সুওয়াল-জাওয়াব

সংখ্যা: ২০৯তম সংখ্যা | বিভাগ:

খন্দকার সেলিম আহমদ

পাহাড় কাঞ্চনপুর, টাঙ্গাইল

সুওয়াল: হাটহাজারী মাদরাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা ফেব্রুয়ারী-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত-অক্টোবর ২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রদত্ত “মীলাদ-ক্বিয়াম” সম্পর্কিত বক্তব্যের সমালোচনা করতে গিয়ে এবং একই বিষয়ে এপ্রিল-২০০৫ ঈসায়ী ও মে-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় এছাড়াও মাসিক মদীনা পত্রিকা ফেব্রুয়ারী-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে একই ধরনের জাওয়াব দেয়া হয়েছে।

তাদের বক্তব্যগুলোর মধ্যে যে বিষয়গুলো আমার নিকট সন্দেহজনক তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো-

যেমন, মে-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে বলা হয়েছে, “বর্তমানে প্রচলিত মীলাদের মধ্যে এমন কিছু দিক বা ধারা রয়েছে যেগুলো শরীয়ত মনোনীত নয়।” …

এখন আমাদের সুওয়াল হলো, বর্তমানে প্রচলিত যে মীলাদ শরীফ দেখা যায়, সে সম্পর্কে তাদের উল্লিখিত বক্তব্য কতটুকু দলীলসম্মত? কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।

জাওয়াব: বর্তমানে প্রচলিত মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফ সম্পর্কে হাটহাজারী মাদরাসার অখ্যাত মাসিক পত্রিকার জিজ্ঞাসার সমাধানে এবং অপর একটি পত্রিকার প্রশ্নোত্তর বিভাগে যা বলা হয়েছে তা শুদ্ধ তো হয়ইনি, বরং সম্পূর্ণই মিথ্যা, ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন এবং অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদ ও ফক্বীহগণের সর্বজনমান্য ও স্বীকৃত বিশ্ব বিখ্যাত ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহের বক্তব্যের বিপরীত ও বিরুদ্ধ মত। যা ইতঃপূর্বে আমাদের “মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ”-এর অনেক সংখ্যায় খণ্ডন করে সঠিক ও দলীলভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হয়েছে। আর “মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ”-এর জাওয়াবকে খণ্ডন করা হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের পক্ষে আদৌ সম্ভব হয়নি, হবেও না ইনশাআল্লাহ।

এরপরেও হাটহাজারীর মৌলভী ছাহেব এবং তাদের সকল সমজাতীয়রা বারবার ‘মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফ’ সম্পর্কে বিনা তাহক্বীকে ও বিনা দলীলে উক্ত ভুলেরই পুনরাবৃত্তি করে যাচ্ছে।

 

(ধারাবাহিক)

যেমন, উল্লিখিত বক্তব্যের প্রথমেই তারা বলেছে, “বর্তমানে প্রচলিত মীলাদের মধ্যে এমন কিছু দিক বা ধারা রয়েছে যেগুলো শরীয়ত মনোনীত নয়।” …

এর জাওয়াবে বলতে হয় যে, কুরআন শরীফ-এর কোন আয়াত শরীফ-এ ‘বর্তমানে প্রচলিত মীলাদ শরীফ-এর মধ্যে কোন দিক বা কোন ধারাগুলোকে শরীয়ত মনোনীত নয়’ বলা হয়েছে এবং হাদীছ শরীফ-এর কোন হাদীছ শরীফ-এ ‘বর্তমানে প্রচলিত মীলাদ শরীফ-এর মধ্যে কোন দিক বা কোন ধারাগুলোকে শরীয়ত মনোনীত নয়’ বলা হয়েছে, তা হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবরা কুরআন শরীফ-এর আয়াত শরীফ, হাদীছ শরীফ-এর ইবারতসহ দলীল উল্লেখ করেনি। সুতরাং তাদের দলীলবিহীন, ইবারতবিহীন, মনগড়া ও মিথ্যা বক্তব্য মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।

নিম্নে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস এবং বুযুর্গদের আমল দ্বারা প্রমাণিত বিস্তারিত দলীল-আদিল্লাহ পেশ করা হলো-

স্মরণীয় যে, মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফ-এর মূল উদ্দেশ্য হলো আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা-ছিফত ও বিলাদত শরীফ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ছলাত-সালাম পাঠ করা।

যেমন- মীলাদ শরীফ-এর প্রথমেই কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা হয়। কেননা, কোনো নেক কাজ কুরআন শরীফ তিলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু করা রহমত, বরকত, সাকীনা তথা আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি লাভের কারণ। সেহেতু প্রথমেই পবিত্র কালামে পাক হতে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ফযীলত সম্বলিত আয়াত শরীফ তিলাওয়াত করা হয়। যাতে স্বয়ং আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারই মীলাদ বা ছানা-ছিফত বর্ণনা করা হয়েছে।

অতঃপর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার উপর ছলাত পাঠ করা হয়। কারণ ছলাত পাঠ করা আল্লাহ পাক ও উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনাদেরই নির্দেশ।

তাছাড়া আমরা যেভাবে মজলিস করে মীলাদ শরীফ-এর মাহফিল করে থাকি তা খোদ আল্লাহ পাক-উনার হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের যামানাতেই ছিল।

আর হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের থেকেও “মীলাদ শরীফ”-এর প্রমাণ রয়েছে। শুধু তাই নয়, হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা স্বয়ং নিজেরাই “মীলাদ শরীফ”-এর তাগিদ করেছেন ও ফযীলত বর্ণনা করেছেন।

এছাড়াও হযরত ইমাম-মুজতাহিদীন, ছলফে ছালিহীন, বুযুর্গানে দ্বীন রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের থেকেও ‘মীলাদ শরীফ’ এর প্রমাণ রয়েছে-

যেমন, এ প্রসঙ্গে বিশ্ব সমাদৃত ও সুপ্রসিদ্ধ ‘ওয়াসিল ফী শরহি শামায়িল’ কিতাবে বর্ণিত রয়েছে-

وقال سلطان العارفين الامام جلال الدين السيوطى قدس الله سره ونور ضريحه فى كتابه المسمى بالوسائل فى شرح الشمائل ما من بيت او مسجد اومحلة قرئ فيه مولد النبى صلى الله عليه وسلم الا حفت الملائكة ذلك البيت اوالمسجد اوالمحلة  وصلت الملائكة على أهل ذلك المكان وعمهم الله تعالى بالرحمة والرضوان وأما المطوقون بالنور يعنى جبرائيل وميكائيل واسرافيل وعزرائيل عليهم السلام فانهم يصلون على من كان سببا لقرائة مولد النبى صلى الله عليه وسلم.

অথ: “সুলত্বনুল আরিফীন হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সূয়ুতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার “ওসায়িল ফী শরহি শামায়িল” নামক কিতাবে বলেন, যে কোন ঘরে অথবা মসজিদে অথবা মহল্লায় মীলাদ শরীফ পাঠ করা হয়, তাহলে সে ঘরে অবশ্যই আল্লাহ পাক-উনার ফেরেশতাগণ বেষ্টন করে নেন। আর উনারা সে স্থানের অধিবাসীগণের উপর ছলাত-সালাম পাঠ করতে থাকেন। আর আল্লাহ পাক তাদেরকে স্বীয় রহমত ও সন্তুষ্টির আওতাভুক্ত করে নেন। আর নূর দ্বার সজ্জিত প্রধান চার ফেরেশ্তা, অর্থাৎ হযরত জিব্রাঈল, হযরত মীকাঈল, হযরত ইসরাফিল ও হযরত আযরাঈল আলাইহিমুস সালাম মীলাদ শরীফ পাঠকারীর উপর ছলাত-সালাম পাঠ করেন।” সুবহানাল্লাহ!

قال معروف الكرخى قدس الله سره من هيا طعاما لاجل قراءة  مولد النبى صلى الله عليه وسلم وجمع  اخوانا واوقد سراجا ولبس جديدا وتبخر وتعطر تعظيما لمولد النبى صلى الله  عليه وسلم حشره  الله يوم القيامة مع الفرقة الاولى من النبين وكان فى اعلى عليين.

অর্থ: “হযরত ইমাম মা’রুফ কারখী কাদ্দাসাল্লাহু সিররাহু রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, যে ব্যক্তি নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মীলাদ শরীফ পাঠের কারণে খাদ্য প্রস্তুত করবে এবং নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মীলাদ শরীফ-এর সম্মানার্থে মুসলমান ভাইদেরকে একত্রিত করবে, প্রদীপ বা বাতি জ্বালাবে, নতুন পোশাক পরিধান করবে, (সুগন্ধির উদ্দেশ্যে) ধূপ জ্বালাবে আতর-গোলাপ মাখবে, ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ পাক তার হাশর-নশর করবেন নবী-রসূল আলাইহিস সালামগণ উনাদের প্রথম দলের সাথে এবং সে সুউচ্চ ইল্লীনে অবস্থান করবে।” সুবহানাল্লাহ!

উপরোক্ত কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের আলোচনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, আল্লাহ পাক উনি স্বয়ং নিজেই কুরআন শরীফ-এ উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা ছিফত করেছেন। আর আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি হাদীছ শরীফ-এ স্বয়ং নিজেই নিজের ছানা ছিফত করেছেন। শুধুমাত্র এতটুকুই নয় বরং স্বয়ং আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি নিজেই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের দ্বারা করিয়েছেন এবং ইজমা, ক্বিয়াসে তথা ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহতেও এর বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে।

আর মীলাদ শরীফ-এর আলোচ্য বিষয়ই হচ্ছে আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা-ছিফত করা। তাহলে কি করে একথা বলা যেতে পারে যে, সমাজে বহুল প্রচলিত যে মীলাদ দেখা যায়, তা সম্পূর্ণ কুরআন সুন্নাহর খিলাফ যা কোন দিন ভালো কাজ হতে পারে না।”

প্রকৃতপক্ষে তাদের এ বক্তব্য দ্বারা তারা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসকেই অস্বীকার করেছে। যার ফলে তারা ঈমান ও ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে গেছে। কারণ, আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ঈমান না আনা পর্যন্ত শুধুমাত্র তাওহীদের উপর ঈমান আনলেও ক্বিয়ামত পর্যন্ত কোন ব্যক্তির পক্ষে ঈমানদার হওয়া সম্ভব নয় বা কোন ব্যক্তি ঈমানদার হতে পারবে না। (চলবে)

মুহম্মদ ইয়াকুব আলী

পলাশ, নরসিংদী

সুওয়াল:   কুরবানী কার উপর ওয়াজিব?

