সুওয়াল-জাওয়াব

সংখ্যা: ২৫৮তম সংখ্যা | বিভাগ:

মুহম্মদ জুনাইদ, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম

মুহম্মদ মুহিবুর রহমান খালেক

ষোলঘর, সদর, সুনামগঞ্জ

 

সুওয়াল: ছাহিবু কুন ফাইয়াকূন, ক্বইয়্যূমুয যামান, জাব্বারিউল আউওয়াল, ক্বউইয়্যুল আউওয়াল এসকল লক্বব মুবারক উনার অর্থ, ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ওলীআল্লাহ উনাদের নামে ব্যবহার করা জায়িয হবে কি না, জানতে বাসনা রাখি।

জাওয়াব: হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের শানে প্রকাশিত ‘ছাহিবু কুন ফাইয়াকূন’ ক্বইয়্যূমুয যামান এসকল নতুন কোন লক্বব বা উপাধি নয়। বরং বহু আগে থেকেই অনেক আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের মুবারক শানে উক্ত লক্বব মুবারক প্রকাশিত হয়ে আসছে। উক্ত লক্বব মুবারক উনাদের মতোই আরো অধিক শানওয়ালা ২টি লক্বব মুবারক হচ্ছেন জাব্বারিউল আউওয়াল ও ক্বউইয়্যূল আউওয়াল। সুবহানাল্লাহ!

অর্থাৎ, ক্বইয়্যূমে আউওয়াল লক্বব মুবারক যেরূপ সর্বপ্রথম আফদ্বালুল আউলিয়া হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুবারক শানে প্রকাশিত হয় তথা উনাকে প্রদান করা হয় তদ্রƒপ জাব্বারিউল আউওয়াল, ক্বউইয়্যূল আউওয়াল সম্মানিত লক্বব মুবারক ২টি সর্বপ্রথম প্রদান করা হয় যিনি বর্তমান পঞ্চদশ শতাব্দীর সুমহান মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, আহলে বাইত ও আওলাদে রসূল, নূরে মুকাররাম সাইয়্যিদুনা ইমামুল উমাম হযরত ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার সম্মানিত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনাকে। সুবহানাল্লাহ! অর্থাৎ ইতোপূর্বে উক্ত লক্বব মুবারক ২টি আর কোন হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের মুবারক শানে ব্যবহৃত বা প্রকাশিত হয়নি।

الجبار (আল জাব্বার) খ¦ালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার ছিফাতী বা গুণবাচক নাম মুবারক। উনার থেকেই الجبارى (আল জাব্বারিউ) লক্বব মুবারক উনার উৎপত্তি। যে কোন জিনিস ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে বা চূর্ণ-বিচূর্ণ করে তা নতুন করে গড়ে তোলার ক্ষমতা যিনি রাখেন, তিনি হচ্ছেন আল জাব্বার। অর্থাৎ সমস্ত বাতিল, গোমরাহ, বেশরা, কুফরী, শেরেকী, হারাম-নাজায়িয সব ভেঙ্গে ধ্বংস করে নতুনভাবে পবিত্র দ্বীন ইসলাম বা ইসলামী শরীয়ত বাস্তবায়নের ক্ষমতা যিনি লাভ করেন তিনিই হচ্ছেন জাব্বারিউল আউওয়াল। সুবহানাল্লাহ!

একইভাবে القوى (আল ক্বউইয়্যূ) খ¦ালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার ছিফাতী বা গুণবাচক নাম মুবারক। উনার থেকেই القوى الاول লক্বব মুবারক উনার প্রকাশ। القوى (আল ক্বউইয়্যু) অর্থ মহা শক্তিশালী মহা শক্তি বা ক্ষমতার অধিকারী। এ সম্মানিত লক্বব মুবারক উনার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে: উনার রূহানী শক্তির কাছে সমস্ত বিরোধী শক্তি ও ক্ষমতা পরাভূত ও পর্যুদুস্ত হয়ে যেতে বাধ্য। এমনকি উনার বিরোধিতাকারী দুনিয়া ও আখিরাতে লা’নতগ্রস্ত, অপমানিত, লাঞ্ছিত ও শাস্তির উপযুক্ত। নাউযুবিল্লাহ!

অতএব, ছাহিবু কুন ফাইয়াকূন ও ক্বইয়্যূমুয যামান লক্বব মুবারক দু’খানির সম্পর্কে  জানলে জাব্বারিউল আউওয়াল এবং ক্বউইয়্যূল আউওয়াল লক্বব মুবারক দু’খানি সম্পর্কে জানা, বোঝা ও অনুধাবন করা সহজ ও সম্ভব হবে। ফলে উক্ত লক্বব মুবারক দু’খানি পর্যায়ক্রমে উল্লেখ করা হলো।

ছাহিবু কুন ফাইয়াকূন

হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত কুদরত মুবারক উনার প্রকাশের বিশেষ স্থল। আর হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা হচ্ছেন সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত মু’জিযা শরীফ উনার প্রকাশের বিশেষ স্থল।

উল্লেখ্য, কারামত শরীফ হচ্ছে হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের সম্মান বা মর্যাদা। উনাদের সম্মান-মর্যাদার বহি:প্রকাশ হচ্ছে উনাদের লক্বব বা উপাধি মুবারকসমূহ। যিনি যত বেশি মর্যাদা-মর্তবার অধিকারী; উনার লক্বব বা উপাধি মুবারকও তত বেশি। সুবহানাল্লাহ!

খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ইমামুশ শরীয়াহ ওয়াত তরীক্বাহ, ইমামুল আইম্মাহ, মুহইউস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদ আ’যম, সুলত্বানুল আউলিয়া, সুলত্বানুন নাছীর, আওলাদুর রসূল ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার সম্মানিত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার অসংখ্য অগণিত লক্বব বা উপাধি মুবারক উনাদের মধ্যে একখানা লক্বব মুবারক হচ্ছে ‘ছাহিবু কুন ফাইয়াকূন’। এ লক্বব মুবারক কেবল উনারই রয়েছে তা নয়। এ লক্বব মুবারক উনার অধিকারী অতীতেও অনেকেই ছিলেন।

মূলত: ‘ছাহিবু কুন ফাইয়াকূন’ صاحب (ছাহিব) অর্থ সঙ্গী, বন্ধু, মালিক, কর্তা, ওয়ালা ইত্যাদি। আর كن (কুন) অর্থ হও এবং فيكون অর্থ অতঃপর হয়ে যায়। যেমন পবিত্র সূরা ইয়াসীন শরীফ উনার ৮২নং আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

اذا اراد شيئا ان يقول له كن فيكون

অর্থ: মহান আল্লাহ পাক তিনি যখন কোন কিছু সৃষ্টি করতে ইচ্ছা মুবারক করেন তখন সেটাকে বলেন كن হও فيكون অতঃপর সেটা হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ!

এ আয়াত শরীফ উনার দ্বারা মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত মুবারক বা ক্ষমতা বুঝানো হয়েছে। একইভাবে সমস্ত মাখলূক্বাত যে উনার অনুগত সে বিষয়টিও ফুটে উঠেছে। (তাফসীরে বায়যাবী, কুরতুবী, তাবারী, লুবাব, মাযহারী)

পারিভাষিক অর্থে ‘ছাহিবু কুন ফাইয়াকূন’ লক্বব মুবারক দ্বারা ঐ সকল হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদেরকে সম্বোধন  করা হয়, যাঁরা মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের চরম-পরম নৈকট্যপ্রাপ্ত। যাঁদের দ্বারা মহান আল্লাহ পাক উনার كن فيكون (কুন ফাইয়াকূন) ছিফত বা গুণ মুবারক উনার বিকাশ ঘটে। উনারা যা চান মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদেরকে সেটাই দান করেন। সুবহানাল্লাহ!

যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছে কুদসী শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عن حضرت ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ان الله تعالى قال لايزال العبد يتقرب الى بالنوافل حتى احبه فاذا احببته كنت سـمعه الذى يسمع به كنت بصره الذى يبصربه كنت لسانه الذى ينطق به كنت يده التى يبطش بها كنت رجله التى يـمشى بها وان سألنى لاعطيته ولان استعاذ بى لاعيذنه.

অর্থ: “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, বান্দা নফল ইবাদত করতে করতে আমার এত নৈকট্য মুবারক লাভ করেন যে, আমি উনাকে মুহব্বত করি। আর আমি যখন উনাকে মুহব্বত করি, তখন আমি উনার কান হই, তিনি আমার কুদরতী কান মুবারক-এ শ্রবণ করেন। আমি উনার চক্ষু হই, তিনি আমার কুদরতী চোখ মুবারক-এ দেখেন। আমি উনার যবান হই, তিনি আমার কুদরতী যবান মুবারক-এ কথা বলেন। আমি উনার হাত হই, তিনি আমার কুদরতী হাত মুবারক-এ ধরেন। আমি উনার পা হই, তিনি আমার কুদরতী পা মুবারক-এ চলেন। যদি তিনি আমার কাছে কিছু চান, আমি উনাকে তা সাথে সাথে দিয়ে দেই। আর যদি তিনি আমার কাছে কোনো সাহায্য তলব করেন, আমি উনাকে তা পুরা করে দেই।” (বুখারী শরীফ, ফতহুল বারী, উমদাতুল ক্বারী)

এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ ও সীরাতগ্রন্থসমূহে বর্ণিত রয়েছে, একদিন একজন মহিলা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক খিদমতে আরজ করলেন, ইয়া রসূল্লাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার সম্মানিত আহল (স্বামী) জিহাদে গেছেন। আর গত রাতে একটা স্বপ্ন দেখে অস্থির লাগছে। কোন ইত্মিনান পাচ্ছি না।

আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “আপনার সেই স্বপ্নটা কি?  মহিলা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি বললেন, স্বপ্নে দেখলাম, একটা বড় আকারের মৌমাছি কোথা থেকে যেন উড়ে এসে আমার ঘরে প্রবেশ করলো।” আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহিলা ছাহাবী উনাকে কিছু নছীহত মুবারক করলেন, অতঃপর বললেন, আপনার সেই স্বপ্নের তা’বীর (ব্যাখ্যা) হচ্ছে, আপনার স্বামী জিহাদে শহীদ হয়েছেন।

মহিলা ছাহাবী উক্ত তা’বীর শুনে নানা চিন্তা ফিকির করতে করতে বাড়ীতে ফিরছিলেন। পথিমধ্যে আফদ্বালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার সাথে দেখা হলো। তিনি উনার এলো-মেলো চুল, উসকু-খুসকু চেহারা দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, “হে মহিলা ছাহাবী! আপনার কি হয়েছে?” তিনি উনার সেই স্বপ্নের কথা বললেন। কিন্তু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে তা’বীর করেছেন তা বললেন না। হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, “আপনি উত্তম স্বপ্ন দেখেছেন। চিন্তা করবেন না। আজ রাতেই আপনার সম্মানিত আহল বাড়ীতে ফিরে আসবেন।” সুবহানাল্লাহ!

এ তা’বীর শুনে মহিলা ছাহাবী তিনি আশ্চর্য হলেন। কিছু না বলে বাড়ীতে চলে গেলেন। দেখা গেল, সেই রাতেই উনার সম্মানিত আহল বাড়ীতে ফিরে আসলেন। পরের দিন সকালে তিনি উনার সম্মানিত আহল উনাকে সাথে নিয়ে আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক খিদমতে হাজির হলেন।

আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে দেখে বললেন, “হে মহিলা ছাহাবী! আপনি কি আপনার সম্মানিত আহল উনার ফিরে আসার সংবাদ নিয়ে এসেছেন?” গতকাল আমার এখান থেকে ফিরে যাওয়ার সময় রাস্তায় কারো সাথে দেখা হয়েছিল কি? মহিলা ছাহাবী বললেন, হ্যাঁ, হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার সাথে দেখা হয়েছিল। আপনি উনাকে স্বপ্নের কথা বলেছিলেন কি? জি, বলেছিলাম। তিনি কি তা’বীর করেছিলেন? তিনি বলেছিলেন, আপনি কোন চিন্তা করবেন না, আপনার সম্মানিত আহল আজ রাতেই বাড়ী ফিরে আসবেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, হে মহিলা ছাহাবী! আমি আপনার স্বপ্নের যে তা’বীর করেছিলাম সেটাই সঠিক ছিল অর্থাৎ আপনার সম্মানিত আহল শহীদ হয়েছিলেন। কিন্তু হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি আপনার অবস্থা দেখে দয়াদ্র হয়েছিলেন এবং আপনার আহল ফিরে আসার সংবাদ দিয়ে আপনাকে আশ্বস্ত করেছিলেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনাকে আদেশ দিলেন যে, সেই ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে জীবিত করে উনার বাড়ীতে পৌঁছিয়ে দিন। হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি যা বলেছেন তাই হবে। কারণ আমি যাঁকে ‘ছিদ্দীক্ব’ লক্বব মুবারক হাদিয়া করেছি উনার কথা তো ভুল হতে পারে না। তখন হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি তাই করলেন। সুবহানাল্লাহ!

মূলত: ছিদ্দীক্ব স্তরের ওলীআল্লাহগণ উনারা যা বলেন তা বাস্তবায়িত হওয়ার বিষয়টি উনাদের কারামত শরীফ উনার অন্তর্ভুক্ত। সুবহানাল্লাহ!

‘ফাওয়ায়িদুল ফুয়াদ’ কিতাবে উল্লেখ রয়েছে, ‘কারামত’ শব্দের সাধারণ অর্থ হচ্ছে মাহাত্ম্য, অসাধারণ শক্তি। কিন্তু তাছাওউফের পরিভাষায় রূহানীশক্তি, যা রূহানী জজবায় বা মুহব্বতে মশগুল বীর সালিকের প্রাপ্ত পুরস্কার। যাকে মা’রিফাতের পরিভাষায়-

قوة الكن

(কুউওয়াতুল কুন) বলা হয়। অর্থাৎ কুন শক্তির অধিকার পাওয়া। মূলতঃ এ কুন শক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার নিজস্ব ব্যাপার। যাদ্বারা তিনি সমস্ত সৃষ্টি জগত ও তন্মধ্যস্থিত সবকিছুকে সৃষ্টি করেছেন। আসলে এটা ইচ্ছা ও আদেশের বহিঃপ্রকাশ।

সালিক বা মুরীদ যখন ফানাফিল্লাহ উনার মাক্বামে অর্থাৎ রূহানী জগতে মজজুবী স্বভাব হতে শান্ত হয়ে বাক্বাবিল্লাহ উনার মাক্বামে স্থানান্তরিত হন তখন উনাকে বিলায়েত (আধ্যাত্মিক রাজত্বের শাসনভার) দান করা হয়। আর রাজত্ব পরিচালনার জন্য উনাকে দেয়া হয় কুউওয়াতুল কুন শক্তি। ‘কুন’ শব্দের অর্থ হও। এ শক্তি দ্বারা কোন বিষয়, বস্তু ও প্রাণীকে আদেশ করা মাত্র তা কার্যকর হয়।

গউছুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি দীর্ঘ বারো বছর পূর্বে বরযাত্রীসহ যে ডুবে যাওয়া নৌকাটি  উদ্ধার করেছিলেন তা কিংবদন্তির মত সবার মুখে মুখে। তিনিও ছিলেন

قوة الكن

তথা কুন শক্তি মুবারক উনার অধিকারী অর্থাৎ ছাহিবু কুন ফাইয়াকূন মাক্বামপ্রাপ্ত ওলীআল্লাহ। সুবহানাল্লাহ!

একদিন এক খ্রিস্টান ব্যক্তি বললো, হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মর্যাদা সবার ঊর্ধ্বে। তিনি মৃত ব্যক্তিকে জীবিত করতে পারতেন। গউছুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, হে ব্যক্তি! আমাদের যিনি রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তো মৃত ব্যক্তিকে জীবিত করতে পারতেনই। এমনকি উনার উম্মতগণও তা পারেন। মনে রেখো, হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম তিনি কিন্তু قم باذن الله (মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশ মুবারকে জীবিত হও) বলে জীবিত করতেন।

আর আমি قم باذنى (আমার আদেশে জীবিত হও) বললেও জীবিত হয়। যদি প্রমাণ দেখতে চাও তাহলে বলো। তখন উক্ত খ্রিস্টান ব্যক্তি একটি কবরের প্রতি নির্দেশ করে বললো “এ কবরে শায়িত ব্যক্তিকে জীবিত করুন।”  তখন গউছুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া হযরত বড়পীর ছাহিব  রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সেই কবরের দিকে লক্ষ্য করে বললেন

قم باذنى

 (আমার আদেশে জীবিত হও)। আর সাথে সাথে জীবিত হয়ে দাঁড়িয়ে গেল। সুবহানাল্লাহ! (ফতহুল গইব, রওজাতুল ক্বাইয়ুমিয়াহ)

সুলত্বানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও ছিলেন ‘ছাহিবু কুন ফাইয়াকূন’ মাক্বামপ্রাপ্ত ওলীআল্লাহ। এ বিষয়ে উনার সর্বজন বিদিত একটা কারামত উল্লেখ করা যায়। তিনি আনা সাগরের সম্পূর্ণ পানি একটা ছোট পাত্রের মধ্যে নিয়ে এসেছিলেন। সুবহানাল্লাহ!

আরো উল্লেখ্য, বাদশাহ জাহাঙ্গীরের উজিরে আ’যম ছিল আসফ খাঁ। সে ছিল শিয়া। সে সবসময় বাদশাহকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করতো।

অপর দিকে বাদশাহর দরবারে একজন মুফতী ছিলেন। উনার নাম হযরত আব্দুর রহমান রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি ছিলেন আফদ্বালুল আওলিয়া, ইমামে রব্বানী হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুরীদ। তিনি বাদশাহকে সবসময় হক্বের উপর ইস্তিক্বামত থাকতে পরামর্শ দিতেন। একবার উজিরে আ’যম আসফ খাঁর নেতৃত্বে শিয়ারা ইউরোপ থেকে চৌদ্দ জন পাদ্রীকে নিয়ে আসলো। বাদশা যাতে খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করতে রাজী হয়। পাদ্রীরা এসে বাদশাহর দরবারে বীজ লাগালো, তাতে সাথে সাথে গাছ হয়ে ফল হলো। আগুন ব্যতীত ভাত পাকালো। বাদশাহ সেটা বুঝতে না পেরে তাদের অনুরক্ত হয়ে গেল। খ্রিস্ট ধর্ম গ্রহণ করবে বলে এক প্রকার সিদ্ধান্ত নিলো। মুফতী হযরত আব্দুর রহমান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বিষয়টি আফদ্বালুল আউলিয়া, ইমামে রব্বানী হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে অবহিত করলেন। আফদ্বালুল আউলিয়া ইমামে রব্বানী হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, তাদেরকে থাকতে বলো, আমি আসতেছি। তিনি বাদশাহর দরবারে এসে পাদ্রীদেরকে বললেন, “তোমরা তোমাদের কথিত কারামত দেখাও দেখি। তারা তাদের কথিত কোন কারামত দেখাতে পারলো না। ভয়ে থর থর করে কাঁপতে লাগলো।  আর আকুতি-মিনতি করে বার বার ক্ষমা চাইতে লাগলো। তখন তিনি তাদেরকে দু’ভাগ হতে বললেন। তারা দু’ভাগ হলো। তিনি তাদের একভাগকে বললেন-

موتوا باذن الله

(তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশে মরে যাও) সাথে সাথে তারা মারা গেল। অপর ভাগকে বললেন, দেখতো তারা জীবিত না মৃত। তারা ভালভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বললো, “তারা মৃত”। তিনি বললেন, “তোমরা তাদেরকে জীবিত করো।” তারা জীবিত করতে পারলো না। তাই তারা হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ক্বদম মুবারক ধরে তাদের সঙ্গীদেরকে জীবিত করে দেয়ার জন্য কান্নাকাটি করলো। তখন আফদ্বালুল আউলিয়া ইমামে রব্বানী হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তাদের (মৃতদের) প্রতি লক্ষ্য করে বললেন-

قوموا باذن الله

(তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার মুবারক আদেশে জীবিত হও)। সাথে সাথে তারা জীবিত হলো। এবার অপর ভাগের প্রতি লক্ষ্য করে তিনি বললেন-

موتوا باذن الله

(তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশে মরে যাও) সাথে সাথে তারাও মারা গেল। জীবিতদেরকে বললেন, তাদেরকে জীবিত করো। তারা তাদেরকে জীবিত করতে পারলো না। তাই তারা আফদ্বালুল আউলিয়া হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ক্বদম মুবারক ধরে তাদের সঙ্গীদেরকে জীবিত করে দেয়ার জন্য কান্নাকাটি করলো। তখন তিনি তাদেরকেও জীবিত করলেন। ইহা দেখে বাদশাহ জাহাঙ্গীরসহ সবাই তওবা করলো এবং বাইয়াত গ্রহণ করলো। ইমামে রব্বানী হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “সেদিন আমার ক্বইয়ূমিয়াতের হাল এমনভাবে গালিব (প্রবল) হয়েছিল যে, আমি যদি আসমানকে যমীন এবং যমীনকে আসমান হতে বলতাম তাহলে তাই হতো।” সুবহানাল্লাহ!

