স্বয়ং যিনি খ্বাালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই আকরামুল আউওয়ালীন ওয়াল আখিরীন, হামিলু লিওয়ায়িল হাম্দ, যিক্রুল্লাহ, ক্বায়িদুল মুরসালীন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত যিকির মুবারক, সম্মানিত আলোচনা মুবারক, সম্মানিত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক বুলন্দ থেকে বুলন্দতর করেছেন

সংখ্যা: ২৬৫তম সংখ্যা | বিভাগ:

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَرَفَعْنَا لَكَ ذِكْرَكَ.

অর্থ: “আর (হে আমার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আমি আপনার সম্মানিত যিকির মুবারক, সম্মানিত আলোচনা মুবারক, শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক বুলন্দ থেকে বুলন্দতর করেছি।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা আলাম নাশ্রহ্ শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ: ৪)

মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত যিকির মুবারক, সম্মানিত আলোচনা মুবারক, শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক কতটুকু বুলন্দ করেছেন, এটা তিনিই সবচেয়ে ভালো জানেন। সুবহানাল্লাহ! নিম্নে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত বুলন্দী শান মুবারক সম্পর্কে যৎসামান্য আলোচনা করা হলো-

স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই উনার সম্মানিত যিকির মুবারক, সম্মানিত আলোচনা মুবারক উনার সাথে উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত যিকির মুবারক, সম্মানিত আলোচনা মুবারক করা সমস্ত সৃষ্টি জগতের উপর ফরয করে দিয়েছেন:

‘সম্মানিত ও পবিত্র সূরা আলাম নাশ্রহ্ শরীফ উনার ৪নং সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ’ উনার ব্যাখ্যায় বিভিন্ন সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার কিতাব মুবারক, সম্মানিত তাফসীরগ্রন্থ, সম্মানিত সীরাতগ্রন্থ ও অন্যান্য কিতাবে ছহীহ সনদে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَبِـىْ سَعِيْدِ ۣ الْـخُدْرِىِّ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اَتَانِـىْ حَضْرَتْ جِبْرِيْلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ فَقَالَ اِنَّ رَبِّـىْ وَرَبَّكَ يَقُوْلُ لَكَ كَيْفَ رَفَعْتُ ذِكْرَكَ قَالَ اللهُ اَعْلَمُ قَالَ اِذَا ذُكِرْتُ ذُكِرْتَ مَعِىْ.

অর্থ: “হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন। নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি আমার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ এসে  বলেন, নিশ্চয়ই আমার রব তায়ালা এবং আপনার রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাকে উদ্দেশ্য করে ইরশাদ মুবারক করেছেন যে, আমি কিভাবে আপনার সম্মানিত যিকির মুবারক, সম্মানিত আলোচনা মুবারক, শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক বুলন্দ থেকে বুলন্দতর করেছি? তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি অধিক ভালো জানেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

اِذَا ذُكِرْتُ ذُكِرْتَ مَعِىْ

যখন আমার সম্মানিত যিকির মুবারক, সম্মানিত আলোচনা মুবারক, করা হয়, তখন আমার সাথে আপনারও সম্মানিত যিকির মুবারক, সম্মানিত আলোচনা মুবারক, করা হয়।” সুবহানাল্লাহ! (ছহীহ ইবনে হিব্বান, মুসনাদে আবী ইয়া’লা, ত্ববারনী, ইবনে আবী হাতিম, ত্ববারী, ইবনে মারদাওয়াইহ, আবূ না‘ঈম, আব্দুর রাজ্জাক্ব, সাঈদ ইবনে মানছূর, খছায়িছুল কুবরা, দুররে মানছূর, শিফা’ শরীফ, মাওয়াহিবুল লাদুননিয়্যাহ, ইবনে কাছীর, বাগবী,  ফাতহুল কা¡দীর, তাফসীরে মাওয়ারদী, তাফসীরে মাযহারী,লাওয়ামি‘উল আনওয়ার, রূহুল মা‘য়ানীসহ আরো বহু কিতাব। সুবহানাল্লাহ!)

এই সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফখানা বিভিন্ন কিতাবে বিভিন্ন সনদে বর্ণিত রয়েছে।‘ছহীহ ইবনে হিব্বান শরীফ’-এ যেই সনদে বর্ণিত রয়েছে সেই সনদের সমস্ত রাবীগণ ছিক্বাহ। যদিও একজন রাবী হযরত র্দারাজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ব্যাপারে কাট্টা ওহাবী গোমরাহ গ-মূর্খ আলবানী ও তার অনুসারীরা যঈফ বলেছে। তবে সর্বজনমান্য ও নির্ভরযোগ্য হযরত ইমাম মুজতাহিদ রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনারা উনাকে ছিক্বাহ বলেছেন। এ সম্পর্কে হযরত ইমাম ইবনে মুলক্বিন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-

وَثَّقَه يَحْيـَى بْنُ مُعِيْنُ وَابْنُ حِبَّانُ وَحَسَّنَ لَهُ التِّرْمِذِىُّ وَصَحَّحَ اَيْضًا وَّادَّعَى الْـحَاكِمُ فِـىْ مُسْتَدْرَكِهِ الْاِتِّفَاقُ عَلـٰى صِدْقِه.

অর্থ: “হযরত র্দারাজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে হাকিমে হাদীছ হযরত ইয়াহইয়া ইবনে মু‘ঈন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এবং হযরত ইমাম ইবনে হিব্বান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি অর্থাৎ উনারা ‘ছিক্বাহ’ বলেছেন। হযরত ইমাম তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বর্ণিত সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদেরকে ‘হাসান’ বলেছেন, আবার ছহীহও বলেছেন। হযরত ইমাম আবূ আব্দুল্লাহ হাকিম নীশাপূরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ‘মুস্তাদরকে হাকিম শরীফ’ উনার মধ্যে উল্লেখ করেছেন যে, হযরত র্দারাজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ছিদক্ব তথা বিশ্বস্ততার ব্যাপারে ইজমা’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।” সুবহানাল্লাহ! (তুহ্ফাতুল মুহ্তাজ ইলা আদিল্লাতিল মিনহাজ ১/৩০৬-৩০৭)

হযরত ইবনে হাজার আসক্বালানী শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-

وَهٰذَا اَخْرَجَهُ الشَّافِعِـىُّ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ

অর্থ: “এই সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফখানা হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও বর্ণনা করেছেন।” সুবহানাল্লাহ! (ফাতহুল বারী ৮/৭১২)

আল্লামা কুস্ত্বলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-

وَصَحَّحَهُ ابْنُ حِبَّانَ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ.