জাওয়াব:  যিলহজ্জ মাসের দশ, এগার, বার অর্থাৎ দশ তারিখের সুবহে সাদিক হতে বার তারিখের সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত সময়ের মধ্যে যদি কেউ মালিকে নিসাব হয় অর্থাৎ হাওয়ায়িজে আছলিয়াহ (নিত্য প্রয়োজনীয় ধন-সম্পদ) বাদ দিয়ে সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রৌপ্য বা তার সমপরিমাণ মূল্যের মালিক হয়, তাহলে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব। উল্লেখ্য যে, যদি কারো নিকট প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ থাকে এবং তা যদি নিসাব পরিমাণ হয়, যেমন- কারো পাঁচটি ঘর আছে, একটির মধ্যে সে থাকে আর তিনটির ভাড়া দিয়ে সে সংসার চালায় আর একটি অতিরিক্ত, যার মূল্য নিসাব পরিমাণ। এ ক্ষেত্রে তার উপরে কুরবানী ওয়াজিব হবে। {দলীলসমূহ: (১) আলমগীরী, (২) শামী, (৩) আইনুল হিদায়া, (৪) ফতহুল কাদীর, (৫) গায়াতুল আওতার, (৬) শরহে বিকায়া, (৭) বাহর, (৮) দুররুল মুখতার, (৯) কাজীখান, (১০) ইনায়া ইত্যাদি।}

মুহম্মদ গোলাম রব্বানী, রাজশাহী।

সুওয়াল: ওয়াজিব ও নফল কুরবানী, ওলীমা ও  আক্বীকা এক সাথে করা জায়িয হবে কিনা? জাওয়াব:   হ্যাঁ, জায়িয হবে।  {দলীল: শামী, আলমগীরী ইত্যাদি।}

মুহম্মদ মিজানুর রহমান, চাঁদপুর।

সুওয়াল: আইয়ামে নহর বা কুরবানীর দিনে কুরবানীর পশু কুরবানী করার পূর্বে অথবা কুরবানী করার সময়ে হাঁস, মুরগি, কবুতর ইত্যাদি যবেহ করা জায়িয আছে কি? জাওয়াব: মুসলমানদের আইয়ামে নহর বা কুরবানীর দিনে যারা মজুসী বা অগ্নি উপাসক তারা তাদের ধর্মীয় বিধান মুতাবিক হাঁস-মুরগি ইত্যাদি যবেহ করে থাকে। এখন যদি কোন মুসলমান তাদের সাথে মুশাবাহ বা সাদৃশ্য রেখে কুরবানীর দিন হাঁস-মুরগি ইত্যাদি যবেহ করে, তাহলে সেটা কাট্টা কুফরী হবে। কারণ আল্লাহ পাক-উনার রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন-

من تشبه بقوم فهو منهم.

অর্থ: “যে, যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত।”

আর যদি কোন মুসলমান সাধারণভাবে উক্ত সময়ে হাঁস-মুরগি ইত্যাদি যবেহ করে, তাহলে সেটা মাকরূহ তাহরীমী হবে, যেহেতু এটাও মুশাবাহ হয়ে যায়।

আর যদি কোন মুসলমান খুব জরুরতে হাঁস-মুরগি ইত্যাদি যবেহ করে, তাহলে সেটাও মাকরূহ্ তানযিহী হবে। আর এমন কোন মুসলমান, যার উপর কুরবানী ওয়াজিব অথবা ওয়াজিব নয়, তারা যদি কুরবানীর দিন হাঁস, মুরগি ইত্যাদি খেতে চায়, তাহলে তারা যেন ছুবহি ছাদিকের পূর্বেই সেটা যবেহ করে, কেটে, পাক করে রেখে দেয় অথবা শুধু যবেহ করে, কেটে রেখে দিবে পরে পাক করলেও চলবে। (এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ৪৪, ৭০, ৭৯, ১০৭তম সংখ্যাগুলি পাঠ করুন।) {দলীলসমূহ: শামী, আলমগীরী, ফতহুল ক্বাদীর, শরহে হিদায়া ইত্যাদি।}

মুসাম্মত সালমা খাতুন,

মুসাম্মত পান্না আক্তার, রংপুর

সুওয়াল:  হালাল পশুর কোন কোন অংশ খাওয়া নিষিদ্ধ?

জাওয়াব:  কুরবানী বা হালাল পশুর ৮টি জিনিস খাওয়া যাবেনা। (১) দমে মাছফুহা বা প্রবাহিত রক্ত হারাম, (২) অ-কোষ, (৩) মূত্রনালী, (৪) পিত্ত, (৫) লিঙ্গ, (৬) গুহ্যদ্বার, (৭) গদুদ বা গুটলী মাকরূহ তাহরীমী, (৮) শিরদাড়ার ভিতরের মগজ, এটা কেউ মাকরূহ তাহরীমী, আবার কেউ মাকরূহ তানযিহী বলেছেন। {দলীলসমূহ: শামী, মাতালেবুল মু’মিনীন, উমদাতুল কালাম, কিতাব- শাইখুল ইসলাম ইত্যাদি।

মুহম্মদ সিরাজুল ইসলাম, কক্সবাজার।

সুওয়াল: কুরবানীর পশু যবেহ করার পূর্বে চামড়া বিক্রি করা জায়িয আছে কি? জাওয়াব:  কুরবানীর পশু অথবা অন্য যে কোন হালাল পশুই হোক, তা যবেহ করার পূর্বে চামড়া বিক্রি করা জায়িয নেই। এমনিভাবে বাঁটে দুধ থাকতে, ঝিনুকে মুক্তা থাকতে, মেষের পিঠে লোম থাকতে, সে দুধ, মুক্তা, লোম বিক্রি করা নাজায়িয। (ফতওয়ায়ে শামী)

মুহম্মদ শহীদুল ইসলাম, পুরানবাজার, চাঁদপুর।

সুওয়াল:  কুরবানীর কিছুদিন আগে নাকি হাত ও পায়ের নখ কাটা, মোছ ছাঁটা এবং মাথার চুল ইত্যাদি কাটা যায় না? কুরবানী করার পর কাটতে হয়! কথাটা কতটুকু সত্য? বিস্তারিত জানাবেন। জাওয়াব: হ্যাঁ, যারা কুরবানী দেয়ার নিয়ত রাখেন, তাদের পক্ষে যিলহজ্জের চাঁদ উঠার পর থেকে এই চাঁদের দশ তারিখ কুরবানী করা পর্যন্ত মাথার চুল হাতের ও পায়ের নখ ইত্যাদি না কাটা মুস্তাহাব। যেমন হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-

عن ام المؤمنين حضرت ام سلمة عليها السلام قالت قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من راى هلال ذى الحجة واراد ان يضحى فلا ياخذ من شعره ولا من اظفاره.

অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মে সালমা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি যিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখলো এবং কুরবানী করার নিয়ত করলো, সে যেন (কুরবানী না করা পর্যন্ত) তার শরীরের চুল, নখ ইত্যাদি না কাটে।” (মুসলিম শরীফ)

মূলত ছহীহ ও গ্রহণযোগ্য মত হলো এই যে, যারা কুরবানী করবে এবং যারা কুরবানী করবে না, তাদের উভয়ের জন্যই উক্ত আমল মুস্তাহাব ও ফযীলতের কারণ। আর এ ব্যাপারে দলীল হলো এ হাদীছ শরীফ-

যেমন হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত আছে-

عن عبد الله بن عمرو رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم امرت بيوم الاضحى عيدا جعله الله لـهذه الامة قال له رجل يا رسول الله صلى الله عليه وسلم ارايت ان لم اجد الا منيحة انثى افاضحى بـها قال لا ولكن خذ من شعرك واظفارك وتقص شاربك وتحلق عانتك فذلك تمام اضحيتك عند الله.

অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, আল্লাহ পাক উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “আমি কুরবানীর দিনকে ঈদের দিন হিসেবে নির্ধারণ করার জন্য আদিষ্ট হয়েছি। আল্লাহ পাক তিনি উক্ত দিনটিকে এই উম্মতের জন্য ঈদ হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। এক ব্যক্তি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহ পাক-উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি যদি একটি মাদী মানীহা (উটনী) ব্যতীত অন্য কোন পশু কুরবানীর জন্য না পাই, তাহলে আপনি কি (আমাকে) অনুমতি দিবেন যে, আমি উক্ত মাদী মানীহাকেই কুরবানী করবো। জবাবে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, না। আপনি উক্ত পশুটিকে কুরবানী করবেন না। বরং আপনি কুরবানীর দিনে আপনার (মাথার) চুল ও হাত-পায়ের নখ কাটবেন। আপনার গোঁফ খাট করবেন এবং আপনার নাভির নিচের চুল কাটবেন, এটাই আল্লাহ পাক উনার নিকট আপনার পূর্ণ কুরবানী অর্থাৎ এর দ্বারা আপনি আল্লাহ পাক উনার নিকট কুরবানীর পূর্ণ ছওয়াব পাবেন।” (আবু দাউদ শরীফ)

উক্ত হাদীছ শরীফ-এর ব্যাখ্যায় উল্লেখ আছে যে, যারা কুরবানী করবে না, তাদের জন্যও যিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখার পর থেকে কুরবানী করার আগ পর্যন্ত নিজ শরীরের চুল, নখ ইত্যাদি না কাটা মুস্তাহাব। আর যে ব্যক্তি তা কাটা থেকে বিরত থাকবে, সে একটি কুরবানীর ছওয়াব পাবে। {দলীলসমূহ: নাসায়ী, মিশকাত, শরহে নববী, বজলুল মাযহুদ, মিরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত ত্বীবী, তা’লীকুছ ছবীহ, মুযাহেরে হক্ব ইত্যাদি।}

মুহম্মদ হুমায়ুন কবীর হুসাইন, বরিশাল

সুওয়াল: অনেকে বলে থাকে, সন্তানের নামে যে পশু আক্বীকা দেয়া হয়, তার গোশত পিতা-মাতা খেতে পারবে না, এটা শরীয়তসম্মত কি না? জানালে খুশি হবো।

জাওয়াব: যারা বলে, সন্তানের নামে যে পশু আক্বীকা দেয়া হয় তার গোশত পিতা-মাতা খেতে পারবে না তাদের সে কথা শরীয়ত সম্মত নয়। শরীয়তের মাসয়ালা হলো, আক্বীকার পশুর গোশতের হুকুম কুরবানীর পশুর গোশতের হুকুমের মতো। কাজেই, সন্তানের নামে যে পশু আক্বীকা দেয়া হবে তার গোশত পিতা-মাতাসহ সকলেই খেতে পারবে। এটাই শরীয়তসম্মত মাসয়ালা বা ফতওয়া। (সমূহ ফিক্বাহর কিতাব)

মুহম্মদ রফিকুল ইসলাম, সদর, চাঁদপুর

সুওয়াল: ধর্মব্যবসায়ীদের মাদরাসাতে তথা সন্ত্রাসী তৈরিকারী মাদরাসাগুলোতে কুরবানীর চামড়া দেয়া জায়িয হবে কি?

