সুওয়াল-জাওয়াব

সংখ্যা: ২৫৩তম সংখ্যা | বিভাগ:

মুহম্মদ আবু মাহমূদ হুসাইন

শান্তিবাগ, ঢাকা

সুওয়াল: বিগত ২৪ ডিসেম্বর ২০১৫ ঈসায়ী তারিখে প্রকাশিত ওহাবী ফিরক্বার মুখপত্র ‘সত্যবাণী’ ওরফে মিথ্যাবাণী নামক একটি অখ্যাত বুলেটিনে “ঈদে মীলাদুন্নবী বা রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্মবার্ষিকী উৎসব ইসলামে নেই।” নামক শিরোনামে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। যাতে প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে তাদের কথিত আলিমরা পবিত্র “ঈদে মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে যেসকল বক্তব্য প্রদান করে। নিম্নে তা হুবহু তুলে ধরা হলো। যেমন তারা বলেছে,

(৪) হযরত ছাহাবায়ে কিরাম সত্যিকার রসূল প্রেমিক ছিলেন। কিন্তু তারাতো কখনো রসূল প্রেমিক হওয়ার জন্যে জন্মবার্ষিকী পালন করেছেন বলে প্রমাণ নেই।”

(৫) “বর্তমান  একশ্রেণীর মানুষ হালুয়া রুটির লোভে ইসলামে ঈদে মীলাদুন্্ নবী নামে আরেকটি ঈদ আবিষ্কারে ব্যস্ত রয়েছে। অথচ প্রিয় নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইসলামে দু’ঈদের কথা বলে গেছেন।”  অর্থাৎ ইসলামে দু’ঈদ ব্যতীত আর কোন ঈদ নেই।

এখন আমার সুওয়াল হলো:  উক্ত অখ্যাত বুলেটিনের উল্লেখিত বক্তব্যগুলো কতটুকু কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ সম্মত। দলীল ভিত্তিক বিস্তারিত জাওয়াব দিয়ে আমাদের ঈমান-আমল হিফাযত করবেন বলে আমরা আশাবাদী।

জাওয়াব: পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে ওহাবী ফিরক¦ার মুখপত্র উক্ত অখ্যাত বুলেটিনে যা লিখেছে তা সম্পূর্ণই পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র সুন্নাহ্্ শরীফ বিরোধী, মনগড়া, দলীলবিহীন, বিভ্রান্তিকর ও কুফরীমুলক হয়েছে। আমরা ধারাবাহিকভাবে তাদের উল্লেখিত বক্তব্যগুলো খ-ন করে সঠিক ফায়ছালা তুলে ধরবো। ইন্্শাআল্লাহ্্

যেমন, তারা চতুর্থতঃ বলেছে- (৪) “হযরত ছাহাবায়ে কিরাম সত্যিকার রসূল প্রেমিক ছিলেন। কিন্তু তারাতো কখনো রসূল প্রেমিক হওয়ার জন্যে জন্মবার্ষিকী পালন করেছেন বলে প্রমাণ নেই।”

তাদের উক্ত বক্তব্যের  জাওয়াবে প্রথমত: বলতে হয় যে, পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে  নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ,  হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ভালোবাসা, মুহব্বত প্রদর্শনের জন্য জন্মবার্ষিকী তথা মহাসম্মানিত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনের কথা অবশ্যই উল্লেখ আছে  বলেই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুম উনারা নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ,  হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি মুহব্বতের নিদর্শন স্বরূপ জন্মবার্ষিকী তথা মহাসম্মানিত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন বা উদযাপন করেছেন। যার প্রমাণ নিম্নে উপস্থাপন করা হলো-

যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه انه كان يحدث ذات يوم فى بيته وقائع ولادته صلى الله عليه وسلم لقوم فيستبشرون ويحمدون الله ويصلون عليه صلى الله عليه وسلم فاذا جاء النبى صلى الله عليه وسلم قال حلت لكم شفاعتى .

অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি একদা উনার নিজগৃহে সমবেত ছাহাবীগণ উনাদেরকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উনার ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছিলেন। এতে শ্রবণকারীগণ আনন্দ ও খুশি প্রকাশ করছিলেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার প্রশংসা তথা তাসবীহ-তাহলীল পাঠ করছিলেন এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর ছলাত বা দুরূদ শরীফ পাঠ করছিলেন। এমন সময় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেখানে উপস্থিত হলেন এবং (পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠের অনুষ্ঠান দেখে) বললেন, “আপনাদের জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব।” সুবহানাল্লাহ! (আত তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর, মাওলূদুল কাবীর, দুররুল মুনাযযাম, সুবুলুল হুদা ফী মাওলিদিল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ইশবাউল কালাম ফী ইছবাতিল মাওলিদি ওয়াল ক্বিয়াম, হাক্বীক্বতে মুহম্মদী মীলাদে আহমদী)

এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে-

عن حضرت ابى الدرداء رضى الله تعالى عنه انه  مر مع النبى صلى الله عليه وسلم الى بيت حضرت عامر الانصارى رضى الله عنه وكان يعلم وقائع ولادته صلى الله عليه وسلم لابنائه وعشيرته ويقول هذا اليوم هذا اليوم فقال عليه الصلوة والسلام ان الله فتح لك ابواب الرحمة والـملائكة عليهم السلام كلهم يستغفرون لك من فعل فعلك نجى نجتك .

অর্র্থ: “হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে যে, একদা তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে হযরত আমির আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার গৃহে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলেন যে, তিনি উনার সন্তান-সন্ততি এবং আত্মীয়-স্বজন, জ্ঞাতি-গোষ্ঠী, পাড়া-প্রতিবেশীদেরকে নিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে সম্মানিত বিলাদত শরীফ উনার ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছেন এবং বলছেন, এই দিবস, এই দিবস অর্র্থাৎ এই দিবসে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীনে তাশরীফ এনেছেন। এমন সময় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেখানে উপস্থিত হলেন। (তিনি যখন উপস্থিত হলেন তখন সমবেত সবাই দাঁড়িয়ে উনাকে সালাম পেশ করতঃ অভ্যর্থনা বা স্বাগত জানিয়ে আসনে বসালেন।) তিনি সম্মানিত মীলাদ শরীফ উনার অনুষ্ঠান এবং সম্মানিত বিলাদত শরীফ উনার কারণে খুশি প্রকাশ করতে দেখে উনাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি আপনাদের জন্য রহমতের দরজা উš§ুক্ত করেছেন এবং সমস্ত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা আপনাদের জন্য মাগফিরাত বা ক্ষমা প্রার্থনা করছেন এবং যে কেউ আপনাদের মতো এরূপ কাজ করবে, আপনাদের মতো তারাও রহমত, মাগফিরাত এবং নাজাত লাভ করবে। সুবহানাল্লাহ! (কিতাবুত তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর, সুবুলুল হুদা ফী মাওলিদে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হাক্বীক্বতে মুহম্মদী ও মীলাদে আহমদী পৃষ্ঠা- ৩৫৫)

শুধু তাই নয়, হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনারা প্রত্যেকেই উনাদের খিলাফতকালে নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ,  হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি মুহব্বতের নিদর্শন স্বরূপ জন্মবার্ষিকী তথা মহাসম্মানিত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন বা উদযাপন করেছেন।এবং পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করার জন্য মানুষদেরকে উৎসাহ প্রদান করেছেন। সুবহানাল্লাহ!

যেমন এ প্রসঙ্গে বিশ্ব সমাদৃত ও সুপ্রসিদ্ধ ‘আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম‘ কিতাবে আরো বর্ণিত রয়েছে-

قال حضرت ابو بكرن الصديق عليه السلام من انفق درهما على قرائة مولد النبى صلى الله عليه وسلم كان رفيقى فى الجنة .

অর্র্থ: “হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, যে ব্যক্তি সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে এক দিরহাম ব্যয় করবে, সে জান্নাতে আমার বন্ধু হয়ে থাকবে।” সুবহানাল্লাহ!

قال حضرت عمر الفاروق عليه السلام من عظم مولد النبى صلى الله عليه وسلم فقد احيا الاسلام .

অর্র্থ: “হযরত উমর ফারূক্ব আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, যে ব্যক্তি পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্মান করলো ও বিশেষ মর্যাদা দিলো সে মূলতঃ সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনাকেই পুনরুজ্জীবিত করলো।” সুবহানাল্লাহ!

قال حضرت عثمان ذو النورين عليه السلام من انفق درهما على قرائة مولد النبى صلى الله عليه وسلم فكانما شهد غزوة بدر وحنين .

অর্র্থ: “হযরত উছমান যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, যে ব্যক্তি পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে এক দিরহাম খরচ করলো, সে যেনো বদর ও হুনাইন যুদ্ধে শরীক থাকলো।” সুবহানাল্লাহ!

قال حضرت على كرم الله وجهه عليه السلام من عظم مولد النبى صلى الله عليه وسلم وكان سببا لقرائته لايخرج من الدنيا الا بالايمان ويدخل الجنة بغير حساب .

অর্র্থ: “হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, যে ব্যক্তি পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্মান করলো এবং উনার প্রতি বিশেষ মর্যাদা প্রদান করলো, সে ব্যক্তি অবশ্যই ঈমান নিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিবে এবং বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” সুবহানাল্লাহ!

এমনিভাবে পরবর্তী সময়ে পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনের ধারা অব্যাহত বা জারী রেখেছেন হযরত ইমাম-মুজতাহিদ ও আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারাও।

যেমন এ প্রসঙ্গে বিশ্বসমাদৃত ও সুপ্রসিদ্ধ “আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, বিশিষ্ট তাবিয়ী, ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত তরীক্বত হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-

قال حضرت الـحسن البصرى رحمة الله عليه وددت لو كان لى مثل جبل احد ذهبا فانفقته على قرائة مولد النبى صلى الله عليه وسلم .

অর্র্থ: ‘আমার একান্ত ইচ্ছা হয় যে, আমার যদি উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ থাকতো তাহলে তা পবিত্র মীলাদে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে ব্যয় করতাম।’ সুবহানাল্লাহ!

উক্ত কিতাবে আরো বর্ণিত রয়েছে, শাফিয়ী মাযহাব উনার ইমাম হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-

قال حضرت الامام الشافعى رحمة الله عليه من جمع لمولد النبى صلى الله عليه وسلم اخوانا وهيا طعاما واخلى مكانا وعمل احسانا وصار سببا لقرائته بعثه الله يوم القيامة مع الصديقين والشهداء والصالحين ويكون فى جنات النعيم .

অর্র্থ: ‘যে ব্যক্তি পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ ঈদে মীলাদে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন উপলক্ষে লোকজন একত্রিত করলো, খাদ্য তৈরি করলো, জায়গা নির্দিষ্ট করলো এবং এ জন্য উত্তমভাবে তথা পবিত্র সুন্নাহ ভিত্তিক আমল করলো, উক্ত ব্যক্তিকে মহান আল্লাহ পাক তিনি হাশরের দিন ছিদ্দীক্ব, শহীদ ছলিহীনগণ উনাদের সাথে উঠাবেন এবং উনার ঠিকানা হবে জান্নাতুন  নায়ীমে।’ সুবহানাল্লাহ! (আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম)

হযরত ইমাম মারূফ কারখী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-

قال حضرت الـمعروف الكرخى رحمة الله عليه من هيا طعاما لاجل قرائة مولد النبى صلى الله عليه وسلم وجمع اخوانا واوقد سراجا ولبس جديدا وتبخر وتعطر تعظيما لـمولد النبى صلى الله عليه وسلم حشره الله يوم القيامة مع الفرقة الاولى من النبين وكان فى اعلى عليين .