অর্থ: “হযরত ইমাম ইবনে হিব্বান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এই সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফখানা উনাকে ছহীহ বলেছেন।” সুবহানাল্লাহ! (মাওয়াহিবুল লাদুননিয়্যাহ শরীফ)

‘লাওয়ামি‘উল আনওয়ার শরীফ’ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে-

اَخْرَجَ الطَّبَرَانِـىُّ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ وَصَحَّحَه

অর্থ: “ইমাম ত্ববারনী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এই সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফখানা বর্ণনা করেছেন এবং ছহীহ বলেছেন।” সুবহানাল্লাহ! (লাওয়ামি‘উল আনওয়ার  ২/২৯৬)

মূল কথা হলো, এ সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফখানা ছহীহ হওয়ার ব্যাপারে উম্মতের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!

হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি বলেন-

لَا يُذْكَرُ اللهُ اِلَّا ذُكِرَ مَعَه.

অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত যিকির (আলোচনা) মুবারক করা হয় না, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত যিকির (আলোচনা) মুবারক করা ব্যতীত।” সুবহানাল্লাহ! (ফাতহুল ক্বাদীর ৫/৫৬৫)

সে জন্যই সম্মানিত ও পবিত্র কালিমা শরীফসহ আযান-ইক্বামাত, নামায, মুনাজাত, খুতবা, রোযা, হজ্জ, যাকাত এক কথায় সমস্ত ইবাদত-বন্দিগীতে আবশ্যিকভাবে মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত যিকির মুবারক উনার সাথে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত যিকির মুবারক করতে হয়। সুবহানাল্লাহ! উনার যিকির মুবারক ব্যাতীত কোন ইবাদত-বন্দেগীই মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত দরবার শরীফ-এ ক্ববূল হয় না। সুবহানাল্লাহ! এটা স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীর উপর ফরয করে দিয়েছেন। যা সম্মানিত ও পবিত্র ছহীহ হাদীছ শরীফ উনাদের দ্বারাই প্রমাণিত। সুবহানাল্লাহ!

স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই আশিক হয়ে উনার সম্মানিত ও পবিত্র ইসম বা নাম মুবারক উনার সাথে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত ও পবিত্র ইসম বা নাম মুবারক সংযুক্ত করে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!:

এ সম্পর্কে হযরত হাস্সান বিন ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি বলেন-

وَضَمَّ الْاِلٰهُ اسْمَ النَّبِـىِّ صلى الله عليه وسلم مَعَ اسْمِه

 اِذَا قَالَ فِـى الْـخَمْسِ الْمُؤَذِّنُ اَشْهَدُ

وَشَقَّ لَه مِنَ اسْـمِه لِيُجِلَّه …

 فَذُو الْعَرْشِ مَـحْمُوْدٌ وَّهٰذَا مُـحَمَّدُ صلى الله عليه وسلم

অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই উনার সম্মানিত ও পবিত্র ইসম বানাম মুবারক উনার সাথে উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত ও পবিত্র ইসম বা নাম মুবারক সংযুক্ত করে দিয়েছেন, যখন মুয়াযযিন পাঁচ ওয়াক্ত নামায উনার আযানে ‘আশহাদু’ বলে। সুবহানাল্লাহ!

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত মর্যাদা মুবারক উনার বহিঃপ্রকাশ মুবারক ঘটানোর জন্য মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই উনার নিজের সম্মানিত ও পবিত্র ইসম বা নাম মুবারক থেকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত ও পবিত্র ইসম বা নাম মুবারক বের করে এনেছেন। তাই সম্মানিত আরশ মুবারক উনার মালিক হলেন ‘মাহ্মূদ’ আর তিনি হলেন ‘মুহম্মদ’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।” সুবহানাল্লাহ! (দীওয়ানু হাসসান রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু ৪৭ পৃ., তাফসীরে বাগভী শরীফ ৮/৪৬৩, লাওয়ামি‘উল আনওয়ার ২/২৯৬)

‘শিফা’ শরীফ’ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে-

اِذَا ذُكِرْتُ ذُكِرْتَ مَعِـىْ فِـىْ قَوْلِ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

অর্থ: “যখন আমার সম্মানিত যিকির মুবারক, সম্মানিত আলোচনা মুবারক, করা হয়, তখন আমার সাথে আপনারও সম্মানিত যিকির মুবারক, সম্মানিত আলোচনা মুবারক, করা হয়। এই সম্মানিত বাক্য মুবারক দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছেন ‘সম্মানিত ও পবিত্র কালিমা শরীফ-

لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহম্মদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।” সুবহানাল্লাহ! (শিফা শরীফ ১/৬২)

হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত সম্মানিত ও পবিত্র বিশুদ্ধ হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَمِنَ الثَّالِثِ نُوْرَ اُنْسِهِمْ وَهُوَ التَّوْحِيْدُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

অর্থ: “সম্মানিত ৩য় অংশ নূর মুবারক থেকে মু’মিন উনাদের উন্ছের নূর মুবারক সৃষ্টি মুবারক করেন। আর তা হচ্ছেন সম্মানিত তাওহীদ মুবারক-

لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

(এই সম্মানিত ও পবিত্র কালিমা শরীফ) উনার সম্মানিত নূর মুবারক।” সুবহানাল্লাহ! (মাওয়াহিবুল লাদুননিয়্যাহ, আল বারাহীনুল ক্বিত্বইয়্যাহ, মাদারিজুন নুবুওওয়াত, ফতওয়ায়ে হাদীছিয়্যাহ)

আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত উনার সমস্ত ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা এই সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফখানা উনাকে ছহীহ বলেছেন। সুবহানাল্লাহ!

একমাত্র যিনি খ্বাালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত সমস্ত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারাসহ তামাম কায়িনাতবাসীর

কালিমা শরীফ :

عَنْ حَضْرَتْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ نَقْشُ خَاتَـمِ سُلَيْمَانَ بْنِ دَاودَ عَلَيْهِمَا السَّلَامُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.

অর্থ: “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হযরত সুলাইমান ইবনে দাঊদ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত আংটি মুবারক-এ নকশা করে লিখা ছিলেন-

لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহম্মদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।” সুবহানাল্লাহ! (ফাওয়াইদ, আস সীরাতুল হালাবিয়্যাহ শরীফ ১/৩২০, তাফসীরে কুরতুবী শরীফ ১৫/২০০, খছায়িছুল কুবরা ১/১২, ‘উয়ূনুল আছার ১/৯৫)

হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূত্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে এই সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফখানা ছহীহ। কেননা তিনি এই সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা দলীল পেশ করেছেন। তিনি বলেন-

قُلْتُ وَيَدُلُّ لِكَوْنِه مُرْسَلًا اِلَـى الْاَنْۢبِيَاءِ مَا وَرَدَ مِنْ حَدِيْثِ حَضْرَتْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ وَحَضْرَتْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ مَرْفُوْعًا كَانَ نَقْشُ خَاتَـمِ حَضْرَتْ سُلَيْمَانَ بْنِ دَاودَ عَلَيْهِمَا السَّلَامُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.