জাওয়াব: ধর্মব্যবসায়ীদের মাদরাসাতে তথা সন্ত্রাসী তৈরিকারী মাদরাসাগুলোতে কুরবানীর চামড়া দেয়া জায়িয হবে না। কুরবানীর চামড়া দেয়ার উত্তম স্থান হলো ‘মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ’।

কুরবানী প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-

فصل لربك وانحر

অর্থ: “আপনার রব উনার উদ্দেশ্যে নামায আদায় করুন এবং কুরবানী করুন।” (সূরা কাওছার: আয়াত শরীফ ২)

আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ করেন-

لكل امة جعلنا منسكا هم ناسكوه فلا ينازعنك فى الامر

অর্থ: “প্রত্যেক উম্মতের জন্য আমি যবেহের বিধান দিয়েছিলাম যা তারা অনুসরণ করে। সুতরাং আপনার সাথে এ ব্যাপারে বিতর্কে প্রবৃত্ত হওয়া তাদের উচিত নয়।” (সূরা হজ্জ : আয়াত শরীফ ৬৭)

কুরবানী একটি ঐতিহ্যবাহী শরয়ী বিধান ও ইসলামী কাজ। যা উম্মতে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য ওয়াজিব। কাজেই কুরবানী দেয়ার সাথে সাথে কুরবানীর চামড়া সঠিক স্থানে দেয়াও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

উল্লেখ্য, কুরআন শরীফ-এ সবস্থানে আল্লাহ পাক তিনি আগে ‘ঈমান’ আনার কথা বলেছেন পরে ‘আমলের’ কথা বলেছেন।

এক খোদা তায়ালা উনাকে প্রায় সবাই মানে কিন্তু হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে না মানার কারণেই অর্থাৎ আক্বীদার পার্থক্যের কারণেই পৃথিবীতে মুসলমান ব্যতীত হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ইত্যাদি হাজারো বিধর্মী তথা কাফিরের দল রয়েছে। কুরআন শরীফ-এর ভাষায় তারা সবাই জাহান্নামী যদি তওবা-ইস্তিগফার করে ঈমান না আনে।

স্মরণীয় যে, শুধু কাফির সম্প্রদায়ই নয়, মুসলমান নামধারী অনেক মাওলানা, মুফতী, মুহাদ্দিছ, মুফাসসির, শাইখুল হাদীছ, ইমাম, খতীব তথা অনেক ইসলামী দলও রয়েছে যাদের মূলত আল্লাহ পাক-উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে আক্বীদা খারাপ রয়েছে। কাজেই তারা মুসলমান নামধারী হলেও তারা মুসলমানের অন্তর্ভুক্ত নয়। তারা ইসলামী দল নামধারী হলেও আসলে তারা ইসলামী দলের অন্তর্ভুক্ত নয়।

উল্লেখ্য, ইসলামে মৌলবাদ, সন্ত্রাসবাদ হারাম। ইসলামের নামে ব্যবসা করা হারাম। ইসলামের নামে গণতান্ত্রিক দল করা হারাম। ইসলামের নামে নির্বাচন করা হারাম। ইসলামের নামে ভোট চাওয়া হারাম।

আরো উল্লেখ্য, বর্তমানে অধিকাংশ মাদরাসাগুলোই হচ্ছে জামাতী, ওহাবী, খারিজী মতাদর্শের তথা সন্ত্রাসী তৈরির সূতিকাগার। ইসলামের দোহাই দিয়ে, ইসলামের নামে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক স্বার্থ ও প্রতিপত্তি হাছিলের প্রকল্প। ইসলামের নামে নির্বাচন করার ও ভোটের রাজনীতি করার পাঠশালা- যা ইসলামে সম্পূর্ণ হারাম।

কাজেই, কুরবানীর চামড়া কোথায় দেয়া হচ্ছে তা দেখে দিতে হবে। জামাতী, খারিজী, ওহাবী, সন্ত্রাসী ও মৌলবাদী তথা ধর্মব্যবসায়ীদের মাদরাসাতে কুরবানীর চামড়া দেয়া কস্মিনকালেও জায়িয হবে না।

জামাতী, ওহাবী তথা সন্ত্রাসীদের মাদরাসায় কুরবানীর চামড়া দিলে তাতে বদ আক্বীদা ও বদ আমলের প্রচারে সহায়তা করা হবে। সন্ত্রাসী-জামাতী ও ধর্মব্যবসায়ী তৈরিতে সাহায্য করা হবে। তাতে লক্ষ-কোটি কবীরা গুনাহে গুনাহগার হতে হবে।

মূলত ধর্মব্যবসায়ীদের মাদরাসায় কুরবানীর চামড়া, যাকাত-ফিতরা ইত্যাদি দান-ছদকা না দেয়া আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ। আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার নির্দেশ তথা সন্তুষ্টির কারণ।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফ-এ নির্দেশ করেন-

تعاونوا على البر والتقوى ولا تعاونوا على الاثم والعدوان واتقوا الله ان الله شديد العقاب.

অর্থ: “তোমরা নেক কাজে ও পরহেযগারীতে পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য করো। বদ কাজে ও শত্রুতার মধ্যে পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য করো না। আর এ বিষয়ে আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক তিনি কঠিন শাস্তিদাতা।” (সূরা মায়িদা : আয়াত শরীফ ২)

আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন-

عن جرير رضى الله تعالى عنه قال قال النبى صلى الله عليه وسلم من سن فى الاسلام سنة سيئة كان عليها وزرها و وزر من عمل بها من بعده.

অর্থ: “হযরত জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, যে কেউ একটা বদ কাজের সূচনা করলো যতজন তাতে শরীক হলো তাদের সবার গুনাহই যে বদকাজের সূচনা করেছে তার উপর গিয়ে পড়বে।” (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)

পত্রিকার রিপোর্টে পাওয়া যায়, জামাতী-খারিজীরা তাদের নিয়ন্ত্রিত মাদরাসায় সংগৃহীত যাকাত, ফিতরা, কুরবানীর চামড়ার মাধ্যমে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা আয় করে। যা মূলত তাদের বদ আক্বীদা ও বদ আমল তথা ধর্মব্যবসার কাজেই ব্যয়িত হয়।

অনুরূপভাবে এমন কোন জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনকেও কুরবানীর চামড়া দেয়া জায়িয হবে না যারা তা আমভাবে খরচ করে থাকে। যেমন রাস্তা-ঘাট, পানির ব্যবস্থা, বেওয়ারিশ লাশ দাফন করার কাজে। অথচ কুরবানীর চামড়া গরিব মিসকীনদের হক্ব। তা গরিব মিসকিনদের মালিক করে দিতে হবে।

আফদ্বালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি যাকাতের একটি রশির জন্যও জিহাদ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। কাজেই, যাকাতের একটি রশির মতোই কুরবানীর একটি চামড়াও যাতে ভুল উদ্দেশ্যে ও ভুল পথে পরিচালিত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, “কুরবানীর রক্ত ও গোশত কিছুই আল্লাহ পাক-উনার দরবারে পৌঁছায় না। পৌঁছায় তোমাদের বিশুদ্ধ নিয়ত।” কাজেই বিশুদ্ধ নিয়তে কুরবানীর চামড়া ঠিক জায়গায় দিতে হবে। অনেকে পাড়ার মাস্তান, গু-া-পা-া, ছিনতাইকারী ও হিরোইনখোরদের হাতে রাখার উদ্দেশ্যে তাদেরকে কম দামে কুরবানীর চামড়া দেয়। এতে কিন্তু নিয়ত বিশুদ্ধ হবে না এবং কুরবানীও শুদ্ধভাবে আদায় হবে না।

তাই বর্তমান হিজরী শতাব্দীর মুজাদ্দিদ, যামানার মুজতাহিদ ও ইমাম, ইমামুল আইম্মাহ, মুহইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, হুজ্জাতুল ইসলাম, সাইয়্যিদুল আওলিয়া, আওলাদে রসূল, মুজাদ্দিদে আ’যম ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি বলেন, বর্তমানে হক্ব মত-পথ ও সুন্নতী আমলের একমাত্র ও উৎকৃষ্ট উদাহরণ হলো, ‘মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ মাদরাসা ও ইয়াতীমখানা’।

কাজেই, যাকাত-ফিতরা বা কুরবানীর চামড়া দিয়ে যারা ছদকায়ে জারীয়ার ছওয়াব হাছিল করতে চায় তাঁদের জন্য একমাত্র ও প্রকৃত স্থান হলো ‘মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ মাদরাসা ও ইয়াতীমখানা’ ৫ নং আউটার সার্কুলার রোড, রাজারবাগ শরীফ, ঢাকা।

মুহম্মদ তাজুর রহমান রনি

ভোলাহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

সুওয়াল: কুরবানী করার সুন্নতী পদ্ধতি এবং নিয়ত জানালে খুশি হবো। জাওয়াব:  কুরবানীর পশুর মাথা দক্ষিণ দিকে এবং পা পশ্চিম দিকে রেখে অর্থাৎ ক্বিবলামুখী করে শোয়ায়ে পূর্ব দিক থেকে চেপে ধরতে হবে, তারপর কুরবানী করতে হবে। আর  কুরবানী করার সময় খেয়াল রাখতে হবে যে, সীনার উপরিভাগ এবং কণ্ঠনালীর মাঝামাঝি স্থানে যেন যবেহ করা হয়। আরো উল্লেখ্য যে, গলাতে চারটি রগ রয়েছে, তন্মধ্যে গলার সম্মুখভাগে দুটি- খাদ্যনালী ও শ্বাসনালী এবং দু’পার্শ্বে দুটি রক্তনালী। এ চারটির মধ্যে খাদ্যনালী, শ্বাসনালী এবং দুটি রক্তনালীর মধ্যে একটি অবশ্যই কাটতে হবে। অর্থাৎ চারটি রগ বা নালীর মধ্যে তিনটি অবশ্যই কাটতে হবে, অন্যথায় কুরবানী হবেনা। যদি সম্ভব হয়, তবে ছুরি চালানোর সময় বিজোড় সংখ্যার প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে।

কুরবানীর নিয়ত: (যবেহ করার পূর্বে)

انى وجهت وجهى للذى فطر السموت والارض حنيفا وما انا من المشركين ان صلاتى ونسكى ومحياى ومماتى لله رب العلمين لا شريك له وبذلك امرت وانا من المسلمين. اللهم منك ولك.

