیان می أید … باقی مانند مجلس مولود شریف پس حالش اینس کہ بتاریخ دواز دہم شہر ربیع الاول میں ہمیں کہ مردم موافق معمول سابق فراہم شدند ودر خواندان درود شریف مشغول گشتند وفقیر می أید …

অর্থ: সারা বৎসরে এই ফকীরের ঘরে দুইবার মাহফিল হয়ে থাকে। প্রথমটি আশূরা অথবা তার ২/১ দিন পূর্বে অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত মাহফিলে ৪০০/৫০০ কখনো হাজার লোকও সমবেত হয়ে থাকে। উক্ত মাহফিলে হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম এবং হযরত ইমাম হুসাইন আলইহিস সালাম উনাদের মুবারক জীবনী হাদীছ শরীফ হতে আলোচনা করা হতো। …..

দ্বিতীয় মাহফিলটি হতো মীলাদ শরীফ-এর মাহফিল। এতে রবীউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখে পূর্ব নিয়ম অনুযায়ী (হাজার) লোক উপস্থিত হতো এবং দুরূদ শরীফ পাঠে মশগুল হতো। অতঃপর আমি নিজেই সেখানে উপস্থিত হতাম।”

উপরোক্ত কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের আলোচনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, আল্লাহ পাক উনি স্বয়ং নিজেই কুরআন শরীফ-এ উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা ছিফত করেছেন। আর আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি হাদীছ শরীফ-এ স্বয়ং নিজেই নিজের ছানা ছিফত করেছেন। শুধুমাত্র এতটুকুই নয় বরং স্বয়ং আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি নিজেই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের দ্বারা করিয়েছেন এবং ইজমা, ক্বিয়াসে তথা ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহতেও এর বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে।

আর মীলাদ শরীফ-এর আলোচ্য বিষয়ই হচ্ছে আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা-ছিফত করা। তাহলে কি করে একথা বলা যেতে পারে যে, “বর্তমানে প্রচলিত মীলাদের মধ্যে এমন কিছু দিক বা ধারা রয়েছে যেগুলো শরীয়তে মনোনীত নয়।”

প্রকৃতপক্ষে তাদের এ বক্তব্য দ্বারা তারা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসকেই অস্বীকার করেছে। যার ফলে তারা ঈমান ও ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে গেছে। কারণ, আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ঈমান না আনা পর্যন্ত শুধুমাত্র তাওহীদের উপর ঈমান আনলেও ক্বিয়ামত পর্যন্ত কোন ব্যক্তির পক্ষে ঈমানদার হওয়া সম্ভব নয় বা কোন ব্যক্তি ঈমানদার হতে পারবে না। (চলবে)

 

মুহম্মদ আব্দুল্লাহিল মা’রূফ

গোড়ান, ঢাকা

 

সুওয়াল: মাসিক মদীনা এপ্রিল/২০১১ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে বলা হয়েছে, “মহিলাগণের পক্ষে পর্দা রক্ষা করে পুরুষদের জামাতে শরীক হয়ে সব  ধরনের নামায আদায় করা জায়েয। এ ব্যাপারে কোন নির্ভরযোগ্য আলেমের মত-বিরোধ আছে বলে আমাদের জানা নাই।

এখন আমার সুওয়াল হলো- মাসিক মদীনার উক্ত উত্তর সঠিক হয়েছে কি? দয়া করে দলীল-আদিল্লাহসহ সঠিক জাওয়াব জানিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।

জাওয়াব: পুরুষদের জামায়াতের সাথে মহিলাদের নামায পড়া সম্পর্কে মাসিক মদীনা পত্রিকার সম্পাদক মাহিউদ্দীন-এর উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই মিথ্যা, দলীলবিহীন এবং ইজমাকে অস্বীকার করায় কুফরী হয়েছে। কারণ পর্দা রক্ষা করে বা পর্দা সহকারে হলেও মহিলারা পুরুষদের জামায়াতে শামিল হয়ে নামায পড়তে পারবে না।

কেননা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আম ফতওয়া হলো মহিলাদের পাঁচ ওয়াক্ত, জুমুয়া, তারাবীহ ও ঈদের নামাযসহ সকল নামাযের জামায়াতের জন্য মসজিদ, ঈদগাহ ও যে কোন স্থানে যাওয়া মাকরূহ তাহরীমী তথা হারাম। আর খাছ ফতওয়া হলো কুফরী। কারণ আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যামানায়, হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার যামানায় এবং হযরত উমর ফারূক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার খিলাফতের প্রথম যামানায় মহিলাদের জামায়াত জারি ছিল। এতদসত্বেও হযরত উমর ফারূক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মহিলাদের সর্বপ্রকার নামাযের জামায়াত নিষিদ্ধ ও বন্ধ করে দেন।

যেমন ফিক্বাহর বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘ফতহুল ক্বাদীর’  কিতাবে উল্লেখ আছে-

ولقد نهى عمر رضى الله تعالى عنه النساء عن الخروج الى المساجد

অর্থ: নিশ্চয়ই হযরত উমর ফারূক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি মহিলাদেরকে জামায়াতের জন্য মসজিদে যেতে নিষেধ করেন। (ফতওয়ায়ে দেওবন্দ, ফতওয়ায়ে রহিমীয়া)

এ বিষয়টি মহিলারা উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনাকে অবগত করলে তিনিও তা সমর্থন করেন। অর্থাৎ তিনিও মেয়েদের সর্বপ্রকার নামাযের জামায়াত নিষিদ্ধ হওয়ার পক্ষে মত দেন এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারাও তা সমর্থন করেন।

উল্লেখ্য যে, মাসিক মদীনা পত্রিকার সম্পাদক মাহিউদ্দীন বলেছে, “মহিলাগণের পক্ষে পর্দা রক্ষা করে পুরুষদের জামাতে শরীক হয়ে সব  ধরনের নামায আদায় করা জায়িয।”

এখন প্রশ্ন হচ্ছে- আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি যে সময়ে মহিলাদেরকে জামায়াতের জন্য মসজিদে আসতে নিষেধ করলেন সেসময়ে কি মহিলারা বেপর্দা হয়ে মসজিদে আসতেন? নাঊযুবিল্লাহ!

মূলত ঐ সময়ে বেপর্দা হওয়ার চিন্তা করাটাও কুফরী। বরং উনারা সর্বোত্তমরূপে এবং পূর্ণাঙ্গভাবে পর্দা পালন করতেন। তারপরেও আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি মহিলাদেরকে জামায়াতের জন্য মসজিদে আসতে স্পষ্ট ও কঠোরভাবে নিষেধ করে দিলেন। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, পর্দা করে হলেও মহিলাদের জন্য সর্বপ্রকার নামাযের জামায়াতে শরীক হওয়া নিষেধ। অর্থাৎ আম ফতওয়া মতে হারাম এবং খাছ ফতওয়া মতে কুফরী।

আরো উল্লেখ্য যে, আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত উমর ফারূক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার এই নিষেধাজ্ঞা এবং তা উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনিসহ সকল ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সমর্থনের পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তীতে সকল ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা ফতওয়া দেন যে, মহিলাদের জন্য সকল নামাযের জন্য মসজিদ, ঈদগাহ ও যে কোন স্থানে যাওয়া মাকরূহ তাহরীমী তথা হারাম। আর খাছ ফতওয়া মতে কুফরী।

যেমন, ‘ইমদাদুল আহ্কাম’ কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে-

قد اجتمعت الامة على كراهة خروج النساء الى الجماعة.

অর্থ: মহিলাদের জামায়াতের জন্য মসজিদে যাওয়া মাকরূহ্ তাহরীমী হওয়ার ব্যাপারে উম্মতের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

‘ঊমদাতুল ক্বারী’ শরহে বুখারী কিতাবের ৫ম খণ্ডের ১৫৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

قال صاحب الهداية ويكره لهن حضور الجماعات يعنى الشواب منهن. وقوله الجماعة يتناول الجمع والاعياد والكسوف والاستسقاء. قال اصحابنا لان فى خروجهن خوف الفتنة وهو سبب للحرام وما يقضى الى الحرام فهو حرام فعلى هذا قولهم يكره مرادهم يحرم

অর্থ: হিদায়ার লিখক বলেন, যুবতী মহিলাদের জামায়াতে যাওয়া মাকরূহ তাহরীমী। তিনি আরো বলেন, জামায়াত বলতে এখানে (পাঁচ ওয়াক্তসহ) জুমুয়া, ঈদাইন, কুসূফ, ইস্তিস্কা ইত্যাদি সকল নামাযই অন্তর্ভুক্ত। আমাদের ফক্বীহগণ বলেন, কেননা তাদের (মহিলাদের) জামায়াতের জন্য বের হওয়ায় ফিতনার আশঙ্কা রয়েছে, আর ফিতনা হারামের অন্তর্ভুক্ত। আর যা হারাম কাজে সহায়তা করে তাও হারাম। এ কারণেই ফক্বীহগণ উনাদের মাকরূহ তাহরীমী ফতওয়া দ্বারা মূলতঃ মহিলাদের জামায়াতে যাওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ অর্থাৎ হারাম হওয়াই উদ্দেশ্য। (ফতহুল মুলহিম, শরহে মুসলিম ২য় জিল্দ পৃঃ ৪২৮, তাফহীমুল মুসলিম ১৪ জিল্দ পৃঃ ২১)

ফায়জুল বারী শরহে বুখারী কিতাবের ২য় খণ্ডের ৩২২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

ومنعهن المتأخرون عن الخروج فعن ابن مسعود مرفوعا صلوة المرأة فى بيتها افضل من صلاتها فى حجرتها وصلاتها فى مخدعها افضل من صلاتها فى بيتها وهذا يدل على ان مرضى الشرع ان لاتخرجن الى المساجد.

অর্থ: উলামায়ে মুতাআখখিরীন রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা মহিলাদের জামায়াতের জন্য মসজিদে যাওয়া নিষেধ বলে মত প্রকাশ করেন। কেননা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে মারফু হাদীছ সূত্রে বর্ণিত রয়েছে যে, মহিলাদের হুজরায় নামায আদায় করার চেয়ে ঘরে নামায পড়া সর্বোত্তম এবং ঘরের চেয়ে গোপন প্রকোষ্ঠ সর্বোত্তম। উপরোক্ত হাদীছ শরীফ-এর আলোকে শরীয়ত এ মতই ব্যক্ত করে যে, মহিলাগণ জামায়াতের জন্য মসজিদে যাবে না।

‘সুনানে নাসায়ী শরহে ইমামুস সুয়ূতী’ কিতাবের ২য় খণ্ডের ২৮২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

وجب على الامام او نائبه منعهن من ذالك. قال المظهر فيه دليل على جواز خروجهن الى المساجد للصلاة. لكن فى زماننا مكروه. عمم المتأخرون المنع للعجائز والشواب فى الصلوات كلها

অর্থ: ইমাম অথবা তার প্রতিনিধির জন্য জরুরী উনারা যেন মহিলাদেরকে জামায়াতের জন্য মসজিদে আসতে নিষেধ করেন। হযরত মাযহার রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, যদিও হাদীছ শরীফ দ্বারা মহিলাদের (প্রথম যুগে) মসজিদে যাওয়া প্রমাণিত কিন্তু আমাদের সময়ে তা মাকরূহ তাহ্রীমী। (কেননা) মুতাআখখিরীন আলিম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা যুবতী ও বৃদ্ধা মহিলাদের যে কোন নামাযের জন্য মসজিদে যাওয়া নিষেধ হওয়ার ব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন।

আর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের বিরোধিতা করার কারণে খাছ ফতওয়া হচ্ছে কুফরী। কারণ আল্লাহ তিনি ইরশাদ করেন-