 অর্থ: “আমি বলি, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাাতামুন নাবিইয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম তিনি সমস্ত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরও নবী ও রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিসেবে প্রেরিত হয়েছেন, এর দলীল হচ্ছেন হযরত ‘উবাদাহ ইবনে ছামিত রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার এবং হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার অর্থাৎ উনাদের উভয়ের থেকে বর্ণিত সম্মানিত ও পবিত্র মারফূ’ হাদীছ শরীফ- ‘হযরত সুলাইমান ইবনে দাঊদ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত আংটি মুবারক-এ নকশা করে লিখা ছিলেন-

لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহম্মদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’।” সুবহানাল্লাহ! (হাওই শরীফ ২/১৩৮, ফতওয়ায়ে রমলী ৬/১৪৬)

আর উছূল হচ্ছে মুজতাহিদ যদি কোন হাদীছ শরীফ দ্বারা দলীল পেশ করেন, তখন তা উনার নিকট ছহীহ হাদীছ শরীফ হিসেবে গণ্য। যেমন, এ সম্পর্কে আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ আমীমুল ইহ্সান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-

فَاِذَا اسْتَدَلَّ الْـمُجْتَهِدُ بِـحَدِيْثٍ كَانَ تَصْحِيْحًا لَّه وَكَذَا الْـحَدِيْثُ  الْـمُتَلَقّٰى بِالْـقَبُوْلِ مَحْكُوْمٌ بِالصِّحَّةِ وَاِنْ لَّـمْ يَكُنْ لَّه اِسْنَادٌ صَحِيْحٌ

অর্থ: “যখন কোন মুজতাহিদ কোন হাদীছ শরীফ দ্বারা দলীল পেশ করেন, তখন তা উনার নিকট ছহীহ হাদীছ শরীফ হিসেবে গণ্য। অনুরূপভাবে মুজতাহিদগণ উনাদের বিশেষভাবে গৃহিত হাদীছ শরীফও ছহীহ হাদীছ শরীফ হিসেবে ধর্তব্য হবে, যদিও উক্ত হাদীছ শরীফ উনার ছহীহ সনদ পাওয়া না যায়।” (মীযানুল আখবার)

হাকিমুল হাদীছ, ইমামুল মুহাদ্দিছীন মিনাল আউওয়ালীন ইলাল আখিরীন, মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আইম্মায়ে ত্বরীক্বত এবং অনুসরণীয় ইমাম, মুজতাহিদ ও আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের গৃহিত সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফসমূহ ছহীহ হিসেবে গণ্য, যদিও উক্ত সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের সনদ পাওয়া না যায়।” সুবহানাল্লাহ!

বিভিন্ন কিতাবে বর্ণিত রয়েছে-

وَوُجِدَ عَلـٰى حَجَرٍ بِالْـخَطِّ الْعِبْرَانِـىِّ بِاسْـمِكَ اللّٰهُمَّ جَاءَ الْـحَقُّ مِنْ رَّبِّكَ بِلِسَانٍ عَرَبِـىٍّ مُّبِيْنٍ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَتَبَه حَضْرَتْ مُوْسَى بْنُ عِمْرَانَ عَلَيْهِ السَّلَامُ.

অর্থ: “একটি পাথরের উপর ইবরানী ভাষায় হস্তাক্ষরে এরূপ লেখা পাওয়া গেছে- আয় মহান আল্লাহ পাক! আপনার সম্মানিত ও পবিত্র ইসম বা নাম মুবারক-এ শুরু করছি। সত্য এসেছেন আপনার রব মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট আরবী ভাষাসহ

لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহম্মদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।’ সুবহানাল্লাহ! (তারপর হস্তাক্ষরে আরো লিখা রয়েছে,) এটা লিখেছেন হযরত মূসা ইবনে ইমরান আলাইহিস সালাম তিনি।” সুবহানাল্লাহ! (শরহুল বুখারী শরীফ ২/১১৮, আত তারীখুল কাবীর লিলবুখারী ১/৪৪৫, দালাইলুন নুবুওওয়াহ ২/৬২, খছায়িছুল কুবরা ১/৬২-৬৩, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ১/১০৩, ফাইদুল ক্বদীর শরহুল জামিয়িছ ছগীর ১/২৩১, আস সীরাতুল হালাবিয়্যাহ শরীফ ১/৩২০, আল মাওয়াহিবুল লাদুননিয়্যাহ ১/৪৫৩ ইত্যাদী )

কাজেই একমাত্র মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত সমস্ত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারাসহ সমস্ত কায়িনাতবাসীর কালিমা শরীফ হচ্ছেন

لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

 এ বিষয়ে সমস্ত উম্মতের ইজমা’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, ক্বিয়ামত পর্যন্ত কেউ কস্মিনকালেও শুধু

لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ

বললে ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত

مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ না বলবে। সুবহানাল্লাহ! যেমন, কিতাবে বর্ণিত রয়েছে-

كَلِمَةُ الْاِيْـمَانِ وَهِـىَ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِلْاِجْمَاعِ عَلـٰى اَنَّه لَا يَعْتَدُّ فِـى الْاِسْلَامِ بِتِلْكَ وَحْدِهَا

অর্থ: “কালিমাতুল ঈমান বা সম্মানিত ঈমান মুবারক উনার কালিমা হচ্ছেন

لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

(লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহম্মদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। এই বিষয়ে সমস্ত উম্মতের ইজমা’ হয়েছে যে, কেউ যদি শুধু

لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ

বলে, তাহলে সে কস্মিনকালেও ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত

مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ না বলবে।”

সুবহানাল্লাহ! (মির‘আতুল মাফাতীহ ৬/৫৮)

হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি বলেন,

وَلَوْ اَنَّ عَبْدًا عَبَدَ اللهَ وَصَدَّقَه فِـىْ كُلِّ شَىْءٍ وَّلَـمْ يَشْهَدْ اَنَّ مُـحَمَّدًا رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَـمْ يَنْتَفِعْ بِشَىْءٍ وَّكَانَ كَافِرًا.

অর্থ: “যদি কোনো ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদত-বন্দেগী করে এবং উনার যাবতীয় বিষয় বিশ্বাস করে, তারপরেও সে এক যাররা পরিমাণ ফায়দা লাভ করতে পারবে না এবং নিঃসন্দেহে সে কাফির;  যদি সে সাক্ষ্য না দেয়,

اَنَّ مُحَمَّدًا رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।” সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে বাগভী শরীফ ৮/৪৬৩)

স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই আশিক্ব হয়ে উনার সম্মানিত ও পবিত্র ইসম বা নাম মুবারক উনার সাথে উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত ও পবিত্র ইসম বা নাম মুবারক সম্মানিত জান্নাত মুবারক, সম্মানিত আরশ মুবারক এবং সাত আসমানের সমস্ত জায়গায় লিপিবদ্ধ করে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!