প্রসঙ্গতঃ বলতে হয়, খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ইমামুল আইম্মাহ্, মুহ্ইউস্ সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, সম্মানিত আহলে বাইত ও আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার সম্মানিত হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বেমেছালভাবে ‘কুউওয়াতুল কুন’ শক্তির অধিকারী।

উনার মধ্যে শৈশবকাল থেকে এগুণের বিকাশ ঘটেছিল। তিনি যখন যা বলতেন তাই হতো। তখন অনেকেই উনার ভবিষ্যৎ জীবন নিয়ে ভাবতেন। সম্মান-ইজ্জত করতেন। মুহব্বতে, আবেগে আপ্লুত হতেন। সঙ্গী-সাথীরা অনেক সময় হতভম্ব হয়ে যেতেন। কারণ তিনি যার পক্ষে কথা বলতেন তিনি কামিয়াব হতেন। যার বিপক্ষে বলতেন তার পরাজয় অনিবার্য হয়ে পড়তো। এরূপ হাজার-হাজার ঘটনা রয়েছে। স্বল্প পরিসরে যার বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া সম্ভব নয়। তবে এক/দুটির উল্লেখ না করাটাও আমানতের খিয়ানতে পর্যবসিত হবে। যার কারণে এক/দুটি ঘটনা পাঠকগণের খিদমতে পেশ করা হলো।

ওলীয়ে মাদারজাদ, কুতুবুজ্জামান, মুসতাজাবুদ্ দা’ওয়াত, ছাহিবে কাশ্ফ ওয়া কারামাত, আওলাদে রসূল, আমাদের সম্মানিত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার একজন খাদিম ছিলেন। উনার সাথে একদিন আলোচনা হলো। তিনি বললেন, শৈশবকাল থেকে আমরা হযরত মুজাদ্দিদ আ’যম আলাইহিস সালাম উনার মধ্যে এইসব গুণাবলী দেখে আসছি। উনাদের কয়েকটা বাস ছিল। যা গুলিস্থান-মীরপুর  রোডে চলতো। একদিন রাস্তায় বাসে সমস্যা দেখা দিল। আমি মেরামত করতে লাগলাম। প্রয়োজনীয় অনেক যন্ত্রাংশ পাওয়া যাচ্ছিল না। রাত বেড়ে যাওয়ার কারণে দোকান-পাটও বন্ধ হয়ে গেছে। এদিকে অনেক রাত পর্যন্ত আমাকে বাসায় ফিরতে না দেখে উনার সম্মানিত পিতা হযরত মুজাদ্দিদ আ’যম আলাইহিস সালাম উনাকে পাঠিয়ে দিলেন। তিনি এসে আমাকে মেরামত করতে দেখে বললেন, “কি আগামী কাল সকাল থেকে চালানো যাবে না?” আমি একটু গোস্বার স্বরে বললাম, যাবে। আপনারা মালিকের ছেলে, যা বলবেন সেটা কি আর না হয়। আমি জানতাম দু’ তিন দিনের আগে এটা চলানোর উপযুক্ত হবে না। তিনি বললেন, চিন্তা করবেন না। ইনশাআল্লাহ আগামী কাল সকাল থেকে যথারীতি এটা চালানো যাবে। একথা শুনে আমার গোস্বা আরো বেড়ে গেল। কারণ আমি সবসময় বাসের সাথে আষ্টে-পৃষ্টে জড়িত। অথচ উনার সাথে এর কোন সম্পর্কই নেই। বললাম, হ্যাঁ, আপনারা তো আসমান-যমীন এক করে দিতে পারেন। তিনি কিন্তু  কোন রাগ করলেন না। বরং মধুমাখা স্বরে বললেন, “আপনি কাজ করতে থাকুন। দেখবেন ঠিক হয়ে যাবে।” আর সত্যি অল্প সময়ের মধ্যে সেটা ভাল হয়ে গেল। সুবহানাল্লাহ! এতো অল্প সময়ে বাসটি ভাল হওয়ার কারণে আমি উনার চেহারা মুবারক উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম। ফিকির করতে লাগলাম, কি ব্যাপার! কি ঘটলো!! ইত্যবসরে তিনি আবারো আমাকে সম্বোধন করে বললেন, “কি ভাবছেন? চলুন। বাড়ী চলুন। রাত অনেক হয়েছে।”

তিনি একদিন এক মুরীদকে বললেন, তোমাদের রিয়াজত-মাশাক্কাত, যিকির-ফিকিরের সময় তো এখনই।  এই বয়সে যদি তা করতে না পারো তাহলে আর কখন করবে? এক/দুই ঘণ্টা ঘুমালেই তো যথেষ্ট। সেই মুরীদ বললো- সেই দিন হতে আমার এক থেকে দুই ঘণ্টার বেশি ঘুম হতো না। সুবহানাল্লাহ!

আরেকবার উনার কাছে অন্য একজন মুরীদ আসলেন। তিনি হজ্জে যাবেন সেজন্য দোয়া প্রার্থনা করলেন। তিনি তাকে দোয়া করলেন এবং বললেন, যাও, তুমি আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে যা চাবে তাই পাবে। সেই মুরীদ মদীনা শরীফে গেলেন। রওজা শরীফ উনার নিকটে দাঁড়িয়ে সবিনয়ে জানালেন, ইয়া রসূল্লাল্লাহ ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার “সুলত্বানুল আযকার” যিকির জারী করে দিন। প্রার্থনা শেষ হতে না হতেই উনার “সুলত্বানুল আযকার” যিকির জারী হলো। সারা শরীরে “আল্লাহ” আল্লাহ” যিকির শুরু হলো। তিনি বলেন, “আমি চলে আসলাম অবস্থান স্থলে। সারা রাত কেটে গেল। ঘুম হলোনা।  পরের দিন আবারও রওজা শরীফ উনার নিকটে গিয়ে বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি সহ্য করতে পারছি না। আমার যিকির বন্ধ করে দিন। আর সাথে সাথে তা বন্ধ হয়ে গেল। সুবহানাল্লাহ! এরূপ অসংখ্য-অগনিত ঘটনা রয়েছে।

মূলতঃ যারা বলে, কোন মানুষ কুন ফাইয়াকূনের মালিক বা অধিকারী হতে পারে না তাদের এ বক্তব্য সম্পূর্ণ ভুল, অশুদ্ধ, অজ্ঞতা ও মূর্খতাসূচক। সাথে সাথে তা কুফরীও বটে। কারণ মহান আল্লাহ পাক উনার দেখা মুবারক, শুনা মুবারক, জানা মুবারক ইত্যাদি কোনটিই মানুষের মত নয়। সেটা সম্পূর্ণরূপে কুদরত মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত। যারা বলবে মানুষের মত তারা কাফির, মুশাবিহা ফিরক্বা, বাতিল বাহাত্তর দলের একদল। যাদের আক্বীদা মহান আল্লাহ পাক উনারও মানুষের মত হাত, পা, কান, চোখ ইত্যাদি রয়েছে। তিনিও মানুষের মত দেখেন, শুনেন, জানেন। নাউযুবিল্লাহ!

প্রকৃতপক্ষে যেখানে মহান আল্লাহ পাক উনার হাত মুবারক, পা মুবারক, চোখ মুবারক ইত্যাদি সম্পর্কে বলা হয়েছে সেখানে উনার কুদরত মুবারক বুঝানো হয়েছে। কাজেই “ওলীআল্লাহগণ উনাদের আদেশের মত মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশ মুবারক”, মনে করা যাবেনা। বরং “মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশ মুবারক উনার অনুসরণে ওলীআল্লাহগণ উনাদের আদেশ” বলা যেতে পারে। কারণ মহান আল্লাহ পাক তিনি কারো মুহতাজ নন। এমনকি তিনি বরকতময় الله (আল্লাহ) লফ্জ মুবারক উনার মুহতাজও নন। তিনি উক্ত লফজ মুবারক হতেও পবিত্র। (মুকাশাফাতে আইনীয়া, মাকতুবাত শরীফ)

আর ওলীআল্লাহগণ মহান আল্লাহ পাক উনার মুহতাজ। মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহতাজ। উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের গুণে গুণান্বিত।

মহান আল্লাহ পাক উনার গুণে গুণান্বিত হলে যদি মহান আল্লাহ পাক হওয়ার দাবি করা বুঝায় তাহলে সুওয়ালে উল্লেখিত লক্বব মুবারক উনার সুওয়ালকারীরাসহ সবাই মহান আল্লাহ পাক হওয়ার দাবীকারী। সবাইতো দেখে, শুনে, বুঝে। তাহলে তারাও মহান আল্লাহ পাক হওয়ার দাবী করলো। সুতরাং তারা সকলেই কাফির। নাউযুবিল্লাহ! কারণ মহান আল্লাহ পাক তিনি তো দেখেন, শুনেন। তাছাড়া “হাকিম” বিচারক, সেও মহান আল্লাহ হওয়ার দাবিদার। কারণ মহান আল্লাহ পাক তিনি হচ্ছেন হাকিম। মানুষ হাকিম হয় কিভাবে? আবার অনেক বৈজ্ঞানিক আছেন যারা অনেক নতুন নতুন জিনিস আবিষ্কার করেন। ওলীআল্লাহ বিদ্বেষীদের ফতওয়া মুতাবিক তারাও মহান আল্লাহ পাক হওয়ার দাবীদার, কাফির। আর যদি তা না হয়, তাহলে ওলীআল্লাহগণ উনাদের ইশারায় বা ওসীলায় আবিষ্কৃত হলে উনারা মহান আল্লাহ পাক হওয়ার দাবিকারী হবেন কেন?

আমরা ইতোমধ্যেই এই লেখায় উল্লেখ করেছি যে, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, মাহবূবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী, গউছুল আ’যম হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত তরীক্বত, মুজাদ্দিদে যামান, সুলত্বানুল হিন্দ হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি, ক্বইয়ূমে আউওয়াল হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারাসহ অনেক আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা ছিলেন “ছাহিবু কুন ফাইয়াকূন” লক্বব মুবারক উনার অধিকারী। উনারা যদি মহান আল্লাহ হওয়ার দাবীকারী না হন তাহলে পঞ্চদশ শতকের মুজাদ্দিদ, খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, মুজাদ্দিদে আ’যম, সুলত্বানুল আরিফীন, হাকিমুল হাদীছ, আহলে বাইত ও আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা, ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার সম্মানিত হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক হওয়ার দাবীকারী হবেন কেন? উনার শানে এই তোহমত কেন? মুলতঃ ইহা জাহিলদের জিহালতী আর হিংসুকদের হিংসার প্রতিফলন। জাহিলরা হিংসার বশবর্তী হয়ে উনার শানে এরূপ মিথ্যা তোহমত (অপবাদ) দিয়ে তারা যে আসলেই মালউন ইবলীসের যোগ্য উত্তরসূরি তা প্রমাণ করে থাকে। ইবলীস যেমন আবুল বাশার হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার শ্রেষ্ঠত্ব দেখে সহ্য করতে পারেনি। হিংসার আগুনে জ্বলে-পুড়ে ছারখার হয়েছিল। তারাও মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার শ্রেষ্ঠত্ব, মর্যাদা- মর্তবা দেখে হিংসার আগুনে জ্বলে-পুড়ে ছারখার হচ্ছে। উনার প্রতি তারা হিংসা ও বিদ্বেষ পোষণ করতে গিয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশ মুবারক লংঘন করছে। ফলে তারা কুফরীতে নিমজ্জিত হচ্ছে। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

ولا تتمنوا ما فضل الله به بعضكم على بعض

অর্থ : মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাদের একজনের উপর অন্যজনকে যে ফযীলত দিয়েছেন তোমরা (হিংসার বসবর্তী হয়ে) তার আকাঙ্খী হয়ো না। (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩২)

কাজেই যারা বলে এবং বিশ্বাস করে যে, “ছাহিবু কুন ফাইয়াকূন” লক্ববধারী নিজে মহান আল্লাহ হওয়ার দাবীকারী, তারা প্রকারান্তরে মহান আল্লাহ পাক উনার এবং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের আদেশের বিরোধিতাকারী। কারণ মহান আল্লাহ পাক তিনি স্বয়ং নিজেই স্বীয় গুণে গুণাম্বিত হওয়ার জন্য আদেশ মুবারক করেছেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

صبغة الله ومن احسن من الله صبغة

অর্থ : “তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার রঙে রঞ্জিত হও। মহান আল্লাহ পাক উনার চেয়ে উত্তম রঞ্জনকারী আর কে আছেন? (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৩৮)

উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

تخلقوا باخلاق الله

অর্থ : “তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার চরিত্রে চরিত্রবান হও।” (ইহইয়াউ উলূমিদ্দীন, তাফসীরে রাযী, রূহুল মাআনী ইত্যাদি)

অর্থাৎ ওলীআল্লাহগণ উনাদের মাথার তালু থেকে পায়ের তলা পর্যন্ত মহান আল্লাহ পাক উনার গুণে গুণাম্বিত। উনারা যা চান মহান আল্লাহ পাক তিনি সেটাই দেন। উনারা যেটা হতে বলেন, সেটাই হয়। আর তখনই উক্ত ওলীআল্লাহ উনাকে “ছাহিবু কুন ফাইয়াকূন” বলা হয়।

এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, একবার হযরত বাহলুল দানা রহমতুল্লাহি আলাইহি নামক একজন মজ্জুব ওলীআল্লাহ। তিনি উনার পীর ছাহিব ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন, হুযূর! আপনি কেমন আছেন? উত্তরে তিনি বললেন, খুব ভাল। এরূপ ভাল যে, আমি যা চাই সেটাই হয়। আর আমি যেটা চাই না সেটা হয়না।” সুবহানাল্লাহ!

মুরীদ সবিনয়ে আরজ করলেন। হুযূর! বেয়াদবী ক্ষমা চাই। এটা কেমন হাল? আপনি যা চান তাই হয়, আর যা চান না, তা হয় না? দয়া করে এর হাক্বীক্বত বর্ণনা করবেন কি?

তখন পীর ছাহিব ক্বিবলা তিনি বললেন, মূলতঃ আমি আমার মতকে মহান আল্লাহ পাক উনার মতের সাথে মিলিয়ে দিয়েছি অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি যা চান আমি সেটাই চাই। আর সেটাই হয়। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি যেটা চাননা, আমিও সেটা চাইনা। কাজেই সেটা হয় না। সুবহানাল্লাহ!

ক্বইয়ূমুয যামান

এ প্রসঙ্গে বিশ্বখ্যাত ও আলোড়ন সৃষ্টিকারী কিতাব “রওজাতুল ক্বইয়্যূমিয়াত” এর ১ম খ- ১৭২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

قیوم اس شخص کو کھتے ھیی کہ جس کے ما تحت تمام اسماء وصفات شیونات اعتبارات اور اصول بوں اور تمام گزاشتہ اور آنندہ مخلوقات کے عالم موجودات، انسان، وحوش، پرند، نباتات، ھرذی روح، پتھر، درخت، بروبحر  کی برشی، عرش، کرسی، لوح، قلم، ستاررہ، ثوابت، سورج، چاند، اسمان، بروج سب اس کے سائے میں بوں. افلاک و بروج کی حرکت وسکون، سمندرون کی لہروں کی حرکت، در ختوں کے بتوں کا بلنا، بارش کس قطروں کا گرنا، پھلوں  کا پکنا، پرندوں ک چونچ پھیالانا، دن، رات کا پیدا ہونا، اور گردش کنندہ اسمان کی موافق یا  موافق رفتار سب کچہ اس کے حکم سے ہوتا ھے، بارش کا ایک قطرہ ایسا نہیں جو اسکی اطلاع بغیر کرتا ہو، زمیں پر حرکت وسکون اسکی مرض کے بغیر نھیں جور ام وخوشی اور ہے چینی اور رنج اھل زمین کو ہوتا ھے اس کے حکم بغیر  نھی ہوتا. کوئی گھڑی، کوئی بفتہ، کوئی مھینہ، کوئی سال، ایسا نھیں جواس کے حم بغیر اپنے اپ میں نیکی بدی کا تصرف کر سکے، غلہ کی پیدائش، نباتات کا اگنا غرضیکہ جو کچہ بھی خیال میں اسکتا ہے وہ اسکی مرضی اور حکم بغیر ظھور میں نھیں اتا. روئے زمیں پر جس قدر زاھد، عابد، ابرار اور مقرب تسبیح، ذکر فکر تقدیس اور تنزیہ ھيں عبادت گاہوں، جھو نپڑوں کئیوں پھاڑ اور دریا کنارے زبان قلب روح سر خفی اخفی اور نفس سے شاغل اور معتکف ھیں اور حق طلبی کی راہ میں مشغول ھیں سب اسی کی مرض سے مشغول ھیں گو انہیں ھیں  اس بات کا علم ہویا نہ ھو.