অর্র্থ: “যে ব্যক্তি পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ তথা ঈদে মীলাদে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে খাদ্যের আয়োজন করে, অতঃপর লোকজনকে জমা করে, মজলিসে আলোর ব্যবস্থা করে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন নতুন পোশাক পরিধান করে, ধুপ ও আতর অর্থাৎ সুঘ্রাণ ও সুগন্ধি ব্যবহার করে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রথম কাতারে হাশর করাবেন এবং সে জান্নাতে সুউচ্চ মাক্বামে অধিষ্ঠিত হবে।” সুবহানাল্লাহ! (আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম)

হযরত ইমাম সাররী সাকতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-

قال حضرت السر سقتى رحمة الله عليه من قصد موضعا يقرأ فيه مولد النبى صلى الله عليه وسلم فقد قصد روضة من رياض الجنة لانه ما قصد ذلك الموضع الا لمحبة النبى صلى الله عليه وسلم وقال صلى الله عليه وسلم من احبنى كان معى فى الجنة

অর্র্থ: “যে ব্যক্তি পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন করার জন্য স্থান নির্দিষ্ট করলো, সে যেনো নিজের জন্য জান্নাতে রওযা বা বাগান নির্দিষ্ট করলো। কেননা সে তা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহব্বতের জন্যই করেছে। আর মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, যে ব্যক্তি আমাকে ভালবাসবে সে আমার সাথেই জান্নাতে থাকবে।” সুবহানাল্লাহ! (আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম)

মুসলমানদের মধ্যে পৃথিবীতে যিনি সবচেয়ে বেশি কিতাব লিখেছেন, যিনি উনার যামানার মুজাদ্দিদ এবং সুলত্বানুল আরিফীন ছিলেন, তিনি হচ্ছেন হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

তিনি বলেন-

قال حضرت سلطان العارفين الامام جلال الدين السيوطى قدس الله سره ونور ضريحه فى كتابه الـمسمى الوسائل فى شرح الشمائل ما من بيت او مسجد او محلة قرئ فيه مولد النبى صلى الله عليه وسلم الا حفت الملائكة ذلك البيت او المسجد او الـمحلة وصلت الـملائكة على اهل ذلك الـمكان وعمهم الله تعالى بالرحمة والرضوان واما الـمطوقون بالنور يعنى جبرائيل وميكائيل واسرافيل وعزرائيل عليهم السلام فانهم يصلون على من كان سببا لقرائة مولد النبى صلى الله عليه وسلم فاذا مات هون الله عليه جواب منكر ونكير ويكون فى مقعد صدق عند مليك مقتدر .

অর্র্থ: “যে কোন ঘরে অথবা মসজিদে অথবা মহল্লায় পবিত্র মীলাদে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন করা হয়, সে স্থান অবশ্যই মহান আল্লাহ পাক উনার হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম বেষ্টন করে নেন। আর উনারা সে স্থানের অধিবাসীগণের উপর ছলাত-সালাম পাঠ করতে থাকেন। আর মহান আল্লাহ পাক উনাদেরকে স্বীয় রহমত ও সন্তুষ্টির আওতাভুক্ত করে নেন। আর নূর দ্বারা সজ্জিত প্রধান চার ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম অর্থাৎ হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম, হযরত মীকায়ীল আলাইহিস সালাম, হযরত ইসরাফীল আলাইহিস সালাম ও হযরত আযরায়ীল আলাইহিস সালাম পবিত্র মীলাদে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপনকারীগণের উপর ছলাত-সালাম পাঠ করেন। যখন উনারা ইনতিকাল করেন তখন মহান আল্লাহ পাক উনাদের জন্য হযরত মুনকার-নাকীর আলাইহিমাস সালাম উনাদের সুওয়াল-জাওয়াব সহজ করে দেন। আর উনাদের অবস্থান হয় মহান আল্লাহ পাক উনার সন্নিধানে ছিদক্বের মাক্বামে।” সুবহানাল্লাহ! (আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম)

অতএব উপরোক্ত দলীল প্রমাণাদী দ্বারা সুস্পষ্টভাবে এটাই প্রমাণিত হলো যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুম উনারা নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ,  হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ভালোবাসা, মুহব্বত প্রদর্শনের জন্য জন্মবার্ষিকী তথা মহাসম্মানিত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন বা উদযাপন করেছেন এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুম উনারা পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ তথা পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করার জন্য বিশেষভাবে মানুষদেরকে উৎসাহ প্রদান করেছেন।

সুতরাং, এত সুস্পষ্ট দলীল প্রমাণাদী থাকার পরেও যারা বলে “হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুম উনারা নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ,  হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ভালোবাসা, মুহব্বত প্রদর্শনের জন্য জন্মবার্ষিকী তথা মহাসম্মানিত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ তথা পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন বা উদযাপন করেছেন বলে প্রমাণ নেই।” তারা চরম জাহিল ও গোমরাহ ব্যতীত অন্য কিছু নয়।

{দলীলসমূহ : (১) তাফসীরে আহকামুল কুরআন জাস্সাস, (২) তাফসীরে রূহুল মায়ানী, (৩) তাফসীরে রূহুল বয়ান, (৪) তাফসীরে কুরতুবী, (৫) তাফসীরে কবীর, (৬) তাফসীরে তাবারী, (৭) তাফসীরে যাদুল মাছীর, (৮) মাযহারী, (৯) তাফসীরে ইবনে কাছীর, (১০) তাফসীরে খাযেন, (১১) তাফসীরে বাগবী, (১২) তাফসীরে দুররুল মনছূর, (১৩) তাফসীরে ইবনে আব্বাস, (১৪) তিরমিযী শরীফ, (১৫) দারিমী শরীফ, (১৬) মিশকাত শরীফ, (১৭) শরহে তিরমিযী, (১৮) মিরকাত শরীফ, (১৯) আশয়াতুল লুময়াত শরীফ, (২০) লুময়াত শরীফ, (২১) শরহুত্ ত্বীবী শরীফ, (২২) তালিকুছ্ ছবীহ্, (২৩) মুযাহিরে হক্ব, (২৪) কিতাবুত্ তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান্ নাযীর, (২৫) সুবুলুল হুদা ফী মাওলিদিল মুস্তফা, (২৬) মাওলুদুল কবীর, (২৭) দুররুল মুনাজ্জাম, আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম ইত্যাদি।}

 

মীর মুহম্মদ ছাবের আলী

বায়তুল মোকাররম মার্কেট, ঢাকা

মুহম্মদ হাবীবুর রহমান, সংসদ ভবন, ঢাকা

মুহম্মদ জুনাইদ, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।

সুওয়াল: বর্তমানে মসজিদের ভিতরে চেয়ারে বসে নামায আদায় করার ব্যাপারে তীব্র মতভেদ দেখা যাচ্ছে। কেউ বলছেন, মসজিদের ভিতরে চেয়ারে বসে নামায আদায় করা জায়িয নেই। আবার কেউ বলছে জায়িয। উভয়েই পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ ও ফিক্বাহের কিতাব থেকে দলীল দিয়ে থাকে।

এখন আমরা কোনটা গ্রহণ করবো? বহুল প্রচারিত দলীলভিত্তিক মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এ এ বিষয়ে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সঠিক ফায়সালা তুলে ধরলে সাধারণ মুসলমানগণ উপকৃত হতো।

জাওয়াব: পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে মসজিদের ভিতরে বা মসজিদের বাহিরে চেয়ারে বসে নামায আদায় করার সঠিক ফায়ছালা হচ্ছে, মসজিদের ভিতরে হোক অথবা মসজিদের বাহিরে হোক, দাঁড়াতে সক্ষম হোক  অথবা দাঁড়াতে অক্ষম হোক, প্রত্যেক অবস্থাতেই চেয়ার, টেবিল, টুল, বেঞ্চ অথবা অনুরূপ (পা ঝুলে থাকে এমন) কোন আসনে বসে নামায আদায় করা কাট্টা হারাম, নাজায়িয ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ এবং নামায বাতিল হওয়ার কারণ। এ ফতওয়াটি ছহীহ, দলীলভিত্তিক ও গ্রহণযোগ্য। এর খিলাফ কোন ফতওয়াই ছহীহ নয়, দলীলভিত্তিকও নয় এবং গ্রহণযোগ্যও নয়।

আমরা ধারাবাহিকভাবে উল্লিখিত বিষয়ে দলীল-আদিল্লাহ পেশ করার পাশাপাশি যারা চেয়ার, টেবিল, টুল ও বেঞ্চে বসে নামায পড়াকে জায়িয বলে, তাদের সে সমস্ত বক্তব্যগুলো নির্ভরযোগ্য দলীল দ্বারা খ-ন করবো। ইনশাআল্লাহ!

উল্লেখ্য যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, তাবিয়ীন, তাবি-তাবিয়ীন, ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের কেউই অসুস্থ অবস্থাতেও কখনো চেয়ারে বসে নামায পড়েছেন এরূপ কোন প্রমাণ পাওয়া যায়না। অথচ পবিত্র নামাযসহ প্রতিটি ইবাদতের ক্ষেত্রেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মধ্যে উত্তম আদর্শ মুবারক রয়েছে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِىْ رَسُوْلِ اللهِ اُسْوَةٌ حَسَنَةٌ

অর্থ: “অবশ্যই তোমাদের জন্য নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মধ্যেই রয়েছে উত্তম আদর্শ মুবারক।” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২১)

আর তাই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ছিহ্হাতী শান মুবারক প্রকাশ করা অবস্থায় (সুস্থাবস্থায়) কিভাবে পবিত্র নামায আদায় করেছেন তা যেরূপ সম্মানিত শরীয়ত উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, তদ্রূপ মারীদ্বী শান মুবারক প্রকাশ করা অবস্থায় (অসুস্থাবস্থায়) কিভাবে পবিত্র নামায আদায় করেছেন তাও সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত রয়েছে। যদি তাই হয়ে থাকে, তাহলে চেয়ারে বসে নামায পড়ার বিষয়ে এত মতভেদের কি কারণ থাকতে পারে? নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মারীদ্বী শান মুবারক প্রকাশ করা অবস্থায় (অসুস্থাবস্থায়) কিভাবে পবিত্র নামায আদায় করেছেন, সেটা দেখলেই তো সমস্ত মতভেদ দূরীভূত হয়ে যায়।

যেমন, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে   ইরশাদ মুবারক হয়েছে যে-

عَنْ حَضَرَتْ مَاِلكِ بْنِ الْحُوَيْرِث رَضِىَ الله تَعَالى عنه قَالَ قَالَ لَنَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلُّوْا كَمَا رَأَيْتُمُوْنِىْ اُصَلّىَ

অর্থ: “হযরত মালিক ইবনে হুয়াইরিছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদেরকে বলেন, “তোমরা ঐভাবে নামায পড়ো, যেভাবে আমাকে নামায পড়তে দেখেছো।” (বুখারী শরীফ,  মুসলিম শরীফ,  মিশকাত শরীফ)

তাই আসুন এখন আমরা দেখে নেই যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মারীদ্বি শান মুবারক প্রকাশ করা অবস্থায় (অসুস্থাবস্থায়) কিভাবে পবিত্র নামায আদায় করেছেন।

যেমন, “মুসলিম শরীফ” কিতাবের  ১ম খণ্ডের ১৭৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

عَنْ ام الـمؤمنين حضرت عَائِشَةَ الصديقة عليها السلام قَالَتْ لَمَّا ثَقُلَ رَسُولُ اللّهِ صلى الله عليه وسلم جَاءَ بِلاَلٌ يُؤْذِنُهُ بِالصَّلاَةِ فَقَالَ مُرُوا أَبَا بَكْرٍ عليه السلام فَلْيُصَلِّ بِالنَّاسِ. قَالَتْ فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللّهِ صلى الله عليه وسلم إِنَّ أَبَا بَكْرٍ عليه السلام رَجُلٌ أَسِيفٌ وإِنَّهُ مَتَى يَقوُمْ مَقَامَكَ لاَ يُسْمِعِ النَّاسَ فَلَوْ أَمَرْتَ عُمَرَ عليه السلام فَقَالَ مُرُوا أَبَا بَكْرٍ عليه السلام فَلْيُصَلّ بِالنَّاسِ. قَالَتْ فَقُلْتُ لِحَفْصَةَ عليها السلام قُولِى لَهُ إِنَّ أَبَا بَكْرٍ عليه السلام رَجُلٌ أَسِيفٌ وَإِنَّهُ مَتَى يَقوُمْ مَقَامَكَ لاَ يُسْمِعِ النَّاسَ فَلَوْ أَمَرْتَ عُمَرَ عليه السلام. فَقَالَتْ لَهُ. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِنَّكُنَّ لأَنْتُنَّ صَوَاحِبُ يُوْسُفَ عليه السلام. مُرُوا أَبَا بَكْرٍ عليه السلام فَلْيُصَلّ بِالنَّاسِ. قَالَتْ فَأَمَرُوا أَبَا بَكْرٍ عليه السلام يُصَلِّى بِالنَّاسِ قَالَتْ  فَلَمَّا دَخَلَ فِى الصَّلاَةِ وَجَدَ رَسُولُ اللّهِ صلى الله عليه وسلم مِنْ نَفْسِهِ خِفَّةً قالت فَقَامَ يُهَادَى بَيْنَ رَجُلَيْنِ وَرجلاهْ  تَخُطَّانِ فِى الأَرْضِ قَالَتْ  فَلَمَّا دَخَلَ الْمَسْجِدَ سَمِعَ أَبُو بَكْرٍ عليه السلام حسه ذَهَبَ يَتَأَخَّرُ فَأَوْمَأَ إِلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قُمْ مَكَانَكَ. فَجَاءَ رَسُولُ اللّهِ صلى الله عليه وسلم حَتَّى جَلَسَ عَنْ يَسَارِ أَبِى بَكْرٍ عليه ا لسلام قَالَتْ  فَكَانَ رَسُولُ اللّهِ صلى الله عليه وسلم يُصَلّى بِالنَّاسِ جَالِسًا وَأَبُو بَكْرٍ عليه السلام قَائِمًا يَقْتَدِى أَبُو بَكْرٍ عليه السلام بِصَلاَةِ النَّبِىّ صلى الله عليه وسلم وَيَقْتَدِى النَّاسُ بِصَلاَةِ أَبِى بَكْر عليه السلام

অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মারীদ্বি শান মুবারক প্রকাশ করলেন, তখন হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে পবিত্র নামায উনার ইমামতির জন্য ডাকতে আসলেন। অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, আপনারা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনাকে লোকদেরকে নিয়ে নামায আদায় করতে বলুন। উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি অত্যন্ত নরম হৃদয়ের মানুষ। তিনি আপনার স্থানে দাঁড়িয়ে লোকদেরকে পবিত্র কুরআন শরীফ পাঠ করে শুনাতে পারবেন না। আপনি হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাকে আদেশ মুবারক করলে উত্তম হবে। কিন্তু তিনি তবুও বললেন,  আপনারা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনাকে লোকদেরকে নিয়ে নামায আদায় করতে বলুন। উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, এরপর আমি উম্মুল মু’মিনীন হযরত  হাফছাহ্  আলাইহাস সালাম  উনাকে বললাম, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আপনি বলুন যে, হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি অত্যন্ত কোমল হৃদয়ের অধিকারী। তিনি আপনার স্থানে দাঁড়িয়ে লোকদেরকে পবিত্র কুরআন শরীফ শুনাতে পারবেন না। আপনি হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাকে আদেশ মুবারক করলে উত্তম হবে। উম্মুল মু’মিনীন হযরত  হাফছাহ্্  আলাইহাস সালাম তিনি উনাকে তাই বললেন। কিন্তু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন যে, আপনারা অবশ্যই হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম উনার ছোহবতে আগমনকারিণী মহিলাদের মতো। আপনারা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনাকে লোকদেরকে নিয়ে নামায আদায় করতে বলুন। উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, অতঃপর হযরত ছাহাবায়ে কেরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুম উনারা সকলেই হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনাকে লোকদেরকে নিয়ে নামায আদায় করতে বললেন। উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, অতঃপর হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি যখন এগিয়ে গিয়ে নামায আদায় শুরু করলেন। এদিকে তখন  নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেকে একটু হালকা বোধ  করলেন। অতঃপর  তিনি দু’জন হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনাদের কাঁধ মুবারকে ভর দিয়ে বেরিয়ে এলেন।  উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, মারিদ্বী শান মুবারক প্রকাশের কারণে উনার দু’পা মুবারক মাটিতে লেগে যাচ্ছিল।

অতঃপর  নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন মসজিদে প্রবেশ করলেন, তখন উনার আগমনের শব্দ পেয়ে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি পিছনে সরে আসতে চাইলেন। কিন্তু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে স্বস্থানে থাকার জন্য ইঙ্গিত মুবারক করলেন। তারপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজে এসে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার পাশে যমীনের উপর বসে পড়লেন। উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম  তিনি বলেন, অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীনে  বসে লোকদেরকে নিয়ে পবিত্র নামাযের ইমামতি করছিলেন। আর হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি দণ্ডায়মান অবস্থায় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুসরণে পবিত্র নামায আদায়  করছিলেন। আর লোকজন অর্থাৎ হযরত ছাহাবায়ে কেরাম রদ্বিয়াল্লাহু ত’ায়ালা আনহুম উনারা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম উনার নামাযের অনুসরণ করছিলেন।

অতএব, উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বর্ণনা থেকে সুস্পষ্টরূপে প্রমানিত হলো যে, “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে মারীদ্বি (অসুস্থতা) শান মুবারক প্রকাশ করার পর বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন, উক্ত মারীদ্বি শান মুবারক প্রকাশ কালে তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে নিয়ে যমীনে বসেই পবিত্র নামায আদায় করেছেন।

মুহম্মদ ইরফানুল হক

শান্তিবাগ, ঢাকা

 

সুওয়াল: অনেক ওয়ায়িজকে দেখা যায়, ওয়াজের মধ্যে অশ্লীল-অশালীন কথা বলে, শ্রোতাকে হাসায়, অঙ্গভঙ্গি করে, টেবিলে থাপ্পর মারে ইত্যাদি। এ ধরনের ওয়ায়িজদের ব্যাপারে সম্মানিত শরীয়ত উনার কি ফায়ছালা? জানতে ইচ্ছুক।

জাওয়াব: যারা ওয়াজ-নছীহত করবেন উনাদেরকে হক্কানী-রব্বানী আলিম হতে হবে। অর্থাৎ উনাদেরকে ইলিম বআমল হতে হবে। সুন্নত মুবারক উনার পূর্ণ পাবন্দ হতে হবে, আক্বীদা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের অনুযায়ী হতে হবে। এরপর যারা ওয়াজ-নছীহত করবেন উনাদেরকে সম্মানিত সুন্নতী তর্জ-তরীক্বায় ওয়াজ নছীহত করতে হবে। মনে রাখতে হবে, যারা ওয়াজ করবে এবং শুনবে প্রত্যেকের উদ্দেশ্য থাকতে হবে মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রেযামন্দী সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল করা। ওয়াজ করতে হবে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র কুরআন শরীফ এবং পবিত্র সুন্নাহ শরীফ ভিত্তিক।

ওয়াজ করার সুন্নতী নিয়ম বা পদ্ধতি সম্পর্কে বলতে হয় যে, ওয়াজ করতে হবে ধীরে ধীরে এবং স্পষ্টভাবে। যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عن حضرت ابى امامة رضى الله تعالى عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم قال الحياء والعى شعبتان من الايمان والبذاء والبيان شعبتان من النفاق

অর্থ: হযরত আবু উমামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, লজ্জা এবং ধীরে ধীরে বলা উভয়টি ঈমান উনার অন্তর্ভুক্ত। আর অনর্গল বলে যাওয়া এবং অশ্লীল-অশালীন কথাবার্তা বলা মুনাফিকীর লক্ষণ। (তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ)

কাজেই, ওয়াজ যারা করবে তাদেরকে অশ্লীল কথা থেকে বিরত থাকতে হবে, শালীনতা বজায় রেখে কথা বলতে হবে। এমন সব কথা বলতে হবে যা হিদায়েতের নিকটবর্তী হয়। অনর্থক, আজে-বাজে কথা, মনগড়া, বানোয়াট কথা বলা থেকে বিরত থাকতে হবে।

ওয়াজ করা প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

ادع الى سبيل ربك بالحكمة والـموعظة الحسنة

অর্থ: খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার পথে (লোকদেরকে)  আহ্বান করো, ওয়াজ করো হিকমতের সাথে তথা সুন্নতী তর্জ-তরীক্বায় এবং নছীহতপূর্ণ সুন্দর সুন্দর কথার মাধ্যমে শালীনতা বজায় রেখে। (পবিত্র সূরা নহল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ১২৫)

ওয়াজের মধ্যে হাস্য-রসীকতা করা, অশ্লীল-অশালীন ভাষা ব্যবহার করা এ সমস্ত যিনি খ্বালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি পছন্দ করেন না এবং যিনি সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিও পছন্দ করেন না। ওয়াজের তাক্বওয়া কেমন হবে বা কোন তরতীবে ওয়াজ করা সুন্নত সে প্রসঙ্গে হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত ইমাম গাযযালী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার ‘সীরাতুল মুস্তাক্বীম’ কিতাবের মধ্যে উল্লেখ করেছেন যে, ওয়াজ করতে হবে ঠিক ঐভাবে যেভাবে স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ওয়াজ করেছেন। তিনি উক্ত কিতাবে আরো উল্লেখ করেছেন যে, যদি কোন বক্তাকে বা ওয়ায়িজকে দেখ, ওয়াজ করার সময় অশ্লীল কথা বলে, আজে বাজে কথা বলে, অঙ্গভঙ্গি করে, হাস্য-রসিকতা করে হাসানো কাঁদানোর উদ্দেশ্যে কিংবা অন্য কোন উদ্দেশ্যে তাহলে তাকে স্টেজ থেকে নামিয়ে দাও। উক্ত বক্তার ওয়াজ তোমরা শুনো না। কারণ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

انظروا عمن تأخذون دينكم

অর্থ: তোমরা লক্ষ্য করো, কার নিকট থেকে দ্বীন গ্রহণ করছো তথা ইলিম অর্জন করছো। (তিরমিযী শরীফ)

কেননা বক্তার আক্বীদা কেমন, আমল কেমন, আখলাক্ব কেমন; সে অনুযায়ীই শ্রোতার মধ্যে তাছীর করবে। যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

الصحبة متأثرة

অর্থ: ছোহবত বা সংসর্গ তাছীর করে থাকে।

এ প্রসঙ্গে অন্য একখানা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عن حضرت عمارة بن رؤيبة رضى الله تعالى عنه قال راى بشر بن مروان على الـمنبر قبح الله هاتين اليدين لقد رأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم ما يزيد على ان يقول بيده هكذا واشار باصبعه الـمسبحة.

অর্থ: হযরত উমারা ইবনে রুয়াইবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন যে, তিনি বিশর ইবনে মারওয়ানকে মিম্বরে উঠে ওয়াজ করতে দেখলেন, সে অঙ্গভঙ্গি করে দুই হাত তুলে এবং দুই হাত নেড়ে অনেক কথা বলতে লাগলো। তখন তিনি বলে উঠলেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি এই ব্যক্তির দুই হাত ধ্বংস করে দিন। আমি নিশ্চিতভাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অঙ্গুলি মুবারক নেড়ে কথা মুবারক বলতে দেখেছি এবং উনার শাহাদাত অঙ্গুলি মুবারক দ্বারা ইশারা করে বা উঠিয়ে নছীহত মুবারক করতে দেখেছি। (কিন্তু উনাকে অঙ্গভঙ্গি করে দুই হাত মুবারক তুলে বা দুই হাত মুবারক নেড়ে কথা বলতে দেখিনি।)  (মুসলিম শরীফ)

প্রতিভাত হলো, ওয়াজ করতে হবে সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত সুন্নত তরীক্বা অনুযায়ী। আবার যারা শ্রোতা থাকবে তাদেরকেও ঠিক সেভাবেই ওয়াজ শুনতে হবে। অর্থাৎ যেভাবে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা শুনেছেন। এর কোনরূপ ব্যতিক্রম করা যাবেনা।

 

মুহম্মদ মুশাররফ হুসাইন

সুনামগঞ্জ

সুওয়াল: সুনামগঞ্জ নবীনগর জামে মসজিদের বার্ষিক ওয়াজ মাহফিলে একজন বক্তা ওয়াজের এক পর্যায়ে বলেন, এই মাহফিলকে কবর যিয়ারতের মাহফিল বানাবেন না। কারণ মানুষ কবরবাসীদের সালাম দেয়। কিন্তু কবরবাসী সালামের উত্তর দেয় না। অতএব, আপনারা কথার উত্তর দিবেন। তাহলে ওয়াজ করতে ভাল লাগবে। এই কথা শুনার পর আমি প্রশ্ন লিখে পাঠালাম। কবরবাসী যদি সালামের উত্তর না দিবেন তাহলে কেন মুসলমানগণ কবরের পাশে দাঁড়িয়ে “আসসালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল কুবূর” বলেন? ঐ বক্তা উত্তর দিলেন, কবরবাসী মৃত। তারা উত্তর দিতে পারেন না, উত্তর দেন ফেরেশতাগণ। কোন দলীল দেননি। উনার উত্তর কি সঠিক হয়েছে? জানতে বাসনা রাখি।

জাওয়াব: উক্ত বক্তার উত্তর বা জাওয়াব পুরোপুরি শুদ্ধ হয়নি। বরং আংশিক শুদ্ধ হয়েছে। বর্ণিত রয়েছে, কবরবাসীগণ তিন শ্রেণীতে বিভক্ত। (এক) ইহুদী-নাছারা, হিন্দু-বৌদ্ধ, কাফির-মুশরিক ইত্যাদি । (দুই) সাধারণ মু’মিন মুসলমান। (তিন) পীর-বুযুর্গ, আউলিয়ায়ে কিরাম।

উক্ত তিন শ্রেণীর কবরবাসীর মধ্যে প্রথম হচ্ছে, ইহুদী-নাছারা, হিন্দু, বৌদ্ধ ইত্যাদি কাফির মুশরিক। এরা জীবিত ব্যক্তিগণের যাবতীয় কথাবার্তা শুনে থাকে বটে কিন্তু কোনরূপ কথা বলতে বা জাওয়াব প্রদান করতে সক্ষম নয়।

যেমন এ প্রসঙ্গে বুখারী শরীফ দ্বিতীয় খ- জিহাদ অধ্যায়ে বর্ণিত রয়েছে, হযরত আবূ তলহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, বদর জিহাদের দিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক নির্দেশে চব্বিশজন কুরাইশ সর্দারের লাশ একটি ময়লা আবর্জনাপূর্ণ কূপে নিক্ষেপ করা হলো। অতঃপর তিনি ঐ কূপের কিনারে গিয়ে দাঁড়ালেন এবং কূপে নিক্ষিপ্ত নিহত ব্যক্তিদের নাম ও তাদের পিতার নাম ধরে এভাবে ডাকতে লাগলেন-

