সুদী ব্যবস্থার কুফলে দেশের দরিদ্র জনসাধারণ জর্জরিত। পাশাপাশি বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা সুদী প্রথার কারণে নাগরিক ও অর্থনৈতিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সরকারের উচিত- দেশকে সুদের করাল থাবা থেকে মুক্ত করে ইসলামী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা

সংখ্যা: ২৬০তম সংখ্যা | বিভাগ:

গত ৮ ফেব্রুয়ারি-২০১৭ পত্রিকায় হেডিং হয়েছে- ‘৫০ হাজার টাকার সুদ ৪ লাখ টাকা’। যশোর সদরের নরেন্দ্রপুর পূর্বপাড়া গ্রামের জাহিদুল ইসলামের স্ত্রী ইব্রাহিম নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে সুদে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলো। আর সেই ব্যক্তি তার কাছ থেকে সুদসহ ৪ লাখ টাকা ফেরত চাচ্ছে। নানাভাবে তাকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে এরকম সুদী ব্যবসা তথা কারবার বহু আগ থেকে পরিচালিত হয়ে আসছে। লুটেরা ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলে ব্রিটিশদের জন্য সুদ লুটপাটের একটি বড় হাতিয়ার ছিলো। এখন ঔপনিবেশিক শাসন নেই, হিন্দু মারাঠা বর্গী নেই; কিন্তু দেশের আনাচে কানাচে সুদখোর এবং সুদ প্রথাটি রয়ে গেছে। শুধু সুদের ব্যবসাই নয়; এখন রাষ্ট্র তথা দেশের অর্থনীতির মধ্যে সুদ ওৎপ্রোতভাবে ঘনিষ্ঠ হয়ে গেছে। বিশেষ করে গ্রামীণ ব্যাংক, ব্র্যাক ইত্যাদি কুখ্যাত সুদী প্রতিষ্ঠানসহ এনজিওগুলো বর্তমানে গরিবের রক্ত শোষণ করে যাচ্ছে।

এমনকি যে কৃষক প্রতি বছর খাদ্য উৎপাদন করে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা অটুট রাখছে, সেই কৃষক সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে মহাজন নামধারী শোষকদের কাছ থেকে সুদভিত্তিক ঋণ নিয়ে পড়ছে বিপাকে। সেইসাথে কৃষি ব্যাংক থেকেও তারা ঋণ গ্রহণ করছে সুদ সমেত।  কোনো কারণে ফসলের ফলন কম হলে এবং ফসলের ন্যয্যমূল্য নিশ্চিত না হলে জমিজমা বিক্রি করে নিঃস্বতা গ্রহণ করে মহাজনের এবং ব্যাংকের চড়া সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে। জেলেদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি না হওয়ার কারণে জেলেরা তাদের জীবিকা নির্বাহ করার উপকরণ তথা মাছ ধরার নৌকা, জাল এবং ট্রলার কেনার জন্য সুদখোর দাদন ব্যবসায়ী ও রক্তচোষা এনজিওদের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিচ্ছে। কিন্তু ঋণ নেয়ার পরও তাদেও অবস্থার কোনো উন্নতি হচ্ছে না। কারণ সেসব দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তারা যে ঋণ নিয়েছে, তার ১৫ শতাংশ সুদ তাদেরকে প্রতিদিন আদায় করতে হচ্ছে। ফলে দেখা যাচ্ছে, প্রত্যহ তারা যে উপার্জন করছে তার অর্ধেক অংশই চলে যাচ্ছে সুদ পরিশোধে। সারাবছর তাদের জীবনব্যবস্থায় লেগে থাকছে অভাব-অনটন।

প্রসঙ্গত, নিম্ন আয়ের পেশাজীবী ছাড়াও দেশের অতিদরিদ্র মানুষেরা সুদের বেড়াজালে ভয়াবহ আক্রান্ত। শিল্প প্রতিষ্ঠান ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না থাকায় দরিদ্রতার সুযোগে সহজ-সরল নিরীহ মানুষদেরকে বড় বড় বুলি আওড়িয়ে সুযোগটুকু কাজে লাগিয়ে এনজিও’র মালিকরা চড়া সুদের শর্তে ফুলে ফেপে উঠেছে। নানা লোভনীয় অফারে চড়া সুদে দরিদ্র মানুষদের ঋণ দিয়ে এরপর তারা পরিশোধ করতে না পারলে তাদের বাড়িঘর উচ্ছেদসহ সর্বস্বান্ত করে ছাড়ছে। উদাহরণস্বরূপ এনজিওগুলো প্রথম ১২.৫০% সুদে ৪ হাজার টাকা ঋণ দেয়। পরের বৎসর মোটা অংকের ঋণ দেয়া হবে বলে আশস্ত করে দ্বিতীয়বার ঋণের সময় ২ হাজার টাকা বাড়িয়ে ৬ হাজার টাকার ঋণ দেয়। কিন্তু প্রত্যেকবার ঋণ বাড়ার সাথে সাথে সাপ্তাহিক কিস্তিতে ঋণের ১৫ শতাংশ তাদের পরিশোধ করতে হয়।