অর্থ: ‘ক্বইয়্যূম’ এমন মহান ব্যক্তিত্বকে বলা হয়, সমস্ত নাম, ছিফত এবং সমস্ত মহত্ব তথা মর্যাদা এবং সমস্ত বিধি-বিধান যাঁর নিয়ন্ত্রণে। অতীত এবং ভবিষ্যত সৃষ্টি জগতের সমস্ত সৃষ্টি, যেমন মানুষ (জীব জানোয়ার) পশু-পাখি, তরুলতা, প্রত্যেক জীব, পাথর, গাছ-পালা, পানি-স্থলের সব বস্তু, আরশ কুরসী, লওহ-কলম, চন্দ্র-সূর্য, তারকারাজী আসমানের নক্ষত্রের প্রবাহ এবং স্থিরতা, এমনকি সমুদ্রের প্রবাহ এবং স্থিরতা এমনকি সমুদ্রের ঢেউ তরঙ্গের এবং গাছের পাতা ঝড়ে পড়া, এমনকি বৃষ্টিপাত হওয়া, পাখির ঠোঁট ফেলা, দিন রাতের সৃষ্টি হওয়া, আসমানের কক্ষপথে সমস্তকিছুই যথাযথ পরিভ্রমণ ক্বইয়্যূমুয্ যামান উনার নির্দেশক্রমেই হয়ে থাকে। বৃষ্টির এক ফোঁটা পানিও উনার অজ্ঞাতসারে বর্ষিত হয় না। যমীনে ভূমিকম্প হওয়া ও যমীন স্থির থাকা উনার ইচ্ছাতেই হয়ে থাকে। (এমনকি) আরাম-আয়েশ, অস্থিরতা, যমীনবাসীর মৃত্যু উনার নির্দেশেক্রমে হয়ে থাকে। কোন ঘণ্টা, কোন দিন, কোন সপ্তাহ, কোন মাস, এমনকি কোন বৎসর এমন নয় যে, উনার নির্দেশের বাইরে নিজে নিজেই তার ভাল মন্দের বিচার করে চলতে পারে এবং শস্যের সৃষ্টি, তরুলতার উৎপাদন মোটকথা যা কিছুই ধারণায় আসতে পারে সবকিছু উনার নির্দেশ ও ইচ্ছার বাইরে প্রকাশ পায় না। যমীনে যে পরিমাণ যাহিদ, আবিদ, নেকবখ্ত, নৈকট্যপ্রাপ্তগণ, তাসবীহ, যিকির, ফিকির, পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা এবং ইবাদতখানা, পাহাড়, সমুদ্র, যবান, ক্বলব, রূহ, সির, খফী, আখফা, নফস্ ইত্যাদি লতীফাসমূহের মুরাকাবায় ব্যস্ত এবং মু’তাকিফ অর্থাৎ নিভৃতে অবস্থানকারী এবং সত্য সন্ধানে মশগুল আছেন এমন সবকিছুই ক্বইয়্যূমুয্ যামান উনার ইচ্ছাতেই হয়ে থাকে। যদিওবা তাদের এই বিষয়ে জ্ঞান থাকুক বা না থাকুক।”

মোটকথা, মানুষ অবশ্যই ‘ক্বইয়্যূম’ হতে পারে। তবে মহান আল্লাহ পাক তিনি যে অর্থে ‘ক্বাইয়্যূম’ সে অর্থে নয়। যেমন, মানুষ ‘মাওলানা’ হয়ে থাকে, তবে মহান আল্লাহ পাক তিনি যে অর্থে ‘মাওলানা’ সে অর্থে নয়। মূলতঃ মানুষ ‘ক্বইয়্যূম’ হতে পারে বলেই মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং উনার সন্তান হযরত ইমাম মা’ছূম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদেরকেসহ আরো অনেককেই ‘ক্বইয়্যূম’ উপাধি প্রদান করেছেন।

আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা হলো- মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। উনার হুকুম বা নির্দেশেই জগতের সব কিছু পরিচালিত হয়। তবে তিনি জগত পরিচালনার ক্ষেত্রে যেরূপ হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে নিয়োগ করেছেন, তদ্রুপ মানুষের মধ্যে যারা খাছ ওলীউল্লাহ তথা আবদাল, কুতুব, গাউছ এবং ‘ক্বইয়্যূম’ রয়েছেন, উনাদের কাছেও তিনি জগত পরিচালনার অনেক দায়িত্ব ন্যস্ত করে থাকেন। অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত নবী-রসূল আলইহিমুস সালাম, হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহমি ও হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের মাধ্যমেই জগত পরিচালনা করে থাকেন। এটা মহান আল্লাহ পাক উনার অক্ষমতা নয় বরং সম্মান ও মর্যাদার কারণ। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি বান্দার সবকিছুই জানেন তারপরও হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা বান্দার আমল সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক উনাকে অবহিত করে থাকেন। এর অর্থ এই নয় যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি জানেন না, তাই হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা অবহিত করেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি যে হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম, হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের দ্বারা জগত পরিচালনা করেন, তার প্রমাণ পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যেই রয়েছে। যেমন পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

فالـمدبرات امرا

অর্থ: “জগতের কার্য নির্বাহকারী।” (পবিত্র সূরা নাযিয়াত শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫)

উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বিশ্বখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ “তাফসীরে খাযিন” ও “বাগবী শরীফ”-এ উল্লেখ আছে-

(فالـمدبرات امرا) قال حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه هم الـملئكة … قال عبد الرحمن بن سابط يدبر الامر فى الدنيا اربعة جبريل عليه السلام و ميكائيل عليه السلام وملك الموت عليه السلام واسرافيل عليه السلام اما جبريل فموكل بالوحى والبطش وهزم الجيوش واما ميكائيل عليه السلام فموكل بالمطر والنبات والارزاق واما ملك الموت فموكل بقبض الانفس واما اسرافيل فهو صاحب الصور.

অর্থ: “(কার্য নির্বাহকারী) হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, উনারা হলেন হযরত ফেরেশতা আলাইহিস সালাম! …. হযরত আব্দুর রহমান ইবনে সাবিত্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, চারজন হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা জগতের কার্য নির্বাহ করে থাকেন। হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম, হযরত মীকাঈল আলাইহিস সালাম, হযরত মালাকুল মঊত আলাইহিস সালাম ও হযরত ইসরাফীল আলাইহিস সালাম উনারা। হযরত জিররাঈল আলাইহিস সালাম তিনি ওহী, বাতাস ও সৈন্য পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত। হযরত মীকাঈল আলাইহিস সালাম তিনি বৃষ্টি, ফসল ও রিযিকের দায়িত্বে নিয়োজিত। হযরত মালাকুল মঊত আযরাঈল আলাইহিস সালাম তিনি রূহ কবয করার দায়িত্বে নিয়োজিত। আর হযরত ইসরাফীল আলাইহিস সালাম তিনি শিঙ্গায় ‘ফু’ দেয়ার দায়িত্বে নিয়োজিত।” কোন কোন তাফসীরে উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বিশেষ বিশেষ ওলীগণ উনাদের হাতে জগতের বিশেষ বিশেষ কাজের দায়িত্ব ন্যস্ত করার কথাও উল্লেখ আছে।”

এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে যে-

قال حضرت الامام احمد بن حنبل رحمة الله عليه فى مسنده ذكر اهل الشام عند على بن ابى طالب عليه السلام وهو بالعراق فقالوا العنهم يا امير الـمؤمنين قال لا سـمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول الابدال بالشام وهم اربعون رجلا كلما مات رجل ابدل الله مكانه رجلا يسقى بـهم الغيث وينتصربـهم على الاعداء ويصرف عن اهل الشام بهم العذاب.

অর্থ: “হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার ‘মুসনাদে আহমদ’ উনার মধ্যে উল্লেখ করেন। হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি যখন ইরাকে অবস্থান করছিলেন তখন উনার সম্মুখে শামবাসীদের সম্পর্কে আলোচনা হচ্ছিল। লোকজন বললো, হে আমীরুল মু’মিনীন! শামবাসীদের উপর বদদোয়া করুন। হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, না। কারণ আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, ‘আবদালগণ উনারা শামদেশেই থাকেন, উনারা সংখ্যায় চল্লিশজন। যখন উনাদের মধ্যে একজন ইন্তিকাল করেন তখন আরেকজন দিয়ে সে স্থান পূর্ণ করা হয়। সুবহানাল্লাহ! উনাদের মাধ্যমে শামবাসী বৃষ্টি পেয়ে থাকে, শত্রুর উপর বিজয়ী হওয়ার জন্যে সাহায্য পেয়ে থাকে এবং উনাদের মাধ্যমে তারা আযাব-গযব থেকে বেঁচে থাকে।” সুবহানাল্লাহ!

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত হয়েছে-

قال الطبرانى فى الكبير عن عبادة بن الصامت قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لا يزال الابدال فى امتى ثلاثون بـهم تقوم الارض وبـهم تـمطرون وبـهم تنصرون.

অর্থ: “হযরত ইমাম ত্ববারানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার “আল মু’জামুল কবীর” কিতাবে উল্লেখ করেন। হযরত উবাদা ইবনে ছামিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমার উম্মতের মধ্যে ত্রিশজন আবদাল সর্বদাই থাকবেন। উনাদের মাধ্যমেই যমীন কায়িম থাকবে, উনাদের মাধ্যমে মানুষ বৃষ্টি পাবে এবং উনাদের মাধ্যমে মানুষ সাহায্য প্রাপ্ত হবে।”

বিখ্যাত সীরাতগ্রন্থ ‘হিলইয়াতুল আউলিয়া’ নামক কিতাবে আরো বর্ণিত হয়েছে যে, হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

لا يزال اربعون رجلا يحفظ الله بهم الارض

অর্থ: “পৃথিবীতে এরূপ চল্লিশজন ব্যক্তি (ওলী) সর্বদাই থাকবেন। যাঁদের মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক তিনি যমীনকে হিফাযত করবেন।”

উক্ত ‘হিলইয়াতুল আউলিয়া’ কিতাবে আরো বর্ণিত হয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উক্ত প্রকার ওলীগণ উনাদের কথা উল্লেখ করার পর বলেন-

فيهم يـحيى ويـميت ويـمطر وينبت ويدفع االبلاء

অর্থ: “উনাদের মাধ্যমেই মানুষ বেঁচে থাকবে, মারা যাবে, বৃষ্টি পাবে, ফসল পাবে এবং বালা-মুছীবত দূর হবে।” (হিলইয়াতুল আউলিয়া)

এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো উল্লেখ আছে যে, হযরত মুয়ায বিন জাবাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

ثلاث من الابدال الذين بـهم قوام الدنيا

অর্থ: “আবদালগণ উনাদের মধ্যে এমন তিনজন রয়েছেন যাঁদের মাধ্যমে দুনিয়া কায়িম থাকবে।” (হিলইয়াতুল আউলিয়া)

হযরত ক্বতাদাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত তিনি বলেন-

لن تـخلو الارض من اربعين بـهم يغاث الناس وبـهم ينصرون وبـهم يرزقون

অর্থ: এরূপ চল্লিশজন লোক থেকে যমীন কখনো খালী থাকবেনা, উনাদের মাধ্যমে মানুষ বৃষ্টি পাবে, সাহায্যপ্রাপ্ত হবে এবং রিযিকপ্রাপ্ত হবে। (হিলইয়াতুল আউলিয়া)

এ প্রসঙ্গে আরো উল্লেখ আছে যে-

وسبعة فى سائر الامصار بـهم تسقون الغيث وبـهم تنصرون على العدو وبـهم يقيم الله امر الدنيا.

অর্থ: “সমস্ত শহরেই সাতজন এরূপ ওলী থাকেন উনাদের মাধ্যমে মানুষ বৃষ্টি লাভ করে, শত্রুর বিরুদ্ধে সাহায্যপ্রাপ্ত হয় এবং উনাদের মাধ্যমেই মহান আল্লাহ পাক তিনি জগতের কার্যসমূহ সম্পাদন করেন। অর্থাৎ জগত পরিচালনা করেন।” (হিলইয়াতুল আউলিয়া)

স্মরণীয় যে, জগতখ্যাত আলিমে দ্বীন, সুলত্বানুল আরিফীন, মুজাদ্দিদুয্ যামান, ইমামুল মুহাদ্দিছীন, তাজুল মুফাস্সিরীন, হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সূয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিশ্বখ্যাত ও সর্বজনমান্য কিতাব “আল হাবী লিল ফাতাওয়া”তে উল্লিখিত পবিত্র হাদীছ শরীফসমূহ উল্লেখ করতঃ এটাই প্রমাণ করেছেন যে, জগতে অসংখ্য গউছ, কুতুব, আবদাল, আওতাদ, নক্বীব, নুজাবা, আখইয়ার তথা আউলিয়ায়ে কিরাম আছেন, এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত থাকবেন, উনাদের মাধ্যমেই মহান আল্লাহ পাক তিনি জগত পরিচালনা করে থাকেন।  সুবহানাল্লাহ! কেননা উল্লিখিত পবিত্র হাদীছ শরীফ সমূহে এ বিষয়গুলো স্পষ্টভাবেই উল্লেখ আছে যে,

(১) بـهم يغاث الناس – উনাদের মাধ্যমে মানুষ সাহায্যপ্রাপ্ত হবে। (২) تنصرون على العدو – শত্রুর উপর বিজয়ী হওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্যপ্রাপ্ত হবে। (৩) يدفع البلاء والعذاب – উনাদের ওসীলায় বালা-মুছীবত, আযাব-গযব দূর হবে। (৪) يحيى ويميت – বেঁচে থাকবে এবং মৃত্যু হবে। (৫) ينبت ويرزقون- ফসল পাবে এবং রিযিক পাবে। (৬) يحفظ الارض – যমীন হিফাযত থাকবে। (৭) تقوم الارض – যমীন কায়িম থাকবে। (৮) قوام الدنيا – দুনিয়া কায়িম থাকবে। (৯) يقيم امر الدنيا – জগতের কার্যাবলী সম্পাদিত হবে।

উপরোক্ত পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের বর্ণনা দ্বারা প্রতিভাত হয় যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের হাতে জগত পরিচালনার দায়িত্ব ন্যস্ত করেছেন। অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি ওলীগণ উনাদের মাধ্যমে জগত পরিচালনা করে থাকেন। ওলীগণ উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার খলীফা বা প্রতিনিধি হিসেবেই জগতের কার্যসমূহ সম্পাদন করে থাকেন। অতএব, যাঁদের মাধ্যমে জগত ক্বায়িম থাকে উনারাই হচ্ছেন ‘ক্বইয়্যূমুদ্ দুনিয়া’ বা “ক্বইয়্যূমুয্ যামান”।

অতএব, যে অর্থে ‘ছাহিবু কুন ফাইয়াকূন’ ও ‘ক্বইয়্যূমুয যামান’ লক্বব বা উপাধি মুবারক মহান আল্লাহ পাক উনার মনোনীত ওলীআল্লাহগণ উনাদের সুমহান শানে প্রযোজ্য ঐ একই অর্থে জাব্বারিউল আউওয়াল এবং ক্বউইয়্যূল আউওয়াল লক্বব মুবারক দু’খানিও মুজাদ্দিদে আ’যম, মুহ্ইউস সুন্নাহ, মুর্শিদে আকবর, সুলত্বানুল আউলিয়া, আহলে বাইত ও আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম উনার সুমহান শান মুবারক উনার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। সুবহানাল্লাহ!

 

মুহম্মদ আখের আহমদ

দিরাই, সুনামগঞ্জ

সুওয়াল: তরীক্বতপন্থী এক ব্যক্তি মীলাদ শরীফ, ক্বিয়াম শরীফ, হাযির-নাযির, মুত্তালা আলাল গইব, আপাদমস্তক নূর, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বিশ্বাস করেন ও পালন করেন। এই জন্য তিনি মীলাদ শরীফ বিরোধী কোন ইমামের পিছনে নামায পড়েন না। কিন্তু দুঃখের বিষয় উনার মা, বাবা, আত্মীয়-স্বজন এক দেওবন্দী শেখের কাছে বাইয়াত হওয়ার কারণে উনার বাবা মৃত্যুর পূর্বে অছিয়ত করে যায়, তার জানাযা যেন মীলাদ শরীফ বিরোধী দেওবন্দী ইমাম পড়ায়, এই কারণে উক্ত ব্যক্তি তার বাবার জানাযা পড়েননি।

এখন আমার সুওয়াল হলো, উক্ত ব্যক্তি উনার বাবার জানাযা না পড়ে কি বাবার হক্ব নষ্ট করেছে অথবা ঠিক কাজ করেছে। দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে  উপকৃত করবেন।

জাওয়াব: পিতার জন্য পবিত্র মীলাদ শরীফ বিরোধী ইমামের দ্বারা জানাযা নামায পড়ানোর অছিয়ত করা শরীয়তসম্মত হয়নি। আর সন্তানের জন্য পবিত্র মীলাদ শরীফ বিরোধী ইমামের পিছনে জানাযা নামায পড়াও শরীয়তসম্মত নয়। তবে এক্ষেত্রে সন্তানের জন্য একাকী অথবা কয়েকজনকে সাথে নিয়ে আলাদাভাবে জানাযা পড়া উচিত ছিল। কিন্তু তারপরও পবিত্র মীলাদ শরীফ বিরোধী ইমামের পিছনে নামায পড়া জায়িয নেই। এ ফতওয়াই সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ফতওয়া। কেননা মীলাদ শরীফ উনার অর্থ হলো সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা-ছিফত মুবারক করা, উনার সুমহান শানে ছলাত শরীফ পাঠ করা, সালাম শরীফ পেশ করা। সুবহানাল্লাহ!

স্বয়ং যিনি খ¦ালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই উনার শ্রেষ্ঠতম রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা-ছিফত মুবারক করেছেন। এ বিষয়ে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বহু আয়াত শরীফ নাযিলও করেছেন। সুবহানাল্লাহ!

যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وما ارسلناك الا رحمة للعالمين

অর্থ: আমি আপনাকে সমগ্র আলমের জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছি। (পবিত্র সূরা আম্বিয়া শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১০৭)

আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

انا ارسلناك شاهدا ومبشرا ونذيرا لتؤمنوا بالله ورسوله وتعزروه وتوقروه وتسبحوه بكرة واصيلا.

অর্থ: নিশ্চয়ই আমি আপনাকে সাক্ষ্যদানকারী, দেখনেওয়ালা এবং সুসংবাদ দানকারী এবং সতর্ককারী বা ভয় প্রদর্শনকারী হিসেবে পাঠিয়েছি। এই কারণে যে, তোমরা ঈমান আনবে খ¦ালিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি এবং উনার যিনি শ্রেষ্ঠতম রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ঈমান আনবে এবং উনার খিদমত করবে এবং উনাকে সম্মান করবে এবং উনার ছানা-ছিফত করবে সকাল-সন্ধ্যা অর্থাৎ দায়িমীভাবে। (পবিত্র সূরা ফাতহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ- ৮, ৯)

মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

ولكن رسول الله وخاتم النبيين

অর্থ: বরং তিনি হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল এবং সর্বশেষ নবী। (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৪১)

মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

انا اعطيناك الكوثر

অর্থ: নিশ্চয়ই আমি আপনাকে কাওছার হাদিয়া করেছি। (পবিত্র সূরা কাওছার শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-১)

মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

ورفعنا لك ذكرك

অর্থ: আমি আপনার মুবারক আলোচনাকে বুলন্দ বা সমুন্নত করেছি। (পবিত্র সূরা ইনশিরাহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৪)

আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

قَدْ أَنزَلَ اللّـهُ إِلَيْكُمْ ذِكْرًا . رَّسُولا

অর্থ: নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাদের প্রতি অর্থাৎ উম্মতদের প্রতি যিকির স্বরূপ একজন রসূল অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাঠিয়েছেন। (পবিত্র সূরা ত্বলাক্ব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১০,১১)

মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

يايها الناس قد جاءتكم موعظة من ربكم وشفاء لـما فى الصدور وهدى ورحمة للمؤمنين. قل بفضل الله وبرحمته فبذالك فليفرحوا هو خير مـما يجمعون.