يَا فُلَانُ بْنِ فُلَانُ يَا فُلَانُ بْنِ فُلَانُ اَيَسُرُّكُمْ أَنَّكُمْ أَطَعْتُمُ اللّهَ وَرَسُولَهُ فَإِنَّا قَدْ وَجَدْنَا مَا وَعَدَنَا رَبُّنَا حَقًّا, فَهَلْ وَجَدْتُمْ مَا وَعَدَكُمْ رَبُّكُمْ حَقًّا” ؟ قَالَ: فَقَالَ عُمَرُ: يَا رَسُولَ اللّهِ مَا تُكَلّمُ مِنْ أَجْسَادٍ لَا أَرْوَاحَ لَهَا؟ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: “وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِيَدِهِ مَا أَنْتُمْ بِأَسْمَعَ لِمَا أَقُولُ مِنْهُمْ

অর্থ: হে অমুকের পুত্র অমুক, হে অমুকের পুত্র অমুক! তোমরা কি এখন অনুভব করতে পারছো যে, মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুগত্য তোমাদের জন্য পরম খুশির বিষয় ছিল? নিশ্চয়ই আমাদের যিনি রব মহান পাক তিনি আমাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আমরা তো তা সত্য পেয়েছি। তোমাদের যিনি রব তিনি তোমাদেরকে যা বলেছিলেন তোমরাও তা সত্য পেয়েছ কি? বর্ণনাকারী বলেন, (একথা শুনে) হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, ‘ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি রূহবিহীন দেহকে সম্বোধন করে কি কথা বলছেন? নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, ঐ মহান যাত পাক উনার শপথ, যার কুদরতী হাত মুবারক উনার মধ্যে আমার প্রাণ মুবারক, আমি যা বলছি তা তাদের তুলনায় আপনারা অধিক শ্রবণ করছেন না। অর্থাৎ তারা ভালভাবেই শুনতে পাচ্ছে।

অতঃপর দ্বিতীয় হচ্ছে, সাধারণ মু’মিন মুসলমান। উনারা জীবিত ব্যক্তিগণের সালাম ও কথাবার্তা সবকিছুই শুনেন। তবে উনাদের পক্ষ থেকে সালামের জাওয়াব দেন বা দিয়ে থাকেন হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা। যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عن حضرت ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال ابو رزين رضى الله تعالى عنه يا رسول الله صلى الله عليه وسلم ان طريقى على االـموتى فهل من كلام اتكلم به اذا مررت عليهم قال قل السلام عليكم يا اهل القبور من الـمسلمين والـمؤمنين انتم لنا سلف ونحن لكم تبع وانا انشاء الله بكم لاحقون قال ابو رزين رضى الله تعالى عنه يا رسول الله صلى الله عليه وسلم يسمعون؟ قال يسمعون ولكن لا يستطعون ان يجيبوا قال يا ابا رزين الا ترضى ان يرد عليك بعددهم من الـملائكة.

অর্থ: হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, হযরত আবূ রযীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার যাতায়াত প্রায়ই কবরস্থানের নিকট দিয়ে হয়ে থাকে, যখন আমি কবরস্থানে যাবো তখন আমার কি বলা উচিত? নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যখন আপনি কবরস্থানে যাবেন তখন বলবেন- “হে কবরবাসী মু’মিন মুসলমান! আপনাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। আপনারা আমাদের পূর্বসূরী আর আমরা হলাম আপনাদের উত্তরসূরী বা অনুগামী। ইংশাআল্লাহ নিশ্চয়ই আমরাও আপনাদের সাথে মিলিত হবো।” হযরত আবূ রযীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! কবরবাসীগণ কি আমাদের সালাম শুনতে পান? জাওয়াবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, উনারা সালাম শুনতে পান কিন্তু উনারা জাওয়াব দিতে সক্ষম নন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবার করেন, হে আবূ রযীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আপনার সালামের জাওয়াব কবরবাসীগণ উনাদের সমসংখ্যক হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা প্রদান করলে কি আপনি খুশি নন?

তৃতীয় হচ্ছে, পীর-বুযুর্গ, আউলিয়ায়ে কিরাম। উনারা জীবিত ব্যক্তিদের সালাম ও কথাবার্তা সবকিছুই শুনেন এবং ক্ষেত্র বিশেষে সালামের জাওয়াবও দিয়ে থাকেন। অর্থাৎ হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম উনারা হচ্ছেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরিপূর্ণ ক্বায়িম-মাক্বাম। যেমন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে –

قال حضرت فضل بن عباس رضى الله تعالى عنه اذا رأيت شفتيه يتحرك فادنيت اذنى عندها. فسمعت وهو يقول اللهم اغفر لامتى فاخبرتهم بهذا

অর্থ: হযরত ফযল বিন আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন পবিত্র রওযা শরীফে তাশরীফ মুবারক নিলেন, তখন আমি শেষবারের মত পবিত্র চেহারা মুবারক যিয়ারত করত: দেখতে পেলাম যে, উনার পবিত্র ঠোট মুবারক নড়ছে, তখন আমি আমার কর্ণ পবিত্র ঠোট মুবারকের নিকটস্থ করে শুনতে পেলাম যে, তিনি ইরশাদ মুবারক করছেন, ইয়া আল্লাহ পাক! আমার উম্মতদেরকে ক্ষমা করুন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উক্ত মুবারক সুসংবাদ উপস্থিত সবাইকে শুনিয়েছি। (মীলাদে বেনযীর, পৃষ্ঠা ৫৩০)। আরো বর্ণিত হয়েছে-

ليس من عبد يصلى على الا بلغنى صوته حيث كان قلنا وبعد وفاتك قال وبعد وفاتى ان الله عزوجل حرم على الارض ان تأكل اجساد الانبياء.

অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি আমার উপর দুনিয়ার যে কোন স্থান থেকে পবিত্র দূরূদ শরীফ পাঠ করুক আমি তার দুরূদ শরীফের আওয়াজ শুনতে পাই। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা আরয করলেন আপনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পরেও কি শুনতে পাবেন? তদুত্তরে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মুবারক ইরশাদ ফরমান, হ্যাঁ পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পরও। কারণ একথা নিশ্চিত যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি যমীনের উপর হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের পবিত্র শরীর মুবারক ভক্ষণ করা হারাম করেছেন। সুবহানাল্লাহ! (জালাউল আফহাম, হুজ্জাতুল্লাহিল আলামীন)

অনুরূপভাবে আরো বর্ণিত রয়েছে-

قال حضرت ابراهيم بن شيبان رضى الله تعالى عنه حججت فجئت المدينة فتقدمت الى القبر الشريف فسلمت على رسول الله صلى الله عليه وسلم فسمعت. من داخل الحجرة يقول وعليك السلام.

অর্থ: হযরত ইবরাহীম বিন শায়বান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি পবিত্র হজ্জ শেষে পবিত্র মদীনা মুনাওয়ারায় হাজির হলাম। তারপর পবিত্র রওযা মুবারকের নিকটস্থ হয়ে সালাম শরীফ পেশ করলাম। তখন পবিত্র রওযা শরীফ উনার ভিতর থেকে “ওয়া আলাইকাস সালাম উনার ধ্বনি শ্রবণ করলাম। (আল কাউলুল বাদী’)

সুলত্বানুল আরিফীন, মুজাদ্দিদে যামান, আল্লামা হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার আল খাছাইছুল কুবরা ২য় খ-, ২৮২ পৃষ্ঠায় লিখেন-

قالت ام الـمؤمنين حضرت عائشة الصديقة عليها السلام لما مرض ابى اوصى ان يوتى به قبر النبى صلى الله عليه وسلم ويستأذن له ويقال هذا ابو بكر الصديق عليه السلام يدفن عندك يا رسول الله صلى الله عليه وسلم فان اذن لكم فادفنون وان لم يؤذن لكم فاذهبوا بى الى البقيع فاتى به الى الباب فقيل هذا ابو بكر الصديق عليه السلام قد اشتهى ان يدفن عند رسول الله صلى الله عليه وسلم وقد اوصانا فان اذن لنا دخلنا وان لم يؤذن لنا انصرفنا فنودينا ادخلوا وكرامة سمعنا كلاما ولم نر احدا.

وقال حضرت على كرمه الله وجهه عليه السلام فى رواية اخرى رأيت الباب قد فتح فسمعت قائلا يقول ادخلوا الحبيب الى حبيبه فان الحبيب الى الحبيب مشتاق.

অর্থ: উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, যখন আমার পিতা অসুস্থ হয়ে যান, তখন তিনি ওসিয়ত করলেন যে আমার বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পর আমাকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র রওযা মুবারকের নিকটে নিয়ে গিয়ে অনুমতি প্রার্থনা করতঃ একথা বলবেন যে, “ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। এই যে, হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকটে সমাধিস্থ হওয়ার ইচ্ছুক। আর তিনি আমাদেরকে অসিয়ত মুবারক করেছেন যে, যদি আপনি আমাদেরকে অনুমতি মুবারক দান করেন তবে আমরা প্রবেশ করবো। নতুবা আমরা ফিরে যাবো। এরূপ করার পর আমাদেরকে শুনানো হলো যে, আপনারা উনাকে প্রবেশ করিয়ে দিন অর্থাৎ দাফন মুবারক করুন। আমরা এ পবিত্র কালাম শরীফ শুনলাম কিন্তু কাউকে আর দেখলাম না। অন্য এক রিওয়ায়েতে হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, আমি দেখলাম দরজা মুবারক এমনিভাবেই খুলে গেছে। আর আমি একথা বলতে শুনলাম যে, বন্ধুকে বন্ধুর সঙ্গে মিলিয়ে দিন। একথা নিশ্চিত যে, বন্ধু বন্ধুর সঙ্গে মিলনের আশিক্ব হন। সুবহানাল্লাহ!

অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রওযা শরীফ উনার মধ্য থেকে মুবারক কার্যসমূহ পরিচালনা করেন এবং যিয়ারতকারীর অবস্থানুযায়ী তাদের সালামের জাওয়াব দেন, আকুতি, মিনতি, ফরিয়াদ শুনেন ও পুরণ করেন। অনুরূপভাবে হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম উনারাও উনাদের মাযার শরীফ উনার মধ্যে অবস্থান করে যিয়ারতকারীদের অবস্থাভেদে সরাসরি সালামের জাওয়াব প্রদান করেন এবং তাদের ফরিয়াদ শুনেন ও পূরণও করে থাকেন। এ সংক্রান্ত বহু বর্ণনা কিতাবে বর্ণিত হয়েছে।

যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عن حضرت أبي هريرة رضي الله عنه قال إذا مر الرجل بقبر يعرفه فسلم عليه رد عليه السلام وعرفه وإذا مر بقبر لا يعرفه فسلم عليه رد عليه السلام

অর্থ: হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, তিনি বর্ণনা করেন, যখন কোন ব্যক্তি কোন পরিচিত ব্যক্তির ক্ববরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করে এবং তাকে সালাম দেয়; তখন ক্ববরবাসী তাকে চিনেই তার সালামের জাওয়াব দেয়। আর যখন কোন ব্যক্তি কোন অপরিচিত ব্যক্তির ক্ববরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করে এবং তাকে সালাম দেয়, তখন ক্ববরবাসী তারও সালামের জাওয়াব দেয়। (শুয়াবুল ঈমান, শরহুছ ছুদূর)

উক্ত শরহুছ ছুদূর কিতাবে আরো বর্ণিত হয়েছে-

وأخرج إبن عبد البر في الإستذكار والتمهيد عن إبن عباس رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ما من أحد يمر بقبر أخيه المؤمن كان يعرفه في الدنيا فيسلم عليه إلا عرفه ورد عليه السلام صححه عبد الحق

অর্থ: আল্লামা হাফিয ইবনু আব্দিল বার উনার “আল ইছতিযকার ওয়াত তামহীদ” কিতাবে বর্ণনা করেন, হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যখন কোন ব্যক্তি তার পরিচিত মুসলমান ভাইয়ের ক্ববরের নিকট দিয়ে গমন করার সময় তাকে সালাম করে তখন ক্ববরের মৃত ব্যক্তিও তাকে চিনে সালাম দিয়ে থাকে। এ পবিত্র হাদীছ শরীফখানা হযরত শায়েখ আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিছ দেহলবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি ছহীহ বলেছেন।