ليغيظ بهم الكفار

অর্থ: একমাত্র কাফিররাই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে।” (সূরা ফাতহ: আয়াত শরীফ ২৯)

এ আয়াত শরীফ-এর ব্যাখ্যায় হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে, হযরত মালিক বিন আনাস রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন-

من غاظ اصحاب محمد صلى الله عليه وسلم فهو كافر

অর্থ: যে ব্যক্তি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছাহাবীগণ উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ বা বিরোধিতা করে সে কাফির। (নাসীমুর রিয়াদ্ব)

হাদীছ শরীফ-এ আরো বর্ণিত হয়েছে-

حب الصحابة ايمان وبغضهم كفر

অর্থ: হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মুহব্বত হচ্ছে ঈমান। আর উনাদের বিরোধিতা বা বিদ্বেষ পোষণ করা কুফরী। (কানযুল উম্মাল)

যার পরিপ্রেক্ষিতে আকাইদের কিতাবে বর্ণনা করা হয়েছে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মুহব্বত হচ্ছে ঈমানের কারণ। আর বিরোধিতা হচ্ছে কুফরীর কারণ। আর বিশেষ করে বুখারী শরীফ-এ আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত উমর ফারূক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে-

حب ابى بكر وعمر رضى الله تعالى عنهما ايمان وبغضهما كفر

অর্থ: হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত উমর ফারূক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের প্রতি মুহব্বত পোষণ করা হচ্ছে ঈমান আর উনাদের প্রতি বিরোধিতা বা বিদ্বেষ পোষণ করা হচ্ছে কুফরী।

অতএব, উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, হযরত উমর ফারূক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ফতওয়া, উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার সমর্থন এবং ছাহাবা আজমাঈন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের ইজমা বা ঐকমত্যকে উপেক্ষা করে যারা মহিলাদের জামায়াত জারি কারার কোশেশ করবে তারা মুসলমানের অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারবে না। তারা কাট্টা কাফির হয়ে যাবে।

পরিশেষে বলতে হয় যে, মাসিক মদীনা পত্রিকার সম্পাদক মাহিউদ্দীন বলেছে, “এ ব্যাপারে কোন নির্ভরযোগ্য আলিমের মত-বিরোধ আছে বলে আমাদের জানা নাই।”

এর জাওয়াব বলতে হয় য়ে, পর্দা রক্ষা করে বা পর্দা সহকারে হলেও মহিলারা পুরুষদের জামায়াতে শামিল হয়ে নামায পড়তে পারবে না। এ ব্যাপারে আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নিষেধাজ্ঞা এবং তা উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার সমর্থন অর্থাৎ উনার তরফ থেকে সত্যায়িত করা হয়েছে অতঃপর সকল ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সমর্থনের পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তীতে সর্বজনমান্য, বিশ্বখ্যাত, নির্ভরযোগ্য ও অনুসরণীয় সকল ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা ফতওয়া দেন যে, মহিলাদের জন্য সকল নামাযের জন্য মসজিদ, ঈদগাহ ও যে কোন স্থানে যাওয়া মাকরূহ তাহরীমী। তা মাসিক মদীনার সম্পাদক  মাহিউদ্দীনের পক্ষে জানা না থাকাটাই স্বাভাবিক। কারণ, শুধুমাত্র বক্বদরে নেছাব দু’চারটি চটি রেসালা পাঠ করলে আর সদা সর্বদা বেপর্দা ও হারাম কাজে মশগুল থাকলে এ ধরণের কথা জানা সম্ভব নয়। দ্বিতীয়তঃ  “পর্দা রক্ষা করে বা পর্দা সহকারে হলেও মহিলারা পুরুষদের জামায়াতে শামিল হয়ে নামায পড়তে পারবে না।” এ ব্যাপারে সর্বজনমান্য, বিশ্বখ্যাত, নির্ভরযোগ্য ও অনুসরণীয় সকল ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা ফতওয়া দিয়েেেছন তা মাসিক মদীনার সম্পাদক মাাহিউদ্দীনের যদি জানা না থাকে তাহলে কি উক্ত হারাম ও কুফরী  কাজটি করা যাবে? কস্মিনকালেও নয়।      বরং আল্লাহ্ পাক উনার নির্দেশ হচ্ছে-

فاسئلوا اهل الذكر ان كنتم لا تعلمون.

অর্থ: “তোমরা আহলে যিকির বা আল্লাহওয়ালা উনাদেরকে জিজ্ঞাসা কর যদি তোমরা না জান।” (সূরা নহল: আয়াত শরীফ ৪৩)

অতএব, শরয়ী মাসায়ালা-মাসায়িল যাকে-তাকে জিজ্ঞাসা করা জায়িয নয়। একমাত্র যারা আল্লাহওয়ালা উনাদেরকেই জিজ্ঞাসা করতে হবে।

শরীয়তের মাসয়ালা অর্থাৎ আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা হচ্ছে, পর্দা করে হলেও মহিলাদের জন্য সর্বপ্রকার নামাযের জামায়াতে শরীক হওয়া নিষেধ। অর্থাৎ আম ফতওয়া মতে মাকরূহ তাহরীমী তথা হারাম এবং খাছ ফতওয়া মতে কুফরী। যা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা, ক্বিয়াস তথা সর্বজনমান্য, বিশ্বখ্যাত, নির্ভরযোগ্য ও অনুসরণীয় সকল ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা ফতওয়া দিয়েেেছন তা মাসিক মদীনা পত্রিকার সম্পাদক মাহিউদ্দীনের মতো মুর্খ লোক তথা জাহিল মাওলানার পক্ষে না জানাটাই স্বভাবিক। আল্লাহ পাক তিনি সকলকে এ প্রকার জাহিল মাওলানাদের থেকে হিফাযত করুন।

বিঃ দ্রঃ- এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ-এর ১১তম সংখ্যা পাঠ করুন সেখানে প্রায় ৬৫টি অকাট্য দলীল আদিল্লাহর ভিত্তিতে বিস্তারিত ফতওয়া প্রদান করা হয়েছে।

 

আলহাজ্জ মাওলানা মুহম্মদ মাহবুবুর রহমান

মহারাজপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

 

সুওয়াল: আমাদের এলাকায় কিছুদিন পূর্বে রাজারবাগ শরীফ-এর সিলসিলাভুক্ত এক ব্যক্তি ইনতিকাল করেন। ইনতিকালের পর উনাকে যে চকিতে শোয়ায়ে গোসল করানো হয় তা ধুপের ধোঁয়া দিয়ে সুগন্ধিময় করা হয়। এর ফলে কিছু লোক এলাকায় চরম ফিতনার সৃষ্টি করে। তাদের বক্তব্য হলো, ধূপের ধোঁয়া দেয়া হিন্দুয়ানি কালচার, যা করা হারাম। উক্ত লোকেরা মৃত ব্যক্তির পরিবারবর্গ ও আত্মীয়-স্বজনদেরকে হিন্দু, খ্রিস্টান ও খ্রিস্টানদের এজেন্ট ইত্যাদি আরো বিভিন্ন অপবাদ দেয়। এছাড়া তারা আরো যেসব অপবাদ দেয় তাহলো- মৃত ব্যক্তিকে দুধ দিয়ে গোসল করানো হয়েছে, ডাবের পানি দিয়ে গোসল করানো হয়েছে, লাল কাপড় দিয়ে কাফন পরিয়ে দাফন করা হয়েছে, লাশকে উপর থেকে আছাড় দিয়ে ফেলা হয়েছে, কবর এক হাত খোড়া হয়েছে, মৃত ব্যক্তির ওয়ারিছদেরকে খ্রিস্টানদের পক্ষ থেকে তিন লাখ টাকা দেয়া হয়েছে ইত্যাদি।

আমার প্রশ্ন হলো, ধূপ ব্যবহার করা শরীয়তে জায়িয কি-না? আর মৃত ব্যক্তির জন্য ধূপ ব্যবহার করা হয়েছে বলে মৃত ব্যক্তির পরিবারবর্গ, আত্মীয়-স্বজনদের নামে অপবাদ দেয়া কতটুকু শরীয়তসম্মত? বিস্তারিত দলীল-আদিল্লাহসহ জানতে বাসনা রাখি।

জাওয়াব: ধূপ ব্যবহার করা শরীয়তে জায়িয ও সুন্নত। ইসলামী শরীয়তের উছূল তথা মূলনীতি হচ্ছে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস। এ চারটি মূলনীতি বা দলীলের মধ্যে ইসলাম তথা মুসলমানের যাবতীয় বিষয়ের ফায়ছালা বর্ণিত রয়েছে। অর্থাৎ মুসলমানের কোন বিষয় উক্ত ৪টি মূলনীতির যে কোন একটি মূলনীতির মধ্যে স্বপক্ষে বর্ণনা থাকার অর্থ হচ্ছে তা আমভাবে শরীয়তসম্মত তথা শরীয়তে জায়িয এবং খাছভাবে ফরয, ওয়াজিব, সুন্নত, মুস্তাহাব ইত্যাদি। আর উক্ত মূলনীতি চতুষ্টয়ের কোন একটি মূলনীতির মধ্যে বিপরীত বা বিরোধী বর্ণনা থাকার অর্থ হচ্ছে তা আমভাবে শরীয়ত বিরোধী তথা নাজায়িয এবং খাছভাবে তা কুফরী, হারাম, মাকরূহ, বিদয়াত, কাফির-মুশরিকদের অনুসরণ ইত্যাদি।

অতএব, ধূপ ব্যবহারের স্বপক্ষে শরীয়তের দ্বিতীয় মূলনীতি হাদীছ শরীফসহ তৃতীয় ও চতুর্থ মূলনীতি ইজমা ও ক্বিয়াস তথা ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাবে স্পষ্ট বর্ণিত রয়েছে। তাছাড়া হাদীছ শরীফ-এ বর্ণনা থাকার অর্থ হচ্ছে কুরআন শরীফ-এ থাকা। কারণ আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-

وما اتاكم الرسول فخذوه وما نهاكم عنه فانتهوا واتقوالله ان الله شديد العقاب

অর্থ: সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তোমাদের নিকট যা নিয়ে এসেছেন বা যা আদেশ করেন তা তোমরা গ্রহণ করো বা পালন করো এবং তোমাদেরকে যা থেকে বিরত থাকতে বলেন বা নিষেধ করেন তা থেকে তোমরা বিরত থাক। এক্ষেত্রে আল্লাহ পাক উনাকে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক তিনি কঠিন শাস্তিদাতা। (সূরা হাশর: আয়াত শরীফ ৭)

আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ করেন-

وما ينطق عن الهوى ان هو الا وحى يوحى

অর্থ: হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ওহী ব্যতীত নিজ থেকে কোন কথা বলেন না। (সূরা নজম: আয়াত শরীফ ৩, ৪)

অর্থাৎ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক কথা, কাজ, সম্মতি তথা হাদীছ শরীফ প্রকৃতপক্ষে মহান আল্লাহ পাক উনারই কালাম তথা উনারই নাযিলকৃত ওহী; যা ওহীয়ে গইরে মাতলূ হিসেবে প্রসিদ্ধ।

মূল কথা হলো যে, মৃত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে ধূপ ব্যবহার করা জায়িয এ বর্ণনা শরীয়তের মূলনীতি চতুষ্টয়ের সবগুলির মধ্যেই রয়েছে।

উল্লেখ্য, হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-

عن جابر رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا اجمرتم الميت فاوتروا

অর্থ: হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, যখন তোমরা মৃত ব্যক্তিকে ধুপের ধোঁয়া দিবে তখন বিজোড় সংখ্যকবার দিবে। (হাকিম, ইবনু হাব্বান)

ফিক্বাহর সুপ্রসিদ্ধ কিতাব মুখতাছারুল কুদূরী-এর মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