উচ্চারণ: ইন্নী ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাজি ফাত্বারাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানিফাও ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকীন। ইন্না ছলাতী ওয়া নুসুকী ওয়া মাহ্ইয়া ইয়া ওয়া মামাতী লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন। লা শারীকালাহু ওয়া বি যালিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমীন। আল্লাহুম্মা মিনকা ওয়া লাকা। এ দোয়া  পড়ে بسم الله الله اكبر ‘বিস্মিল্লাহি আল্লাহু আকবর’ বলে যবেহ করতে হবে।

যবেহ করার পর এ দোয়া পড়বে-

اللهم تقبله منى كما تقبلت من حبيبك سيدنا رسول الله صلى الله عليه وسلم وخليلك سيدنا حضرت ابراهيم عليه السلام

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা তাক্বাব্বালহু মিন্নী কামা তাক্বাব্বালতা মিন হাবীবিকা সাইয়্যিদিনা রাসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও খালীলিকা হযরত ইবরাহীমা আলাইহিস সালাম।

যদি নিজের কুরবানী হয়, তবে منى (মিন্নী) বলতে হবে। আর যদি  অন্যের  কুরবানী হয়, তবে  من (মিন) শব্দের পর যার বা যাদের কুরবানী, তার বা তাদের নাম উল্লেখ করতে হবে। আর যদি অন্যের সাথে শরীক হয়, তাহলে منى (মিন্নী)ও বলবে, অতঃপর من (মিন) বলে অন্যদের নাম বলতে হবে। কেউ যদি উপরোক্ত নিয়ত না জানে, তাহলে যবেহ করার সময় শুধু বিস্মিল্লাহি আল্লাহু আকবর বলে কুরবানী করলেও শুদ্ধ হয়ে যাবে। কারণ নিয়ত অন্তরের সাথে সম্পর্কযুক্ত। তবে অবশ্যই প্রত্যেক যবেহকারীর উচিত উপরোক্ত নিয়ত শিক্ষা করা। কেননা উপরোক্ত নিয়ত পাঠ করে কুরবানী করা সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত।

{দলীলসমূহ: আহমদ, আবূ দাউদ, তিরমিযী, দারিমী ইবনে মাযাহ, বজলূল মযহুদ, মিশকাত, মিরকাত, মুযাহেরে হক্ব, লুমায়াত, ত্বীবী, তালিকুছ ছবীহ, আশয়াতুল লুমায়াত, আলমগীরী, শামী, দুররুল মুখতার, আইনুল হিদায়া ও বাহর ইত্যাদি।}

মুহম্মদ মুফিজুর রহমান, চাঁদপুর

 সুওয়াল:  যাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব হয়নি, এমন দুই বা ততোধিক ব্যক্তি এক নামে কুরবানী দিয়ে গোশত বণ্টন করে নিতে পারবে কিনা? জাওয়াব:  হ্যাঁ, যাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব হয়নি, এমন দুই বা ততোধিক ব্যক্তি কুরবানী দিয়ে গোশত বন্টন করে নিতে পারবে। তবে কুরবানীর পশু গরু, মহিষ ও উটে সাত নাম এবং দুম্বা, মেষ  বা ভেড়া, বকরী, খাসিতে এক নাম দেয়ার হুকুম রয়েছে।

গরু, মহিষ, উটে সাত নামের বেশি দিলে কুরবানী দুরুস্ত হবেনা। আর সাত নামের কমে কুরবানী করলে দুরুস্ত হবে। আর ছাগল, দুম্বা, ভেড়া এক নামের বেশি নামে কুরবানী করলে কারো কুরবানী দুরুস্ত হবেনা।

যেমন- যদি ৪০ জন ব্যক্তি ৫০০ টাকা করে ২০,০০০ টাকা দিয়ে একটা গরু কিনে সাত নামে বা তার থেকে কম নামে কুরবানী করে গোশত বণ্টন করে নেয়, তাতেও কুরবানী শুদ্ধ হবে।

তদ্রƒপ একটা খাসি তিনজনে মিলে পয়সা দিয়ে খরিদ করে, যদি এক নামে কুরবানী করে গোশত বণ্টন করে নেয়, তবে সে কুরবানীও শুদ্ধ হবে।

এখন প্রশ্ন হলো- যারা সম্মিলিতভাবে টাকা দিয়ে কুরবানী করতে চায়, তারা কার নামে কুরবানী করবে?

এর জাওয়াব হচ্ছে- এরূপ কুরবানীর ক্ষেত্রে প্রত্যেকেই যেহেতু নিজস্ব নামে কুরবানী করতে চাইবে, কুরবানীর ফযীলত হাছিলের জন্য। আর গরু, মহিষ ও উটে সাত নামের বেশি এবং ছাগল, ভেড়া ও দুম্বাতে এক নামের বেশি দেয়া যায় না। কার নাম দিবে বা কার নাম বাদ দিবে, এ নিয়ে ঝগড়া-ফ্যাসাদ ও মনোমালিন্যের সৃষ্টি হবে। এছাড়াও যদি কারো নামে দেয়া হয়, অন্য কেউ  প্রকাশ্যে আপত্তি না করে কিন্তু অন্তরে সম্মতি না থাকে তাহলে কুরবানী শুদ্ধ হবেনা। কারণ একজনের টাকা দিয়ে অন্যজনের নামে কুরবানী করলে কুরবানী শুদ্ধ হবেনা। টাকাওয়ালার সম্মতি ব্যতীত। এজন্য উত্তম ও আদব হচ্ছে- এক নাম দিলে আল্লাহ পাক-উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার নাম মুবারকে দেয়া। এরপর অন্য কারো নাম দিলে যাদের মাধ্যমে কুরবানীর বিধান চালু হয়ে আসছে, যেমন- হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম, হযরত ইসমাইল আলাইহিস সালাম, হযরত হাজেরা আলাইহাস সালাম উনাদের নাম মুবারক-এ কুরবানী দেয়া উত্তম। আরো বেশি নামে কুরবানী দিলে হযরত আম্বিয়া আলাইহিস্ সালাম, হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম, হযরত আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের নাম মুবারক-এও কুরবানী করা যেতে পারে। {দলীলসমূহ: শামী, আলমগীরি, ফতহুল ক্বাদীর, কাজীখান ইত্যাদি।}

মুহম্মদ মিজানুর রহমান

বাবুরহাট, চাঁদপুর

সুওয়াল: কোন ব্যক্তির উপর কুরবানী ওয়াজিব। সে তার নিজের নামে কুরবানী না দিয়ে মৃত বা জীবিত পিতা-মাতার নামে কুরবানী দিলে তার নিজের কুরবানী আদায় হবে কিনা?

জাওয়াব: আমাদের হানাফী মাযহাব মতে মালিকে নিছাব প্রত্যেকের উপর আলাদাভাবে কুরবানী করা ওয়াজিব। যার উপর কুরবানী ওয়াজিব তার পক্ষ থেকেই কুরবানী করতে হবে। যার উপর কুরবানী ওয়াজিব সে তার নামে কুরবানী না করে মৃত বা জীবিত অপরের নামে কুরবানী করলে ওয়াজিব তরকের কারণে সে কঠিন গুনাহে গুনাহগার হবে। যদিও বাবা মা উনাদের নামে কুরবানী করে। যাদের প্রতি কুরবানী ওয়াজিব নয়। (দলীলসমূহ: সমূহ হাদীছ শরীফ, তাফসীর শরীফ ও ফিক্বাহর কিতাব দ্রষ্টব্য)

বিঃ দ্রঃ এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত ১৫৩তম সংখ্যার সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ পাঠ করুন।

মুহম্মদ সারোয়ার হুসাইন, বরিশাল।

 সুওয়াল:  কুরবানীর পশুর চামড়া বিক্রি করে সে টাকা মসজিদ কিংবা ঈদগাহের ইমামকে দেয়া জায়িয হবে কিনা? জাওয়াব:  মসজিদ ও ঈদগাহে ইমামতি করা বাবদ উক্ত টাকা ইমাম ছাহেবকে দেয়া জায়িয হবেনা। অবশ্য ইমাম ছাহেব যদি ফিতরা ও কুরবানীর ছাহিবে নিছাব না হন, তাহলে দান হিসেবে উক্ত টাকা নিতে পারেন। কিন্তু ছাহিবে নিছাব হলে, তা নিতে পারবেন না। আর চামড়া বিক্রয় না করে পুরো চামড়াটিই যদি ইমাম ছাহেবকে হাদিয়া হিসেবে দেয়া হয়, তবে ইমাম ধনী হলেও তা নিতে পারবেন। তবে চামড়া বিক্রি করলে তার মূল্য গরীব-মিসকীনদেরকে দিয়ে দিতে হবে। (সমূহ ফিক্বাহের কিতাব)

মুহম্মদ নূরুর রহমান (সিয়াম), কুড়িগ্রাম।

সুওয়াল:  বর্তমান সময়ে কোনো ব্যক্তি যদি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক-এ ছাগল, বকরী, ভেড়া, দুম্বা ইত্যাদি কুরবানী দেয় অথবা গরু, মহিষ, উটের সাত নামের মধ্যে যদি এক নাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারকে দেয়, তবে উক্ত নাম মুবারক-এর গোশতের হুকুম কী? এটা কি সকলে খেতে পারবে? অথবা এ গোশত অছিয়তকৃত গোশতের হুকুমের অন্তর্ভুুক্ত হবে কি-না?

জাওয়াব:  হ্যাঁ, উক্ত কুরবানীকৃত গোশত সকলে খেতে পারবে। আর এটা অছিয়তকৃত গোশতের হুকুমের অন্তর্ভুক্ত হবে না। কেননা হাদীছ শরীফ-এ আছে, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে বিশেষভাবে কুরবানী করার জন্য যে নির্দেশ দিয়েছেন এটা উনার জন্যই খাছ।

বর্তমান সময়ে কোনো ব্যক্তি যদি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তরফ থেকে কুরবানী দেয়, তবে এটা তার ফযীলত, তথা বারাকাত, ফুয়ুজাত, নিয়ামত, রহমত, মাগফিরাত, নাজাত সর্বোপরি মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি লাভ করা ও তার কুরবানী কবুল হওয়ার একটি উসীলা হবে।

কাজেই মহান আল্লাহ্ পাক উনার রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তরফ থেকে যদি কেউ কুরবানী দেয়, তবে উক্ত কুরবানীকৃত গোশত সকলেই খেতে পারবে। {দলীলসমূহ : আবূ দাউদ, তিরমিযী, বজলুল মজহুদ, শরহে তিরমিযী, মিশকাত, মিরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, ত্বীবী, তালিক ও মুজাহের ইত্যাদি।}

মুহম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন

কক্সবাজার

সুওয়াল: মৃত ব্যক্তির নামে কুরবানী করা জায়িয কিনা?