কিতাবে আরো বর্ণিত আছে, একবার হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফে ক্ববরস্থানে গমন করলেন। সেখানে পৌঁছে তিনি ক্ববরবাসীগণ উনাদেরকে ডেকে বললেন, “আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ ইয়া আহলাল কুবূর” হে ক্ববরের অধিবাসীগণ! আপনাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক এবং মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত ও বরকত নাযিল হোক। আপনারা কি আপনাদের অবস্থা আমাদেরকে শোনাবেন, নাকি আমাদের অবস্থা শুনতে চান? উনার এই কথার জাওয়াবে একটি ক্ববর হতে আওয়াজ আসলো, ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। হে আমীরুল মু’মিনীন! আপনিই বলুন আমাদের বিদায়ের পর কি কি হয়েছে? তখন তিনি উনাদেরকে অনেক কথা বললেন। (মিশকাতুল আনওয়ার)

এ সম্পর্কে “তাযকিরাতুল আউলিয়া” গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে, হযরত আবুল হাসান খারকানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি, যিনি বিশেষভাবে কোন মাদ্রাসায় লেখাপড়া করেননি এবং জীবনের প্রথম দিকে ছিলেন একজন কৃষক। সারাদিন কৃষিকাজ করে রাতে ইশার নামাযান্তে সুলত্বানুল আরিফীন হযরত বায়েজীদ বোস্তামী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার মাযার শরীফে গিয়ে সারা রাত যিকির-ফিকির, ইবাদত-বন্দেগী করে বাদ ফজর ইশরাক নামায পড়ে বাড়ীতে এসে আবার কৃষিকাজ শুরু করতেন। এভাবে দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ার পর একদিন তিনি ইশরাক নামায আদায় করে মাযার শরীফের তা’যীমার্থে ও সুন্নত আদায়ের লক্ষ্যে মাযার শরীফকে সামনে রেখে পিছু হেঁটে আসতে লাগলেন। হঠাৎ এক আওয়াজ শুনে সামনে তাকাতেই দেখতে পেলেন যে, মাযার শরীফ ফাঁক হয়ে গেছে। মাযার শরীফ উনার উপরে একজন সুমহান সুপুরুষ দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি হাতের ইশারায় হযরত আবুল হাসান খারকানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনাকে কাছে ডাকলেন। হযরত আবুল হাসান খারকানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায় মাযার শরীফ উনার নিকটে উপস্থিত হলেন। তখন সেই মাযার শরীফ উনার উপরে দ-ায়মান বুযুর্গ ব্যক্তি বললেন, “হে ব্যক্তি! আপনি কে?” উত্তরে তিনি বললেন, হুযূর! আমি আবুল হাসান। তিনি আবার প্রশ্ন করলেন, “আপনি কোথায় থাকেন?” উত্তর দিলেন, আমি খারকান শহরে বসবাস করি। “এখানে কেন আসেন?” উত্তরে বললেন, এই মাযার শরীফ উনার মধ্যে যিনি শায়িত আছেন, তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার মাহবূব ওলী হযরত বায়েজীদ বোস্তামী রহমাতুল্লাহি আলাইহি। আমি উনার উসীলা দিয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে উনার মা’রিফত, মুহব্বত, নিয়ামত ও সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল করতে চাই। তিনি পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, “কতদিন যাবৎ আপনি এখানে আসছেন?” উত্তরে তিনি বললেন, “আজ চব্বিশ বছর যাবৎ আমি এখানে এসে থাকি।” তখন সেই বুযুর্গ ব্যক্তি তিনি হযরত আবুল হাসান খারকানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার পিঠের উপরে হাত মুবারক রেখে বললেন, “হে ব্যক্তি! আমিই সেই বায়েজীদ বোস্তামী রহমাতুল্লাহি আলাইহি।

আমি যেরূপ সুলত্বানুল আরিফীন। আজ আমি আপনাকেও ফায়িয-তাওয়াজ্জুহ্ দিয়ে سلطان العارفين (সুলত্বানুল আরিফীন) করে দিলাম।” সুবহানাল্লাহ!

এ প্রসঙ্গে আরো বর্ণিত রয়েছে, হযরত বাদশাহ আলমগীর রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার শাসনামলে একদা পরামর্শ সভায় উপস্থাপন করা হলো, লোকেরা হক্ব ওলীআল্লাহ উনাদের মাযার শরীফ যিয়ারত করে থাকে। তা দেখে অনেকে স্বার্থ সিদ্ধির জন্য নিজেদের সাধারণ লোকেরও মাযার তৈরি করছে। এতে প্রসিদ্ধ কিছু মাযার শরীফ ছাড়া আর বাকীগুলোর ক্ষেত্রে জানার উপায় থাকে না যে, সেগুলো কোন ওলীআল্লাহ উনাদের মাযার শরীফ, নাকি কোন সাধারণ লোকদের কবর?

যার কারণে হযরত বাদশাহ আলমগীর রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি উদ্যোগ নিলেন যে, ভারতবর্ষে যত মাযার তৈরি হয়েছে তিনি সেসব মাযার শরীফে নিজে যাবেন এবং প্রয়োজনে পর পর তিনদিন মাযার শরীফ উনার মধ্যে অবস্থানরত বুযুর্গ ব্যক্তি উনাদেরকে সালাম দিবেন। যেসব বুযুর্গ ব্যক্তি উনাদের মাযার শরীফ থেকে সালামের জাওয়াব পাবেন শুধুমাত্র সেসব মাযার শরীফ তিনি অক্ষত রাখবেন আর যেসব মাযার থেকে সালামের জাওয়াব না পাবেন, তা ধ্বংস করে ফেলবেন। যাতে মানুষ বিভ্রান্তিতে না পড়ে।

অতঃপর তিনি উনার কার্যক্রম শুরু করে দিলেন। এক পর্যায়ে আজমীর শরীফে সুলত্বানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চীশতী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার মাযার শরীফ এসে সালাম পেশ করলেন, পর পর দু’দিন সালামের কোন জাওয়াব না পেয়ে চিন্তাগ্রস্ত হলেন যে, যদি আগামীকাল জাওয়াব না পাওয়া যায় তাহলে তিনি কি করবেন? অতঃপর তৃতীয় দিন তিনি যখন সালাম পেশ করলেন, সাথে সাথে মাযার শরীফ উনার ভিতর থেকে জাওয়াব আসলো-

وعليكم السلام

সালামের জাওয়াব পাওয়ার পর হযরত আলমগীর রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বিনীতভাবে আরজ করলেন, হুযূর! বেয়াদবী মাফ করবেন, গত দু’দিন সালামের জাওয়াব না দেয়ার কি কারণ? উত্তরে হযরত সুলত্বানুল হিন্দ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে উনার আরশে আযীম উনার অধিবাসী করেছেন। সেখানে মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র দীদার মুাবরক উনার মধ্যে সর্বদা অবস্থান করি। যার কারণে মহান আল্লাহ পাক উনার অনুমতি ও নির্দেশ মুবারক ব্যতীত আমার পক্ষে কোথাও যাওয়া বা কোন কিছু করা সম্ভব হয় না। মহান আল্লাহ পাক তিনি আজ আপনার বিষয়টি বলে আমাকে পাঠালেন যে, আমি যেনো এখানে এসে সালামের জাওয়াব দিয়ে চলে যাই। সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ!                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                               অতএব, আমভাবে এ কথা বলা কখনোই শুদ্ধ নয় যে, সকল কবরবাসী উনাদের সালামের জাওয়াব হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা দেন বা দিয়ে থাকেন।

মুহম্মদ রূহুল কুদুস, বগুড়া।

ডা. মুহম্মদ আওক্বাত আলী, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।

 

সুওয়াল: মুজাদ্দিদে আ’যম সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ১০ম খলীফা এবং খলীফাতুল উমাম সাইয়্যিদুনা হযরত শাহযাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি ১১তম খলীফা এবং ‘আস সাফফাহ’ লক্বব মুবারক উনার অর্থ, ব্যাখা-বিশ্লেষণ ও মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনিই যে সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহান খলীফা ‘হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম’ এবং উনার মুবারক উছীলায় যে, অবশ্যই অবশ্যই বর্তমান যামানায় সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠিত হবে এ সম্পর্কে দলীল ভিত্তিক বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব :

(পূর্ব প্রকাশিতের পর- ২৭)

‘সাইয়্যিদুল খুলাফা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি বাংলাদেশতো অবশ্যই; এমনকি সারা পৃথিবীতে, সারা কায়িনাতে সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠা করবেনই করবেন ইনশাআল্লাহ।’ সুবহানাল্লাহ :

পঞ্চম প্রমাণ:

হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম তিনি সম্মানিত ইলম মুবারক তলব করার কারণে তিনি সম্মানিত ইলম মুবারক তো লাভ করলেনই। সাথে সাথে সারা পৃথিবীর কর্তৃত্ব মুবারকও লাভ করলেন। সুবহানাল্লাহ! সেটাই সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ الله تَعَالـى عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خُيّـِرَ حَضْرَتْ سُلَيْمَانُ عَلَيْهِ السَّلَامُ بَيْنَ الْمَالِ وَالْمُلْكِ وَالْعِلْمِ فَاخْتَارَ الْعِلْمَ فأُعْطِىَ الْمُلْكَ وَالْمَالَ لِاِخْتِيَارِهِ الْعِلْمَ.

অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম উনাকে ইখতিয়ার মুবারক দেয়া হলো, ধন-সম্পদ, সারা পৃথিবীর কর্তৃত্ব ও সম্মানিত ইলম মুবারক উনাদের মধ্য থেকে যে কোন একটি গ্রহণ করার জন্য। হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম তিনি সম্মানিত ইলম মুবারক গ্রহণ করলেন। হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম তিনি সম্মানিত ইলম মুবারক গ্রহণ করার কারণে উনাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত ইলম মুবারক হাদিয়া মুবারক করার সাথে সাথে সারা পৃথিবীর কর্তৃত্ব মুবারক এবং ধন-সম্পদ মুবারকও হাদিয়া মুবারক করলেন।” সুবহানাল্লাহ! (জামিউছ ছগীর ১/৩৯০, আল ফাতহুল কাবীর ২/৯৯, দায়লামী শরীফ ২/১৯২, জামিউল আহাদীছ ১২/৩৭২, ইবনে আসাকির ২২/২৭৪, জামউল জাওয়ামি’ ইত্যাদি)

হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম তিনি নবী। তিনি মনোনীত। তিনি সম্মানিত ইলম মুবারক তলব করেছেন। উদ্দেশ্য ছিলো যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার রেযামন্দি-সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল করা। সুবহানাল্লাহ! তিনি সম্মানিত ইলম মুবারক তলব করলেন। এর বদৌলতে কী হলো? তিনি সম্মানিত ইলম মুবারক তো লাভ করলেনই। সাথে সাথে তিনি সারা পৃথিবীর কর্তৃত্ব মুবারকও লাভ করলেন। সুবহানাল্লাহ!

যদি বিষয়টা এ রকম হয়। তাহলে যিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ফযীলতের বিষয়টা কিরূপ হবে? সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই বলেছেন। যেটা সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,

عَنْ حَضْرَتْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ الله تَعَالى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أُعْطِيْتُ جَوَامِعُ الْعِلْمِ.

অর্থ: “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমাকে সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত প্রকার সম্মানিত ইলম মুবারক হাদিয়া করা হয়েছে।” সুবহানাল্লাহ! (সুনানে দারাকুত্বনী ৫/২৫৪, দায়লামী শরীফ ১/৪০০)

অন্য হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এসেছে-

أُعْطِيْتُ جَوَامِعُ الْكَلِمِ

অর্থ: “সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত সম্মানিত ইলম-কালাম মুবারক আমাকে হাদিয়া মুবারক করা হয়েছে।” সুবহানাল্লাহ!   (মুসলিম শরীফ, তিরমিযী শরীফ, মুসনাদে আহমদ ২/৪১১, মুসনাদে আবী ইয়া’লা ১১/৩৭৭, দালাইলুন নুবুওওয়াহ লিল বাইহাক্বী ৫/৪৭২, সুনানে দারু কুত্বনী ১০/১০০, মিশকাত শরীফ ৫১২ ইত্যাদি)

আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ الله تَعَالى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بُعِثْتُ بِجَوَامِعِ الْكَلِمِ

অর্থ: “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমি সমস্ত সম্মানিত ইলম মুবারকসহ প্রেরিত হয়েছি।” সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, নাসায়ী শরীফ, মুসনাদে আহমদ ২/২৬৪, মুসনাদে বাযযার ১৪/২১৪, দালাইলুন নুবুওওয়াহ ৫/৪৭১, মিশকাত শরীফ ৫১২ ইত্যাদি)

আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ أَبِىْ مُوسٰى رَضِىَ الله تَعَالٰى عَنْهُ  قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أُوتِيْتُ جَوَامِعَ الْكَلِمِ وَفَوَاتِحَه وَخَوَاتِمَه.