এই বিষয়ে অনেক সম্মানিত ও পবিত্র ছহীহ হাদীছ শরীফ রয়েছে। নিম্নে কতিপয় সম্মানিত ও পবিত্র ছহীহ হাদীছ শরীফ উল্লেখ করা হলো-

১নং সম্মানিত ও পবিত্র ছহীহ হাদীছ শরীফ:

عَنْ حَضْرَتْ جَابِرٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَاَيْتُ عَلـٰى بَابِ الْـجَنَّةِ مَكْتُوْبًا لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

অর্থ: “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমি দেখেছি সম্মানিত জান্নাত মুবারক উনার দরজা মুবারক-এ লিখা রয়েছে

لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহম্মদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।” সুবহানাল্লাহ! (ফাদ্বায়িলুছ ছাহাবাহ লিআহমদ ইবনে হাম্বল ২/৬৬৫, দায়লামী শরীফ ২/২৫৭)

২নং সম্মানিত ও পবিত্র ছহীহ হাদীছ শরীফ:

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيْسَ فِـى الْـجَنَّةِ شَجَرَةٌ اِلَّا وَعَلـٰى كُلِّ وَرَقَةٍ مِّنْهَا مَكْتُوْبٌ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.

অর্থ: “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুমা উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, সম্মানিত জান্নাত মুবারক উনার মধ্যে এমন কোনো গাছ নেই, যেই গাছের প্রতিটি পাতায় পাতায় লিখা নেই

لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহম্মদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।” সুবহানাল্লাহ! (আদ দীবাজ ১/২২, তারীখে বাগদাদ ৭/৩৩৭, মুখতাছারু তারীখে দিমাশক্ব ৫/১৭৮ ইত্যাদি)

৩নং সম্মানিত ও পবিত্র ছহীহ হাদীছ শরীফ:

হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূত্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-

اَلدَّلِيْلُ الثَّامِنُ: مَا وَرَدَ مِنْ حَدِيْثِ حَضْرَتْ عُمَرَ بْنِ الْـخَطَّابِ عَلَيْهِ السَّلَامُ وحَضْرَتْ اَنَسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ وحَضْرَتْ جَابِرٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ وحَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ وَحَضْرَتْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ وَحَضْرَتْ اَبِـى الدَّرْدَاءِ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ وَحَضْرَتْ اَبِـىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ وَغَيْرِهِمْ اَنَّ النَّبِـىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَخْبَرَ اَنَّه مَكْتُوْبٌ عَلَى الْعَرْشِ وَعَلـٰى كُلِّ سَـمَاءٍ وَّعَلـٰى بَابِ الْـجَنَّةِ وَعَلـٰى اَوْرَاقِ شَجَرِ الْـجَنَّةِ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.

অর্থ: “অষ্টম দলীল: যা (১) হযরত ফারুকে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার, (২) হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার, (৩) হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার, (৪) হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার, (৫) হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার, (৬) হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার, (৭) হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার অর্থাৎ উনাদেরসহ আরো অনেক বিশিষ্ট হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদের থেকে বর্ণিত সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে উল্লেখ রয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক-এ, সমস্ত আসমানসমূহে, সম্মানিত জান্নাত মুবারক উনার দরজায় এবং সম্মানিত জান্নাত মুবারক উনার প্রত্যেক গাছের পাতায় পাতায় লিপিবদ্ধ রয়েছে-

لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহম্মদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।” সুবহানাল্লাহ! (হাওই শরীফ ২/১৩৬)

হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূত্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ও ইবনে হাজার হাইতামী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি অর্থাৎ উনারা সম্মানিত ও পবিত্র কালিমা শরীফ উনার সম্পর্কে বর্ণিত সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফসমূহ উনাদেরকে ছহীহ বলেছেন, যার কারণে উনারা এই সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা দলীল পেশ করেছেন। আর এই সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফসমূহ ৭ জন বিশিষ্ট হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদেরসহ আরো অধিক সংখ্যক বিশিষ্ট হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদের থেকে বর্ণিত হয়েছে। সুবহানাল্লাহ! (হাওই শরীফ ২/১৭৪, ফতওয়ায়ে হাদীছিয়্যাহ ১/১৫২)

৪নং সম্মানিত ও পবিত্র ছহীহ হাদীছ শরীফ:

وَرَوَى ابْنُ عَسَاكِرَ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ عَنْ حَضْرَتْ كَعْبِ ۣ الْاَحْبَارِ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ اِنَّ اللهَ اَنْزَلَ عَلـٰى حَضْرَتْ اٰدَمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ عِصِيًّا بِعَدَدِ الْاَنْۢبِيَاءِ الْـمُرْسَلِيْنَ عَلَيْهِمُ السَّلَامُ ثُـمَّ اَقْبَلَ عَلَى ابْنِه حَضْرَتْ شِيْثٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ فَقَالَ اَىْ بُنَـىَّ اَنْتَ خَلِيْفَتِـىْ مِنْۢ بَعْدِىْ فَخُذْهَا بِعِمَارَةِ التَّقْوٰى وَالْعُرْوَةِ الْوُثْقٰى وَكُلَّمَا ذَكَرْتَ اللهَ فَاذْكُرْ اِلـٰى جَنْبِهِ اسْمَ سَيِّدِنَا مُـحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاِنِّـىْ رَاَيْتُ اسْـمَه مَكْتُوْبًا عَلـٰى سَاقِ الْعَرْشِ وَاَنَا بَيْنَ الرُّوْحِ وَالطِّيْنِ كَمَا اَنِّـىْ طُفْتُ السَّمَاوَاتِ فَلَمْ اَرَ فِـى السَّمَاوَاتِ مَوْضِعًا اِلَّا رَاَيْتُ اسْمَ سَيِّدِنَا مـُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَكْتُوْبًا عَلَيْهِ وَاِنَّ رَبِّـىْ اَسْكَنَنِـىَ الْـجَنَّةَ فَلَمْ اَرَ فِـى الْـجَنَّةِ قَصْرًا وَّلَا غُرْفَةً اِلَّا اسْمَ سَيِّدِنَا مُـحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَكْتُوْبًا وَلَقَدْ رَاَيْتُ اسْمَ سَيِّدِنَا مُـحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَكْتُوْبًا عَلـٰى نُـحُوْرِ الْـحُوْرِ الْعِيْنِ وَعَلـٰى وَرَقِ قَصَبِ اٰجَامِ الْـجَنَّةِ وَعَلـٰى وَرَقِ شَجَرَةٍ طُوْبـٰى وَعَلـٰى وَرَقِ سِدْرَةِ الْـمُنْتَهٰى وَعَلـٰى اَطْرَافِ الْـحِجَبِ وَبَيْنَ اَعْيُنِ الْـمَلَائِكَةِ فَاَكْثِرْ ذِكْرَه فَاِنَّ الْـمَلَائِكَةَ تَذْكُرُه فِـىْ كُلِّ سَاعَاتِـهَا.