অর্থ: হে মানুষেরা! তোমাদের রব তায়ালা উনার তরফ থেকে তোমাদের নিকট এসেছেন নছীহতকারী, অন্তরের আরোগ্য দানকারী, হিদায়েত দানকারী এবং মু’মিনদের জন্য রহমত দানকারী। (অতএব হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি (উম্মতদেরকে) বলে দিন, মহান আল্লাহ পাক উনার ফদ্বল ও রহমত স্বরূপ আপনাকে যে তারা পেয়েছে, সেজন্য তাদের কর্তব্য তথা ফরয হচ্ছে খুশি প্রকাশ করা। এই খুশি প্রকাশের ইবাদত মুবারক হবে তাদের সমস্ত ইবাদত বা আমল অপেক্ষা উত্তম বা শ্রেষ্ঠ। (পবিত্র সূরা ইউনুস শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৭-৫৮)

এমনিভাবে মহান আল্লাহ তিনি আরো অনেক পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল করেছেন যেখানে সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা-ছিফত মুবারক করা হয়েছে।

একইভাবে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যেও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বেমেছাল ছানা-ছিফত মুবারক করা হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!

যেমন তিরমিযী, দারিমী, মিশকাত, মিরকাত, মাছাবীহুস সুন্নাহ ইত্যাদি কিতাবে বর্ণিত রয়েছে-

عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه قال جلس ناس من اصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم فخرج حتى اذا دنا منهم سمعهم يتذاكرون قال بعضهم ان الله اتخذ ابراهيم خليلا وقال اخر موسى كلمه تكليما وقال اخر فعيسى كلمه الله وروحه وقال اخر ادم اصطفاه الله فخرج عليهم رسول الله صلى الله عليه وسلم وقال قد سمعت كلامكم وعجبكم ان ابرهيم خليل الله وهو كذلك وموسى نجى الله وهو كذلك وعيسى روح الله وكلمته وهو كذلك وادم اصطفاه الله وهو كذلك الا وانا حبيب الله ولا فخر وانا حامل لواء الحمد يوم القيمة تحته ادم فمن دونه ولا فخر وانا اول شافع و اول مشفع يوم القيمة ولا فخر وانا اول من يحرك حلق الجنة فيفتح الله لى فيدخلنيها ومعى فقراء المؤمنين ولا فخر وانا اكرم الاولين والاخرين على الله ولا فخر. وفى رواية عن حضرت جابر رضى الله تعالى عنه ان النبى صلى الله عليه وسلم قال انا قائد الـمرسلين ولا فخر وانا خاتم النبين ولا فخر.

অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, একদা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা এক স্থানে বসে (অতীতের নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের মর্যাদা-মর্তবা সম্পর্কে) আলোচনা করছিলেন। এ সময় নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাদের নিকটবর্তী স্থানে পৌঁছে (আড়াল থেকে) উনাদের কথাবার্তা-আলোচনাগুলি শুনলেন। উনাদের একজন বললেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনাকে খলীল হিসেবে গ্রহণ করেছেন। আরেকজন বললেন, হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি এমন ছিলেন যে, আল্লাহ পাক তিনি উনার সাথে সরাসরি কথা বলেছেন। অপর একজন বললেন, হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন কালীমাতুল্লাহ ও রূহুল্লাহ এবং আরেকজন বললেন, হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে আল্লাহ পাক তিনি ছফীউল্লাহ বানিয়েছেন অর্থাৎ উনাকে কুদরতী হাত মুবারক-এ সৃষ্টি করেছেন। সুবহানাল্লাহ! এ সময় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সম্মুখে উপস্থিত হয়ে বললেন: আমি আপনাদের কথাবার্তা-আলোচনা শুনেছি এবং আপনারা যে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন তাও আমি জেনেছি। নিশ্চয়ই হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তিনি যে খলীলুল্লাহ ছিলেন ইহা সত্যই। হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি যে সরাসরি আল্লাহ পাক উনার সাথে কথা বলেছেন ইহাও সত্য কথা। হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম তিনি যে রূহুল্লাহ ও কালীমুল্লাহ ছিলেন ইহাও সত্য। এবং হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনি যে আল্লাহ পাক উনার মনোনীত ছিলেন অর্থাৎ উনাকে কুদরতী হাত মুবারক-এ সৃষ্টি করেছেন ইহাও সম্পূর্ণ সত্য। তবে সাবধান! আমার সম্পর্কে আপনারা জেনে রাখুন, আমি হলাম আল্লাহ পাক উনার হাবীব। এতে আমার কোনো ফখর নেই। ক্বিয়ামতের দিন প্রশংসার পতাকা আমার হাত মুবারক-এ থাকবে আর উক্ত পতাকার নিচে হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনিসহ অন্যান্য সকল হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা অবস্থান করবেন। এতেও আমার কোনো ফখর নেই। ক্বিয়ামতের দিন আমিই হবো সর্বপ্রথম শাফায়াতকারী এবং সর্বপ্রথম আমার সুপারিশই কবুল করা হবে। এতে আমার কোনো ফখর নেই। এছাড়া আমিই সর্বপ্রথম জান্নাতের দরজায় কড়া নাড়া দিবো, স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি আমার জন্য তা খুলে দিবেন এবং আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। আর আমার সাথে থাকবেন কতিপয় গরিব মু’মিন-মুসলমান। এতে আমার কোনো ফখর নেই। সর্বোপরি আমিই আল্লাহ পাক উনার নিকট পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের চেয়ে সম্মানিত। এতেও আমার কোনো ফখর নেই।”

অপর এক রিওয়ায়েতে হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “ক্বিয়ামতের দিন আমিই হবো সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের ক্বায়িদ (পরিচালক)। এতেও আমার কোনো ফখর নেই এবং আমিই নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের আগমনের সিলসিলা সমাপ্তকারী। এতেও আমার কোনো ফখর নেই।”

তিরমিযী, দারিমী, মিশকাত, মাছাবীহুস সুন্নাহ ইত্যাদি হাদীছ শরীফ-এর কিতাবে বর্ণিত রয়েছে-

عن حضرت انس رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم انا اول الناس خروجا اذا بعثوا وانا قائدهم اذا وفدوا وانا خطيبهم اذا انصتوا وانا مستشفعهم اذا حبسوا وانا مبشرهم اذا ايسوا الكرامة والمفاتيح يومئذ بيدى ولواء الحمد يومئذ بيدى وانا اكرم ولد ادم على ربى يطوف على الف خادم كانهم بيض مكنون او لؤلؤ منثور

অর্থ: হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, ক্বিয়ামতের দিন যখন মানুষদেরকে কবর থেকে উঠানো হবে তখন আমিই সর্বপ্রথম রওযা শরীফ হতে বের হয়ে আসব। আর যখন লোকেরা দলবদ্ধ হয়ে আল্লাহ পাক উনার দরবার শরীফ-এ উপস্থিত হওয়ার জন্য রওয়ানা হবে, তখন আমিই হব তাদের অগ্রগামী ও প্রতিনিধি। আর আমিই হব তাদের মুখপাত্র, যখন তারা নীরব থাকবে। আর যখন তারা আবদ্ধ হয়ে পড়বে, তখন আমি হব তাদের সুপারিশকারী। আর যখন তারা নিরাশ হয়ে পড়বে, তখন আমি তাদেরকে সুসংবাদ প্রদান করব। মর্যাদা এবং কল্যাণের চাবিসমূহ সেদিন আমার হাতে থাকবে। আল্লাহ পাক উনার প্রশংসার ঝা-া সেদিন আমার হাতেই থাকবে। আমার পরওয়ারদিগার উনার কাছে হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার সন্তানদের মধ্যে আমিই সর্বাপেক্ষা অধিক মর্যাদাবান ও সম্মানিত হব। সেদিন হাজার হাজার খাদিম সুরক্ষিত ডিম কিংবা মুক্তার ন্যায় আমার চার পাশে ঘোরাফেরা করবে। সুবহানাল্লাহ!

অনুরূপভাবে খ¦ালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই উনার শ্রেষ্ঠতম রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান শানে ছলাত শরীফ ও সালাম শরীফ পেশ করেন। সুবহানাল্লাহ!

যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

ان الله وملئكته يصلون على النبى

অর্থ: নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার সকল হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান শানে ছলাত শরীফ পেশ করেন। সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৬)

সালাম শরীফ পেশ করা সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

سلم على الـمرسلين

অর্থ: সকল হযরত রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি সালাম। (পবিত্র সূরা ছফফাত শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৮১)

উল্লেখ্য, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন সকল রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সাইয়্যিদ অর্থাৎ তিনি হচ্ছেন সাইয়্যিদুল মুরসালীন ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সুবহানাল্লাহ!

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মি’রাজ শরীফ সফরকালে মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে তাশরীফ নিয়ে যখন ইরশাদ মুবারক করলেন

التحيات لله والصلوات والطيبات

অর্থ: সমস্ত সালাম, সমস্ত ছলাত ও সমস্ত পবিত্রতা খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনারই জন্য তখন জাওয়াবে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

السلام عليك ايها النبى ورحمة الله وبركاته

অর্থ: সুমহান শ্রেষ্ঠতম নবী আপনার প্রতিও সালাম এবং মহান আল্লাহ পাক উনার সমস্ত রহমত এবং উনার সমস্ত বরকত। সুবহানাল্লাহ!

কাজেই, যেই পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার মূল বিষয় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা-ছিফত মুবারক করা এবং উনার সুমহান শানে ছলাত শরীফ ও সালাম শরীফ পেশ করা এবং যা স্বয়ং যিনি খ¦ালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই করেন সেই পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার যে বিরোধী সে তো মুসলমানই নয়। ইমাম, খতীব, শেখ ইত্যাদি হওয়া তো পরের বিষয়।

মহান আল্লাহ পাক তিনি যেরূপ উনার শ্রেষ্ঠতম সম্মানিত রসূল নূরে মুজাসাসম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা-ছিফত মুবারক করেছেন, সালাম শরীফ পেশ করেছেন এবং ছলাত শরীফ পেশ করেছেন ও করে যাচ্ছেন তদ্রূপ মহান আল্লাহ পাক তিনি সমস্ত কায়িনাতবাসীকেও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান শানে ছানা-ছিফত মুবারক করার জন্য এবং ছলাত শরীফ ও সালাম শরীফ পেশ করার জন্য আদেশ মুবারক করেছেন। অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান শানে মীলাদ শরীফ পড়ার জন্য আদেশ মুবারক করেছেন। যার কারণে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে দেখা যায়, স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যামনাতেই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা পবিত্র মীলাদ শরীফ মাহফিলের ইন্তিজাম করেছেন। সুবহানাল্লাহ!

যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عن حضرت ابى الدرداء رضى الله تعالى عنه انه مر مع النبى صلى الله عليه وسلم الى بيت عامر الانصارى رضى الله تعالى عنه وكان يعلم وقائع ولادته صلى الله عليه وسلم لابنائه وعشيرته ويقول هذا اليوم هذا اليوم فقال عليه الصلوة والسلام ان الله فتح لك ابواب الرحمة والملائكة كلهم يستغفرون لك من فعل فعلك نجى نجتك.

অর্থ: “হযরত আবু দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে যে, একদা তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে হযরত আমির আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার গৃহে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলেন যে, তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে উনার সন্তান-সন্ততি এবং আত্মীয়-স্বজন, জ্ঞাতি-গোষ্ঠী, পাড়া-প্রতিবেশীদেরকে নিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশকালে সংঘটিত মুবারক ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছেন এবং বলেছেন, এই সেই দিবস এই সেই দিবস (অর্থাৎ এই দিবসে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীনে তাশরীফ এনেছেন, এই দিবসে ইহা সংঘটিত হয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি)। এতদ্শ্রবণে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি সমস্ত রহমতের দরজা আপনাদের জন্য উন্মুক্ত করেছেন এবং সমস্ত ফেরেশতাগণ আপনাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছেন এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত যে কেউ আপনাদের মতো এরূপ কাজ করবে, আপনাদের মতো তারাও নাজাত (ফযীলত) লাভ করবে।” (কিতাবুত তানউয়ীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর, ছুবুলুল হুদা ফী মাওলিদিল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)

এ সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه انه كان يحدث ذات يوم فى بيته وقائع ولادته صلى الله عليه وسلم لقوم فيستبشرون ويحمدون الله ويصلون عليه صلى الله عليه وسلم فاذا جاء النبى صلى الله عليه وسلم قال حلت لكم شفاعتى.

অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে যে, একদা তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে অর্থাৎ ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে উনার নিজগৃহে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে সমবেত করে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশকালে সংঘটিত মুবারক ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছিলেন। এতে শ্রবণকারী হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারা আনন্দ ও খুশি প্রকাশ করছিলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার প্রশংসা তথা তাছবীহ-তাহলীল পাঠ করছিলেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর (ছলাত শরীফ ও সালাম শরীফ তথা) দুরূদ শরীফ পাঠ করছিলেন। এমন সময় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তথায় উপস্থিত হয়ে উনার বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করতে দেখে বললেন, আপনাদের জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব।” (কিতাবুত তানউয়ীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর, ছুবুলুল হুদা ফী মাওলিদিল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)

স্মরণীয় যে, ইমামের জন্য প্রথম ও প্রধান শর্ত হচ্ছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি উনার সম্পর্কে সঠিক আক্বীদা পোষণ করা। উনার সম্পর্কে যার আক্বীদা শুদ্ধ নয় তার পিছনে নামায পড়লে নামায হবে না। এ ধরণের ইমামকে ইমামতি থেকে অপসারণ করা মসজিদ কমিটি ও মুছল্লী সকলের জন্যই ফরয। অন্যথায় ইমামের ন্যায় তারাও অশুদ্ধ আক্বীদার জন্য মুসলমান থেকে খারিজ হবে এবং চিরজাহান্নামী হবে।

কোন পিতা যদি সম্মানিত শরীয়ত উনার খিলাফ বা বিরোধী অছিয়ত করে মারা যায় তখন উক্ত অছিয়ত মান্য করা ওয়ারিছদের জন্য আবশ্যক তো নয়ই বরং উক্ত অছিয়ত ছিন্ন বা ভঙ্গ করাটাই ওয়ারিছদের জন্য ফরয।

কাজেই, সুওয়ালে উল্লেখিত তরীক্বতপন্থী  ব্যক্তি তিনি পিতার জানাযা না পড়ে সঠিক কাজই করেছেন। কারণ মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وان جاهدك لتشرك بى ما ليس لك به علم فلا تطعهما

অর্থ: আর যদি তারা (পিতা-মাতা) তোমাকে আমার সাথে কাউকে শরীক তথা নাফরমানী করানোর চেষ্টা করে, যে বিষয়ে তোমার কোন ইলিম নেই, তবে তাদের আনুগত্য তুমি করো না। (পবিত্র সূরা আনকাবূত শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৮)

ছহীহ বুখারী শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

لا طاعة لـمخلوق فى معصية الخالق

অর্থ: খ¦ালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার নাফরমানী করে কোন মাখলূক্ব বা সৃষ্টির আনুগত্য করো না।

অর্থাৎ সম্মানিত দ্বীন ইসলাম তথা শরীয়ত উনার বিরোধী কারো কোন আদেশ কিংবা অছিয়ত মানা জায়িয নেই।

উল্লেখ্য, যার তার নিকট বাইয়াত হওয়া, যাকে তাকে ইমাম নিয়োগ করা কিংবা যার তার পিছনে নামায পড়া জায়িয নেই।

ছহীহ “মুসলিম শরীফ” উনার মধ্যে বর্ণিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

ان هذا العلم دين فانظروا عمن تاخذون دينكم

অর্থ: “নিশ্চয়ই (কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ উনাদের) ইলমই হচ্ছে দ্বীন। সুতরাং কার নিকট থেকে তোমরা ইলিম গ্রহণ বা শিক্ষা করছ তাকে দেখে নাও। অর্থাৎ তার ঈমান-আক্বীদা, আমল-আখলাক্ব শুদ্ধ আছে কিনা তথা কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ সম্মত কিনা তা যাচাই করে নাও।”

কাজেই, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে যাদের আক্বীদা পরিশুদ্ধ নয় এমন ব্যক্তির পিছনে নামায পড়া কস্মিনকালেও জায়িয হবে না।

 

উম্মু আহমদ সুলতানা

কিশোরগঞ্জ

 

সুওয়াল: পুরুষদের জুমুআর নামায শেষ না হওয়া পর্যন্ত নাকি মহিলারা নামায পড়তে পারবে না? এই মাসয়ালাটির সঠিক জাওয়াব জানতে চাই।

জাওয়াব: পুরুষরা জুমুআর নামায না পড়া পর্যন্ত বা জুমুআর নামায শেষ না হওয়া পর্যন্ত মহিলারা যুহরের নামায পাড়তে পারবে না; এ বক্তব্য মোটেও শুদ্ধ নয়। সম্পূর্ণ মনগড়া ও বিভ্রান্তিকর বক্তব্য। সঠিক মাসয়ালা হচ্ছে, মহিলাদের জন্য জুমআ ও জামায়াত নেই। তাই ছলাতুয যুহর বা যুহর নামায উনার ওয়াক্ত হলেই উনারা নামায পড়তে পারবেন। মোটকথা, মহিলাদের জন্য অন্যান্য দিনে ছলাতুয যুহর আদায়ের যে হুকুম, জুমুআর দিনেও ছলাতুল যুহর আদায়ের তদ্রƒপই হুকুম।

 

উম্মু আহমদ মারিয়া

কিশোরগঞ্জ

 

সুওয়াল: কুরআন শরীফ খতম দেয়ার সময় সর্বশেষ সূরা নাস শরীফ পড়ার পর নিচে আরও কিছু লিখা থাকে সেগুলো না পড়লে কি খতম হবে? জানতে চাই।

জাওয়াব: হ্যাঁ, পবিত্র সূরা নাস শরীফই সর্বশেষ সূরা শরীফ। কাজেই পবিত্র কুরআন শরীফ খতম দেয়ার সময় প্রথম সূরা শরীফ থেকে শুরু করে শেষ সূরা শরীফ পর্যন্ত পড়লেই খতম সম্পন্ন হয়ে যাবে।

তবে সূরা নাস শরীফ উনার পর যা পড়া হয় তা দুআ হিসেবে পড়া হয়। তা পড়া আবশ্যক ও শর্ত কোনটিই নয়। বরং তা পড়া পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াতে ত্রুটি-বিচ্যুতির কারণে ক্ষমা প্রার্থনার জন্য।

 

উম্মু আহমদ মারিয়া

কিশোরগঞ্জ

 

সুওয়াল: ফজর নামায উনার পর ২৩ মিনিট কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা জায়িয আছে কি?