অর্থ: “হযরত আবূ মূসা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমাকে শুরু-শেষ সমস্ত প্রকার সম্মানিত ইলম মুবারক হাদিয়া করা হয়েছে।” সুবহানাল্লাহ! (মুছন্নাফে আবী শায়বাহ ১১/৪৮০, মাজমাউয যাওযায়িদ ১/২২৩, ফাতওয়ায়ে হাদীছিয়্যাহ ১/১৬৬, জামিউল আহাদীছ ১২/২৭, মাত্বালিবুল আলিয়াহ ১৫/৬৩৪ ইত্যাদি)

 

মুহম্মদ হুসাইন রুকনুদ্দীন

শান্তিবাগ, ঢাকা

 

সুওয়াল: পবিত্র তারাবীহ নামাযে দু’ রাকায়াত ও চার রাকায়াতের পর কি দুয়া পড়তে হয়? এবং কত রাকায়াত পর পর মুনাযাত করার নিয়ম?

জাওয়াব: পবিত্র তারাবীহ্ উনার নামাযে দু’রাকায়াতের পর নিম্নোক্ত দুয়া পড়তে হয়-

هذا من فضل ربى يا كريم الـمعروف يا قديم الاحسان احسن الينا باحسانك القديم ثبت قلوبنا على دينك برحمتك يا ارحم الرحمين.

উচ্চারণ: হাযা মিন ফাদ্ব্লি রব্বী, ইয়া কারীমাল মা’রূফ, ইয়া ক্বদীমাল ইহসান, আহ্সিন ইলাইনা বিইহ্সানিকাল ক্বদীম, ছাব্বিত কুলূবানা আলা দ্বীনিকা বিরহ্মাতিকা ইয়া র্আহামার রাহিমীন।

অর্থ: ‘ইহা (পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার পবিত্র রোযা ও তারাবীহ নামায) আমার মহান রব তায়ালা উনার অনুগ্রহ। হে মহানতম মাশহুর অনুগ্রহকারী। হে চির ইহসানকারী। আপনার চিরন্তন ইহসানের দ্বারা আমাদের প্রতি ইহসান করুন এবং আপনার সদয় অনুগ্রহের দ্বারা আমাদের দিল-মনকে আপনার দ্বীনের উপর কায়িম রাখুন হে শ্রেষ্ঠতম অনুগ্রহকারী।

আর চার রাকায়াতের পর নিম্নোক্ত দুয়া পড়তে হয়-

سبحان ذى الـملك والـملكوت سبحان ذى العزة والعظمة والـهيبت والقدرة والكبرياء والجبروت. سبحن الـملك الحى الذى لا ينام ولا يموت ابدا ابدا سبوح قدوس ربنا ورب الـملئكة والروح.

অর্থ: ‘আমি ঐ মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি যিনি সমস্ত কর্তৃত্ব ও সমস্ত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের মালিক। আমি উনারই পবিত্রতা ঘোষণা করছি যিনি সমস্ত ইজ্জত, আযমত বা মহত্ব, হাইবত (প্রভাব), কুদরত, বড়ত্ব ও শক্তিমত্তার অধিকারী। আমি সেই চিরজীবি মালিক উনারই পবিত্রতা ঘোষণা করছি যিনি নিদ্রা যান না অর্থাৎ সদা জাগ্রত, যিনি কখনো বিছাল শরীফ লাভ করবেন না অর্থাৎ চির অমর, যিনি মহামহিম, পুতঃপবিত্র, তিনিই আমাদের রব এবং হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের ও রূহসমূহ উনাদের রব।’

উল্লেখ্য, যদি কারো উপরোক্ত দুয়া জানা না থাকে তবে সে দুরূদ শরীফ পাঠ করবে। পবিত্র তারাবীহ উনার নামাযে চার রাকায়াত পর পর মুনাজাত করার নিয়ম। মুনাজাতটি নিম্নরূপ-

اللهم صل على سيدنا نبينا حبيبنا شفيعنا مولانا وسيلتى اليك واله وسلم.

رب ارحم هما كما ربيانى صغيرا. ربنا افرغ علينا صبرا وتوفنا مسلمين. ربنا اتنا فى الدنيا حسنة وفى الاخرة حسنة وقنا عذاب النار.

اللهم صل على سيدنا نبينا حبيبنا شفيعنا مولانا معدن الجود والكرم واله وسلم.

اللهم انا نسئلك الجنة ونعوذبك من النار يا خالق الجنة والنار برحمتك يا عزيز يا غفار يا كريم يا ستار يا رحيم يا جبار يا خالق يا بار. اللهم اجرنا من النار يا مجير يا مجير يا مجير برحمتك يا ارحم الرحمين.

اللهم صل على سيدنا نبينا حبيبنا شفيعنا مولانا النبى الامى واله وسلم.

سبحن ربك رب العزة عما يصفون وسلم على الـمرسلين والحمد لله رب العالـمين.

উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ছল্লি আলা সাইয়্যিদিনা ওয়া নাবিইয়িনা, ওয়া হাবীবিনা ওয়া শাফীয়িনা ওয়া মাওলানা ওয়াসীলাতী ইলাইকা ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লিম। রর্ব্বিহাম হুমা কামা রব্বাইয়ানী ছগীরা। রব্বানা আফ্রিগ আলাইনা ছবরাঁও ওয়া তাওয়াফ্ফানা মুসলিমীন। রব্বানা আতিনা ফিদ্ দুন্ইয়া হাসানাহ, ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাহ, ওয়া ক্বিনা আযাবান্ নার।

আল্লাহুম্মা ইন্না নাস্আলুকাল জান্নাতি ওয়া নাউযুবিকা মিনান নার, ইয়া খালিক্বাল জান্নাতি ওয়ান্ নার, বিরহ্মাতিকা ইয়া আযীযু, ইয়া গফ্ফারু, ইয়া কারীমু, ইয়া সাত্তারু, ইয়া রহীমু, ইয়া জাব্বারু, ইয়া খালিকু, ইয়া র্বারু, আল্লাহুম্মা আর্জিনা মিনান নার, ইয়া মুজীরু, ইয়া মুজীরু, ইয়া মুজীরু বিরহ্মাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমীন।

সুবহানা রব্বিকা রব্বিল ইয্যাতি আম্মা ইয়াছিফূন ওয়া সালামুন আলাল মুরসালীন ওয়াল হামদু লিল্লাহি রব্বিল আলামীন।’

অর্থ: “আয় খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক! আপনার ছলাত (খাছ রহমত মুবারক) ও সালাম (খাছ শান্তি মুবারক) আমাদের সাইয়্যিদ, আমাদের নবী, আমাদের হাবীব, আমাদের শাফায়াতকারী, আমাদের অভিভাবক নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর যিনি আপনার প্রতি আমার ওসীলা এবং উনার আযওয়াজ, আহলে বাইত ও আছহাবগণ উনাদের উপরও।

আয় মহান আল্লাহ পাক! আপনি আমাদের পিতা-মাতা উনাদের প্রতি দয়া-ইহসান করুন। যেরূপ উনারা আমাদেরকে ছোট বেলায় দয়া-ইহসানের সাথে লালন-পালন করেছেন। আয় মহান আল্লাহ পাক! আপনি আমাদেরকে ধৈর্য্যরে উপর ইস্তিক্বামত করে দিন এবং আমাদেরকে মুসলমান হিসেবে ইন্তিকাল দান করুন। আয় আমাদের মহান রব তায়ালা! আমাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে ভালাই দান করুন এবং জাহান্নামের শাস্তি থেকে পরিত্রাণ দিন।

অর্থ: “আয় খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক! আপনার ছলাত (খাছ রহমত মুবারক) ও সালাম (খাছ শান্তি মুবারক) আমাদের সাইয়্যিদ, আমাদের নবী, আমাদের হাবীব, আমাদের শাফায়াতকারী, আমাদের অভিভাবক নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর যিনি দান ও বখশীশের খনি এবং উনার আযওয়াজ, আহলে বাইত ও আছহাবগণ উনাদের উপরও।

আয় মহান আল্লাহ পাক! নিশ্চয়ই আমরা আপনারই নিকট জান্নাতের আরজু করছি এবং আপনারই নিকট জাহান্নাম থেকে পানাহ তলব করছি। আপনার সদয় অনুগ্রহে আমাদেরকে জান্নাত দান করুন এবং জাহান্নাম হতে পানাহ দান করুন হে জান্নাত-জাহান্নাম সৃষ্টিকারী, হে ক্ষমতাশীল, হে অতিশয় ক্ষমাকারী, হে পরম অনুগ্রহকারী, হে অপরাধ গোপনকারী, হে পরম অনুগ্রহপরায়ন, হে পরাক্রমশালী, হে সৃজনকারী, হে পরম অনুগ্রহকারী। আয় মহান আল্লাহ পাক! আপনার সদয় অনুগ্রহে আমাদেরকে জাহান্নামের আগুন হতে মুক্তিদান করুন, হে মুক্তিদানকারী, হে মুক্তিদানকারী, হে মুক্তিদানকারী হে শ্রেষ্ঠতম দয়ালু মহান আল্লাহ পাক।

অর্থ: “আয় খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক! আপনার ছলাত (খাছ রহমত মুবারক) ও সালাম (খাছ শান্তি মুবারক) আমাদের সাইয়্যিদ, আমাদের নবী, আমাদের হাবীব, আমাদের শাফায়াতকারী, আমাদের অভিভাবক যিনি মহান আল্লাহ পাক উনার লক্ষস্থল নবী নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর এবং উনার আযওয়াজ, আহলে বাইত ও আছহাবগণ উনাদের উপরও।

সমস্ত ইজ্জত-সম্মানের মালিক আপনার মহান রব তায়ালা উনার জন্যেই। যিনি পবিত্রতম তারা যা বর্ণনা করে থাকে তা থেকে। সালাম বা খাছ শান্তি বর্ষিত হোক রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের উপর। আর তামাম আলমের রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্যেই সমস্ত প্রশংসা।’ (দলীল: সমূহ হাদীছ শরীফ, তাফসীর ও ফিক্বাহর কিতাব)

মুসাম্মত সালমা খাতুন

কাপাসিয়া, গাজীপুর

 

সুওয়াল: মহিলাদের জন্য পবিত্র তারাবীহ নামায জামায়াতে পড়ার হুকুম কি?

জাওয়াব: সম্মানিত আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের ফতওয়া হলো মহিলাদের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত, পবিত্র জুমুয়া, পবিত্র তারাবীহ ও পবিত্র ঈদের নামাযসহ সকল নামাযের জামায়াতের জন্য মসজিদ, ঈদগাহ অর্থাৎ যে কোন স্থানে যাওয়া নাজায়িয, হারাম ও  কাট্টা কুফরী।

(এ সম্পর্কে বিস্তারিত ফতওয়া জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ১১, ১৪, ১৯, ২২, ২৯, ৩৭, ৪৪, ৪৭, ৪৮, ৫৫, ৬৫, ৭১, ৮২, ১০১ ও ১০২তম সংখ্যাগুলো পড়–ন যাতে বিশ্বখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহ হতে প্রায় ১০০টি দলীল-আদিল্লাহ পেশ করা হয়েছে।

 

মুহম্মদ শামীম হুসাইন

কালিয়াকৈর, গাজীপুর

সুওয়াল: পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস আসলেই কেউ কেউ পেপার-পত্রিকায় ও প্রচার মাধ্যমে প্রচার করে থাকে যে, “পবিত্র রোযা অবস্থায় ইনজেকশন এমনকি স্যালাইন ইনজেকশন নিলেও পবিত্র রোযা ভঙ্গ হয়না।” তাদের উক্ত বক্তব্যের স্বপক্ষে নির্ভরযোগ্য কোন দলীল আছে কি?