জাওয়াব: কুরবানী আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক-এ করতে হবে।

যেমন- بسم الله الله اكبر

উচ্চারণ: “বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার” বলে কুরবানী করতে হবে।

এখন যদি কেউ কোন ব্যক্তির নামে, হোক সে জীবিত অথবা মৃত-এর নামে কুরবানী করে, যেমন- “বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার” এর পরিবর্তে আব্দুর রহীম, আব্দুল করীম, বকর, যায়িদ, আমর ইত্যাদি নামে কুরবানী করে, তাহলে কুরবানী অশুদ্ধ হবে। উক্ত পশুর গোশত খাওয়াও হারাম হবে ও সাথে সাথে কুফরী ও কবীরা গুনাহ হবে। মূলত কুরবানী একমাত্র আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক-এই করতে হবে। তবে পশুতে সাত নাম ও এক নাম দেয়ার কথা যে উল্লেখ করা হয়েছে, তাহলো- সাতজন অথবা একজন (চাই তারা জীবিত হোক অথবা মৃত হোক)- তাদের তরফ থেকে বা পক্ষ থেকে আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক-এ কুরবানী করা।

এ মাসয়ালাটি না বুঝার কারণে অনেকে সরাসরি বলে থাকে, কুরবানীর পশুতে মৃত পূর্ব পুরুষদের নাম দেয়া যাবে না। নাউযুবিল্লাহ! (দলীলসমূহ: আলমগীরী, শামী, নুরুল হিদায়া, বাজ্জাজিয়া, কাযীখান ইত্যাদি)

মুসাম্মত জান্নাত

সদর, চাঁদপুর

সুওয়াল: পবিত্র ঈদুল আযহার দিনের সুন্নতসমূহ জানতে চাই।

জাওয়াব:  ঈদের দিনের সুন্নত হলো- ১. খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠা ২. গোসল করা ৩. মিস্ওয়াক করা ৪. সামর্থ্য অনুযায়ী নতুন পোশাক পরিধান করা ৫. আতর ব্যবহার করা ৬. মহল্লার মসজিদে গিয়ে জামায়াতে ফজরের নামায পড়া ৭. ঈদগাহে হেঁটে যাওয়া ৮. ঈদুল আযহার দিন সকালে কিছু না খেয়ে ঈদগাহে যাওয়া ৯. ঈদুল আযহার দিন কুরবানীর গোশত দিয়ে খাওয়া শুরু করা ১০. ঈদগাহে এক রাস্তা দিয়ে যাওয়া এবং অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরে আসা ১১. সকাল সকাল ঈদের নামায পড়ার জন্য যাওয়া ১২. ঈদের নামায ঈদগাহে গিয়ে পড়া, সম্ভব না হলে মহল্লার মসজিদে গিয়ে ঈদের নামায পড়া। ১৩. নিম্নোক্ত দোয়া পড়তে পড়তে ঈদগাহে যাওয়া:

الله اكبر الله اكبر لا اله الا الله والله اكبر الله اكبر ولله الحمد

আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হাম্্দ। ১৪. শরীয়তের সীমার মধ্যে থেকে খুশি প্রকাশ করা ইত্যাদি ঈদের সুন্নত। (আলমগীরী, নূরুল ঈজাহ ও অন্যান্য ফিক্বাহর কিতাব)

 

মুহম্মদ যুফার আলী

ভোলাহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

সুওয়াল: ঈদুল আযহার নামায কখন পড়া সুন্নত? জানতে বাসনা রাখি।

জাওয়াব: সূর্য পূর্ণভাবে উদিত হবার পর থেকে (অর্থাৎ মাকরূহ ওয়াক্ত শেষ হবার পর থেকে অথবা সূর্য উদয়ের শুরু থেকে ঘড়ির মিনিট অনুযায়ী ২৩ মিনিট পর) ঈদের নামাযের ওয়াক্ত শুরু হয়। আর যাহওয়াতুল কুবরা বা যাওয়াল অথবা শরয়ী অর্ধদিন বা দ্বিপ্রহর অর্থাৎ সূর্যের এস্তাওয়া আরম্ভ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ঈদের নামাযের ওয়াক্ত থাকে।

ফজরের ওয়াক্ত শেষ হওয়ার পর ২৩ মিনিট পর্যন্ত মাকরূহ ওয়াক্ত এবং এরপর ঈদের নামাযের ওয়াক্ত শুরু হয় এবং যুহরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার ১ ঘণ্টা পূর্ব পর্যন্ত ঈদের নামাযের ওয়াক্ত থাকে। সূর্য পূর্ণভাবে উদিত হওয়ার পর থেকে অর্থাৎ মাকরূহ ওয়াক্ত যা ঘড়ির হিসাব অনুযায়ী ২৩ মিনিট অতিক্রম হওয়ার পূর্বে ঈদের নামায আদায় করলে নামায হবে না এবং যুহরের নামাযের ওয়াক্ত হওয়ার পূর্বের ১ ঘণ্টা যা মাকরূহ ওয়াক্ত নামে পরিচিত অর্থাৎ যাহওয়াতুল কুবরা বা সূর্যের এস্তাওয়া আরম্ভ হওয়ার পর ঈদের নামায আদায় করলে তা আদায় হবে না।

ঈদের নামায কোন সময় আদায় করলে তা সুন্নত হবে সে সম্পর্কে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “ঈদের দিন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজরের নামায পড়ে হুজরা শরীফে গিয়ে সকাল সকাল গোসল করতেন এবং ঈদুল ফিতর হলে বিজোড় সংখ্যক (৩, ৫, ৭) খোরমা খেজুর খেয়ে ঈদগাহে যেতেন। আর ঈদুল আযহার সময় কিছু না খেয়ে সরাসরি ঈদগাহে যেতেন এবং ঈদের নামাযের ওয়াক্ত হওয়ার সাথে সাথে ঈদের নামায আদায় করতেন। তারপর খুতবা দিতেন এবং নছীহত করতেন।”

“হযরত আবুল হোয়ায়রেস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত আমর ইবনে হাযম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে নাজরানের গভর্নর থাকা অবস্থায় চিঠি দিয়ে আদেশ করেছেন, ঈদুল আযহার নামায খুব সকাল সকাল পড়বেন এবং ঈদুল ফিতরের নামায ঈদুল আযহার চেয়ে অল্প একটু দেরিতে পড়বেন এবং নামাযের পরে মানুষকে নছীহত করবেন।

কাজেই, ঈদের নামায সকাল সকাল পড়া সুন্নত। ঈদের নামাযের সম্মানার্থে এবং ঈদের নামায যাতে আদায়ে দেরি না হয়, সেজন্য ঈদের দিন ইশরাকসহ অন্যান্য নফল নামায পড়া নিষিদ্ধ।

মুহম্মদ ফাহিমুর রহমান

বরিশাল

সুওয়াল: তাকবীরে তাশরীক কাকে বলে? এবং তা কতবার বলতে হয়?

জাওয়াব: পবিত্র যিলহজ্জ মাসের ৯ তারিখ ফজর থেকে ১৩ তারিখ আছর পর্যন্ত মোট ২৩ ওয়াক্ত ফরয নামাযের পর যে তাকবীর পাঠ করা হয় তাকেই তাকবীরে তাশরীক বলে। জামায়াতে বা একাকী, মুসাফির অথবা মুকীম, শহর অথবা গ্রামে প্রত্যেককেই প্রতি ফরয নামাযের পর উক্ত তাকবীর পাঠ করতে হবে।

“দুররুল মুখতার” কিতাবে উল্লেখ আছে যে, “তাকবীরে তাশরীক” একবার বলা ওয়াজিব, তবে যদি (কেউ) একাধিকবার বলে, তাহলে তা ফযীলতের কারণ হবে। আর “ফতওয়ায়ে শামী” কিতাবে উল্লেখ আছে,

وقيل ثلاث مرات

অর্থ: কেউ কেউ বলেছেন (তাকবীরে তাশ্রীক) তিনবার।”  “গায়াতুল আওতার শরহে দুররুল মুখতার” কিতাবে উল্লেখ আছে-

اور واجب ہے تکبیر تشریق صحیح ترقول میں ایکبار بسبب اسکے مامور ہونے کے اور اگر زیادہ کہےایکبار سے تو ہوگا ثواب.

অর্থ: “বিশুদ্ধ বর্ণনা মতে (আল্লাহ পাক-উনার পক্ষ থেকে) আদিষ্ট হওয়ার কারণে একবার তাকবীরে তাশরীক বলা ওয়াজিব। আর যদি একবারের চেয়ে অতিরিক্ত বলে তবে ছাওয়াবের অধিকারী হবে।”

উপরোক্ত নির্ভরযোগ্য কিতাবের বর্ণনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, একবার তাকবীরে তাশরীক বলা ওয়াজিব এবং তিনবার বলা মুস্তাহাব।{দলীলসমূহ: শামী, আইনী, আলমগীরী, হাশিয়ায়ে তাহতাবী, রদ্দুল মুহতার, দুররুল মুখতার ইত্যাদি।}

 

মুহম্মদ জামান হোসেন, মগবাজার, ঢাকা।

সুওয়াল: হজ্জের ফরজ কয়টি ও কি কি?

 

জাওয়াব: হজ্জের ফরয হচ্ছে- ৩টি। (১) ইহরাম বাঁধা অর্থাৎ মীকাত হতে ইহরাম বাঁধা। (২) ওকুফে আরাফা অর্থাৎ ৯ই যিলহজ্জের দ্বিপ্রহরের পর হতে অর্থাৎ সূর্য ঢলার পর হতে ১০ই যিলহজ্জ ছুবহে ছাদিকের পূর্ব পর্যন্ত যে কোন সময় আরাফার ময়দানে উপস্থিত থাকা। (৩) তাওয়াফে যিয়ারত অর্থাৎ ১০, ১১ ও ১২ই যিলহজ্জ তারিখের মধ্যে কা’বা শরীফ তাওয়াফ করা।

 

মুহম্মদ সিরাজুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম।

সুওয়াল: মুযদালিফায় অবস্থান করা কি?

 

জাওয়াব:  ৯ই যিলহজ্জ দিবাগত রাত্রিতে মুযদালিফায় অবস্থান করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা। আর ১০ই যিলহজ্জ ফজর নামাযের পর হতে সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত অবস্থান করা ওয়াজিব। যদি কেউ মুযদালিফার অবস্থান ছেড়ে দেয় তাহলে তার উপর দম দেয়া ওয়াজিব হবে।

মুহম্মদ বেলাল হুসাইন, বাংলাবাজার, ঢাকা।

সুওয়াল: তাওয়াফের সময় নামাযের সামনে দিয়ে যাওয়া জায়িয কিনা?

জাওয়াব:  হজ্জের আহকাম পালনের ক্ষেত্রে কতক মাসয়ালা অন্য স্থানের সাধারণ মাসয়ালার ব্যতিক্রম। যেমন- আরাফার ময়দানে একই আযান ও ভিন্ন ইকামতে যোহর ও আসর নামাজ পড়তে হয় যা অন্য সময় জায়েয নেই। তেমনি অন্য স্থানে নামাযের সামনে দিয়ে গমনাগমন জায়িয নেই কিন্তু কা’বা শরীফ-এ তাওয়াফের সময় নামাযের সামনে দিয়ে যাওয়া জায়িয রয়েছে এবং এ মাসয়ালা শুধু কা’বা শরীফ-এর জন্যই খাছ।

মুহম্মদ জহিরুল ইসলাম দাউদকান্দি, কুমিল্লা।

সুওয়াল: ওযু ব্যতীত তাওয়াফ করলে তার হুকুম কি?