জাওয়াব: সম্মানিত ফজর নামায উনার মূল সময় ১৮ মিনিট এবং সতর্কতামূলক ৫ মিনিট মোট ২৩ মিনিট নিষিদ্ধ বা মাকরূহ ওয়াক্ত। এ সময়ে সূর্য উদিত হয়। পাবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عن حضرت ابن عمر رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله  عليه وسلم يتحرى احدكم فيصلى عند طلوع الشمس ولا عند غروبها. وفى رواية قال اذا طلع حاجب الشمس فدعوا الصلوة حتى تبرز فاذا غاب حاجب الشمس فدعوا الصلوة حتى تغيب ولا تحينوا بصلوتكم طلوع الشمس ولاغروبها فانها تطلع بين قرنى الشيطان.

অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমাদের মধ্যে কেউ যেন সূর্যোদয়ের সময় নামায পড়ার চেষ্টা না করে এবং সূর্যাস্তের সময়ও যেন না করে। অপর এক বর্ণনায় রয়েছে, সূর্যের কিনারা যখন দেখা দেয় তখন নামায পড়া থেকে বিরত থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত সূর্য স্পষ্টভাবে প্রকাশিত না হয়। অনুরূপ সূর্যের কিনারা যখন অস্ত যেতে আরম্ভ করে তখনও নামায পড়া থেকে বিরত থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত সূর্য পূর্ণরূপে অদৃশ্য না হয়। আর তোমাদের নামায সূর্যোদয় ও সুর্যাস্ত পর্যন্ত পিছায়ে বা দেরী করে পড়ো না। কেননা, সূর্য শয়তানের দুই শিংয়ের মধ্যে উদিত হয়। অর্থাৎ সূর্যপূজারী কাফির মুশরিকরা উক্ত সময়ে সূর্যের পূজা করে থাকে। (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)

অন্য এক পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عن حضرت ابى سعيدن الخدرى رضى الله تعالى  عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لا صلوة بعد الصبح حتى ترتفع الشمس ولا صلوة بعد العصر حتى تغيب الشمس

অর্থ: হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, সম্মানিত ফজর নামায উনার পর আর কোন নামায নেই। যতক্ষণ না সূর্য কিছু উপরে উঠে যায় এবং সম্মানিত আছর নামায উনার পরও কোন নামায নেই যতক্ষণ না সূর্য সম্পূর্ণভাবে অদৃশ্য হয়ে যায়। (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)

অর্থাৎ সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত এ দু’ সময়ে সম্মানিত নামায পড়া নিষিদ্ধ তথা মাকরূহ তাহরীমী। একইভাবে উক্ত দু’ সময়ে তিলাওয়াতে সিজদার কারণে পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করাও মাকরূহ তাহরীমী। অনুরূপভাবে সূর্য ঢলার সময়ও নামায পড়া যেমন মাকরূহ তদ্রূপ পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করাও মাকরূহ তাহরীমী।

 

মুহম্মদ খাজা আবু সাঈদ (মানিক)

খাজাপুর, সিরাজগঞ্জ

সুওয়াল: মসজিদের মাইক দিয়ে পাঁচ (৫) ওয়াক্ত আযান দেয়া হয়। ঐ মসজিদের মাইক দিয়ে মসজিদের ভিতর হতে কোন প্রকার প্রচার করা যাবে কিনা? যেমন হারানো বা প্রাপ্তি সংবাদ, মানুষ মারা গেলে তার প্রচার, জানাযার আহ্বান, এ সমস্ত কাজে মসজিদ হতে মাইক ব্যবহার করা যাবে কিনা? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব: মসজিদের যে মাইক শুধুমাত্র পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের জন্য আযান দেয়ার জন্য ওয়াক্ফ করা হয়েছে সে মাইক উক্ত আযান ব্যতীত আর কোন কাজে ব্যবহার করতে পারবে না। অর্থাৎ যে জিনিস যে কাজের জন্য ওয়াক্ফ করা হয়, সে জিনিস সে কাজের জন্য ব্যবহার করাই হচ্ছে সম্মানিত শরীয়ত উনার হুকুম। ওয়াক্ফ করা জিনিস ওয়াক্ফবিহীন কাজে ব্যবহার করা সম্মানিত শরীয়ত উনার খিলাফ তথা নাজায়িয।

এজন্য কোন জিনিস ওয়াকফ করতে হলে নিয়ম হচ্ছে, আম বা ব্যাপক কাজের উদ্দেশ্যে ওয়াকফ করা। যেমন মসজিদের উদ্দেশ্যে ওয়াক্ফকৃত মাইক পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের আযানের সাথে সাথে অন্যান্য দ্বীনি কাজের প্রচার-প্রসারের জন্য ওয়াক্ফ করা হলে উক্ত মাইক দ্বার আযান দেয়ার পাশপাশি ওয়াজ নছীহত করা, ঈদের নামাযের জন্য ব্যবহার করা, জানাযার নামাযের জন্য ব্যবহার করা ইত্যাদি শরীয়সম্মত যাবতীয় বিষয়ে ব্যবহার করা যাবে। তবে সম্মানিত শরীয়ত উনার খিলাফ কোন কাজের জন্য ব্যবহার করা যাবে না। যেমন হারানো জিনিসের ঘোষনা দেয়া যাবে না। এবং হারানো কোন জিনিস পাওয়া গেছে তারও ঘোষণা দেয়া যাবে না। এটা সম্মানিত শরীয়ত উনার মধ্যে নিষেধ করা হয়েছে।

 

মুহম্মদ খাজা আবু সাঈদ (মানিক)

খাজাপুর, সিরাজগঞ্জ

 

সুওয়াল: হিন্দু কিংবা কাফিরের শিশু সন্তান মারা গেলে তারা কাফির হয়ে মারা যাবে? নাকি বেহেশতবাসী হবে?

জাওয়াব: কাফির মুশরিক তথা বিধর্মীদের যেসব সন্তান শিশু অবস্থায় মারা যায় তারাও ফিতরাতের উপর অর্থাৎ সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার উপরই মারা যায়।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

كل مولود يولد على الفطرة فابواه يهودانه وينصرانه ويـمجسانه

অর্থ: প্রত্যেক সন্তানই ফিতরাতের উপর জন্মগ্রহণ করে। অতঃপর তার পিতা-মাতাই তাকে ইহুদী, নাছারা অথবা মজূসী তথা অগ্নি উপাসক বানিয়ে থাকে। নাউযুবিল্লাহ! (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)

অর্থাৎ প্রত্যেক সন্তান ফিতরাত তথা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার উপরই জন্মগ্রহণ করে থাকে এবং তখন সে মা’ছূম তথা নিষ্পাপ অবস্থায়ই জন্মগ্রহণ করে এবং তার উপর সম্মানিত শরীয়ত উনার হুকুম পালন করা আবশ্যক থাকে না। এ অবস্থায় যখন সে মারা যায় তখন সে জান্নাতবাসী হিসেবেই গণ্য হয়। অর্থাৎ বিধর্মী তথা কাফির-মুশরিকদের শিশু সন্তান তারা জান্নাতে মু’মিন মুসলমান উনাদের গিলমান অর্থাৎ খাদিম হিসেবে অবস্থান করবে।

 

মুহম্মদ খাজা আবু সাঈদ (মানিক)

খাজাপুর, সিরাজগঞ্জ

 

সুওয়াল: একটি গরুর একভাগ কুরবানী এবং বাকি ছয় ভাগের গোশত দিয়ে মানুষকে খাওয়ানো কিংবা কোন লোকের কুলখানি বা ইছালে ছওয়াব করে খাওয়ানো যাবে কি না?

জাওয়াব: হ্যাঁ, একিিট গরুতে ৭ ভাগের ১ ভাগ কুরবানী হিসেবে দেয়া আর বাকী ৬ ভাগের গোশত দিয়ে মানুষকে এমনিতেও খাওয়ানো যাবে আবার কারো কুলখানি বা ইছালে ছাওয়াব করেও খাওয়ানো যাবে।

তবে উত্তম হচ্ছে, সম্পূর্ণ গরুটি কুরবানী হিসেবে যবেহ করে অর্থাৎ ৭ ভাগই কুরবানী হিসেবে দেয়া। এতে ৭টি কুরবানীর ফযীলত হাছিল হবে। আর কুরবানীর গোশত নিজের জন্য খাওয়ার যে হুকুম অপরকে খাওয়ানোর ক্ষেত্রে সে একই হুকুম।

 

মীর মুহম্মদ ছাবের আলী

বায়তুল মোকাররম মার্কেট, ঢাকা

মুহম্মদ হাবীবুর রহমান, সংসদ ভবন, ঢাকা

মুহম্মদ জুনাইদ, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।

সুওয়াল: বর্তমানে মসজিদের ভিতরে চেয়ারে বসে নামায আদায় করার ব্যাপারে তীব্র মতভেদ দেখা যাচ্ছে। কেউ বলছেন, মসজিদের ভিতরে চেয়ারে বসে নামায আদায় করা জায়িয নেই। আবার কেউ বলছে জায়িয। উভয়েই পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ ও ফিক্বাহের কিতাব থেকে দলীল দিয়ে থাকে।

এখন আমরা কোনটা গ্রহণ করবো? বহুল প্রচারিত দলীলভিত্তিক মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এ এ বিষয়ে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সঠিক ফায়সালা তুলে ধরলে সাধারণ মুসলমানগণ উপকৃত হতো।

জাওয়াব: পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে মসজিদের ভিতরে বা মসজিদের বাহিরে চেয়ারে বসে নামায আদায় করার সঠিক ফায়ছালা হচ্ছে, মসজিদের ভিতরে হোক অথবা মসজিদের বাহিরে হোক, দাঁড়াতে সক্ষম হোক  অথবা দাঁড়াতে অক্ষম হোক, প্রত্যেক অবস্থাতেই চেয়ার, টেবিল, টুল, বেঞ্চ অথবা অনুরূপ (পা ঝুলে থাকে এমন) কোন আসনে বসে নামায আদায় করা কাট্টা হারাম, নাজায়িয ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ এবং নামায বাতিল হওয়ার কারণ। এটাই ছহীহ, দলীলভিত্তিক ও গ্রহণযোগ্য ফতওয়া। এর খিলাফ কোন ফতওয়াই ছহীহ নয়, দলীলভিত্তিকও নয় এবং গ্রহণযোগ্যও নয়।

আমরা ধারাবাহিকভাবে উল্লিখিত বিষয়ে দলীল-আদিল্লাহ পেশ করার পাশাপাশি যারা চেয়ার, টেবিল, টুল ও বেঞ্চে বসে নামায পড়াকে জায়িয বলে, তাদের সে সমস্ত বক্তব্যগুলো নির্ভরযোগ্য দলীল দ্বারা খ-ন করবো। ইন্শাআল্লাহ!

উল্লেখ্য যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা, হযরত তাবিয়ীন রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা, হযরত তাবি-তাবিয়ীন রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা, হযরত ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের কেউই অসুস্থ অবস্থাতেও কখনো চেয়ারে বসে নামায পড়েছেন এরূপ কোন প্রমাণ পাওয়া যায়না। অথচ পবিত্র নামাযসহ প্রতিটি ইবাদতের ক্ষেত্রেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মধ্যে উত্তম আদর্শ মুবারক রয়েছে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

لقد كان لكم فى رسول الله اسوة حسنة

অর্থ: “অবশ্যই তোমাদের জন্য নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মধ্যেই রয়েছে উত্তম আদর্শ মুবারক।” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২১)

আর তাই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ছিহ্্হাতী শান মুবারক প্রকাশ করা অবস্থায় (সুস্থাবস্থায়) কিভাবে পবিত্র নামায আদায় করেছেন তা যেরূপ সম্মানিত শরীয়ত উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, তদ্রƒপ মারীদ্বী শান মুবারক প্রকাশ করা অবস্থায় (অসুস্থাবস্থায়) কিভাবে পবিত্র নামায আদায় করেছেন তাও সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত রয়েছে। যদি তাই হয়ে থাকে, তাহলে চেয়ারে বসে নামায পড়ার বিষয়ে এত মতভেদের কি কারণ থাকতে পারে? নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মারীদ্বী শান মুবারক প্রকাশ করা অবস্থায় (অসুস্থাবস্থায়) কিভাবে পবিত্র নামায আদায় করেছেন, সেটা দেখলেই তো সমস্ত মতভেদ দূরীভূত হয়ে যায়।

যেমন, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে   ইরশাদ মুবারক হয়েছে যে-

عن حضرت مالك بن الحويرث رضى الله تعالى عنه قال قال لنا رسول الله صلى الله عليه وسلم صلوا كما رأيتمونى اصلى

অর্থ: “হযরত মালিক ইবনে হুয়াইরিছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদেরকে বলেন, “তোমরা ঐভাবে নামায পড়ো, যেভাবে আমাকে নামায পড়তে দেখেছো।” (বুখারী শরীফ,  মুসলিম শরীফ,  মিশকাত শরীফ)

তাই এখন আমরা দেখবো যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মারীদ্বি শান মুবারক প্রকাশ করা অবস্থায় (অসুস্থাবস্থায়) কিভাবে পবিত্র নামায আদায় করেছেন।

যেমন, “সুনানু নাসাঈ শরীফ” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৯৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

عن حضرت عبيد الله بن عبد الله رضى الله تعالى عنه قَالَ دَخَلْتُ عَلَى حضرت عَائِشَةَ عليها السلام فَقُلْتُ أَلاَ تُحَدّثِينِي عَنْ مَرَضِ رسول الله صلى الله عليه وسلم قالت لَـمَّا ثقل رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال أَصَلّىَ النَّاسُ قُلْنَا لا َوهُمْ يَنْتَظِرُونَكَ يا رسول الله صلى الله عليه وسلم قال  ضَعُوا لِي مَاءً فِي الْمِخْضَبِ فَفَعَلْنَا فَاغْتَسَلَ ثُمَّ ذَهَبَ لِيَنُوءَ فَأُغْمِيَ عَلَيْهِ ثُمَّ أَفَاقَ فَقَالَ أَصَلَّى النَّاسُ قُلْنَا لاَ هُمْ يَنْتَظِرُونَكَ يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ ضَعُوا لِي مَاءً فِي الْمِخْضَبِ فَفَعَلْنَا فَاغْتَسَلَ ثُمَّ ذَهَبَ لِيَنُوءَ ثُمَّ اُغْمِىَ عَلَيْهِ ثُمَّ قَالَ فِى الثَّالِثِةَ مِثْلَ قَوْلِه قالت وَالنَّاسُ عُكُوفٌ فِي الْمَسْجِدِ يَنْتَظِرُونَ رَسُوْلَ اللهِِِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وسلم لِصَلاَةِ الْعِشَاءِ فَأَرْسَلَ رسول الله صلى الله عليه وسلم إِلَى أَبِي بَكْرٍ عليه السلام اَنْ صل بِالنَّاسِ فَجاءُ الرَّسُولُ فَقَالَ إِنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَأْمُرُكَ أَنْ تُصَلِّيَ بِالنَّاسِ وَكَانَ اَبُوْ بَكْرٍ عليه السلام رَجُلاً رَقِيقًا فقَالَ يَا عُمَرُ عليه السلام صَلِّ بِِِالنَّاسِ فَقَالَ أَنْتَ أَحَقُّ بِذَلِكَ فَصَلَّى ِبِِهِمْ أَبُو بَكْرٍ عليه السلام تِلْكَ الأَيَّامَ ثُمَّ إِنَّ رَسُوْلَ الله صلى الله عليه وسلم وَجَدَ فِىْ نَفْسِهِ خِفَّةً فَجَاءَ يُهَادَى بَيْنَ الرَجُلَيْنِ أَحَدُهُمَا الْعَبَّاسُ عليه السلام لِصَلاَةِ الظُّهْرِ فَلَمَّا رَاه َأَبُو بَكْرٍ عليه السلام ذَهَبَ لِيَتَأَخَّرَ فَأَوْمَا إِلَيْهِ رسول الله صلى الله عليه وسلم اَنْ لاَ يَتَأَخَّرَ وَاَمَرَهُمَا فَأَجْلَسَاهُ إِلَى جَنْبِهِ فَجَعَلَ أَبُو بَكْرٍ عليه السلام يُصَلِّي قائما والناس يصلون بِصَلاَةِ أَبِي بَكْرٍ عليه السلام ورسول الله صلى الله عليه وسلم يصلى قَاعِدٌا فَدَخَلْتُ عَلَى حضرت ابْنِ عَبَّاسٍ رضى الله تعالى عنه فَقُلْتُ الاَ أَعْرِضُ عَلَيْكَ مَا حَدَّثَتْنِي ام المؤمنين حضرت عَائِشَةُ عليها السلام عَنْ مَرَضِ رسول الله صلى الله عليه وسلم : قال نعم فحدثته فما أَنْكَرَ مِنْهُ شَيْئًا غَيْرَ أَنَّهُ قَالَ أَسَمَّتْ لَكَ الرَّجُلَ الَّذِي كَانَ مَعَ الْعَبَّاسِ عليه السلام قُلْتُ: لاَ قَالَ هُوَ عَلِيٌّ كرم الله وجهه عليه السلام.