ويجمر سريره وترا (مختصر القدورى كتاب الجنائز)

অর্থ: মৃত ব্যক্তিকে শোয়ানো খাট বা চকিকে বিজোড় সংখ্যকবার ধুপের ধোঁয়া দিবে।

অনুরূপ ফিক্বাহর প্রসিদ্ধ ও বিখ্যাত কিতাব ‘হিদায়া মাআদ দিরায়া’ কিতাবে বর্ণিত রয়েছে-

(ويجمر سريره وترا) لما فيه من تعظيم الميت وانما يوتر لقوله عليه السلام ان الله وتر يحب الوتر. (الهداية مع الدراية باب الجنائز فصل فى الغسل)

অর্থ: “মৃত ব্যক্তির শোয়ানো খাটকে বিজোড় সংখ্যকবার ধুপের ধোঁয়া দিয়ে সুগন্ধি করবে। এটা মূলত মৃত ব্যক্তির সম্মানের উদ্দেশ্যেই। আর বিজোড় সংখ্যকবার ধূপ দেয়ার কারণ হলো, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক তিনি বিজোড়, বিজোড়কে তিনি পছন্দ করেন।”

একইভাবে ফিক্বাহর প্রসিদ্ধ ও বিখ্যাত কিতাব ‘ফতহুল ক্বাদীর’ কিতাবে বর্ণিত রয়েছে-

(قوله ويجمر سريره وترا) اى يبخر وهو ان يدور من بيده المجمرة حول سريره ثلاثا او خمسا او سبعا وانما يوتر لان الله تعالى وتر يحب الوتر كما فى الصحيحين عنه عليه السلام ان الله تسعة وتسعين اسما مائة الا واحدا من احصاها دخل الجنة، انه وتر يحب الوتر.(فتح القدير على الهداية باب الجنائز فصل فى الغسل الجلد ۲ الصفحة ۷۲)

অর্থ: মৃত ব্যক্তির খাটকে বিজোড় সংখ্যায় সুগন্ধি করবে। অর্থাৎ ধুপের ধোঁয়া দিবে। তা এভাবে যে, ধুপের জলন্ত পাত্রকে হাত দিয়ে ধরে মৃত ব্যক্তিকে শোয়ানো খাটের চুতর্দিকে ঘুরাবে তিনবার অথবা পাঁচবার অথবা সাতবার অর্থাৎ বিজোড় সংখ্যক। এ কারণে যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক হচ্ছেন বিজোড় এবং তিনি বিজোড়কে ভালবাসেন। যেমন ছহীহাইন অর্থাৎ বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক উনার নিরানব্বইটি অর্থাৎ একশ থেকে একটি কম নাম মাবরক রয়েছে। যে ব্যক্তি উক্ত নাম মুবারকসমূহ গণনা করবে বা পাঠ করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক তিনি বিজোড়, বিজোড়কে মুহব্বত করেন।

অতঃপর ফিক্বাহ ও ফতওয়ার প্রসিদ্ধ ও বিখ্যাত কিতাব আলমগীরী কিতাবে বর্ণিত রয়েছে-

ويوضع على سرير مجمر وترا قبل وضع الميت عليه وكيفيته ان تدار المجمرة حوالى السرير اما مرة او ثلاثا او خمسا.

অর্থ: মৃত ব্যক্তিকে খাটে রাখার পূর্বে উক্ত খাটকে বিজোড় সংখ্যক ধুপের দ্বারা সুগন্ধিযুক্ত করবে। ধূপ দেয়ার নিয়ম হলো, ধুপের জালানো পাত্রটি খাটের চতুর্দিকে ঘুরাবে একবার, তিনবার অথবা পাঁচবার।

এরূপ বর্ণনা ফিক্বাহর কিতাব তাবয়ীন ও আইনী শরহিল কানযুদ দাক্বায়িক্ব কিতাবেও উল্লেখ রয়েছে।

উপরে উল্লেখিত কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এর অকাট্ট বর্ণনা দ্বারা প্রতিভাত হলো যে, মৃত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে ধূপ ব্যবহার করা শরীয়তের আম ফতওয়া মতে জায়িয এবং খাছ ফতওয়া মতে সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত।

কাজেই, শরীয়তে যেটা জায়িয, সেটাকে নাজায়িয বলা, যেটা হালাল সেটাকে হারাম বলা, যেটা সুন্নত সেটাকে বিদয়াত বলা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ।

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-

يايها الذين امنوا لا تحرموا طيبات ما احل الله لكم ولا تعتدوا ان الله لا يحب المعتدين

অর্থ: “হে ঈমানদারগণ! তোমরা সেসব পবিত্র বা হালাল বিষয়কে হারাম করো না, যা আল্লাহ পাক তোমাদের জন্য হালাল করে দিয়েছেন এবং তোমরা সীমালঙ্ঘন করোনা। নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক তিনি সীমালঙ্ঘনকারীদেরকে পছন্দ করেন না। (সূরা মায়িদা : আয়াত শরীফ ৮৭)

এ আয়াতে কারীমার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক সুবহানাহূ ওয়া তায়ালা তিনি জানিয়ে দিয়েছেন যে, মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  উনাদের তরফ থেকে বান্দা ও উম্মতের জন্য যেসকল বস্তু বা বিষয় হালাল করে দেয়া হয়েছে অর্থাৎ শরীয়তে যা হালাল হিসেবে ঘোষিত ও সাব্যস্ত হয়েছে সেটাকে হারাম বলা বা করা এটা সীমালঙ্ঘনের শামিল যা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।

ছহীহ বুখারী-এর হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, সাইয়িদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন-

الحلال بين والحرام بين

অর্থ: হালালগুলি স্পষ্ট এবং হারমাগুলিও স্পষ্ট। অর্থাৎ হালাল ও হারাম উভয় বিষয়গুলিই নির্দিষ্ট হয়ে গেছে। (বুখারী শরীফ, মিশকাত শরীফ)

সুতরাং, মুসলমান বান্দা ও উম্মতের জন্য মনগড়াভাবে, নিজের খেয়াল-খুশি অনুযায়ী কোন কিছু করার বা বলার আদৌ কোন সুযোগ নেই। মুসলমানকে কোন বিষয় শরীয়তসম্মত প্রমাণের জন্য যেরূপ দলীল পেশ করতে হবে তদ্রƒপ কোন বিষয় শরীয়ত বিরোধী সেটাও প্রমাণের জন্য দলীল পেশ করতে হবে।

যারটা দলীলসম্মত হবে তারটা গ্রহণযোগ্য হবে; আর যারটা দলীলসম্মত হবে না তারটা বাতিল বা পরিত্যাজ্য বলে গণ্য হবে। আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-

هاتوا برهانكم ان كنتم صادقين

অর্থ: “যদি তোমরা সত্যবাদী হও তাহলে দলীল প্রমাণ পেশ করো। (সূরা বাক্বারা :আয়াত শরীফ ১১)

অতএব, সুওয়ালে বর্ণিত এলাকার যেসব লোক বলেছে যে, মৃত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে ধূপের ধোঁয়া দেয়া হিন্দুয়ানী কালচার এবং হারাম  নাউযুবিল্লাহ তাদেরকে এর দলীল পেশ করতে হবে যে, শরীয়তের কোথায় বলা হয়েছে, মৃত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে ধুপের ধোঁয়া দেয়া হিন্দুয়ানী কালচার এবং তা হারাম! যদি তারা এর দলীল-প্রমাণ না দিতে পারে, তাহলে তারা মিথ্যাবাদী বলে সাব্যস্ত হবে এবং তারা লা’নতের উপযুক্ত হবে। কালামুল্লাহ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-

لعنت الله على الكاذبين

অর্থ: “মিথ্যাবাদীদের উপর আল্লাহ পাক উনার লা’নত।” অর্থাৎ যে মিথ্যাবাদী সে মালউন তথা লা’নতগ্রস্ত ও অভিশপ্ত। (সূরা আলে ইমরান : আয়াত শরীফ ৬১)

এখানে উল্লেখ্য, কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ সম্মত কোন আমল অন্য কোন ধর্মাবলম্বী পালন করলে যে তা মুসলমানের জন্য পালন করা যাবেনা এ আক্বীদা বা বক্তব্য সম্পূর্ণ ভুল, অশুদ্ধ ও কুফরী।

যেমন, অনেক বিধর্মী দাড়ি রাখে সেজন্য মুসলমান কি দাড়ি রাখা ছেড়ে দিবে? কখনোই নয়। বরং মুসলমান যে বিষয়টি পালন করবে সে বিষয়টি শরীয়তসম্মত হলেই তা পালন করবে। আর শরীয়তসম্মত না হলে তা পালন করা যাবেনা।

মূলতঃ কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এর বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত যে, ধূপ ব্যবহার করা জায়িয ও সুন্নত।

অতএব, এ বিষয়টিকে হিন্দুয়ানী কালচার বলে অভিহিত করা সম্পূর্ণরূপে কুফরীর শামিল।

শরীয়তের ফতওয়া হলো: কোন মুসলমান কুফরী করলে সে মুরতাদ হয়ে যায়।  মুরতাদের শাস্তি হচ্ছে- তার যিন্দিগীর সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে যাবে। বিয়ে করে থাকলে তার স্ত্রী তালাক হয়ে যাবে। হজ্জ করে থাকলে তা বাতিল হয়ে যাবে। তার ওয়ারিছ সত্ত্ব বাতিল হয়ে যাবে। তার তওবার জন্য সময়সীমা হচ্ছে তিনদিন। এর মধ্যে তওবা না করলে ইসলামী খিলাফতের তরফ থেকে তার একমাত্র শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদণ্ড। সে মারা গেলে তার জানাযা, দাফন, কাফন কোনটিই জায়িয নেই। বরং তাকে কুকুর-শৃগালের মত গর্তে পুঁতে রাখতে হবে।

দ্বিতীয়ত: যারা মৃত ব্যক্তির পরিবারবর্গ, আত্মীয়-স্বজনদেরকে হিন্দু, খ্রিস্টান ও খ্রিস্টানদের এজেন্ট ইত্যাদি বলে অপবাদ দিয়েছে, এসব অপবাদের দলীল-প্রমাণ তাদেরকে পেশ করতে হবে।

তারা যদি এর দলীল-প্রমাণ দিতে না পারে তাহলে তাদের দেয়া অপবাদ তাদের উপরই পতিত হবে এবং তারা হিন্দু, খ্রিস্টান ও খ্রিস্টানদের এজেন্ট হিসেবে সাব্যস্ত হয়ে মৃত্যুমুখে পতিত হবে। নাঊযুবিল্লাহ!

কারণ হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-

عن حضرت ابى الدرداء رضى الله تعالى عنه قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول ان العبد اذا لعن شيئا صعدت اللعنة الى السماء فتغلق ابواب السماء دونها ثم تهبط الى الارض فتغلق ابوابها دونها ثم تأخذ يمينا وشمالا فاذا لم تجد مساغا رجعت الى الذى لعن فان كان لذالك اهلا والا رجعت الى قائلها.