 

জাওয়াব:  ওযু ব্যতীত তাওয়াফে কুদুম ও তাওয়াফে বিদা করলে ছদকা ওয়াজিব। আর অপবিত্র অবস্থায় তাওয়াফে কুদুম অথবা তাওয়াফে বিদা করলে একটি ছাগল দম দিতে হবে।

আর ওযু ব্যতীত তাওয়াফে যিয়ারত করলে একটি ছাগল দম হিসেবে দিতে হবে। আর অপবিত্র অবস্থায় তাওয়াফে জিয়ারত করলে একটি উট দম হিসেবে দিতে হবে। তবে পুনরায় তাওয়াফ করা উত্তম। আর পুনরায় তাওয়াফ করলে দম দেয়া ওয়াজিব হবে না।

মুহম্মদ সোহাগ

কদমতলা, রাজারবাগ, ঢাকা।

সুওয়াল: তাওয়াফে যিয়ারত আদায় করা কি? তা যদি নির্দিষ্ট সময় আদায় না করে তার হুকুম কি? জাওয়াব:  তাওয়াফে যিয়ারত আদায় করা ফরয। তা যদি নির্দিষ্ট সময় না করে তাহলে দম দেয়া ওয়াজিব হবে।

মুহম্মদ আনিছুর রহমান পূর্ব বাসাবো, ঢাকা।

সুওয়াল: ওকুফে আরাফা বা আরাফার ময়দানে অবস্থান করা হজ্জের অন্যতম ফরয। কবে এবং কোন সময় তথায় উপস্থিত হলে ফরয আদায় হবে?

জাওয়াব:  ৯ই যিলহজ্জ সূর্য ঢলার পর থেকে ১০ই যিলহজ্জ ছুবহি ছাদিকের পূর্ব পর্যন্ত যে কোন সময় আরাফার ময়দানে অবস্থান করলে অথবা আরাফার ময়দানের উপর দিয়ে অতিক্রম করলে ওকুফে আরাফার ফরয আদায় হয়ে যাবে। কেউ যদি জাগ্রত ও সজ্ঞান অথবা নিদ্রিত ও অজ্ঞান অবস্থায়ও আরাফার ময়দান অতিক্রম করে তাহলেও ওকুফে আরাফার ফরয আদায় হয়ে যাবে। আরাফার ময়দানে সূর্য ঢলার পর ুেথকে সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ পর পর্যন্ত অবস্থান করা ওয়াজিব। সূর্যাস্তের পূর্বে কেউ যদি আরাফার ময়দান ত্যাগ করে তাহলে তার উপর দম দেয়া ওয়াজিব হবে। আর যদি কেউ আরাফার ময়দানে উপস্থিতই না হয় তাহলে তার হজ্জ বাতিল হয়ে যাবে।

মুহম্মদ আব্দুল মালেক, যশোর।

সুওয়াল: কোন হাজী ছাহেব যদি আরাফার ময়দানে অবস্থান করার পূর্বে আহলিয়া ব্যবহার করে তবে তার জন্য কি হুকুম?

জাওয়াব:  কোন হাজী ছাহেব যদি আরাফার ময়দানে অবস্থানের পূর্বে আহলিয়া ব্যবহার করে অথবা পিছন দিক দিয়ে ব্যবহার করে তাহলে তার হজ্জ নষ্ট হয়ে যাবে। তাকে দম হিসেবে একটি খাসি দিতে হবে। আর অন্যান্য হাজী সাহেবদের মতো হজ্জের সমস্ত অনুষ্ঠান যথারীতি পালন করতে হবে। তবে পরের বৎসর সেই হজ্জ পুনরায় ক্বাযা করতে হবে।

আর যদি আরাফার ময়দানে অবস্থানের পর করে তাহলে হজ্জ বাতিল হবেনা। তাকে উট দম দেয়া ওয়াজিব। আর যদি মাথা কামানোর পর ও তাওয়াফে জিয়ারতের পূর্বে করে তবে তার জন্য ছাগল বা খাসি দম দেয়া ওয়াজিব। তার হজ্জ হয়ে যাবে।

আর ওমরাহ্কারী যদি চার চক্করের পূর্বে করে তার ওমরাহ বাতিল হয়ে যাবে। তবে বাকী চক্করগুলি যথারীতি আদায় করতে হবে এবং পরবর্তীতে ওমরাহ ক্বাযা আদায় করতে হবে।

আর যদি চার চক্করের পর করে তাহলে ওমরাহ্ আদায় হয়ে যাবে তবে একটি ছাগল দম দেয়া ওয়াজিব হবে। যে ভুল করে আহলিয়া ব্যবহার করবে তার হুকুম স্বেচ্ছায় করার অনুরূপ।

মুহম্মদ বেলাল হুসাইন শান্তিবাগ, ঢাকা।

সুওয়াল: কোন হাজী ছাহেব যদি সাঈ না করে তার কাফ্ফারা কি?  জাওয়াব:  সাঈ করা ওয়াজিব। সাঈ যদি না করে তাহলে একটি ছাগল দম দেয়া ওয়াজিব হবে।

মুহম্মদ আজমল মুর্শিদ (অপু)

পাবনা

সুওয়াল: ৭ বার চক্কর না দিলে কি তাওয়াফ পূর্ণ হবে?

জাওয়াব:  তাওয়াফে ৭ চক্কর পূর্ণ করলেই এক তাওয়াফ পূর্ণ হয়। এক চক্করও যদি কম আদায় করে তাহলে তাওয়াফ পূর্ণ হবে না। যেমন কেউ যদি তাওয়াফে জিয়ারতের ৭ চক্করের তিন চক্কর বা তার চেয়ে কম চক্কর ছেড়ে দেয় তাহলে তার জন্য দম দেয়া ওয়াজিব হবে। আর যদি চার বা তার চেয়ে বেশি চক্কর ছেড়ে দেয় তাহলে সে ইহরাম খুলতে পারবে না। পরবর্তী হজ্জের সময় তাওয়াফে যিয়ারত করে তারপর তাকে ইহরাম খুলতে হবে। আর তাওয়াফে বিদায় ৩ বা তার চেয়ে কম চক্কর ছেড়ে দিলে সদকা দেয়া ওয়াজিব হবে আর ৪ বা তার চেয়ে বেশি চক্কর ছেড়ে দিলে তার জন্য একটি ছাগল দম দেয়া ওয়াজিব হবে।

মুহম্মদ শাহজাহান, মদন মোহন, সিলেট।

সুওয়াল: কংকর নিক্ষেপ করা কেউ যদি তরক করে তার উপর কি ওয়াজিব হবে? জাওয়াব:  কংকর নিক্ষেপ করা হচ্ছে ওয়াজিব। যদি সমস্ত কংকর নিক্ষেপ করা ছেড়ে দেয় তাহলে দম দেয়া ওয়াজিব হবে। প্রতিদিনের জন্য যে কয়েকটি কংকর নিক্ষেপ করা ওয়াজিব তার অধিকাংশ যদি ছেড়ে দেয় তাহলে দম দেয়া ওয়াজিব। আর যদি অর্ধেকের কম সংখ্যক ছেড়ে দেয় তাহলে প্রত্যেক কংকরের জন্য এক ফিতরা পরিমাণ সদকা করা ওয়াজিব।

আর যদি ৩ জমরার এক জমরায় কংকর নিক্ষেপ করা ছেড়ে দেয় তাহলে সদকা দেয়া ওয়াজিব হবে। আর যদি ১০ তারিখে জমরায়ে আক্বাবায়  কংকর নিক্ষেপ করা ছেড়ে দেয় তাহলেও দম দেয়া ওয়াজিব হবে।  যে কংকরসমূহ যে স্তম্ভে নিক্ষেপ করা হবে তা যেন ওই স্তম্ভের ৩ হাতের ভিতরেই পড়ে। ৩ হাত বা তার চেয়ে বাইরে পড়লে সেটা গ্রহণযোগ্য হবেনা।

হাফিয মুহম্মদ জিল্লুর রহমান

ভোলাহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।

সুওয়াল: হজ্জের সময় অনেককে দেখা যায় কুরবানী করার জন্য ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে কুরবানী করার পূর্বে চুল চেঁছে ফেলে। এটা সঠিক কি-না? জাওয়াব:  ১০ই যিলহজ্জ সকালে হজ্জের আমলের যে তরতীব রয়েছে তাহলো- প্রথমে কঙ্কর নিক্ষেপ করবে এরপর কুরবানী করবে। কুরবানী করার পর চুল চাঁছবে। এ তরতীব রক্ষা করা হচ্ছে ওয়াজিব। এর খেলাফ করলে দম দেয়া ওয়াজিব হবে।

হ্যাঁ কেউ যদি সরকারিভাবে কুরবানী করার জন্য ব্যাংকে টাকা জমা দেয় তাহলে সরকারীভাবে যে সময় কুরবানী করার কথা ঘোষণা করা হয় তারপর তাকে চুল চাঁছতে হবে। তবে তাহক্বীক করে  দেখা গেছে, যে সময় কুরবানী করার কথা সরকারীভাবে ঘোষণা করা হয়, অনেক সময়ই অত্যধিক ব্যস্ততার কারণে নির্দিষ্ট সময় রক্ষা করা সম্ভব হয় না। অর্থাৎ ঘোষিত সময়ের পরেও অনেক সময় কুরবানী করে। তাহলে কুরবানীদাতা যদি কুরবানীর পূর্বে চুল চেঁছে ফেলে তাহলে তার উপর দম দেয়া ওয়াজিব হবে। তাই তাকওয়া ও সতর্কতা হিসেবে নিজের কুরবানী নিজেই করা উত্তম।

মুহম্মদ ইসমাইল হুসাইন, চট্টগ্রাম

সুওয়াল: হজ্জে মাথা কামানো কি? তা-না করলে কি হবে? জাওয়াব:  হজ্বের মধ্যে পুরুষের মাথা কামানো আর মেয়েদের চুলের কিছু অংশ কাটা ওয়াজিব। যদি কেউ আদায় না করে অর্থাৎ কুরবানীর দিন অতিবাহিত হয়ে যায় তাহলে দম দেয়া ওয়াজিব।

মুহম্মদ মুঈনুদ্দীন, মাদারটেক, ঢাকা ।

সুওয়াল: হাজীগণ একে অপরের চুল মু-ন করতে পারবেন কিনা? জাওয়াব:  ইহরাম খোলার পূর্বে যদি কোন হাজী ছাহেব নিজের অথবা অন্য হাজী ছাহেবের মাথার এক চতুর্থাংশ বা তার চেয়ে বেশি চুল কামায় তাহলে তার উপর দম দেয়া ওয়াজিব হবে। এর কম হলে সদকা ওয়াজিব হবে।

মুছাম্মত রাহেনা বেগম রাজারহাট, কুড়িগ্রাম।

সুওয়াল: ইহরাম অবস্থায় সুগন্ধি ব্যবহার করলে তার কি হুকুম

জাওয়াব:  কোন এক পূর্ণ অঙ্গ অথবা তার চেয়ে অধিক স্থানে সুগন্ধি ব্যবহার করলে দম দেয়া ওয়াজিব হবে। আর যদি কোন এক অঙ্গের চেয়ে কম স্থানে সুগন্ধি ব্যবহার করে তাহলে সদকা দেয়া ওয়াজিব হবে।

আর যদি কেউ কোন ওজরে অথবা বিশেষ কারণে সুগন্ধি লাগায় বা ব্যবহার করে অথবা মাথা কামায় অথবা সেলাই করা কাপড় পরে তাহলে তাকে নিম্নের তিনটি হুকুমের যে কোন একটি হুকুম অবশ্যই পালন করতে হবে। (১) ইচ্ছা করলে সে একটি ছাগল কুরবানী করতে পারে। (২) অথবা ছয় জন মিসকীনকে ‘তিন ছা’ (১০ সের ১১ ছটাক) খাদ্য বণ্টন করে দিবে। (৩) অথবা তিনটি রোযা রাখতে পারে।

স্মরণীয় যে, উপরোল্লিখিত সুওয়ালের জাওয়াবে হজ্জের কাফফারার যে মাসয়ালা বর্ণনা করা হয়েছে তা ইফরাদ হজ্জ আদায়কারীর জন্য। আর হজ্জে ক্বিরান আদায়কারীদেরকে ইফরাদ হজ্জকারীদের দ্বিগুণ কাফফারা দিতে হবে।

মুহম্মদ আব্দুর রশীদ কুমারখালী, কুষ্টিয়া।

সুওয়াল: ইহরাম অবস্থায় হাত ও পায়ের নখ কাটলে তার কী কাফ্ফারা?