অর্থ: “হযরত উবায়দুল্লাহ বিন আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনার থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন যে, আমি উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার খিদমত মুবারকে উপস্থিত হয়ে বললাম, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মারীদ্বি শান মুবারক সম্পর্কে কি আপনি আমাকে কিছু বিস্তারিত শুনাবেন? তিনি বললেন, অবশ্যই। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন মারীদ্বি শান মুবারক প্রকাশ করলেন, তখন তিনি জিজ্ঞাসা মুবারক করলেন, লোকজন কি নামায আদায় করেছেন? আমরা বললাম, না, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! উনারা আপনার অপেক্ষায় আছেন। তিনি বললেন, আমার জন্য গোসল মুবারকের পাত্রে পানি দিন। উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, আমরা তাই করলাম। তিনি গোসল মুবারক করলেন। অতঃপর একটু উঠতে চাইলেন, তখন তিনি বেহুঁশী শান মুবারক প্রকাশ করলেন। কিছুক্ষণ পর বাহুঁশী শান মুবারক প্রকাশ করে তিনি জিজ্ঞাসা মুবারক করলেন, লোকজন কি নামায আদায় করেছেন? আমরা বললাম, না, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! উনারা আপনার জন্য অপেক্ষা করছেন। তিনি বললেন, আমার জন্য গোসল মুবারকের পাত্রে পানি রাখুন। উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, আমরা তাই করলাম। তিনি গোসল মুবারক করলেন, আবার উঠতে চাইলেন। এবারও তিনি বেহুঁশী শান মুবারক প্রকাশ করলেন। এরপর তৃতীয়বারও তিনি ঐরূপ বললেন। উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, ওদিকে লোকজন ইশার নামাযের জন্য নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অপেক্ষায় মসজদিে বসেছিলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তিনি হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার নিকট এ মর্মে একজন লোক পাঠালেন যে, তিনি যেন লোকজনকে নিয়ে নামায আদায় করে নেন। সংবাদ বাহক হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু তিনি হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আপনাকে লোকজনকে নিয়ে নামায আদায় করার নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন। হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন অত্যন্ত কোমল মনের অধিকারী। তাই তিনি হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাকে বললেন, হে হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম! আপনি লোকজনকে নিয়ে নামায আদায় করে নিন। হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, আপনিই এর জন্য অধিক হক্বদার। সুতরাং হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি লোকজনকে নিয়ে ঐ কয়েকদিন নামায পড়ালেন। অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন কিছুটা ছিহ্হাতি শান মুবারক প্রকাশ করলেন, তখন দুজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনাদের কাঁধে ভর করে পবিত্র যুহরের নামায আদায়ের জন্য বের হলেন। উনাদের দুজনের একজন ছিলেন হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি লোকজনকে নিয়ে নামায আদায় করছিলেন। অতঃপর তিনি যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখতে পেলেন, পিছনে সরে আসতে চাইলেন, কিন্তু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি  উনাকে পিছনে না আসার জন্য ইশারা মুবারক করলেন এবং দুজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনাদেরকে বললেন, আপনারা আমাকে উনার পাশে বসিয়ে দিন। উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার পাশে বসিয়ে দিলেন।

বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নামাযের ইক্তিদা করে দাঁড়িয়ে নামায আদায় করতে লাগলেন। আর লোকজন হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার নামাযের ইক্তিদা করতে লাগলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তখন যমীনে বসা অবস্থায় পবিত্র নামায আদায় করছিলেন। হযরত উবায়দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা তিনি বলেন, আমি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু  তা‘য়ালা আনহু উনার নিকট উপস্থিত হয়ে বললাম, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মারীদ্বি শান মুবারক প্রকাশ সম্পর্কে উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি আমাকে যে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন, তা কি আমি আপনার নিকট বর্ণনা করবো না? তিনি বললেন, হ্যাঁ বর্ণনা করুন। অতএব আমি উনাকে পবিত্র হাদীছ শরীফখানা শুনালাম। তিনি এ বর্ণনার কোন অংশই আপত্তি করলেন না, তবে উনাকে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন যে, হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সাথে যে অপর ছাহাবী ছিলেন, হযরত উম্মুল মু’মিনীন ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি কি উনার নাম মুবারক উল্লেখ করেছেন? আমি বললাম না। তিনি বললেন, তিনি ছিলেন হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম।”

“তুহফাতুল আহওয়াজী বিশরহে জামিয়িত তিরমিযী” শরীফ কিতাবের ২য় খ-ের ৩৫৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

وروي عنها أن النبي صلى الله عليه و سلم خرج في مرضه و أبو بكر عليه السلام يصلي بالناس فصلى إلى جنب أبي بكر عليه السلام والناس يأتمون بأبي بكر عليه السلام وأبو بكر عليه السلام يأتم بالنبي صلى الله عليه وسلم رواه الشيخان عنها قال مرض رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال مروا ابا بكر عليه السلام يصلى بالناس فخرج حضرت ابو بكر يصلى فوجد النبى صلى الله عليه وسلم فى نفسه خفة فخرج بهادى بين رجلين، فاراد حضرت ابو بكر عليه السلام ان يتاخر فاوما اليه النبى صلى الله  عليه وسلم ان مكانك، ثم اتيابه حتى جلس الى جنبه عن يسار حضرت ابى بكر عليه السلام، وكان حضرت ابو بكر عليه السلام يصلى قائما وكان رسول الله صلى الله عليه وسلم يصلى قاعدا، يقتدى حضرت ابو بكر عليه السلام بصلاة رسول الله صلى الله عليه وسلم والناس بصلاة حضرت ابى بكر عليه السلام.

অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন যে, নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মারীদ্বি (অসুস্থতা) শান মুবারক প্রকাশ করা অবস্থায় (দুজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনাদের কাঁধে ভর করে পবিত্র যুহরের নামায আদায়ের জন্য এমন সময়) বের হলেন। যে সময় হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি লোকজনকে নিয়ে নামায আদায় করছিলেন। অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার পাশে যমীনে বসে নামায আদায় করলেন। অতঃপর লোকজন হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার নামাযের ইক্তিদা করতে লাগলেন। আর হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  উনার নামাযের ইক্তিদা করে নামায আদায় করতে লাগলেন। পবিত্র বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ  কিতাবে উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন যে, যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মারীদ্বি (অসুস্থতা) শান মুবারক প্রকাশ করলেন। তখন তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনাকে লোকজনকে নিয়ে নামায আদায় করতে বলুন। অতঃপর হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি এগিয়ে গিয়ে লোকজনকে  নিয়ে নামায আদায় শুরু করলেন। এ দিকে নূরে মুজাস্্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেকে একটু হালকা বোধ করলেন। অতঃপর দুজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনাদের কাঁধে ভর করে পবিত্র যুহরের নামায আদায়ের জন্য বের হলেন। অতঃপর হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখতে পেয়ে পিছনে সরে আসতে চাইলেন, কিন্তু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি  উনাকে স্বস্থানে থাকার জন্য ইঙ্গিত মুবারক করলেন। অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে একটু সামনে আনা হলো যে, তিনি হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার পাশে যমীনের উপর বসলেন। আর হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি ডানপাশে দাঁড়িয়ে নামায আদায় করছিলেন। অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীনের উপর বসেই নামাযের ইমামতি করছিলেন।  অতঃপর হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  উনার নামাযের ইক্তিদা করে নামায আদায় করতে লাগলেন। আর লোকজন হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার নামাযের ইক্তিদা করতে লাগলেন।

অতএব, উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের বর্ণনা থেকে সুস্পষ্টভাবে এটাই প্রমানিত হলো যে, “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মারীদ্বি (অসুস্থতা) শান মুবারক প্রকাশকালে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে নিয়ে যমীনে বসেই পবিত্র নামায আদায় করেছেন।

মুহম্মদ রূহুল কুদুস, বগুড়া।

ডা. মুহম্মদ আওক্বাত আলী, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।

সুওয়াল: মুজাদ্দিদে আ’যম সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ১০ম খলীফা এবং খলীফাতুল উমাম সাইয়্যিদুনা হযরত শাহযাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি ১১তম খলীফা এবং ‘আস সাফফাহ’ লক্বব মুবারক উনার অর্থ, ব্যাখা-বিশ্লেষণ ও মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনিই যে সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহান খলীফা ‘হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম’ এবং উনার মুবারক উছীলায় যে, অবশ্যই অবশ্যই বর্তমান যামানায় সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠিত হবে এ সম্পর্কে দলীল ভিত্তিক বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব:

(পূর্ব প্রকাশিতের পর- ৩২)

মুজাদ্দিদে আ’যম, সাইয়্যিদুল খুলাফা, আবুল খুলাফা, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনিই হচ্ছেন সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহান খলীফা হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম:

মুজাদ্দিদে আ’যম, সাইয়্যিদুল খুলাফা, আবুল খুলাফা, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মামদূহ মুুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনার মুবারক শানে সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَبِىْ سَعِيْدِن الْـخُدْرِىّ رَضِىَ الله تَعَالىٰ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَـخْرُجُ رَجُلٌ مّـِنْ اَهْلِ بَيْتِىْ عِنْدَ اِنْقَطَاعٍ مّـِنَ الزَّمَانِ وَظُهُوْرٍ مّـِنَ الْفِتَنِ رَجُلٌ يُّقَالُ لَهُ السَّفَّاحُ فَيَكُوْنُ اِعْطَاؤُهُ الْمَالَ حَثْيًا.

অর্থ : “হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যামানার ক্রান্তিলগ্নে, যামানার শেষের দিকে যখন ফিতনা-ফাসাদসমূহ চরমভাবে প্রকাশ পাবে তথা বেপর্দা-বেহায়া, অত্যাচার-অবিচার, যুুলুম-নির্যাতনে, বে-ইনসাফীতে পুরো পৃথিবী ভরে যাবে, কোথাও সম্মানিত ইনসাফ মুবারক উনার লেশ মাত্র অবশিষ্ট থাকবে না। তখন আমার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্য থেকে আমার একজন খাছ আওলাদ, একজন মহান খলীফা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি দুনিয়ার যমীনে তাশরীফ মুবারক নিবেন। তিনি এমন একজন মহান ব্যক্তিত্ব, এমন একজন মহান খলীফা উনাকে ‘হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম’ বলা হবে। অর্থাৎ তিনি সমস্ত বাতিলী শক্তি তথা কাফির-মুশরিক, ইহুদী-খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, মজুসী, মুনাফিক্ব¡ ও উলামায়ে সূ’দেরকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে, সমস্ত ফিতনা-ফাসাদ, যুুলুম-নির্যাতন, অত্যাচার-অবিচার, বে-ইনসাফীকে মিটিয়ে দিয়ে সারা পৃথিবীতে, সারা কায়িনাতে সম্মানিত ইনসাফ মুবারক প্রতিষ্ঠা করবেন, সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক জারি করবেন। সুবহানাল্লাহ! আর তিনি উনার দু’হাত মুবারক ভরে অঢেল, বেহিসাব ধন-সম্পদ বিলিয়ে দিবেন।” সুবহানাল্লাহ! (দালায়িলুন নুবুওওয়াহ লিল বাইহাক্বী ৬ষ্ঠ জিলদ ৫১৪ পৃষ্ঠা, খাছায়িছুল কুবরা লিস সুয়ূত্বী ২য় জিলদ ২০৩ পৃষ্ঠা, আস সুনানুল ওয়ারিদা ফিল ফিতান, আহমদ, জামিউল আহাদীছ, আবূ নাঈম, আল ফিতান, মাজমাউয যাওয়ায়িদ ৭/৬১১, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ১০/৯২, বিদায়া-নিহায়া ৬ষ্ঠ জিলদ ২৪৮ পৃষ্ঠা ইত্যাদি)

আলোচ্য সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনাকে ‘আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম’ বলা হয়েছে। তিনিই হচ্ছেন আলোচ্য সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহান খলীফা আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম। সুবহানাল্লাহ!

আমরা যদি সম্মানিত হাদীছ শরীফখানা নিয়ে একটু চিন্তা-ফিকির করি তাহলেই বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে। আলোচ্য সম্মানিত হাদীছ শরীফ মুবারক উনার মধ্যে বলা হয়েছে-

তিন. رَجُلٌ مّـِنْ اَهْلِ بَيْتِىْ অর্থ : নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “(মহান খলীফা, আওলাদে রসূল হযরত আস সাফফাহ আলাইহিস সালাম) তিনি আমার হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্য থেকে আমার একজন খাছ আওলাদ হবেন।”

অর্থাৎ তিনি আওলাদে রসূল হবেন তথা ইমামুছ ছানী সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম এবং ইমামুছ ছালিছ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাদের মুবারক বংশধর হবেন। (সুবহানাল্লাহ)

আর ইতোপূর্বে যামানার ক্রান্তিলগ্নও আসেনি, বর্তমান যামানার মতো চরম ফিতনা-ফাসাদের যুগও আসেনি এবং আওলাদে রসূল তথা সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী আলাইহিস সালাম এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম উনাদের মুবারক বংশধর থেকে ‘আস সাফফাহ’ লক্বব মুবারক উনার অধিকারী কোন খলীফা দুনিয়ার যমীনে তাশরীফ নেননি; সম্মানিত খিলাফত মুবারক পরিচালনাও করেননি।

অন্যদিকে বর্তমান যামানাটা হচ্ছে- (১) যামানার ক্রান্তিলগ্ন, যামানার শেষের দিক, (২) বর্তমান যামানায় চরমভাবে ফিতনা-ফাসাদসমূহ প্রকাশ পেয়েছে; ইতোপূর্বে আর কখনও এরূপ চরমভাবে ফিতনা-ফাসাদসমূহ প্রকাশ পায়নি। (৩) আর এই কঠিন পরিস্থিতিতে, এই কঠিন সময়েই মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্যমণি, আওলাদে রসূল, আল হাসানী ওয়াল হুসাইনী মহান খলীফা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি দুনিয়ার যমীনে তাশরীফ মুবারক নিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!

সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার এই অংশ মুবারক উনার সংক্ষিপ্ত আলোচনা দ্বারাও সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, সাইয়্যিদুল খুলাফা, আবুল খুলাফা, মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনিই হচ্ছেন সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহান খলীফা আওলাদে রসূল হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম। (সুবহানাল্লাহ)

চার. আলোচ্য সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বলা হয়েছে,  رَجُلٌ يُّقَالُ لَهُ السَّفَّاحُ “তিনি এমন একজন মহান ব্যক্তিত্ব মুবারক, এমন একজন মহান খলীফা হবেন যে, উনাকে ‘হযরত আস সাফফাহ আলাইহিস সালাম’ বলা হবে।” সুবহানাল্লাহ!

যা একখানা সম্মানিত লক্বব মুবারক। এই সম্মানিত লক্বব মুবারক উনার অসংখ্য অগণিত সুন্দর সুন্দর অর্থ মুবারক রয়েছেন- উনাদের মধ্যে দু’খানা বিশেষ অর্থ মুবারক হচ্ছেন- অসীম দাতা এবং কাফির-মুশরিক, ইহুদী-নাছারা, গুমরাহ, মুনাফিক্ব¡ ও উলামায়ে সূ’দেরকে নিশ্চিহ্নকারী। সুবহানাল্লা!

আমরা এদিক থেকে লক্ষ্য করলেও দেখতে পাবো যে, সাইয়্যিদুল খুলাফা, আবুল খুলাফা, আওলাদে রসূল মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনিই হচ্ছেন সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহান খলীফা হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম। সুবহানাল্লাহ! যেটা বলার অপেক্ষাই রাখে না যে, একমাত্র তিনিই কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে পৃথিবীর ইতিহাসে এই প্রথম অনন্তকালব্যাপী মহাসম্মানিত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার সম্মানিত মাহফিল মুবারক উনার সম্মানিত ইন্তিযাম মুবারক করেছেন এবং তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, ‘এই সম্মানিত মাহফিল মুবারক অনন্তকালব্যাপী চলতে থাকবে ইনশাআল্লাহ। আর কখনও বন্ধ হবে না।’ সুবহানাল্লাহ! শুধু তাই নয়, তিনিই একমাত্র সেই সুমহান ব্যক্তিত্ব মুবারক, যিনি কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার, উনার মহাসম্মানিত হযরত আব্বা-আম্মা আলাইহিমাস সালাম উনাদের, হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের এবং মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের হাক্বীক্বী শান-মান মুবারক ফুটিয়ে তোলার লক্ষ্যে দৈনিক আল ইহসান শরীফ, মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ এবং আরো অন্যান্য পত্র-পত্রিকা ও কিতাবাদি মুবারক প্রকাশ করে যাচ্ছেন। সুবহানাল্লাহ!

আর অপর দিকে তিনি উনার মক্ববূল মুনাজাত শরীফ উনার মাধ্যমে একের পর এক খোদায়ী আযাব-গযবের দ্বারা কাফির-মুশরিক, ইহুদী, খ্রিস্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ, মজুসী, মুনাফিক্ব¡ ও উলামায়ে সূ’দেরকে নিশ্চিহ্ন করে দিচ্ছেন। তাই তো বিশ্বের তথাকথিত সুপার পাওয়ার ইউরোপ, আমেরিকা, চীন, জাপান, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, জার্মান তথা সমস্ত কাফির-মুশরিকরা আজ সুপার ফকিরে পরিণত হয়েছে। তারা আজ খাদ্যের অভাবে মারামারি করছে, চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই করছে, পোকামাকড় খাচ্ছে, কুকুরের সাথে ডাস্টবিন থেকে খাবার খাচ্ছে। শুধু তাই নয়, এমনকি তারা নিজেদের ইস্তিঞ্জা (প্রস্রাব-পায়খানা) পর্যন্ত খাচ্ছে এবং একে অপরকে হত্যা করে সেই গোশত পর্যন্ত খাচ্ছে। না‘ঊযুবিল্লাহ!

তারা আজ সম্মানিত মুসলমান উনাদের দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করছে। বন্যা, তুফান, ঘূর্ণিঝড়, টর্নেডো, ভূমিকম্প, ভূমিধস, দাবানল, তুষারপাত, শিলাবৃষ্টি, অর্থনৈতিক মন্দা প্রভৃতি খোদায়ী আযাব-গযবে পড়ে তাদের কোটি কোটি লোক জাহান্নামের অতল গহ্বরে নিমজ্জিত হয়েছে, হচ্ছে এবং হবে ইনশাআল্লাহ। সুবহানাল্লাহ!

ইনশাআল্লাহ আমরা একটা সময় আরো দেখতে পাবো যে, এই সমস্ত কাফির, মুশরিক, ইহুদী, খ্রিস্টানরা পূর্বের ন্যায় মুসলমান উনাদের গোলামী করবে। সুবহানাল্লাহ!

আর অপর দিকে মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনার মুবারক রোবের দাপটে বাংলাদেশ থেকে শুরু করে বিশ্বের সমস্ত উলামায়ে সূ’ তথা ওহাবী, খারিজী, রাফিজী, সালাফী, লা-মাযহাবী, জামাতী, দেওবন্দী, তাবলিগী তাবৎ ধর্মব্যবসায়ীদের হাক্বীক্বত ফাঁস হচ্ছে। তারা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে। মরার পর তাদের আকৃতি বিকৃতি ঘটছে। যেমন, ফজলু, আনসার, নূরুদ্দীন, উবাইদুল, আজিজুল, কমিনী, গোআযম, মাহিউদ্দীন এবং তাদের সমমনা যারা রয়েছে এই সমস্ত উলামায়ে সূ’দের মৃত্যুর পর আকৃতি-বিকৃতি ঘটেছে, ঘটছে এবং ঘটবে। (না‘ঊযুবিল্লাহ)

পৃথিবীর ইতিহাসে অন্য কোন ওলীআল্লাহ ও খলীফা উনাদের জীবনী মুবারক-এ এরূপ দেখা যায় না।

সুতরাং এখান থেকেও সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠলো যে, সাইয়্যিদুল খুলাফা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনিই হচ্ছেন সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহান খলীফা হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম। সুবহানাল্লাহ!  তাই তো উনার মুবারক শানে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন-

وَاَمَّا السَّفَّاحُ فَهُوَ يَسْفَحُ الْمَالَ وَالدَّمَ.