জাওয়াব: যারা বলে থাকে যে, “পবিত্র রোযা অবস্থায় ইনজেকশন বা স্যালাইন ইনজেকশন নিলেও পবিত্র রোযা ভঙ্গ হয়না” তাদের এ বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল, জিহালতপূর্ণ এবং কুফরীর অন্তরভুক্ত। কেননা, তারা তাদের উক্ত বক্তব্যের স্বপক্ষে নির্ভরযোগ্য একটি দলীলও পেশ করতে পারবেনা। পক্ষান্তরে পবিত্র রোযা অবস্থায় যে কোন ইনজেকশন নিলে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে এ ফতওয়াটিই ছহীহ ও গ্রহণযোগ্য। কারণ এর স্বপক্ষে ফিক্বাহ ও ফতওয়ার নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহের অসংখ্য দলীল বিদ্যমান রয়েছে।

যেমন, “হিদায়া মা’য়াদ দিরায়া” কিতাবের ১ম খণ্ডের ২২০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

ومن احتقن … افطر لقوله صلى الله عليه وسلم الفطر مما دخل

অর্থ: “এবং যদি কোন ব্যক্তি ইনজেকশন নেয় … তাহলে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে। কারণ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “কিছু ভিতরে প্রবেশ করলে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে।”

“বাহরুর রায়িক” কিতাবের ২য় খণ্ডের ২৭৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

واذا احتقن … افطر لقوله عليه السلام الفطر مما دخل وليس مما خرج

অর্থ: “যদি কোন ব্যক্তি ইনজেকশন নেয় … তাহলে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে। কারণ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, কিছু ভিতরে প্রবেশ করলে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে এবং বের হলে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবেনা।”

“ফতওয়ায়ে আলমগীরী” কিতাবের ১ম খণ্ডের ২০৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

ومن احتقن .. افطر

অর্থ: “এবং যদি কোন ব্যক্তি ইনজেকশন নেয় … তাহলে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে।” অনুরূপ “ফতওয়ায়ে শামীতে”ও উল্লেখ আছে।”

অতএব, উপরোক্ত দলীলভিত্তিক বর্ণনা থেকে প্রমাণিত হলো যে, ইনজেকশন নিলে অবশ্যই পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে। {দলীলসমূহঃ (১) বুখারী শরীফ, (২) মুসলিম শরীফ, (৩) মিশকাত শরীফ, (৪) ফতহুল বারী শরীফ, (৫) উমদাতুল ক্বারী শরীফ, (৬) ইরশাদুছ্ সারী শরীফ, (৭) শরহে নববী শরীফ, (৮) ফতহুল মুলহিম, (৯) মুফহিম, (১০) মিরকাত শরীফ, (১১) আশয়াতুল লুময়াত, (১২) লুময়াত, (১৩) শরহুত্ ত্বীবী, (১৪) তালিক্বুছ্ ছবীহ্, (১৫) মুযাহিরে হক্ব, (১৬) মাবছুত, (১৭) মাবছুত্ লি সারাখসী, (১৮) ফতহুল ক্বাদীর, (১৯) আলমগীরী, (২০) বাহরুর রায়িক্ব, (২১) ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া, (২২) হিদায়া মায়াদ দিরায়া, (২৩) শামী, (২৪) বাদায়িউছ্ ছানায়ে, (২৫) খুলাছুতল ফতওয়া ইত্যাদি।

{বিশেষ দ্রষ্টব্য: এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ ২১, ২২, ৪৬ ও ৪৭তম সংখ্যা পাঠ করুন।}

 

মুহম্মদ মিনহাজুদ্দীন

হবিগঞ্জ

 

সুওয়াল:  আমরা উলামায়ে দেওবন্দের অনেক কিতাবেই দেখতে পাই যে, তারা ফতওয়া দিয়েছে- “পবিত্র তারাবীহ উনার নামায বা অন্যান্য সময়ে পবিত্র কুরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা হারাম।”

উপরোক্ত ফতওয়া কতটুকু গ্রহণযোগ্য, দয়া করে জানাবেন।

জাওয়াব: পবিত্র কুরআন শরীফ খতম বা তিলাওয়াত করে উজরত গ্রহণ করা সম্পর্কিত উলামায়ে দেওবন্দের উক্ত ফতওয়া অসম্পূর্ণ ও অশুদ্ধ। কারণ উজরত গ্রহণ করা শর্ত সাপেক্ষে জায়িয, আবার শর্ত সাপেক্ষে নাজায়িয। অর্থাৎ সময় অথবা স্থান নির্ধারণ করে দেয়া হলে ইমামতী, শিক্ষকতা, পবিত্র হজ্জ উনার মাসয়ালা-মাসায়িল ও পবিত্র কুরআন শরীফ শিক্ষা দিয়ে খতম বা তিলাওয়াত করে উজরত গ্রহণ করা জায়িয। আর সময় অথবা স্থান নির্ধারণ করা না হলে উজরত গ্রহণ করা জায়িয নেই। এর উপরই উলামায়ে মুতাআখ্খিরীনগণের ফতওয়া এবং এটাই গ্রহণযোগ্য ও ফতওয়াগ্রাহ্য মত।

যেমন, ফিক্বাহ উনার বিখ্যাত কিতাব “বাহরুর রায়িকে” উল্লেখ আছে-

ان الـمفتى به جواز الاخذ على القرائة.

অর্থ: “নিশ্চয়ই পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করে উজরত গ্রহণ করা জায়িয হওয়া ফতওয়াগ্রাহ্য মত।”

{দলীলসমূহঃ-  (১) বাহরুর রায়িক, (২) আলমগীরী, (৩) তাতারখানিয়া, (৪) ফতওয়ায়ে আযীযী, (৫) দুররুল মুখতার, (৬) আশবাহু ওয়ান্ নাজায়ির, (৭) ফতওয়ায়ে আলী আফেন্দী, (৮) জাওহারাতুন নাইয়্যারাহ, (৯) কাশফুল গুম্মাহ, (১০) ফতওয়ায়ে ফয়জী, (১১) তাফসীরে আযীযী, (১২) তাফসীরে ইক্লীল ইত্যাদি।}

বিশেষ দ্রষ্টব্য: এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ উনার ২৩ ও ২৪তম সংখ্যা পাঠ করুন। সেখানে ৫১টি নির্ভরযোগ্য কিতাবের দলীল পেশ করা হয়েছে।

মুহম্মদ বাহাউদ্দীন

খাগড়াছড়ি

 

সুওয়াল:  আমরা জানি যে, পবিত্র তারাবীহ উনার নামায ২০ রাকায়াত এবং  তা আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। অথচ কেউ কেউ বলে, ৮ রাকায়াত পড়াই সুন্নত। আবার কেউ কেউ বলে, ১২ রাকায়াত পড়াই সুন্নত।

কোন মতটি ছহীহ? তা জানতে ইচ্ছুক।

জাওয়াব: সম্মানিত আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনার ফতওয়া মুতাবিক পবিত্র তারাবীহ উনার নামায ২০ রাকায়াত পড়াই সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। অতএব, কেউ যদি ২০ রাকায়াত থেকে এক রাকায়াতও কম পড়ে, তবে তার সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ তরক করার গুণাহ হবে। অর্থাৎ পবিত্র তারাবীহ উনার নামায ২০ রাকায়াতই পড়তে হবে এবং এর উপরই ইজমা হয়েছে।

যারা পবিত্র তারাবীহ উনার নামায ৮ রাকায়াত বলে থাকে, তারা বুখারী শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত একখানা পবিত্র হাদীছ শরীফ দলীলস্বরূপ পেশ করে থাকে। যাতে বর্ণিত আছে যে, “মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসে এবং পবিত্র রমাদ্বান শরীফ ব্যতীত অন্যান্য মাসে (বিতরসহ) ১১ রাকায়াত নামায আদায় করতেন।”

মূলতঃ এটি হচ্ছে পবিত্র তাহাজ্জুদ নামায উনার বর্ণনা, পবিত্র তারাবীহ নামায উনার বর্ণনা নয়। কারণ পবিত্র তারাবীহ উনার নামায শুধু পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসের জন্যই নির্দিষ্ট। পবিত্র রমাদ্বান শরীফ ব্যতীত অন্যান্য মাসে পবিত্র তারাবীহ উনার নামায নেই। আর পবিত্র তাহাজ্জুদ নামায সারা বৎসরই পড়তে হয়।

{দলীলসমূহঃ  (১) আবু দাউদ শরীফ, মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বা শরীফ, (২) সুনানুল কুবরা লিল বাইহাক্বী শরীফ, (৩) আল কবীর লিত্ তিবরানী শরীফ, (৪) আল জাওহারুন্নাকী শরীফ, (৫) নাইনুল আওতার, (৬) ইরশাদুস্ সারী, (৭) মিরকাত শরীফ, আওজাজুল মাসালিক, (৮) মা’আরিফে মাদানীয়া, (৯) ফতহুল বারী, (১০) উমদাতুল ক্বারী, (১১) বজলুল মাযহুদ, (১২) ফিক্হুস্ সুনান ওয়াল আছার, (১৩) নছবুর রাইয়াহ, (১৪) আইনী শরহে বুখারী, (১৫) আত্ তা’লীকুল হাছানাহ, (১৬) মুজাহিরে হক্ব, (১৭) আশয়াতুল লুময়াত, (১৮) ইলাউস্ সুনান, (১৯) ফতওয়ায়ে আলমগীরী, (২০) খুলাসাতুল ফতওয়া, (২১) মজমুয়াতুল ফতওয়া, (২২) বাহ্রুর রায়িক, (২৩) মারাকিউল ফালাহ্, (২৪) ইহ্ইয়াউ উলূমিদ্দীন, (২৫) গুন্ইয়াতুত্ ত্বালেবীন ইত্যাদি}

এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ পত্রিকার ২৫, ২৬, ২৭, ২৮, ২৯ ও ৩০তম সংখ্যা পাঠ করুন। সেখানে ৩০৪ খানা অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য দলীলের ভিত্তিতে ছাবিত করা হয়েছে যে, পবিত্র তারাবীহ উনার নামায ২০ রাকায়াত পড়াই সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ এবং এটাই গ্রহণযোগ্য ও ছহীহ মত।

মুহম্মদ মিছবাহুদ্দীন

বান্দরবান

 

সুওয়াল:  অনেকে বলে থাকে ‘খত্মে তারাবীহ পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ’ তাদের এ বক্তব্য কতটুকু সঠিক?

জাওয়াব: ‘যারা বলে, ‘খত্মে তারাবীহ পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ’ তাদের সে বক্তব্য মোটেও শুদ্ধ নয়। কারণ, খত্মে তারাবীহ সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ হলে প্রত্যেক পুরুষ ও মহিলাকে তা পড়তে হবে। অন্যথায় পবিত্র সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ তরকের গুনাহে গুনাহ্গার হবে।

আর খত্মে তারাবীহ পড়তে হলে প্রত্যেককে হাফিযে কুরআন হতে হবে। চাই জামায়াতে পড়ুক অথবা একা পড়ুক। অথচ সম্মানিত শরীয়ত উনার মধ্যে হাফিয হওয়া ফরযে কিফায়া।

আর পবিত্র তারাবীহ নামায জামায়াত এ পড়া যেহেতু সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ কিফায়া সেহেতু কিছু লোক একাও তারাবীহ পড়তে পারে। এছাড়া অসুস্থ ব্যক্তির জন্য একা পড়ার হুকুমই রয়েছে।

আর মহিলাদের জন্য তো পবিত্র তারাবীহ্সহ সকল প্রকার নামাযের জামায়াতে যাওয়া আম ফতওয়া মতে মাকরূহ তাহ্রীমী আর খাছ ফতওয়া মতে কুফরী।

কাজেই, যারা একা নামায পড়বে, তারা যদি হাফিযে কুরআন না হয়, তবে তারা খত্মে তারাবীহ কি করে পড়বে?

যে ব্যক্তি হাফিয নয় সে খত্মে তারাবীহ নামায জামায়াতে পড়া শুরু করলো হঠাৎ কোন কারণবশতঃ সে ২ বা ৪ রাকায়াত বা তার চেয়ে কম-বেশী রাকায়াত পড়তে পারলোনা। এখন সে যে কয় রাকায়াত পড়তে পারলোনা তা কিভাবে পড়বে?

খত্মে তারাবীহ যদি সুন্নতে মুয়াক্কাদা হয়, তাহলে পৃথিবীর প্রতিটি মসজিদে তারাবীহ্ নামাযে অবশ্যই পবিত্র কুরআন শরীফ খতম করতে হবে। অথচ পৃথিবীতে এমন অনেক স্থান, গ্রাম-গঞ্জ রয়েছে, যেখানে খতমে তারাবীহ পড়ানোর মতো পবিত্র কুরআন শরীফ উনার হাফিয পাওয়া অসম্ভব, সেখানে কি করে পবিত্র কুরআন শরীফ খতম করা হবে?

সঙ্গতকারণে বিশ্বখ্যাত ফতওয়ার কিতাবসমূহে ফতওয়া দেয়া হয়েছে যে, খত্মে তারাবীহ ও সূরা তারাবীহ কোনটিই সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ নয়। বরং উভয়টিই সুন্নতে মুয়াক্কাদা কিফায়া।

অএতব, কেউ ইচ্ছা করলে খতম তারাবীহ পড়তে পারে। আবার কেউ ইচ্ছা করলে সূরা তারাবীহ পড়তে পারে। {দলীলসমূহ ঃ  (১) বাহরুর রায়িক, (২) হিদায়া, (৩) আলমগীরী, (৪) ফতহুল ক্বাদীর, (৫) ইনায়া  ইত্যাদি।}

(এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ ১০০তম সংখ্যা পাঠ করুন।)

 

মুহম্মদ আব্দুল হান্নান

নরসিংদী

 

সুওয়াল:  পবিত্র রোযা রাখা অবস্থায় বমি করলে পবিত্র রোযার কোন ক্ষতি হবে কি?