অর্থ: “হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, আমি শুনেছি, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেছেন, যখন বান্দা কারো বা কোন কিছুর উপর লা’নত করে তখন উক্ত লা’নত আকাশের দিকে উঠে। কিন্তু আকাশের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। অতঃপর তা যমীনের দিকে অবতীর্ণ হয় এবং যমীনের দরজাও বন্ধ করে দেয়া হয়। তারপর ডান দিকে ও বাম দিকে যায়, সেখানেও যখন কোন স্থান না পায় তখন সেই ব্যক্তি বা বস্তুর দিকে প্রত্যাবর্তন করে, যার উপর লা’নত করা হয়েছে। যদি সেই ব্যক্তি বা বস্তু লা’নতের উপযুক্ত হয়ে থাকে তাহলে তার দিকে প্রত্যাবর্তন করে। অন্যথায় লা’নতকারীর প্রতিই পতিত হয়। (আবূ দাউদ শরীফ)

তৃতীয়ত: ওইসব লোকদের অন্যান্য অপবাদসমূহেরও দলীল-প্রমাণ তথা সাক্ষী পেশ করতে হবে; কারণ সাক্ষী প্রমাণ ব্যতীত কারো নিকট থেকে কোন কথা শুনে প্রচার করাটা সেটা মিথ্যারই শামিল। হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন-

كفى بالمرء كذبا ان يحدث بكل ما سمعه

অর্থ: “কোন ব্যক্তি মিথ্যবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা শুনে তাই বলে বেড়ায় বা প্রচার করে বেড়ায় (সত্য-মিথ্যা যাচাই করে না)”। (মিশকাত শরীফ)

উল্লেখ্য, উক্ত মৃত ব্যক্তি ও তার পরিবারবর্গকে অপবাদ দেয়ার মূল কারণ আসলে ধূপ ব্যবহার করা নিয়ে নয় বরং মূল কারণ হচ্ছে উনারা রাজারবাগ শরীফ-এর সিলসিলাভুক্ত লোক অর্থাৎ উনারা যামানার মহান মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদ আ’যম, আওলাদে রসূল ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার মুরীদ।

স্মরণীয় যে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম সর্বোপরি আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মূল স্থলাভিষিক্ত ও প্রতিনিধি হলেন যামানার মুজাদ্দিদগণ। ফলে হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের এবং উনাদের ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের যেরূপ বিরোধিতা হয়েছে তদ্রƒপ যারা যামানার মুজাদ্দিদ এবং উনাদের যারা মুরীদ উনাদেরও বিরোধিতা হবে।

ইতিহাস সাক্ষী যে, এমন কোন নবী ও রসূল আলাইহিমুস সালাম অতীত হননি যাঁর বিরোধিতা হয়নি। এমনকি বনী ইসরাইল-এর সত্তর হাজার নবী ও রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে শহীদ পর্যন্ত করা হয়েছে। নাঊযুবিল্লাহ!

তারপরও কিন্তু বিরোধিতা শেষ হয়ে যায়নি। উপরন্তু যিনি কুল-কায়িনাতের নবী ও রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, রহমতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি বিরোধিতা ও মিথ্যারোপের মাত্রা যে কী পরিমাণ ছিল তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। উনাকে বলা হয়েছিল জাদুকর, জিনে ধরা, পাগল, ধর্মত্যাগী ইত্যাদি। নাঊযুবিল্লাহ!

কাজেই, উনার যিনি খাছ প্রতিনিধি বা স্থলাভিষিক্ত হবেন উনারও বিরোধিতা হবে এবং উনার নামেও মিথ্যা তোহমত বা অপবাদ দেয়া হবে সেইসাথে উনার যারা মুরীদ হবে তাদের নামেও নানান মিথ্যা অপবাদ বা তোহমত দেয়া হবে; এটাই চিরসত্য ও বাস্তব। অন্যথায় ধূপ ব্যবহার করার বিষয়কে কেন্দ্র করে সুওয়ালে বর্ণিত বিভিন্ন অপবাদ দেয়ার কী কারণ থাকতে পারে।

অতএব, যে বা যারা অন্যায়ভাবে হক্বের বিরোধিতা করেছে ও করবে তাদেরকে অবশ্যই কঠিন পরিণতির সম্মুখীন হতে হবে। এ থেকে কেউই রেহাই পাবে না।

{দলীলসমূহ- (১) তাফসীরে আহকামুল কুরআন লিল জাস্সাস, (২) তাফসীরে কুরতুবী, (৩) তাফসীরে রুহুল মায়ানী, (৪)  তাফসীরে রুহুল বয়ান, (৫) তাফসীরে মাযহারী, (৬) তাফসীরে কবীর, (৭) তাফসীরে খাযিন, (৮) তাফসীরে বাগবী, (৯)  তাফসীরে আহমদী, (১০) তাফসীরে ইবনে কাছীর, (১১) তাফসীরে তাবারী, (১২) তাফসীরে যাদুল মাছীর, (১৩) বুখারী, (১৪) আবূ দাউদ (১৫) হাকিম, (১৬) ইবনে হাব্বান, (১৭) শরহুস সুন্নাহ, (১৮) মিশকাত, (১৯) মিরকাত, (২০) ফতহুল বারী, (২১) উমদাতুল ক্বারী, (২২), (২৩) আশয়াতুল্ লুময়াত, (২৪) লুময়াত, (২৫) ত্বীবী, (২৬) তালীকুছ্ ছবীহ, (২৭) মুযাহিরে হক্ব, (২৮) মুখতাছারুল কুদূরী, (২৯) হিদায়া মাআদ দিরায়া, (৩০) ফতহুল ক্বাদীর, (৩১) আলমগীরী, (৩২) তাবয়ীন, (৩৩) আইনী শরহে কানযুদ দাক্বায়িক্ব, (৩৪) রদ্দুল মুহতার, (৩৫) হাশিয়ায়ে রদ্দুল মুহতার, (৩৬) ফতওয়ায়ে শামী, (৩৭) কিফায়া, (৩৮) ইনায়া, (৩৯) ফিক্বহুল আকবার, (৪০) শরহে ফিক্বহুল আকবার (৪১) শরহে আক্বাইদে নাসাফী, (৪২) আক্বাইদে হাক্কাহ, (৪৩) তাকমীলুল ঈমান ইত্যাদি}

 মুহম্মদ আলমগীর হুসাইন

টাঙ্গাইল

সুওয়াল: মুহররম মাসের ফযীলত ও আমলসমূহ দয়া করে জানাবেন।

জাওয়াব: মুহররম মাসটি অতিশয় ফযীলতপূর্ণ। এ মাসটি রহমত, বরকত, সাকীনা ও মাগফিরাত দ্বারা সমৃদ্ধ। আরবী ১২টি মাসের মধ্যে হারাম বা পবিত্র মাস হলো ৪টি। তারমধ্যে মুহররম মাস হলো অন্যতম। যেমন এ প্রসঙ্গে কালামুল্লাহ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-

ان عدة الشهور عند الله اثنا عشر شهرا فى كتب الله يوم خلق السموت والارض منها اربعة حرم ذلك الدين القيم فلا تظلموا فيهن انفسكم.

অর্থ: “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট আসমান-যমীনের সৃষ্টির শুরু থেকে গণনা হিসেবে মাসের সংখ্যা বারটি। তন্মধ্যে চারটি হচ্ছে হারাম বা পবিত্র মাস। এটা সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান। সুতরাং তোমরা এ মাসগুলোতে নিজেদের প্রতি জুলুম বা অবিচার করোনা।” (সূরা তওবা: আয়াত শরীফ-৩৬)

এ আয়াত শরীফ-এর ব্যাখ্যায় হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে-

ثلاث متواليات ذوالقعدة وذوالحجة والمحرم ورجب مضر الذى بين جمادى وشعبان.

অর্থ: হযরত আবী বাকরাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, হারাম মাসসমূহের মধ্যে তিনটি হলো ধারাবাহিক অর্থাৎ পরস্পর মিলিত তাহলো- যিলক্বদ, যিলহজ্জ ও মুহররম। আর চতুর্থটি হলো মুদ্বার গোত্রের রজব মাস যা জুমাদাল উখরা ও শা’বান মাসের মাঝখানে অবস্থিত। (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ, মুসনাদে আহমদ, শুয়াবুল ঈমান)

হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন-

اكرموالمحرم من اكرم المحرم اكرمه الله بالجنة ونجاه من النار

অর্থ: তোমরা মুহররম মাসকে সম্মান করো। যে ব্যক্তি মুহররম মাসকে সম্মান করবে, আল্লাহ পাক তাকে জান্নাত দিয়ে এবং জাহান্নাম থেকে পানাহ দিয়ে সম্মানিত করবেন।

স্মরণযোগ্য যে, মুহররম মাসের উল্লেখযোগ্য ও শ্রেষ্ঠতম দিন হচ্ছে ১০ই মুহররম আশূরা দিনটি। এ দিনটি বিশ্বব্যাপী এক আলোচিত দিন। সৃষ্টির সূচনা হয় এ দিনে এবং সৃষ্টির সমাপ্তিও ঘটবে এ দিনে। বিশেষ বিশেষ সৃষ্টি এ দিনেই করা হয় এবং বিশেষ বিশেষ ঘটনাও এ দিনেই সংঘটিত হয়।

বর্ণিত রয়েছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে শুরু করে সাইয়্যিদুনা হযরত আদম আলাইহিস সালাম পর্যন্ত প্রায় সকল নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের কোন না কোন উল্লেখযোগ্য ঘটনা এ দিনে সংঘটিত হয়েছে। সঙ্গতকারণে এ দিনটি আমাদের সবার জন্যে এক মহান আনুষ্ঠানিকতার দিন, রহমত, বরকত, সাকীনা, মাগফিরাত, হাছিল করার দিন। ফলে এ দিনে বেশ কিছু আমল করার ব্যাপারে হাদীছ শরীফ-এ উৎসাহিত করা হয়েছে। যেমন-

১। আশূরা উপলক্ষে দু’দিন রোযা রাখা: এ সম্পর্কে হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে-

عن حضرت ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم افضل الصيام بعد رمضان شهر الله المحرم.

অর্থ: হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, রমযানের ফরয রোযার পর উত্তম রোযা হচ্ছে আল্লাহ পাক উনার মাস মুহররমের রোযা। (মুসলিম শরীফ)

عن حضرت ابى قتادة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم صيام يوم عاشوراء احتسب على الله ان يكفر السنة التى قبله.

অর্থ: হযরত আবূ কাতাদাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, আশূরার রোযা পালনে আমি আল্লাহ পাক উনার দরবারে আশা করি যে, তিনি (উম্মতের) বিগত বছরের গুনাহখতা ক্ষমা করে দিবেন। (মুসলিম শরীফ)

عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنهما قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم صوموا التاسع والعاشر وخالفوا فيه اليهود.

অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, তোমরা ৯ ও ১০ই মুহররম রোযা রেখে ইহুদীদের বিরোধিতা করো। (তিরমিযী শরীফ)

২। রোযাদারকে ইফতার করানো:এ সম্পর্কে হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে-

من فطر فيه صائما فكانما افطر عنده جميع امة محمد صلى الله عليه وسلم

অর্থ: হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “আশূরার দিন যে ব্যক্তি কোন রোযাদারকে ইফতার করাবে, সে যেন সমস্ত উম্মতি হাবীবীকে ইফতার করালো।”

৩। আশূরার দিন পরিবারবর্গকে ভাল খাওয়ানো:এ সম্পর্কে হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে-

عن حضرت عبد الله بن مسعود رضى الله تعالى عنه ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال من وسع على عياله فى النفقة يوم عاشوراء وسع الله عليه سائرا سنته

অর্থ: “যে ব্যক্তি আশূরার দিন তার পরিবারবর্গকে ভাল খাওয়াবে-পরাবে আল্লাহ পাক সারা বৎসর তাকে সচ্ছলতা দান করবেন। (তিবরানী শরীফ, শুয়াবুল ঈমান, মা-ছাবাতা-বিস্সুন্নাহ্, মুমিন কে মাহে ওয়া সাল ইত্যাদি)

৪। গরীবদের পানাহার করানো ও ইয়াতীমের মাথায় হাত বুলানো: এ সম্পর্কে হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে-

من مسح فيه على رأس يتيم واطعم جائعا واسقى شربة من ماء اطعم الله من موائد الجنة وسقاه الله تعالى من الرحيق السلسبيل

অর্থ: নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “আশূরার দিন কোন মুসলমান যদি কোন ইয়াতীমের মাথায় হাত স্পর্শ করে এবং কোন ক্ষুধার্তকে খাদ্য খাওয়ায় এবং কোন পিপাসার্তকে পানি পান করায় তাহলে আল্লাহ পাক তাকে জান্নাতের দস্তরখানায় খাদ্য খাওয়াবেন এবং ‘সালসাবীল’ ঝর্ণা থেকে পানীয় (শরবত) পান করাবেন।”

৬। চোখে (ইছমিদ) সুরমা দেয়া: এ সম্পর্কে হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে-

من اكتحل يوم عاشوراء بكحل فيه مسك لم يشك عينه الى قبيل من ذلك اليوم.