অর্থ : “আর যিনি মহান খলীফা আওলাদে রসূল হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম হবেন, তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাক্বীক্বী শান-মান মুবারক ফুটিয়ে তোলার লক্ষ্যে, সম্মানিত ইনসাফ মুবারক প্রতিষ্ঠা করতে যেয়ে অঢেল, বেহিসাব ধন-সম্পদ বিলিয়ে দিবেন এবং রক্ত প্রবাহিত করবেন অর্থাৎ কাফির-মুশরিক, ইহুদী, খ্রিস্টান, হিন্দু-বৌদ্ধ, মজূসী, মুনাফিক্ব¡ ও উলামায়ে সূ’দেরকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে দুনিয়ার যমীনে, সারা পৃথিবীতে, সারা কায়িনাতে সম্মানিত ইনসাফ মুবারক প্রতিষ্ঠা করবেন, সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক জারি করবেন।” সুবহানাল্লাহ! (জামিউল আহাদীছ শরীফ ৭/৪২০ ও ১৭/২৫৭, বাইহাক্বী শরীফ ও আবূ নাঈম শরীফ উনাদের বরাতে সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ শরীফ ১০/৯২)

আর মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَاِذْ تَاَذَّنَ رَبُّكَ لَيَبْعَثَنَّ عَلَيْهِمْ اِلىٰ يَوْمِ الْقِيٰمَةِ مَنْ يَّسُوْمُهُمْ سُوْءَ الْعَذَابِ

অর্থ : “(হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনার রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ঘোষণা দিচ্ছেন যে, তিনি অবশ্যই অবশ্যই তাদের উপর (ইহুদী) তথা ইহুদী, খ্রিস্টান, কাফির, হিন্দু, বৌদ্ধ, মজূসী, মুশরিক, মুনাফিক্ব¡¡ ও উলামায়ে সূ’দের উপর ক্বিয়ামত অবধি সময়ের মধ্যে এমন একজন মহান ব্যক্তিত্ব মুবারক উনাকে প্রেরণ করবেন। যিনি তাদেরকে কঠিন শাস্তি প্রদান করবেন।” (সম্মানিত সূরা আ’রাফ শরীফ : সম্মানিত আয়াত শরীফ ১৬৭)

আর সেই সুমহান ব্যক্তিত্ব মুবারকই হচ্ছেন মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম। তিনি ইহুদী, খ্রিস্টান, কাফির, হিন্দু, বৌদ্ধ, মজূসী, মুশরিক, মুনাফিক্ব¡ ও উলামায়ে সূ’দেরকে কঠিন শাস্তি প্রদান করে যাচ্ছেন, তাদেরকে দুনিয়ার যমীন থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিচ্ছেন। এমন একটি সময় আসবে যখন তিনি তাদেরকে পরিপূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে সারা বিশ্বে, সারা কায়িনাতে সম্মানিত ইনসাফ মুবারক প্রতিষ্ঠা করবেন, সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক জারি করবেন। সুবহানাল্লাহ!

এই প্রসঙ্গে উনার মুবারক শানে সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ جَابِرِن الصَّدَفـِـىّ ِ رَضِىَ الله تَعَالىٰ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَكُوْنُ بَعْدِىْ خُلَفَاءُ وَبَعْدَ الْـخُـلَفَـاءِ اُمَرَاءُ وَبَعْدَ الْاُمَرَاءِ مُلُوْكٌ وَبَعْدَ الْـمُلُوْكِ جَبَابِرَةٌ وَبَعْدَ الْـجَـبَابِرَةِ يـَخْرُجُ رَجُلٌ مّـِنْ اَهْلِ بَـيْـتِـىْ يَـمْلَاُ الْاَرْضَ عَدْلًا

অর্থ : “হযরত জাবির ছদাফী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমার পরে হযরত খলীফা আলাইহিমুস সালাম উনাদের যুগ, হযরত খলীফা আলাইহিমুস সালাম উনাদের পর আমীর-উমরাদের যুগ, আমীর-উমারাদের পর রাজা-বাদশাহদের যুগ তথা রাজতন্ত্র। রাজতন্ত্রের পর হবে চরম অত্যাচারী, চরম যালিম, চরম অহঙ্কারী, চরম প্রতাপশালী, চরম লুটেরা, চরম সৈ¦রাচারী, চরম নাফরমান, চরম উদ্ধত, চরম গুমরাহ, চরম পথভ্রষ্ট, চরম বিভ্রান্ত, চরম গুমরাহকারী, চরম পথভ্রষ্টকারী, চরম বিভ্রান্তকর শাসকদের শাসনব্যবস্থা তথা জোর জবরদস্তিমূলক শাসন ব্যবস্থা, যুলুমতন্ত্র তথা সমাজতন্ত্র ও গণতন্ত্র। (তখন অবাধ্যতা, ঔদ্ধত্যতা, কঠোরতা, অহমিকা, ধৃষ্টতা, উচ্ছৃঙ্খলতা, ফিতনা-ফাসাদ, বেপর্দা-বেহায়া, অত্যাচার-অবিচার, যুলুম-নির্যাতন ও বে-ইনসাফীতে পুরো পৃথিবী ভরে যাবে। কোথাও সম্মানিত ইনসাফ মুবারক উনার লেশমাত্র অবশিষ্ট থাকবে না।) অতঃপর আমার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্য থেকে আমার একজন খাছ আওলাদ, একজন মহান খলীফা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি দুনিয়ার যমীনে তাশরীফ মুবারক নিবেন। তিনি দুনিয়ার যমীনে তাশরীফ মুাবরক নিয়ে পুরো পৃথিবী, সারা কায়িনাত সম্মানিত ইনসাফ মুবারক দ্বারা পরিপূর্ণ করে দিবেন তথা সারা বিশ্বে, সারা কায়িনাতে সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠা করবেন।” সুবহানাল্লাহ! (দায়লামী শরীফ ৫/৪৫৬, ইসতিয়াব ১ম জিলদ ১৩৭ পৃষ্ঠা)

উপরোক্ত দলীল ভিত্তিক আলোচনা দ্বারাও সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, সাইয়্যিদুল খুলাফা, আবুল খুলাফা, আওলাদে রসূল মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনিই হচ্ছেন, সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহান খলীফা ‘হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম’। সুবহানাল্লাহ! উনার মুবারক উসীলায় বর্তমান যামানায় অবশ্যই অবশ্যই সম্মানিত খিলাফত আ’লা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠিত হবেই হবে ইনশাআল্লাহ।

মুহম্মদ এনামুল হক

ধর্মপাশা, সুনামগঞ্জ

সুওয়াল: আমাদের এলাকায় এক পীর সাহেব বলেছে, পীর সাহেবদের দল হবে ১২টি। ১ দল জান্নাতী ১১ দল জাহান্নামী। কথাটি কতটুকু সত্য? দয়া করে জানাবেন।

জাওয়াব:  পীর সাহেব নামধারী উক্ত ব্যক্তির বক্তব্য মোটেও সত্য ও সঠিক নয়। তার উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণরূপে মনগড়া, দলীলবিহীন ও বিভ্রান্তিকর। এরূপ মনগড়া, বিভ্রান্তিকর ও দলীলবিহীন বক্তব্যধারী ব্যক্তিরাই উলামায়ে ‘সূ’ ও দাজ্জালে কাযযাবের অন্তর্ভুক্ত। এদের থেকে দূরে থাকা মুসলমানদের জন্য ফরয। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عن حضرت ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يكون فى اخر الزمان دجالون كذابون يأتونكم من الاحاديث بما لـم تسمعوا انتم ولا اباؤكم فاياكم واياهم لايضلونكم ولا يفتنونكم.

র্অথ: “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বয়িাল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে র্বণতি। তিনি বলনে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করনে, আখরিী যামানায় কছিু সংখ্যক মথ্যিাবাদী দাজ্জাল বরে হব, তারা তোমাদরে নকিট এমন সব (মথ্যিা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদরে বাপ-দাদারাও শুনেনি সাবধান! তোমরা তাদেরে থেকে দূরে থাকবে এবং  তাদের  থেকে তোমাদেরকে দূরে রাখবে তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ্ করতে পারবে না এবং ফিতনায় ফেলতে পারবেনা।” (মুসলমি শরীফ, মশিকাত শরীফ)

অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عن حضرت الاحواص بن حكيم رحمة الله عليه عن ابيه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم الا ان شر الشر شرار العلماء وان خير الخير خيار العلماء

অর্থ: হযরত আহওয়াছ ইবনে হাকীম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার সম্মানিত পিতা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, সাবধান! নিশ্চয়ই সৃষ্টির মাঝে সর্বনিকৃষ্ট হচ্ছে মন্দ আলিম অর্থাৎ যারা উলামায়ে ‘সূ’। আর সৃষ্টির মাঝে সর্বশ্রেষ্ঠ হচ্ছেন উলামায়ে হক্ব উনারা। (দায়লামী শরীফ, মিশকাত শরীফ)

অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে-

عن انس رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ويل لامتى من علماء السوء يتخذون هذا العلم تجارة يبعونها من امراء زمانهم ربحا لانفسهم لااربح الله تجارتهم.

অর্থ: হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমার উম্মতের মধ্যে উলামায়ে সূদের জন্য আফসুস,জাহান্নাম! তারা সম্মানিত ইলিম উনাকে ব্যবসার প্্ূ্ঁিজ করে দুনিয়াবী অর্থ-সম্পদ উপার্জন করে থাকে। যারা নিজেদের ইলিম নিয়ে ব্যবসা করতে চায় মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদের ব্যবসায় কখনো বরকত দিবেন না।   নাউযুবিল্লাহ! (কানযুল উম্মাল শরীফ)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বর্ণনা মারফত জানা যায়, উলামায়ে ‘সূরা জাহান্নামের সবচেয়ে কঠিন শাস্তিযোগ্য স্থান জুব্বুল হুযনের অধিবাসী হবে।

যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عن  حضرت ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم تعوذوا بالله من جب الحزن قالوا يا رسول الله صلى الله عليه وسلم وما جب الحزن قال واد فى جهنم يتعوذ منه جهنم كل يوم اربع مائة مرة قيل يا رسول الله صلى الله عليه وسلم ومن يدخلها قال القراء الـمراؤن باعمالهم.

অর্থ: হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা জুব্বুল হুযন থেকে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট পানাহ চাও। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! জুব্বুল হুযন কি? নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, জাহান্নামের মধ্যে একটি গর্ত, যা থেকে (জাহান্নামবাসী তো দূরের কথা) স্বয়ং জাহান্নামও দৈনিক ৪শত বার পানাহ চেয়ে থাকে। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা পূনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তাতে কারা প্রবেশ করবে? নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, সেই সকল কুরআন শরীফ অধ্যয়নকরী, যারা নিজেদের কাজ অন্যকে দেখিয়ে থাকে। (অর্থাৎ লোক দেখানোর উদ্দেশ্যেই অধ্যায়ন করে থাকে, মহান আল্লাহ পাক উনাকে রাযী খুশি করার উদ্দেশ্যে নয়) (তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ)

হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাযযালী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উলামায়ে ‘সূ’দের থেকে সতর্ক থাকার জন্য বলেছেন।

কিতাবে উল্লেখ করা হয়-

ایک زمانہ بدنام علماء السوء بہتر از ششت سال طاعت بریاء

অর্থ: কিছু সময় উলামায়ে সূ’দের সমালোচনা বা দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করা ষাট বৎসর রিয়াবিহীন ইবাদত অপেক্ষা উত্তম। সুবহানাল্লাহ!

এর কারণ হলো, তিনি একজন মানুষের হায়াত ৬০ বৎসর ধরে বলেছেন যে, কোন ব্যক্তি উলামায়ে ‘সূ’ থেকে দূরে থাকলে তার ঈমান আক্বীদা শুদ্ধ থাকবে। ফলে তার পক্ষে নাজাত পাওয়া সহজ ও সম্ভব হবে। আর যদি মহান আল্লাহ পাক না করুন, কোন ব্যক্তি যদি কোন উলামায়ে সূ’র ধোঁকায় পড়ে অর্থাৎ ঈমান আক্বীদা বিধ্বংসী ছোহবত গ্রহণ করে তাহলে তার ঈমান-আক্বীদা নষ্ট হয়ে জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। নাউযুবিল্লাহ!

অতএব, প্রত্যেক মুসলমান পুরুষ মহিলা, জিন ও ইনসান সকলের জন্য ফরয হচ্ছে উলামায়ে সূদের থেকে দূরে থাকা। মহান আল্লাহ পাক তিনি সকলকে তাওফীক্ব দান করুন।

মুহম্মদ আব্দুল কাদির

ভোলাহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

সুওয়াল: কোন স্থান বা এলাকার নাম যদি কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ উনাদের খিলাফ হয়, তাহলে উক্ত স্থান বা এলাকার নাম পরিবর্তন করে শরীয়তসম্মত নাম রাখা জায়িয আছে কী? যদি জায়িয থাকে, তাহলে দলীল আদিল্লাহ ভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব: হ্যা, অবশ্যই জায়িয রয়েছে। শুধু জায়িযই বরং সম্মানিত শরীয়ত উনার খিলাফ বা বিরোধী নামসমূহ পরিবর্তন করে সম্মানিত শরীয়ত সম্মত নাম মুবারক রাখা ফরয ও ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত এবং ফযীলত, রহমত ও বরকতেরও কারণ।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عن حضرت ابى الدرداء رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم انكم تدعون يوم القيامة باسمائكم و اسماء ابائكم فاحسنوا اسمائكم

অর্থ: হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ক্বিয়ামতের দিন তোমাদেরকে তোমাদের নাম ও পিতার নামানুসারে ডাকা হবে। তাই তোমাদের নামসমূহ উত্তম রেখো। (আবূ দাউদ শরীফ)

কাজেই, ব্যক্তি হোক, বস্তু হোক, স্থান হোক, শরীয়তসম্মত, অর্থবহ ও উত্তম নাম হওয়া আবশ্যক।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বর্ণনা দ্বারা প্রতিভাত যে, স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই সম্মানিত শরীয়ত উনার খিলাফ বা বিরোধী অনেক ব্যক্তি ও স্থানের নাম পরিবর্তন করে রেখেছেন। যেমন এ প্রসঙ্গে ছহীহ মুসলিম শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عن حضرت ابن عمر رضى الله تعالى عنه ان بنتا كانت لعمر عليه السلام يقال لها عاصية فسماها رسول الله صلى الله عليه وسلم جميلة

অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি (হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার) এক মেয়ের নাম ‘আছিয়া (অবাধ্য গুনাহগার মহিলা) পরিবর্তন করে জামীলাহ (সুন্দরী) রেখেছেন।

আবূ দাউদ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে-

وغير النبى صلى الله عليه وسلم اسم العاص وعزيز و عتلة و شيطان والحكم وغراب و حباب وشهاب فسماه هشاما وسمى حربا سلما وسمى الـمضطجع الـمنبعث وارضا تسمى عفرة سماها خضرة وشعب الصلالة سماه شعب الهدى وبنو الزنية سماهم بنى الرشدة وسمى بنى مغوية بنى رشدة

অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আলআছ, আযীয, আতালা, শয়তান, আল হাকাম, গুরাব, হুবাব নাম পরিবর্তন করে রেখেছেন এবং শিহাব নাম পরিবর্তন করে হিশাম রেখেছেন। হারব (যুদ্ধ) এর পরিবর্তে সালম্ (শান্তি) মুদ্বত্বাজি’(অস্থির) এর পরিবর্তে মুনবাইছ (সক্রিয়) আফিরা (মরুভূমি) নামক ভূমিকে খদ্বিরাহ (সবুজ), শা’বুদ্ব দ্বলালাহ (গোমরাহ জনপদ)কে শা’বুল হুদা (হিদায়েতপ্রাপ্ত জনপদ), অবৈধ বংশকে হিদায়েতের বংশ এবং গোমরাহ সন্তানকে হিদায়েতপ্রাপ্ত সন্তান নামে নামকরণ করেছেন।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে-

عن حضرت ام الـمؤمنين عائشة الصديقة عليها السلام قالت ان النبى صلى الله عليه وسلم كان يغير الاسم القبيح

অর্থ: হযরত উম্মুল মু’মিনীন ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খারাপ নাম পরিবর্তন করে দিতেন। (তিরমিযী শরীফ)

এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে-

عن حضرت ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم امرت بقرية تأكل القرى يقولون يثرب وهى الـمدينة تنفى الناس كما ينفى الكير خبث الحديد

অর্থ: হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমি এমন এক জনপদে হিজরত মুবারক করার জন্য আদিষ্ট হয়েছি যে জনপদ অন্য জনপদসমূহকে গ্রাস করবে। লোকেরা উনাকে ইয়াছরিব বলে কিন্তু উনার নাম মুবারক মদীনা শরীফ। মদীনা শরীফ মানুষকে এরূপভাবে বিশুদ্ধ করে যেভাবে হাঁপর লোহার মরিচা দূর করে বিশুদ্ধ করে। (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)

অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার পূর্ব নাম ইয়াছরিব পরিবর্তন করে মদীনা শরীফ রাখেন। শুধু তাই নয় তিনি  ইয়াছরিব নাম বলতে নিষেধও করেন। এবং কেউ ভুলে ইয়াছরিব বললে তার কাফফারা স্বরূপ ১০ বার মদীনা শরীফ বলার জন্য নির্দেশ মুবারক করেন।

অতএব, কাফির মুশরিকদের নামে কোন স্থানের নামকরণ করা হলে কিংবা সুন্দর অথবা অর্থবহ নয় এরূপ কোন স্থানের নাম হয়ে থাকলে তা পরিবর্তন করে সুন্দর, অর্থবহ ও শরীয়তসম্মত নাম রাখাই হচ্ছে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ বা হাদীছ শরীফ উনাদের নির্দেশ বা হুকুম তথা ফরয।

 

মুহম্মদ মামুন বিল্লাহ

কিশোরগঞ্জ

 

সুওয়াল: আমালিয়াত ও কামালিয়াত উভয়ের মধ্যে পার্থক্য সম্পর্কে জানতে চাই।

জাওয়াব: মহান আল্লাহ পাক তিনি মানুষকে সৃষ্টির উদ্দেশ্য সম্পর্কে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

وما خلقت الجن والانس الا ليعبدون

অর্থ: আমি জিন ও ইনসানকে সৃষ্টি করেছি শুধুমাত্র আমার ইবাদত করার জন্য।

ইবাদত কামালিয়াত ও আমালিয়াত হিসেবে দুই প্রকার। প্রথমত: কামালিয়াত, দ্বিতীয়ত: আমালিয়াত।

কামালিয়াত:

দুনিয়াবী ও উখরবী কোনরূপ ফায়দা হাছিল ব্যতীত একমাত্র যিনি খ¦ালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার শ্রেষ্ঠতম রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি মুবারক হাছিলের উদ্দেশ্যেই যাবতীয় আমল করার নামই হচ্ছে কামালিয়াত।

আমালিয়াত:

বান্দা বান্দী ও উম্মত কর্তৃক দুনিয়াবী ও উখরাবী ফায়দা লাভের আশায় বা ফায়দা হাছিলের উদ্দেশ্যে যেসমস্ত আমল করা হয়, তার নামই আমালিয়াত।

নিম্নে আমালিয়াত সম্পর্কে কিছু বর্ণনা দেয়া হলো-

১। সূরা মূলক শরীফ উনার ফযীলত সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে, যে ব্যক্তি প্রত্যহ উক্ত সূরা শরীফ পড়বে সে কবরের আযাব ও ক্বিয়ামতের মুছীবত থেকে পরিত্রাণ লাভ করবে। সুবহানাল্লাহ!

২। যে ব্যক্তি সূরা ইয়াসীন শরীফ নিয়মিত পাঠ করবে ক্বিয়ামতের দিন এ সূরা শরীফ তার জন্য সুপারিশ করবে। সুবহানাল্লাহ!

৩। যে ব্যক্তি সূরা আর রহমান শরীফ পাঠ করবে, সে দুনিয়াতে ও আখিরাতে অশেষ কল্যাণ হাছিল করবে। ক্বিয়ামতের দিন তার চেহারা জ্যোৎস্নার চাঁদের ন্যায় উজ্জ্বল হবে এবং সে জান্নাতবাসী হবে। সুবহানাল্লাহ!

৪। যে ব্যক্তি সূরা ওয়াক্বিয়া শরীফ প্রতি রাতে পাঠ করবে সে কখনো দারিদ্র ও অভাবে পতিত হবে না। সুবহানাল্লাহ!