জাওয়াব:  হাত ও পায়ের সমস্ত নখ কাটলে অথবা শুধু এক হাত বা এক পায়ের নখ কাটলেই দম দেয়া ওয়াজিব।

আর যদি পাঁচটি নখের কম কাটে তা এক হাত বা এক পায়ের হোক অথবা হাত ও পা মিলে হোক তাহলে সদকা দেয়া ওয়াজিব।

হাবিলদার লাবলু মিয়া

রাজারহাট, কুড়িগ্রাম

সুওয়াল:  বছরের কোন কোন দিন ওমরাহ করা মাকরূহ?

জাওয়াব:  যিলহজ্জ মাসের ৯, ১০, ১১, ১২ ও ১৩ এই ৫ দিন ওমরাহ্ করা মাকরূহ। তবে যদি কেউ ৯ তারিখের পূর্বে ওমরাহর জন্য ইহ্রাম বেঁধে থাকে তবে তার জন্য ওমরাহ করা জায়িয রয়েছে।

মুহম্মদ তাজুদ্দীন মামুন, মুর্শিদপুর, ঢাকা।

সুওয়াল: এক ব্যক্তি বিদেশে ঈদের চাঁদ দেখে ঈদের নামায আদায় করার পর নিজ দেশে আসার জন্য রওয়ানা করে রাতের বেলা পৌঁছে দেখলো যে, এখানে ঈদের রাত। পরদিন সকাল বেলা নিজ দেশের অন্যান্য লোকদের মতো তাকেও কি ঈদের নামায পড়তে হবে? দয়া করে জানাবেন।

জাওয়াব: হ্যাঁ, নিজ দেশেও তাকে ঈদের নামায আদায় করতে হবে। কারণ নামায ফরয কিংবা ওয়াজিব হওয়ার বিষয়টি ওয়াক্ত হওয়ার সাথে সম্পর্কযুক্ত। যেমন কালামুল্লাহ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-

ان الصلوة كانت على المؤمنين كتابا موقوتا

অর্থ: “নিশ্চয়ই নামায মু’মিন-মুসলমানদের উপর ফরয করা হয়েছে নির্দিষ্ট সময়ে।” (সূরা নিসা : আয়াত শরীফ ১০৩)

কাজেই, নিজ দেশে ঈদের নামায আদায় করার বিষয়টি যেহেতু আলাদা দিন ও সময়ে সংঘটিত হচ্ছে তাই এখানেও তাকে ঈদের নামায আদায় করতে হবে। (দলীলসমূহ: রদ্দুল মুহতার, হাশিয়ায়ে রদ্দুল মুহতার, হাশিয়ায়ে তাহতাবী, ফতওয়ায়ে শামী ইত্যাদি)

মুহম্মদ ইবরাহীম সোহেল

ইকুরিয়া দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা

সুওয়াল: লোক দেখানোর জন্য অথবা এলাকায় সুনাম অর্জনের উদ্দেশ্যে বড় গরু কুরবানী দেয়া জায়িয হবে কি? কুরবানী দেয়ার ক্ষেত্রে কি নিয়ত রাখা উচিত?

জাওয়াব: কোন আমলই লোক দেখানোর জন্য কিংবা এলাকায় সুনাম-সুখ্যাতি অর্জনের জন্য করা জায়িয নেই।

কাজেই, কুরবানী হোক অথবা অন্য যে কোন নেক আমলই হোক তা খালিক্ব মালিক রব আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যেই করতে হবে। যেমন এ প্রসঙ্গে কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-

وما امروا الا ليعبدوا الله مخلصين له الدين

অর্থ: বান্দাদের প্রতি নির্দেশ হলো তারা যেনো খালিছভাবে একমাত্র আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি হাছিলের উদ্দেশ্যেই ইবাদত করে। (সূরা বাইয়্যিনাত : আয়াত শরীফ ৫)

আর হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-

ان الله لا يقبل من العمل الا ماكان خالصا وابتغى به وجهه.

অর্থ: নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক তিনি বান্দার ওইসব আমল কবুল করেন না; যা খালিছভাবে করা হয় না এবং আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে করা হয় না। (নাসায়ী, দায়লামী)

অতএব, বান্দার জন্য ফরয-ওয়াজিব হচ্ছে কুরবানীসহ প্রতিটি আমল আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি হাছিলের উদ্দেশ্যে করা। আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি হাছিলের উদ্দেশ্য ছাড়া বান্দা বিভিন্ন উদ্দেশ্য ও নিয়তে যে আমল করে থাকে তা সবই গইরুল্লাহ’র অন্তর্ভুক্ত। গইরুল্লাহ’র উদ্দেশ্যে বান্দা যত বড় আমলই করুক না কেন আল্লাহ পাক তিনি তা কখনই কবুল করেন না। উপরন্তু গইরুল্লাহ’র উদ্দেশ্যে আমল করার কারণে বান্দা আল্লাহ পাক উনার অসন্তুষ্টি লাভ করে থাকে। যেমন এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-

فويل للمصلين. الذين هم عن صلاتهم ساهون. الذين هم يرائون.

অর্থ: ওই সকল নামাযীদের জন্য ধ্বংস-জাহান্নাম যারা উদাসীন-অন্যমনস্ক হয়ে এবং মানুষকে দেখানোর উদ্দেশ্যে নামায আদায় করে। (সূরা মাউন : আয়াত শরীফ ৪, ৫,৬)

প্রতিভাত হলো, কোন আমলই গইরুল্লাহ’র উদ্দেশ্যে করা যাবে না। সমস্ত আমলই করতে হবে একমাত্র আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে।

উল্লেখ্য, মানুষকে দেখানোর জন্য আমল করার নাম হচ্ছে রিয়া। এই রিয়া সম্পর্কে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-

الرياء شرك خفى

অর্থ: রিয়া হলো গুপ্ত শিরকের অন্তর্ভুক্ত। (ইবনে মাজাহ, ইহইয়াউ উলূমিদ্দীন)

হাদীছ শরীফ-এ আরো ইরশাদ হয়েছে-

ان يسير الرياء شرك

অর্থাৎ, রিয়ার সামান্য অংশও শিরকের অন্তর্ভুক্ত। (ইবনে মাজাহ, মিশকাত)

কাজেই, রিয়াকে বান্দার অন্তর থেকে দূর করে দিতে হবে। কারণ বান্দার মধ্যে যতক্ষণ পর্যন্ত রিয়া বা লৌকিকতা এই বদ খাছলতটি বিরাজ করবে ততক্ষণ পর্যন্ত তার পক্ষে আল্লাহ পাক উনার জন্য কোন আমল করা সম্ভব হবে না।

একইভাবে সুনাম অর্জনের জন্য কোন আমল করাও জায়িয নেই। যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে, কোন ব্যক্তি সম্মান-সুনাম হাছিলের জন্য যদি কোন আমল করে, তাহলে সে তার আমলনামা এতটুকু ক্ষতি করলো যেমন দুটি ক্ষুধার্ত নেকড়ে বাঘকে একপাল মেষের মধ্যে ছেড়ে দেয়া হলে যতটুকু ক্ষতি করবে তার চেয়ে বেশি ক্ষতি করলো। নাউযুবিল্লাহ!

আর বিশেষ করে কুরবানীর উদ্দেশ্য কি হবে সে বিষয়টা তো আল্লাহ পাক তিনি স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছেন-

لن ينال الله لحومها ولا دماءها ولكن يناله التقوى منكم.

অর্থ: “নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক উনার নিকট কুরবানীর পশুর গোশত, রক্ত কিছুই পৌঁছে না। বরং উনার নিকট পৌঁছে থাকে তোমাদের তাক্বওয়ার বিষয়টি।” (সূরা হজ্জ: আয়াত শরীফ ৩৭)

কাজেই, বড় গরু কুরবানী দেয়ার সামর্থ্য থাকলে অবশ্যই বড় গরু কুরবানী করা উচিত। তবে উদ্দেশ্য ও নিয়ত বিশুদ্ধ রাখতে হবে।

 

মুহম্মদ ইবরাহীম সোহেল

ইকুরিয়া, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা

সুওয়াল: কোন ব্যক্তির সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যদি কার্পণ্য করে ছোট গরু কুরবানী করে সেক্ষেত্রে শরীয়তের ফায়সালা কী?

জাওয়াব: খালিক্ব মালিক রব আল্লাহ পাক উনার জন্য যা দান করা হবে বা উৎসর্গ করা হবে তা অবশ্যই পছন্দনীয়, উত্তম, উৎকৃষ্ট হওয়া উচিত। আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-

لن تنالوا البر حتى تنفقوا مما تحبون وما تنفقوا من شىء فان الله به عليم.