অর্থ: “হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আশূরার দিন মেশ্ক মিশ্রিত সুরমা চোখে দিবে সেদিন হতে পরবর্তী এক বৎসর তার চোখে কোন প্রকার রোগ হবেনা। (মাকাসিদে হাসানা, শুয়াবুল ঈমান, দায়লামী, মাছাবাতা বিস্সুন্নাহ্)

৭। গোসল করা: এ সম্পর্কে হাদীছ শরীফ-এর ইরশাদ হয়েছে-

من اغتسل فيه عفى ولم يمرض الا مرض الموت وامن من الكسل والتعليل

অর্থ: সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি আশূরার দিন গোসল করবে আল্লাহ পাক তাকে রোগ থেকে মুক্তি দান করবেন। মৃত্যু ব্যতীত তার কোন কঠিন রোগ হবেনা এবং সে অলসতা ও দুঃখণ্ডকষ্ট হতে নিরাপদ থাকবে।”

অতএব, মুহররমুল হারাম মাস এবং এর মধ্যস্থিত আশূরা দিনের ফাযায়িল-ফযীলত ও আমল সম্পর্কে জেনে সে মুতাবিক আমল করে আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি হাছিল করা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর দায়িত্ব-কর্তব্য।

 

সাইয়্যিদা মুছাম্মত জাহানারা খাতুন

উলিপুর, কুড়িগ্রাম।

সুওয়াল:  বর্তমান সময়ে বিভিন্ন দেশে নববর্ষ উপলক্ষে পহেলা তারিখে যেমন- ১লা বৈশাখ, ১লা জানুয়ারি ইত্যাদি তারিখে ভাল ভাল খাওয়ার জন্য উৎসাহ দেয়া হয়, এটা কতটুকু শরীয়তসম্মত? আর শরীয়তে কোন নির্দিষ্ট দিনে ভাল খাওয়ার জন্য উৎসাহ দেয়া হয়েছে কি?

জাওয়াব:  শরীয়তের দৃষ্টিতে পহেলা বৈশাখ, পহেলা জানুয়ারিতে ভাল খাওয়ার জন্য আলাদাভাবে কোন তাগিদ করা হয়নি। বরং দশই মুর্হরমে প্রত্যেক পরিবারের প্রধান ব্যক্তিকে তার পরিবারের সদস্যদেরকে ভাল খাদ্য খাওয়ানোর জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

আল্লাহ পাক-উনার হাবীব, নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন –

من وسع على عياله فى النفقة يوم عاشورا وسع الله عليه سائر سنته

অর্থ: “যে ব্যক্তি তার পরিবারবর্গকে আশুরার দিন অর্থাৎ দশই মুর্হরমে ভাল খাদ্য খাওয়াবে, আল্লাহ পাক তাকে এক বৎসরের জন্য সচ্ছলতা দান করবেন।” (তবারানী শরীফ, মা-ছাবাতা বিস্সুন্নাহ)

এ প্রসঙ্গে কিতাবে একটি ওয়াকিয়া বর্ণিত রয়েছে, এক ব্যক্তি ছিল গরিব ও আলিম। একবার অসুস্থতার কারণে তিনি তিন দিন যাবৎ কাজ করতে পারলেন না। চতুর্থ দিন ছিল আশুরার দিন। তিনি আশুরার দিনে ভাল খাওয়ার ফযীলত সম্পর্কে জানতেন। তখন ছিল কাজীদের (বিচারক) যুগ। এলাকার কাজী ছাহেব ধনী ব্যক্তি ছিলেন।

গরিব আলিম, কাজী ছাহেবের কাছে আশুরার ফযীলতের কথা বলে এবং নিজের অসুস্থতা ও পরিবারের অভুক্ত থাকার কথা উল্লেখ করে ১০ সের আটা, ১০ সের গোশ্ত ও দুই দিরহাম হাদিয়া অথবা কর্জ হিসেেেব চাইলেন। কাজী ছাহেব তাকে যোহরের সময় আসতে বললো। যোহরের সময় কাজী ছাহেব বললো, আছরের সময় আসতে। কিন্তু এরপরে আছরের সময় মাগরিব, মাগরিবের সময় ইশা এবং ইশার সময় সরাসরি না করে দিলো। তখন গরিব, আলিম ব্যক্তি বললেন: হে কাজী ছাহেব! আপনি আমাকে দিতে পারবেন না সেটা আগেই বলতে পারতেন, আমি অন্য কোথাও ব্যবস্থা করতাম। কিন্তু তা না করে আমাকে সারাদিন ঘুরিয়ে এই শেষ মুহূর্তে নিষেধ করলেন? কাজী ছাহেব সেই গরিব, আলিম ব্যক্তির কথায় কর্ণপাত না করে দরজা বন্ধ করে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলো।

মনের দুঃখে গরিব আলিম ব্যক্তি তখন কাঁদতে কাঁদতে বাড়ির দিকে রওয়ানা হলেন। পথে ছিল এক খ্রিস্টানের বাড়ি। একজন বয়স্ক ব্যক্তিকে কাঁদতে দেখে উক্ত খ্রিস্টান কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করলো। কিন্তু বিধর্মী বিধায় খ্রিস্টানকে প্রথমে তিনি কিছু বলতে চাইলেন না। অতঃপর খ্রিস্টানের অধীর আগ্রহের কারণে তিনি আশুরার ফযীলত ও তাঁর বর্তমান অবস্থার কথা ব্যক্ত করলেন। খ্রিস্টান ব্যক্তি তখন উৎসাহী হয়ে আলিম ব্যক্তিকে আশুরার সম্মানার্থে ১০ সের আটা, ১০ সের গোশ্ত, ২ দিরহাম এবং অতিরিক্ত আরো ২০ দিরহাম দিল এবং বললো যে, আপনাকে আমি আশুরার সম্মানার্থে প্রতিমাসে এ পরিমাণ হাদিয়া দিব। গরিব আলিম তখন তা নিয়ে বাড়িতে গেলেন এবং খাবার তৈরি করে ছেলে-মেয়েসহ আহার করলেন। অতঃপর দোয়া করলেন, “আয় আল্লাহ পাক! যে ব্যক্তি আমাকে সন্তুষ্ট করলো, আমার ছেলে-মেয়েদের মুখে হাসি ফোটালো, আল্লাহ পাক! আপনি তার দিল খুশি করে দিন, তাকে সন্তুষ্ট করে দিন।”

ঐ রাতে কাজী ছাহেব স্বপ্ন দেখলো, স্বপ্নে কাজী ছাহেবকে বলা হচ্ছে, হে কাজী! তুমি মাথা উত্তোলন করো। মাথা তুলে কাজী দেখতে পেলো যে, তার সামনে দুটি বেহেশ্তের বালাখানা। একটি স্বর্ণের আরেকটি রৌপ্যের। কাজী ছাহেব বললো, ‘আয় আল্লাহ পাক! এটা কি?’ গায়িবী আওয়াজ হলো, ‘এ বালাখানা দুটি তোমার ছিল। কিন্তু এখন আর তোমার নেই। কারণ তোমার কাছে যে গরিব আলিম লোকটি আশুরা উপলক্ষে সাহায্যের জন্য এসেছিলেন তাকে তুমি সাহায্য করনি। এজন্য এ বালাখানা দু’টি এখন ওমুক খ্রিস্টান লোকের হয়েছে।’ কারণ সে খিস্টান লোকটা আশুরার সম্মানার্থে গরিব আলিমকে সাহায্য করেছে। অতঃপর কাজী ছাহেবের ঘুম ভেঙে গেলো। ঘুম থেকে উঠে ওযু ও নামায আদায় করে সেই খ্রিস্টানের বাড়িতে গেলো। খ্রিস্টান কাজী ছাহেবকে দেখে বিস্ময়াভূত হলো। কারণ কাজী ছাহেব খ্রিস্টানের পড়শী হওয়া সত্ত্বেও জন্মের পর থেকে এ পর্যন্ত কোন সময় তার বাড়িতে আসতে দেখেনি।

অতঃপর  খ্রিষ্টান কাজী ছাহেবকে বললো, ‘আপনি এত সকালে কি জন্য এলেন?’ কাজী ছাহেব বললো, ‘হে খ্রিস্টান ব্যক্তি! তুমি গত রাতে যে নেক কাজ করেছ সেটা আমার কাছে বিক্রি করে দাও। খ্রিস্টান ব্যক্তি বললো, কাজী সাহেব! আপনি কি বলতে চাচ্ছেন আমি বুঝতে পারছি না। আপনি স্পষ্ট করে বলুন। তখন কাজী সাহেব তার স্বপ্নের কথা বললো এবং বললো তুমি নিশ্চয়ই সেই গরিব, আলিম লোকটিকে সাহায্য করেছ।’ তখন খ্রিস্টান ব্যক্তি তা স্বীকার করলো। কাজী ছাহেব বললো যে, ‘তুমি তো খ্রিস্টান, তুমি তো এই বালাখানা পাবেনা। তোমার এটা নিয়ে কি ফায়দা হবে? তুমি তোমার এই নেক কাজ এক লক্ষ দিরহামের বিনিময়ে আমার নিকট বিক্রি করে দাও এবং তুমি তার কাছে প্রত্যেক মাসে যে ওয়াদা করেছ আমি তাকে তা দিয়ে দিব।’ খ্রিস্টান ব্যক্তি বললো, হে কাজী ছাহেব! আমি যদি মুসলমান হয়ে যাই তাহলে কি সেই বালাখানা পাবো? তখন কাজী সাহেব বললো হ্যাঁ, তুমি যদি মুসলমান হও তবে বালাখানা পাবে। তখন খ্রিস্টান ব্যক্তি বললো, কাজী সাহেব আপনি সাক্ষী থাকুন, আমি কালিমা শরীফ পড়ে মুসলমান হয়ে গেলাম।” অতঃপর সত্যি সে খ্রিস্টান ব্যক্তি মুসলমান হয়ে গেল।

অতএব এটা ফিকিরের বিষয় যে, মুর্হরম মাস তথা আশুরাকে সম্মান করার কারণে আল্লাহ পাক খ্রিস্টানকে ঈমান দিয়ে দিলেন এমনকি জান্নাত নছীব করলেন। সুবহানাল্লাহ!