এছাড়া বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থায়ও সুদের হার অত্যধিক পরিমাণে বিরাজমান। বিশেষজ্ঞ এবং জনগণের দীর্ঘদিনের দাবি সত্ত্বেও নানা বহুবিধ কারণে উঠছে না দেশের ব্যাংকখাতের সুদের কারবার।

বলতে হয়, বর্তমান সরকার দেশ থেকে দরিদ্রতা দূর করার মিশনে নেমেছে বলে প্রচার করছে। কিন্তু যতদিন দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সুদভিত্তিক হবে ততদিন দেশের মানুষ দরিদ্রতা থেকে রক্ষা পাবে না। সুদের কারণেই সমাজে দরিদ্র শ্রেণী আরও দরিদ্র এবং ধনী শ্রেণী আরো ধনী হয়। পরিণামে সামাজিক শ্রেণী বৈষম্য বেড়েই চলে। দরিদ্র এবং ধনী শ্রেণী আরো ধনী হয়। পরিণামে সামাজিক শ্রেণী বৈষম্য চলে। দরিদ্র অভাবগ্রস্ত মানুষ প্রয়োজনের সময়ে সাহায্যের কোনো দরজা খোলা না পেয়ে, উপায়ন্তর না দেখে ঋণ নিতে বাধ্য হয়। সেই ঋণ উৎপাদনশীল ও অনুৎপাদনশীল উভয় প্রকার কাজেই ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বিশেষ করে অনুৎপাদনশীল কাজে ঋণের অর্থ ব্যবহারের ফলে তার ঋণ পরিশোধের ক্ষমতাই লোপ পায়। এর ফলে সে তার শেষ সম্বল যা থাকে তাই বিক্রি করে ঋণ শুধরে থাকে। এই বাড়তি অর্থ পেয়ে ধনী আরো ধনী হয়। বৃদ্ধি পেতে থাকে সামাজিক শ্রেণীবৈষম্য।

অপরদিকে বিত্তশালী ব্যবসায়ীরা সহজেই ঋণ পায়। ব্যাংক হাজার হাজার লোকের নিকট থেকে আমানত সংগ্রহ করে থাকে, কিন্তু ঐ অর্থ ঋণ আকারে পায় মুষ্টিমেয় বিত্তশালীরাই। এ থেকে উপার্জিত বিপুল মুনাফা তাদের হাতেই রয়ে যায়। ফলে সঞ্চয়কারী হাজার হাজার লোক তাদের অর্থের প্রাপ্য তা জনগণের কাছ থেকে দ্রব্যমূল্যের সাথেই তুলে নেয়। ফলে তাদের গায়ে আঁচড় লাগে না, কিন্তু অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হয় সাধারণ জনগণের।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. ইউনূসকে ‘সুদখোর’ আখ্যায়িত করে বলেছিলেন- ‘সুদখোর রক্তচোষারা কোনো সময় দেশপ্রেমিক হতে পারে না। বঙ্গবন্ধুর ৯১তম জন্মবার্ষিকীতে বলেছিলেন- ‘সুদখোর-ঘুষখোর দিয়ে দেশের কোনো উন্নতি হবে না’। ‘সুদখোর’ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য সংবিধান বিরোধী তথা রাষ্ট্রীয় অর্থনীতি বিরোধী হলেও সমাজ বিরোধী নয়। দেশ-জনতা বিরোধী নয়। বরং তা ৯৮ ভাগ মুসলমান অধিবাসীরই প্রাণের দ্বীন ‘ইসলাম’সম্মত এবং ইসলাম উনার আলোকে গভীর প্রশংসিত।

মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা আল বাক্বারাহ শরীফ উনার ১৭৫নং পবিত্র আয়াত শরীফে ইরশাদ মুবারক করেছেন- ‘মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যবসাকে হালাল এবং সুদকে হারাম করেছেন’। আর দেশের বৃহৎ ইসলামী জনগোষ্ঠী এই সুদকে অন্তর থেকে ঘৃণা এবং বর্জন করে থাকে। সেই হিসেবে সরকারের উচিত ছিলো- সুদভিত্তিক অর্থনীতির বিপরীতে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার আলোকে ইসলামী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা। বাংলাদেশে তথাকথিত যেসব ইসলামী নামধারী ব্যাংকিং ব্যবস্থা রয়েছে, সেগুলোও উপরে উপরে সুদমুক্ত বললেও তারা ঘুরিয়ে সুদ খাচ্ছে। সুদকে তারা মুনাফা নাম ধারণ করিয়ে বৈধ করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। ইসলামী ব্যাংক সাধারণ মুসলামানদের দ্বীনী অনুভূতিকে পুজিঁ করে ব্যবসার নামে মিথ্যাচার আর জালিয়াতি করে গড়ে তুলেছে এক বিশাল অর্থের উৎস। নাউযুবিল্লাহ!

সঙ্গতকারণেই আমরা বলতে চাই, সাম্প্রতিক বছরগুলোকে এই সুদী ব্যবস্থার কারণেই সুদের প্রবক্তা মার্কিনীদের অর্থনীতিতে ব্যাপক ধস নেমেছে। লাখ লাখ আমেরিকানকে ঋণের জালে আবদ্ধ হয়ে ঘরবাড়ি হারাতে হয়েছে। আজ ইউরোপীয় ও আমেরিকান সরকারগুলো আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি ঋণগ্রস্ত। এ ঋণগ্রস্ততার মূল্যও দিতে হবে সেই দেশের জনগণকেই। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন সরকারের যে প্রধানমন্ত্রী সুদকে ঘৃণা করে সেই সরকারের উচিত আমেরিকার মতো পরিণতি বরণ করার আগেই দেশকে রক্তচোষা সুদভিত্তিক অর্থনীতি থেকে সরিয়ে হাক্বীকী ইসলামী শরীয়াহভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা।

-আল্লামা মুহম্মদ আরিফুল্লাহ, ঢাকা

বাতিল ফিরক্বা ওহাবীদের অখ্যাত মুখপত্র আল কাওসারের মিথ্যাচারিতার জবাব-২২ হাদীছ জালিয়াতী, ইবারত কারচুপি ও কিতাব নকল করা ওহাবীদেরই জন্মগত বদ অভ্যাস

‘উলামা আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত’ সম্পর্কিত ‘দৈনিক যুগান্তর’ পত্রিকার মন্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিস্ময় প্রকাশ গোয়েন্দা শীর্ষ কর্মকর্তারাও অবহিত নয় খোদ যুগান্তর সম্পাদকের দুঃখ প্রকাশ

‘উলামা আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত’কে নিয়ে – মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নামে দৈনিক জনকণ্ঠের মিথ্যাচার ‘উলামা আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত’ নিষিদ্ধ হচ্ছে- এ কথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শুধু অস্বীকারই করলেন না, বললেন: ‘সম্পূর্ণ বাজে কথা।’ প্রসঙ্গতঃ সোহেল তাজ বিবৃত কালো তালিকা অসম্পূর্ণ ও আংশিক ভুল। এর সংশোধন আশু দরকার

মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সমীপে- সোহেল তাজ বিবৃত ১২টি জঙ্গি সংগঠন তালিকা যথার্থ নয় এর মধ্যে যেমন অনেক জঙ্গি সংগঠনের নাম আসেনি তেমনি জঙ্গিবাদ বিরোধী সংগঠনের (উলামা আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত) নামও জামাত-জোট ভূতের কারণে এসেছে। সঙ্গতঃ কারণেই বে-হেড সোহেল তাজের বেফাঁস মন্তব্য থেকে বেরিয়ে এসে বর্তমানের যোগ্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে প্রকৃত জঙ্গি সংখ্যা যেমন নির্ধারণ করতে হবে, প্রকৃত জঙ্গিদের যেমন চিহ্নিত করতে হবে পাশাপাশি জঙ্গিবাদী, মৌলবাদী ও ধর্মব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে একান্ত নিবেদিত ‘আল বাইয়্যিনাত’কে মূল্যায়ন করতে হবে।