হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (২২৬) তাওয়াক্কুল উনার মাক্বাম হাছিলের পথে ফানা বা বিলীন কতিপয় আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম

সংখ্যা: ২৬৭তম সংখ্যা | বিভাগ:

قناعة (ক্বানায়াত) শব্দের অর্থ: অল্পে তুষ্ট হওয়া। লতীফায়ে আব (اب) ক্বানায়াতের মাক্বাম।اب  শব্দটি ফার্সী। অর্থ: পানি। আব লতীফা সমস্ত শরীরেই অবস্থিত।

কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নিকট বাইয়াত হয়ে উনার নির্দেশ মত যিকির ফিকির করলে উনার ফায়িয-তাওয়াজ্জুহ লাভ হয়। আর সেই ফায়িয-তাওয়াজ্জুহ লাভ হলে ক্বানায়াতের মাক্বাম ত্বয় করা যায়। ক্বানায়াতের মাক্বাম যখন লাভ হয় বান্দা- উম্মত তখনই অল্পে তুষ্ট হয়। অর্থাৎ অল্পতেই তৃপ্ত হয়। কামিল শায়েখ উনার ফয়েজ লাভ করা ব্যতীত কখনো ক্বানায়াতের মাক্বাম লাভ করা সম্ভব নয়।

ক্বানায়াতের বিপরীত হলো অতুষ্ট বা অতৃপ্ত হওয়া। অর্থাৎ যে ব্যক্তি এ মাক্বাম হাছিল করতে পারবে না বা হাছিল করবে না সে লোভ বা অবৈধ কামনা-বাসনায় নিমজ্জিত থাকবে। অবৈধ লোভ-কামনা-বাসনা এমন জটিল-কঠিন রোগ যা কামিল শায়েখ উনার ফয়েজ লাভ করা ব্যতিত কখনো দূর হয় না। তা কবরে যাওয়া পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। আর ইহা এতো জঘন্য ও খারাপ যে, তা অতুষ্ট ও অতৃপ্ত ব্যক্তির দুনিয়া ও আখিরাত উভয়কেই বরবাদ করে দেয়। নাউযুবিল্লাহ!

সম্পদ, মান-সম্মানের আধিক্যের লোভ এতো কঠিন ও জটিল রোগ যা মৃত্যু পর্যন্ত স্থায়িত্ব থাকে। সে সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

اَلْـهَاكُمُ التَّكَاثُرُ. حَتّٰى زُرْتُمُ الْمَقَابِرَ.

অর্থ: আধিক্যের লালসা (দুনিয়ার লোভ) তোমাদেরকে (মহান আল্লাহ পাক উনার থেকে) গাফিল করে রেখেছে। যে পর্যন্ত না তোমরা কবরস্থান যিয়ারত করো অর্থাৎ ইনতিকাল পর্যন্ত। (পবিত্র সূরা তাকাসুর শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১-২)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে-

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالى عَنْهُ عَنِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ قال لو كان لابن ادم واديان من مال يبتغى ثالثا ولا يملأ جوف ابن ادم الا التراب.

অর্থ: “রঈসুল মুফাসসিরীন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যদি আদম সন্তানকে ধন-সম্পদে পরিপূর্ণ দুটি উপত্যকাও দেয়া হয় (তবুও সে পরিপতৃপ্ত থাকবে না।) তারপরও সে তৃতীয়টির জন্য আশা-আকাঙ্খা করবে। মূলত মানুষের পেট কবরের মাটি ছাড়া অন্য কিছু দ্বারা পূর্ণ হবে না।” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عن حضرت انس بن مالك رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ يهرم ابن ادم ويشب منه اثنان الـحرص على الـمال والـحرص على العمر.

অর্থ: খাদিমু রসূলিল্লাহ হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- মানুষ বৃদ্ধ হয়, আর দুটি জিনিস তার মধ্যে জাওয়ান হয়। সম্পদের প্রতি লোভ বা মোহ এবং দীর্ঘ জীবনের লোভ বা আকাঙ্খা। (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)

যারা অর্থ-সম্পদ ও মান সম্মানের আকাঙ্খায় মোহগ্রস্থ হয় তাদের আমল-আখলাক্ব অত্যন্ত খারাপ হয়ে যায়। ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত ত্বরীক্বত ইমাম হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, যে ব্যক্তি দীর্ঘ আশা-আকাঙ্খার জাল তৈরী করে, তার আমল আখলাক্ব অবশ্যই খারাপ হয়ে যাবে। (তাফসীরে কুরতুবী)

তা এমনই খারাপ হয়ে যায় যে, কোন ওয়াজ-নছীহতই তার মধ্যে তাছীর বা ক্রিয়া করে না। সে সেখান থেকে ফিরে আসে না। সেজন্যই মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

ذَرْهُمْ يَأْكُلُوا وَيَتَمَتَّعُوا وَيُلْهِهِمُ الْأَمَلُ فَسَوْفَ يَعْلَمُونَ

অর্থ: “আপনি তাদেরকে (তাদের আমলের উপর) ছেড়ে দিন। তারা খেয়ে নিক, ভোগ করে নিক এবং দীর্ঘ আশা তাদেরকে গাফিল করে রেখেছে। অতি সত্ত্বর (তার পরিণতি) সে জানতে পারবে। (পবিত্র সূরা হাজর শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ০৩) (অসমাপ্ত)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছারল: মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫২)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার: মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৩)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৪)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৫)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৬)