 

মুহম্মদ হুমায়ুন কবীর,

বানারীপাড়া, বরিশাল।

 

সুওয়াল:  আশুরাকে কেন্দ্র করে কিছু লোক নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম উনাদের সম্পর্কে এলোমেলো বক্তব্য পেশ করে থাকে। যেমন তারা বলে থাকে যে, হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম গন্দম খেয়ে ভুল করেছিলেন ইত্যাদি।

এখন আমার প্রশ্ন হলো- সত্যিই কি নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম উনারা ভুল-ত্রুটি করেছিলেন অথবা করেননি? সঠিক জাওয়াব দানে বাধিত করবেন।

জাওয়াব:  আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা হলো কোন নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম উনারা কখনো ভুল করেননি। ইচ্ছাকৃত তো নয়ই, অনিচ্ছাকৃতও নয়। অর্থাৎ নবী আলাইহিমুস সালাম উনারা কোন ভুলই করেননি। (শরহে আক্বাইদে নসফী, ফিক্বহে আকবর, তাকমীলুল ঈমান, আক্বাইদে হাক্কাহ)

অর্থাৎ সকল নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম উনারাই ছিলেন আল্লাহ পাক উনার খাছ ও মনোনীত বান্দাহ্গণের অন্তর্ভুক্ত। উনারা প্রত্যেকেই ছিলেন ওহীর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। কুরআন শরীফ-এর একাধিক স্থানে ইরশাদ হয়েছে-

نوحى اليهم

অর্থ: “আমি উনাদের (নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম উনাদের) প্রতি ওহী পাঠাতাম।” (সূরা ইউসূফ-১০৯, নহল-৪৩, আম্বিয়া-৭)

অর্থাৎ নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের যাবতীয় কার্যাবলীই ওহীর দ্বারা (আল্লাহ পাক কর্তৃক) পরিচালিত হতো। যার পরিপ্রেক্ষিতে আক্বাইদের কিতাবে বর্ণিত হয়েছে-

الانبياء عليهم السلام كلهم معصومون

অর্থ: “সকল আম্বিয়া আলাইহিমুস্ সালাম উনারা মা’ছূম বা নিষ্পাপ।” (শরহে আক্বাইদে নাসাফী)

আরো উল্লেখ করা হয়েছে যে-

الانبياء عليهم السلام كلهم منزهون عن الصغائر والكبائر والكفر والقبائح

অর্থ: “সকল আম্বিয়া আলাইহিমুস্ সালাম উনারা ছগীরা, কবীরা, কুফরী এবং অপছন্দনীয় কাজ হতেও পবিত্র।” (আল ফিক্বহুল আকবার লি ইমাম আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি)

অতএব, যারা নবী আলাইহিমুস্ সালাম উনাদের ভুল সম্পর্কে বলে থাকে, আক্বাইদ সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণেই তারা তা বলে থাকে। যেমন তারা বলে থাকে যে, হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম গন্দম খেয়ে ভুল করেছিলেন। (নাঊযুবিল্লাহ্)

মূলতঃ তাদের একথা সঠিক নয়। প্রকৃত ঘটনা হলো- আল্লাহ পাক তিনি যখন হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম ও হযরত হাওয়া আলাইহাস সালাম উনাদেরকে আদেশ করেছিলেন যে-

لا تقربا هذه الشجرة

অর্থ: “আপনারা এই (গন্দমের) গাছের নিকটবর্তী হবেন না।” (সূরা বাক্বারা-৩৫)

তখন উনারা আল্লাহ পাক উনার এ আদেশ অনুযায়ী সে গাছের নিকটবর্তী হননি। বরং উক্ত গাছের অনুরূপ বিপরীত দিকের অন্য একটি গাছ দেখিয়ে, ইবলিস শয়তান এসে হযরত হাওয়া আলাইহাস্ সালাম উনাকে মিথ্যা কছম খেয়ে বলেছিল যে, যদি আপনারা এ গাছের ফল খান, তবে আপনারা ফেরেশতা হয়ে যাবেন অথবা স্থায়ীভাবে বেহেশতে বসবাস করতে পারবেন। কোন কোন বর্ণনা মোতাবেক, তখন হযরত হাওয়া আলাইহাস সালাম সে গাছ হতে ফল এনে শরবত বানিয়ে হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম উনাকে খাইয়েছিলেন। অপর বর্ণনায়, ফল কেটে খাইয়েছিলেন। এ ঘটনা হযরত আদম আলাইহিস সালাম-উনার অজান্তেই সংঘটিত হয়েছিল। সুতরাং যা অজান্তে সংঘটিত হয়, তা কি করে ভুল বা অপরাধ হতে পারে? বাস্তবিক তা কখনই ভুল  হতে পারেনা। (সমূহ তাফসীরের কিতাব)

এর মেছালস্বরূপ উল্লেখ করা যায়- হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম উনার শাহাদাতের ঘটনা। তিনি যে শাহাদত বরণ করেন, এ ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই। উনাকে ইসলামের শত্রুরা শহীদ করার জন্য একে একে পাঁচবার বিষ পান করায়। কিন্তু আল্লাহ পাক উনার রহমতে তিনি প্রত্যেক বারই বেঁচে যান। ষষ্ঠবার উনাকে শহীদ করার জন্য উনার পানির কলসিতে, যে কলসির মুখ কাপড় দিয়ে বেঁধে রাখতেন, (যেন তার ভিতর কিছু ফেলা না যায়,) সেই কাপড়ের উপর শত্রুরা হিরক চূর্ণ বিষ উনার অজান্তে মিশিয়ে দিয়েছিল। তিনি গভীর রাত্রিতে হিরক চূর্ণ বিষ মিশ্রিত পানি কলসি থেকে ঢেলে পান করেন, যার ফলশ্রুতিতে তিনি শাহাদাত বরণ করেন। যা উনার অজান্তেই সংঘটিত হয়েছিল। (সিররুশ্ শাহাদাতাঈন, শুহাদায়ে কারবালা, সীরতে ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন আলাইহিমাস সালাম)

এখন প্রশ্ন উঠে, শরীয়তের দৃষ্টিতে উনার শাহাদাতকে আত্মহত্যা বলতে হবে, না ভুল করার কারণে বিছাল শরীফ লাভ করেছেন, তা বলতে হবে?

মূলতঃ উপরোক্ত দুটির কোনটিই বলা যাবেনা। যদি কেউ কোন একটিও বলে, তবে সে মিথ্যা তোহমত দেয়ার গুনাহে গুনাহ্গার হবে, যা কুফরীর শামিল হবে। তদ্রুপ হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম উনার ঘটনাও। যা উনার অজান্তে সংঘটিত হলো।

অনুরূপ অন্যান্য নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম-উনাদের ঘটনাও। মানুষ সঠিক ইতিহাস না জানার কারণে এবং কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর সঠিক ব্যাখ্যা না বুঝার কারণে, নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের শানে বেয়াদবীমূলক কুফরী কথাবার্তা বলে থাকে।

হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম উনাদের সাথে কতটুকু আদব রক্ষা করতে হবে, সে প্রসঙ্গে কিতাবে, ইমামুত তরীক্বত ওয়াশ্ শরীয়ত, হযরত ইমাম র্সারী সাক্তী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ঘটনা উল্লেখ করা হয়, যিনি উনার যামানায় আল্লাহ পাক উনার লক্ষ্যস্থল ছিলেন। যিনি ইমামুশ্ শরীয়ত ওয়াত্ব তরীক্বত ছিলেন। তিনি একবার স্বপ্নে দেখেন আল্লাহ পাক উনার নবী হযরত ইয়াকুব আলাইহিস্ সালাম উনাকে। দেখে প্রশ্ন করেছিলেন, হে আল্লাহ পাক উনার নবী হযরত ইয়াকুব আলাইহিস্ সালাম! আমরা জানি আপনার অন্তরে আল্লাহ পাক উনার মহব্বত সত্যিকারভাবেই পরিপূর্ণ ও প্রবল, তারপরও আপনি কি কারণে আপনার ছেলে আল্লাহ পাক উনার আরেক নবী হযরত ইউসুফ আলাইহিস্ সালাম উনার জুদায়ীর (বিচ্ছেদের) কারণে উনার মুহব্বতে চল্লিশ বছর যাবৎ কেঁঁদে কেঁদে আপনার চক্ষু মুবারক নষ্ট করেছিলেন? একথা বলার সাথে সাথে গায়িব থেকে নেদা (আওয়াজ) হলো, “হে সাররী সাক্তী রহমতুল্লাহি আলাইহি! নবী আলাইহিস সালাম উনাদের শানে সতর্কতার সাথে কথা বলুন।” এরপর হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম উনাকে উনার সামনে পেশ করা হলে তিনি দেখে বেহুঁশ হয়ে পড়ে যান এবং এভাবে একাধারা তের দিন, তের রাত্রি বেহুশ থাকার পর হুঁশ ফিরে পান। তখন গায়েব থেকে পুনরায় নেদা হয়, “আল্লাহ পাক উনার নবী আলাইহিস সালাম উনাদের শানে এরকম কথা বললে এরূপই অবস্থা হয়ে থাকে।” (তাযকিরাতুল আওলিয়া)

উপরোক্ত ওয়াকিয়ার আলোকে প্রতিভাত হয় যে, আদব কত সূক্ষ্ম বিষয় এবং হযরত নবী আলাইহিস সালাম উনাদের ক্ষেত্রে কি পরিমাণ আদবের সাথে কথা বলতে হবে? সত্যিই তা চিন্তা-ফিকিরের বিষয়। আদব সম্পর্কে হযরত জালালুদ্দীন রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন-

بے ادب محروم گشت از لطف رب

অর্থ: “বেয়াদব আল্লাহ পাক উনার রহ্মত থেকে বঞ্চিত।” (মসনবী শরীফ)

অতএব, প্রতীয়মান হয় যে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি কতটুকু আদব রক্ষা করা দরকার।

উল্লেখ্য যে, হযরত র্সারী সাক্তী রহমতুল্লাহি আলাইহি ইমামুজ্জামান, ইমামুশ্ শরীয়ত ওয়াত্ব তরীক্বত ও আল্লাহ পাক-উনার লক্ষ্যস্থল ওলী হওয়া সত্ত্বেও উনার প্রতি সতর্কবাণী ও সাবধানবাণী উচ্চারিত হয়েছে। মূলতঃ নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম উনারা ভুল করা তো দূরের কথা, কোন প্রকার অপছন্দনীয় কাজও উনারা করতেন না। বরং সর্ব প্রকার অপছন্দনীয় কাজ থেকেও বেঁচে থাকতেন বা পবিত্র, সে প্রসঙ্গে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র  সীরত মুবারক থেকে একটি ঘটনা উল্লেখ করা যায়-

“একবার আল্লাহ পাক উনার রসূল  হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হুজরা শরীফ-এ বসা ছিলেন। এমতাবস্থায় এক ব্যক্তি এসে আল্লাহ পাক উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া  সাল্লাম উনার সাথে সাক্ষাৎ করার অনুমতি চাইলেন। এ সংবাদ উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট পৌঁছালেন। তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, সে ব্যক্তিকে অপেক্ষা করতে বলুন। একথা বলে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পাগড়ী মুবারক, কোর্তা মুবারক ইত্যাদি গুছগাছ করে নিলেন। এমন কি হুজরা শরীফ থেকে বের হওয়ার মুহূর্তে পানির গামলা মুবারক-এ নিজের চেহারা মুবারক দেখে গুছিয়ে নিচ্ছিলেন। তা দেখে সে সময় উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, “ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনিও কি এরূপ করেন?”

তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “কিরূপ করি?” উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, “এরূপ পরিপাটি।” এর জবাবে আল্লাহ পাক উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “হ্যাঁ, আমরা আল্লাহ পাক উনার নবী। আমাদের কোন কাজ কারো অপছন্দ হলে, সে ঈমান হারা হয়ে যাবে।” সেজন্য এরূপ করে থাকি। (আল্ মুরশিদুল আমীন)

অতএব, নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম উনারা যে কতটুকু অপছন্দনীয় কাজ থেকে বেঁচে থাকতেন, এ হাদীছ শরীফ-এর বর্ণিত ঘটনা তারই প্রমাণ। তাহলে কি করে এ কথা বলা যেতে পারে বা বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে যে, নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা ভুল-ত্রুটি করেছিলেন? বস্তুতঃ এরূপ আক্বীদা পোষণ করা সম্পূর্ণই হারাম ও কুফরী।

তদ্রুপ নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম উনাদের সম্পর্কে ও উনাদের শানের খিলাফ কোন অর্থ গ্রহণ করা যাবেনা বরং এমন অর্থ ব্যবহার বা গ্রহণ করতে হবে, যাতে উনাদের শান সমুন্নত থাকে।

উল্লেখ্য যে, আল্লাহ পাক-উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার হাদীছ শরীফ বর্ণনাকারীদেরকে রাবী বলা হয়। এই রাবীগণের মধ্যে যাঁরা প্রথম শ্রেণীর, উনাদেরকে বলা হয় ছিক্বাহ্ রাবী।

হাদীছ বিশারদগণ ছিক্বাহ্ রাবী হওয়ার জন্য যে মানদণ্ড নির্ধারণ করেছেন, তার মধ্যে মূল বিষয় হচ্ছে- (১) আদালত ও (২) জব্ত।

জব্ত হচ্ছে- প্রখর স্মরণশক্তি। তা এমন যে, একবার শুনলে আর ভুলেনা।

আর আদালত-এর মধ্যে চারটি শর্ত রয়েছে। তার মধ্যে প্রধান হলো দুটি। যথা- (ক) তাক্বওয়া, (খ) মুরুওওয়াত।

(ক) তাক্বওয়া হচ্ছে- কুফরী, শেরেকী, বিদ্য়াতী, ফাসিকী কাজ থেকে বেঁচে থাকার সাথে সাথে কবীরা গুনাহ্ থেকে, এমনকি ছগীরা গুনাহ্ও বার বার করা থেকে বেঁচে থাকা। (খ) আর মুরুওওয়াত হচ্ছে- অশালীন, অশোভনীয়, অপছন্দনীয়, এমনকি দৃষ্টিকটু কাজ থেকে বিরত থাকা। যেমন- রাস্তায় হেঁটে হেঁটে খাদ্য খাওয়া, রাস্তায় অট্টহাস্য করা, চিৎকার করা ইত্যাদি। (তাদরীবুর রাবী, মুকাদ্দামাতুশ শায়খ, মীযানুল আখবার)

এখন ফিকিরের বিষয় এই যে, হাদীছ শরীফ বর্ণনাকারী ছিক্বাহ্ রাবী যদি এত গুণ ও যোগ্যতাসম্পন্ন এবং তাক্বওয়াধারী হন অর্থাৎ হাদীছ বিশারদ উম্মতে হাবীবীর নিকট যদি ছিক্বাহ্ রাবী হিসেবে হাদীছ বর্ণনাকারী হওয়ার জন্য ছগীরা গুনাহ্ বার বার না করা ও দৃষ্টিকটু সাধারণ অপছন্দনীয় কাজও না করা শর্ত হয়, তাহলে যাঁরা আল্লাহ পাক-উনার নবী হবেন এবং আল্লাহ পাক উনার কালাম বর্ণনা করবেন, উনাদের জন্য আল্লাহ পাক কি মানদণ্ড নির্ধারণ করেছেন বা উনাদের ক্ষেত্রে কতটুকু মা’ছূম ও মাহ্ফুজ হওয়া নির্দিষ্ট করেছেন তা সহজেই অনুধাবনীয়।

অতএব, যে কোন লোকের জন্যই নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম উনাদের শানের বিন্দুমাত্র খিলাফ কথাবার্তা বলা সম্পূর্ণ নাজায়িয, হারাম ও কুফরী। এ ধরনের কুফরী আক্বীদা থেকে বেঁচে থাকা সমস্ত মুসলমান নর-নারীর জন্য ফরয।

মুহম্মদ শাহ ইমরান (শিশির)

সভাপতি- ছাত্র আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত রংপুর জেলা শাখা।

সুওয়াল: আশুরা উপলক্ষে কয়টি রোযা রাখা সুন্নত, জানতে বাসনা রাখি।  জাওয়াব: হাদীছ শরীফ-এর বর্ণিত রয়েছে, আল্লাহ পাক-উনার রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন-

صوموا يوم عاشوراء وخالفوا فى اليهود صوموا قبله يوما او بعده يوما.

 অর্থ: “তোমরা আশুরার রোযা রাখ এবং (এ ব্যাপারে) ইহুদীদের বিপরীত কর। তোমরা আশুরার আগের দিন অথবা পরের দিনেও রোযা রাখো।”

এ হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আশুরার উদ্দেশ্যে দুটি রোযা রাখা সুন্নত। মুর্হরমের ৯ ও ১০ তারিখে অথবা ১০ ও ১১ তারিখে। তবে উত্তম হলো ৯ ও ১০ তারিখে রোযা রাখা। শুধু ১০ই মুহররম আশুরার উদ্দেশ্যে ১টি রোযা রাখা মাকরূহ। কারণ ইহুদীরা সেদিনটিতে রোযা রেখে থাকে। {দলীলসমূহঃ (১) বুখারী শরীফ, (২) মুসলিম শরীফ, (৩) মিশকাত, (৪) তিরমিযী, (৫) মুয়াত্তা ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি, (৬) জামিউল ফাওয়ায়েদ, (৭) মুসনাদে ফেরদৌস দায়লামী, (৮) মাসাবাতা বিস্ সুন্নাহ্, (৯) মুসনাদে ইমাম আহ্মদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি ইত্যাদি}

মুহম্মদ আতিকুল্লাহ

পুরান বাজার, চাঁদপুর

 সুওয়াল: হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার শাহাদাতকে কেন্দ্র করে অনেকে জলীলুল ক্বদর ছাহাবী হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে দোষারোপ করে থাকে। এটা কতটুকু শরীয়তসম্মত? দয়া করে জানাবেন।

জাওয়াব: কোন নবী-রসূল আলাইহিস্ সালাম উনাকে যেমন কোন ব্যাপারে দোষারোপ করা জায়িয নেই। তদ্রুপ কোন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদেরকেও কোন ব্যাপারে দোষারোপ করা জায়িয নেই।

এ বিষয়ে আল্লাহ পাক উনার কালাম পাক-এ ইরশাদ করেন-

ولا تزر وازرة وزر اخرى

অর্থ: “একজনের পাপের বোঝা অপরজন বহন করবেনা।” (সূরা আনয়াম-১৬৪)

এ আয়াত শরীফ-এর তাফসীরে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সন্তানের অপরাধের জন্য পিতাকে এবং পিতার অপরাধের জন্য সস্তানকে দায়ী করা বৈধ নয়। যেমন, কাবিলের অপরাধের জন্য হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম উনাকে, কেনানের অপরাধের জন্য হযরত নূহ আলাইহিস্ সালাম উনাকে দায়ী করা বৈধ নয়। তেমনি ইয়াযীদের অপরাধের জন্য হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে দায়ী করাও বৈধ নয়। বরং সম্পূর্ণ নাজায়িয, হারাম ও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।

আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন-

ليغيظبهم الكفار

অর্থ: “কাফিররাই উনাদের (হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের) প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে থাকে।” (সূরা ফাতহ্-২৯)

আর হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে-

عن مالك بن انس رحمة الله عليه قال من غاظ اصحاب محمد صلى الله عليه وسلم فهو كافر

অর্থ: “হযরত মালিক ইবনে আনাস রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, যে ব্যক্তি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে, সে কাফির।” (নাসীমুর রিয়াদ্ব)

এখানে একটা বিষয় মনে রাখা দরকার যে, আল্লাহ পাক-উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার আদরের দৌহিত্র হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার মর্মান্তিক শাহাদাতে মুসলিম উম্মাহ’র অন্তর ব্যথাতুর হবে তা চরম সত্য কথা এবং এটি ঈমান মজবুতীর আলামতও বটে। কিন্তু এজন্য হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যিনি আল্লাহ পাক-উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জলীলুল ক্বদর ছাহাবী উনাকে দোষারোপ করা কস্মিনকালেও শরীয়ত সম্মত হতে পারে না।

হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে-

عن ابى سعيد الخدرى رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لا تسبوا اصحابى فلو ان احدكم انفق مثل احد ذهبا ما بلغ مد احدهم ولا نصيفه

অর্থ: “হযরত আবু সায়ীদ খুদুরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, তোমরা আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে গালি দিওনা। কেননা তোমাদের কেউ যদি উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ আল্লাহ পাক-উনার রাস্তায় দান কর, তবুও ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের এক মূদ্ (১৪ ছটাক) বা অর্ধ মূদ্ (৭ ছটাক) গম দান করার ফযীলতের সমপরিমাণ ফযীলত অর্জন করতে পারবে না।” (বুখারী শরীফ)

হাদীছ শরীফ-এ আরো ইরশাদ হয়েছে যে-

عن عويمر بن ساعدة رضى الله تعالى عنه انه صلى الله عليه وسلم قال ان الله اختارنى واختارلى اصحابا فجعل لى منهم وزراء وانصارا واصهارا فمن سبهم فعليه لعنة الله والملئكة والناس اجمعين ولا يقبل الله منهم صرفا وعدلا.

অর্থ: “হযরত উয়াইমির ইবনে সায়িদাহ রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক আমাকে মনোনীত করেছেন এবং আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে মনোনীত করেছেন এবং উনাদের মধ্য থেকে আমার কার্য সম্পাদনকারী, খিদমতকারী ও বৈবাহিক সূত্রের আত্মীয়বর্গ নির্ধারণ করেছেন। অতএব যারা উনাদেরকে গালি দিবে বা দোষারোপ করবে, তাদের প্রতি আল্লাহ পাক, ফেরেশ্তা ও মানুষ সকলেরই লা’নত এবং তাদের কোন ফরয ও নফল ইবাদত আল্লাহ পাক কবুল করবেন না।” (তবারানী , হাকিম)

স্মরণযোগ্য যে, হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছাহাবী উনাদের মধ্যে একজন বিশেষ শ্রেণীর ছাহাবী যাকে ‘উলুল আ’যম বা জলীলুল ক্বদর ছাহাবী বলা হয়। তিনি ছিলেন আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন, কাতিবীনে ওহীর সদস্য, হাদীছ শরীফ-এর রাবী, ফক্বীহ ইত্যাদি মর্যাদার অধিকারী। উনার ইল্মের পূর্ণতা, হিদায়েতের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকা, উনার দ্বারা লোকদের হিদায়েত লাভ, কিতাব শিক্ষাদান এবং জাহান্নাম থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার ক্ষেত্রে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আল্লাহ পাক উনার নিকট দোয়া করেছেন।

হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে-

عن ام حرام رضى الله تعالى عنها انها سمعت النبى صلى الله عليه وسلم يقول اول جيش من امتى يغزون البحر قد اوجبوا.