জাওয়াব: পবিত্র রোযা রাখা অবস্থায় বমি করার ব্যাপারে কয়েকটি সূরত কিতাবে বর্ণিত হয়েছে। বমি করাটা সাধারণতঃ দু’প্রকারের হয়ে থাকে- (১) ইচ্ছাকৃত, (২) অনিচ্ছাকৃত।

কেউ যদি ইচ্ছাকৃত মুখ ভরে বমি করে, তাহলে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে। আর ইচ্ছাকৃত অল্প বমি করলে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবেনা। অনিচ্ছাকৃতভাবে মুখ ভরে বমি হোক অথবা অল্প বমি হোক, তাতে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবেনা। কেউ যদি ইচ্ছাকৃত মুখ ভরে অথবা অল্প বমি গিলে ফেলে, তাতে তার পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে। আর যদি অনিচ্ছাকৃতভাবে অল্প বমি ভিতরে চলে চায়, তাতে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবেনা। কিন্তু মুখ ভরা বমি অনিচ্ছাকৃতভাবেও ভিতরে চলে গেলে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে।

উপরোল্লিখিত কোন কারণে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হলে সেটার কাযা আদায় করতে হবে কিন্তু কাফাফারা আদায় করতে হবেনা।  (আলমগীরী)

মুহম্মদ আনিছুর রহমান

চাঁদপুর

সুওয়াল: পবিত্র রোযা রেখে টুথপেষ্ট, দাঁতের মাজন, কয়লা বা ছাই ইত্যাদি দ্বারা দাঁত মাজলে পবিত্র রোযার কোন ক্ষতি হবে কি?

জাওয়াব:  উপরে উল্লিখিত মাজনের দ্বারা দাঁত মাজলে পবিত্র রোযা মাকরূহ হবে। তবে যদি মাজনের সামান্য পরিমাণ ভিতরে চলে যায়, তাহলে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে এবং ক্বাযা করা ওয়াজিব হবে, কাফ্ফারা আদায় করতে হবে না। (ফতওয়ায়ে আলমগীরী)

মুহম্মদ হানীফুর রহমান

চট্টগ্রাম

 

সুওয়াল:  পবিত্র রোযা রেখে নাকে পানি দেয়া ও গড়গড়া করা যাবে কিনা?

জাওয়াব:  পবিত্র রোযা অবস্থায় নাকে পানি দিয়ে উপরের দিকে টান দেয়া ও কুলি করার সময় গড়গড়া করার হুকুম নেই। বরং নিষেধ রয়েছে। (সমূহ ফিক্বহ্রে কিতাব)

 

মুসাম্মত মনোয়ারা বেগম

সদর, চাঁদপুর

 

সুওয়াল: পবিত্র রোযা অবস্থায় তরকারী পাক করার সময় লবন হয়েছে কিনা, তা দেখার জন্য জিহ¡ার অগ্রভাগ দিয়ে স্বাদ পরীক্ষা করা জায়িয আছে কিনা?

জাওয়াব:  সাধারণভাবে এরূপ করা জায়িয নেই। হ্যাঁ, যদি কেউ সতর্কতার সাথে এরূপ করে, তবে তা মাকরূহের সহিত জায়িয রয়েছে, না করাই উচিৎ। তবে কারো স্বামী যদি এমন জালিম হয় যে, তরকারীতে লবন কম বা বেশি হলে মারধর, জুলুম ইত্যাদি করে, তাহলে জালিমের জুলুম হতে বাঁচার জন্য জিহ্বার অগ্রভাগ দিয়ে তরকারীর স্বাদ পরীক্ষা করা জায়েয রয়েছে। এক্ষেত্রে মাকরূহ্ হবেনা।

লক্ষ্যণীয় যে, তরকারীযুক্ত থুথু কোন ক্রমেই যেন ভিতরে প্রবেশ না করতে পারে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। (সমূহ ফিক্বাহ্র কিতাব)

 

আবূ আহমদ মাহজূবা

নূরপুর (লক্ষ্মীপুর)

 

সুওয়াল:  অনেকে দেখা যায়, পবিত্র রোযা রেখে বার বার থুথু ফেলে থাকে। এই থুথু না ফেলে গিলে ফেললে পবিত্র রোযার কোন ক্ষতি হবে কি?

জাওয়াব:  পবিত্র রোযা রেখে মুখের থুথু বার বার না ফেলে গিলে ফেললে পবিত্র রোযার কোন ক্ষতি হবে না। (আলমগীরী)

 

মুসাম্মত শিউলী আক্তার

বরগুনা

 

সুওয়াল:  পবিত্র রোযা অবস্থায় সন্তানকে দুধ পান করালে মায়ের পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে কি?

জাওয়াব: না, পবিত্র রোযা অবস্থায় সন্তানকে দুধ খাওয়ালে মায়ের পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে না, এমন কি ওযুও ভঙ্গ হবে না। (আলমগীরী)

মুহম্মদ তরীকুল ইসলাম

কুমিল্লা

সুওয়াল:  পবিত্র রোযা রাখা অবস্থায় চোখে ওষুধ বা সুরমা দিলে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে কি?

জাওয়াব: না, পবিত্র রোযা রাখা অবস্থায় চোখে ওষুধ বা সুরমা দিলে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে না। এমনকি যদি ওষূধের স্বাদ গলায় অনুভব হয় বা সুরমার রং যদি থুথুর সাথে দেখা দেয়, তাতেও পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবেনা। (আলমগীরী, মাবছূত, আইনুল হেদায়া)

 

মুহম্মদ শহীদুর রহমান

মুন্সীগঞ্জ

সুওয়াল: কেউ যদি পবিত্র রোযা অবস্থায় দিনে ঘুমায় এবং ঘুমের মধ্যে গোসল ফরয হয়, তাতে পবিত্র রোযার কি কোন ক্ষতি হবে?

জাওয়াব: পবিত্র রোযা রেখে দিনে ঘুমালে এবং ঘুমের মধ্যে গোসল ফরয হলে, পবিত্র রোযার কোন ক্ষতি হবেনা। (আলমগীরী)

 

মুহম্মদ আনোয়ারুল ইসলাম

আমানবাড়িয়া

 

সুওয়াল: কোন ব্যক্তি যদি পবিত্র রোযা রেখে স্বপ্নে অথবা জাগ্রত অবস্থায় ভুলে কিছু পান করে অথবা খেয়ে ফেলে, তবে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে কি?

জাওয়াব: না, পবিত্র রোযা রাখা অবস্থায় স্বপ্নে কিছু পান করলে বা খেলে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে না। আর জাগ্রত অবস্থায় ভুলে পেট ভরে পানাহার করলেও পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবেনা। তবে অবশ্যই পবিত্র রোযা উনার কথা স্মরণ হওয়ার সাথে সাথেই পানাহার থেকে বিরত থাকতে হবে। পবিত্র রোযা উনার কথা স্মরণ হওয়ার পরও যদি সামান্য খাদ্য বা পানীয় গিলে ফেলে, তবে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে। এতে শুধু উক্ত পবিত্র রোযা উনার কাযা আদায় করতে হবে, কাফফারা দিতে হবেনা। (দুররুল মুখতার, শামী)

 

মুহম্মদ মাহদিউল ইসলাম

মানিকগঞ্জ

সুওয়াল:  পবিত্র ই’তিকাফ  করার ফযীলত কতটুকু?

জাওয়াব:  পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে, যে ব্যক্তি পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার শেষ দশ দিন (সুন্নতে মুয়াক্কাদায়ে ক্বিফায়া) পবিত্র ই’তিকাফ করবে, মহান আল্লাহ পাক তাকে দু’টি পবিত্র হজ্জ ও দু’টি পবিত্র ওমরাহ করার সমতুল্য ছওয়াব দান করবেন।

আরো উল্লেখ করা হয়েছে যে, মহান আল্লাহ পাক তার পিছনের গুণাহখতা ক্ষমা করে দিবেন।

আরো বর্ণিত রয়েছে, যে ব্যক্তি একদিন পবিত্র ই’তিকাফ করবে, মহান আল্লাহ পাক তাকে জাহান্নাম থেকে তিন খন্দক দূরে রাখবেন। প্রতি খন্দকের দূরত্ব পাঁচশত বছরের রাস্তা। (দলীল: মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ, মুযাহিরে হক্ব, দুররুল মুখতার,  শামী, আলমগীরী ইত্যাদি)

মুহম্মদ বেলায়েত হুসাইন দিনাজপুর

সুওয়াল:  অনেকে বলে থাকে, পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার শেষে তিনদিন বা একদিন পবিত্র ই’তিকাফ করলেই পত্রি সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ কিফায়া ই’তিকাফ হয়ে যায়, এটা কতটুকু সত্য?

জাওয়াব: পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস উনার শেষ দশদিন অর্থাৎ ২০ তারিখ বাদ আছর ও ২১ তারিখ মাগরিবের পূর্ব হতে ঈদের বা শাওওয়াল মাসের চাঁদ দেখা পর্যন্ত পবিত্র ই’তিকাফ করলে সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ কিফায়া ই’তিকাফ আদায় হবে। অন্যথায় একদিন, তিনদিন, পাঁচদিন এবং সাতদিন পবিত্র ই’তিকাফ করলে পবিত্র সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ কিফায়া ই’তিকাফ আদায় হবেনা। অর্থাৎ ৩০শে রমাদ্বান শরীফ দশদিন কিংবা ২৯শে রমাদ্বান শরীফ উনার নয়দিনের এক মিনিট কম হলেও সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ কিফায়া ই’তিকাফ আদায় হবেনা। (দলীল: মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ, আলমগীরী, ক্বাযীখান, শামী ইত্যাদি)

মুহম্মদ আব্দুল ক্বাদির ভোলাহাট

সুওয়াল: পবিত্র ই’তিকাফ উনার আহকাম সম্বন্ধে জানালে কৃতজ্ঞ হবো?

জাওয়াব: পবিত্র ই’তিকাফ উনার আভিধানিক অর্থ হলো গুণাহ হতে বেঁচে থাকা, অবস্থান করা, নিজেকে কোন স্থানে আবদ্ধ রাখা, কোণায় অবস্থান করা।

আর সম্মানিত শরীয়ত উনার পরিভাষায় রমাদ্বান শরীফ মাস উনার শেষ দশ দিন দুনিয়াবী যাবতীয় কার্যকলাপ ও পরিবার-পরিজন হতে ভিন্ন হয়ে, আলাদাভাবে পুরুষের জন্য জামে মসজিদে ও মহিলাদের জন্য ঘরে ইবাদত কার্যে মশগুল থাকাকে পবিত্র ই’তিকাফ বলে।

পবিত্র ই’তিকাফ তিন প্রকার- (১) ওয়াজিব, (২) সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ, (৩) নফল। যিনি পবিত্র ই’তিকাফ করেন, তাকে বলে মু’তাকিফ। পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস উনার শেষ দশ দিন পবিত্র ই’তিকাফ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ কিফায়া। প্রতি মসজিদে এলাকার তরফ হতে কমপক্ষে একজন মু’তাকিফ হলেই সকলের পক্ষ হতে আদায় হয়ে যাবে, আর যদি কেউই পবিত্র ই’তিকাফ না করে, তাহলে সকলেরই পবিত্র সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ তরক করার গুণাহ হবে।

পবিত্র ই’তিকাফ উনার শর্ত তিনটি- (১) পুরুষের জন্য মসজিদে, মহিলাদের জন্য ঘরের মধ্যে। (২) ই’তিকাফের জন্য নিয়ত করা, হদছে আকবর হতে পাক হওয়া। (৩) পবিত্র রোযা রাখা। তবে সাধারণভাবে পবিত্র ই’তিকাফ উনার জন্য বালিগ হওয়া শর্ত নয়। ই’তিকাফ অবস্থায় জাগতিক ফায়দাদায়ক কাজ করা অবস্থাভেদে হারাম ও মাকরূহ্ তাহরীমী। মু’তাকিফ ব্যক্তি মসজিদে এসে কোন বেহুদা কথা বা কাজ করবে না বা চুপ করে বসে থাকবে না। বরং ঘুম ব্যতীত বাকি সময় ইবাদত কার্যে মশগুল থাকতে হবে। যেমন- নফল নামায, পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত, পবিত্র যিকির, সম্মানিত ইলম অর্জন ইত্যাদি। পবিত্র ই’তিকাফকারী বাইরে বের হওয়ার দু’টি জরুরত হতে পারে- (১) শরয়ী, (২) তবয়ী।

শরয়ী জরুরত হলো- যে মসজিদে পবিত্র ই’তিকাফ করছে, সেখানে পবিত্র জুমুয়া হয় না, অন্য কোন মসজিদে যেখানে পবিত্র জুমুয়া হয়, সেখানে  পবিত্র জুমুয়ার নামায পড়তে যাওয়া এবং পবিত্র নামায পড়ে চলে আসা। মু’তাকিফ যদি অহেতুক এক সেকেন্ডের জন্য মসজিদের বাইরে অবস্থান করে, তাহলে পবিত্র ই’তিকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে।

তবয়ী জরুরত হলো- পায়খানা-প্রস্রাব ইত্যাদির জন্য বের হওয়া এবং কাজ সেরে চলে আসা। দলীল: ফতওয়ায়ে আলমগীরী, আইনুল হিদায়া, শামী ইত্যাদি সমূহ ফিক্বাহের কিতাব)

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