৫। সূরা হাশর শরীফ উনার শেষ তিন আয়াত শরীফ ফজর ও মাগরিবের নামাযের পর ৩ বার পাঠ করার পর-

اعوذ بالله السميع العليم من الشيطان الرجيم. بسم الله الرحمن الرحيم

ও দোয়া ৩ বার পাঠ করলে, ৭০ হাজার ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা আমলকারীর জন্য দোয়া করেন; ফলে সে মহান আল্লাহ পাক উনার হিফাজতে থাকে। যদি এ ব্যক্তির মৃত্যু ঐ দিন বা ঐ রাতে হয় তবে সে শহীদী মর্তবা লাভে ধন্য হবে। সুবহানাল্লাহ!

৬। ফজরের নামাযের পরে সূর্যোদ্বয়ের পূর্বক্ষণে কেউ যদি

الله جل جلاله

এই নাম মুবারক একশবার যিকির করে মুনাজাত করতঃ গুনাহর মাগফিরাত কামনা করলে, তার সমস্ত গুনাহ মাফ হয়ে সদ্য ভুমিষ্ট শিশুর ন্যায় নিষ্পাপ হয়ে যাবে। সুবহানাল্লাহ!

৭। কেউ যদি প্রত্যহ ফজর নামায বাদে নিয়মিত ২৯৮ বার يا رحمن (ইয়া রহমানু) এই নাম মুবারক উনার ওযীফা করে, সে মহান আল্লাহ পাক উনার বিশেষ করুণা ও রহমতের অধিকারী হবে। যাবতীয় বালা-মুছীবত দূর হবে এবং নেক কাজে আকৃষ্ট হতে পারবে। সুবহানাল্লাহ!

৮। ইবাদতে আনন্দ লাভ এবং অলসতা দূরীভূত হওয়ার জন্য يا رحيم (ইয়া রহীমু) এই ইসিম বা নাম মুবারক উনার আমল অত্যন্ত ফলপ্রসূ। প্রত্যহ ফজরের নামাযের পর ৫০০ বার পড়তে হয়। সুবহানাল্লাহ!

৯। يا مالك (ইয়া মালিকু) এই নাম মুবারক যে ব্যক্তি প্রত্যহ ৩০০০ বার করে যিকির করবে এবং সর্বদা মনে রাখার চেষ্টা করবে, সে সকলের নিকট সম্মানের পাত্র হবে। হাকিম, মুনিব, বাদশাহ যেই হোক তার কথা মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করবে এবং সম্মানের নজরে দেখবে। সুবহানাল্লাহ!

১০। দুরূদে তাজ পড়লে ঈমান মজবুত হয়, শয়তান ওয়াসওয়াসা দিতে পারে না। সুবহানাল্লাহ!

১১। দুরূদে মাহী পাঠে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হওয়া যায় এবং বালা-মুছীবত থেকে নিরাপদ থাকা যায়। সুবহানাল্লাহ!

১২। দুরূদে শিফা পাঠে রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্ত থাকা যায়। সুবহানাল্লাহ!

১৩। দুরূদে  তুনাজ্জিনা পাঠ করলে বালা মুছীবত ও কঠিন বিপদ থেকে উদ্ধার হওয়া যায়। সুবহানাল্লাহ!

মোট কথা কালিমাহ, নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত, ফিতরা, দুআ, দুরূদ শরীফ, পবিত্র কুরআন শরীফ উনার সূরা শরীফ, আয়াত শরীফ ইত্যাদি আমলসমূহের এতসব ফযীলত বর্ণিত হয়েছে, কোন ব্যক্তি যদি উক্তসব আমল রাত-দিন চব্বিশ ঘণ্টা অনবরতভাবে করে তবুও তার পক্ষে শেষ করা কখনোই সম্ভব হবে না।

নিম্নে কামালিয়াত সম্পর্কে কিছু বর্ণনা দেয়া হলো:

কামালিয়াত সম্পন্ন আমল মুবারক করেছেন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা। পরবর্তীতে হযরত তাবিয়ীনে কিরাম, ইমাম-মুজতাহিদ ও আউলিয়ায়ে কিরাম উনারাই করেছেন এবং জারী রেখেছেন।

এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

والله ورسوله احق ان يرضوه ان كانوا مؤمنين

অর্থ: যদি তারা মু’মিন হয়ে থাকে তাহলে তাদের কর্তব্য হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক উনাকে ও উনার রসূল নূরে মুজাসাসম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সন্তুষ্ট করা। কেননা উনারাই সন্তুষ্টি মুবারক পাওয়ার সর্বাধিক হক্বদার।

কাজেই, প্রত্যেক মু’মিন মুসলমান বান্দা-বান্দী ও উম্মতের দায়িত্ব কর্তব্য হচ্ছে, কামালিয়াত অর্থাৎ মহান আল্লাহ উনার সন্তুষ্টি মুবারক হাছিলের উদ্দেশ্যেই আমল করা।

কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি একমাত্র উনার সন্তুষ্টি মুবারক হাছিলের উদ্দেশ্যে আমল করার জন্য আদেশ মুবারক করেছেন। যেমন ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

وما امروا الا ليعبدوا الله مخلصين له الدين

অর্থ: ঈমানদারদেরকে আদেশ করা হয়েছে তারা যেনো খালিছভাবে একমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার জন্যে ইবাদত বন্দিগী করে। (সূরা বাইয়্যিনাহ শরীফ: আয়াত শরীফ ৫)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عن حضرت ابى امامة الباهلى رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ان الله لا يقبل من العمل الا ما كان له خالصا وابتغى به وجهه

অর্থ: “হযরত আবূ উমামা আল বাহিলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক ওই আমল কবুল করবেন না, যা ইখলাছের সাথে মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক অর্জনের জন্য করা না হয়।” (নাসায়ী শরীফ, দায়লামী শরীফ)

মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক ব্যতীত অন্য কোন উদ্দেশ্যে কোন আমল করা হলে তা হবে গইরুল্লাহ। তা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট কখনোই কবুলযোগ্য হবে না। তা যত বেশি ও যত বড় আমলই হোক না কেন। যার উদাহরণ মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করেছেন।

ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

فويل للمصلين. الذين هم عن صلاتهم ساهون. الذين هم يراءون.

অর্থাৎ, নামায আদায়কারীদের জন্য আফসুস! তথা জাহান্নাম। যারা নামায আদায়ে অমনোযোগী। যারা রিয়াকারী অর্থাৎ মানুষকে দেখানোর জন্য নামায পড়ে। (পবিত্র সূরা মাঊন শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৪, ৫, ৬)

একইভাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, যা মুসলিম শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে, মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক হাছিলের উদ্দেশ্য না থাকার কারণে জিহাদকারী জিহাদ করা সত্বেও, ক্বারী কুরআন শরীফ শিক্ষা দেয়া সত্বেও এবং আলিম ইলম উনার প্রচার প্রসার করা সত্বেও এবং দানশীল দানের সমস্ত রাস্তায় দান করা সত্বেও তাদের সকলকে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। নাউযুবিল্লাহ!

স্মরণীয় যে, মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক হাছিলের উদ্দেশ্যে ইবাদত বা আমল করার মাধ্যমেই কামালিয়াত হাছিল হয়। আর কামালিয়াত হাছিল করার মাধ্যম হচ্ছেন ইখলাছ। অর্থাৎ প্রত্যেক পুরুষ মহিলাকে ইখলাছ অর্জন করতে হবে। অন্যথায় কামালিয়াত হাছিল করা তো দূরের কথা নাজাত লাভ করাটাই কঠিন হবে।

যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

الناس كلهم هلكى الا الـمؤمنون والـمؤمنون كلهم هلكى الا العالـمون والعالـمون كلهم هلكى الا العاملون والعاملون كلهم هلكى الا الـمخلصون

অর্থ : সমস্ত মানুষ ধ্বংস মু’মিনগণ ব্যতীত এবং মু’মিনগণও ধ্বংস আলিমগণ ব্যতীত এবং আলিমগণও ধ্বংস আমলকারীগণ ব্যতীত এবং আমলকারীগণও ধ্বংস ইখলাছ অর্জনকারীগণ ব্যতীত। (মিরকাত শরীফ)

প্রতিভাত হলো, ইখলাছ অর্জনকারীগণ ব্যতীত অন্য কারো পক্ষে হালাকী বা ধ্বংস থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব হবে না।

অতএব, প্রত্যেকের জন্য ইখলাছ অর্জন করা ফরয। আর ইলমুল ইখলাছ উনার অপর নামই হচ্ছে ইলমুল ক্বল্ব্ বা ইলমুত তাছাওউফ। আর কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নিকট বাইয়াত হয়ে ইলমে তাছাওউফ বা ইখলাছ অর্জন করতে হয়।

বর্ণিত রয়েছে, হানাফী মাযহাবের সম্মানিত ইমাম হযরত ইমাম আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বিশ্ববিখ্যাত আলিম হওয়া সত্ত্বেও তিনি বলেছেন-

لولا سنتان لـهلك ابو نعمان

অর্থ: “আমি নু’মান বিন ছাবিত ইমাম আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি ধ্বংস হয়ে যেতাম যদি দু’বছর না পেতাম।” (সাইফুল মুক্বাল্লিদীন, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীক্বিয়া)

অর্থাৎ হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি দু’বছর উনার দ্বিতীয় পীর ছাহিব আওলাদে রসূল, ইমামুস সাদিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম উনার দরবার শরীফ-এ থেকে ইলমে তাছাওউফ অর্জন করেন।

উল্লেখ্য, হযরত ইমাম আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি প্রথমে আওলাদে রসূল, ইমামুল খামিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত ইমাম বাকির আলাইহিস সালাম উনার কাছে মুরীদ হন এবং উনার বিছাল শরীফ উনার পর উনারই ছেলে আওলাদে রসূল হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম উনার কাছে বাইয়াত হয়ে কামালিয়াত অর্জন করেন। সুবহানাল্লাহ! যা বিশ্বখ্যাত গায়াতুল আওতার ফী শরহে দুররিল মুখতার, সাইফুল মুকাল্লিদীন, ইছনা আশারিয়া ইত্যাদি কিতাবে উল্লেখ রয়েছে।

খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

من يهد الله فهو الـمهتد ومن يضلل فلن تـجد له وليا مرشدا

অর্থ : “খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি যাঁকে হিদায়েত দান করেন, সেই হিদায়েত পায়। আর যে ব্যক্তি গোমরাহীর মধ্যে দৃঢ় থাকে, তার জন্য কোনো ওলীয়ে মুর্শিদ (কামিল শায়েখ) পাবেন না।” (পবিত্র সূরা কাহফ্ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৭)

অর্থাৎ যারা কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নিকট বাইয়াত হয়না, তারা পথভ্রষ্ট। কারণ তখন তাদের পথ প্রদর্শক হয় শয়তান। নাঊযুুবিল্লাহ!

যার কারণে সুলত্বানুল আরিফীন হযরত বায়েজিদ বোস্তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি, সাইয়্যিদুত ত্বায়িফা হযরত জুনায়িদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারাসহ আরো অনেকেই বলেছেন যে-

من ليس له شيخ فشيخه شيطان

অর্থ : “যার কোনো শায়েখ বা মুর্শিদ নেই, তার মুর্শিদ বা পথ প্রদর্শক হলো শয়তান।” নাঊযুবিল্লাহ! (ক্বওলুল জামীল, নুরুন আলা নূর, তাছাওউফ তত্ত্ব)

আর শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার গুরুত্ব সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم الشيخ فى اهله كالنبى فى امته وفى رواية الشيخ لقومه كالنبى فى امته

অর্থ : “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা উম্মতের নিকট যেরূপ সম্মানিত ও অনুসরণীয়, শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা তিনিও উনার অধীনস্থদের নিকট তদ্রƒপ সম্মানিত ও অনুসরণীয়।” (দায়লামী শরীফ, মাকতুবাত শরীফ, জামিউল জাওয়ামি’, আল মাক্বাছিদুল হাসানাহ, তানযীহুশ শরীয়াহ, আল মীযান, আল জামিউছ ছগীর, আদ দুরারুল মুনতাশিরাহ ইত্যাদি)

অর্থাৎ হযরত নবী-রসূল আলাইহিস সালাম উনার দ্বারা যেরূপ উম্মতের বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ সর্বক্ষেত্রে ইছলাহ লাভ হয়, তদ্রূপ শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার দ্বারা মুরীদের বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ সর্বক্ষেত্রে ইছলাহ লাভ হয়। সুবহানাল্লাহ!

অতএব, হযরত নবী-রসূল আলাইহিস সালাম উনার উম্মত না হয়ে যেরূপ ইছলাহ ও নাজাত লাভ করা যায়না, তদ্রূপ কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নিকট বাইয়াত না হওয়া পর্যন্ত ইছলাহ বা পরিশুদ্ধতা ও নাজাত লাভ করা যায়না। বরং শয়তানী প্রবঞ্চনায় পড়ে গোমরাহীতে নিপতিত হওয়াই স্বাভাবিক।

প্রমাণিত হলো, যে ব্যক্তি কোনো কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নিকট বাইয়াত না হবে, তার পক্ষে শয়তানী প্রবঞ্চনা ও বিভ্রান্তি থেকে বেঁচে থাকা আদৌ সম্ভব নয়। কেননা কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নিকট বাইয়াত হওয়া ব্যতীত ক্বলবে যিকির জারি করা অসম্ভব। আর ক্বলবে যিকির জারি করা ব্যতীত শয়তানী ওয়াসওয়াসা থেকে বেঁচে থাকাও সম্ভব নয়।

এ সম্পর্কে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার কালাম পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

ومن يعش عن ذكر الرحـمن نقيض له شيطانا فهو له قرين. وانـهم ليصدونـهم عن السبيل ويـحسبون انـهم مهتدون.

অর্থ : “যে ব্যক্তি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র যিকির থেকে বিরত (গাফিল) থাকে, আমি (খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক) তার জন্য একটি শয়তান নিযুক্ত করে দেই। অর্থাৎ তার গাফলতীর কারণেই তার সাথে একটা শয়তান নিযুক্ত হয়ে যায়। অতঃপর সেই শয়তান তার সঙ্গী হয় এবং তাকে সৎ পথ থেকে ফিরিয়ে রাখে অর্থাৎ পাপ কাজে লিপ্ত করে দেয়। অথচ তারা মনে করে, তারা সৎ পথেই রয়েছে।” (পবিত্র সূরা যুখরূফ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৬, ৩৭)

তাই পরিশুদ্ধতা লাভ করার জন্য বা ক্বলবে যিকির জারি করার জন্য অবশ্যই একজন কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নিকট বাইয়াত হতে হবে।

আর এ কারণেই পৃথিবীতে যত হযরত ইমাম-মুজতাহিদ ও আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা আগমন করেছেন, উনারা প্রত্যেকেই কোনো একজন শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নিকট বাইয়াত হয়েছেন এবং উনাদের স্ব স্ব কিতাবে শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নিকট বাইয়াত গ্রহণ করাকে ফরয বলেছেন। যেমন- গউছুল আ’যম, মাহবূবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী, ইমামুল আইম্মাহ হযরত বড়পীর আব্দুল ক্বাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিখ্যাত ও আলোড়ন সৃষ্টিকারী কিতাব ‘সিররুল আসরার’ নামক কিতাবে লিখেন-

ولذالك طلب اهل التلقين لـحياة القلوب فرض

অর্থ : “ক্বল্ব্ জিন্দা করার জন্য অর্থাৎ অন্তর পরিশুদ্ধ করার জন্য ‘আহলে তালক্বীন’ তালাশ করা অর্থাৎ কামিল মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নিকট বাইয়াত গ্রহণ করা ফরয।” অনুরূপ ‘ফতহুর রব্বানী’ কিতাবেও উল্লেখ আছে।

তদ্রƒপ হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিশ্ব সমাদৃত কিতাব ‘ক্বিমিয়ায়ে সায়াদাত’ কিতাবে, ক্বাইউমুয যামান হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ‘মাকতুবাত শরীফ’ কিতাবে, আওলাদে রসূল, আশিকে নবী হযরত আহমদ কবীর রেফায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ‘আল বুনিয়ানুল মুশাইয়্যাদ’ কিতাবে উল্লেখ করেন যে, “অন্তর পরিশুদ্ধ করার জন্য বা ইলমে তাছাওউফ অর্জন করার জন্য একজন কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নিকট বাইয়াত হওয়া ফরয।”

অনুরূপ তাফসীরে রূহুল বয়ান, তাফসীরে রূহুল মায়ানী ও তাফসীরে কবীর ইত্যাদি কিতাবেও উল্লেখ আছে।

মূলত কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা তিনি মুরীদের অন্তর পরিশুদ্ধ করতঃ খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার খাছ নৈকট্য মুবারক লাভ করানোর ক্ষেত্রে এক মহান উসীলা বা মাধ্যম।

এ কারণেই খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার কালাম পাক উনার মধ্যে নির্দেশ মুবারক করেন-

يايها الذين امنوا اتقوا الله وابتغوا اليه الوسيلة

অর্থ : “হে ঈমানদারগণ! তোমরা খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো এবং খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার নৈকট্য মুবারক লাভ করার জন্য ওসীলা তালাশ (গ্রহণ) করো।” (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৫)

উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় “তাফসীরে রূহুল বয়ান” নামক কিতাবে উল্লেখ আছে যে-

الوصول لا يـحصل الا بالوسيلة وهى العلماء الـحقيقة ومشائخ الطريقة

অর্থ : “ওসীলা ব্যতীত খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার নৈকট্য মুবারক লাভ করা যায়না। আর উক্ত ওসীলা হচ্ছেন হাক্বীক্বী আলিম বা তরীক্বতপন্থী কামিল মুর্শিদ উনারা।”

উপরোক্ত সংক্ষিপ্ত বর্ণনা থেকে প্রতিভাত হলো যে, দুনিয়াবী ও উখরবী ফায়দা লাভের আশায় বা ফায়দা হাছিলের উদ্দেশ্যে যে সমস্ত আমল করা হয়, সেটা হচ্ছে আমালিয়াত। অপরদিকে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি-রেযামন্দি হাছিলের জন্য যা আমল করা হয়, সেটা হচ্ছে কামালিয়াত। আমালিয়াত একধরণের গইরুল্লাহ। এতে হাক্বীক্বী ফায়দা লাভ করা সম্ভব নয়। বান্দা-বান্দীকে হাক্বীক্বী ফায়দা লাভ করতে হলে কামালিয়াত হাছিল করতে হবে। আর কামালিয়াতের মূল শর্ত হলো ইখলাছ হাছিল। ইখলাছ হাছিল করা ব্যতীত কোন কিছুই যথাযথভাবে করা সম্ভব নয়। ইখলাছ হাছিল করার একমাত্র মাধ্যম কামিল শায়েখ উনার নিকট বাইয়াত হয়ে ইলমে তাছাওউফ অনুশীলন করা। কাজেই, প্রত্যেকের জন্য একজন কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নিকট বাইয়াত হয়ে ক্বলবী যিকির করতঃ অন্তর পরিশুদ্ধ করে ইখলাছের সাথে আমল করা আবশ্যক। যা কামালিয়াত হাছিলের শর্ত ও মাধ্যম।

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