অর্থ: “হযরত উম্মু হারাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার থেকে বর্ণিত। তিনি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলতে শুনেছেন, তিনি বলেন, আমার উম্মতের প্রথম যে দল সমুদ্রের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবে উনাদের জন্য জান্নাত ওয়াজিব।” (বুখারী শরীফ)

হযরত ইমাম তাবারী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ২৮ হিজরীতে সর্বপ্রথম সমুদ্র যুদ্ধের মাধ্যমে কাবরাসের উপর আক্রমণ করেন এবং কাবরাস তিনিই বিজয় করেন।”

হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনার মর্যাদা-মর্তবার মধ্যে অন্যতম মর্যাদা হলো, তিনি ছিলেন একজন আদিল বা ইনসাফগার খলীফা। উনার ন্যায় বিচার ও ইনসাফ সম্পর্কে কিতাবে উল্লেখ করা হয় যে, জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত ছাহাবী হযরত সা’দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, “আমার দৃষ্টিতে হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, এরপর হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার চেয়ে অধিক ন্যায় বিচারক কেউ নেই।”

এক ব্যক্তি হযরত মুয়াফা ইবনে ইমরান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে বললো, ন্যায় বিচারের দিক দিয়ে হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি-উনাদের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ? একথা শুনে তিনি রাগান্বিত হয়ে বললেন, “হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের প্রতি কোন প্রকার কিয়াস করা যাবে না। হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তো হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছাহাবী, কাতিবে ওহী ও আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ‘আমীন’ (আমানতদার)।”

আমীরুল মু’মিনীন ফিল হাদীছ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে জিজ্ঞাসা করা হলো যে, “হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু শ্রেষ্ঠ, না হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি শ্রেষ্ঠ?” তিনি বলেন, “আল্লাহ পাক উনার কছম! হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সাথে ঘোড়ায় চড়ে জিহাদে যেতেন, তখন ঘোড়ার নাকে যে ধুলোবালিগুলো প্রবেশ করতো, সে ধুলোবালিগুলোও হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকেও বহুগুণে শ্রেষ্ঠ।” (ফতওয়ায়ে হাদীছিয়াহ)

সুতরাং এত সব মর্যাদা ও মর্তবার পরও যারা হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে, উনাকে নাকিছ বলে গালি দেয়, তাদের জন্যে হযরত ইমাম শিহাবুদ্দীন খাফ্ফাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি-উনার কথাই অধিক প্রযোজ্য। তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে গালি দেয়, নাকিছ বলে, সমালোচনা করে, সে হাবিয়া দোযখের কুকুরসমূহের মধ্য হতে একটি কুকুর।”

উপরোক্ত সংক্ষিপ্ত আলোচনা থেকে স্পষ্ট প্রমাণিত হলো যে, হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু শুধু ছাহাবীই ছিলেন না, বরং উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন, জলীলুল ক্বদর ছাহাবী ও খলীফা ছিলেন। সুতরাং হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুসহ সকল ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম সম্পর্কে সাবধানে কথা বলতে হবে। মূলত উনাদের সকলের প্রতিই সুধারণা পোষণ করতে হবে, মুহব্বত করতে হবে এবং উনাদেরকে অনুসরণ-অনুকরণও করতে হবে।

কেননা উনারা হলেন দ্বীনের ইমাম এবং হাবীবে খোদা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদর্শের বাস্তব প্রতিফলন। এই জন্য উনারা যেভাবে ঈমানের স্বীকৃতি দিয়েছেন এবং আমলে যেভাবে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন, ঠিক সেভাবেই ঈমানের স্বীকৃতি দেয়া এবং আমলে নিয়োজিত হওয়া পরবর্তী উম্মতের দায়িত্ব-কর্তব্য।

এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে-

امنوا كما امن الناس

“তোমরা ঈমান আন যেভাবে অন্যান্য লোক  অর্থাৎ ছাহাবায়ে কিরাম ঈমান এনেছেন।” (সূরা বাক্বারা-১৩)

মহান আল্লাহ পাক হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম সম্পর্কে ইরশাদ করেন-

رضى الله عنهم ورضوا عنه

“অর্থ: আল্লাহ পাক উনাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং উনারাও আল্লাহ পাক-উনার প্রতি সন্তুষ্ট।” (সূরা তওবা-১০০)

তিনি আরো ইরশাদ করেন-

والذين اتبعوهم باحسان رضى الله عنهم

“আল্লাহ পাক ঐ সকল বান্দাগণের প্রতিও সন্তুষ্ট যারা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম উনাদেরকে উত্তমরূপে অনুসরণ করেন।” (সূরা তওবা-১০০)

হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে-

عن عمر بن الخظاب رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اصحابى كالنجوم فبايهم اقتديتم اهتديتم.

অর্থ: হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা তারকা সাদৃশ্য। উনাদের যে কাউকে তোমরা অনুসরণ করবে, তোমরা হিদায়েত প্রাপ্ত হবে।” (মিশকাত শরীফ)

অতএব, আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরাসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সন্তুষ্টি লাভ করতে চাইলে অবশ্যই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে অনুসরণ-অনুকরণ করতে হবে এবং উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা, সমালোচনা করা ও নাকিছ বলা হতে বিরত থাকতে হবে।

মুসাম্মত ঝুমকা আজমীন

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা

 

সুওয়াল: সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে ড. জাকির নায়েকের লেকচারের সিডি, ভিসিডি, বই ইত্যাদির প্রচার প্রসার বাসে, হকারদের মাধ্যমে, টিভিতে, অনলাইনে বিভিন্ন মাধ্যমে ব্যাপকভাবে বাড়ছে। সাথে সাথে তার লেকচারে মুগ্ধ হচ্ছে এমন বিভ্রান্ত মুসলমানদের সংখ্যাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এ প্রেক্ষিতে আমরা সুওয়ালের বিষয় হচ্ছে, ড. জাকির নায়েক সম্পর্কে শরীয়তের সঠিক ফায়ছালা জানিয়ে আমাদের ঈমান-আক্বীদা হিফাযত করবেন।

জাওয়াব: কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-

 يضل به كثيرا ويهدى به كثيرا وما يضل به الا الفاسقين

অর্থ: মহান আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফ-এর দ্বারা বহু লোককে গোমরাহ করেন এবং কুরআন শরীফ-এর দ্বারা বহু লোককে হিদায়েত দান করেন। আর আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফ-এর দ্বারা শুধুমাত্র ফাসিক-ফাজির লোকদেরকে গুমরাহ করে থাকেন।

অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি কাউকে গুমরাহ করেন না বরং যারা কুরআন শরীফ-এর যারা অবমাননা করবে, ইহানত করবে, অপব্যাখ্যা করবে, ইতায়াত বা অনুসরণ করবে না তারাই মূলত গুমরাহ বা পথভ্রষ্ট হবে। আর কুরআন শরীফ-এর যারা সম্মান-ইজ্জত করবে এবং হুকুম বা আদেশ-নিষেধ মেনে চলবে তারাই হিদায়েত লাভ করবে ও হিদায়েতের উপর ইস্তিক্বামত থাকবে।

কাজেই, সুওয়ালে উল্লেখিত ড. জাকির নায়েক ব্যক্তিটি যে চরম ফাসিক-ফাজির ও গোমরাহ তা কারো অজানা নয়। একটা গোমরাহ বা পথভ্রষ্ট ব্যক্তি পরিচয়ের জন্য যেসব নিদর্শন থাকা দরকার তা উক্ত ডক্টর ছাহেবের মধ্যে বহাল তবিয়তে রয়েছে। তাই তো হক্কানী উলামায়ে কিরাম তাকে জাকির নায়েকের পরিবর্তে কাফির নালায়েক বলে অভিহিত করে থাকেন।

কিতাবে একটি উদাহরণ পেশ করা হয়েছে-

القرينة تدل على تعيين المحذوف

বাহ্যিক লক্ষণের দ্বারা গোপন জিনিসেরও পরিচয় লাভ করা যায়। এর উদাহরণ হলো- কোথাও যদি ধোঁয়া দেখা যায় নিশ্চিত বোঝা যাবে যে, সেখানে আগুণ রয়েছে।

অতএব, কাফির নালায়েকের বুক চিড়ে দেখার দরকার নেই যে, সে গোমরাহ, পথভ্রষ্ট ও কাফির কিনা। বরং তার বাহ্যিক আক্বীদা, আমল-আখলাক্ব, বক্তব্য-লিখনী, সীরত-ছূরতই তার পরিচয়ের জন্য যথেষ্ট।

আবার কোন ব্যক্তি হক্ব অথবা নাহক্ব সেটা প্রমাণের জন্য তার সারা জীবনের আমল জানার প্রয়োজন পড়েনা। তার দু-একটি আমল দেখলেই বুঝা যায়। যেমন এক কেজি চালের ভাত হোক আর একশ কেজি চালের ভাত হোক সেটা হয়েছে কিনা তা জানার জন্য দু একটা ভাত দেখলেই হলো। তদ্রƒপ কাফির নালায়েক সে যে প্যান্ট, শার্ট, টাই পরিধান করে এবং ছবি, টিভি, বেপর্দা ইত্যাদি শরীয়ত বিরোধী আমলের সাথে জড়িত এতেই বুঝা যায় সে আসলেই চরম ফাসিক ও গোমরাহ। কেননা প্যান্ট, শার্ট, টাই এসব খ্রিস্টানদের পোশাক আর ছবি, টিভি, বেপর্দা এসবও খ্রিস্টানদেরই পথ্য- উপাত্ত।

কাজেই, খ্রিস্টানদের আদর্শ, মত ও পথ গ্রহণ করে কোন ব্যক্তি প্রকৃত মুসলমান দাবি করতে পারে না।

হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-

عن حضرت ابن عمر رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من تشبه بقوم فهو منهم.

অর্থ: হযরত ইবনে উমর ফারূক্ব রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, যে যে ক্বওম বা সম্প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্য রাখবে সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত অর্থাৎ তার হাশর-নশর সে সম্প্রদায়ের সাথেই হবে।

আরো ইরশাদ হয়েছে-

ليس منا من تشبه بغيرنا

অর্থ: নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, ঐ ব্যক্তি আমাদের অর্থাৎ মুসলমানের অন্তর্ভুক্ত নয় যে আমাদের ব্যতীত বেদ্বীন-বিজাতীয়দের সাথে (আক্বীদায়-আমলে-আখলাক্বে) সাদৃশ্য রাখে।

উল্লেখ্য, শরীয়তে ছবি, টিভি, বেপর্দা এ বিষয়গুলি কঠিন হারাম ও কবীরা গুনাহ এবং এ হারাম ও কবীরা গুনাহর সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদেরকে জাহান্নামী বলে ঘোষণা করা হয়েছে। যেমন হাদীছ এ ইরশাদ হয়েছে-

كل مصور فى النار

অর্থাৎ: ছবি তোলনেওয়ালা, তোলানেওয়ালা প্রত্যেক ব্যক্তিই জাহান্নামে প্রবেশ করবে। (মুসলিম শরীফ)

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে-

الديوث لا يدخل الجنة

অর্থাৎ: দাইয়ূছ বেহেশতে প্রবেশ করবে না। (নাসায়ী শরীফ)

দাইয়ূছ বলা হয় ঐ ব্যক্তিকে যে নিজে পর্দা করে না এবং তার অধীনস্থদেরকে পর্দা করায় না।

কাজেই, একজন ব্যক্তি পথভ্রষ্ট ও জাহান্নামী প্রমাণের জন্য ছবি ও বেপর্দা এ দু’টি শরীয়তবিরোধী আমলই তো যথেষ্ট।

আর যে নিজেই পথভ্রষ্ট ও জাহান্নামী সে আবার অপরকে হিদায়েত ও জান্নাতের পথ দেখাবে কি করে?

মূলত: যারা ফাসিক-ফাজির, হারাম-নাজায়িয কাজে মশগুল তারা ব্যতীত আর কেউই কাফির নালায়েককে সমর্থন করে না।

আরবী প্রবাদ রয়েছে-

الجنس يميل الى جنسه

অর্থা: সমজাতীয় সমজাতীয়দের দিকে ধাবিত হয়। অর্থাৎ কবুতর কবুতরের সাথে চলে এবং কাক কাকের সাথে চলে থাকে। কবুতর কখনো কাকের সাথে চলে না তদ্রƒপ কাকও কখনো কবুতরের সাথে চলে না।

কাজেই, কাফির নালায়েকের আক্বীদা আমল-আখলাক্ব, সীরাত-ছূরতের সাথে যাদের মিল রয়েছে তারাই তার লেকচারে মুগ্ধ হয়, তাকে ভাল বলে থাকে। এছাড়া কোন হক্কানী-রব্বানী আলিম, ওলীআল্লাহ, হাক্বীক্বী মু’মিন, মুত্তাক্বী ব্যক্তি তাকে ভাল বলেন না এবং কখনোই বলতে পারেন না।

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