অর্থ: “হযরত কা’ব ইবনে আহবার রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত আবুল বাশার আদম ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার উপর হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সমসংখ্যক (অর্থাৎ উনারা যতজন ততখানা) সম্মানিত ‘আছা মুবারক নাযিল করেন। সুবহানাল্লাহ! তারপর তিনি উনার সম্মানিত আওলাদ সাইয়্যিদুনা হযরত শীছ আলাইহিস সালাম উনার নিকট অগ্রসর হয়ে বলেন, হে আমার প্রিয় আওলাদ! আপনি আমার পর আমার খলীফা তথা নায়িব হবেন। তাই আপনি উক্ত সম্মানিত দায়িত্ব মুবারক সম্মানিত তাক্বওয়া মুবারক উনার ভিত্তি দ্বারা এবং সুদৃঢ় হাতল মুবারক দ্বারা শক্তভাবে আঁকড়িয়ে ধরুন। আর আপনি যখনই মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত যিকির মুবারক করবেন, আলোচনা মুবারক করবেন, তখনই মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত যিকির মুবারক করবেন, সম্মানিত আলোচনা মুবারক করবেন। সুবহানাল্লাহ! কেননা নিশ্চয়ই আমি সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক উনার স্তম্ভ মুবারক-এ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত ও পবিত্র ইসম বা নাম মুবারক লিখা দেখেছি। সুবহানাল্লাহ! আর তা মহান আল্লাহ পাক তিনি লিপিবব্ধ করেছেন, যখন আমি রূহ ও মাটির মাঝে ছিলাম। সুবহানাল্লাহ! আর আমি আসমানসমূহ (সপ্ত আসমান) ঘুরে দেখেছি; কিন্তু আসমানসমূহে এমন কোনো জায়গা আমি দেখিনি, যেখানে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত ও পবিত্র ইসম বা নাম মুবারক লিপিবদ্ধ নেই। অর্থাৎ সপ্ত আসমানের সমস্ত জায়গায় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত ও পবিত্র ইসম বা নাম মুবারক লিপিবদ্ধ রয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে সম্মানিত জান্নাত মুবারক-এ বসবাস করিয়েছেন; কিন্তু আমি সম্মানিত জান্নাত মুবারক উনার এমন কোনো সম্মানিত বালাখানা মুবারক এবং সম্মানিত কামরা বা রুম মুবারক পাইনি, যেখানে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত ও পবিত্র ইসম বা নাম মুবারক লিপিবদ্ধ নেই। সুবহানাল্লাহ! আর আমি অবশ্যই সমস্ত সম্মানিত জান্নাতী হুর উনাদের সম্মানিত গলা মুবারক-এ, উনাদের বুক মুবারক উনার উপরিভাগে (এবং উনাদের চোখের ভিতরে) নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত ও পবিত্র ইসম বা নাম মুবারক লিপিবদ্ধ দেখেছি। সুবহানাল্লাহ! সম্মানিত জান্নাত মুবারক উনার প্রতিটি গাছের ডালে ডালে, পাতায় পাতায়, সম্মানিত তূবা বৃক্ষের পাতায় পাতায়, সিদ্রাতুল মুন্তাহার পাতায় পাতায়, সম্মানিত হিজাব মুবারক উনার কিনারে কিনারে এবং সমস্ত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের চোখসমূহে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত ও পবিত্র ইসম বা নাম মুবারক লিপিবদ্ধ দেখেছি। সুবহানাল্লাহ! কাজেই আপনি অধিক পরিমাণে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত যিকির মুবারক করুন, উনার সম্মানিত আলোচনা মুবারক করুন। কেননা সমস্ত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা সবসময় দায়িমীভাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত যিকির মুবারক করেন, সম্মানিত আলোচনা মুবারক করেন।” সুবহানাল্লাহ! (খছায়িছুল কুবরা, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ, মাওয়াহিবুল লাদুননিয়্যাহ, শরহুয যারক্বানী, ইবনে আসাকির, শরহুল বুখারী, আল হাওই শরীফ ইত্যাদি)

হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূত্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এবং হযরত ইমাম ইবনে হাজার হাইতামী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি অর্থাৎ উনারা এই বর্ণনাটি বিশুদ্ধ বলেছেন। কেননা উনাদের স্বীয় কিতাব মুবারক-এ উপরোক্ত বর্ণনা উল্লেখ করার পর বলেন-

فَهٰذَا يَدُلُّ عَلـٰى اَنَّه نَبِـىُّ الْمَلَائِكَةِ حَيْثُ لَـمْ تَغْفُلْ عَنْ ذِكْرِه

অর্থ: “এই সম্মানিত ও পবত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সমস্ত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরও সম্মানিত নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। যার কারণে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা কখনো উনার সম্মানিত যিকির মুবারক থেকে গাফিল হননি, গাফিল হন না।” সুবহানাল্লাহ! (হাওই শরীফ ১/১৭৪, ফতওয়ায়ে হাদীছিয়্যাহ ১/১৫২)

আল্লামা কুস্ত্বলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি, আল্লামা যারক্বানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এবং উনার উস্তাদসহ আরো অনেক জগৎবিখ্যাত ইমাম মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনারা এই বর্ণনাটি গ্রহণ করেছেন। সুবহানাল্লাহ! (শরহুয যারক্বানী, মাওয়াহিবুল লাদুননিয়্যাহ)

এখানে ‘নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত ও পবিত্র ইসম বা নাম মুবারক সব জায়গায় লিপিবদ্ধ আছে’ এ কথা দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে সব জায়গায় সম্মানিত ও পবিত্র কালিমা শরীফ তথা

لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহম্মদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ লিপিবদ্ধ রয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! যেমন, এই সম্পর্কে হযরত ইমাম ইবনে হাজার হাইতামী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-

عَنْ سَبْعَةِ صَحَابَةٍ اَنَّه صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَخْبَرَ اَنَّه مَكْتُوْبٌ عَلَـى الْعَرْشِ وعَلـٰى كُلِّ سَـمَاءٍ وَّعَلـٰى بَابِ الْـجنَّةِ وَاَوْرَاقِهَا لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

অর্থ: “বিশিষ্ট সাত জন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনারা বর্ণনা মুবারক করেছেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক-এ, সমস্ত আসমানসমূহে, সম্মানিত জান্নাত মুবারক উনার দরজায় এবং সম্মানিত জান্নাত মুবারক উনার প্রত্যেক গাছের পাতায় পাতায় লিপিবদ্ধ রয়েছেন

لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহম্মদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।” সুবহানাল্লাহ! (ফতওয়ায়ে হাদীছিয়্যাহ ১/১৫২)

৫নং সম্মানিত ও পবিত্র ছহীহ হাদীছ শরীফ:

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ كَانَتْ رَايَةُ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَوْدَاءَ وَلِوَاؤُه اَبْيَضَ مَكْتُوْبٌ عَلَيْهِ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ .

অর্থ: “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত পতাকা মুবারক উনার ঝাণ্ডা (খুঁটি) মুবারক ছিলেন কালো আর পতাকা মুবারক উনার কাপড় মুবারক ছিলেন সাদা। উক্ত সাদা কাপড় মুবারক-এ লিখা ছিলেন-

لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহম্মদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।’ সুবহানাল্লাহ! (আল মু’জামুল আওসাত্ব ১/৭৭, মাজমাউয যাওয়ায়িদ ৫/৩২১)

উল্লেখ্য যে, পতাকার দুইটি অংশ। যথা:

এক. ঝাণ্ডা বা খুঁটি। যা বাঁশ, কাঠ, লোহা ইত্যাদি দিয়ে তৈরী করা হয়।

দুই. কাপড়। যা ঝাণ্ডা বা খুঁটির উপরিভাগে বাঁধা হয় এবং যা বাতাস হলে উড়ে থাকে।

আলোচ্য সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফ-এ رَايَة  দ্বারা সম্মানিত পাতাক মুবারক উনার ঝা-া বা খুঁটি মুবারক উদ্দেশ্য আর لِوَاؤ দ্বারা সম্মানিত পতাকা মুবারক উনার কাপড় মুবারক উদ্দেশ্য। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত পতাকা মুবারক উনার ঝাণ্ডা বা খুঁটি মুবারক ছিলেন কালো আর পতাকা মুবারক উনার কাপড় মুবারক ছিলেন সাদা। উক্ত সাদা কাপড় মুবারক-এ লিখা ছিলেন-

لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহম্মদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।’ সুবহানাল্লাহ!

৬নং সম্মানিত ও পবিত্র ছহীহ হাদীছ শরীফ:

عَنْ حَضْرَتْ اَنَسٍ رَضِىَ اللهُ تَعالـٰى عَنْهُ اَنَّه كَانَ فَصُّ خَاتَـمِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَبَشِيًّا مَّكْتُوْبًا عَلَيْهِ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

অর্থ: “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত আংটি মুবারক উনার নাগিন তথা উপরিভাগ মুবারক ছিলেন আবিসিনিয়ার তৈরী। (যা ছিলেন রূপার।) উক্ত (রূপার) নাগিন মুবারক-এ লিখা ছিলেন

لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহম্মদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।” সুবহানাল্লাহ! (উমদাতুল ক্বারী ৩২/৪৬)

আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-

وَاِسْنَادَه جَيِّدٌ

“এই সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার সম্মানিত সনদ মুবারক উত্তম।” সুবহানাল্লাহ! (উমদাতুল ক্বারী৩২/৪৬)

৭নং সম্মানিত ও পবিত্র ছহীহ হাদীছ শরীফ

‘মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত ও পবিত্র ইসম বা নাম মুবারক উনার সাথে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত ও পবিত্র ইসম বা নাম মুবারক সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক-এ লিখিত রয়েছে’ এই বিষয়টি প্রমাণ করতে গিয়ে হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূত্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তিনি

  اَخْرَجَ الْـحَاكِمُ وَالْبَيْهَقِىُّ وَالطَّبَرَانِـىُّ فِـى الصَّغِيْرِ وَاَبُوْ نُعَيْمٍ وَّابْنُ عَسَاكِرَ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِمْ عَنْ حَضْرَتْ عُمَرَ بْنِ الْـخَطَّابِ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَـمَّا اقْتَرَفَ حَضْرَتْ اٰدَمُ عَلَيْهِ السَّلَامُ الْـخَطِيْئَةَ قَالَ يَا رَبِّ اَسْاَلُكَ بـِحَقِّ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَـمَّا غَفَرْتَ لِـىْ قَالَ وَكَيْفَ عَرَفْتَ مُـحَمَّدًا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لِاَنَّكَ لَـمَّا خَلَقْتَنِـىْ بِيَدِكَ وَنَفَخْتَ فِـىَّ مِنْ رُّوْحِكَ رَفَعْتُ رَأْسِـىْ فَرَاَيْتُ عَلـٰى قَوَائِمِ الْعَرْشِ مَكْتُوْبًا لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَعَلِمْتُ اَنَّكَ لَـمْ تُضِفْ اِلَـى اسْـمِكَ اِلَّا اَحَبَّ الْـخَلْقِ اِلَيْكَ قَالَ صَدَقْتَ يَا حَضْرَتْ اٰدَمُ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَلَوْلَا مُـحَمَّدٌ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا خَلَقْتُكَ

অর্থ: “হযরত ইমাম আবূ আব্দুল্লাহ হাকিম নীশাপূরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি, হযরত ইমাম বাইহাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি, হযরত ইমাম ত্ববারনী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ‘আছ ছগীর’ নামক কিতাবে, হযরত ইমাম আবূ নাঈম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এবং ইবনে ‘আসাকির রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি অর্থাৎ উনারা প্রত্যেকেই স্বীয় কিতাবে সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যখন আবুল বাশার সাইয়্যিদুনা হযরত আদম ছফীউল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার চরম ফরমাবর্দারী করে দুনিয়ার যমীনে তাশরীফ মুবারক রাখেন, তখন তিনি বলেন, আয় বারে এলাহী মহান আল্লাহ পাক! আপনি আপনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানার্থে আমার সম্মানিত দোআ মুবারক কবূল করুন, আমার সম্মানিত নেক আমল মুবারক কবূল করুন! তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, আপনি কিভাবে আমার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে চিনলেন? সাইয়্যিদুনা হযরত আবুল বাশার ছফীউল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, যখন আপনি আপনার সম্মানিত কুদরতী হাত মুবারক-এ আমাকে সৃষ্টি মুবারক করেন এবং আমার মাঝে সম্মানিত রূহ মুবারক ফুঁকে দেন, তখন আমি আমার সম্মানিত মাথা মুবারক উত্তোলন করি। তারপর আমি দেখতে পাই যে, সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক উনার সম্মানিত স্তম্ভ মুবারকসমূহে লিপিবদ্ধ রয়েছেন

لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহম্মদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সুবহানাল্লাহ! তখন আমি বুঝতে পারি যে, আপনার সম্মানিত ও পবিত্র ইসম বা নাম মুবারক উনার সাথে যেই সুমহান ব্যক্তিত্ব মুবারক উনার সম্মানিত ও পবিত্র ইসম বা নাম মুবারক লিখিত রয়েছেন, নিশ্চয়ই তিনিই আপনার নিকট সর্বাধিক প্রিয় মহাসম্মানিত ব্যক্তিত্ব মুবারক। সুবহানাল্লাহ! তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, হে হযরত আবুল বাশার ছফীউল্লাহ আলাইহিস সালাম! আপনি সত্য কথাই বলেছেন। যদি আমি আমার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সৃষ্টি মুবারক না করতাম, তাহলে আমি আপনাকেও সৃষ্টি করতাম না।” সুবহানাল্লাহ! (খছায়িছুল কুবরা শরীফ, মুস্তাদরকে হাকিম, ত্ববারনী, বাইহাক্বী, আবূ না‘ঈম, ইবনে আসাকির ইত্যাদী)

হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূত্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে এই সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফখানা ছহীহ। যার কারণে তিনি এই সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা দলীল পেশ করেছেন। সুবহানাল্লাহ! আর হাকিমে হাদীছ হযরত ইমাম আবূ আব্দুল্লাহ হাকিম নীশাপূরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,

هٰذَا حَدِيْثٌ صَحِيْحُ الْاِسْنَادِ

অর্থ: “এই সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফখানা ছহীহ সনদে বর্ণিত।” সুবহানাল্লাহ! (মুস্তাদরকে হাকিম ২/৬৭২)

শাইখুল ইসলাম আল্লামা হযরত আহমদ শিহাবুদ্দীন ইবনে হাজার হাইতামী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘ফতওয়ায়ে হাদীছিয়্যাহ শরীফ’ উনার মধ্যে আবূ আব্দুল্লাহ হাকিম নীশাপূরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ‘মুস্তাদরাকে হাকিম শরীফ’ উনার বরাতে উক্ত হাদীছ শরীখানা উল্লেখ করার পর বলেন-

قَالَ ابْنُ عَدِىٍّ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ فِيْهِ اَحَادِيْثُ حِسَانٌ

অর্থ: “হযরত ইবনে আদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, এই বিষয়ে আরো বহু সম্মানিত ও পবিত্র হাসান হাদীছ শরীফ রয়েছেন।” সুবহানাল্লাহ!

তারপর তিনি এই সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফখানা ছহীহ প্রমাণ করেছেন। সুবহানাল্লাহ! (ফতওয়ায়ে হাদীছিয়্যাহ ১/১৩৪)

৮নং সম্মানিত ও পবিত্র ছহীহ হাদীছ শরীফ

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُمَا قَالَ اَوْحَى اللهُ اِلـٰى حَضْرَتْ عِيْسٰى عَلَيْهِ السَّلَامُ يَا حَضْرَتْ عِيْسٰى عَلَيْهِ السَّلَامُ اٰمِنْ بِـمُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَاْمُرْ مَنْ اَدْرَكَه مِنْ اُمَّتِكَ اَنْ يُّؤْمِنُوْا بِه فَلَوْلَا مُحَمَّدٌ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا خَلَقْتُ حَضْرَتْ اٰدَمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَلَوْلَا مُحَمَّدٌ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا خَلَقْتُ الْـجَنَّةَ وَلَا النَّارَ وَلَقَدْ خَلَقْتُ الْعَرْشَ عَلَى الْمَاءِ فَاضْطَرَبَ فَكَتَبْتُ عَلَيْهِ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَسَكَنَ.

অর্থ: “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার উপর সম্মানিত ওহী মুবারক করেন, হে হযরত রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম! আপনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি সম্মানিত ঈমান মুবারক আনুন এবং আপনার উম্মতদেরকে আদেশ মুবারক করুন যে, আপনার উম্মতের মধ্যে যারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাবে, তারা যেন উনার প্রতি সম্মানিত ঈমান মুবারক আনে। সুবহানাল্লাহ! কেননা আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সৃষ্টি না করলে, আবুল বাশার হযরত  ছফীউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করতাম না। সুবহানাল্লাহ! আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সৃষ্টি না করলে, সম্মানিত জান্নাত মুবারক  সৃষ্টি করতাম না এবং জাহান্নামও সৃষ্টি করতাম না। সুবহানাল্লাহ! আর আমি যখন পানির উপর সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক সৃষ্টি করলাম, তখন সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক কাঁপতে থাকলেন। ফলে আমি সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক উনার উপর সম্মানিত ও পবিত্র কালিমা শরীফ

لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

লিখে দিলাম। তখন সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক স্থির হয়ে গেলেন।” সুবহানাল্লাহ! (মুস্তাদরকে হাকিম ২/৬৭১, আস সাইফুল মাসলূল ৪৮১, ফতওয়ায়ে হাদীছিয়্যাহ)

হযরত ইমাম ইবনে হাজার হাইতামী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এ সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফখানা উনাকে মারফূ’ এবং ছহীহ বলেছেন। সুবহানাল্লাহ! (ফতওয়ায়ে হাদীছিয়্যাহ ১/১৩৪)

আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ‘শরহুশ শিফা’ উনার ১ম খণ্ডের ৩৮১ নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন-

(قَالَ رَاَيْتُ فِـىْ كُلِّ مَوْضِعٍ مِّنَ الْـجَنَّةِ) اَىْ مِنْ شَرَفِ قُصُوْرِهَا وَصُدُوْرِ حُوْرِهَا وَاَطْرَافِ اَنْـهَارِهَا وَاِتْـحَافِ اَشْجَارِهَا (مَكْتُوْبًا لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ).

অর্থ: “আবুল বাশার সাইয়্যিদুনা হযরত  ছফীউল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, আমি সম্মানিত জান্নাত মুবারক উনার প্রতিটি জায়গায় অর্থাৎ সম্মানিত জান্নাত মুবারক উনার সমস্ত বালাখানা উনাদের বিশেষ বিশেষ স্থানে, সমস্ত সম্মানিতা হূর উনাদের বক্ষে বক্ষে, সমস্ত সম্মানিত জান্নাত মুবারক উনার নহরসমূহ উনাদের কিনারে কিনারে এবং সমস্ত গাছের ফলে ফলে দেখি লিখা রয়েছেন

لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ  وَسَلَّمَ

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহম্মদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।” সুবহানাল্লাহ! (শরহুশ শিফা লিল ক্বারী ১/৩৮১)

আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ‘সম্মানিত ও পবিত্র কালিমা শরীফ’ সংশ্লিষ্ট সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফসমূহ নির্ভরযোগ্য রিওয়াত বলে উল্লেখ করেছেন। যেমন তিনি উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘শরহুশ শিফা’ উনার মধ্যে‘সম্মানিত ও পবিত্র কালিমা শরীফ’ সংশ্লিষ্ট সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফসমূহ বিস্তারিত আলোচনা করার পর উক্ত কিতাব মুবারক উনার ১ম খণ্ডের ৩৮৪ পৃষ্ঠায়‘শিফা শরীফ’ উনার একখানা ইবারতের ব্যাখ্যায় বলেন-

)وَذَكَرَ السِّمِنْطَارِىُّ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ اَنَّه شَاهَدَ فِىْ بَعْضِ بِلَادِ خُرَاسَانَ مَوْلُوْدًا وُّلِدَ عَلـٰى اَحَدِ جَنْبَيْهِ مَكْتُوْبٌ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَعَلَى الْاٰخَرِ مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ) اَقُوْلُ اِذَا ثَبَتَ مَا سَبَقَ مِنْ كَوْنِه مَكْتُوْبًا عَلَى الْعَرْشِ وَغَيْرِه بِرِوَايَاتٍ مُّعْتَبَرَةٍ فَلَا يـَحْتَاجُ اِلـٰى مِثْلِ هٰذِهِ الرِّوَايَةِ الَّتِـىْ يَـحْتَمِلُ اَنْ تَكُوْنَ مُعْتَمَدَةٌ

অর্থ: “হযরত সিমিনত্বরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, তিনি স্বচোখে খোরাসানের কোন এক এলাকায় নবজাতক এক শিশুর এক বাহুতে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ এবং অপর বাহুতে ‘মুহম্মদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ লেখা দেখেছেন। সুবহানাল্লাহ! (এই ইবারতের ব্যাখায় মোল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,) আমি বলি, যখন পূর্বে মু’তাবার বা নির্ভরযোগ্য রিওয়ায়েতসমূহ দ্বারা ছাবিত বা প্রমাণিত হয়ে গেছে যে, সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক এবং অন্যান্য সম্মানিত ও পবিত্র স্থান মুবারক-এ সম্মানিত ও পবিত্র কালিম শরীফ

لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللَّهُ مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহম্মদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ লিপিবদ্ধ রয়েছেন, তখন এই ধরণের বর্ণনা যেগুলোর মধ্যে নির্ভরযোগ্য হওয়ার (ব্যাপারে বদ আক্বীদার লোকদের) সংশয় আছে, সেগুলোর প্রতি মুখাপেক্ষী হওয়া প্রয়োজন নেই।” সুবহানাল্লাহ! (শরহুশ শিফা লিলক্বারী ১/৩৮৪)

উপরোক্ত দলীল ভিত্তিক বর্ণনা দ্বারা অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, সম্মানিত ও পবিত্র কালিমা শরীফ সংক্রান্ত সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফসমূহ ছহীহ সনদে বর্ণিত রয়েছে। সুবহানাল্লাহ! এরপরেও যারা সম্মানিত ও পবিত্র কালিমা শরীফ নিয়ে চূ-চেরা ক্বীল-ক্বাল করে, মসজিদ বা যে কোন জায়গা থেকে সম্মানিত ও পবিত্র কালিমা শরীফ থেকে

مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى  اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

‘মুহম্মদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ মুছে দিচ্ছে, মুছে দিতে চাচ্ছে, নি:সন্দেহে কস্মিনকালেও তারা মুসলমান নয়; বরং অবশ্যই অবশ্যই তারা প্রথম শ্রেণীর কাট্টা কাফির, চিরজাহান্নামী ও চিরমাল‘ঊন। তাদের প্রত্যেককেই শাস্তিস্বরূপ ক্বতল করা ফরয। তাদের তাওবা গ্রহণযোগ্য হবে না। এমনকি তাদেরকে যারা সমর্থন করবে, তাদেরও ঠিক একই হুকুম। তারা ইবলীসের ন্যায়; বরং ইবলীসের চেয়েও চরম মাল‘ঊন। তাদের প্রত্যেককে লা’নাতুল্লাহি আলাইহি বলা ফরয, ফরয এবং ফরয। সুবহানাল্লাহ!

কাজেই, স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই মুহব্বত করে উনার সম্মানিত ও পবিত্র ইসম বা নাম মুবারক উনার সাথে উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত ও পবিত্র ইসম বা নাম মুবারক সম্মানিত জান্নাত মুবারক উনার সব জায়গায়, সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক-এ, সাত আসমানের সব জায়গায় লিপিবদ্ধ করে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! তাহলে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত বুলন্দি শান মুবারক কতো বেমেছাল, তা এখান থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ!

উল্লেখ্য যে, এ বিষয়ে আরো অসংখ্য-অগণিত দলীল-আদিল্লাহ মওজূদ রয়েছে। এখানে কিছু সংখ্যক বর্ণনা মুবারক উল্লেখ করা হলো মাত্র। সুবহানাল্লাহ!

মহান আল্লাহ পাক তিনি মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনার সম্মানার্থে আমাদের সবাইকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত বুলন্দী শান মুবারক উপলব্ধি করে হাক্বীক্বী তা‘য়াল্লুক্ব-নিসবত, রেযামন্দি-সন্তুষ্টি, মুহব্বত-মা’রিফত, কুরবত মুবারক হাছিল করার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন!

-আল্লামা মুহম্মদ মানছূর আলী

আলআছদাকু, আলআত্বহারু, আলআত্বইয়াবু, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক শেষে সংক্ষেপে (সাঃ, দঃ) দুরূদ শরীফ লিখা প্রসঙ্গে

আওওয়ালু শাফিয়িন, আওওয়ালু মুশাফ্ফায়িন, আওওয়ালু মাঁইইয়ুর্হারিক হালক্বাল জান্নাতি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ‘বিশ্বনেতা’, ‘মহামানব’, ‘মহাপুরুষ’, ইত্যাদি শব্দ দ্বারা সম্বোধন করা প্রসঙ্গে

ইমামুল মুরসালীনা, ইমামুন্ নাবিইয়ীনা, ইমামুল উম্মাতি, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা আম্মা সাইয়্যিদাতুন্ নিসায়ি আলাল আলামীন হযরত আমিনা আলাইহাস্্ সালাম রচিত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ না’ত শরীফ প্রমাণ করে যে, তিনি ইলমে গইব-এর অধিকারিণী ছিলেন

আলবাশীরু, আলবালীগু, আলবাদরুল মুনীরু, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়াগণ অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না উনাদের ফাযায়িল-ফযীলত ও পবিত্রতা

জালীলুল ক্বদরি, জামীলুয যিকরি, জাওয়ামিউল কালিমি, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উর্ধ্বতন পূর্বপুরুষ উনারা ছিলেন পবিত্র থেকে পবিত্রতম