অর্থ: “তোমরা কখনই নেকী লাভ করতে পারবে না, যে পর্যন্ত না তোমরা তোমাদের প্রিয় বা পছন্দনীয় বস্তু আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় ব্যয় করবে।” (সূরা আলে ইমরান : আয়াত শরীফ ৯২)

হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন-

لا يقبل الله عز وجل الا الطيب

অর্থ: “আল্লাহ পাক সুবহানাহূ ওয়া তায়ালা তিনি পবিত্র বা উৎকৃষ্ট ব্যতীত কোন কিছুই কবুল করেন না।” (বুখারী শরীফ)

যেমন এ প্রসঙ্গে বর্ণিত রয়েছে, হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার দু’ছেলেকে মহান আল্লাহ পাক তিনি কুরবানী করতে বললেন। এক ছেলে হযরত হাবীল আলাইহিস সালাম তিনি দুম্বা চরাতেন। তিনি উনার দুম্বা থেকে সবচেয়ে উত্তম একটি দুম্বা মহান আল্লাহ পাক উনার উদ্দেশ্যে কুরবানীর জন্য পেশ করলেন। অপরদিকে আরেক ছেলে কাবীল যে ফসল চাষাবাদ করতো। সে তার ফসল থেকে নিম্নমানের কিছু শস্যাদি মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য পেশ করলো। অতঃপর দেখা গেল মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে আগুন এসে কেবল হযরত হাবীল আলাইহিস সালাম উনার দুম্বাটি জ্বালিয়ে বা ভস্ম করে ফেললো। অর্থাৎ উত্তম ও ভালো জিনিস দেয়ায় হযরত হাবীল আলাইহিস সালাম উনার কুরবানী কবুল হলো এবং তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার খাছ বান্দা হিসেবে মনোনীত হলেন। সুবহানাল্লাহ!

পক্ষান্তরে নিম্নমানের জিনিস দেয়ায় কাবীলের কুরবানী কবুল হলো না এবং পরিণতিতে সে পৃথিবীর বুকে প্রথম হত্যাকারী ও জাহান্নামী হিসেবে পরিগণিত হলো। নাউযুবিল্লাহ!

কাজেই, প্রত্যেকের সামর্থ্য অনুযায়ী সবচেয়ে উত্তম, উন্নতমানের, উন্নত মূল্যের, হৃষ্টপুষ্ট পশু কুরবানী করা উচিত। কারণ হাদীছ শরীফ-এ রয়েছে, “কুরবানীর পশু ক্বিয়ামতের দিন সাওয়ারী বা বাহন হবে এবং কুরবানীদাতাকে পিঠে করে বিদ্যুৎবেগে পুলছিরাত পার করে জান্নাতে পৌঁছিয়ে দিবে।” সুবহানাল্লাহ!

তাছাড়া কৃপণতা বা বখিলতী কঠিন কবীরা গুনাহ ও মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের অসন্তুষ্টির কারণ।

এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-

البخيل عدو الله ولوكان عابدا

অর্থ: “বখীল বা কৃপণ ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার শত্রু। যদিও সে বড় আবিদ হোক না কেন।” তাই শুধু কুরবানীর ক্ষেত্রেই নয় বরং কোন ক্ষেত্রেই কৃপণতা বা বখিলতী করা জায়িয নয়।

 

মুহম্মদ কাওছার

কিশোরগঞ্জ

সুওয়াল: মাসিক মদীনা পত্রিকা এপ্রিল/২০১১ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে নিম্নোক্ত প্রশ্নোত্তর ছাপা হয়-

প্রশ্ন: ক্বেবলা শব্দের অর্থ কি? অনেকে স্বীয় পীরকে ক্বেবলা বলে সম্বোধন করে। এটা জায়েয কিনা?

উত্তর: ক্বেবলা বলা হয় ঐ স্থির জায়গা বা দিকটিকে যাকে লক্ষ্য স্থির করে মনের আকুতি নিবেদন করা হয়। পরিভাষায় নামাযে দাঁড়ানোর সময় যেদিকে রুখ করা হয়। ক্বেবলা শব্দটিকে আল্লাহ পাক নামাযের সাথে সম্পৃক্ত করে বর্ণনা করেছেন। সুতরাং কোন ব্যক্তি বা বস্তু বিশেষের সাথে ক্বেবলা শব্দটি যুক্ত করা চরম ধৃষ্ঠতা বলে মনে করি। এটা জায়িয হবে বলে মনে করি না।

এখন আমার সুওয়াল হলো- মাসিক মদীনা পত্রিকার উক্ত বক্তব্য কতটুকু সঠিক? আর সত্যিই কি পীর ছাহেবকে ক্বিবলা বলা জায়িয হবে না। দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব: ‘পীর ছাহেব উনাকে ক্বিবলা’ বলা সম্পর্কিত মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য ডাহা মিথ্যা, মূর্খতাসূচক ও দলীলবিহীন। কারণ ‘পীর ছাহিব উনাকে ক্বিবলা’ বলা চরম ধৃষ্টতা, তার এ বক্তব্যের দলীল কোথায়?

আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-

هاتوا برهانكم ان كنتم صدقين

অর্থ: “তোমরা যদি সত্যবাদী হয়ে থাক, তবে দলীল পেশ কর।” (সূরা বাক্বারা : আয়াত শরীফ ১১১)

কাজেই মাসিক মদীনার সম্পাদক মাহিউদ্দীনকে তার উক্ত বক্তব্যের স্বপক্ষে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস থেকে দলীল পেশ করতে হবে। যেহেতু সে তার এ বক্তব্যের স্বপক্ষে কোন দলীল পেশ করেনি বা করতে পারেনি তাই তার উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই পরিত্যাজ্য।

দ্বিতীয়ত: মাহিউদ্দীন কোন বিষয়কে জায়িয মনে করলেই তা জায়িয। যদিও তা শরীয়তে নাজায়িয হয়। আর কোন বিষয়কে নাজায়িয মনে করলেই তা নাজায়িয; যদিও তা শরীয়তে জায়িয হয়। এটা শরীয়তে কোথায় উল্লেখ আছে? তাহলে কি মাহিউদ্দীন ছাহিব নিজেকে শরীয়ত প্রণেতা বলে দাবি করে? তবে তো সে নব্য কাদিয়ানী।

মূলত “ক্বিবলা” শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে  “জিহাত বা দিক।” আর পারিভাষিক অর্থে ক্বিবলা হচ্ছে যার দিকে রুজু হয়।

হানাফী মাযহাবের বিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য ফতওয়ার কিতাব “ফতওয়ায়ে শামী” কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ক্বিবলা হচ্ছে পাঁচ প্রকার। যথা- (১) নামাযের ক্বিবলা হচ্ছে- “বাইতুল্লাহ শরীফ।” এজন্য বাইতুল্লাহ শরীফ-এর দিকে মুখ করে নামায আদায় করতে হয়।  (২) দোয়া বা মুনাজাতের ক্বিবলা হচ্ছে- “আসমান।” এজন্য হাতের তালুদ্বয় আসমানের দিকে করে মুনাজাত করতে হয়। (৩) মাখলুক্বাতের ক্বিবলা হচ্ছেন- “আখিরী রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।” কেননা তিনি হলেন সৃষ্টির মূল, উনার ওসীলায় সমস্ত মাখলুক্বাতের সৃষ্টি। (৪) সমস্ত ক্বিবলাকে বিলীনকারী ক্বিবলা হচ্ছেন- “স্বয়ং আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন।” (৫) ক্বিবলায়ে কুলূব বা ক্বলবের ক্বিবলা হচ্ছেন- “পীর ছাহিব।” যাঁর ফায়িজের মাধ্যমে আল্লাহ পাক ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মুহব্বত ও মা’রিফাতের ফায়িযে মুরীদ ফয়যিয়াব বা ফায়িযপ্রাপ্ত হয়, ক্বলব ও অন্যান্য লতিফাসমূহে যিকির জারি হয়। অতঃপর ক্বলব (অন্তর)সহ সমস্ত লতিফা পরিশুদ্ধ হয় এবং ইখলাছ পয়দা হয়। আর তখনই মুরীদের পক্ষে গইরুল্লাহ থেকে মুক্ত হয়ে একমাত্র আল্লাহ পাক উনার জন্য ইবাদত করা সম্ভব হয়।

আরো উল্লেখ্য যে, মাসিক মদীনার সম্পাদক মাহিউদ্দীন ছাহিব পীর ও মুর্শিদকে ক্বিবলা বলা নাজায়িয বলেছে, অথচ মাহিউদ্দীনসহ সকল দেওবন্দীদের গুরু আশরাফ আলী থানভী ছাহিব তার বেহেশতী জিওরে পিতা-মাতা ও সম্মানিত ব্যক্তিদেরকে ক্বিবলা ও কা’বা লক্বব দিয়ে সম্বোধন করতে বলেছে।

যেমন, বেহেশতী জিওর পুরাতন (মূল) ছাপার প্রথম খণ্ডের ১৬ পৃষ্ঠায় লিখেছে-

اور خط لکھنے کا طریقہ یہ ہے کہ مثلا اگر باپ کو خط لکھو تو  اسطرح لکھو جناب والد صاحب قبلہ و کعبہ.

অর্থাৎ, চিঠি লিখার নিয়ম এই যে, যদি পিতার নিকট চিঠি লিখতে চাও তবে এভাবে লিখবে যে, “সম্মানিত আব্বাজান “ক্বিবলা ও কা’বা।”

শুধু তাই নয়, উক্ত বেহেশতী জিওরের ২৪ পৃষ্ঠায়-

قبله وكعبه শব্দ দু’টি উচ্চপদস্থ ব্যক্তির সম্মানের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করার নিয়মও দেখানো হয়েছে।

স্মরণীয় যে, বেহেশতী জিওরের নতুন সংস্করণগুলো থেকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে উল্লিখিত ইবারতে বর্ণিত ‘ক্বিবলা ও কা’বা’ শব্দদ্বয় বাদ দেয়া হয়েছে।

সুতরাং, আশরাফ আলী থানভী ছাহিবের মতে পিতা বা যে কোন সম্মানিত ব্যক্তিকে ক্বিবলা ও কা’বা বলে সম্বোধন করা যদি জায়িয হয়, তাহলে হক্কানী-রব্বানী পীর ছাহেব বা মুর্শিদ উনাকে ‘ক্বিবলা ও কা’বা’ বলে সম্বোধন করা জায়িয হবে না কেন? মাসিক মদীনার সম্পাদক মাহিউদ্দীনকে এর জাওয়াব দিতেই হবে।

মূল কথা হলো, পীর ছাহেব উনার নামের সাথে ‘ক্বিবলা’ শব্দ ব্যবহার করা অবশ্যই জায়িয রয়েছে। কাজেই, পীর ছাহেব উনাকে ক্বিবলা বলা সম্পর্কিত মাসিক মদীনার সম্পাদক মাহিউদ্দীনের উক্ত বক্তব্য ভুল ও দলীলবিহীন বলেই প্রমাণিত হলো। সেই সাথে এটাও প্রমাণিত হলো যে, মাসিক মদীনার সম্পাদক মাহিউদ্দীন ছাহিব ডাহা মিথ্যা, মূর্খতাসূচক ও দলীলবিহীন বক্তব্য প্রদান করে চরম জিহালতির পরিচয় দিয়েছে।

{দলীলসমূহ : (১) শামী, (২) দুররুল মুখতার, (৩) আইনুল ইয়াক্বীন, (৪) বেহেশ্তী জিওর-পুরাতন ছাপা ইত্যাদি}

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